শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২১

Netaji Subhas Chandra Bose

🌏 আমার সুভাষ / অলোক কুন্ডু

আমার সুভাষ রাত পেরিয়ে স্বদেশ ছাড়লো যেদিন
সেদিন থেকেই স্বাধীনতা বুঝি কুয়াশা ঢেকেছে মুখ
আমরা বুঝিনি দলে দলে গেছি নেতাজির ছবি বুকে
কদম কদম বাড়িয়ে দিয়েছি প্রভাতফেরির মুখে ।

যখন বুঝেছি দেরি হয়ে গেছে ভুল হয়ে গেছে বেশ
উপঢৌকনে তেইশে জানুয়ারি ভরিয়ে দিয়েছি ফুলে
রাশিয়ার জেল তাইহুক থেকে জাপান কোহিমা ঘুরে
কমিশন তোমাকে লুটেপুটে নিয়ে লালিপপ গেছে
দিয়ে ।

উইপোকাতে খেয়ে গেছে সব চাপানে-উতরে বেশ
শেষের দিনের খবর এসেছে গোল্লায় গেছে দেশ
বুকের বাতাসে শ্বাসপ্রশ্বাসে তবুও প্রহর গণি
কদম কদম বাড়ায়ে যা--সেতো তোমার পদধ্বনি ।

ঘরে ফেরা আর কখনও হবেনা এই অপেক্ষা মিথ্যে
অম্লান সেই স্মৃতি কাতরতা তবুও বুকেতে বাজবে
এখন সুভাষ ঘরে ফেরো যদি তেমন কিছু কি হবে
সহ্য হবেনা এত দৈন্যতা মিথ্যে ছলনা চুরি।

© অলোক কুন্ডু

বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২১

পুরোহিত--তবে তুমি ভন্ড এক রক্তে মাখামাখি

⛔ পুরোহিত--তবে তুমি ভন্ড এক রক্তে মাখামাখি
🙅 অলোক কুন্ডু

যে তুমি পূজারী রাজার--
প্রতিমাকে প্রসাদ ও ফুল দাও
অবিনাশী অভয় মন্ত্র শোনাও শুধু রাজাকেই
মন্ত্রে মন্ত্রে নিত্য উপাসনা তোমার
সেখানে প্রজার জন্য কি আশীষ চাও ?

এই যে ভয়ভক্তি
এই যে ঈশ্বরের আরাধনা
তা কি কখনও বিদ্রোহ জানান দিয়েছিল ?

তোমার মন্ত্রপূত জল রাজার মাথায় পড়ে
প্রত্যেকটি মন্ত্র রাজাকেই বাঁচাতে
প্রজাকে খুশি করার মন্ত্র কতটুকু আছে ?

প্রজার বঞ্চনার কথা কখনও বলেছো বিগ্রহের কাছে?
পূজারী তোমাকেও অবিকল ভয় পায় সকলে
রাজার জন্য তোমার এই আজন্ম লালিত শ্রম
শুধুমাত্র রাজাকেই ঘিরে
অথচ প্রজার ঘামমাখা হাত তোমারও চরণ মাখে।

তোমার প্রতিটি মন্ত্র উচ্চারণে
রক্ত চন্দন যেন প্রজার রক্তের মতোই
তোমার উত্তরীয় মাখে প্রতিটি হিংসার উৎস
রাজার সমস্ত পাপাচার ঢাকা দাও বেলপাতা পুষ্প চন্দনে।

যে মন্তপূত পৈতে তোমাকে হিতৈষী করেছে রাজার
যা তোমার শক্তির পরিচয়
অথচ প্রতিটি অভিশাপ লেখা হয় প্রতিটি গাছায়
যে ধর্মে দীক্ষা নিয়েছে রাজা
সেই একই ধর্মকথা প্রজার হয় না কখনও।

কারণ পুরোহিত তুমিই রেখেছো সেই বিভাজনক্রিয়া
প্রজার অভিসম্পাতগুলি জড় হলে মহাবিপদ তোমারও
মন্ত্রের গুণগুলি অবিকল ঘন্টাধ্বনি মতো
ছড়িয়ে যায় দূর থেকে দূরে
নিরীহ প্রজারা দূর থেকে নতজানু হয়
এই ছলনার কথা অবিকল জানো কি পূজারী ?

যে তুমি রাজার মন্দিরে থাকো শক্তিমান
তিলকরত্নের কপালরেখায়
পূজারী তুমি তো রাজা নও
ভক্ত সমারোহে আকূল কান্নাজল তোমাকেই সাক্ষী মানে
বিগ্রহের চরণধূলো যারা মাথায় নেয়
গন্ডুস ভরে পান করে চরণামৃত
সে কেন স‌ইবে বল দানবতন্ত্র রাজার ?
সে তো বিগ্রহকে মহারাজা জানে।

কী তবে এই ভান্ডার সাজানো
চন্দনের গন্ধে বিভোর করো প্রজার মগজ
ফুল গঙ্গাজল ধূপ ধুনো পঞ্চ উপাচারে
চামর ঘন্টাধ্বনি কত কি বলো?
এই সবই রাজার মাহাত্ম্যে প্রচলিত।

তবু রাজাকে শিক্ষিত করতে যে তুমি পারোনা
মন্ত্রে মন্ত্রে প্রজার ভয় আবিষ্কার করো
কত রক্ত বয় রাজ্যজুড়ে সেইসব কখনও বলোনা
পুরোহিত--তবে তুমি ভন্ড এক রক্তে মাখামাখি ।

⛔ © অলোক কুন্ডু

বুধবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২১

গোলি মারো এখন আমাদের সকলের মনে বাসা বেঁধেছে : অলোক কুন্ডু

গোলি মারলে খুব গায়ে লাগে, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে ৭ লাখ নিলে গায়ে লাগেনা / অলোক কুন্ডু

🙅 রাজনৈতিক দলে যারা ক্যাডার হয় তাদের মধ্যে ভদ্রঘরের ছেলেমেয়েরা যে থাকেনা এমন নয়। তারা যথেষ্ট থাকলেও সংখ্যায় তারা অবশ্যই কম থাকে। বেশিরভাগ থাকে নিম্নররুচির ছেলেমেয়েরা। যারা মারদাঙ্গা করতে পারবে। ভোট করতে পারবে। মার খেতে পারবে। এই যে হল্লাবাজের দল সমস্ত দলে ভিড় করছে তাদেরকে কিন্তু দরকার--রাজনৈতিক দলগুলোর। আমরা বাড়িতে বসে সমালোচনা করতে খুব পারি কিন্তু ট্রেনিং প্রাপ্ত প্রাইমারি ছেলেমেয়েদের বাদ দিয়ে থার্ড ডিভিশনকে শিক্ষায় হাজির করলে আমরা চুপ থাকি। এটা একটা উদাহরণ। গোলি মারোর থেকে আরও উত্তেজক সাম্প্রদায়িক হানাহানি। অপরকে মর্যাদা না দেওয়া। বাক্-স্বাধীনতা হরণ করা। এগুলো গোলি মারো-র থেকে ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ। 

🙅 তবে হ্যাঁ বামপন্থীদের সঙ্গে যখন এইসব লাফাঙ্গারা ঘোরে-ফেরে তখন তারা বামেদের কন্ট্রোলে থাকে। যখন তারা বামেদের মিছিলে যায় তখন যেহেতু বামপন্থীদের স্লোগান একটা জায়গা থেকে কন্ট্রোল হয়ে থাকে তাই অন্য কোনও রকম অসভ্যতা করার সুযোগ থাকেনা। বামেদের মিছিল কন্ট্রোল করে সাধারণত কলেজের ছেলেমেয়েরা, তারা আগে থেকে মিছিলের মহড়া দেয়। কি বলতে হবে তারা ঠিক করে নেয়। কিন্তু অন্যদলের এইসব ব্যবস্থা একেবারে নেই। এমনকি শৃঙ্খলা পরায়ণ বিজেপি দলেরও যে একই অবস্থা হতে পারে তাও বাংলার লোক প্রত্যক্ষ করলো। তারাও গোলি মারতে বেশ এগিয়ে থাকলো। যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের স্লোগানের কথা মনে আছে ? দিল্লির নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লোগানের কথা। আসলে যখন যারা দেয় তাদের মিছিল জমজমাট হয়। তারুণ্যের রক্ত বলে অনেকে উড়িয়ে দিতেও পারেন। আসলে এখন রাজনীতির গতিপথের সঙ্গে কিন্তু এইসব মানানসই। যেরকম রাজনীতি সেরকম স্লোগান। 

🙅 আসলে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে এখন ভদ্রলোকের বড় অভাব। তা ছাড়া এখন একদল লোক এই দল সেই দল থেকে অন্যদলে হু হু করে চলে যাছে। মূল কথা এদের দলে নিতে হবে এটাই এখন একমাত্র লক্ষ্য বিজেপির। যৈ যাই বলুন না কেন, লোকের যাওয়া কিন্তু বেড়েছে বিজেপির দিকে। এমনটা কিন্তু নভেম্বর পর্যন্ত ছিলনা। বরং নভেম্বর পর্যন্ত বিজেপিকে ছেড়ে অনেকে চলে গেছে। এখন স্রোত একমুখী। কে জানে, আগের দিন যারা তৃণমূলের হয়ে গোলি মেরেছিল তারাই পরেরদিন বিজেপির হয়ে যে গোলি মারেনি এর কোনও গ্যারান্টি নেই। আসলে গোলি মারুক আর নাই মারুক যুগটাই তো এইরকম। 

🙅 নেতা নেত্রীর মঞ্চের বক্তব্য আগে শুনে বলুন তাদের মুখের ভাষাটা কোন ধরনের। আমরা যারা ভদ্রলোক নিজেদের ভাবি, তাদের মাথায় বহুত চর্বি। কেননা এইসব গোলি মারো যারা বলছেন তাদের আমরা ছোটলোক বলছি কিন্তু গোলি মারোর উৎস সন্ধানে নীরব থাকছি। অবশ্যই দুটোই ইতর বিশেষ। নেতাদের কোনও বাকসংযম কখনো ছিলনা। সে আনিসূর রহমানই বলুন আর বিনয় কোঙার বলুন ও আরামবাগের বড় বামপন্থী নেতা প্রয়াত অনিল বসুর নামই বলুন। মঞ্চ থেকেই যে খারাপ নোংরা ভাষার উৎপত্তি হয় তা ইতিপূর্বে প্রমাণ হয়ে গেছে। 
এখন তো রাজনৈতিক ফলার মাখার সময়। উত্তেজনা ছড়ানোর মতো স্লোগান দিতে, আমরা ভদ্রলোকরা কোনও দলের হয়ে এখন নামতে যখন পারছিনা তখন যারা তা পারছে তাদের কিন্তু মিছিল উৎসাহিত হয়ে মেনে নিচ্ছে। তাই এই উত্তেজক স্লোগান যারা দিচ্ছেন তারা এখন সেই সেই দলের সম্পদ, এই সার কথা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমার এইসব উচ্চারণে অ্যালার্জি হলেও রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন হচ্ছে। 
মিছিলের প্রয়োজনে হচ্ছে। তৃণমূলের লোকেরা দেবে, বিজেপির লোকেরাও দেবে। মঞ্চের লোকেরাও দেবে। তবে কি সাপোর্ট করছি? ঘুষকে সাপোর্ট করলে এটাকেও তো করতে হয় তাই না। আর আমার মতো ছাপোষা লোকদের সাপোর্টে কি এসে গেল ? 

🙅 তবুও এক ধরনের বিড়াল তপস্যী থেকে যাবেন যারা সেই দল করে সেই দলের গোলি মারোকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করে যাবেন। আসলে 
দল আগে এটা আমাদের বোধগম্য হয়না। আমরা ভাবি ঈস্ এইসব বাজে কথা গান্ধীর দেশে বলছে ? লোকেরা এইসব নিয়ে তিল থেকে তাল করে দিতে চান একমাত্র ভোটে জেতার জন্য। তার দল ভোটে জিতে গেলে আর এইসব তখন মনেও থাকেনা। কি অদ্ভুত মারা আমরা!!? 

©® অলোক কুন্ডু

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১

নস্টালজিক নন্দীগ্রাম না শান্তির বার্তা কোনটা : অলোক কুন্ডু

🙅 সত্যি মমতা ব্যানার্জীর এটি মাষ্টার্স-স্ট্রোক বটে। যতটা শুভেন্দুকে হারানোর জন্য ততটা কিন্তু নন্দীগ্রাম জেতার জন্য নয়। নন্দীগ্রামে শুভেন্দুকে আটকে রাখার জন্য আসলে এই ব্যবস্থা বা প্ল্যান। এটা না হলে শুভেন্দুকে আটকানোর আর দ্বিতীয় পথ ছিলনা। কিন্তু ইলেকশন কমিশন যদি ঠিক করে নির্বাচনের প্রশাসনিক কাজ করতে পারে সেখানে কে জিতবে কে হারবে এখন থেকে বলা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। তবে বিজেপি বলতে শুরু করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমতুল্য এখন পশ্চিমবঙ্গে একজন নেতা তিনি শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুকে তৃণমূল এতদিন ব্যবহার করেছে তাদের দলকে বাঁচানোর জন্য। শুভেন্দুকে তৃণমূল ব্যবহার করেছে বক্তৃতা করার জন্য, সংগঠন করার জন্য এবং প্রশাসনে সাহায্য করার জন্য। এই তিনটি ক্ষেত্রেই শুভেন্দুর সাফল্য নজিরবিহীন। তার অভাববোধের যন্ত্রণা থেকেই যে শুভেন্দুকে বধ করার এই মরিয়া পরিকল্পনা তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শুভেন্দু ছিল একসময় তৃণমূলের রক্ষাকর্তাও। কারণ এই মূহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শুভেন্দুকে কোনোভাবেই বক্তৃতা করে আটকানো যাবেনা। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি শুভেন্দু বলেছেন ৩০০ কিলোমিটার দূরে সৌগত রায়কে ভোটে জেতাতে ও বাঁচাতে শুভেন্দুকে বক্তৃতা করতে পাঠিয়েছিল তৃণমূল। এমনকি হাওড়া, উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত বক্তৃতা করে বেড়িয়েছেন শুভেন্দু। 

🙅 নন্দীগ্রামে কে হারলো কে জিতলো সেটা কোনও বড় বিষয় নয়। বিষয়টা হলো এখন ভোট যুদ্ধে জেতা। কোন দল জিতবে এটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আগেই লক্ষ্মণ শেঠকে তার এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল কারণ তৃণমূলের জেতাকে এগিয়ে রাখতে এবং সিপিএমের ভোটবাক্সকে পুনরুদ্ধার করতে। তখন শুধুমাত্র শত্রু ছিল বিজেপি। এখন বিজেপির দোসর হয়েছে শুভেন্দু। তৃণমূলের এখন ডবল এনিমি। মমতা ব্যানার্জী দাঁড়ানোর কথা বলার ফলে নন্দীগ্রাম রাজনীতি এখন জমজমাট। কিন্তু তেমনি তৃণমূলকে আগেকার রাজনৈতিক স্ট্যাট্রেজি এখন সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। একই সঙ্গে শুভেন্দুর ভোট ব্যাঙ্ক কমিয়ে বাম ভোট সম্পূর্ণ টেনে আনতে হবে। বামেদের পুরনো ভোট বামেদের দিকে গেলে তৃণমূলের পক্ষে তা হবে দুশ্চিন্তার কারণ। লড়াই এখন বাগে-কুমিরে। তৃণমূলের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন এইবারের ভোট যেন দাবার বোর্ড হয়ে উঠতে চলেছে। বিরোধীদলের এবং বিশেষজ্ঞদের অভিমত যে এবারে হাওড়া ও কলকাতায় অবাঙালি ভোটের ৯০% ভাগ বিজেপির দিকে ঝুঁকতে পারে, সেক্ষেত্রে ভবানীপুর কেন্দ্রটি তৃণমূলের টালমাটাল অবস্থায় আছে। তৃণমূলের দ্বারা প্রচারিত "বহিরাগত" শব্দটি দেশের পক্ষে যতই ক্ষতিকারক হোক না কেন এই স্লোগান এখন তৃণমূলের ভোট বৈতরণী পার করার মূল অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অস্ত্র প্রয়োগ একমাত্র বিজেপির বিরুদ্ধেই। আবার এই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেলে বিজেপির ভোট বাড়তেও পারে এবং ডবল হয়ে যেতেও পারে। সেক্ষেত্রে অবাঙালি ভোটের একটা ভালো অংশ বাম-কংগ্রেসও এবারে বঞ্চিত হয়ে পড়বে। অবাঙালি ভোট-- কলকাতা হাওড়া আসানসোলের বহু অংশে এবারে হার জিতের পক্ষে একটা জরুরি অক্ষরেখা। 

🙅 সারা রাজ্যে ১০ টি রাজনৈতিক দলের প্রচারে আক্রমণের অভিমুখে এখন একা বিজেপি লড়ছে। নিঃসন্দেহে বিজেপিকে এখানে বিশাল প্রতিবন্ধকতার মধ্যে লড়তে হচ্ছে। তৃণমূল কিন্তু ২০১১-তে এতবড় প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়নি। বিজেপি বিরোধী তীব্র মতামত থাকা সত্ত্বেও কৃষি আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু বিজেপি সারা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে প্রতিটি দিন বেড়ে উঠছে। শুভেন্দুর কলকাতার মিছিলে অংশ নিয়ে উপস্থিত থাকা, শুভেন্দুর কলকাতার জনসভায় উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করা তৃণমূলের পক্ষে একপ্রকার বিশাল ভয়ের ব্যাপার। এই মূহুর্তে শুভেন্দুর পাল্টা বক্তৃতা করতে গিয়ে কল্যাণকে ক্যারিকেচার পর্যন্ত করতে হয়েছে। কুনাল ঘোষ বক্তৃতা করতে গেলেই নেট জুড়ে চোর শব্দের ফুলঝুরি উড়ছে। কুনাল ঘোষ শেষ পর্যন্ত ধুরন্ধর শিশির অধিকারীর বিপক্ষে বলে ফেলে বিপদে পড়ে গেছেন। শেষে কুনাল ঘোষকে একঘন্টা ধরে শিশির অধিকারীকে তেল দিয়ে বৈঠকী আড্ডার মতো করে নমনীয় হয়ে বোঝাতে হয়েছে--বর্ষীয়ান শিশির অধিকারীকে। শুভেন্দু চলে গিয়ে তৃণমূলের ভালোর থেকে মন্দ বেশি হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুভেন্দুর ভিড় ছাপিয়ে যেতে তৃণমূলের একাধিক নেতা পারেননি। তাই মাষ্টার্স প্ল্যান নিয়েছেন মাননীয়া নিজেই। কিন্তু এই প্ল্যান খানিকটা চ্যালেঞ্জের মতো হয়ে গেছে। কারণ মমতা ব্যানার্জীর নন্দীগ্রামের সভায় লোক এসেছিল বাসে করে। আশপাশের সমস্ত কলেজ থেকে ভিড় করেছিল ছাত্ররা। মমতা জিতবেন না হেরে যাবেন তা ভবিষ্যতই বলবে। তবে শুভেন্দুকে খানিকটা আটকানোর কৌশল যে মমতা ব্যানার্জীর এই ঘোষণা তা বুঝতে বাকি নেই। কিন্তু শুভেন্দুকে কতটা আটকানো যাবে সেটা বোঝা মুস্কিল। শুভেন্দু সত্যিই নন্দীগ্রামের মানুষের জন্য লড়েছেন। যদি গোলমাল পাকিয়ে শুভেন্দুকে হারিয়ে দেওয়া যায় তবে হয়তো শুভেন্দুকে নন্দীগ্রামে হারালেও শুভেন্দু কিন্তু আগামী দিনে আরও বড় নেতা হয়ে উঠতে পারে। কারণ দমিয়ে রোখা যাবেনা শুভেন্দুকে। কিন্তু বিজেপির পজিশন কিন্তু আরও ভালো হলেও হতে পারে। সবকিছু এই মূহুর্তে পরিষ্কার নয়। 
শুভেন্দু কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম করতে পারে তার কোনও পিছুটান নেই। একরকম ডাকাবুকো টাইপের। 

🙅 তবে নন্দীগ্রামে যে ঘরে ঘরে এবারে প্রচুর টাকাপয়সা দেওয়া হবে এটা প্রায় নিশ্চিত। দু-দলকে জিততে হলে টাকা না ছড়িয়ে উপায় নেই। টাকাপয়সা দুপক্ষই এখানে ছড়াবে এখানে। বাঁচবার লড়াই দুপক্ষেরই। এখনও ভোটের কোথাও কিছু হয়নি, কিন্তু শুভেন্দু পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে তার গড়ে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত এবং অনেকগুলো বড় বড় সভা একের পর এক রোজ করে চলেছেন। মাননীয়াকেও এখন বেশি সময় দিতে হবে দুই মেদিনীপুরে। শুভেন্দুর চরিত্র কিন্তু একরোখা। হারানো সে জীবনে কম দেখেছে। রাজনীতি নেশার মতো দুজনেরই। সারা পূর্ব মেদিনীপুর শুভেন্দুর মুঠোর মতো করে চেনা। মাননীয়া যদি নন্দীগ্রামে সত্যিই দাঁড়ান তবে সেখানে বামেদের যে পুরাতন মাটি ছিল তা তৃণমূলের পক্ষে যেতে হবে। এই বিষয়টা ইতিমধ্যে বামেদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। নিশ্চিত ভাবে তারা নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর বেশি করে বিরোধিতা করবেন, তা না করলে এই মূহুর্তে বামেরা পূর্ব মেদিনীপুরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। অথচ তারা এতদিন ভেবে রেখেছিল নন্দীগ্রাম উদ্ধার করবে এবং বিজেপির বিরুদ্ধেই যাবতীয় অস্ত্র শানাবে। মমতা ব্যানার্জীর দাঁড়ানোর ঘোষণায় সবচেয়ে দোটানায় পড়ে গেল এখানে বামেরা। এখানে একসময় শুভেন্দুর জন্য কংগ্রেসের একটা পুরনো মাটি ছিল। সোমেন মিত্রর সহচর হিসেবে শুভেন্দু কংগ্রেসের গড় আটকেছে সেইসময়। তৃণমূলের গড় তৈরি করেছে একসময়ে এখন বিজেপির। তবে মনে হয় নন্দীগ্রামের মুসলমান সমাজ এখনও শুভেন্দুকেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু এই বিশ্বাস খানিকটা ধাক্কা খাবে মমতা ব্যানার্জীর এই ঘোষণায়। হয়তো ভেন্দুকে আরও পড়ে থাকতে হবে এখানে। যার ফলে বিজেপির সামান্য ক্ষতিও হবে। তৃণমূলেরও কিন্তু একটা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কলকাতার বুকে গভীর ভাবে থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি অঞ্চলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুব্রত বক্সী যত সহজতর উপায়ে কলকাতায় বসে মমতা ব্যানার্জীর নির্বাচন দেখতেন এখন তাকেও কলকাতা ছাড়তে হবে। 

🙅 মমতা ব্যানার্জীর দাঁড়ানোর কারণে অধীর চৌধুরীরাও এখানেও সভা করবেন। আর যদি আব্বাস সিদ্দিকী আলাদা করে সিট দেন তবে তারা নন্দীগ্রামেও দেবেন। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়াতে চাওয়ার একটা বড় কারণ মুসলিম ভোট। এখন নন্দীগ্রামের মানুষদের ওপর ঝড়ঝাপটা এলেও তারা এতদিন একহয়ে লড়েছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে একটা মহাসমস্যা তৈরি হলো। একটা বড় ফাটল হতে চলেছে যা তারা চাইবেন না। কোনদিকে এখন তারা যাবেন। কাকে সঙ্গ দেবেন। এইসবকে কেন্দ্র করে যদি খুনোখুনি শুরু হয় এ ভয় নন্দীগ্রামের মানুষদের মনে ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে। ভোটের টাকা না অশান্তি কোনটা এখন তাদের ভাগ্য ফিরিয়ে দেয় সেই চিন্তা নন্দীগ্রামের জনগণের। চিন্তা দুটো রাজনৈতিক দলেরও। এখানে নীচতলায় দলবদলের আশঙ্কাও দেখা যাবে। মারদাঙ্গার সঙ্গে নন্দীগ্রামের নাম জুড়ে যেতেও পারে। এখন ভোটের ময়দান সরগরম হয়ে উঠতে চলেছে সারা রাজ্যের সঙ্গে নন্দীগ্রামেও। দুদিন অন্তর সভা জনসভা, ভিড়ভাট্টায় শান্তির থেকে অশান্তির বাতাবরণ এখন নন্দীগ্রামের ভাগ্যের সঙ্গে জুড়ে গেল যতদিন না ভোট শেষ হয়। 

©® অলোক কুন্ডু 

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২১

দলবদল আজ আর কোনও আশ্চর্য বিষয় নয় : অলোক কুন্ডু

⛔ দলবদল কোনও আশ্চর্য বিষয় নয় : অলোক কুন্ডু

🚥 অনেকে শতাব্দীকে উদ্দেশ্যে করে শতাব্দীর সেরা চমক কেন বলছেন ? আমার মনে হয় তারা ভুল বলছেন। আবার যদি ধরে নি এই দল বদলের নাটক-টা পি.কের মাথার খেলা! আপনি হয়তো বলবেন, এটা কীভাবে সম্ভব !? এমনটাও তো হতে পারে। পি.কে নামক ব্যক্তির এটা একটা রাজনৈতিক স্টান্ট। আমি বলছি এটা হওয়ার চান্স আছে। আচ্ছা এই আচরণ কি তবে একটু অস্বাভাবিক লাগছে না ? এতজন একসঙ্গে তার ৯ বছর ধরে ক্ষমতা ভোগ করার পর এরকমটা দলে দলে বলতে যাবে কেন ? কারণ সমস্ত ভালো-খারাপের সঙ্গে তারও তো কিছু দায় দায়িত্ব থেকে যায়। এখানে শুভেন্দুর দল বদল একমাত্র রাজনৈতিক অভিলাষ হলেও অন্যদের কিন্তু তা মনে হয় নয়। কারণ অন্যরা অত নামী নন। এখন যদি শুভেন্দুও কখনও ফিরে যান তবে বলতে হবে এই যাওয়া আসা পুরোটাই তৃণমূলের গেম প্ল্যান মাফিক হয়েছিল। তবে শুভেন্দু ফিরে আসুন আর নাই আসুন অন্যদের এই যাওয়া আসা জনমানসে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
কারণ এইসব নেতানেত্রীরা অনেকটা ইউটিউবের সিনেমার মতো জনপ্রিয়। শতাব্দী বীরভূমে গিয়ে ভোট করতে পারেন এ বিশ্বাস একেবারেই ঠিক নয় বরং শতাব্দী আর একটু সুবিধা পাওয়ার জন্য জেনেশুনে এইরকম করেছেন। কারণ শতাব্দী রাজনীতির যে কেউকেউ নন সেটা তিনিও ভাল জানেন। নৈবেদ্যর সন্দেশ একপ্রকার। বিজেপিতে এলেও তিনি শুভেন্দু নন আবার তৃণমূলে থাকলেও তিনি অনুব্রত নন। 

🚥বিজেপিকে নাস্তানাবুদ করতে এই বঙ্গে-- কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, নকশালদের বিভিন্ন গোষ্ঠী, ত্বহা সিদ্দিকী, আব্বাস সিদ্দিকী, এসইউসিআই, বুদ্ধিজীবী এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় সমস্ত প্রতিষ্ঠান কখনও দলবেঁধে কখনও নিজেরা দিনরাত লেগে রয়েছে একথা আপনাকে মানতেই হবে। তবুও গ্রাম-গঞ্জতে বিজেপির ভিড়ের শেষ নেই। এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে লড়াই কিন্তু বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের। লড়াই এখন সমান সমান। যে কেউ জয়ী হতে পারে। কিন্তু এখানে এখন বিশাল প্রশ্ন যে কংগ্রেস, সিপিএম, আব্বাস সিদ্দিকীর দল বা মিম কার ভোট কতটা কাটে। এই ভোট কাটাকাটিতে কিন্তু বিজেপির কোনও ক্ষতি নেই। ক্ষতি তৃণমূলের ক্ষতি কংগ্রেসের ক্ষতি বামেদের। এই নির্বাচনে বামেদের বেশ কিছু দল একেবারে শেষ হয়ে যাবে। তাদের ভোট ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যে তলানিতে এসে ঠেকেছে। যদি আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে সামনে বা পেছনে কংগ্রেস ও বামেদের সমঝোতা না হয় তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাম ও কংগ্রেস। কারণ মুসলিম ভোট বিজেপির নেই তাই তাদের কোনও চিন্তার কারণ নেই তাদের সঙ্গে বাইরে ভেতরে জোটের আশা নিরাশাও নেই।

🚥 এইসময় পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকদের জোরদার কৃষক আন্দোলন চলছে। ভারতের বৃহত্তম আন্দোলন গুলির মধ্যে এখনকার কৃষক আন্দোলন যে ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দিগদর্শন হতে চলেছে তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। এতে কৃষকদের
লাভ লোকসান এখনও অজানা। এই আন্দোলনও বিজেপির বিরুদ্ধে আছে। এই মহা-বিরুদ্ধবাদকে সঙ্গে নিয়েই বিজেপির এই উত্থান তাই চমকপ্রদ বটে। বিজেপির উত্থান তাই একদল ভোটারের কাছে খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে বিজেপি শক্তিশালী দল হলেও এই দলকে প্রচন্ড ভাবে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে কয়েকটি কারণে। এছাড়াও এই দলকে বিড়ম্বনায় ফেলতে বিজেপির দু-তিনজন নেতা আছেন এই দলে। তারা হলেন, দিলীপ ঘোষ, বাবুল সুপ্রিয়, সৌমিত্র খান প্রভৃতি। এদের আলতু-ফালতু বক্তব্য বহু সময় বিজেপিকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিচ্ছে প্রতিটি দিন। তবে দিলীপ ঘোষ যে একাই এই দলটাকে উজ্জীবিত করে রেখেছেন তাও ভাবার মতো বিষয়। এত নেগেটিভ রাজনৈতিক বাতাবরণ হওয়া সত্ত্বেও বিজেপিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছে শুভেন্দুর মতো হেভিওয়েট নেতা। শুভেন্দু চলে গিয়ে যে তৃণমূলের দিশেহারা অবস্থা হয়েছে তা কাদা ছোড়াছুড়ি দেখেই বোঝা যায়। শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে ১২ জন নেতা-নেত্রী রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন। যদি ফুটবল খেলার কথা ভাবেন তবে বুঝবেন শুভেন্দুর দিকে বল আটকে থাকার জন্য বিজেপি কিন্তু অন্যদিকে অনেকটা ফাঁকা ময়দান পেয়ে গেছে। এই ফাঁকা জায়গাটায় কংগ্রেস ও সিপিএমও নেমে পড়েছে, তাকে কাজে লাগাতে। শুভেন্দুর জন্য রাজনৈতিক ময়দানে তৃণমূলের যে কিছু অসুবিধা হচ্ছে সেটা বুঝতে পেরেছেন অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান। কারণ যে জায়গাটা আগে কংগ্রেস ও সিপিএম পাচ্ছিলেন না তা শুভেন্দুর জন্য আজ অনেকটাই ফাঁকা হয়েছে ঢিলেঢালা হয়েছে। 

🚥 তবে এইবারে ততটা জমি কংগ্রেস ও বামেদের নেই। জনগণ এখন দুভাগে বিভক্ত। হয় বিজেপি নয় তৃণমূলের কাছে আছে ভোট ব্যাঙ্ক। মাঝে মুসলিম সম্প্রদায় মাঠে নেমেছে। তবে পুরোপুরি তারা নামলে সমীকরণ যে এক ঝটকায় পাল্টে যাবে সে কথা সকলেই জানেন। তত্বা সিদ্দিকী তৃণমূলের হয়ে জবরদস্ত ময়দানে নেমে পড়েছেন। ইতিপূর্বে তত্বাবধানে মিম করেও সুবিধা করতে পারেনি। মুসলমান সমাজ কখনই একদিকে নেই এবং ছিলও না কখনও। গত ৯ বছর ধরে মুসলিম সমাজ তিনদলে বিভক্ত হয়ে ভোট দিয়ে আসছে। বেশিরভাগ কেন, প্রায় ৭০% ভাগ মুসলিম ভোট দিয়ে আসছে তৃণমূলকে। আবার ৩০% ভাগ ভোটার এখানে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ছোট ছোট ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও নির্দলে দাঁড়িয়ে যান, তারাও কিছু ভোট কাটেন। কংগ্রেস, সিপিএম বা বামদলগুলি তো ভোট কাটার জন্য আছেই। এই মহামূল্যবান ভোট যে কত মহার্ঘ্যবস্তু তা রাজনৈতিক দলের অজানা নয়।

🚥 এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি কিন্তু আটকে আছে আগামী ২১.১.২১-এর জন্য। ওইদিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে আব্বাস সিদ্দিকীর নতুন দল অথবা জোট অথবা কোনোকিছু ঘোষণা করার কথা। কংগ্রেস ও বামেরা ইতিমধ্যেই আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যদি মিম জোটে যুক্ত না হয় তবে কংগ্রেস ও সিপিএম আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে ফ্রন্ট করতে পারে। কিন্তু এখানেও বিষয়টা মূল আটকাচ্ছে, কে কাকে কটা সিট ছেড়ে দেবে-- 
এই মূল আলোচনায়। মিম ঢুকলে আব্বাসের সঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএমের হয়তো বাইরে থেকে ঢাকার গুড়গুড় সমঝোতা হতে পারে। কারণ আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের আপত্তি মিম-কে নিয়ে। তৃণমূল গোটা ১৫-টা সিট আব্বাসকে ছেড়ে দিতে পারলে আর আব্বাস যদি রাজি হতো তাহলে তৃণমূলের জেতা অবশ্যই সহজ হতো। কিন্তু আব্বাস সিদ্দিকীরা কিছুতেই ৪০-এর কমে রাজি হননি এবং তত্ত্বা সিদ্দিকী আবার সেখানে আব্বাসের ব্যাপারে আপত্তি করেছে। কারণ আগে তত্বাই ছিল তৃণমূলের এবং পরে মিমে-র আসল লোক। মিম দেখলো তত্বার সেরকম কোনও সংগঠন করার ক্ষমতা নেই। আব্বাসের সঙ্গে প্রচুর ফ্যান ফলোয়ার রয়েছে। তাই মিম এখন আব্বাসের দিকে ঝুঁকে গেছে। ভবিষ্যত বলবে আব্বাস মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হয়ে উঠতে পারেন কিনা ? যদিও তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে মাঠে নেমেই আব্বাস সিদ্দিকীরা এখন থেকেই চার-ছয় হাঁকিয়ে যে খেলতে শুরু করেছেন এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বোঝা খুব মুস্কিল। কারণ মুসলিম সমাজ আজ দ্বিধাবিভক্ত অনেকটা। তাদের সামনে এখন তৃণমূল ও ফুরফুরা সরিফের আব্বাস সিদ্দিকী জোর টানাটানি চলছে। 

🚥 স্বাধীনতার এতবছর পরে পশ্চিমবঙ্গের একটি বৃহত্তর জনসাধারণ, মানুষের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে এই প্রথম বিপুলভাবে ঝুঁকলেও, বিজেপি কিন্তু ইতিমধ্যে ১৮ টি এম.পি সিটে এগিয়ে রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে দিলীপ ঘোষের আলতু-ফালতু বলার পরও এবং দলবদলুর বর্তমান এইরকম সুবিধাজনক বাজার না থাকা অবস্থায় কিন্তু বিজেপির উত্থান হয়েছে আগে থাকতেই। আর তা খুব খারাপ ছিল না। এখন এই শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী ও অন্যান্যরা। এখানে উল্লেখ্য যে কেউ কেউ দল বদল করলেও পুণরায় তৃণমূলে ফিরে যাচ্ছেন এবং যাবেন তাদের কিন্তু কোনও ফলোয়ার নেই। সঙ্গে মাস বা জনগণের ভূমিকা তাদের সঙ্গে নেই। শতাব্দীর ফেসবুকের ফলোয়াররা ভোটের ফলোয়ার নয় বরং তারা সকলেই তৃণমূলের ফলোয়ার। তাই সেখানেই শতাব্দী তার দুঃখ জানিয়েছেন। বাইরের কেউ সেখানে নেই। একরকম ঘরেই ফুঁপিয়েছেন শতাব্দী। শতাব্দী বীরভূমে গিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে ভোটার বার করে আনতেন এরকম বিশ্বাস বিজেপিও বুঝি করেনি কিন্তু তারাও সমৃদ্ধ হতেই চেয়েছিল কারণ দল ছেড়ে দিলে তার কাছ থেকে প্রাক্তন দলকে গালাগালি দেওয়ার একটা বড় সুযোগ থাকে। এই লোভ কিন্তু বিজেপিও সামলাতে পারেনি। যদিও মুকুল রায় যিনি তৃণমূলের সংগঠন তৈরি করেছিলেন তিনিই এখন এখানে বিজেপির সংগঠন গড়ছেন। কিন্তু মুকুল রায়ের একটা ভুল আছে তিনি তৃণমূলের যখন সংগঠন গড়ে ছিলেন তখন বামেদের হারের দশা। তৃণমূল কিন্তু এখনও লড়াইয়ে আছে। তবে বিজেপির কাছে একটা বড় সিগন্যাল যে ইতিমধ্যে কোনও সাহায্য ছাড়াই তারা
তৃণমূলকে অনেক সিটে হারিয়েছে। যেমনটা হয়েছিল ২০০৯-এ।

🚥বঙ্গ রাজনীতিতে এমনটা কখনও দেখেননি তো তাই কেউ কেউ অবাক হচ্ছেন। আসলে আগেকার যারা মানুষ দলবদল করেছেন তাদের সঙ্গে আপনি বর্তমানের লজঝড়ে নেতাদের একই পংক্তিতে বসাচ্ছেন বলে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হচ্ছে। আসলে নেতাদের দল বদল এখন দুবেলা চা খাওয়ার মতো। দল বদল না করলে মনে হবে তারা বুঝি চা পানের মতো কিছু একটা খাননি। এই যাতায়াত তাই আপনার অবাস্তব মনে হচ্ছে। কিন্তু তা হলেও আপনি তো এই জমানার লোক। ভালো করে ভেবে দেখুন আপনিও ওই একরকম মানসিকতার লোক। আপনার- আমার সঙ্গে দল-বদলুদের খুব একটা তফাত নেই। আপনিই তো বলছেন দলে থাকলে বা এলে তারা ভালো আর চলে গেলে খারাপ। আপনার দল থেকে কেউ যখন চলে যাচ্ছে তখন আপনি তাকে চোর বলছেন বা তার সমালোচনা করছেন আবার ফেরত এলে বলছেন ভুল করেছিল, ওর দোষ নাই লোকটা একদম খাঁটি। ভুল বোঝানো হয়েছিল। সুজাতা খান ও শতাব্দী রায় এখানে দুই দলের উদাহরণ হতে পারেন। আসলে আপনিও তো মশাই এইরকম ভাবছেন। ভাবছেন বলেই মনটা খারাপ ভাল উৎফুল্ল হচ্ছে আবার কষ্ট হচ্ছে ? আসলে দলবদলুরদের মতোই আপনারও একইরকম মানসিকতা অ্যাডজাস্ট হচ্ছে। শোনা যায় শীতের দেশের জীবজন্তুর এইরকম আপনার মতো তাপ উত্তাপ অ্যাডজাস্ট করার ক্ষমতা থাকে। আমি বলতে চাইছি আপনার মানসিকতার কথা। একে সোজাসাপ্টা ধান্দাবাজি বলে। কিছু মানুষ এই ডামাডোলের সময় চুপ করে চারপাশটা মেপে নিচ্ছেন। এরা হচ্ছেন সবচেয়ে ধান্দাবাজ। 

🚥 দলবদল কিন্তু ভালো লক্ষণ। যতবার দল বদল হবে ততই জনগণের লাভ। দলবদল না হলে আপনার পাওনাগুলো সঙ্কটে পড়ে যাবে। যদি কেউ দলবদল করে তখন জনগণ সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেয়ে যাবে এমনটা বলবো না কিন্তু কিছুটা স্বস্তি পাবে জনগণ। ইতিহাস তাই বলে। কিন্তু সকলেই যে দলবদল করলে আমাদের ভালো হবে এমনটা নাও হতে পারে। কিন্তু কখনই শতাব্দীর দল বদলকে নিয়ে ঠাট্টা করবেন না।
দল বদলের পেছনে তখনই রাজনীতি থাকে যখন নেতা হওয়ার যোগ্যতমরা তা করে থাকেন। কিন্তু যাদের নাম শোনেননি, অথবা তেমন দরের নেতা নন এমনকি কইয়ে বইয়েও নন, তারা কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে দল বদল করে এটা ভাবা সম্পূর্ণ ভুল। শুধুমাত্র সারদা-নারদার জন্য দলবদল হয় যখন তখন তার আরও কারণ থাকে। শুধুমাত্র সারদা নারদার জন্য দলবদল একেবারে সরল ভাবনা। আসলে দলবদলের পেছনে অনেক রকম সুবিধা-অসুবিধা থাকে। শতাব্দীর এখন দুহাতে কোনও ইনকাম নেই তেমন। এম. পি. থেকে যা পান তার থেকেও খরচ ওনাদের অনেক বেশি, কারণ উনি একসময় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন। তাই ওনার চালচলনের কারণে আভিজাত্যের যে খরচ সেটা একজন রাজনীতিবিদের থেকে বেশি। আবার শতাব্দী রাজনীতিতে হোলটাইমারও নন। বিশেষ করে বীরভূমে শতাব্দী যেখানে এম. পি. সেখানে সর্বশেষ কথা বলেন অনুব্রত মন্ডল। তবে অনুব্রত পার্টির প্রতি ভীষণ লয়াল এবং একজন পাকা রাজনীতিবিদ তিনি । তার ভাল-মন্দ বিচার এখানে করার কথা নয়। কিন্তু সেখানে শতাব্দী হঠাৎ ৯ বছর বাদে ফেসবুকে লিখতে গেলেন কেন ? আসলে যারা ঘরে না বলে বাইরে সেই পার্টির নামে বলে বেড়াচ্ছেন তারা পার্টির কাছে আরও পদ নয়। টাকা কড়ি খরচের হিসাব দেখতে ও পেতে চাইছেন। তারা যে সমস্ত খরচ করছেন তার হিসেব দেখার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু তারা তা এতদিন তা পারছিলেন না। তাই বাইরে অন্যভাবে বলছেন। কিন্তু তিনি তার  দলের বিপক্ষে বলছেন কেন ? এর দুটো কারণ থাকতে পারে। একটা কারণ এর সবটাই একটা নাটক হতে পারে। একসঙ্গে এতজন মিলে সমালোচনা করেছেন ও আবার তারা কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন। তাই আসা ও যাওয়া এইসব একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। হাওড়ায় এটা অনেক বেশি হচ্ছে। মনে হয় এটা বাজার ফিরে পাওয়ার এক ধরনের কৌশল হতে পারে। বিজেপিকে এইভাবে কোনঠাসা করার পরিকল্পনাও হতে পারে। যদি তাই হয় তবে এই রাজনীতির মধ্যে পি.কে-র ধুরন্ধর বুদ্ধি থাকতে পারে। হয়তো দেখা যাবে নির্বাচনের মুখে অনেকে বিজেপিতে যাবে এবং আবার ফেরতও চলে আসবে। শেষ পর্যন্ত এই অস্ত্র দিয়ে বিজেপিকে ধরাশায়ী করার কৌশল পি.কে-র আবিষ্কার বলেই মনে হয়। কারণ এই যাতায়াতে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবেনা বরং শতাব্দীর মতো একটা করে উন্নত পদ বা মর্যাদা তাকে তাকে দিয়ে দেওয়া হবে। এতে তার ভাবমূর্তির জয় হবে এবং সারদা নারদা আর সেইভাবে নির্বাচনের কোনও ইস্যু হতে পারবে না। আমি বলবো কোনও ধুরন্ধর রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা ছাড়া এইরকম চিন্তা ভাবনা করা দুরূহ ব্যাপার। অবশ্য আমরা জানি এই দলবদলে বা চলে যাওয়ার ও ফেরত আসার পেছনে কোটি কোটি টাকার খেলা চলে। সাধারণ জনগণের সেই জল মাপার বুদ্ধি একেবারেই নেই। তাই দলবদলে টাকার খেলার কথা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাই ভাই আপনি দেখে যান। নির্বাচনের আগে লোক যাবে আর আসবে। যাবার জন্য তৈরি থেকেও যাবেনা এইরকম খেলা অবিচল চলতে থাকবে। কারণ এরা অজয় মুখোপাধ্যায়, প্রফুল্ল সেন নিদেনপক্ষে প্রণব মুখোপাধ্যায় নন।

⛔©® অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

প্রণাম স্বামীজি : নানারকম স্বামীজি: অলোক কুন্ডু

নানারূপে স্বামীজি / অলোক কুন্ডু

⛔ স্বামীজিকে বাঙালিরা মর্যাদা যত না দিয়েছে তার থেকে বেশি মর্যাদা দিয়েছে অবাঙালিরা। দক্ষিণ ভারত তার মধ‌্যে অন‌্যতম। দেখা যায় বরাবর বাঙালিরা সিদ্ধান্ত হীনতায় ভোগে। জয়প্রকাশ নারায়ণ এখানে আসার পর এমার্জেন্সির বিষয় তবেই বুঝেছে। এমনকি পশ্চিম ভারত যা স্বামীজির জন‌্যে ভেবেছে (বিবেকানন্দ শিলা তৈরি অবধি ) স্বামীজিকে
নিয়ে তার কনা মাত্র আমরা ভাবিনি। বাঙালি
পরে ভাবে--সত‌্যজিৎ রায়ের বেলায়ও তাই। রামমোহন রায়কে তো অসহ‌্য যন্ত্রণা দিয়েছে বাঙালি। লেডিরাণু আর রবীন্দ্রনাথকে অবধি বেচে বাঙালি বেস্ট সেলার হয়েছে, সেই রবীন্দ্রনাথের চুল দাড়ি ছিঁড়েছে নিবেদিতাকে নিয়ে কিছু বাঙালি কুইঙ্গিত করতেও ছাড়েনি। বেলুড় মঠ করার জন‌্য স্বামীজিকে বাঙালির
থেকে বেশি দান দিয়েছে অন‌্যরা। সুভাষচন্দ্রের
বাঙালি বলতে দেশবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ও স্বামীজি
এই তিনজন। সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে আজও যে ছবি বিক্রির ব‌্যবসা হয় ক‌্যানিং স্ট্রিট থেকে তার সিংহভাগ কেনে অবাঙালি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। আর শোভাবাজার রাজ বাড়িতে স্বামীজিকে যে প্রথম নাগরিক সম্মাননা জানানো হয়েছিল তার মূল ছবিটি চূড়ান্ত অবহেলায় রাজবাড়ির দালানে ও স্বামীজির
একটি ছবি মলিন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমাদের হাওড়ার অবনীমলের কাছে বেঁটে মতো বেঢপ (পা ছোট) একটি স্বামীজির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে (হয়তো আরও অনেক হয়েছে) বহুকাল পরে স্বামীজীর নিজের বাড়ি স্বামীজির আদর্শের যোগ‌্য
হয়েছে। আর একটা চোখে দেখা ঘটনা বলি আমি হাওড়ার বিকে পাল স্কুলের কাছে একটি পুরাতন বই ও খবর কাগজ ওলার কাছে প্রায় বই কিনি (ও বাড়ি থেকে ওজন দরে যেগুলি কিনে আনে), এক বছর আগে তার কাছেই পেয়েছি স্বামীজির রচনাবলীর
একটি খন্ড। বইটি কেনার সময় জানতে চেয়েছিলাম দোকানদার কোথায় বইটি পেয়েছে, তিনি জানান এই সব বই নতুন ফ্ল‌্যাটে উঠে চলে যাওয়ার সময় বিক্রি করেছে তারা। সত‌্যই কি আমরা সঠিক সময়ে সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনা? বাঙালির বুদ্ধিতে অতিরিক্ত রাজনীতির মেধ জমাই কি এর মূল কারণ ??

⛔ ২৩ বছরে ঘর ছেড়েছিলেন ৩৯ বছরে তার মৃত্যু হয়। বিশ্ব ধর্মসভা থেকে রামেশ্বরমে এসে সেখানে নামার ১০ বছর পর তাঁর ইহোলোক ছেড়ে যাওয়া। কতকিছু ভেবেছিলেন কিন্তু অধিকাংশ কাজ, তার লেখা পড়া বাস্তবায়ন করা যায় নি। শিকাগোয় এসে আস্তানার ঠিকানা হারিয়ে ফেলে কনকনে ঠান্ডায় তাকে সারারাত বাইরে অনাথ অবস্থায় কাটাতে হয়েছিল। বিশ্ব ধর্মসভা থেকে ফিরে রামেশ্বরমে নেমে মাদুরাই থেকে যখন তিনি কখনো গাড়িতে কখনো ট্রেনে করে আসছিলেন,তার আগে ও পরে স্বামীজি সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আসলে স্বামীজি খুব তাড়াতাড়ি করছিলেন তার ঘর ছাড়ার বিষয়টিকে মজবুত করতে। নিজের জন্য নয়। ভারতবাসীর জন্য তার কায়িক পরিশ্রম তখন থেকেই হচ্ছিল। কিন্তু নিজের শরীরের কথা তিনি ভাবেননি। পরিব্রাজক স্বামীজি যেখানে যেমন পেরেছেন থেকেছেন যা তাকে পাঁচজন এনে দিয়েছেন তাই তিনি খেয়েছেন।

⛔ এমনিতে আমেরিকা থেকে ফেরার সময়‌ই তিনি জাহাজ যাত্রায় কাহিল হয়ে পড়েন। পয়সার জন্য আমেরিকা ও ইউরোপের অন্যত্র খাওয়া থাকার জন্য তিনি প্রচুর বক্তৃতা দিয়ে উপার্জন করার জন্য কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। তবুও দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজে ও মাদুরাইতে জায়গায় জায়গায় তার জন্য অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়ে তোরণ করা হয়েছিল তাঁকে স্বাগত জানাতে, যেখানে তিনি কিছু বলবেন এমন আশাও ছিল উদ্যোক্তাদের। কথা ছিল অন্তত ৫/৬ জায়গায় তিনি বক্তব্য রাখবেন, কিন্তু পারেননি। তবু মাদ্রাজিরা তার রথের ঘোড়া খুলে দিয়ে যখন তার গাড়িকে নিজেরাই টানলেন তখন স্বামীজির আপত্তি থাকলেও যুবকদের এই শক্তির কথাটা তিনি তার ১০ বছর বেঁচে থাকার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ভেবেছিলেন । ট্রেন থামিয়ে স্টেশনে স্টেশনে কাতারে কাতারে মানুষের আবদার রাখতে স্বামীজি অনেক জায়গায় ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে তৈরি মঞ্চে বক্তব্য রাখতে জায়গা ছেড়ে উঠতেও পারেননি । একটু সুস্থ হতেই আবার বেরিয়ে পড়েছিলেন পরহিতার্থে । কিন্তু বিবেকানন্দকে নিয়ে নিন্দুকেরা তাঁকে কী না বলতে বাকি রেখেছিলেন। তাই স্বামীজি এক সময় দুঃখ করে বলেছেন--" তারা বলতো বিবেকানন্দ জুয়াচোর, এক আধটি নয় এই স্বামীর অনেকগুলি স্ত্রী ও একপাল ছেলেপুলে আছে "। স্বামীজি দুঃখ করে বলেছিলেন -
" সেইসব মানুষের সাহায্য আমি অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করি , আমি আমার দেশকে ভালবাসি আর
বড় একান্তভাবেই ভালবাসি "।

⛔স্বামীজির ৩৯ বছরের ঝঞ্ঝাময় জীবন ঘটনাবহুল জীবন ও বার্তাবহুল হয়ে
আজকেও বেঁচে আছে। পুরাণে আছে সন্ন্যাসীর জীবন অতি কঠিন। সে যা পাবে তাই খেয়ে ও পরে এলাকার পর এলাকা ঘুরে দেখবেন। সাধারণ মানুষের জীবনকে দেখাই তার জীবনের আদর্শ হবে। স্বামীজি একরকম অনাহারে তার সন্ন্যাস জীবন কাটিয়ে এই ভারতের আসমুদ্র হিমাচল তিনি ঘুরে ঘুরে অভাবি মানুষের সুখদুঃখকে নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে তাকে উপলব্ধি করেছিলেন। তখনকার দিনে কোনো মানুষের সাহস ছিল না ৬৩ দিন ধরে বোম্বাই, চীন, ভ্যাঙ্কুভার হয়ে, প্রায় সামান্য খরচ সঙ্গে নিয়ে, আমেরিকা যাওয়ার কথা। পরে জামেসদজি টাটার সঙ্গে তখন‌ই আলাপ হয়েছিল। কিন্তু তাতে স্বামীজির কিছু তখন সুবিধা না হলেও বেলুড় মঠ ও দ্বিতীয়বার
বিদেশে যেতে তা তাঁকে সাহায্য করেছিল। সিকাগো ধর্ম সভার দশ বছরেই তাঁর মৃত্যু হয়। কোনো সময় তিনি একেবারেই পাননি। যেমন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণকে থেকে আমরা পাই অন্য শ্রীরামকৃষ্ণকে। তেমনি বিবেকানন্দকে
আমরা পুস্তকাকারে সেইভাবে পাইনি।

⛔ তবে হাতের গোড়ায় পেয়েছি সাহিত্যিক শংকরের কাছ থেকে স্বামীজিকে অন্যভাবে জানার। দীর্ঘ দিন তিনি হাওড়ার রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আশ্রমের সঙ্গে
যুক্ত ছিলেন। তখন থেকেই বিবেকানন্দ চরিত্র চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন তিনি। তাই শংকরের থেকে স্বামীজির সম্পর্কে গভীর ভাবে আমরা কিছুটা অধ্যয়ন করতে পেরেছি। কিন্তু শ্রীম"র জন্য তবু আমরা শ্রীরামকৃষ্ণকে বেশ কিছুটা জানতে পারলেও স্বামীজি আমাদের সে সুযোগ নিজেই দেননি। ভগিনী নিবেদিতা ও স্বামীজির গান তার প্রবন্ধ তার পত্রাবলী তাঁকে কিছুটা জানা যায়। তবু যেন আমাদের মনে সংশয় থেকেই যায় । মনে হয় বিবেকানন্দ এদেশে এখনও অবহেলিত রয়ে গেছেন। "আমি বিবেকানন্দ বলছি "-স্বামীজির জীবনের দুঃসময়ের ফসল। স্বামীজির রচনাবলীতে আছে-" বহুজন হিতায় বহুজন সুখায় সন্ন্যাসীর জন্ম। পরের জন্য প্রাণ দিতে, জীবনের গগনভেদী ক্রন্দন নিবারণ করতে,বিধবার অশ্রু মুছাতে,
পুত্রবিয়োগ-বিধুরার প্রাণে শান্তিদান করতে,অজ্ঞ ইতর সাধারণকে জীবন সংগ্রামের উপযোগী করতে, শাস্ত্রোপদেশ বিস্তারের দ্বারা সকলের ঐহিক ও পারমার্থিক মঙ্গল করতে এবং জ্ঞানলোক দিয়ে সকলের মধ্যে প্রসুপ্ত ব্রহ্ম-সিংহকে জাগরিত করতে
জগতে সন্ন্যাসীর জন্ম হয়েছে।" পিতার মৃত্যুর পর দিশেহারা ছিলেন তিনি, একদিকে আত্মীয় স্বজনদের স্বার্থপরতা অন্যদিকে মা-দু ভাইয়ের আহার জোগাড় করা , বাসস্থান রক্ষা করার ভাবনা আগে না কি ? শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারাপ্রচার করা ? কোনটা প্রধান তাঁর কাছে হবে ? সন্ন্যাসীর কঠোরতায় নির্মমভাবে স্বামীজি ভাবলেন যে, ত্যাগ‌ই হলো তার জীবনের প্রধান অধ্যায়, বেদনায় কাতর হয়ে না পড়ে ভয়ানক দুঃখ কষ্টকেই সহ্য করে নিয়েছিলেন তিনি। তাই অনেক কষ্টে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল -" জীবনে যাকে নিজের পথ নিজেকেই করে নিতে হয় ,সে একটু রুক্ষ হবেই ।"

⛔ কিন্তু বাস্তবে তো স্বামীজি ছিলেন দিলখোলা সাদাসিধে মানুষ । হাঁস,ছাগল কুকুরদের সঙ্গে তাদের ভাষায় আদান প্রদানের কথাতো এখন‌ও বেশ রসালো ভাবেই শোনা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলতেন তাদের মতো করেই। শুনলেই হাসি এসে যাবে এইরকম সব অদ্ভুত তাদের নামকরণ করেছিলেন। স্বামীজি বলেছিলেন-" এই বিশ্বাস আমি দৃঢ়ভাবে পোষণ করে আসছি এবং এখনও করি যে, যদি আমি সংসার ত্যাগ না করতাম তবে আমার গুরু পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণদেব যে বিরাট সত্য প্রচার করতে জগতে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন তা প্রকাশিত হতে পারতো না।" এখানে আমরা এক প্রচন্ড শক্তিশালী দৃঢ়চেতা মানুষরূপে স্বামীজিকে পাই। স্বামীজি বলেছিলেন এই ভারতে তাকে অনেকে চেনেনা বোঝে না তাতে কি ?!" আমি যুব-দলকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে নেমেছি,যারা সর্বাপেক্ষা দীনহীন অবহেলিত পদদলিত...তাদের দ্বারে দ্বারে--সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, নীতি, শিক্ষা ধর্ম বহন করে নিয়ে যাবে --এটাই আমার আকাঙ্ক্ষা ও ব্রত । এটি আমি সাধন করব অথবা মৃত্যুকে বরণ করব । যেমনটি পুরাণে বলা আছে সেই কপর্দকহীন সন্ন্যাসীদের রূপের মধ্যে যে স্বামীজি বিজয়ী হবার স্বপ্ন দেখতেন তা তাঁর রচনায় মেলে ব‌ইকি। তিনি বলেছেন-" আমার ভয় নেই, মৃত্যু নেই, ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই...বিশ্বপ্রকৃতির সাধ্য নেই যে,আমাকে ধ্বংস করে । প্রকৃতি আমার দাস। হে পরমাত্মন্, হে পরমেশ্বর তোমার শক্তি বিস্তার কর ।" কী অভাবনীয় প্রত্যয়ী তিনি , কে তার সেই পরমেশ্বর ? স্বামীজির ধর্ম তো হিন্দু নয় তবু একদিন কী হলো দুর্গাপূজার রীতিনীতি নিয়ে লেখা ব‌ই আনালেন। মূর্তি পুজোর বিরোধী স্বামীজি অনুমতি দিলেন মঠে দুর্গাপুজো হবার। আসলে একটু আনন্দ হবে ঢাক বাজবে অনেক মানুষের আগমন হবে তার সঙ্গে তার বানানো রেসিপি অনুসারে খিচুড়ি ভোগ। তিনি হিন্দুত্বের পুজো করেননি তাদের আনন্দের পুজো করেছিলেন।

⛔ শ্রীরামকৃষ্ণকে তিনি দেখেছিলেন কাপড়চোপড় ছাড়া পঞ্চবটিতে বসে ধ্যানমগ্ন, রাতবিরেতে উলঙ্গ শ্রীরামকৃষ্ণ ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর বেশবাস,মা মা বলে মন্দিরে ঢুকে গেছেন। পুজো করতে করতে মা কালীকে নয় নিজের মাথায় ফুল দিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। কালীমূর্তি কি তবে তথাকথিত কোনো ভগবানরূপী দেবতা ছিলেননা শ্রীরামকৃষ্ণের কাছেও ? সবার কাছে দক্ষিণেশ্বরের তিনি কালী মূর্তি হলেও স্বামী বিবেকানন্দ কিন্তু পরবর্তীতে কালীর বদলে শ্রীরামকৃষ্ণকেই দেবতার আদলে বসিয়ে তিনি পুজো করেছেন, যা বেলুড় গিয়ে আমরা আজকে দেখতে পাই। মূর্তির থেকে রক্তমাংসের মানুষ যাকে তিনি দেখেছেন তাকে পুজোর মধ্যে দিয়ে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় রীতিনীতিতে কষাঘাত করেছিলেন।

⛔ হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে ১১১ বছর আগে এসে শ্রীরামকৃষ্ণকে পুজো করতে গিয়ে লিখলেন -" শ্রীরামকৃষ্ণায়‌ তে নয়: ।" স্বামীজি জরথ্রুষ্টের মতবাদ ভালো করে জেনে ছিলেন। তাই ভারতীয় ঋষির সনাতন ধ্যানচিন্তা কে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আহুরা মাজদা সম্প্রদায়ের মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে খুঁজতে তাদের ধ্যানমগ্নতায় আরও বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । কখন‌ই ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনাকে তিনি খারাপ বলেননি অথচ সেখানে তিনি নিজেকে বিকিয়েও দেননি । ভারতবাসীকে ভাইয়ের মতো ভেবে সম্বোধনে বলেছিলেন -"ওঠো জাগো...। " তিনি তাই আমাদের কাছে স্বামী বিবেকানন্দের মতো এক পরম দয়াময় দৃঢ়চেতা ভাবগম্ভীর মানবপূজারী হতে পেরেছেন । তিনি তো নিজে দেখেছেন তার গুরুদেব,(লোকেরা তাকে পাগলঠাকুর‌ও ভালোবেসে বলেছেন) তাকে বার বার বলেছেন--" যা না যা... মায়ের কাছে যানা একবারটি...এ বার‌ও পারলি নে...যা যা ।" সত্যি তো শ্রীরামকৃষ্ণ তো মন্ত্রপড়া ঘন্টা বাজানো চামরদোলানো কোনো সাধারণ পুরুত ছিলেন না। কেশবচন্দ্র সেন, বিদ্যাসাগর কেউ তো তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাননি এমন তো নয়। স্বামীজি যখন ভ্যাঙ্কুভারে তখন জামসেদজি টাটার সঙ্গে তাঁর দেখা হয় । ওই একই জাহাজে স্বামীজি যখন প্রথম আমেরিকা যাচ্ছিলেন ।

⛔ পারস্য উপসাগরীয় আহুরা-মাজদার উপাশকদের আগুনের সামনে উপাসনার মধ্যে দিয়ে যে জীবনের শুদ্ধতা খুঁজে পাওয়া যায় সেই ধর্মের উৎসাহ থেকে তিনি যে বেলুড় মঠের ধ্যানমগ্নতা খুঁজে পেয়েছিলেন সে কথা ভাবলে ক্ষতি কি ? বেলুড়ের অলঙ্কার নক্সায় মোটিফে পার্সি,খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু,বৌদ্ধরীতি অবলম্বন করা হয়েছে । শ্রীরামকৃষ্ণের যত মত তত পথকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেদিয়েছিলেন । বলেছিলেন - শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী আমাকে প্রচার করতেই হবে। যৌবনে ব্রাহ্মসমাজের আদর্শে প্রভাবিত নরেন্দ্রনাথ মূর্তি পুজোকে পৌত্তলিক জ্ঞান করতেন শ্রীরামকৃষ্ণের উদার এবং সমন্বয়ী চিন্তার সঙ্গে "কালীঘরে যাওয়া " শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া নরেন্দ্রর চোখে বিসদৃশ্য লাগতো। তরুণ,সংশয়ী, নরেন্দ্রনাথের এইভাব বেশি দিন টিকে ছিল না। ১৮৮৮ সালে নিজ শিষ্য সদানন্দকে বলেছিলেন - " আমার জীবনে একটা মস্ত বড় ব্রত আছে। এ ব্রত পরিপূর্ণ করার আদেশ আমি গুরুর কাছে পেয়েছি--আর সেটা হচ্ছে মাতৃভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করা। " শ্রীশ্রী মা একদিন গল্পছলে এক শিষ্যকে বলেছিলেন -" যা সব শুনছি, সাহেব পুলিশরা এসে একদিন না একদিন নরেনকে গারদে পুরে দেয় । " এ থেকে প্রমাণিত হয় স্বামীজির কাছে বিপ্লবীরা আসতেন পরামর্শের জন্য।

⛔ বিবেকানন্দের আয়ুষ্কাল রবীন্দ্রনাথের অর্ধেক মাত্র। বিবেকানন্দ নবীন ভারতবর্ষের কোনো বিষয় ও সংঘাত দেখে যেতে পারেননি তাই রবীন্দ্রনাথ যতটা পেরেছেন স্বামীজি ততটা করে যেতেও পারেননি। তাছাড়া স্বামীজির বিপ্লববাদ ছিল শুধুই মানুষের চরিত্র গঠনের । ধর্ম, শিক্ষা, ও ক্ষুধা সম্পর্কে নিশ্চিত দিগদর্শনের নির্দেশ। জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক নিটশের -" দাজ স্পেক জরাথ্রুষ্ট " ব‌ইয়ে এক সন্তপ্রতিম মানুষের বর্ণনা আছে। বিজন পর্বতে তিনি
দশবছর স্ব-নির্বাসিনে ছিলেন গভীর ধ্যানে। তারপর তিনি জনপদে এসেছিলেন মানুষকে তার কথা
বলতে। সেই জরথ্রুষ্টের ধর্মীয় মতবাদের প্রথমে আছে মহিলাদের অগ্রাধিকার। " যত্র নার্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতা।" যেখানে নারী সম্মান পান, সেখানে দেবতার অবস্থান ।" কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ দেখলেন
তাঁর সময়ে নারীরা সমাজে অবহেলিত, বঞ্চিত ও অত্যাচারিত । গভীর দুঃখে ও যন্ত্রণায় বিবেকানন্দ,
তিনি বললেন, ভগবানের প্রতিমা স্বরূপা নারী এখন শুধুমাত্র সন্তান ধারণের যন্ত্রে পরিণত । নারীকে তার শিক্ষা ও স্বাধীনতার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
যতক্ষণ তা সম্ভব হবে না , ততক্ষণ জাতি হিসেবে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারবোনা ।" বিবেকানন্দ বললেন-" নারীকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।" স্বামীজি শিক্ষার সঙ্গে চরিত্র গঠনের কথা বলতেন। সার্বিক ব্যক্তিত্বের বিকাশ চেয়েছিলেন স্বামীজি।
এইখানে রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের কাছে সমগ্র নারীজাতি ও বাঙালিরা চিরঋণী। পরবর্তীকালে নারী সমাজের যে অগ্রগতি হয়েছে, সেদিন এই দুই মহারথী পাশে এসে না দাঁড়ালে তা কোনোভাবেই সম্ভব ছিলনা। এই প্রসঙ্গে শ্রীমার সঙ্গে বিবেকানন্দের একটি সম্পর্কের কথা বলি। বিবেকানন্দ তাঁর অনুকরণীয় ভাষায় বলেছেন--শ্রীরামকৃষ্ণ থাকুন বা যান ক্ষতি নেই, কিন্তু মা ঠাকরণ না থাকলে সর্বনাশ, তিনি শক্তির আধার। মাঝেমধ্যে‌ই তিনি গুরুভাইদের
বলছেন, "তোরা মাকে চিনতে পারিসনি। মাকে চিনতে চেষ্টা কর। "সুভাষচন্দ্রের সম্পর্কেও এক‌ই কথা খাটে , সুভাষচন্দ্র তার জীবনে নারীর গুরুত্বপূর্ণ হ‌ওয়ার কথা বলতে গিয়ে,মা প্রভাবতীদেবী ও দেশবন্ধু-পত্নী বাসন্তী দেবী,মেজ-ব‌উদিদি বিভাবতীদেবী ও পত্নী
এমিলিয়রের কিছু ত্যাগ ও গুণের কথা বলেছিলেন। স্বামীজি আবার একথাও ভেবেছিলেন যদি নারীরা সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসীনী হতে চান সে অধিকার তাদের দিতে হবে। সেই দিশা খুঁজে দিয়েছিলেন
স্বামীজি নিজেই। এত অল্প সময়ের মধ্যে স্বামীজির দৃষ্টি ছিল সবদিকে।

⛔ তিনি বলেছেন-" আমরা নির্বোধের মতো,জড় সভ্যতার বিরুদ্ধে চিৎকার করিতেছি...বাহ্য সভ্যতা আবশ্যক , যাহাতে গরীব লোকের জন্য নূতন নূতন কাজের সৃষ্টি হয়। অন্ন ! অন্ন! যে ভগবান আমাকে অন্ন দিতে পারেন না, তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখিবেন--ইহা আমি বিশ্বাস করিনা ।" এমনকি রাজনীতিকেও তিনি ছেড়ে দেননি-"এই ঘোর দুর্ভিক্ষ, বন্যা রোগ-মহামারীর দিনে কংগ্রেসওয়ালারা কে কোথায় বলো ? খালি আমাদের হাতে শাসনের ভার দাও, বললে কি চলে ? মানুষ কাজ যদি করে তাকে কি মুখ ফুটে বলতে হয় ? "যা আজ হবে যা হতে যাচ্ছে দেখা যাবে অল্প সময়ের মধ্যেই স্বামীজি সব বলে গেছেন । (কেউ যেন এই প্রসঙ্গে ভারতীয় রাজনীতি না জুড়ে দেন, কংগ্রেসর তৎকালীন অবস্থার প্রেক্ষিতে স্বামীজি ওইসব বলেছিলেন) । তিনি বলেছেন শিক্ষা অর্জনের অধিকার সকলের‌ই থাকা উচিত। আর শিক্ষিত না হ‌ওয়ার জন্য তিনি আত্মজিজ্ঞাসা করেছেন, এই জন্য কে দায়ী ? উত্তর দিয়েছেন নিজেই, বলেছেন -" ইংরাজরা দায়ী নয় , আমরাই দায়ী।" স্বামীজী সবথেকে জোর দিয়েছেন শিক্ষার অধিকারের উপর যা আমরা ২০০৯ -এ এসে বুঝতে পেরেছি। স্বামীজিই বলেছেন - "দরিদ্র বালক যদি শিক্ষালয়ে আসিতে না পারে তবে শিক্ষাকেই তার কাছে পৌঁছাতে হবে।"

⛔ স্বামীজির কথা কখনো কখনো ঝাঁঝালো হয়েছে যা এখনকার দিনে তার মূল্যায়ণ অমর হয়ে আছে বলা যেতে পারে -" দিবারাত্রি ভন্ডামি, মিথ্যাচার ও প্রতারণার জীবন যাপন কর--তোমার ক্ষতগুলি যতদূর পারো ঢাকিয়া রাখো। তালির উপর তালি দাও, শেষে প্রকৃত জিনিসটিই যেন নষ্ট হ‌ইয়া যায়, আর
তুমি কেবল একটি জোড়াতালির সমষ্টিতে
পরিণত হ‌ও। "

⛔©® অলোক কুন্ডু








প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...