সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০
#Saranda tour
#Corona
শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০
চিন ভারত যুদ্ধ
বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০
ভারত চীন যুদ্ধ কোথায় দাঁড়িয়ে
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯
রেডিওর প্রাক্কালে প্রদীপের সলতে পাকানো থেকে আলো জ্বালানোর দেবদূত : অবহেলিত বাণীকুমার ও মহিষাসুরমর্দিনী প্রসঙ্গ একটি ঐতিহাসিক দলিল ও তার সম্ভার... ©® অলোক কুন্ডু শাহজাহানকে কে আর অতটা মনে রেখেছেন যতটা উদ্ভাসিত তাজমহল । তেমনি বাণীকুমার হয়ে গেছেন শাহজাহান । আর তাজমহলের রূপ পেয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । ১৮৯৫ সালে বঙ্গের কৃতী সন্তান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রথম বেতার তরঙ্গ সম্প্রসারণ করে দেখালেন। ১৯২২ ইংল্যান্ডের রেডিও জগতে দেখা দিল বিবিসি । ১৯২৪ এদেশে প্রাইভেট রেডিও ক্লাব চালু হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে একজন সেই রেডিও শুনতে পারতেন। মূলত ধনীদের মধ্যেই এই ধরনের রেডিও চালু ছিল --অনেকাল ধরেই । প্রথমে মাদ্রাজ-পন্ডিচেরির পর ২৩.৭.১৯২৭ বম্বেতে এই রেডিও হাউসের পত্তন হলো । পরে ২৬.৮.১৯২৭ হলো ওদের শাখা কলকাতায়। নাম হয় -ইন্ডিয়ান স্টেটস্ ব্রডকাস্ট সার্ভিস । Reits Microphone এ তখন সম্প্রচার হতো , দু-ফুট দূরে বসতে হতো মাইককে ছেড়ে । ১ এপ্রিল ১৯৩০ এই কোম্পানিকে পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করলেন ব্রিটিশরা , হলো - ইন্ডিয়া ব্রডকাস্টিং কোম্পানি । হেড অফিস বম্বের (মুম্বাই) ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস যেটা ছিল । তার নামও পরিবর্তন হয়ে গেছে । বাড়ি ভাড়া নিয়ে ১ নং গার্স্টিন প্লেসে কলকাতায় তাদের নতুন সংস্থার শাখা । অধিকর্তা হিসেবে আসেন- স্টেপলটন সাহেব । ভারতীয় অনুষ্ঠানের তত্বাবধায়ক হন ক্ল্যারিনেট শিল্পী - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার , সহচর হিসেবে যোগ দেন সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়াল ( বুড়োদা)। ১৯৩০ এ যখন বৃটিশ সরকার ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি অধিগ্রহণ করে নেয় এবং কর্মসূচি বর্ধিত করার কাজ শুরু করে তখন নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার সহকারী প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হন । সাহিত্যিক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী অন্যতম অধিকর্তা হিসেবে যুক্ত হন এই বেতার ব্যবস্থার সঙ্গে । অ্যানাউন্সার ছিলেন মোহনবাগানের রাজেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ওরফে রাজেন সেন । তখনও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যোগ দেননি । তিনি তখন এদিকে সেদিকে নাটক করে বেড়াচ্ছেন । স্তোত্রপাঠে তেমন করে নিমগ্ন হননি । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জন্ম হয় ৪.৮.১৯০৫ ও তিনি প্রয়াত হন ৩.১১.১৯৯১ । জীবনে নাটক বেতার নাটক ছাড়াও বিরুপাক্ষ ছদ্মনামে তার অনেক ছোট ফিচার ও নাটকের বই আছে । জীবদ্দশায় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাটক ও বই লিখেছেন । ছোট থেকেই কলকাতার তেলিপাড়া লেনের রাজেন্দ্রনাথ দে নামক এক পন্ডিত ব্যক্তির কাছে তিনি অল্পস্বল্প চন্ডীপাঠে তাঁর হাতেখড়ি নেন । তখনকার দিনের আবৃত্তিকার হিসেবে বীরেন ভদ্র মশাইয়ের নামডাক হতে থাকে । নাটকের দিকেই তাঁর বেশি মোহ ছিল । পরে আকাশবাণীর নাট্য বিভাগের দায়িত্বও সামলে ছিলেন । বীরুপাক্ষ ছদ্মনাম নিয়ে মঞ্চে ও রেডিওতে মজার অনুষ্ঠান ও নাটক সম্প্রচারে তিনি বাঙালির মন জয় করে নিয়েছিলেন । পরে রেলের ও সওদাগরি অফিসের চাকরি ছেড়ে রেডিওর সঙ্গে যুক্ত হলেও সরকার তাকে পেনশন দেয়নি বলে শোনা যায় । ১৯৩১ রেডিওতে একটা নতুন কিছু করার তাগিদে নৃপেন বাবু ও অন্যান্যদের অনুরোধে বাণীকুমারের পুরনো লেখা বসন্তেশ্বরীতে গদ্য পাঠে যৎসামান্য অংশ নিয়েছিলেন বীরেন ভদ্র কিন্তু তখনই তিনি তার জাত চিনিয়ে দেন রেডিওর কর্তাদের কাছে । ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বরে হাওড়ার কানপুর গ্রামে মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বেতারের মহিষাসুরমর্দিনীর শ্রষ্ঠা বাণীকুমার ওরফে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য । পিতা সংস্কৃত-পন্ডিত ও ঐতিহাসিক, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য যিনি ঐতিহাসিক " রায় বাঘিনী"র ইতিহাসকার । বাণীকুমারের মাতা ছিলেন-অপর্ণা ভট্টাচার্য । বাণীকুমারদের আসল বাড়ি ছিল হুগলির আঁটপুরে । দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন বিধুভূষণবাবু । কার্যকারণে বাণীকুমারের পিতা একসময় উঠে এলেন মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলায় । নিলেন ভাড়া বাড়িও । এখানে পিতার টোলেই বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্যের প্রাথমিক শিক্ষা হয় । এরপর হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন বৈদ্যনাথ ওরফে বাণীকুমার । কিন্তু ভাড়া বাড়ি ছেড়ে অবশেষে তাঁরা হাওড়ার রামরাজাতলা-সাত্রাগাছি অঞ্চলে বট গাছের মোড়ে সান্যালদের বাড়ি যেখানে সেই বাড়িতে উঠে যান । বাণীকুমারের পিতা ও পিতামহ দুজনেই ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত, বাড়িতে তাই সংস্কৃতের বরাবরই চর্চা ছিল । কিন্তু সংস্কৃত কলেজের সঙ্গে পন্ডিত বিধুভূষণ ভট্টাচার্য যুক্ত থাকায় ম্যাট্রিক পাশ করার পর ছেলেকে তিনি প্রেসিডেন্সিতে প্রথমে আই.এ এবং তারপরে সেখানেই ইংরেজিতে বি.এ. অনার্সে ভর্তি করে দেন । একে তো সংস্কৃত ঘরাণায় বাণীকুমারের বড় হয়ে ওঠা সেই সঙ্গে ইংরেজিতে নাটক নভেল জানায় তিনি কাব্যচর্চায় ও সাহিত্যে অতি দক্ষ হয়ে ওঠেন । হাওড়া জেলা স্কুলে তাঁর শিক্ষক কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, তাঁরই উৎসাহে বৈদ্যনাথ লিখতে শুরু করে দেন। কবিতা ও অনুবাদ সাহিত্য ছাড়াও ছোট নাটিকা লেখায় তিনি একপ্রকার কিছু দিনের মধ্যেই সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠলেন । কলেজে পড়ার সময়ই সংস্কৃতে ব্যুৎপত্তির জন্য কলেজের সস্কৃতের অধ্যাপক বাগবাজারের পন্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে । কলেজ সমাপ্তির পর পিতার উৎসাহে সংস্কৃত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ পড়াশোনা শুরু করে দেন এবং শাস্ত্রীমশাইয়ের টোল থেকে সরকারের দেওয়া কাব্য সরস্বতী উপাধি লাভ করেন । এর কিছুদিন পর তিনি চাকরি পান টাকশালে । পিতা আর দেরি না করে হাওড়ার সান্ত্রাগাছিতে থাকার সময়ই তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন গৌরীদেবীর সঙ্গে । বানীকুমার লিখে গেছেন - "মহিষাসুরমর্দিনী আমার প্রথম যৌবনের রচনা ।" মূল রূপটির বিশেষ পরিবর্তন না ঘটলেও বেতারের মহিষাসুরমর্দিনীর মধ্যে শাশ্বত সত্য এক অতিথিবৎসল ভারতের শান্তিময় জীবনের মর্মকথা ধরা আছে । ১৯২৮ সাল থেকেই বেতারের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে । কলকাতার বেতার তখন আধুনিক যুগের মনোরঞ্জনের একটি অতি আবশ্যিক ও উচ্চতর মাধ্যম । ইংরেজি ১৯২৮ সালের ২৬ শে আগষ্ট বেতারের আমন্ত্রণে বেতারজগৎ-এ প্রকাশ পায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা । --"ধরার আঙিনা হ'তে ওই শোনো উঠিল আকাশবাণী" পরে যখন ইডেন গার্ডেনে ১৫.৯.১৯৫৮ তে রেডিও অফিস উঠে এলো তখন তার নাম হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া সেই- আকাশবাণী । অবশ্য বৃটিশদের প্রশাসনের সুবিধার জন্য তারা ১৯৩৬-এ গার্স্টিঙ প্লেসে থাকার সময়ই রেডিও কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে সরাসরি শাসনে নিয়ে আসেন ও নাম হয়- অল ইন্ডিয়া রেডিও । রেডিও তখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে বাণীকুমারের ভাবনায় এলো কীভাবে রবীন্দ্রনাথের নাটক ও ছোটগল্প শ্রুতিমধুরভাবে সম্প্রচার করা যায় । এখানে বলে রাখা ভালো শুধু মহিষাসুরমর্দিনীতেই বাণীকুমার মেতে থাকলেন না অথবা ছিলেন না । রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প ও নাটক থেকে একের পর এক শ্রুতিনাটক তৈরি করতে শুরু করলেন তিনি। বেতারেই হলো তার ঘরবাড়ি । টাকশালে চাকরি শুরুর আগেই বন্ধুদের নিয়ে যৌথ ভাবে গড়ে তুলেছেন ,"চিত্রা সংসদ" নামে একটি ছোট নাট্যদল । সেখানেই রাজেন্দ্র সেন বীরেন্দ্র ভদ্রকে দেখতে পান বেতারের কর্মাধ্যক্ষ শ্রী নৃপেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার মহাশয় । ইতিপূর্বে টাকশাল থেকে ১ নং গ্রাস্টিন প্লেসে অফিসের পর প্রোগ্রামের আশায় আসতে শুরু করেছেন । ছোট ছোট কাজ পাচ্ছেন । খোদ বৃটিশ সরকারের কর্মচারী । পার্টটাইম কাজে তাই ছদ্মনামে মিন্ট অফিসের বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য পরিচিত হলেন বাণীকুমারে । শেষ পর্যন্ত নাট্য প্রেমিক, স্ক্রিপ্ট রাইটার ,কবি গীতিকার, তিনটি ভাষায় পন্ডিত বাণীকুমার আকাশবাণীতে , "চিফ প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ"হিসেবে কর্মরত ছিলেন । ওইখানে ঘোষক হিসেবে আগেই যোগদেন রাজেন সেন । আর এক ঘোষক ও পাঠক বিজন বসু , গল্প দাদুর আসর চালাতে এলেন ১৯২৮-এ । এলেন সঙ্গীত শিল্পী সাগির খাঁ, পাঞ্জাবি গাইয়ে হরিশ্চন্দ্র বালি । সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়াল । রেডিও স্টেশন চালানোর মতো সমাজের গণ্যমান্য শিল্পী-সাহিত্যিকের দল , এলেন শিশির কুমার মিত্র, নলিনীকান্ত সরকারের মতো প্রশাসকরা । ড. ইন্দিরা বিশ্বাস বসু যিনি বেতারজগৎ ও অল ইন্ডিয়া রেডিও নিয়ে ডক্টরেট করেছেন বাস্তব তথ্য খানিকটা তার থিসিস পেপারের সঙ্গে মেনে নিতে হয় । তিনি বলেছেন- বেতারে বাণীকুমার প্লে-আর্টিস্ট হিসেবে প্রথম যোগদান করেন । মুন্ডক উপনিষদ ও মার্কন্ডেয় পুরাণের দেবীস্তুতি অর্থাৎ চন্ডীপাঠটি বাণীকুমারের হুবহু মুখস্থ ছিল । পাঠও করতে পারতেন । ১৯৭৮ সালে বহু বছর পরে প্রথম এইচএমভি কর্তৃক ভূবনভোলানো মহিষাসুরমর্দিনীর রেকর্ড বের হলো , কপিরাইট রইলো AIR -এর হাতে । ১৯৬৫ সালেও মহিষাসুরযর্দিনীর শো-গুলি লাইভ প্রোগ্রামে হতো । গানের শিল্পীরা ছিলেন- সুপ্রীতি ঘোষ,কৃষ্ণা দাশগুপ্ত, শিপ্রা বসু , মানবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বিমলভূষণ, রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়,অরুণকৃষ্ণ ঘোষ, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু , আরতি মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন ,ধীরেন বসু, অসীমা ভট্টাচার্য । শিল্পী ও সহকারী মিলিয়ে প্রায় ৫০ জনের বঙ্গ বিজয়ী একটা দল তৈরি হয়েছিল সেই সময় এবং সেই দলের তিন তারকা ছিলেন বাণীকুমার, পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । শ্লোকের উচ্চারণ ও তার তর্জমাগুলি বাণীকুমার প্রস্তাবিত স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী হুবহু তুলে নিয়ে তাকে আরও মাধুর্যতর করে এবং স্বরক্ষেপণকে ব্যঞ্জনাময় করে তোলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । যে কারণে প্রথমবার বাণীকুমার নিজেই যে চন্ডিস্তুতিগুলি বসন্তেশ্বরীতে পাঠ করেছিলেন পরে সেগুলির সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেন বয়সে বড় ও পদাধিকারে নীচে থাকা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে । এই অসাধারণ আয়োজনের রচনা ও প্রবর্তনা ছিল - বাণীকুমারের । বাঙালি জাতি এমনকি হালের উইকিপিডিয়া পর্যন্ত বাণী কুমারের কাজকে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কাজ বলে অনেক জায়গায় উল্লেখ করেছে । যখন প্রথম এই ধরনের প্রোগ্রাম রেডিও নিতে চলেছে সেই আসরে রাইচাঁদ বড়াল সাগির খাঁ নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার প্রেমাঙ্কুর আতর্থীদের সঙ্গে বাণী কুমারের যুক্ত ছিলেন । বিকেলের দিকে চা-সিঙ্গাড়া সহযোগে ১৯৩১ এই বেতারের আড্ডায় এক নম্বর গার্স্টিন প্লেসে আসর বসতো কখনো কখনো বীরেন্দ্র কৃষ্ণও সেখানে থাকতেন সেই সময় যদিও তিনি রেডিওতে মহিলা মজলিসে যুক্ত হয়েছেন-১৯২৮এ। কিন্তু চাকরি করতেন না এবং সারাদিন রেডিওতে থাকতেনও না । যাইহোক মহিষাসুরমর্দিনীর সঙ্গীত সর্জনা ছিল স্বনামধন্য মিউজিক কম্পোজার পঙ্কজকুমার মল্লিকের এবং শুরু করেছিলেন মালকোষ রাগ দিয়ে । সেই সুরকে আজও কারও ছাপিয়ে যাওয়ার সাধ্য হলনা । গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠের ক্যারিস্মা ছিল - বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের । ইন্সট্রুমেন্ট বা বাজনাগুলি ছিল- হারমোনিয়াম,তানপুরা, চেলো, ভাওলিন, ভাইওলা, বাঁশি । পাঞ্জাবি গায়ক হরিশ্চন্দ্র বালি একটি গানে সুর সংযোগ করে ছিলেন । আর একটি গানে সুর দিয়েছিলেন সাগির খাঁ সাহেব। খুশি মহম্মদ বাজিয়েছিলেন- হারমোনিয়াম, আলী ছিলেন চেলোতে । বাঁশি বাজিয়ে ছিলেন একজন বিখ্যাত মুসলমান বাজনদার । ইন্সট্রুমেন্ট অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। যার ফলে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সংস্কৃত উচ্চারণ ঠিক মতো তাঁরা প্রথম প্রথম ধরতে পারতেন না । অসুবিধা হচ্ছিল কিন্তু বারবার অনুশীলনের ফলেও লাইভ প্রোগ্রামেও সেই ভুল হয়ে গিয়েছিল কিন্তু একবারও কেউ তা বুঝতে পারেননি যে কোথায় সেই ভুল-ত্রুটিটি হয়েছিল ?! লাইভ অনুষ্ঠানে শঙ্খ, বাঁশি ও স্লোক-স্তোত্র পাঠ পরপর থাকায় কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল কিন্তু কাঁচের ঘর থেকে বাণীকুমার তা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন এবং সেই সুরের মূর্ছনায় ততক্ষণে বাঙালির হৃদয় জয় করা হয়ে গেছে । পরে তাই কোনো ভাবেই বাঁশির সুরের সেই মুহূর্তকে আর বদল করেননি পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বাণীকুমার । তবে পরে অনেকবার স্ক্রিপ্টের সামান্য বদল করলেও বাণীকুমার অগ্রজ-বন্ধু বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে আলোচনা করে পঙ্কজকুমার মল্লিকের মতামত নিয়ে তা নতুনভাবে রিয়ার্সালে ঠিক করে নিতেন । বাণীকুমার ১৯২৮ এ তার ২১ বছর বয়সে টাকশালের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্ক্রিপ্ট রাইটার ও স্টাফ আর্টিস্ট পদে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র চিরকাল তার মূল চাকরির সঙ্গে রেডিওর দপ্তর সমানে চালিয়ে গেছেন । চাকরি ছেড়েছিলেন অনেক পরে এবং বেতারে অনেক পরে যোগদান করার জন্য তিনি সরকারের পেনশন পাননি । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে সরকারের এই অবহেলার জন্য পরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় । বীরেন ভদ্র বেশ কয়েকবছর রেডিওর মহিলা মজলিস বিভাগটি চালিয়েও ছিলেন কিন্তু এই নিয়ে অমৃতবাজার পত্রিকায় বিস্তর চিঠি লেখা হয় । এক প্রকার স্ক্যান্ডাল ছড়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে ,তারপর তিনি সরে যান ১৯৩৪ সালে । আর ১৯৩৬ নাগাদ শুরু হয় মহিলা মহল বেলা দে-র তত্ত্বাবধানে । পাকাপাকি ফর্মেশন নেওয়ার আগে রেডিওর বিভিন্ন আড্ডা থেকে উঠে আসা বাঙালির হৃদয়ের আসুমদ্রহিমাচল বিজয়ী , মহিষাসুরমর্দিনী সঙ্গীতালেখ্যটি বিভিন্ন ভাবে পরিবেশিত হয় , কখনও বসন্তেশ্বরী নামেও । তাই মহিষাশুরমর্দিনীকে সম্পূর্ণ রূপে জানতে আমাদের চলে যেতে হবে সত্তরের দশকের বাঙালি সমাজে । সেই মধ্যবর্তী সময় থেকেই টেলিভিশন যখন বিভিন্ন বাড়িতে স্থান পেতে শুরু করলো । এখন এরকম বাড়ি খুঁজে পাওয়া খুব শক্ত যেখানে টিভি নেই । কিন্তু রেডিওর আদিকালে কিন্তু রেডিওকে ঘরে ঘরে পাওয়া তো দূরের কথা সমস্ত বাড়িতেও পাওয়া মুস্কিল ছিল । যদিও আগে এক সময়ে রেডিওই ছিল খবর ও অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচারের একমাত্র গণ ও মনোরঞ্জনকর মাধ্যম । এখন সে দায়িত্ব পালন করছে টেলিভিশন। রেডিও বলতে নতুন প্রজন্ম বোঝে এফএমকে । কোন অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দৃশ্যের উপস্থিতি দর্শকমনকে আকৃষ্ট করে অনেক বেশি । সেজন্যই রেডিওর জৌলুষ এখন অনেকটাই স্তিমিত। হয়ত এর একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে যায় মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার আগ্রহে ঝাড়পোছ হতে শুরু করে দেয় অপোড়ো রেডিও । টেলিভিশনের চেয়ে আকাশবাণীর এই অনুষ্ঠানটি এখনও যে লোকের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় তা মহালয়ার ভোরেই স্পষ্ট বোঝা যায় । অনুষ্ঠানের শুরুটি - “আজ দেবীপক্ষের প্রাক-প্রত্যুষে জ্যোতির্ম্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমন-বার্ত্তা আকাশ-বাতাসে বিঘোষিত। মহাদেবীর পুণ্য স্তবনমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব্ব প্রেরণা। আজ শারদ গগনে-গগনে দেবী ঊষা ঘোষণা করছেন মহাশক্তির শুভ আবির্ভাব-ক্ষণ।” এরপর তিনবার শঙ্খধ্বনির পর শুরু হয় অনুষ্ঠান। সুপ্রীতি ঘোষের পরিশীলিত কন্ঠে গাওয়া সেই গান – “বাজল তোমার আলোর বেণু”। সাধারণ মানুষের কাছে পঙ্কজকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ যেভাবে এই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত, সেই তুলনায় একটু হয়তো আড়ালেই থেকে গেছেন বাণীকুমার । অথচ মূল অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা রচনা-প্রস্তাবনা এবং বারবার সংযোজন বিয়োজনের অধিকার দেখিয়েছেন সবই বাণীকুমার । ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে প্রথম প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি, কিন্তু তখন এর নাম ছিল ‘শারদ বন্দনা’। ১৯৩৪-এর ৮ ই অক্টোবর ( ১৩৪১ বঙ্গাব্দ ) মহালয়ার সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছিল অনুষ্ঠানটি। কিন্তু এটি ঘিরে তীব্র আপত্তি ওঠে – রক্ষণশীল দলের কাছ থেকে থেকে। প্রতিবাদের মূল কারণ ছিল – এক অব্রাহ্মণ ব্যক্তির কন্ঠে কেন চণ্ডীপাঠ শোনা যাবে ? রুখে দাঁড়ালেন বাণীকুমার স্বয়ং । গ্রন্থনা ও চণ্ডীপাঠ বীরেন্দ্রকৃষ্ণই করবেন এই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি এবং এও বললেন তাহলে তিনিও এই অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেবেন । আরও একটি আপত্তি ছিল মহালয়ার সকালে পিতৃপক্ষের সময়ই কেন চণ্ডীপাঠ হবে ? যখন প্রতিমার বোধনই হয়না । অথচ ওই স্রোত্রগুলি সবই দুর্গা মন্ত্র । এতেও তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্মণরা আপত্তি তুলেছিলেন । সেই জন্য ১৯৩৫ ও ১৯৩৬ সালে অনুষ্ঠানটি ষষ্ঠীর ভোরে প্রচারিত হয়েছিল । কিন্তু পরিশেষে বাণীকুমারের সিদ্ধান্ত মেনেই ১৯৩৭ সাল থেকেই মহালয়ার ভোরে প্রচারিত হয় – ‘মহিষাসুরমর্দিনী। ’ । প্রভাতী বিশেষ এই অনুষ্ঠানের সময় বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়েছে। কখনও ৬.০০ থেকে ৭.৩০ । পরে শুরুর সময়ে পরিবর্তন আনা হয় ৫.৩০ ও শেষে ৪.০০ থেকেই নির্দিষ্ট থেকে যায় সময় ১৯৫০ সালে । অনুষ্ঠানটি সফল ও আকর্ষণীয় করে তুলতে বাণীকুমারের সঙ্গে পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাম অবশ্যই একই সারিতে স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বাণীকুমার ছিলেন একই বৃন্তের তিনটি কুসুম । ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি আলেখ্যটি পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । এ প্রসঙ্গে একটি নিবন্ধে বাণীকুমার নিজেই লিখেছেন –“মহিষাসুরমর্দিনী” আমার প্রথম যৌবনের রচনা । কিন্তু মূল রূপটির বিশেষ পরিবর্তন না ঘটলেও এই গ্রন্থের বর্তমান রূপ বহুতর তথ্য ভাবগর্ভ বিষয় এবং বেদ-পুরাণাদি-বিধৃত শ্লোকাবলী সংযোজনায় সমলংকৃত। প্রকৃতপক্ষে এই গ্রন্থ মার্কন্ডেয় সপ্তশতী চন্ডীর সংক্ষিপ্তসার বললেও অত্যুক্তি হয় না, তদুপরি এর মধ্যে আছে মহাশক্তি-সম্বন্ধে বৈদিক ও তান্ত্রিক তত্ত্বের ব্যঞ্জনা এবং এর অন্তরে নিহিত রয়েছে শাশ্বত ভারতের মর্মকথা..." মূল রচনাটি লেখা শুরু হয়েছিল হাওড়ার খুরুটের বাড়িতে --১৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৭ । পরে হাওড়ার সাঁতরাগাছির বাড়িতেই ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত খসড়াটি চন্ডীপাঠ থেকে বসন্তেশ্বরী ও তারপর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে পরিপূর্ণ রূপ পায় । এরপর বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য ওরফে বাণীকুমার বাগবাজারে উঠে চলে যান। দেশে জরুরী অবস্থা থাকাকালীন ১৯৭৬-এর ২৩ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান ড. গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের রচনা-‘দেবীঙ দুর্গতিহারিণীম্ 'কে বিকল্প হিসেবে মহালয়ার অনুষ্ঠানে প্রচারিত করা হয় । রূপদান করেছিলেন পাঠে অভিনেতা মধ্যগগণের উত্তমকুমার ও বসন্ত চৌধুরী ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলে এবং পরিচালনা করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । এছাড়া প্রভৃতি স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন । অনেকে মনে করেন দেশের এমার্জেন্সির সুযোগে কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মৃদু প্রভাব ছিল এই প্রোগ্রাম চেঞ্জের ব্যাপারে । যদিও এই বিষয়ে কাগজে প্রিয়রঞ্জনের নামে কোনোদিন কিছু বের হয়নি । কিন্তু ততদিনে বাণীকুমার রেডিও থেকে অবসর নিয়ে প্রয়াত হয়েছেন । বরং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে আগের দিন পর্যন্ত কিছু জানতে দেওয়া হয়নি । ১৯৬৬ থেকে রেকর্ডেড প্রোগ্রাম হলেও যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বরাবরের মতো শেষ ট্রামে আকাশবাণী ভবনে , রাতেই বালিশ-বিছানা নিয়ে চলে আসতেন , তিনি কিন্তু ১৯৭৬ সালের মহালয়া বাড়িতে বসেই নতুন আলেখ্যটি শুনেছিলেন এবং তাঁর পুত্রকে -"আক্ষেপ করে বলেছিলেন লোকে যদি নেয় নেবে তার কি বলার আছে ।" বাস্তবিক তিনি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন কিন্তু ততদিনে বাণীকুমারও প্রয়াত হয়েছিলেন ( ১৫ আগষ্ট ১৯৭৪) তাই সমস্ত দুঃখ একলাই ভোগ করেছিলেন । কিন্তু '' মহিষাসুরমর্দিনী '' স্থানচ্যুত হওয়ায় জনরোষ ফেটে পড়ে মানুষ-জনতা । পত্র-পত্রিকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। পোস্টকার্ডে এবং সরাসরি হাতে করে প্রতিবাদ পত্র আকাশবাণী ভবনে ও আনন্দবাজার অফিসে লোকে সেদিনই পৌঁছে দিয়েছিল । এমনকি একদল মানুষ রেডিও অফিস ঘেরাও করে স্টেশন ডিরেক্টরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে শুধু বাকি রেখেছিল । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বরাবরই আগের দিন একা রাত্রিবেলাতেই বেতারকেন্দ্রে চলে আসতেন এবং ‘মহিষাসুরমর্দিনী ’ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে তারপরে যেতেন । টেপ রেকর্ডারে অনুষ্ঠান চললেও এ অভ্যাস তিনি চালিয়ে গেছেন দীর্ঘকাল । কিন্তু ১৯৭৬ সালের পর থেকে তিনি কখনও রাত্রি বেলা আর কখনও যাননি । ওই জরুরী অবস্থার সময়েই অপসারিত হন পঙ্কজকুমার মল্লিক ‘সঙ্গীত শিক্ষার আসর’ থেকে । অবশ্য জনসাধারণের চাহিদাকে মর্যাদা দিতে সেবছর ষষ্ঠীর দিন পুণরায় বাণীকুমারের রচনার সম্প্রচারিত হয় পুরনো এবং চিরদিনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী ।’ আর ১৯৭৭ থেকে স্বমহিমায় মহালয়ার ভোরে আবার ফিরে আসে সেই আদি অকৃত্রিম ‘মহিষাসুরমর্দিনী।’ ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি রচনা ও তরঙ্গায়িত করে বাণীকুমার যে আসাধারণ কাজটি করেছিলেন পরবর্তীতে স্টেশন ডিরেক্টর দিলীপকুমার সেনগুপ্ত সে প্রসঙ্গে বলেছেন – –“বাণীকুমার যদি আর কোনো কাজ নাও করতেন, তাহলেও শুধু - ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র জন্য মহালয়ার ‘নেপথ্য নায়ক’ হিসেবে চিরকাল অমর হয়ে থাকতেন , তাঁর কলম থেকে নিঃসৃত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাঙালি সংস্কৃতির মজ্জায় মজ্জায় থেকে গেছে"। যে বাণীকুমারের মহিষাসুরমর্দিনীর বেতার সংস্করণ বঙ্গবাসী শুনতে পেয়েছিলেন এক অপ্রত্যাশিতভাবেই সেইতুল্য খ্যাতি স্বনামধন্য বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য ওরফে বাণীকুমারকে আজও দেওয়া হয়নি । সবচেয়ে বিস্ময়কর অনেকেই আর তাঁকে মনে পর্যন্ত রাখেননি ,চেনা তো দূরের কথা । এর একটি বিশেষ কারণ তিনি ছিলেন আকাশবাণীর একটি বিভাগের প্রযোজক তাই বেতার জগৎ পত্রিকা ও অন্যান্য পত্রিকায় বাণীকুমার সম্পর্কে তেমন কোনো আর্টিকেল না বেরনোর ফলে তিনি চিরকাল পর্দার পেছনে রয়ে গেছেন। নবীন প্রজন্মের কেউই তাঁর সম্পর্কে কিছুই জানেন না । এমনকি তার একক ও সম্মিলিত কোনো ভালো ফটোগ্রাফও কোথাও এখন পাওয়া যায় না । বাণী কুমারের ডায়রিতে ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত মহিষাসুরমর্দিনীকে নানাভাবে ভাঙাগড়ার ইতিহাস যা ছিল তা আজ কোথায় আছে ঠিকমতো কারো জানা নেই এবং ওই প্রারম্ভিক সময়ে অজস্রবার বাণীকুমার তার স্ক্রিপ্ট ও গানের সময়ের কিছু পরিবর্তন করেছিলেন যেটা বঙ্গীয় সমাজ কখনও ধরতে পারেনি । বাণীকুমারের সাহিত্যিক নাতি চন্দ্রিল ভট্টাচার্য এক জায়গায় বলেছেন-" তার ঠাকুরদা কখনও কম্প্রোমাইজ করেননি,তার ডায়রিতে প্রতিবারই কিছু পরিবর্তন করতেন তাঁর সাধের মহিষাসুরমর্দিনীর । আসলে ওটা তিনি একটি মিথ তৈরি করে গেছেন প্রায় যা টানা ২৮ বছর লাইভ প্রোগ্রাম চলেছিল।" সত্যি এটা ভাবলে আমাদের অবাক লাগে --সরস্বতী সঙ্গীত বিচিত্রা দিয়ে "বেতার বিচিত্রা" নামের অনুষ্ঠানটি বাণীকুমার প্রোডিউসারের ভূমিকায় ১৯৩১ থেকে টানা ২১ বছর তিনি চালিয়ে গেছেন । ইতিমধ্যে হাওড়ার সাত্রাগাছি থেকে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য একসময় নতুন বাড়ি করে উঠে গিয়েছেন সেকথা বলেছি,কলকাতার বাগবাজার স্ট্রিটের কাছে ৪৭/১ বোসপাড়া লেনে । বর্তমানকে চেনাতেই হয়তো গত ২০১৭ সালে ওই চৌমাথার মোড়ে কলকাতা কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর বাপি ঘোষ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে একটি স্মৃতিরক্ষা কমিটি গড়ে মর্মর মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় । অথচ ওই এলাকায় এতদিন তাঁর নামে কোনও স্মারক পর্যন্ত ছিল না বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মত । আপামর বাঙালির কাছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বলতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নামই সর্বাগ্রে উঠে আসে , হয়তো তাই নেপথ্যে চলে যান বাণীকুমার ওরফে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য । ২০১৭-তে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যর জন্য ওই মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল গত বছর তার বাগবাজারের বাড়ির কাছে । প্রসঙ্গত জানা যায় যে বাণীকুমারের পুত্র নৃসিংহকুমার ভট্টাচার্য বর্তমানে কেষ্টপুরের বাসিন্দা । তাঁর নাতি স্বনামধন্য লেখক চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের কথা আগেই বলা হয়েছে । গত মহালয়ার দিনই ওই মূর্তি বসানো সম্পূর্ণ হয়েছে বলে বাপি ঘোষ কাউন্সিলর সংবাদপত্রে জানিয়েছিলেন । এই সঙ্গে আরও জানা যায় স্কুল বয়সে বাণীকুমার যেখানে থাকতেন , মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলাতেও বাণীকুমারের পূর্ণাবয়ব একটি মূর্তি বসানো হয় গত সেপ্টেম্বর ১৯১৭তে । মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলা বারোয়ারী তলায় ওই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ও প:ব: সরকারের ভারপ্রাপ্ত সমবায় রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অরূপ রায় মহাশয় । উপস্থিত ছিলেন হাওড়া কর্পোরেশনের মেয়র ও মেয়র পারিষদ যথাক্রমে ডা: রথীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও শ্যামল মিত্র মহাশয় , এঁদের উদ্যোগেই হাওড়ার মূর্তিটি স্থাপিত হয়েছে বলে শোনা যায় । ইতিমধ্যে গঙ্গার অনেক জল গড়িয়েছে অবশেষে ১৯৭৯ বের হলো বাণীকুমারের জীবনের সেরা কাজের সিডি । এইখানে একটু জানানো দরকার "দেবিঙ দুর্গতিহারিনিম্ " কিন্তু কিছু দিন আগে পর্যন্ত রেডিওতে ১৯৭৭ সাল থেকে মহা ষষ্ঠীর সকালে আকাশবাণী থেকে সম্প্রচার করা হতো , কারণ মহিষাশুরমর্দিনীর কাছেপিঠে না আসতে পারলেও সেটির সঙ্গে উত্তমকুমার হেমন্ত লতা এবং এইচএমভির সত্ত্বা জড়িয়ে ছিল লঙ-প্লেইঙ রেকর্ডও ছিল । আবার ফিরে আসি আমার মূল আলোচ্য বিষয় বাণীকুমারের প্রসঙ্গে । যদি আরও কিছু পিছিয়ে যাই তাহলে দেখতে পাই , কলেজে পড়তে পড়তে তিনি জড়িয়ে পড়েন তৎকালীন সাহিত্য জগতের সঙ্গে । প্রেসিডেন্সী কলেজ ম্যাগাজিনে, প্রকাশিত হয় মহাকবি ভাস রচিত "শোণিত পারণা" নাটকের বঙ্গানুবাদ । অধ্যাপক অশোকনাথ শাস্ত্রী কৃত এই বঙ্গানুবাদ নাটকের রূপারোপ করেছিলেন বাণীকুমার। এই রূপারোপ সম্বন্ধে অশোকনাথ শাস্ত্রী , এই নাটকের মুখবন্ধে লিখেছিলেন- " সংস্কৃত দৃশ্যকাব্যে কেবল অঙ্কবিভাগ আছে---দৃশ্যবিভাগ নাই । কিন্তু সাধারণের বোঝার জন্য , বাণীকুমার দৃশ্যবিভাগ তৈরি করে দিয়েছিলেন । কলেজে পড়ার সময়ই এই সম্মান বাণীকুমারকে সাহিত্যে আরও আগ্রহী করে তোলে । নাটকের panorama scene এর দর্শনীয় প্রেক্ষিতটি বাণী কুমারের ওই সময়েই তৈরি হয়ে যায় । পিতা নিজে পণ্ডিত-সাহিত্যিক হলেও ছেলের সাহিত্যচর্চাকে খুব একটা সুনজরে দেখেননি । তাই স্নাতক হবার পরই সংসারের দিকে মন ফেরাতে বিবাহ সম্পন্ন করে দেন পুত্র বাণী কুমারের । বৈদ্যনাথ ছদ্মনামেই যাবতীয় সাহিত্য রচনা করে গেছেন। সংসারের প্রয়োজনে মহিষাশুরমর্দিনীর লেখককে চাকরি নিতেও হয় কলকাতার টাকশালে একথাও জানানো হয়েছে । ১৯২৭ সাল ১নং গাস্টিং প্লেসের যখন ইংরেজদের নতুন গণমাধ্যমের কর্তারা তখন নিত্যনতুন অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য লোক খুঁজছিলেন আর তখনই এই সূত্রেই ওই সময়ে একটি বেতারনাটকের সূত্রে কলকাতার বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়ে যায়। বাণীকুমার তার লোভনীয় টাকশালের চাকরি ছেড়ে ১৯২৮ সালে যোগ দেন ভবিষ্যতহীন রেডিওতে । টাকশালের স্থায়ী সরকারি চাকরি ছেড়ে, রেডিওর চাকরির অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়ানো বিফলে যায়নি বাণীকুমারের । সেই যুগের রেডিওর প্রায় সমস্ত অনুষ্ঠান-বিভাগেই ছিল তাঁর ঐকান্তিক উদ্ভাবনার পরিচয় । ১৯৩১-এর জানুয়ারিতে “সরস্বতী সঙ্গীত বিচিত্রা” দিয়ে “বেতার বিচিত্রা” অনুষ্ঠানের সূচনা। এই বিভাগেই বসন্তেশ্বরী অনুষ্ঠানের রচনা ও চন্ডীপাঠ করেছিলেন বাণীকুমার নিজেই । রাইচাঁদ বড়াল ছিলেন তার সুরকার ও বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন গদ্যাংশ কিছু শ্লোক পাঠে এবং সংযোজনায় । তা ছাড়াও তাঁর প্রযোজনায় সম্প্রচার করা হয়েছে আরও বহু জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান। ১৯৩২ সালে রচিত হয় শারদ-আগমনী গীতি-আলেখ্য দেবীপক্ষের সূচনার বার্তা বহন করতেই করা হয়েছিল । কলকাতা বেতার কেন্দ্রে অসংখ্য অনুষ্ঠান করলেও বাণীকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে মানুষ মনে রেখেছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জন্য। পঙ্কজ মল্লিক অবশ্য বহুমূখী প্রতিভাধর ব্যক্তি ছিলেন, যিনি বম্বে-বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় সুরকার গায়ক নায়কও ছিলেন । কিন্তু তবু যেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জন্য এখনও এই ত্রয়ীকে একই ফ্রেমে আমাদের মনে পড়ে যায় । কিন্তু তবুও বাণীকুমার ওই দুজনের থেকে অনেকটাই আজ অবহেলিত। বাণীকুমার নিজের লেখাতেই জানিয়েছেন,‘‘এ-কথা বলা বাহুল্য যে, আমাদের কয়জনের আন্তরিক সাধন-দ্বারা এই মহিমাময় চণ্ডী-গাথা সকল শ্রেণীর জনবর্গের প্রশংসনীয় হয়েছে ।... ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ কলিকাতা বেতারের তথা বাঙালায় একটা কীর্তি-স্থাপন করেছে । ’’ বলাই যায় বেতার সম্প্রচারের ৯০ বছরের ইতিহাসে এই রকম অনুষ্ঠান আর দ্বিতীয় নির্মিত হয়নি, যার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে আজ পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান আসতে পারেনি । ইতিপূর্বে বলেছি ১৯৭৬-এ আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ একবার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাতিল করে দিয়ে মহানায়ক উত্তমকুমারকে দিয়ে ভাষ্য পাঠ করিয়ে নতুনভাবে এই অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন যার নাম ছিল “ দেবীঙ দুর্গতিহারিণী”, কিন্তু সেই পরিবর্তন বাঙালী মেনে নেয়নি। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপক জনরোষ দেখা দেয়। মজার ব্যাপার ছিল এই যে এই নতুন অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সকলেই সেই সময়কার সাংস্কৃতিক-জগতের অতি নমস্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তি! তা সত্ত্বেও প্রত্যাখ্যানের সুর এতটাই চড়া ছিল যে খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা মহানায়ক উত্তমকুমারকে ব্যাপক তিরষ্কার হজম করতে হয় তার অগণিত ভক্তের কাছ থেকে। শেষে উত্তমকুমারকেও ক্ষমা চাইতে হয় । সেই ‘জরুরী অবস্থা’-র জমানাতেও জনগণের প্রবল প্রতিবাদে মহাষষ্ঠীর সকালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল সরকারি প্রচার মাধ্যম ‘আকাশবাণী’। পরের বছর থেকে আবার ফিরে আসে বাণীকুমার-পঙ্কজকুমার মল্লিক-বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। বাঙালি প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিনা বিজ্ঞাপনেই এই অনুষ্ঠান শুনে চলেছেন ! এটা একটা বিস্ময়কর ও অভাবনীয় ব্যাপার । ১৯৭৬ এর সেই মহালয়ার সকালে ক্ষুব্ধ রেলকর্মীরা যাত্রিদের জন্য হাওড়া স্টেশনেরর মাইকে ওল্ড ‘মহিষাসুরমর্দিনী’- তাদের ক্যাসেট চালিয়ে দিয়েছিলেন এবং হাওড়া স্টেশনের উপস্থিত যাত্রীরা যেন প্রাণে বেঁচেছিলেন । প্রতি বছর গঙ্গায় তর্পন করতে আসা অগণিত যাত্রীর জন্য রেল কর্তৃপক্ষ বরাবর ওই মহিষাসুরমর্দিনী চালিয়ে থাকেন সরাসরি রেডিও থেকে । বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে গতবছর ২০১৭ তে আকাশবাণী থেকে যে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটি শোনা গিয়েছিল সেটি ছিল ১৯৬৬ সালে সম্প্রচারিত হওয়ার আগের রিয়ার্সালের খসড়া । যা আকাশবাণীর বর্তমান অধিকর্তা ও অন্যান্যদের মনে হয়েছে বাণীকুমারের নানা সময়ের খসড়া ও বহুলাংশে প্রচারিত এবং এটাই সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত (১৯৭৩ এর সংস্করণ যা থেকে রেকর্ড,সিডি ইত্যাদি হয়েছে এবং যেটি শুনে থাকি আমরা ) । ১৯৬৬ সালের খসড়াটি বাণীকুমারের সবথেকে সুন্দর রচনা । তাই এবছরও ওই খসড়াটিই ভোর চারটার ৮/১০/১৮ সোমবার সম্প্রচার করা হয় । আকাশবাণীর তথ্যসংগ্রহকারী নিখিলরঞ্জন প্রামাণিক এবং বর্তমান (২০১৮) স্টেশন ডিরেক্টর শ্রী সৌমেন বসু ওই খসড়াটিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন । তবে সেই ১৯৩২-৩৩ এ মহিষাসুরমর্দিনীর রেডিওর যিনি কপিয়েস্ট ছিলেন তিনি তিরিশের দশকের থেকেই (শ্রীধর ভট্টাচার্য ) প্রতিটি লাইভ প্রোগ্রামের কপি প্রতিটি শিল্পীকেই সরবরাহ করতেন বলে অনেক কপি করতেন । একইসঙ্গে তিনি খসড়া গুলিও নিজের কাছে রাখতেন । তার পুত্র সনৎ ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এই মহামূল্যবান খসড়াটি গত দু'বছর আগে পাওয়া গেছে যা বাণীকুমারের মহিষাসুরমর্দিনীর একটি কিছুটা পরিবর্তিত ( এডিট করা) কপি । ফিল্মের সাহায্যে এই কপি করা হতো বলে মনে করা হচ্ছে । মহিষাশুরমর্দিনী সম্পর্কে অনেক বাস্তব কাহিনী লোকমুখে চালু আছে । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও বাণীকুমার দুজনেই দুটি ধার্মিক পরিবার থেকে রেডিওতে এসেছিলেন যার ফলে মহিষাসুরমর্দিনী সম্পর্কে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সকলকে বলতেন আমি ব্রাহ্মণ সন্তান না হলেও কিন্তু ঐকান্তিক ভাবে ওই সময়ে শ্লোকগুলি যেন আমার কাছে মন্ত্রের স্বরূপে দেখা দেয় । তিনি সমস্ত শিল্পীকে অত ভোরে স্নান ও গঙ্গায় স্নান করে গরদ বস্ত্রে আকাশবাণীতে প্রবেশের একটি প্রথা করে দিয়েছিলেন । অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও প্রযোজনা বাণীকুমারের হলেও শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র অনেকটা দায়িত্ব নিতেন কারণ তখন বাঙালির মন আজকের মতো এতটা বিষিয়ে যায়নি । ফুল মালা দিয়ে সেদিন রীতিমতো সাজানো হতো ধুপধূনো জ্বালিয়ে পরিবেশ আগে থাকতেই একটা শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি করে তবে আসরে বসতেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র । কোনো অনুষ্ঠানটি যে একটি পবিত্রতার অঙ্গ হতে পারে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সেটি সকলকে শিখিয়েছিলেন । কিন্তু এই আয়োজন না হলেও হয়তো মহিষাশুরমর্দিনীর কোনো প্রকার ভেদরেখা তৈরি হতো না কারণ সেই হিসেবে বাঙালি এই প্রভাতী অনুষ্ঠানকে কখনও পুজো-অর্চনা করার মতো একটা বিতর্কিত গোঁড়ামির পর্যায়ে নিয়ে যায়নি । সে কারণে বীরেন্দ্র ভদ্র মশাই নিজে আকাশবাণীতেই আগের রাতে শেষ ট্রামে চলে এসে বিশ্রাম নিয়ে , রাত দুটোতেই তৈরি হতে শুরু করতেন । এমনকি মুসলমান বাজনদাররা পর্যন্ত হাসতে হাসতে অক্ষরে অক্ষরে সেই নিয়মাবর্তিতা মেনে চলতেন । আসলে কাজের প্রতি সম্মান বোধ এত তীব্র ছিল বলেই আজও এই সম্প্রচার স্রোতস্বিনী । বাণীকুমার প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি তার পুত্র নৃসিংহকুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন- " তাঁর বেতার নাট্য রূপান্তর , পরশুরামের চিকিৎসা সাধন নাটকটি বেতারস্থ হওয়ার পরই তৎকালীন বেতার অধিকর্তা তাকে বেছে নেন সেটা ছিল ১৯২৮ । ১৯৩২-১৯৩৬ এই পাঁচ বছর ছিল আঁতুড়ঘর । ১৯৩৭ প্রথম তার লক্ষ্য স্থির করে কিন্তু যেহেতু ১৯৩২ থেকে এর নানা প্রক্রিয়ায় শুরু তাই আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ ১৯৩২ কে প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধরে নেন । বসন্তেশ্বরী হিসেবেই ষষ্ঠীর সকালে রেডিওর বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান হয়েছিল । পন্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের পরামর্শে ১৯৩৭ সালে বাণীকুমারই নাম পরিবর্তন করে -মহিষাসুরমর্দিনী নাম দেন ও সেইসঙ্গে সংস্কৃত উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তার অনুবাদ গ্রন্থনার উপর জোর দেওয়া হয় । শিল্পী ও কলাকুশলীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসা হতো , আকাশবাণী গাড়ি পাঠাতো । এক একটি গাড়িতে ৩/৪ কে আনা হোত । এক কথায় বলা যায় বৃটিশ সরকারের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা ছাড়া যে এরকম অনুষ্ঠান করা অসম্ভব ছিল সেকথা বলাই বাহুল্য । তবে ১৯৩১ সালে প্রাথমিক ভাবে যে চন্ডীপাঠের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল সেখানে সুর দিয়েছিলেন রাইচাঁদ বড়াল । রচনা ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বাণীকুমার শ্লোকগুলি উচ্চারণ করেছিলেন তিনি নিজে আর কিছু গদ্যাংশ ও স্তোত্রপাঠ এবং সংযোজনা করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বলেগেছেন - " বাণীকুমার স্বল্প দৈর্ঘ্যের নাটিকা আলেখ্য ও বেতার উপযোগী সহস্রাধিক রচনা লিখে গেছেন । বেতারে মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচার করার আগে বাণীকুমার লিখেছিলেন-" বসন্তেশ্বরী"যা লিখতে সময় লেগেছিল দু বছর তখনও তিনি হাওড়ার সাত্রাগাছিতেই থাকতেন যা ১৯৩২ সালে প্রথম সম্প্রচারিত হয়েছিল । মার্কেন্ডেয় পুরাণের দেবীস্তুতি থেকে তিনি পুণরায় মহিষাসুরমর্দিনীও রচনা করেছিলেন। ব্যাসের মার্কেন্ডেয় পুরাণের ৭০০ কাব্যাঞ্জলি থেকে সমস্ত বাঙালির কাছে মা দুর্গার স্থিতি প্রলয়কে এই অল্প কিছু শ্লোকের মাধ্যমে এবং বঙ্গানুবাদ সহ নির্বাচন করে তার সঙ্গে উপযুক্তভাবে গীত রচনা করে পরিবেশন করা খুব একটা সহজ ছিল না । প্রথমে রাইচাঁদ বড়াল পরে পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে বসে একটি মহাকাব্যের নির্যাসটুকু আম জনতার দুর্গার বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া মাত্র ৯০ মিনিটে মধ্য সেটাও বোধহয় খুব কঠিন ছিল , যা কিনা ব্যাসদেব রচনা করেছিলেন আদিযুগে ( ৪০০-৬০০ এ.ডি.-এর মধ্যে) যা ৫.৩০ টায় বদলে ১৯৫০ থেকে টানা ভোর ৪.০০ তে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে এবং যা সরাসরি ১৯৬৫ পর্যন্ত ২৯ বছর সম্প্রচারিত হতো । মোট গানের সংখ্যা-১৮ । তার মধ্যে সংস্কৃতে লেখা গান ৪ খানি ও বাংলা-১৪ । ফোক, ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক সুরের মূর্ছনায় যা চিরজীবী হয়ে ওঠে । ১৯৩৭ থেকে পাকাপাকি ভাবে এই প্রোগ্রামটি ৯০ মিনিটের গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে যায় । দেবী পক্ষের শুরুতে স্তবস্তুতির মাধ্যমে বেতারে দেবীর বোধন করা যায় কিনা সে বিষয়েও কথা উঠেছিল কিন্তু যেহেতু অধ্যাপক অশোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের মত ছিল তাই তখনকার রেডিও কর্তৃপক্ষ সেটি বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্যের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন । একবার অশোকনাথ শাস্ত্রীর অনুরোধে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন বাণীকুমার এবং তার নামকরণ করেছিলেন-" সন্তান ।" বিষয়টি বাণীকুমারকে একই সঙ্গে ব্যথিত করেছিল ও বিখ্যাত করেছিল। কারণ সেখানে একটি পত্রিকা থেকে বন্দেমাতরম্ গানটির উপর ও নাটকটির কিছু সংলাপের উপর তারা আপত্তি তোলেন এবং বৃটিশ সরকারের নির্দেশে বেশকিছু অংশ বাণী কুমারকে বাদ দিতে হয়েছিল । এটি হয়েছিল বাণীকুমারের নাট্যরূপ নির্দেশনায় রঙমহলে । এছাড়াও বাণীকুমার পরবর্তী সময়ে রেডিওতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন । সিনেমার গানও লিখেছেন । (All rights reserved by Alok Kundu ছবি বাগবাজারের কাছে যেখানে বানী কুমার থাকতেন । রেডিওতে সেকালের কিছু ছবি । একসঙ্গে বাণীকুমার পঙ্কজকুমার ও বীরেন্দ্র ভদ্র । হাওড়ার খুরুটে ২০১৭ উদ্বোধন করার দিন মন্ত্রী অরূপ রায় ও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় । হাওড়ার খুরুটের মূর্তি । রাইচাঁদ বড়াল ও সহশিল্পী। পঙ্কজকুমার ও সহশিল্পী । মহিষাশুর্দিনীর টিম । মহালয়া শুনছেন । কয়েকটি প্রামাণ্য ছবি ।)
শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯
দুটো স্থান থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয় (১) পহেলগাম (২) বালতাল । বালতাল থেকে কাছে হলেও খুব চড়া পথ , কষ্টকর । ঘোড়ারা সিধে ওঠে এবং যে বসে থাকে তার অবস্থা প্রাণান্তকর। জম্মু থেকে রেজিস্টার করাতে হয় কোন পথে বাস বা গাড়ি যাবে । প্রায় লক্ষাধিক জওয়ান পাহারায় একসঙ্গে বাস ও গাড়ি ছাড়ে । ৪/৫ টা গাড়ি প্রতি এসকর্ট ভ্যান । টোটাল বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় । জম্মু থেকে পহেলগাম বা বালতালে আলাদা আলাদা করে মোড় পরবে যতগুলো গলি মোড় পরবে সেখানে বাড়ির ছাদ থেকে মোড়ে মোড়ে থিক থিক করছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে জওয়ানরা ২৪ ঘন্টা ডিউটি পাহাড়ের উঁচু থেকে নীচে সর্বত্র ছয়লাপ সামরিক বাহিনীর জওয়ানে । বড় বড় মোড়ে কাশ্মীরী পুলিশ তার সঙ্গে । পথে হাজার হাজার স্থানীয় লোকজন আটকে , গাড়ি আটকে বাসস্ট্যান্ডে স্টপে শয়ে শয়ে লোক দাঁড়িয়ে । গলির মুখে উল্টোদিকে তাক করে জওয়ানদের প্রহরা একদম টানটান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া । চোখে দেখে এলাম কারণ আমাদের তিনটি বাসও ওই দলে চশমেশাই থেকে ঢুকে গিয়েছিল তাই নিস্তার পেয়েছিলাম আমরা । কিন্তু যখন মাঝপথে আমাদের তিনটি গাড়ি আমাদের খাওয়াদাওয়া করানোর জন্য একটা ধাবায় স্ট্যান্ড করলো সঙ্গে সঙ্গে জওয়ানরা এসে আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেললো পুলিশ । ড্রাইভারকে অনেক বোঝাতে হলো যে তারা অমরনাথ যাত্রী নয় । শেষে স্থানীয় জনগণ বোঝাতে এবং গাড়িতে কোনও স্টিকার নেই পরীক্ষা করে তারপর ছাড় দিল । সদ্য দেখে এলাম কাশ্মীরকে । প্রথম দেখা অবশ্য যখন কাশ্মীরের সঙ্গে আমার বিয়ের দুবছর বাদে । তখন সবে কাশ্মীরকে দেখছি । ভয়ে কাশ্মীরের হোটেল ফাঁকা । আমরা দুজনে লোকাল বাসে করে ঘুরেছি । যখন যেমন মনে হয়েছে নেমে পড়েছি । চশমেশাইয়ের পথটা ডাল লেকে লোকাল বাসে নেমে হাঁটতে হাঁটতে গেছি । ট্যুরিস্ট বলতে আরও দু চারজন । থেকেছি একেবারে মুসলমান হোটেলে । আন্তরিক ব্যবহার যা কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ দিয়েছিল তা আজও অম্লান । একমাত্র কাশ্মীরেই এরকমটা হয়েছিল । শীতের জিনিস কিনে ঠকে গিয়ে অন্য দোকানদারদের প্রচেষ্টায় ঠকা টাকা ফেরত পেয়েছি । কোথায় ছিল তখন সিআরপিএফ নিরাপত্তা কেন নিতে হবে বুঝতে পারিনি । তখন সবে শুরু হচ্ছে কাশ্মীরে একটা থমথমে ভাব । ট্যুরপার্টি নেই । ট্যুরিষ্ট নেই । একঘন্টা ধরে হোটেল খুঁজে ফিরে এসে দেখি আমার স্ত্রী কেঁদে ভাসিয়ে ফেলেছে , অনেকটা দেরি করেছি ফিরতে । তার আগে ১২ ঘন্টার জম্মু থেকে শ্রীনগর বাস জার্নি হয়েছে । কিন্তু তার পরেই কদিন আমরা দিব্যি ঘুরেছি । এখনও টুকরো টুকরো কাশ্মীরী খেলনায় ভর্তি হয়ে আছে আমার আলমারি । শিকারাকে যেমন বলেছি তেমনি ঘুরিয়েছে । ডাল লেকের ধারে গিয়ে বসেছি দু তিন দিন । পথের ধারের মার্কেটে। এবারে বহুকাল পরে সেই কাশ্মীরে নিজের দ্বারায় আর যাওয়া সম্ভব হলোনা । গেলাম ডলফিন ট্রাভেলের সঙ্গে , ওদের মালিক তখন রক্তিমবাবু ডাললেকের হোটেল প্যারাডাইসে উপস্থিত ,অমরনাথ যাত্রায় ওনাদের সঙ্গে একটা দল গেছে । আজ দেখলাম আনন্দবাজার ওনাকে উল্লেখ করেছেন । আমি অমরনাথে যাইনি আমাদের যাত্রাপথ তো লাদাখ । লাদাখের পথে অমরনাথের একটি ৩০/৩২ টি বাসযাত্রীদের বিশাল কনভয়ের সঙ্গে আমাদের ড্রাইভাররা ডাললেকের কাছে যে বাইপাস আছে চশমেশাই যেতে ওখান থেকে একেবারে শেষে ঢুকিয়ে দেয় ,ওই দলের মধ্যে যদিও অমরনাথে যাওয়ার গাড়ি আসছে জম্মু থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প পেরিয়ে । এইসব যাত্রীদের বাস উত্তর প্রদেশের দক্ষিণ ভারতের । তার মাঝে মাঝে বম ডিজপোজাল ভ্যান,জ্যামার লাগানো গাড়ি , আগেপিছে ১০/১২ খানা জিপে এসএলআর হাতে আধা সামরিক জওয়ানরা ও সঙ্গে কাশ্মীরী পুলিশ । দৌড়াদৌড়ি । সংবাদ সংস্থার গাড়ি । কোনও গাড়ি থেমে গেলে তাকে ঘিরে ফেলছে সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা , ওই সময় কয়েকটি বাস টপকে আমাদের ড্রাইভারাও এগিয়ে যেতে থাকে ওভারটেক করে । থামলে তবেই বোঝা যাবে আমাদের গাড়ির সামনে পিছনে স্টিকার নেই , আমাদের পেছনেও ৪/৫ টা গাড়ি ঢুকে গেছে কারণ আগের গাড়ির ড্রাইভাররা চলেছে আধা সামরিক বাহিনীর নির্দেশে । আমরা চলেছি লোকাল ড্রাইভারদের চেনা রাস্তায় । পথে যেতে এই গাড়ির দল থেকে যেই তেল নেওয়ার জন্য একটা গাড়ি পাম্পের ভেতর ঢুকে গেছে তখনই তাকে নিরাপত্তায় মুড়ে দাঁড়িয়ে গেছে গাড়ির সারি । সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির ভিডিও তুলছে পুলিশের টিম । মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক আটকানো । বাড়ির মাথায় গলির লাগোয়া রাস্তায় থরে থরে অস্ত্র হাতে জওয়ান , স্যাটেলাইট ফোন , ব্যারিকেড দুধারে সাধারণ পথ চলতি মানুষকে প্রায় বন্দীর মতো করে আটকানো । ছবি ভিডিও তুললেও সেগুলো ভারতের নিরাপত্তার খাতিরে দেওয়া গেলনা । এমনকি আমাদের গাড়িও একবার ঘিরে ফেললো যখন মাঝপথে আমাদের গাড়ি একটা ধাবায় ঢুকলো । এই সব সারি সারি দৃশ্যের সামনাসামনি হওয়ায় অবাক হওয়ার মতো বিষয় থাকলেও ভয়ের একটা স্রোতের মধ্যে ততক্ষণ ছিলাম যতক্ষণ ওই অমরনাথ যাত্রীদের বাসের কনভয়ে ছিলাম। তারপরেও আমরা পরে বালতালের আগে পর্যন্ত সোনমার্গের হোটেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢুকলাম ততক্ষণ দেখতে দেখতে চলছি পথের দুপাশের নিরাপত্তা । কারণ ধীরে ধীরে ট্রাফিক কমে গেলেও সারসার দাঁড়িয়ে জওয়ানদের দল । এমনকি সন্ধ্যায় যখন একটু রাস্তায় বেরিয়েছি তখনও জওয়ানরা দূরে দাঁড়িয়ে । এই গার্ড সারাদিন সারারাত চলবে অমরনাথ যাত্রার জন্যে । ভারতবাসীর ধর্মীয় এহেন মাসাধিক ধরে এই আচরণ আমার খারাপ লেগেছে বৈকি । কারণ এইসব কারণে জওয়ানদের যে পরিমাণ কষ্টসাধ্য অবস্থায় কাটাতে হয় । পথ থেকে বনবাদাড়, মোড় থেকে বাড়ির মাথায় ২৪ ঘন্টা ধরে এই নিরন্তর পাহারা দিতে হয় তা মেনে নেওয়া যায় না । লক্ষ লক্ষ মানুষ অমরনাথের যাত্রী । এই ধর্মীয় আচরণ জুনের শেষ থেকে শুরু হয়ে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত চলে অবশ্যই বড় বড় মঠ মিশনের ক্যাম্পগুলো মাসাধিক সময় শতশত ভলান্টিয়ার দিয়ে বালতাল ও পহেলগামের কাছে ক্যাম্প চালায় । লক্ষ লক্ষ মানুষ যায় হেলিকপ্টারে , ডান্ডিতে হেঁটেও যায় হাজার হাজার মানুষ । ঘোড়ায় যায় । প্রথম একমাস বড় বড় মঠ-মিশন এই যাত্রীদের সেবায় হাজার হাজার ক্যাম্প করে থাকেন । এই উপলক্ষে কাশ্মীরীদের একটা অর্থনৈতিক আয় বাড়ে । হোটেল ব্যবসা এই একটা সময়েই বিশাল লাভ ওঠায় । সত্যি যদি অমরনাথ যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা এক নম্বর কারণ হয়ে ওঠে তাহলে এটা কাশ্মীরের জনগণের কাছে এক বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে ।
বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯
বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ / আলোক কুন্ডু
বল প্লেয়ার বিশ্বকাপার
দেখতে যদি চাও
সটান একটা এরোপ্লেনে
সেন্ট পিটার্সবার্গ যাও ।
লেভা-লেনা নদীর ধারে
দাঁড়াও যদি গিয়ে
স্বর্গীয় সুখ বইছে ধারায়
স্বপ্নের মাঝ দিয়ে ।
গিয়ে দেখবে দাঁড়িয়ে আছে
হাজার ইতিহাস
লেনিন-স্টালিন-পুতিন ছাড়াও
সংস্কৃতির চাষ ।
লাগবেনাকো ভিসা-পাশপোর্ট
লাগবে না আধার
সঙ্গে যদি শান্তির বাণী
সদাই থাকে তোমার ।
মাঠের মধ্যে লড়াই তখন
গোলের পর গোল
আসলে তা প্রতিযোগিতা
শান্তির আদল ।
বলের বাউন্স লম্বা পাশের
নয়নাভিরাম কিক
জাতীয় সংগীত উঠবে গেয়ে
বিশ্ব নাগরিক ।
চার তিন তিন, দুই চার চার
এসব জ্যামিতি
কোনো কালে মিলবেনা ভাই
এমন পরিমিতি ।
গেম ট্যাকটিস দারুন দৌড়
হেডিং শেভিং টাচে
মনে রেখো এই খেলাতে
কালো ঘোড়াও আছে ।
ব্যাকভলিতে মেসির বল
ছিঁড়বে যখন জাল
ফ্রিকিকেতে নেইমারের
মাতাবে সাম্বাতাল ।
কখন কোথায় এসব হবে
অঘটন বা চাওয়া
জ্যোতিষরা সব ফেলের দলে
বিফল তাদের গাওয়া ।
কোথায় যাবে কারা নেবে
সোনালী ওই কাপ
সারা বিশ্বের উন্মাদনায়
তেইশ দিনের চাপ ।
বত্রিশ দল পাঁচ মহাদেশ
ঝাপায় কাপের জন্য
ভারতের নাম নেই সেখানে
তবুও নও নগন্য ।
বিশ্বের কবি রবিঠাকুরের
রাশিয়ার চিঠি পড়ো
বিশ্বকাপের স্বপ্ন বুনে
হীনমন্যতা ছাড়ো ।
প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু
#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...
-
বড় চমক, বাংলা থেকে এনডিএর-র উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী ●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●● গত তিন বছর বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন ব...
-
⛔ এটা ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৭-এর 'বর্তমান' খবর কাগজ। বরুণ সেনগুপ্ত'র আগাগোড়া ১০০% সমর্থন তখন। জিতেন্দ্রপ্রসাদ এসে সোমেন মিত্রকে নিয়ে...
-
#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা #CoronavirusLockdown #COVID19PH #COVID19 #CoronavirusPandemic #coronavirus #ভিটামিন_সি ■ বিজ্ঞানী ইন্দুভূষণ ...