বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮

Poetry of Alok Kundu

(ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট )
হারের দুঃখ হাসিতেই অবিরল
অলোক কুন্ডু ©

আজকে জেতা সবার হৃদয় যেন
দলের জার্সি পরেই ছিলেন আগে
খেলোয়াড়ীর দিল দরিয়া হাতে
আদর দিলেন প্রতিটি পুরুষ কাঁধে ।

এই পৃথিবী দেখলো দুচোখ ভরে
দেশের প্রধান খেলার কাছে ছোট
স্নেহের হাতে মায়ের সান্ত্বনাকে
তুলে ধরলেন বিশ্বকাপের মাঠে ।

এই পৃথিবী দেখলো নতুন কিছু
হারের দুঃখ হাসির বিভিন্নতায়
জয় করলেন সারা পৃথিবীর মন
এই মহিলা শুধু প্রেসিডেন্ট নন ।

রাজকুমারদের মুষড়ে পড়া গালে
একে একে এঁকে দিলেন জিত
প্রেসিডেন্টের জলাঞ্জলি দিয়ে
ভূবনজুড়ে নামিয়ে দিলেন মেঘ ।

অঝোর ধারায় ফুটবল বুঝি কাব্য
দূরে বসেও আমাদের চোখে জল
বৃষ্টি ধারায় ফুটবল মাঠ‌ও ভাসছে
হারের দুঃখ হাসিতেই অবিরল ।

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১৮

অলোক কুন্ডুর কবিতা Poetry of Alok Kumar Kundu

ওইটুকু অনীবার্য জেনো / অলোক কুন্ডু ©

প্রশংসা আমাকে ছুঁতে পারুক না পারুক
তাবলে প্রশংসার দাবিদার কখন‌ও ন‌ই
হাততালি কেবলমাত্র গোষ্ঠী তৈরি করে
যেখানে যেখানে অবিরাম হাততালি পড়ে
সেখানে বহুকাল মাড়িয়ে দেখিনি ।
যুক্তির বাইরে কোনো আনন্দ থাকেনা
আমার ভালো থাকাটা আর্থিক নয় গো
তোমরা যেখানে কবিতা পড়ে আনন্দ পাও
ওইসব মঞ্চ কিছু দিতে পারতো যদি
আমিও যেতাম ভরপুর আনন্দ বাজাতে ।
হাততালিগুলো বড় সাজানো মনে হয়
এক‌ই মঞ্চে হাততালি ভিন্নতর
তাই ওইসব নয় কাগজ কলমে থাকো
আনন্দের সমস্ত উপকরণ ওইখানে
ওই আনন্দে কার‌ও সাহায্য লাগেনা
ওখানে মুক্তির আনন্দ এত বিরাট যে
হাততালি পাওয়ার জন্য লোক লাগেনা
হাততালি পাওয়ার কোনো গোষ্ঠী নেই ওইখানে
মুক্তির আনন্দ কোথায় খুঁজতে যাবে বলো
তোমার নিরাপত্তা হলো লিখতে পারা
লেখা যেন কখন‌ও ক্রীতদাস না হয় ।
তোমার লেখা কখন‌ও যেন আজ্ঞাবহ না হয় তোমার ভালো থাকার অর্থ খাতা কলম
যাই মনে ভাবোনা কেন অনেকে কিন্তু ভালো নেই
স্বাধীনতার বাতাস বুকে খেলে যায় যেদিন
সেদিন আমি একটা কবিতা লিখতে বসি
একটা কবিতার জন্য বসে থাকি অনেক সময় ।
কিন্তু যে স্বাধীনতার কথা বলতে চাই
সেটা শুধু সাফল্যের নয় ওইটুকু দরকার
ওইটুকু স্বাধীনতা না পেলে কবির মৃত্যু হয়
চিন্তার স্বাধীনতা থেকে লিখতে পারার স্বাধীনতা
ওইটুকু বড় দরকারি ওইটুকু অনীবার্য জেনো ।

রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮

Poetry of Alok Kundu -Rain

বৃষ্টি/ অলোক কুন্ডু

কাল থেকে যত বৃষ্টিরা
এদিকের পথে এসেছিল
আজ তারা সব ঝমঝম্
যেন হ্যান্ডমেডজুড়ে জলরঙ ।

মেঘ জড় হওয়া সকালে
ছাতা যত তত রকমারি
কার‌ও কার‌ও ঘুম ভাঙেনি
কোনো ভোর এসে ডাকেনি ।

যত বৃষ্টির জলে লহরি
তত অর্গানে সুর ভাসছে
ফেসিয়াল মোছা বালিশের
আড়মোড়া মেঘমল্লার ।

যত জল ট্রাম রাস্তায়
কেউ ভিজছে কেউ পস্তায়
উত্তর জানতে চেওনা
বারান্দা যেন গান গায় ।

যতখানি মেঘ জমেছিল
আর‌ও বেশি তার ধারাজল
কারো বুকে জল জমেছে
এফ‌এমেতে স্বর মল্লার ।

কেউ কাঁচখানি সরাবেই
কারও চোখে ঘুম জড়িয়ে
একদিন আজ এইদিনে
চিঠি লিখেছিল কেউ কাউকে ।

সেই ভেজা চিঠি নৌকোয়
হুহু ধারাজল উজানীর
যতখানি যেতে পারবে
ভেজা ভেজা পিচ রাস্তায় ।

আজ‌ও বৃষ্টিরা অবিরাম
সাথে ট্রামগুলি ভিজছে
মেঘজড় হওয়া সকালেই
ধ্বনিতে রাগ-মল্লার ।

© অলোককুমার কুন্ডু

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১৮

আহা রে মন ( Bengali Cinema Aaha Re Mon)

আহা রে মন (সিনেমা)
-------------------------
শুধু আমি না পৃথিবীর বহু মানুষের প্রথম
পছন্দের লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া
মার্কেজ । মার্কেজ লিখে গেছেন -
" মানুষের পরাজয় নেই " । মার্কেজ
বিখ্যাত ,তার-"জাদু বাস্তবতা "-র জন্য । পাঠকরা তার গল্প পড়তে পড়তে হয়
চরিত্র হয়ে যান অথবা কাহিনীর চরিত্ররা
পাঠকে রূপান্তরিত হন। মার্কেজের যাদু বাস্তবতায় একজন ৯০ বছরের
সাংবাদিক, গণিকাপল্লীতে গিয়ে
একজন ১৪ বছরের কিশোরীর যৌনসঙ্গ
অর্থাৎ শরীর চায় । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে
সারারাত কাটানোর পর কিশোরীটি কুমারী থেকে যায় । কিন্তু তার কথনে যে কাব্যিক
ব্যঞ্জনা থাকে , তা পড়তে পড়তে পাঠক নিজেকে চরিত্র বলে ভেবে নেয় । মার্কেজের
-" নিঃসঙ্গতার ১০০ বছর "এই উপন্যাস
জাদুবাস্তবতার উপর প্রতিষ্ঠিত ।
মার্কেজের কাহিনীতে বিচিত্র প্রেমের
সন্ধান পাওয়া যায় । বহুগামী প্রেমের নিঃসঙ্গতার শেষে আবার মিলন হয়
পুরনো প্রেমিক-প্রেমিকার । মার্কেজ
নিজে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ে বেঁচে
ছিলেন । প্রতিম দত্তগুপ্তর " আহা রে
মন " -এ এই অসুখের মধ্যে থেকে বেঁচে
ওঠার যুদ্ধ ও বিচিত্র প্রেমের এক
রিয়ালিজম যা মার্কেজের
সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের সঙ্গে
প্রায় মিলে যায় । যে কারণে মার্কেজের
উপন্যাস পড়তে বসলে উঠতে আর মন
চায়না । ঠিক একই কারণে সেই
অভিনবত্ব যদি সিনেমায় ১১০ মিঃ-এর
মধ্যে দর্শকের মনের পরতে পরতে এক ভালোলাগার একটি আস্ত প্রাণ তৈরি
করতে পারেন পরিচালক ,তখন-আহা
রে মন দেখার পর সেই তৃপ্তি চোখে-মুখে
ফুটে ওঠে । তবে সিনেমাটির কাহিনিতে
বেশ কিছু ট্যুইস্ট আছে যা সকলের বেশ
ভালো লাগবে । ইতিপূর্বে প্রতিম দত্তগুপ্তের
দুটি বাংলা সিনেমা - সাহেব বিবি গোলাম
এবং মাছের ঝোল ,অনেক‌ই দেখেছেন ।
আহা রে মনের মুখ্য ভূমিকায় যারা
অভিনয় করেছেন তারা হলেন -আদিল
হোসেন, মমতা শঙ্কর , অঞ্জন দত্ত, পাওলি
দাম,ঋত্বিক চক্রবর্তী, চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী,
পার্নো মিত্র ও পরিচালক নিজে । এইসঙ্গে পরিচালক সিরিয়াল থেকে এনেছেন
কয়েকজন ভালো চরিত্রাভিনেতাকে ।
গল্পটিও প্রতিমের নিজের লেখা ।
মিউজিক কম্পোজ করেছেন - নীল
দত্ত । টাইটেল সংগীতের লিরিকস,
শ্রীজাতের । ১১০ মিনিটের ছবি ।
চারটি ফ্রেম নিয়ে সিনেমাটি খাড়া
করেছেন পরিচালক প্রতিম দত্তগুপ্ত ।
চারটি ফ্রেমের মধ্যে এক নম্বর ফ্রেমে
দেখা যায় এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন
অফিসার নিঃসঙ্গ পূর্ণেন্দু পাহাড়ী ওরফে
আদিল হোসেনকে ( ইংলিশ ভিঙলিশের শ্রীদেবীর স্বামীর ভূমিকায় অভিনয়
করেছিলেন) । অন্য একটি ফ্রেমে
একটি ত্রিভূজ নিঃসঙ্গতা ( আদিল
হোসেন, অঞ্জন দত্ত, মমতা শঙ্কর) ।
আসলে পূর্ণেন্দু পাহাড়ীর নিঃসঙ্গতায় , মার্কেজের বিচিত্র প্রেমের সন্ধান এখানে
বাংলা সিনেমায় , এই প্রথম দেখতে পাওয়া গেল । আনলেন প্রতিম দত্তগুপ্ত । পূর্ণেন্দু এখানে দুটি ফ্রেমের কমন ক্যারেক্টার এবং কাহিনীর ট্যুইস্ট । আরকটি ফ্রেমে থাকে
চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী ও দেব । চতুর্থ আর
একটি ফ্রেম আছে এই সিনেমাটিতে ।
এই ফ্রেমের মুখ্য চরিত্র ঋত্বিক চক্রবর্তী ও পার্নো মিত্র । এই দুজনকে নিয়ে আসলে
শুরু হয় হাল্কা চালে দর্শকদের মনোরঞ্জন
সৃষ্টি করা দিয়ে । এই ফ্রেমে চুরি দিয়ে
যে মন্দ গল্পের শুরু । চিত্রনাট্য তাকে শেষে
মানববন্ধন , মানুষের জয় ( মার্কেজের
থিওরি ) এবং এইসঙ্গে একধারে যেন
তারা দুজন নাটকের সূত্রধরের কাজ ও
মানবিক আবেদনের এক সেতু নির্মাণে
কারিগর হয়ে যান । এই ফ্রেমটিকে
পরিচালক বিভিন্ন জাম্প কাটের মাধ্যমে এমনভাবে অন্য একটি ফ্রেমে জুড়ে দেন
যে , পর্দায় দ্বিতীয় ট্যুইস্টের সৃষ্টি হয় ।
ভরপুর মজা দিয়ে দর্শকের মনোরঞ্জনের
উদ্দামতাকে এই জুটির মাধ্যমে মাতিয়ে
তোলেন । এক‌ই সঙ্গে খারাপ থেকে
আলোয় ফেরার বার্তা দিয়ে এবং বিচিত্র
প্রেমের সন্ধান দেন পরিচালক, এখানেও । আসলে পরিচালক এখানে মার্কেজ
অনুপ্রাণিত এক বাঙালি । মার্কেজের
চিঠি লেখার বিষয়বস্তু , বহু বছর পেরিয়ে
পুরনো প্রেমিকার সন্ধান , অর্থাৎ যে
বিষয়বস্তুর মধ্যে আমরা গল্পের সন্ধান
বাস্তবে করার কথা কখন‌ও ভাবিনা,
তাকেও মার্কেজ বাস্তবে রূপান্তরিত
করেন । মার্কেজের এই যে যাদু বাস্তবতা
তাকে নোবেল এনে দিয়েছে । তাকেই
প্রতিম দত্তগুপ্ত বাংলা চলচ্চিত্রে তুলে
ধরেছেন নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও চলচ্চিত্রের পরিভাষা দিয়ে। প্রেম মার্কেজের প্রধান
একটি বিষয় , কিন্তু প্রতিম দত্তগুপ্ত কখনও জেমসবন্ডের ধাঁচে চিত্রনাট্য তৈরি করে
অ্যান্টি চরিত্রে জেমস বন্ড ধাঁচের প্রেম
তুলে আনেন । যা মার্কেজে নেই ।
আবার কখনও মার্কেজের চিঠির খোঁজের
সঙ্গে প্রেমের সন্ধান আবিষ্কার করেন । কাহিনীতে টুইস্ট , কাহিনীতে বুদ্ধির খেলা । ছোটগল্পের রূপরেখা । চিত্রনাট্যে টানটান
গল্পের বিবরণ । এডিটিংয়ের জাম্প
কাটে সৌন্দর্য বিকশিত হতে থাকে
প্লট থেকে প্লটে । কাহিনীর সাবলীল
এই যাওয়া আসলে তখন দর্শকদের
ভালো লাগার আয়োজন করতে থাকে । 
সুর ও লিরিকের প্রাণবন্ততায় তা তখন আদ্যপান্ত একটি বাংলা সিনেমাও দেখতে  থাকি । শুধু নির্মল প্রেম খেলা করতে
থাকে পর্দাজুড়ে । যার কাহিনী রচনা
প্রতিম দত্তগুপ্তের নিজস্ব ঘরাণা ।
তিনটি আলাদা গল্পকে সুনিপুণ কাঁথাস্টিচে একটি মৌলিক ইউনিট হিসেবে একটা সিনেমাতে তুলে ধরা খুব সহজ নয় ।
কিন্তু তার দর্শনে (show) শুধুই প্রেম
আর প্রেম ছাড়া অন্য কিছু নেই ।
নির্মল মজার আসর । কথপোকথনে
বাক্য গঠনের নিপুণতা । আজকের
দিনের বাস্তব ঘরোয়া কথাবার্তা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ের মুগ্ধতা ,
সেট-সেটিঙের দূরদর্শিতা এইসব মিলে
আহা রে মন ,এক সুন্দর সেতু নির্মাণ ।
ভুল শুধু পোস্ট অফিসে চিঠিটা ফেলে
রেখে বেরিয়ে আসা আর অঞ্জন দত্ত ও
মমতা শঙ্কর ( চারুলতা দেবী ) যখন
হাঁটছিলেন তখন মমতা শঙ্কর প্রথম
দিকে যে পায়ে বাত নিয়ে বয়স্কদের
মতো হাঁটছিলেন একটু পরেই দ্বিতীয়
থ্রুতে তিনি সেই মতো হাঁটতে ভুলে
গেলেন । আদিল হোসেন যে স্তরের
অভিনয় তুলে এনেছেন তাকে জাতীয়
পুরস্কারের জন্য ভাবা উচিত । শেষে
বলবো তিতলি চরিত্রের চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তীর
দুর্দান্ত ও অপূর্ব অভিনয়ের কথা । এই
সিনেমার একটি ফ্রেমের নায়িকা চিত্রাঙ্গদা।
তার দুটি অসুখ । এক হচ্ছে ফোবিয়া
অন্যটি একটি রক্তের ক্যানসার । যে মারণ
রোগ সারানোর কর্ম সাধারণের ক্ষমতায়
নেই , এইদেশে ২৫/২৬ লক্ষ টাকার খরচ
করার সরকারি কোনো ব্যবস্থা নেই ,
নাগরিকের এই অসহায়তা পরিচালকের
চোখ এড়ায়নি । আমি বলবো প্রতিম
দত্তগুপ্ত - বৃদ্ধাশ্রম, বয়স্কদের
একাকিত্ব-প্রেম , হিরো ফোবিয়া , মারণ
রোগের চিকিৎসা-ব্যয় এই চারটি মৌলিক
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যাকে কাহিনীর
করুণ ট্যাগ বা ট্যাশল্ হিসেবে ব্যবহার
করেছেন যা আমাদের বোধগম্য হলে
ভালো । সিনেমার অন্যতম ফ্রেমে থাকে
এক মৃত্যুময় অসুখের রোগগ্রস্ত যুবতী
( পথের পাঁচালীর দুর্গার এখানে জয়
হয়েছে ) ও তার বিচিত্র প্রেমের নিঃসঙ্গতার ( হিরো ফোবিয়া ) সঙ্গে মেয়েটির শরীরে
মারণ অসুখটি গল্পের সিনেমাটিক প্রয়োজনে প্রতিম দত্তগুপ্ত এই চিত্রনাট্যে ব্যবহার করতে ভোলেননি । এই সিনেমায় ম্যাজিক
রিয়ালিজম্ প্রতিটি মূল চরিত্রের সঙ্গে
তিতলি চরিত্রে চিত্রাঙ্গদার মধ্যেও দেখা
দিয়েছে যা এতটুকু অবাস্তব নয় এবং আধুনিক যুগে অনেক অভিভাবক যার ভুক্তভোগী ।
সেই অপূর্ব চরিত্রটির অসামান্য রূপ দিয়েছেন চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী ।( যিনি ইতিমধ্যে হিন্দি সিনেমা -" টিকলি অ্যান্ড লক্ষী বম্ব /
Tikli and Laxmi Bomb " করে বেশ কয়েকটি দেশী-বিদেশী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন )। এই সিনেমাতেও তার
প্রসংশনীয় এবং সাবলীল অভিনয় ও
চোখের দীপ্তি এই চরিত্রটিকে চমৎকৃত
করেছেন । পরিশেষে পরিচালক
চলচ্চিত্রের মহানায়কদের যে মানবিক
একটা কর্তব্যবোধ থাকতে হয় সেটিও
পরিপাটি করে সিনেমাটিক যাদুবস্তায়
সমাপ্ত করেছেন । আদ্যপান্ত একটি বিচিত্র প্রেমের ( forbidden of fall in love)
সিনেমা যা প্রেম ও তার নিঃসঙ্গতা দিয়ে
নরম করে মোড়া । প্রেমের যে পরাজয়
নেই ও প্রেম যে বিচিত্রগামী ( শরীরের
যে কোনো সম্পর্ক নেই এই যে চিরকালের
থিম) মার্কেজের এই সাইকোলজি তার‌ই
দুর্দান্ত এফেক্ট দেখতে পেলাম - আহা রে
মনেতে । পরিচালক কিন্তু বাস্তবায়িত ভাবে
এই বিচিত্র প্রেমের গল্পের চলচ্চিত্রায়িত করেছেন যা এক কথায় অনবদ্য । সৃজিৎ মুখার্জি এই সিনেমায় গান লিখেছেন এটাও
বড় পাওনা । অভিষেক ঘোষ প্রযোজিত ।
গান গেয়েছেন মধুবন্তী বাগচী ও দুর্নিবার
সাহা । চলচ্চিত্র পরিচালক প্রতিম
দত্তগুপ্ত-র "আহা রে মন" এই ২২/৬/১৮
রিলিজ করেছে । আগেই বলেছি
ছবিটিতে একাধিক ক্যানভাস আছে ।
একটি ক্যানভাসে কাজ করেছেন চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী । একজন ক্যানসার রোগগ্রস্ত
যুবতীর ভূমিকায় , তিতলির চরিত্রকে
রূপদানের জন্য । পথের পাঁচালীর দুর্গার
পর আবার বাংলা সিনেমা সুযোগ পেয়েছিল আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা প্রোজেকশনে বাংলা সিনেমাকে তুলে ধরার ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ও
সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় পথের পাঁচালী
হয়ে ওঠে কবিতা । আহা রে মন সেখানে
নিজের কাহিনীতে প্রতিম দত্তগুপ্ত অনড়
থেকে একটি সুন্দর প্রেমের ছবি ও মজার
সিনেমা উপহার দিয়েছেন । আহা রে মন দেখে আমি তৃপ্ত । খুব ভালো লেগেছে আমার বটে
কিন্তু এই সিনেমার একটি ফ্রেমে তিনি যে
ক্যান্সার রোগগ্রস্ত তিতলির চরিত্র এঁকেছেন
এবং একটি ট্যুইস্টৈর মাধ্যমে সিনেমাটির
একটি অংশকে মানবিক এক সেতুতে নিয়ে গেছেন , যে সেতুর অপর দিকে সিনেমার এক মহানায়কের দেখা মিলেছে । আর তিতলির বিস্ফারিত চোখের দিকে আমরা অপার
বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকেছি । তখন মনে হয়
পরিচালক ছবির হাইলাইট কোনটা হবে সেটি
বুঝতে বিরাট ভুল করে ফেললেন । পথের পাঁচালীর দুর্গার এখানে হয়তো জয় হয়েছে
ঠিকই । কিন্তু এখানে পরিচালক প্রতিম ডি
গুপ্ত গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ অনুপ্রানিত
হয়ে তিতলির চরিত্রকে অন্যভাবে চিত্রায়িত করেছেন এবং তা করতে গিয়ে তিতলির
চরিত্রে তিনি বুনেছেন এক দক্ষ অভিনয়
ক্ষমতা । যা সম্পূর্ণ করে দেখিয়েছেন
চিত্রাঙ্গদা ,১০০ এর মধ্যে ২০০ ।
চিত্রাঙ্গদার মাথার চুল কেটে প্রায় ন্যাড়া
করে দিয়েছেন পরিচালক শুধুমাত্র তাই
নয় যে স্তরের অভিনয় চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী
করেছেন তা মুগ্ধতার সঙ্গে দেখতে হয় ।
আর একটি রোগগ্রস্ত দুর্গা যাকে সাপোর্ট
দেওয়ার মতো কোনো অপু নেই ( দেখেছিস
দিদি আজ কী রকম রোদ উঠেছে )
এখানে । তিতলি অর্থাৎ চিত্রাঙ্গদার
চরিত্রটিকে আর‌ও একটু বাড়িয়ে ,
পরিচালক যদি বৃদ্ধাশ্রম ও ইমিগ্রেশন
অফিসের চ্যাপ্টারটা বাদ দিতেন তাহলে ( মার্কেজের থিওরি মানুষের পরাজয়
নেই ) এই সিনেমাটি শুধু তিতলি /
চিত্রাঙ্গদার জন্য প্রতিম জাতীয় পুরস্কার
পেয়ে যেতেন এবং চিত্রাঙ্গদা যে স্তরের
সরল নিস্পাপ এক যুবতীর চরিত্রে মিশে
গিয়ে যে স্তরের হুবহু অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন তা হয়ে উঠতো চিত্রাঙ্গদার
অভিনয় জীবনের বিশ্বজয় । যদিও
চিত্রাঙ্গদা ইতিপূর্বে Tikli and Laxmi
Bomb-এ মূল চরিত্রে অভিনয় করে
দেশ ও বিদেশের সম্মাননা পেয়েছেন ।
কিন্তু আহা রে মনের পরিচালক যদি
শুধুমাত্র প্রেমের সিনেমা করার দিকে না
ঝুঁকে তার এই সিনেমার বিষয়বস্তুতে
তিতলিকেই ফোকাস করে তুলতেন তাহলে
চিত্রাঙ্গদার দুর্দান্ত অভিনয়ের গুণে এই
সিনেমা মানবিক দলিল হয়ে যেতে পারতো । কিন্তু পরিচালক একটি অন্যরকম মনোরঞ্জনকর সিনেমা আমাদের উপহার
দিলেন যা অত্যন্ত ভালো একটি সিনেমার শিরোপা পেয়েছে বটে কিন্তু আমার
আপসোস তিতলির চরিত্র ও চিত্রাঙ্গদাকে পেয়েও সিনেমাটিকে এই দিকে কাজে না লাগিয়ে পরিচালক জাতীয় পুরস্কার হাতছাড়া করলেন । যতদূর শুনেছি হাজার স্ক্রিন টেস্ট
নিয়েও তিতলির চরিত্রে আর কাউকে যখন
পাওয়া গেলনা , তখন‌ই চিত্রাঙ্গদার কাছে
পরিচালক অনুরোধ রাখেন এবং চিত্রাঙ্গদা
তা সফল করে তোলেন । © অলোক কুন্ডু




রবিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৮

Satyajit Ray written by Alok Kumar Kundu

কূপমন্ডুক হোয়োনা, শঙ্কু ও সত্যজিৎ রায়
--------------------------------------------------------
আগন্তুকে সত্যজিৎ রায় শেষ দৃশ্যে উৎপল
দত্তের মুখে দুটি ডায়লগ (কথা) ব্যবহার করেছিলেন (১) ছোট ছেলেটি অর্থাৎ নাতি
সমান শৈশবকে শুনিয়েছিলেন কূপমন্ডুক হোয়োনো । আসলে বাঙালিজাতির উদ্দেশ্য
বলেছিলেন কিন্তু বাঙালি তার আজ‌ও পাঠ
উদ্ধার করতে পারেননি । (২) আউফভিদার
জেহেন ( আবার দেখা হবে ) --জার্মানদের
বিদায়ী সৌজন্য বাক্য ( তার মানে কর্মঠ দেশ,
কূপমন্ডুকতার যেখানে কোনো স্থান হয়না,
পৃথিবীর পরিচ্ছন্ন, বোধ-বুদ্ধির দেশ
জার্মানিতেই তিনি আবার ফিরে যাচ্ছেন ।

সত্যজিৎ রায় কি সত্যিই পৃথিবীর ৬৯ টি
ভাষা জানতেন । আমি জানি তিনি একমাত্র
ভারতীয় তিনি ৬৯ টি ভাষা নিয়ে অল্পবিস্তর
পড়ালেখা করেছেন এবং বুঝতেন । তিনি কি
হায়ারোগ্লিফিক পড়তে পারতেন ? আমি
বলবো পারতেন । তিনি কি পদার্থ বিজ্ঞানী
না তবে বিজ্ঞানের সকল শাখায় তাঁর অবাধ
যাতায়াত ছিল । তিনি কি বিশ্বের সকল
দেশের ভৌগোলিক অবস্থান জানতেন ?
আমি বলবো জানতেন । বিশ্বের সমস্ত
ধর্ম , সামাজিক রীতি নীতি ও বিশ্বসাহিত্য
বিষয়ে সম্যক ধারণা কি তাঁর ছিল ? আমি
বলবো ছিল । তিনি কি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিধর,
নির্লোভ, সৎ ও স্বদেশ প্রেমিক, ভারতের
সনাতন ইতিহাস সম্পর্কে তিনি শ্রদ্ধাবান
ছিলেন ? আমি বলবো হ্যাঁ ছিলেন । মন্ত্রী
যতীন চক্রবর্তী একবার শহীদ মিনারের
মাথায় লাল রঙ করেছিলেন ( সত্যজিৎ
রায়ের বন্ধুরা ছিলেন সকলেই কম্যুনিস্ট
এবং তাদের প্রায় নিত্য যাতায়াত ছিল তাঁর বাড়িতে) সর্ব প্রথম সত্যজিৎ রায় শহীদ
মিনারের লাল রঙে আপত্তি তুলেছিলেন । 
বারবার তিনি বলেছেন তাঁর বাংলা ভাষায়
ব‌ই লিখে, লেখালেখি করেই সংসার চলে ,
সিনেমা করে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন মাত্র ।
বাংলা ভাষার স্ক্রিপ্ট নিয়ে সারা বিশ্বে এখনও
পিএইচডি করছেন অনেকে । বিশেষ করে
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টো
অনেকটাই সত্যজিৎ কেন্দ্রিক । অথচ
প্রেসিডেন্সিতে যখন পড়তেন - প্রতাপ চন্দ্র
চন্দ্র , মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে
তখন কলেজের ইংরেজি শিক্ষক চেয়েছিলেন
সত্যজিৎ ইংরেজি অনার্স করুক । সত্যজিৎ
রায় তার করেননি । তাঁর ইংরেজি অধ্যাপক
অভিমানে অনেক দিন কথা বলতেন না কারণ
পাশ সাবজেক্টে ইংরেজিতে সত্যজিৎ রায়
সব থেকে বেশি নম্বর পেতেন । তবু বাঙলা
ভাষার কোথায় কতখানি প্রয়োগ করবেন
তিনি ছাড়া আর কেউ বুঝি জানতেন না ।
প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বাংলা কল্পবিজ্ঞান
সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় চরিত্র । এই চরিত্র
বাঙালিদের কাছে প্রোফেসর শঙ্কু নামেই
সমধিক পরিচিত । তিনি একজন বৈজ্ঞানিক
ও আবিষ্কারক । ভারতের সনাতন ইতিহাস
সম্পর্কে তিনি শ্রদ্ধাবান । ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ
রায় এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন ।

এই লেখাটির মধ্যে আমি উপরের দিকে দ্বিতীয়
প্যারায় সত্যজিৎ রায়ের জানা ও জ্ঞান সম্পর্কে
যে সকল প্রশ্ন তুলেছি । সেগুলির সব কটি
প্রোফেসর শঙ্কুর চরিত্রের গুণ ---প্রোফেশর
ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর চরিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে
সত্যজিৎ রায়ের লেখা ওই গুণগুলি শঙ্কুর
কান্ডের মধ্যে পাওয়া যায় । আসলে শঙ্কু
কল্পবিজ্ঞানের চরিত্র হলেও তার আচার
আচরণ শিক্ষার প্রাচুর্য সবটাই সেইমতো
গল্পের মধ্যে রসদ হিসেবে আমরা তখন
পড়তে পড়তে শুধুই প্রোফেশর শঙ্কুর মধ্যেই
মজে যাই ---তখন আর মনে থাকেনা যিনি
এইসব লিখছেন তাঁর নিজের কথা তাঁর
নিজের গুণাবলীতে শঙ্কু জারিত হয়নি তো ?
তাই প্রোফেসর শঙ্কুর গুণাবলী সত্যজিৎ রায়ের
গুণাবলীকে আমি বাছাই করতে পারিনা ।
© অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৮

Poetry of Alok Kumar Kundu : অলোক কুন্ডুর কবিতা

অক্ষরের আজ কোনো দাম নেই
অলোক কুন্ডু

ভাষার কোনো অক্ষর হয় না গো
আসলে হাতেখড়ি একটা লোক দেখানো বিষয়
ভাইকে ফাঁকি দিয়ে দলিল তৈরি করতে শেখায়
খুন করে জেলের বাইরে থাকতে শেখায়
অক্ষর জানারা সহজেই দল ভারী করে নেবে
আসলে তোমরা যাকে অক্ষর বলো
তার সঙ্গে ভাষার কোনো যোগাসূত্র নেই
ভাষার একটা নাড়ি আছে
তার স্পর্শ স্পন্দন নড়াচড়া সব আছে
কেউ গান গাইলে বুঝতে পারি
ওই বুঝি প্রাণের ভাষা গো
এই তো হৃদয় যেন নড়ে উঠলো
সমস্ত শরীরে বিদ্যুতের ছবি
সমস্ত শরীরে বৃষ্টি পড়ছে যেন
গভীর দুঃখের সময় রবীন্দ্রনাথের গান
আমার দুঃখের প্রলেপ
কিন্তু অক্ষর তো বানানো
মেকি কতগুলো আঁচড় মাত্র
অক্ষরের সিংহভাগ এখন প্রাণহীনের দখলে
যাদের প্রাণ নেই তারা অক্ষরকে বেছে নেয়
কিন্তু ভাষার স্পর্শ স্পন্দন নড়াচড়া সব আছে
তবু কেউ কেউ শেখাবে সাক্ষরতার কথা
লিপির কথা হরফের কথা
একদল যারা অক্ষর বাগিয়ে নিয়েছে
তারা কতটা অহংকারী হয়েছে জানো কি
কথা বললেই বুঝতে পারবে ।
অথচ যারা শুনেছে তারা বলেন
স্বামীজি তার পোষ্য হাঁস ছাগল কুকুরের সঙ্গে
তাদের ভাষাতে অবিকল কথা বলতেন
আর তাই সারা পৃথিবীর মানুষ
তার একটি মাত্র বাক্যে
হ্যাঁ মাত্র একটি বাক্যে--বুঝে নিলেন সব ।
কিন্তু তুমি যদি সাধারণ হ‌ও
অক্ষর জানিয়েরা তোমাকে বলহীন করে দেবে
তোমাকে নিয়ে কানাকানি করবে
তোমাকে হেয় করবে তোমাকে অপমান করবে
হাততালি দেবে তোমার পেছনে
এখন অক্ষর‌ওলারা খেউড় জেনে গেছে
অথচ কটা মাত্র আঁচড়ে ভাষা ছিল বলে
অতুলপ্রসাদ শুনতে পেলে
আজ‌ও ঘরের আলো নিভিয়ে দিই
আজ‌ও কদম কদম বাড়ায়ে যা শুনলে
দরজার বাইরে ছুটে আসি
ওই বুঝি সুভাষচন্দ্র আসছেন ।
গতকাল জয়পুরের জঙ্গলে
জল ঢেলে ঢেলে চান করাতে করাতে
কুনকি হাতিকে মাহুত বললো--
আর‌ও চান করবি ?
হাতি আনন্দে শুয়ে পড়লো
আমার চোখের সামনে
ভাষা অবিকল বুঝে নিতে পারলো আহ্লাদ
অথচ মানুষ বড় কাঁদছে
তুমি মানুষের পাশে দাঁড়াও
কেউ সে ভাষা কানে নিচ্ছে না
শুনতেও চায়না আজকাল
অথচ অক্ষর জানতে কার‌ও বাকি নেই
কবির অক্ষরের আজ বুঝি কোনো দাম নেই
আজ কবিকে দরকার ছিল তার ভাষায়
রবীন্দ্রনাথ অতুলপ্রসাদ স্বামীজি সুভাষচন্দ্রকে
বড় দরকার ছিল আমার
ভাষার কাঙাল আমি আমার কাছে অক্ষরের আজ কোনো দাম নেই ।
© অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...