গুজরাটের পাটন মানে পাটোলা শাড়ির জন্ম যেখানে । গুজরাটের পুরাতন রাজধানীও বটে । পাটনে রানী কী ভাও Rani Ki Vav.
আসলে পাটনের রানীর স্নান করার অনিন্দ্য সুন্দর পুকুর নয় এটি রাজা ভীমের স্মৃতিতে রানীর বানানো ( তালাও/ তালাব) । গুজরাটিতে পুকুর অর্থাৎ ভাও । বহুদিনের
একটা ইচ্ছা ছিল রানী কী ভাও দেখার ।
কী অপূর্ব স্থাপত্য । বহিরাগত আক্রমণে
গুজরাট ব্যতিব্যস্ত হয়েছে । পাটন রাজাদের
মন্দির ছিল সোমনাথ । সোমনাথ মন্দিরের কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা তেমনি গুজরাটের
রাজধানী পাটনও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় ।
পাটনের মিউজিয়াম ৭২ বছরে এই সবে শিশু । অবাক কান্ড কংগ্রেসের এই পাটন বিরূপতা কেন ? কিন্তু পাটন এখন সমহিমায় পৃথিবীতে স্থান করে নিয়েছে । নরেন্দ্রমোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময় পাটন ট্যুরীজমের উন্নয়ন হয়েছে এটা বানানো নয় । পাটনে গেলে বোঝা যাবে আসলে পাটন কী ছিল !
পাটন ধ্বংসের পর সোলাঙ্কিদের রাজত্বকালে সৌরাষ্ট্র থেকে তাঁত শিল্প সম্পূর্ণ
চলে গিয়েছিল পাটনে । পাটনের নব জন্ম
হয়েছিল পাটোলা শাড়ি দিয়ে । একটি পরিবারের শাড়ি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত । এখন পর্যন্ত রেগনের
পার্টিতে সোনিয়া গান্ধীর পরা পাটোলা শাড়ির দাম সব থেকে বেশি । তখন পড়েছিল পাঁচ লাখ ( যার বর্তমান মূল্য ১০/১২ লাখ হবেই ) । এখন মিনিমাম দাম
এক লাখ । পাটনের বাজারে যে পাটোলা
পাওয়া যায় তাতে ডুপ্লিকেট ছাপ মেরে
বিক্রি করতে হয়, যা আসলে পাটোলা নয় কারণ পরিবারের ৭০০ জন কারিগর থেকে তা ধীরে ধীরে ৫ জনে নেমে এসেছে ।
একটি শাড়ি বুনতে একজনের ছ মাস লাগে
অর্ডার ছাড়া পাটোলা শাড়ি বাজারে কোথাও পাওয়া যায় না । পাটনে গিয়ে
অর্ডার দিতে হয় । রেখার আলমারিতে মাত্র
একটা পাটোলা আছে । ড.রাজেন্দ্রপ্রসাদ,
নন্দলাল বসু শাড়ি তৈরি দেখতে গেছেন ।
বিদেশের মিউজিয়ামে পাটোলা শাড়ি না
থাকলে ধরে নিতে হবে সে মিউজিয়ামের
কৌলীন্য নেই । জয়া বচ্চনেরও এই শাড়ি
আছে । অমিতাভের প্রশংসাধন্য এই শাড়ির
বর্তমান বংশধরের অনুরোধে বাংলায় পাটোলার একটা ইতিহাস লিখতে রাজি
হয়েছি এবং এক ফর্মার একটি পাতলা
বই ছাপিয়ে ওদের পাঠিয়ে দিলে ( আমার
খরচে) ওরা পাটনের শাড়ি মিউজিয়াম থেকে সেটি ১০/- টাকায় বিক্রি করবে সঙ্গে
ইংলিশে একটু তর্জমা চাই । খুব শীঘ্রই এই
কাজটি করে ফেলতে চাই । ওদের মিউজিয়ামে কোনো ছবি তোলা যায় না তবে
ওদের তাঁত ঘরেতে আমার আর আমার স্ত্রীর
ছবি ওরা তুলে দিয়েছে । নন্দলাল বসুর
প্রশংসাটি আলাদাভাবে দেখিয়েছেন ওদের
সম্পর্কে আমি অনেক খবর রেখেছি বলে ।
হ্যাঁ যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম । রানী কী ভাও । আমার স্ত্রী যেতে চায়নি রানী কী ভাও
দেখতে । দেখার পর বিস্ময়ে হতবাক
হয়েছে । আমি তো হাঁ হয়ে গেছি । বিদেশী
আক্রমণে পাটনের স্থাপত্য মাটিতে মিশে গেছে । স্বাধীনতার ৭০ বছরে পাটনের ধ্বংসাবশেষ কুড়িয়ে একটা মিউজিয়াম
হয়েছে এই সবে । ধ্বংসলীলা থেকে রানী কী
ভাও বাদ যায়নি । তবে নরেন্দ্র মোদীর
মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে পাটনের বিশ্বখ্যাত রানী কী
ভাওকে যত্ন নেওয়া হয়েছে এবং চারপাশে
মনোরম বাগান এমন হয়েছে যে প্রথমে মনে
হয়েছিল এত সুন্দর বাগান করে ফেলেছে
হেরিটেজ ভেঙে । ভেতরে ঢুকে ভুল ভাঙলো । রানী কী ভাও এর সৌন্দর্য রক্ষায় বাইরের
সৌন্দর্য বৃদ্ধি প্রয়োজন অবশ্যই । ধাপে ধাপে
প্রায় ১০ তলা রানী কী ভাওয়ের সবটা আর
যেতে দেওয়া হয়না । ৫/৬ তলা নীচে নামা
যায় । এই স্থাপত্য দেখার পর মনে হলো ভাগ্যিস রানী কী ভাও কে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে
দেয়নি । আমেদাবাদ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিটি
ঘোষিত হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপত্যের কারণে । আমার মনে হয় কাছেই পাটন এবং
মোদেরার সূর্য মন্দির থাকার কারণে ওয়ার্ল্ড
হেরিটেজ সিটির শংসা পেয়েছে আমেদাবাদ ।