শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

রানী কি ভাও (ভাব)

গুজরাটের পাটন মানে পাটোলা শাড়ির জন্ম যেখানে । গুজরাটের পুরাতন রাজধানীও বটে । পাটনে রানী কী ভাও Rani Ki Vav.
আসলে পাটনের রানীর স্নান করার অনিন্দ্য সুন্দর পুকুর নয় এটি রাজা ভীমের স্মৃতিতে রানীর বানানো ( তালাও/ তালাব) । গুজরাটিতে পুকুর অর্থাৎ ভাও । বহুদিনের
একটা ইচ্ছা ছিল রানী কী ভাও দেখার ।
কী অপূর্ব স্থাপত্য । বহিরাগত আক্রমণে
গুজরাট ব্যতিব্যস্ত হয়েছে । পাটন রাজাদের
মন্দির ছিল সোমনাথ । সোমনাথ মন্দিরের কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা তেমনি গুজরাটের
রাজধানী পাটন‌ও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় ।
পাটনের মিউজিয়াম ৭২ বছরে এই সবে শিশু । অবাক কান্ড কংগ্রেসের এই পাটন বিরূপতা কেন ? কিন্তু পাটন এখন সমহিমায় পৃথিবীতে স্থান করে নিয়েছে । নরেন্দ্রমোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময় পাটন ট্যুরীজমের উন্নয়ন হয়েছে এটা বানানো নয় । পাটনে গেলে বোঝা যাবে আসলে পাটন কী ছিল !
পাটন ধ্বংসের পর সোলাঙ্কিদের রাজত্বকালে সৌরাষ্ট্র থেকে তাঁত শিল্প সম্পূর্ণ
চলে গিয়েছিল পাটনে । পাটনের নব জন্ম
হয়েছিল পাটোলা শাড়ি দিয়ে । একটি পরিবারের শাড়ি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত । এখন পর্যন্ত রেগনের
পার্টিতে সোনিয়া গান্ধীর পরা পাটোলা শাড়ির দাম সব থেকে বেশি । তখন পড়েছিল পাঁচ লাখ ( যার বর্তমান মূল্য ১০/১২ লাখ হবেই ) । এখন মিনিমাম দাম
এক লাখ । পাটনের বাজারে যে পাটোলা
পাওয়া যায় তাতে ডুপ্লিকেট ছাপ মেরে
বিক্রি করতে হয়, যা আসলে পাটোলা নয় কারণ পরিবারের ৭০০ জন কারিগর থেকে তা ধীরে ধীরে ৫ জনে নেমে এসেছে ।
একটি শাড়ি বুনতে একজনের ছ মাস লাগে
অর্ডার ছাড়া পাটোলা শাড়ি বাজারে কোথাও পাওয়া যায় না । পাটনে গিয়ে
অর্ডার দিতে হয় । রেখার আলমারিতে মাত্র
একটা পাটোলা আছে । ড.রাজেন্দ্রপ্রসাদ,
নন্দলাল বসু শাড়ি তৈরি দেখতে গেছেন ।
বিদেশের মিউজিয়ামে পাটোলা শাড়ি না
থাকলে ধরে নিতে হবে সে মিউজিয়ামের
কৌলীন্য নেই । জয়া বচ্চনের‌ও এই শাড়ি
আছে । অমিতাভের প্রশংসাধন্য এই শাড়ির
বর্তমান বংশধরের অনুরোধে বাংলায় পাটোলার একটা ইতিহাস লিখতে রাজি
হয়েছি এবং এক ফর্মার একটি পাতলা
ব‌ই ছাপিয়ে ওদের পাঠিয়ে দিলে ( আমার
খরচে) ওরা পাটনের শাড়ি মিউজিয়াম থেকে সেটি ১০/- টাকায় বিক্রি করবে সঙ্গে
ইংলিশে একটু তর্জমা চাই । খুব শীঘ্রই এই
কাজটি করে ফেলতে চাই । ওদের মিউজিয়ামে কোনো ছবি তোলা যায় না তবে
ওদের তাঁত ঘরেতে আমার আর আমার স্ত্রীর
ছবি ওরা তুলে দিয়েছে । নন্দলাল বসুর
প্রশংসাটি আলাদাভাবে দেখিয়েছেন ওদের
সম্পর্কে আমি অনেক খবর রেখেছি বলে ।
হ্যাঁ যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম । রানী কী ভাও । আমার স্ত্রী যেতে চায়নি রানী কী ভাও
দেখতে । দেখার পর বিস্ময়ে হতবাক
হয়েছে । আমি তো হাঁ হয়ে গেছি । বিদেশী
আক্রমণে পাটনের স্থাপত্য মাটিতে মিশে গেছে । স্বাধীনতার ৭০ বছরে পাটনের ধ্বংসাবশেষ কুড়িয়ে একটা মিউজিয়াম
হয়েছে এই সবে । ধ্বংসলীলা থেকে রানী কী
ভাও বাদ যায়নি । তবে নরেন্দ্র মোদীর
মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে পাটনের বিশ্বখ্যাত রানী কী
ভাওকে যত্ন নেওয়া হয়েছে এবং চারপাশে
মনোরম বাগান এমন হয়েছে যে প্রথমে মনে
হয়েছিল এত সুন্দর বাগান করে ফেলেছে
হেরিটেজ ভেঙে । ভেতরে ঢুকে ভুল ভাঙলো । রানী কী ভাও এর সৌন্দর্য রক্ষায় বাইরের
সৌন্দর্য বৃদ্ধি প্রয়োজন অবশ্যই । ধাপে ধাপে
প্রায় ১০ তলা রানী কী ভাওয়ের সবটা আর
যেতে দেওয়া হয়না । ৫/৬ তলা নীচে নামা
যায় । এই স্থাপত্য দেখার পর মনে হলো ভাগ্যিস রানী কী ভাও কে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে
দেয়নি । আমেদাবাদ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিটি
ঘোষিত হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপত্যের কারণে । আমার মনে হয় কাছেই পাটন এবং
মোদেরার সূর্য মন্দির থাকার কারণে ওয়ার্ল্ড
হেরিটেজ সিটির শংসা পেয়েছে আমেদাবাদ ।

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০

ছট পুজোর ছুটি 
===========
• বর্তমান সরকারের কাজকর্মের এবং তাদের কণামাত্র সাপোর্টার নই। গত কয়েক বছর শুরু হয়েছে এই ছুটি। তবু এদের আমলে হলেও ছট পুজোর ছুটি এই প্রথম সাধারণ ছুটির তালিকায় আসায় আমি খুশি। এজন্য সরকারের হয়তো ভোটের এক গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ থাকলেও থাকতে পারে। ২০১১ পর এতদিনে এটা গুরুত্ব পেল। অবশ্যই ভোটের স্বার্থে এইসব। ২০১১ তে এসেই এই ছুটি দিলে সরকারের কাছে অবশ্যই কৃতজ্ঞ হতাম। সে যাই হোক এই নিয়ে আমার মাথায় যন্ত্রণা নেই। এখন এ বিষয়ে আমার কিছু কথা আছে। বিহার ও ইউ. পির কিছু অংশে ছটপুজোর মাহাত্ম্য দেখা যায়। বাঙালিদের মতো ঐতিহ্য উড়িয়ে ফুড়িয়ে এখনও দেয়নি এরা এখনো গাড়ি করেই হোক পদব্রজেই হোক খালি পায়ে দু দিন থাকে, দু দিন ধরে বড় জলাশয়ে স্নান করে এবং জল ও সূর্য এই বিমূর্ত আদি দেবতার কাছে নিজেদের উপাচার প্রদান করে। যা তারা শুদ্ধ আচারে নিজেরাই বানায় এবং পাড়া পড়শিকেও সেইসব বিতরণ করে। এরা যে সব উপাচার পুজোয় দেয় তা গরীব দোকানি থেকে ঠেলা ও রিকশায় শ্রমের বিকেন্দ্রীকরণ হয়। সব থেকে ভালো লাগে এরা ছট মায়ের জন্যে বিশাল ধর্মীয় খরচে যায়না। এরা ধর্মীয় বিষয়টি এখন হাটে বেচে দেয় নি। একেবারে ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে ও ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে জলের কাছে গিয়ে তাদের আরাধনায় পূণ্য খুঁজে পায়। সেখানে গিয়ে এরা তবেই সমাজের মিলনে, নিজেদের ধর্মের রক্ষক হিসেবে কৃতকর্মের বিধানগুলি সেরে নেয়। মিলিত হয়ে চাঁদা নিয়ে ধর্মের নামে বজ্জাতি নেই। 
স্বাধীনতার সত্তর বছরে যে চিন্তা নিয়েই হোক
এতদিনে তাদের ধর্ম যে জেনারেলের তকমা পেল
এবং সম্মান পেল তার কৃতিত্ব বর্তমান সরকারের 
প্রাপ্য একতরফা। পশ্চিমবঙ্গের শহর কেন্দ্রীক
বেশ কিছু বুথে এদের ভোট ৫০/৫০ দাঁড়িয়েছে 
এই মূহুর্তে। হ্যায় রাম! একটা ছুটি তবে কি একটা ধর্ম জাতকে চেনাল ? এতে ওদের সঙ্গে আমিও খুশি হয়েছি। কারণ হিন্দু বাঙালির কর্তারা রোজ সকালে মাছ ও ফুল বাজার করার সময় একই হাতে করে বাড়ির গোড়ায় এসে হাত পাল্টে 
প্রতিদিন মিথ্যাচার দিয়ে ধর্মের ধরনের যাগ
দর্শন করায়, আর স্ত্রীদের ধোঁকা দেয়। এখন মাছ ধরলে ফুলের জাত যায় কি না জানা নেই তবে বিশ্বাসের জাত খোয়া যায়। সে যাই হোক এখন মজার বিষয় হলো, ধর্মীয় ছুটিগুলি অন্য ধর্মের লোকেরাও লুটেপুটে নেয়। বিহারীদের এই
দ্বিচারিতা নেই। কিন্তু গরিষ্ট বাঙালি জাতি 
এতদিন ভাবেনি এই ছটের ছুট নিয়ে। একটি ছুটিতে যে একটি অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা বাড়ে 
বিহার বাসীকে যে সম্মান দেওয়া যায় একথা
আমাদের মনেই ছিলনা। হ্যায় বাঙালি! হ্যায় রাম
--অলোক কুন্ডু ©®

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০

গরিবদের হাতে নগদ পয়সা দাও এটা সঠিক নয়

■ গতবছর অভিজিৎ বিনায়কবাবু নোবেলজয়ী। আমাদের আনন্দ উদযাপনের একটুকরো আলো। 
গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অমর্ত্য সেনের থিওরীও বিশ্বজয় করেছিল। এক একজন মানুষ এক একটি এই যে আবিষ্কার করে ফেলেন তা থেকে এটা বোঝা যায় কিছু মানুষের উপকার হতে পারে অথবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মানবতার
পুজো গীতাঞ্জলিও তো আমাদের মননের থিওরী‌।
কিন্তু আশ্চর্য বিষয় গীতাঞ্জলি পড়ে বুঝে মেনে চলার লোক ভারতবর্ষে ১% হয়নি। তা যদি হোতো তাহলে বুথ জ্যাম করে রিগিং হতো না। হয়তো কোনও দেশে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি শতকরা একজন মানুষের চরিত্র পাল্টে দিতে পেরেছে, যা আমাদের গোচরে নেই। অমর্ত্য সেনের কিছু থিওরীও হয়তো কখনও কোনও সরকার কাজে লাগিয়েছেন। অভিজিৎ স্যারের থিওরীও নিয়ে বেশি করে বামপন্থীরা যে গত বছর চেঁচিয়ে ছিলেন তা কেমলমাত্র বিজেপিকে ঠেসে ধরতে। কারণ বামপন্থীরা ক্ষমতা পেয়ে এই দেশে সবচেয়ে বেশি
নিজেদের পরিবারের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। ইউনিয়নের মাধ্যমে একসময় ব্যাঙ্ক ও কয়লাখনিতে বড় বড় শিল্পাঞ্চলের সিংহভাগ চাকরি তারা নিজেরা নিয়ে নিয়েছেন‌। এখানে ৩৪ বছরে স্কুলের চাকরি থেকে গ্রামের উন্নয়ন আসলে তাদের পরিবারের উন্নয়ন হয়েছে অনেকটাই। তাদের সৌভাগ্য তারা স্বাধীনতার সময় থেকেই পূর্ববঙ্গ ও বাংলাদেশের নিপীড়িত বাঙালির বৃহত্তম অংশকে বংশ পরম্পরায় সঙ্গে পেয়েছিলেন। আজও সেই পরিবার ক্ষয়ক্ষতির পর‌ও ৭% এ এসে রয়ে গেছে। তাই অভিজিৎ স্যারের থিওরি যতটা ভালো তার চেয়ে বামেদের চিৎকারে তা ফুলেফেঁপে ঢোলের মতো অনেকটা।
নোবেল পাওয়া মানে তো মানবজাতির সামনে একটা মহা উপকারী দিগদর্শনের ঘোষণা হ‌ওয়া, তাকে খারাপ বলা অত্যন্ত ক্ষতিকর। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি যদি ১% লোক পড়েও থাকেন তবুও তার ফলিত চর্চা জীবনে শূণ্য। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির মলাট পুজো হয়তো ১০% হয়ে যাবে।
অর্থাৎ নোবেলজয়ী মানুষের খ্যাতিকে পূজো করলেও তার আসল বিষয়বস্তুটি চিরকাল আমাদের অজ্ঞাত রয়ে গেছে, আগেই বলেছি পৃথিবীতে যারা এই চর্চা আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁরাই গীতাঞ্জলি ও নোবেলের আসল ফলোয়ার।
তেমনি অভিজিৎ স্যারের থিওরীও হয়তো কোথাও কাজে লাগবে। নোবেলজয় এই কারণে তাঁকে আর‌ও উচ্চতর ভাবনায় উৎসাহ দেওয়া। কিন্তু অভিজিৎ বাবু নোবেলজয়ের পর তার থিওরির মতো করে এই দেশের অর্থনীতির কিছুটা চালাতে বলছেন এবং বামপন্থীরা তার পোঁ ধরছেন এ বড়
ভুল আব্দার। এটা জানা দরকার যে ওনার কিছু কিছু থিওরি কেবলমাত্র তৃতীয় বিশ্বের দেশ ছাড়া চলতে পারেনা । উনি নিজে থিসিস লেখার আগেই বিশ্বব্যাপী এনজিও খুলেছিলেন যা থেকে এক‌ই সঙ্গে ওনার এনজিওর লাভ হয়েছে যা আমাদের কাছে একটা আর্থিক সাফল্য। ব্যবসার মতো করে তা তিনি পেয়েছেন । একটা অন্য উদাহরণ দি‌ই
আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি , রাধাকৃষ্ণন মহাশয় বক্তৃতা দিয়ে সারা বিশ্ব থেকে উপার্জন করতেন।
লিখেও উপার্জন করতেন। থিওরি বলতেন। যার সমাজ জীবনে কোনও প্রভাব‌ই পড়েনি। কিন্তু তিনি সেই উপার্জন থেকে দান করে গেছেন ( চারিত্রিক গুণাবলী নিয়ে কথা বলছি না)। কিন্তু অভিজিৎ স্যার প্রথম শ্রেণির প্রথম ছাত্র। ১০০ দিনের কাজেও মনমোহন সিংহের প্রস্তাবে সহমত ছিলেন এবং থিওরি সাপ্লাই করেছেন। ১০০ দিনের কাজে বাজেট বৃদ্ধি না হলে দেখবেন চারিদিকে হৈ হৈ পড়ে যাবে। কেউ ভেবে দেখেছেন কি এই ১০০ দিন নিয়ে গ্রাম-শহরে কী ভয়ানক দুর্নীতি রয়েছে। কি ভয়ানক একটা পার্টিবাজি রয়েছে আর চলছে এবং কর্মে একটা অনীহা তৈরি হয়েছে। বসে বসে খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে । সরকার যখন " ফলিত বিজ্ঞান"-এর উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে তখন সরকার নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় ভর্তুকি দিয়ে নিজেকে জনকল্যাণমূলক সরকার বলে প্রচার করছেন। এর থেকে বড় ভন্ডামি আর বড় বেদনা
আর কি হতে পারে। নোবেল একটি বিশ্বমানের বিশ্বজনীন বিষয়। নিশ্চিত অর্থনীতির নোবেল‌ও মানবতাবিরোধী নয়। তবে অর্থনীতির এই নোবেলে প্রাপ্তির মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রভাব যথেষ্ট রয়েছে। অভিজিতস্যার এক‌ই সঙ্গে আর একটি থিওরি পাশাপাশি রেখেছেন যা হলো গ্রামে কোয়াক ডাক্তারের সাহায্যে গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা টিঁকিয়ে রাখা। এর জন্য তাঁর এনজিও তিন বছর ধরে বীরভূমে বিশ্বব্যাংক ও সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে থিসিস সাবমিট করে বিশ্বের নজর কেড়েছেন। এই কাজটা করেছেন ওনার স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ব্যবস্থাপনা তৈরি একটি
এনজিও। যার মালিক তিনি নিজে। এই প্রজেক্টের জন্য তিনি পৃথিবীর আর কোনও জায়গাকেও বাছেননি। বেছেছেন নিজের মাতৃভাষা ও ভূমিকে এবং একটা পিছিয়ে পড়া জেলাকে। রাজনীতির ডামাডোলে বিখ্যাত এক জেলাকে। যেখান থেকে এবিপি আনন্দে তিনি ২০১২ সেরা বাঙালি হয়েছিলেন। সে কারণে বক্তৃতাও করেছেন নোবল প্রাপ্তির পর বাঙলাতে আংশিক ভাবে। কারণ তার নোবেল প্রাপ্তির আর একটি বড় অংশের দাবি পড়ে আছে বীরভূমে। চিকিৎসকদের কাছে তার এই দ্বিতীয় আবিষ্কার হলো, চিকিৎসা ব্যবস্থার এক প্রকার পিন্ডি পাকানোর চেষ্টা। অথচ সারা ভারতের হাসপাতাল ভরিয়ে রেখেছেন গ্রামের মানুষ। যদিও কোয়াক ডাক্তার সঙ্গে নিয়েই এই দেশের গ্রামের হাসপাতাল চলে যাচ্ছে। গ্রামে চাকরি করতে গিয়ে হাসপাতাল থেকে ওষুধের দোকানে রেজিস্টারড ও আন-রেজিস্টারড কোয়াক ডাক্তার ছাড়া যে চিকিৎসা ব্যবস্থা টিঁকিয়ে রাখা যাবে না এটা ১০০ ভাগ সত্য। আর এই ব্যবস্থাটাতেই শিলমোহর দিতে চাইছেন। কিন্তু কোয়াক দিয়ে চিকিৎসা চলে আসা আর একজন নোবেলজয়ীর তাতে শিলমোহর দেওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাকটা তিনি এক ঝটকায় নামিয়ে দিয়েছেন। দুঃখের ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতির প্রভূত পরিমাণ সম্ভাবনা যে এতে লুকিয়ে আছে সেটা আর কে না জানেন। তার মূল আবিস্কারের অন্যটি হলো গরীবের হাতে ছ হাজার টাকার সাহায্য । কেন তাকে সামলম্বি করা। কিন্তু আর একজন এই পৃথিবীতে থিসিস সাবমিট করে দেখিয়েছেন যে গরীবকে সাহায্য করলেও সেই সাহায্য ব্যক্তির চাষবাসে ও ব্যবসার উন্নয়ণ হলেও সেই পরিবারের শিক্ষা, ক্রয় ক্ষমতা ও গৃহপরিবেশের উন্নয়ন হয়নি। তাদের নারী শিশু এক‌ই জায়গায় রয়ে গেছে ও সামাজিক স্বাস্থ্যের বৈষম্যগুলি এক‌ই রয়ে গেছে। এইসব জেনে আমাদের বরং খোল করতাল নিয়ে পথে নেমে পড়া অনেক ভালো। আমরা যদি এই মূহুর্ত্তে জলন্ধর ও গাজিয়াবাদে এই দেশের মেশিনারি শিল্পের কিছু উন্নয়ন দেখা পাচ্ছিলাম তা এই ভর্তুকি নীততে সেখানেও অনীহা আসতে বাধ্য হবে। গান্ধিজি তখনকার পরিবেশে সকলকে সূতা কেটে উপার্জনের চিন্তা করেছিলেন কিন্তু তিনি তো ১৯৪৮ প্রয়াত। তারপর পৃথিবী উল্টেপাল্টে এক‌ই সঙ্গে আর‌ও নিটোল ও কঠিন হয়েছে। আপনারা দেখুন এদেশের নেতারা ১৯৪৮-এই পড়ে রয়েছেন । থিসিস ঘুরেফিরে সাবমিট হচ্ছে। গরীবকে আর‌ও গরীব করার বাসনা অক্ষুন্ন আছে ভেতরের মজ্জায়।  অভিজিৎ স্যার নিজের জীবনে বাইরে থেকে সিনেমা দেখার মতো করে দারিদ্র উপভোগ করেছেন দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনেও থাকেননি। পড়েছেন সাউথ পয়েন্টে। তবে কি অবজারভেশন পাওয়ার হতে বাধা আছে বড়লোক হলে? এ প্রশ্ন আমারও শিক্ষা কি গরিবের কি বড়লোকের এটা দেখতে ও বলতে খুব সোজা যেখানে হয় তারা জানে কত কঠিন। তবুও শিক্ষা বড়লোক গরিব দেখে আসেনা। এক্ষেত্রে অভিজিৎ স্যার ও অমর্ত্য স্যারের জন্ম সোনার চামচ দিয়ে হলেও তাঁরা কিন্তু গরিবদের জন্য ভেবেই বড় হয়েছেন। তাই কোনও মানুষকে চরিত্র ঠিক করতে বলা আমার কাজ নয় কারণ চরিত্রের পাঠ নিয়েই তিনি বা তাঁরা শিক্ষক ও শিক্ষিত হয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশ একটি বৃহত্তর রাষ্ট্র তার। কোটি কোটি সন্তানদের মধ্যে দু একজন নোবেল পেতেই পারেন। তিনি বাঙালি হলেও বিদেশী হলেও আমার তাতে হিংসে দুঃখ কষ্ট কিছু নেই। কিন্তু বাঙালি হিসেবে তারজন্য আনন্দ হলেও যার জন্যে আনন্দ করছি যে কারণে আজ আমরা আনন্দ করছি ভেবে দেখুন তিনি কিন্তু আমাদের কেউ নন। তিনি আমাদের ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন হয়তো বলবেন‌। তারতে থাকলে তপন রায়চৌধুরী থেকে অমর্ত্য সেন বিনায়ক স্যার কেউই আবিস্কার করতে পারতেন না বড় গবেষক হ‌ওয়ার মতো পরিকাঠামো এখানে নেই। তাই তারা বিদেশী হয়েছেন। তবে বিদেশে থাকলে আত্ম বিসর্জন দেওয়া ছাড়া তো পথ‌ও নাই। সনাতন ভারতীয় পন্থা না নিয়ে বিদেশের সমাজে বহুল প্রচলিত ডিভোর্স নীতিতেও তিনি বিশ্বাসী হয়েছেন। আসলে তিনি কিন্তু একজন সর্বত্যাগী মানুষ নন।  ব্যক্তিগত লাভের জন্য সামাজিক স্বীকৃতি উনি মানতে চাননি। এই ভারত ও তার পরিবারের স্বীকৃতি বিসর্জন দিতে পেরেছেন বলেই আজ তিনি হয়তো একটি থিওরির জন্ম দিয়েছেন । সেই জন্য ওনার চরিত্রহনন করাও ঠিক নয় । উনি শিক্ষার উন্নয়ন তো করেছেন বটেই। যদিও এর পরীক্ষা হয়নি তেমন। কিন্তু উনি নোবেল প্রাপ্ত হয়েই নিজের ফরম্যাট ভারতের অর্থনীতিতে চাপানোর জোর চেষ্টা করেছেন এবং প্রথমেই ভারতের সমালোচনা করেছেন। জিডিপি নিয়ে কথা বলেছেন। বলতেই পারেন। খানিকটা রাজনৈতিক পরিসরে নেমেও পড়েছেন। তারপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, তার জানা নেই। আশ্চর্য উনি নোবেলে সম্মানিত অথচ কীভাবে ভারতের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে তার
ভাসাভাসা আলোচনা করেছেন। সাম্প্রতিক
ট্যাক্সের সমালোচনা করেছেন । দিশা তেমনভাবে দেখাননি। ওনার দিশা হচ্ছে এনজিওর মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদান করলে গরীবের উন্নয়ন ঘটবে। কিন্তু কোথা থেকে ওই আর্থিক দায় আসবে ? আর কারা সেই রামকৃষ্ণ মিশনের মতো হবেন ? উনি তো বিশ্বের সকল দেশের জন্য নোবেল পেয়েছেন কিন্তু ভারত নিয়ে আলোচনা করতে গেলেন কেন ? আসলে উনি একজন রাজনৈতিক ছাত্র‌ও ছিলেন। উনি দেশে না থাকলেও ওনার এনজিওর পরীক্ষা চালাতে ভারতের বাংলাকেই বেছে নিয়েছিলেন। তাই বাংলায় বলেছেন সাংবাদিকদের কাছে। নোবেল পেয়ে কোনও ব্যক্তি কোনও দেশের সবকিছু পাল্টে দেবেন ও দিতে পারেন এই আশা করাও আমাদের অন্যায়। কিন্তু আখের গোছানো বামপন্থীদের বক্তব্য কিন্তু তাই। রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তিতে কখন‌ই ভারতবাসীকে তিনি গীতাঞ্জলি লিখতে বলেননি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ না বললেও ইনি প্রচ্ছন্নভাবে বলতে চেয়েছেন তাঁর থিওরি দেশ মেনে নিক। কেন ? তা মানবে ? আমাদের কালাম সাহেব ফলিত বিজ্ঞানের চর্চায় দেশকে গর্বিত করে গেছেন এবং তাঁর গবেষণা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার কাজে লেগেছে। কিন্তু কালাম সাহেব তার জন্যে নোবেলের মতো কিছু পাননি বটে কিন্তু সমগ্র বাঙালি সহ সমস্ত জাতি তার সমস্ত জাত্যাভিমান নিয়ে দক্ষিণী কালাম সাহেবকে দু হাতে সম্মান জানিয়েছেন‌। দেশকে শুধুমাত্র অর্থনীতির একটি অপরীক্ষিত থিওরি নিয়ে হৈচৈ করলেই চলবে না, তাকে
চীনের মেশিনারি শিল্প কীভাবে এগোয় সে কথা ভাবতে হবে। কী কংগ্রেসের কী বিজেপির। তা নাহলে ভারতীয়রা কাউকে বেশিদিন সহ‍্য করবে 
না। অমর্ত্য স্যার ও অভিজিৎ স্যাররা জানেন চীন কি থেকে কি হয়েছে। চরম বিপর্যয় থেকে আজ চীন উঠে এসেছে, মেশিনারিজ শিল্পের সঙ্গে নাগরিকদের যুক্ত করার ফলে। প্রযুক্তির আবিষ্কার বাড়াও এই স্বপ্ন থেকেই আজ ভারতকে লাদাকে জব্দ করার বাসনা তাদের পেয়ে বসেছে। গরিবকে ভর্তুকি দিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার এই সর্বনাশ আজ আমাদের নেতাদের রক্ত মাংস মজ্জা গ্রাস করে নিয়েছে। আমরা শুধু শুধু কেন অভিজিৎ বাবুর থিওরি ভারতের ঘাড়ে চাপাতে চাইছি এবং প্যান্ট খুলে নাচতে নেমে গেছি ? নোবেলের জন্যে পৃথিবীবাসী গর্বিত হোক। শিক্ষিতের পুজো সর্বত্র হোক জাত্যাভিমান দিয়ে নয়, গরিবদের হাতে নগদ টাকা দিয়ে নয়। ©® অলোক কুন্ডু 

বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০

১৯৬২-এর চীন-ভারত যুদ্ধ: অলোক কুন্ডু

●পশ্চিম অরুণাচল ঘুরতে গেলে ১৯৬২-ও ঘুরে 
------------------------------------------------------------------
আসতে হয়● 
-----------------
◆অলোক কুন্ডু 

■ মহম্মদ রফি, মদনমোহন ও কাইফি আজমির
তৈরি গান--" কর চলে হম ফিদা জান ও তন সাথিওঁ।" ভূবন ভোলানো সংগীতের মর্যাদায় ভূষিত। আসলে এই গান ও হকিকৎ না হলে পূর্ব ভারতের জনগণকে রোখা যাচ্ছিল না। সরকারের ওপর রাগ ক্রমশঃ বিস্ফোরণের চেহারা নিতে যাচ্ছিল।
■ পশ্চিম অরুণাচল গিয়েছিলাম ২০১৭-তে
সে কথার উৎস টেনে হকিকৎ ও ১৯৬২ ভারত চীন যুদ্ধের করুন কাহিনী কেন বলতে চাই সেটা জানা দরকার। যুদ্ধ কথাটা আসলে একটা মস্তবড় ধোঁকা। আসলে বিনা সেনা পাহারায় অরক্ষিত সীমান্ত দখল হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় কি কারণে প্রথমে ভারত "ফরোয়ার্ড পলিশি।" নিয়েছিল! এর উত্তর আজও পরিষ্কার নয়। প্রথমত ১৯৬২ যুদ্ধের ফাইলটি ভারত সরকারের দ্বারা ক্ল্যাসিফায়েড করা আছে। অর্থাৎ চূড়ান্ত গোপনীয় তথ্য। তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেন্ডারসান ব্রুকস ও ব্রিগেডিয়ার পি.এস.ভকতের তৈরি লজ্জাজনক হারের বিস্তারিত রিপোর্ট। ওই সময়কার আন্তর্জাতিক সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল ওই রিপোর্ট তৈরি ও যুদ্ধের সময় অরুণাচলজুড়ে কাজ করেছিলেন একমাত্র তিনি
ভারত সরকারের ওই রিপোর্ট ফাঁস করে দেন কিন্তু ওই রিপোর্ট বি.জে.পি সরকারে এসেও রিপোর্টারদের হাতে তুলে দিতে পারেন নি। কিন্তু কিছুই গোপন থাকেনি। ভারত সরকার নাকি পেছনে হাঁটতে অর্ডার দিয়েছিল। তাহলে যুদ্ধ কথাটা কিসের!
■তায়াং ছেড়ে আগামীকাল অর্থাৎ ( ৬/১০/১৭) 
চলে আসবো। পথে আবার পড়বে ভারতের সুইজারল্যান্ড " দিরাং।" একটা ছোট ক্ষরস্রোতা নদীর দুই পারে ছোট্ট শহর, নয়নাভিরাম বললেও কম বলা হবে, সেই দিরাংও ছেড়ে চলে যাবো।
■ আজ ৫/১০/১৭ তায়াংয়ে স্থানীয় ওয়ার মেমরিয়াল দেখতে এসেছিলাম। বাইরে বেরিয়ে আসতে জানা-অজানার ভিড়ে আটকে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হলো। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখে রাত ৮ টায় বেরিয়ে দখি পূর্ণিমার চাঁদ হাট বসিয়েছে রাস্তাজুড়ে। ১৯৬২ র চীন অগ্রাসনের কাহিনী শুনে ইতিমধ্যে চোখে জল ভরে গেছে এমন যে, সেই অত বড় পাহাড়ি চাঁদটাকেও ঝাপসা দেখছি। এদিকে ততক্ষণে পাশে বেহালার শীলপাড়ার গৌতম মুখার্জী দা ও বৌদি অনসূয়া দি । আমার স্ত্রী, এল আই সির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কালিন্দীর 
সাহা-দা তাঁর স্ত্রী রীতা সাহা, নীলরতন মেডিক্যালের সবে এমবিবিএস পাশ করা 
তাদের সুযোগ্য ডাক্তার পুত্র দাঁড়িয়ে গেছি সবাই। সকলেই ভারাক্রান্ত। জুতোর শব্দের সঙ্গে মানুষের ফিসফিস শব্দের মিলমিশে যেন এক অদ্ভুত বেদনা সৃষ্টি হয়েছে চারিদিকে। এমনকি ঝিঁঝিঁ ডাক‌ও অস্পষ্ট যেন। কাছে দূরে অন্ধকারে অনেকেই চোখটা মুছে নিচ্ছেন। বয়স্ক কেউ কেউ তখনও বুঝি নিভৃতে কেঁদে চলেছেন। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া সেই জল যেন ৬২-র স্মৃতি-স্মারক
ছুঁয়ে রাখছে। আসলে ওর নাম বনি, তরতাজা যুবক, সাহাদার পুত্র ও আমাদের একজন ভালো সঙ্গী, স্যরি ও কিন্তু ডাক্তারবাবু। বেশ বৃহদাকার চাঁদের ডজন খানেক ছবি তুলেছেন। এই লাইট 
অ্যান্ড সাউন্ডে সবটুকু কাহিনী তুলে ধরা হয়নি এবং তা হওয়ার কথাও নয়। তবুও এখানে প্রত্যেকটা দর্শকদের চোখের কোনে কোনে এত জল তবে কেন ? সামান্যতেই এত যদি বেদনা তাহলে কত কষ্ট হয়েছিল ওদের। কাহিনির সংক্ষিপ্তসার হলো, এখানকার কয়েকজন অসম রাইফেলসের অকুতোভয় জওয়ান পালিয়ে না গিয়ে, সরকারি আদেশ অমান্য করে, লড়াই করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। আর এরা উপরের কোনও আদেশ শোনেননি মূলতঃ সেই তিনজনকে নিয়েই মহম্মদ রফির গান, "কর চলে হম ফিদা জান ও তন সাথিওঁ।"  সামনে তখন ছিলেন ৬ জন অফিসার সহ ২৪০/২৫০ অসম রাইফেলসের সেনা তারাও মারা গিয়েছিলেন। 
এর কয়েকদিন আগে সীমান্ত পেরিয়ে অক্টোবরের দেওয়ালির আগেই বিশ হাজার সুসজ্জিত চীনা সেনা, তখন বুমলা পাস আর জেমিথাঙ হয়ে অনাবৃত বর্ডার টপকে এগিয়ে আসতে থাকে। প্রথমেই দখল করে তায়াংয়ের বিখ্যাত মনেস্ট্রি। শত শত শিশু হত্যা করে এবং খুঁজে খুঁজে বার করে আনে মেয়েদের। মেয়েদের ব্যাপক ধর্ষণ করতে করতে এগিয়ে এসেছিল তারা । এমনকি মেয়েদেরও হত্যাকারী এই চৈনিক বর্বররা। যুবকদের‌ও গুলিতে ঝাঁঝরা করেদিয়েছিল। তখন তো কোনও রাস্তাঘাট‌ই ছিলনা এত বাস গাড়িও ছিলনা যে নাগরিকরা ওই দুর্গম অঞ্চল পরিত্যাগ করে পালিয়ে যাবে। স্বাধীনতার ১৫ বছরের আহ্লাদ তখনও কাটেনি, নেহরুর আর ডান হাত ভি. কে. কৃষ্ণমেননের। ইতিমধ্যে নেহরু ও মেনন বিদেশের সমস্ত দেশ জায়গায় দুবার করে ঘুরে ফেলেছেন। নেহরু আর মেননকে পত্র-পত্রিকায় বিকিনিপরা মেয়েদের সঙ্গে তাদের গায়ে হাত দিয়ে মস্করা করতে দেখা গেছে। এমনকি নেহরু তাদের সাথে সিগারেট খাচ্ছেন এও দেখা গেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিকেকেএমকে বিকিনি গার্লদের মধ্যমণি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। স্বাধীনতার ১০ বছর পর এই দুজনেই স্থির করেন সীমান্তে সেনার দরকার নেই। এমনকি অস্ত্র খারখানায় উৎপাদন পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়ছিলেন। ১৯৫৯-এ দলাইলামাকে আশ্রয় দেওয়াতে চীন ক্ষেপে যায়।  ইতিমধ্যে কিন্তু মাও জে দঙয়ের প্রধানমন্ত্রী জৌ এন লাই-কে এদেশে এনে নেহরু আর ডান হাত কে মেনন মিলে ভারতের প্রত্যেকটি বড় শহরের ফুটপাথ জুড়ে কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো করে বিশ্বজয় করেছিলেন। দু লাখ বাহাত্তর হাজার বর্গ কিলোমিটার আগেই চিন দখল করে নেয় যা পুরাতন " নেফা" -র সঙ্গে যুক্ত ছিল । ম্যাকমোহন 
লাইন অতিক্রম করে ১৯৬২-এর অক্টোবরের প্রথম দিকে। দেওয়ালিতে দিরাং দখলে নেয় ও অকথ্য অত্যাচার করে তখন যারা সেখানে বাস করতেন। এখন যেখানে যশবন্ত ওয়ার মেমোরিয়াল হয়েছে, তাও ৬০ কিমি দূর সীমান্ত থেকে, সেইখানে একমাত্র তিনজন মিলে বাধা 
দেয়। এদের তিনজনকে নিয়ে এবং মনে রেখে "হকিকৎ" সিনেমা তৈরি হয়েছিল। তাই হকিকতে দেওয়ালির দিন জানপ্রাণ নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা শোনা যায় । পরে নভেম্বরে ১৯৬২ চীনা সেনা বিনা বাধায় বর্ডার থেকে ৩০০ কিমি দূরে বমডিলা চলে আসে। নেহরুর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে কমজোরি নেতৃত্ব হিসেবে ধীক্কার উঠে যায়। পার্লামেন্টে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। নেহরু, কেনেডিকে সৈন্য অস্ত্র সমেত সাহায্য করতে চিঠি লেখেন। আমেরিকান হস্তক্ষেপে তিন দিনের মধ্যে চায়না নেফা পরিত্যাগ করে। কিন্তু আজও সেই দু লক্ষ বাহাত্তর হাজার বর্গ কিমি জায়গা চিন ছাড়েনি। নেহরু বলেছিলেন ওই ঘাসের জঙ্গলে না হয় আবাদি না আছে ঘাস, মূলভূমি তো তারা ছেড়ে চলে গেছে। উত্তরে নেহরুকে পার্লামেন্টে শুনতে হয়েছিল আপনার মাথা তো ন্যাড়া, সেটা নিয়ে চলে গেলে কি আপনি বসে থাকতেন ? ( ছবি -ব্রহ্মপুত্রের উপর 
গুয়াহাটির ফ্যান্সি বাজারের স্মারক ) ●©® অলোক কুন্ডু।

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

গরিবের অর্থনীতি : অলোক কুন্ডু

●আদতে কি সম্ভব গরীবের হাতে পয়সা দেওয়া ?
যদি এরকম হোতো টাকা ছাপিয়ে বিলি করা যেত। তা কি সম্ভব ? অমর্ত্য সেনের তৃতীয় পক্ষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা গরিবের অর্থনীতির জয় এইসব গালভরা নামের আড়ালে যে উন্নয়ন‌ই থাকনা কেন আসলে এইসব কথা থিওরির একটা মায়াজাল। প্রায় এক‌ই বিষয়ের দুই ধরনের মৌলিক বিষয়ের প্রস্তাবনায় দুজন বাঙালির এই পর পর পৃথিবী জয়ে সারা পৃথিবী আন্দোলিত।
নোবেলজয় নিশ্চিত ভালো । যেকোনো থিওরি মুগ্ধতা ছড়ায় ঠিকই কিন্তু সার্বিক সমাজে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া গেলে তার ভালোত্বের জয়গানে গরীবের জয় হয় কতটা হয়? অথচ নরসিমা রাও
এক হাতে অর্থনৈতিক সংস্কার ও অন্য হাতে মিড ডে মিল এনে দেখিয়েছিলেন গরিব, মধ্যবিত্ত ও বড়লোকের অর্থনীতিকে এক সুতোয় কীভাবে বাঁধতে হয়। স্বামীজি গান্ধিজি থেকে ইউনূস সাহেব 
( বাংলাদেশ) নানা আয়তনে আসলে গরীবের অর্থনৈতিক জয় চেয়েছিলেন । কিন্তু ভর্তুকির এই দেশে তা কীভাবে সম্ভব ? মধ্যবিত্তের পকেট কেটেই এদেশের উন্নয়ন চলছে ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে। ভুল হলো ইংরেজি আমল থেকেই। অর্থনীতির এই আঞ্চলিক উন্নয়ন কীভাবে গোটা ভারতভূমির উন্নয়ন হয়ে উঠবে ? বড়লোক বাঁচাতে বাঁচাতে এইদেশ "হ্যায় রাম যায় রাম"-এর মতো হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল, কাব্য নিয়ে হলেও অর্থনীতিতে তখনকার দিনে রবীন্দ্রনাথের
নোবেল পাওয়া কোনও ব্যাপার ছিলনা বোধহয়।
দেখতে গেলে রুখাশুকা শান্তিনিকেতনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটা অঞ্চলের চেহারা
শিক্ষা দিয়ে পাল্টে ফেলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর। ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন 
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে। কিন্তু ভর্তুকি
তো এখন এই দেশের দিশেহারা অবস্থা। তার উপর নতুন থিওরি গরিবের হাতে টাকা গুঁজে দাও। নাকি আর‌ও মদ্যপান বাড়াও আরও মহুয়া বিক্রি বাড়াও! একি সত্যিই কোনও রূপকথার অর্থনৈতিকতা? ভর্তুকি এখন এই দেশের অর্থনীতিতে ব্রাজিলের মতো দাবানল আগ্রাসি হয়ে উঠতে পারেও। সকলেই ওটা চান, ভর্তুকিতে সিনেমা পর্যন্ত হবে। পথের পাঁচালীর ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা কি সমস্ত কিছুর মধ্যে মেনে নেওয়া যায়? বাৎসরিক পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি ইনকামের পরিবারের চাই বেশি ভর্তুকি কারণ এরা শিক্ষায় এগিয়ে আসতে পেরেছে। একটা মোটামুটি পেট চালানোর মতো ক্ষমতা এরা অর্জন করে ফেলেছেন। ৬/৭ লক্ষ টাকা খরচ করে ছেলেকে অথবা মেয়েদের হয় বি.টেক পড়িয়ে কোনক্রমে ১০/২০ হাজার টাকার একটা ইনকাম করিয়ে নিতে পারছেন না অথবা ৬/৭ লাখ টাকায় এদেশের প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরি ক্রয় করে নিয়ে উন্নয়ন। কিন্তু অন্যদের কীভাবে কি হবে ? গ্রামে চাষবাস থাকলেও প্রতিটি মানুষের কাছে পয়সা কোথায়। প্রকৃতপক্ষে টিউশনি করে গ্রামের অর্ধেক যুবক যুবতীর জীবনে টিঁকে থাকে। টিউশনির উপর দাঁড়িয়ে এরা বিয়ে পর্যন্ত করে নেয়। তাদের কী হবে ? ধীরে ধীরে একটা সময় এরা কর্মহীন হয়ে পড়েন, এই দল কি শেষ পর্যন্ত এনজিওর সাহায্য নিয়ে বেঁচে উঠবেন। রোজ রোজ নগদ টাকার জন্য লাইন দেবেন। সামান্য দুমুঠোয় পেট চালাবেন ?  ইউনূস সাহেব মাইক্রো ফিনান্সের বাস্তবায়ন করিয়ে দেখেছেন কিন্তু একটা জায়গায় এসে ঋণ দিয়ে ,ক্ষুদ্র মূলধন বাড়ানোর বিস্ফোরণ করিয়ে ( আঞ্চলিক ভাবে) কিছুজনের ভালো করে দেখাতে গিয়ে পরে ওখানেও সাফল্যের পেছন পেছন দুর্নীতির ব্যাপক প্রবেশ ঘটেছে এবং ইউনূস সাহেবকেও তাড়া করে ফিরছে মাইক্রো ফিনান্সের দুর্বলতাগুলো এবং মাইক্রোফিনান্সের আপন ভাই সারদা ইত্যাদির পাল্লায় পড়ে বহু গরীবের সর্বনাশ ঘটেছে । থিওরি মজবুত হলেও তার বেড়ার মজবুতি ফসল খেয়েছে পোকায়। অবশ্যই এখানে মাইক্রো ফিনান্স থেকেই বন্ধন ব্যাঙ্কের জয় এসেছে।
বিনায়ক স্যারের দাওয়াইয়ে দিল্লির সরকারি
স্কুলের ছাত্রদের নিশ্চিত ভালো হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের কৃষি পরিকল্পনা আর ব্যাপক
ছিল তখনকার দিনে, গান্ধিজির সুতো কাটার মধ্যেও বিস্তর পার্থক্য ও মতের দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছে সমাজ এই দুই মহান ঋষির ভাবনায়। 
আজকের দিনে হয়তো অচল হয়ে পড়েছে। আসলে অর্থনীতিই যুগ পাল্টাবার জিয়নকাঠি।
তবু রবীন্দ্রনাথ-গান্ধীজির থিওরি প্রশ্নাতীত ‌। গান্ধিজি নোবেল পেলেও অবাক হ‌ওয়ার কিছু ছিলনা কিন্তু তিনি নোবেল নিতেন না। সর্বাধিক প্রস্তাব তো গান্ধীজিকে ঘিরেই আছে নোবেলের কিন্তু তিনি তা পাননি। তার মানে এই নয় যে অমর্ত্য ও বিনায়ক স্যারেদের মতো মহান নোবেলজয়ীরা কেউ ছোট‌মাপের। নোবেলের মানবিক আবেদনের বিকল্প নেই । সত্যজিৎ রায় মৃত্যুর সামনে
দাঁড়িয়ে সিনেমার নোবেল পেয়েছিলেন । তিনি সামান্য স্ক্রিপ্টের মধ্যে অপুর পাঠশালায় কিংবা অপারাজিতর স্কুল ইন্সপেকশনে অথবা আগন্তুকে ময়দানে উৎপলদত্তকে দিয়ে ভূগোল শিক্ষা আসলে তা এক প্রকার গরীব ও মধ্যবিত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের গোড়ায় শিক্ষিত হ‌ওয়ার একটা বিদ্যুৎরেখার আশ্চর্য আবিষ্কার দেখিয়েছিলেন। যা সিনেমার আঞ্চলিক পর্বে আবর্তিত হলেও মানুষের মধ্যে একটা প্রশ্নের চিন্তা জাগ্রত করেছিলেন যে শিক্ষিত হ‌ওয়ার প্রয়োজন আছে অর্থনৈতিক উন্নয়নে। কিন্তু সেখানে ভর্তুকি নেই। রবীন্দ্রনাথের থিওরিতেও ভর্তুকি নেই। কাজ কর খাও। গান্ধীজির থিওরি কাজকে সব সময় যুক্ত করো। কিন্তু এখন তো গরীবের অর্থনীতি মানে ভর্তুকি।  জানিনা গ্রামের শিক্ষিত বেকারত্ব কীভাবে ঘুঁজবে ? নাকি কম মেধাবী ছেলেরা ছয় সাত লাখ দিয়ে বি.টেক পড়ে ডেলিভারি বয়ের কাজ খুঁজবে ? বা চাকরি কিনবে ? এদেশে সরকারি চাকরিতে ঢুকলে তো বহুজন‌ই জিওর মালিকের মতো কোটিপতি হ‌ওয়ার আশা করেন । ঘুষ নেন ,কাজ করেন না, ইউনিয়ন করেন বি.এস.এন.এল, ভারত পেট্রোলিয়াম ইত্যাদিকে ক্ষণস্থায়ী করে তুলেছেন এই ইউনিয়নবাজি, কাজ না করে করে বসে বসে মাইনে নেওয়ার ধান্দায় কোম্পানি উঠে যেতে বসেছে। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কয়লা থেকে এক ওয়াগন কয়লার দাম জোরজবরদস্তি আদায় করে নিচ্ছেন নেতারা এবং গ্যাসের ভর্তুকিও চাইছেন। উন্নয়নের নামে আঞ্চলিকতার পর্ব ছেড়ে সার্বিক ভাবে শিক্ষিত মাফিয়া তৈরি করে অর্থনীতির বিপর্যয়ে আগুন দিচ্ছেন কিছু হৈ-হল্লা করা পাব্লিক। যে পরিমাণ কয়লা মাফিয়ারা নিচ্ছে সেই পরিমাণ গরিবরা যদি পেতো তাহলে স্থানীয়ভাবে তো এলাকায় গরিব থাকার কথা নয়। এক‌ই সঙ্গে ভর্তুকি প্রত্যাহার ও সকলের রোজগার এবং ইউনিয়নের
ঝান্ডা প্রত্যাহার‌ই করাই হবে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। গরীবের উন্নয়ন করতে গিয়ে যদি বেকায়দায় ফেলে মধ্যবিত্ত যুবক-যুবতীদের আর‌ও গরীব করে দেওয়ার ফর্মূলার দিকে দেশ এগিয়ে চলে তাহলে কাঁচা টাকা বিতরণ করে গরিবদের বাঁচানোর কথা কত বছর ধরে চলতে পারবে । অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেলে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও আমরা গর্বিত। আর‌ও গর্বিত আর এক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের জন্য। কিন্তু এই সৌর্য দিয়ে এই দেশের  মলিনতা কতটা ঘুঁচে যাবে জানিনা। এই দেশের জন্যে এই দেশের এনজিওদের একটা সমস্যা আছে। সারা পৃথিবীতেই এনজিওর প্রচেষ্টায় একদল গরীব মানুষের মধ্যে নানাভাবে অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যবিধান করার একমাত্র উপায় বলে একটি থিওরি কাজ করছে। এতে ভালো খারাপ দুই হচ্ছে । ফেসবুকের সাহায্যে গ্রুপের বন্ধুদের মধ্যে এই থিওরীর নতুন আবিষ্কার ও গরীবের ভালো করার আগ্রহের পরিধি সুখকরভাবে বিস্তৃত হয়েছে। গরীবের এতে ভালো হয়েছে। যদিও এই বিচ্ছিন্ন আন্দোলনে মানুষের ব্যক্তিগত প্রচার আছে তা হোক। আনন্দের প্রচারের সঙ্গে গরীবের ভালো করার প্রবণতার দিকটি আজ উজ্জ্বলতা পেয়েছে সন্দেহ নাই । কিন্তু গরীবের ভালো করতে গিয়ে এনজিওগুলি ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটি বিপর্যয়ের সূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। হাওড়ার জগৎপুরের কালীপদ দাসের যে বড় এনজিও ছিল তা বামপন্থীদের পাল্লায় পড়ে দশভাগ হয়ে গোষ্ঠী করে টাকা লুটপাটের খেলায় কালীপদ দাসের মৃত্যুর পর সেই গরিবদের খাওয়াপরার চেহারা এখন কঙ্কালের মতো। বিনায়ক স্যারের থিওরিটি অত্যন্ত আধুনিক এবং সঙ্ঘবদ্ধভাবে মানুষের ভালো করার প্রচেষ্টার উন্নয়ন ঘটাবে সন্দেহ নাই। মানুষের দ্বারা মানুষের যে বিপর্যয় তৈরি হয় তার জন্যে শৌখিনতা অনেকাংশেই 
দায়ি। একদল মানুষের শৌখিনতার চাপে কিছু
মানুষ গরীব হয়ে পড়ে ( বাজার বাড়ার বদলে বাজার ছোট হয়ে যায় । উদাহরণ দেওয়ালির প্রদীপ কেনা হচ্ছে মল থেকে) গরীব বাঁচানোর জন্য এনজিওদের ওপর প্রখর দৃষ্টি রাখতে হবে । তবে আঞ্চলিকভাবে কিছু গরীবের উন্নয়ন ঘটানো হলেও জনবিস্ফোরণের এইদেশে তা খুবই সীমিত হবে। চীনের অর্থনীতি, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ আমাদের ভেবে দেখা উচিত কারণ আঞ্চলিকভাবে গরীবের উন্নয়ন হ‌ওয়া
কাম্য নয়। অনুন্নত দেশের কিছু নীতি আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাবে পালিত হয় সেগুলো সব ভর্তুকি নীতি। মিড-ডে-মিলকে আর‌ও ভালো করে অন্য ভর্তুকি তোলা উচিত। আসলে বিশ্বব্যাংকের বেশ কিছু পরিচালক ভর্তুকিকে তোল্লাই দেন‌। এদেশের
ভোটে জিতে আসার একটি মগজাস্ত্র হলো ভর্তুকি প্রদান। যে যত ভর্তুকি দেবে সেই সরকারের ভোট তত বেশি পাবে। কিন্তু এই ভর্তুকি পেয়ে দাতাকে আর পাবলিক মনে রাখেনা। প্রিয়রঞ্জন হাসপাতালে যাওয়ার আগে পুরুলিয়ায় দাঁড়িয়ে বলে গিয়েছিলেন আদিবাসীদের জন্য কংগ্রেস সরকার পুরুলিয়ায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সেই বছরে, তার ২৫ হাজার টাকা যদি পুরুলিয়ায় উন্নয়ন হয়েছিল তখন। কাকে কি বলবেন ?কংগ্রেসের জেতার অনেকটা জুড়ে আছে এই ভর্তুকি প্রদান। ভিক্ষে দেওয়ার বিষয়টি সারা পৃথিবীতে চালু আছে এটি ভালো বৃত্তিও। কিন্তু ভর্তুকি বড় না কাজ বড়।  ভারত ও চীন এই মহারাষ্ট্রের সমাজকল্যাণ কিন্তু পরস্পরের বিরোধী
চীনেও ভর্তুকি আছে। কিন্তু চীনের কি অবস্থা ছিল আর কি হয়েছে আমাদের সঙ্গে একটু যদি তুলনা করে দেখি তবে এইসব অর্থনৈতিক পুরস্কার মূল্যহীন মনে হবে। এইসব থিওরি চীনের কাছে প্রযুক্তির জঞ্জালের থেকেও বড় বেশি মাথা যন্ত্রণার কারণ হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের আগ্রহ অনেক বেশি ভর্তুকিও সেখানে নিয়ন্ত্রিত।
■©® অলোক কুন্ডু ( গতবছর আজকের দিনে লেখা) 

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০

করোনা থেকে বাঁচুন

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা #indianwriterscommunity #kolkatadiaries #kolkata #writer #lekhak #howrah #facebookpost
◆ অনেকে বলছেন পুজোতে বাড়বে, তার আগে থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। আমার‌ই জানাশোনা কলকাতার একটা পুজো কমিটির তত্বাবধান করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে হসপিটালে। সর্দি কমাতে গিয়ে এখন স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে বন্ড নিয়ে। পুজো করতে গিয়ে কয়েক লক্ষ খরচের ধাক্কায় পড়লেন। নিউমার্কেটে যেভাবে ভিড় হচ্ছে ওখান থেকে ১% ছড়ালেই যথেষ্ট। সর্দিকাশি নিয়ে রাস্তায় বার হলে অবধারিত ধরে নেবে। সর্দি নিয়ে ৮ দিন ঘোরার জন্য আমাদের পাড়ায় একজন নিউমোনিয়া হয়ে মারা গেল। সিগারেট যারা খান এরকম কাউকে ধরলে আর ছাড়ানো মুসকিল, এরকম‌ও মারা যাওয়ার উদাহরণ আছে আমার কাছে। হিমোগ্লোবিন কম থাকা মানুষকে ধরলেও তাই। এরপর কিডনি, সুগার, হার্টের প্রবলেম থাকলে আর তো কথাই নেই । ইয়ংদের সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরছে। প্রতিটি জিনিসপত্রের সঙ্গে অনবরত ভাইরাস বাড়ছে। সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। তারা পজিটিভ হলেও হয়তো বেঁচে যাবেন
কিন্তু বাড়িতে কেউ থাকলে তার জন্য আমাদের ভাবা দরকার। ভাইরাস ভিড়বাসে, ভিড়ট্রেনে, যেকোন‌ও ভিড় থেকে ছড়াচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে। আমাদের হাওড়ার কদমতলার দেবলীনা তার পরিবারের যে বিভীষিকাময় বিপদের কথা জানিয়েছেন এবং ফিরে এসেছেন তা এক কথায়, মহা বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া। আমাদের শরীরের তেজে তা বোঝা যাবে না। কিন্তু জামাকাপড়, পা একটা ভাইরাস বহনের উপযুক্ত মাধ্যম। বাড়িতে ঢোকার মুখে যদি এক গামলা ব্লিচিং ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জলে পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকা যেত খুব ভালো হোতো। ফ্ল্যাটে হ‌ওয়া সম্ভব নয়। তাই মেঝে ওই জলে মুছে ফেলতে হবে। ভুল করেও গ্লাভস পরা উচিত নয়। চুল ভাইরাস ধরার প্রধান মাধ্যম। তাই সাবধান। এটিএম কার্ড, গ্যাসের ব‌ই, মানিব্যাগ, ঘড়ি, ছাতা,দরজা, বাথরুমের দরজা,কল, হ্যান্ড সাওয়ার, বেল্ট, পেন, মোবাইল, টাকা,পয়সা, দরজার হাতল, সিঁড়ির রেলিং, কলিং বেল, চাবি, রুমাল, স্যানিটাইজারের বোতলের গা, চশমা এগুলো সম্পর্কে সব সময় সতর্ক এবং সতর্ক। সন্দেহ বজায় রাখুন ডবল চেক করুন। প্রচুর ফেনাযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন ( ডেটল নীল উপযুক্ত), বাথরুমে একটা বড় প্ল্যাস্টিক স্প্রেতে স্যানিটাইজার রাখুন। আমাদের কম লোকজন তাতেই এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লিটার স্যানিটাইজার
৭ কেজি ডিটারজেন্টে, ব্লিচিং ১ কেজি, সোডা ২ কেজি, পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট লেগেছে ৫০০ গ্রাম। হ্যান্ড‌ওয়াস ২ লিটার।
ডেটল নীল সাবান ৬ টি। যাইহোক, বাথরুমের যেখানে যেখানে হাত দিয়েছেন স্যানিটাইজ করুন। পায়ের হাঁটু পর্যন্ত জল ঢালুন। যতবার বাইরে যাবেন ততবার জামাকাপড় ছাড়ুন। সোডা বা ডিটারজেন্টে খার বেশি থাকে অ্যালার্জি না হলে ভাইরাস মারতে এইসবও হ্যান্ড‌ওয়াসে মিশিয়ে নিন, এতে খরচ কমে যাবে। জামাকাপড় হচ্ছে একটা মারাত্মক মাধ্যম, একে সাবধানে খুলে রাখুন এবং আবার সাবানে নিজের হাত ধুয়ে নিনি। স্যানিটাইজারকে রাস্তায় ও বাড়িতে ফেরার পর তিন তিনবার ব্যবহার করুন। যতটা নিশ্চিত হবেন ততটা ভালো যত সন্দেহ তত ভালো। হ্যাঁ একদম এপ্রিলের গোড়ায় আমাকে বাতিকগ্রস্ত বলেছিলেন অনেকে। বিশ্বাস করুন অফিসে বহুরকমের জার্ম থাকা ফাইলকাগজ ঘেঁটেছি তখন ওই হাতেই মুড়ি খেয়েছি। কারণ কাজে ফাঁকি দেবো! উঠে সাবান খুঁজবো ? প্রকৃতপক্ষে
হাত ধুতে যাওয়ার সময় পাইনি। দেখেছি প্রায় সর্দিকাশি লেগেই থাকতো। ফাইলের মধ্যেও প্রচুর এইসব দাগ থাকতো তো। প্যানক্রিয়াসের অসুখ বহুদিনের ইদানিং প্রচুর কিছু ধীরে ধীরে ধরা পড়েছে, হয়তো 
হাওড়ায় শিক্ষকদের  পেনশনের করতে গিয়ে হয়েছে। বহুবার ভাইরাল ফিবারে ভুগেছি। এখন বুঝতে পারছি পাড়ার খাটা পায়খানার ডাবা থেকে বল কুড়িয়ে কখনও সাবান দিয়ে হাত ধুইনি। অফিসেও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো সুযোগ পাইনি, আর অফিসে আমার নামে সাবান কিনে মেরে দিতো সেই টাকা। বাথরুমের ভেতর থেকে বাইরেতেও ভিজিটরের উত্তর দিয়েছে। আমার জন্য বহু মানুষ মজায় অফিস করেছে। আমার জন্য একটা পুরো অফিস ঘুমোতে পেরেছে শুধুমাত্র আমি ঘুমোই নি। ছেলেমেয়েদের সুখে মানুষ করেছেন। কিছু‌ই করিনি জীবনে। প্রচুর ওষুধ খেতে হয়েছে, এখন বুঝতে পারছি সব। কিন্তু প্রচুর ভুল কাজ করেছি। নিজেকে দেখিনি। করোনা এসে আমাকে অনেকটা সতর্ক করেছে। হাত ধুয়ে পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকা এমনিতে অভ্যাস ছিল তাই একবার হাত ধুয়ে কিছু খাওয়া এটা মামার বাড়ি থেকে পর্যাপ্ত শেখা। পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকায় অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু কাজের পরিস্থিতির জন্য নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অনেক ক্ষেত্রে মানিনি। যতজন মানুষ এসেছেন বন্ধু হয়ে এসেছেন তারা আমাকে ব্যবহার করেছেন। একমাত্র করোনাই শেখালো, নিজের কাজ করাটাও যে জরুরি এবং সঠিক সময়ে করা।  করোনা মনে করিয়ে দিল মামার বাড়িতে আমার বড়মাসিমার শেখানো জিনিসটাই তো ফেরত এসেছে। মাসিমা নেই। জলে পড়ে থাকতেন না। বিধবা ছিলেন ১৪ বছর থেকে কিন্তু প্রতিটি দিন কাপড় পরতেন টিনোপলে ধোয়া। নখ কাটা চুল কাটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হ‌ওয়া তো সেই ছোটবেলার পাঠ। রায়নার সুশান্ত এখনও আমার জামাকাপড় পরা নিয়ে বলে। এই করোনায় দেখেছি। বাজার করে এসে ইনারগুলো না কেচে রোদে দিতে তাদের কিন্তু করোনা ঢুকেছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সারাজীবনের। ©® অলোক কুন্ডু

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০

করোনা থেকে বাঁচুন: অলোক কুন্ডু

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা #indianwriterscommunity #kolkatadiaries #kolkata #writer #lekhak #howrah #facebookpost
◆ অনেকে বলছেন পুজোতে বাড়বে, তার আগে থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। আমার‌ই জানাশোনা কলকাতার একটা পুজো কমিটির তত্বাবধান করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে হসপিটালে। সর্দি কমাতে গিয়ে এখন স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে বন্ড নিয়ে। পুজো করতে গিয়ে কয়েক লক্ষ খরচের ধাক্কায় পড়লেন। নিউমার্কেটে যেভাবে ভিড় হচ্ছে ওখান থেকে ১% ছড়ালেই যথেষ্ট। সর্দিকাশি নিয়ে রাস্তায় বার হলে অবধারিত ধরে নেবে। সর্দি নিয়ে ৮ দিন ঘোরার জন্য আমাদের পাড়ায় একজন নিউমোনিয়া হয়ে মারা গেল। সিগারেট যারা খান এরকম কাউকে ধরলে আর ছাড়ানো মুসকিল, এরকম‌ও মারা যাওয়ার উদাহরণ আছে আমার কাছে। হিমোগ্লোবিন কম থাকা মানুষকে ধরলেও তাই। এরপর কিডনি, সুগার, হার্টের প্রবলেম থাকলে আর তো কথাই নেই । ইয়ংদের সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরছে। প্রতিটি জিনিসপত্রের সঙ্গে অনবরত ভাইরাস বাড়ছে। সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। তারা পজিটিভ হলেও হয়তো বেঁচে যাবেন
কিন্তু বাড়িতে কেউ থাকলে তার জন্য আমাদের ভাবা দরকার। ভাইরাস ভিড়বাসে, ভিড়ট্রেনে, যেকোন‌ও ভিড় থেকে ছড়াচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে। আমাদের হাওড়ার কদমতলার দেবলীনা তার পরিবারের যে বিভীষিকাময় বিপদের কথা জানিয়েছেন এবং ফিরে এসেছেন তা এক কথায়, মহা বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া। আমাদের শরীরের তেজে তা বোঝা যাবে না। কিন্তু জামাকাপড়, পা একটা ভাইরাস বহনের উপযুক্ত মাধ্যম। বাড়িতে ঢোকার মুখে যদি এক গামলা ব্লিচিং ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জলে পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকা যেত খুব ভালো হোতো। ফ্ল্যাটে হ‌ওয়া সম্ভব নয়। তাই মেঝে ওই জলে মুছে ফেলতে হবে। ভুল করেও গ্লাভস পরা উচিত নয়। চুল ভাইরাস ধরার প্রধান মাধ্যম। তাই সাবধান। এটিএম কার্ড, গ্যাসের ব‌ই, মানিব্যাগ, ঘড়ি, ছাতা,দরজা, বাথরুমের দরজা,কল, হ্যান্ড সাওয়ার, বেল্ট, পেন, মোবাইল, টাকা,পয়সা, দরজার হাতল, সিঁড়ির রেলিং, কলিং বেল, চাবি, রুমাল, স্যানিটাইজারের বোতলের গা, চশমা এগুলো সম্পর্কে সব সময় সতর্ক এবং সতর্ক। সন্দেহ বজায় রাখুন ডবল চেক করুন। প্রচুর ফেনাযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন ( ডেটল নীল উপযুক্ত), বাথরুমে একটা বড় প্ল্যাস্টিক স্প্রেতে স্যানিটাইজার রাখুন। আমাদের কম লোকজন তাতেই এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লিটার স্যানিটাইজার
৭ কেজি ডিটারজেন্টে, ব্লিচিং ১ কেজি, সোডা ২ কেজি, পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট লেগেছে ৫০০ গ্রাম। হ্যান্ড‌ওয়াস ২ লিটার।
ডেটল নীল সাবান ৬ টি। যাইহোক, বাথরুমের যেখানে যেখানে হাত দিয়েছেন স্যানিটাইজ করুন। পায়ের হাঁটু পর্যন্ত জল ঢালুন। যতবার বাইরে যাবেন ততবার জামাকাপড় ছাড়ুন। সোডা বা ডিটারজেন্টে খার বেশি থাকে অ্যালার্জি না হলে ভাইরাস মারতে এইসবও হ্যান্ড‌ওয়াসে মিশিয়ে নিন, এতে খরচ কমে যাবে। জামাকাপড় হচ্ছে একটা মারাত্মক মাধ্যম, একে সাবধানে খুলে রাখুন এবং আবার সাবানে নিজের হাত ধুয়ে নিনি। স্যানিটাইজারকে রাস্তায় ও বাড়িতে ফেরার পর তিন তিনবার ব্যবহার করুন। যতটা নিশ্চিত হবেন ততটা ভালো যত সন্দেহ তত ভালো। হ্যাঁ একদম এপ্রিলের গোড়ায় আমাকে বাতিকগ্রস্ত বলেছিলেন অনেকে। বিশ্বাস করুন অফিসে বহুরকমের জার্ম থাকা ফাইলকাগজ ঘেঁটেছি তখন ওই হাতেই মুড়ি খেয়েছি। কারণ কাজে ফাঁকি দেবো! উঠে সাবান খুঁজবো ? প্রকৃতপক্ষে
হাত ধুতে যাওয়ার সময় পাইনি। দেখেছি প্রায় সর্দিকাশি লেগেই থাকতো। ফাইলের মধ্যেও প্রচুর এইসব দাগ থাকতো তো। প্যানক্রিয়াসের অসুখ বহুদিনের ইদানিং প্রচুর কিছু ধীরে ধীরে ধরা পড়েছে, হয়তো 
হাওড়ায় শিক্ষকদের  পেনশনের করতে গিয়ে হয়েছে। বহুবার ভাইরাল ফিবারে ভুগেছি। এখন বুঝতে পারছি পাড়ার খাটা পায়খানার ডাবা থেকে বল কুড়িয়ে কখনও সাবান দিয়ে হাত ধুইনি। অফিসেও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো সুযোগ পাইনি, আর অফিসে আমার নামে সাবান কিনে মেরে দিতো সেই টাকা। বাথরুমের ভেতর থেকে বাইরেতেও ভিজিটরের উত্তর দিয়েছে। আমার জন্য বহু মানুষ মজায় অফিস করেছে। আমার জন্য একটা পুরো অফিস ঘুমোতে পেরেছে শুধুমাত্র আমি ঘুমোই নি। ছেলেমেয়েদের সুখে মানুষ করেছেন। কিছু‌ই করিনি জীবনে। প্রচুর ওষুধ খেতে হয়েছে, এখন বুঝতে পারছি সব। কিন্তু প্রচুর ভুল কাজ করেছি। নিজেকে দেখিনি। করোনা এসে আমাকে অনেকটা সতর্ক করেছে। হাত ধুয়ে পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকা এমনিতে অভ্যাস ছিল তাই একবার হাত ধুয়ে কিছু খাওয়া এটা মামার বাড়ি থেকে পর্যাপ্ত শেখা। পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকায় অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু কাজের পরিস্থিতির জন্য নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অনেক ক্ষেত্রে মানিনি। যতজন মানুষ এসেছেন বন্ধু হয়ে এসেছেন তারা আমাকে ব্যবহার করেছেন। একমাত্র করোনাই শেখালো, নিজের কাজ করাটাও যে জরুরি এবং সঠিক সময়ে করা।  করোনা মনে করিয়ে দিল মামার বাড়িতে আমার বড়মাসিমার শেখানো জিনিসটাই তো ফেরত এসেছে। মাসিমা নেই। জলে পড়ে থাকতেন না। বিধবা ছিলেন ১৪ বছর থেকে কিন্তু প্রতিটি দিন কাপড় পরতেন টিনোপলে ধোয়া। নখ কাটা চুল কাটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হ‌ওয়া তো সেই ছোটবেলার পাঠ। রায়নার সুশান্ত এখনও আমার জামাকাপড় পরা নিয়ে বলে। এই করোনায় দেখেছি। বাজার করে এসে ইনারগুলো না কেচে রোদে দিতে তাদের কিন্তু করোনা ঢুকেছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সারাজীবনের। ©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...