মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

অলোক কুন্ডুর কবিতা

রীনা ব্রাউন ভালো থেকো /অলোক কুন্ডু

সাত নম্বর কয়েদির নির্বাসন
তোমাকে মানায় না কিছুতেই
তবু বলি ভালো থেকো
বাঙালির সেই তুমি প্রণয়বেলায় ।

ব্যাপক বিস্ময় ছিল সন্মোহন তোমার
মন্থন করেছিলে বাঙালির
রোমান্টিক সময়ের  প্রণয়বেলা
মিনার বিজলী ছবিঘর থেকে
উত্তরা পূরবী উজ্বলায় ।

তোমার অনিবার্য ক্লোজ আপে
অনায়াস চাউনির মুগ্ধতায়
রুপোলি দাতের দ্যুতিতে
ভেসে গিয়েছিলো
আটপউরে বাঙালির-প্রণয় জীবন  ।

ধুম লুকোনোর খেলা
রপ্ত ছিল আদিগন্ত সময়ের পরেও
বাঙালির গ্রেটাগার্বো খ্যাতি নিয়ে
ভালো থেকো ভালো থেকো ।

এই নির্বাসন এতকাল
কিছুতেই মানায়নি তোমাকে
হারানো সুরটুকু যে তুমি খুঁজেদিয়েছিলে
যাদের করুণা করেছিলে প্রেমে
তাদেরও পাকাচুল
তারাও অশ্রু মুছেছে মনে মনে ।
© অলোক কুন্ডু

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

অলোক কুন্ডু-র কবিতা মণিহার

মণিহার / অলোক কুন্ডু

যেদিন জিজ্ঞেস করেছিলো মেয়েটা
মুঠো করা হারটা লুকোনো হয়েছিল বৃথাই
তবু মেয়েটা একবার হারটা দেখতে চাইতেই
সে মুঠো খুলে দিয়েছিল প্রাণপণে
সর্ষে ক্ষেতের ধারে উঠেছিল ঝড়
সারা ক্ষেতজুড়ে হলুদ বর্ণের সকাল ।

আরও একদিন সরষে ক্ষেতের কাছে
আকাশ মেঘলা হয়ে আসতেই
মেয়েটার সঙ্গে আবার দেখা হয়েছিল
কিছুতেই নেয়নি সেই হার
সেই থেকে বুক পকেটেই পড়ে থেকে থেকে
মরচে পড়েছে কতকাল ।
© অলোক কুন্ডু

শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৭

অলোক কুন্ডুর লেখালিখি

ভাজা পিঠে
========
আমার মামাবাড়ি আগে ছিল জোড়াশাঁকোর
বলরাম দে স্ট্রীটে।  ঠিক এই সময় আমার দিদিমা
একরকম পিঠে বানাতো ।  এই পিঠে একমাত্র
উত্তর কলকাতার লোকেরাই ভালোভাবে বানাতে
পারে । পরে  আমার মাও ওরকম পিঠে না হলেও
প্রায় কাছাকাছি ওই রকম পিঠে বানাতেন, এই
পিঠের নাম ভাজা পিঠে । ওই  পিঠের কাছে
কোনো পিঠেই পাতে পড়েনা । দিদিমার পিঠে
বানানো এখনও কিছুটা মনে আছে । যেমন
খুব অল্প চালগুঁড়োর গরম জলে মিশিয়ে সঙ্গে
বেশিভাগ মুগডাল ভাজা সিদ্ধ করে কাদার
মতো করে গরম কড়াইতে ডালডা + চিনি +
অল্প পাটালি গুড় + লব্ণ + খোয়া খির + খুব
অল্প খাবার সোডা এক চিমটে + খেঁজুরগুড়
+ অল্প বনস্পতি দিয়ে অনেকক্ষণ অল্প অল্প
গরম জল ঢেলে ঢেলে মিশ্রণ / মন্ড তৈরি করা
হতো । খুব অল্প ভাজা গরম মশলা দেওয়া
হতো । আর অন‌্য দিকে তৈরি হতো ছাঁই অর্থাৎ
নারকলে কুরো আর খেঁজুড় গুড়ের মিশ্রণ
( যেটা পিঠের মধ‌্যে পুর হিসেবে ব‌্যবহার করা
হতো )। বাইরের অংশটি অর্থাৎ মুগ ডালের
মাখা মন্ডটি লেচি করা হতো পটলের মতো
বা পিঠের মতো করে । জলের ছোঁয়ায় পিঠে
জুড়ে দিয়ে শুকনো করতে দিতে হতো । উপরে
মুগের মন্ড ভেতরে ছাঁই থাকতো । বলতে ভুলে
গেছি গোবিন্দভোগ চালকে শিলে বেটে নিতে
হতো ।  চালের কার্যকারীতা কিন্তু সামান‌্য ।
এইবার সমস্ত পিঠে হাতে গড়ার পর
এককড়া ভাসানো সরষে তেলে ভাজা হতো ।
এরকম পিঠে আর জীবনে খাইনি । এখন
আমার ছোট বোন কিছুটা পারে ।  তবে এই
পিঠে শুধুই খাওয়ার নিয়ম । যত বাসি হতো
তত খেতে ভালো হতো ।  তবে বলে নি আর
দু-একটা কথা ।  এই পিঠের রঙ হবে পোড়া-
ব্রাউনিজ এবং গা হবে খুব ফাটা ফাটা ।
ভাজার পরও পিঠের গা বা উপরভাগ মসৃণ
হলে জানবেন মিশ্রণ ঠিক হয়নি কোথাও
নিশ্চিত কমবেশি হয়েছে । যে কেউ এটা নিজের
মতো করে বানিয়ে দেখতে পারেন । এই  ভাজা
পিঠের কাছে আর কোনো পিঠেই  দাঁড়াতে
পারবেনা । © অলোক কুন্ডু

শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডু -র কবিতা

নববর্ষ ১৭

সুখেদুখে এই আমার
তোমাকে স্বাগত জানানো বার বার
রাতের আকাশও হবে আজ
আলোয় রাঙানো মুচমুচে ।
মা'র গড়া রুটি, খেঁজুরের গুড়
সে সব ভুলেছি আজ কেকে
নিউইয়ার আসে বার বার
ঋণগুলি আজও পুষি বুকে ।
পুরনোকে বিদায়ের পালায়
চির নতুন উজল আলোয়
সত‌্যের মতো করে আজও
তবু অন্ধকার থেকে যাবে জানি ।
নিষ্ঠুর যে সেও যেন বাতিদানে
বিবেকে জ্বালায় আজ আলো
আমি যাকে দুঃখ দিয়েছি কাল
তার কাছে ক্ষমা চাই আজ ।
যে বালিকা অন্ধ চিরকাল ধরে
তবু সে হাসি দেবে আমায়
আলো জ্বলা নবীন সময়ের কাছে
ঋণ আমার শুধু বেড়ে যাবে ।
নববর্ষ সাক্ষী থেকো আজ
সবার কাছে পাঠিও এই কথা
স্বাগত তোমাকে সতের
সুখেদুখে এবছর এবাড়িতে থেকো ।
© অলোক কুন্ডু

বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা

নেমে আসছে শীত আরও শীত / অলোক কুন্ডু

অন্ধকারসমূহ মায়া মাখতে শুরু করতেই
মেয়েটির একমাথা চুলে উড়তে লাগলো
অবিকল পশমের মতো ।
রাতের শিশির মাখলো যে বাতাস
সে স্পষ্ট জানতে পারলো ছেলেটির মুখমন্ডল
হীমের পশম তার অবিরত ক্ষমতা বাড়ায়
ঘনতর নীল জলের চৌদলে দুলছে যে চাঁদ
সেও জানে খেলার লুকোচুরি অবিকল
অন্ধকার ছায়ার অন্তরাল থেকে ক্রমশ ঘন হওয়া
যে চিকনের কারুকাজগুলি আলাপে আলাপে
অতি কাছে নূপুরের শব্দের মতো লাগে
এখন তা নিঃশ্বাসের দাপট ​নিয়ে
নদীর শব্দের চেয়েও তীব্রতর হতে চায়
মেয়েটির মাথা ছোঁয়া খেয়ালি নিঃশব্দ কাঁধে
চুপিচুপি নেমে আসছে শীত আরও শীত
নদীপার জানে শুধু কতখানি তাপ কার কাছে
ধীরে ধীরে সফকৎ আমন আলীর গজলের
একই শব্দ বার বার বার বার বয়ে চলেছে নদী ধরে ।
© অলোক কুন্ডু

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

অলোকের লেখালিখি

শোনা / অলোক কুন্ডু

বিশ্বাস কর ছাই আর না কর
ছোটবেলায় আলিপুর চিঁড়িয়াখানা থেকে
নিশুতি রাতে বাঘের ডাক উড়ে আসতো
তখন কলকাতায় বাঘের মতো
মানুষ ছিল সব ।
গঙ্গা পেরিয়ে খিদিরপুর থেকে চলে আসতো
জাহাজের ভোঁ ।
এই তো সবে চার বছর আগে
কারা যেন খুব করে বললো
টিভিতে কাগজে চায়ের দোকানে ।
সেই থেকে শোনা ৩৪ বছরের গল্প
কবে শেষ হবে গো এই সব ?
গতকাল সেলুনে চুল কাটতে গিয়েছিলাম
নাপিত সান্টুদা বললো
কানের কী দোষ বল
যা শোনাবে সবতো শুনতে হবে তোমাকে
যদি বল তো চুলের মতো কানটাও কেটে দি
সান্টুদার হাসি আর থামে না ॥

বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬

অলোকের লেখালিখি

পিঙ্ক সিটি থেকে পিঙ্ক রঙ নিয়ে বুঝিবা
গাট্টুর ব্রাসে ভিজিয়ে ভিজিয়ে লাইনে
গুলাবী গ‌্যাঙের পেছনে দাঁড়িয়ে যেতেই
গোলাপি কাগজ একখানি সবে পেলাম
© অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...