শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

পাড়ায় শিক্ষালয়


কেউ যদি ভাবেন যে সরকার বা প্রশাসন দুবছর পরে হলেও প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কিছু তো ভেবেছে তাদের মতো হীন বুদ্ধির দ্বিতীয় আর কেউ নেই। সরকারের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বহু আগে থেকেই উচিত ছিল, গত ২০২০তে এপ্রিল মাসে কার্যকর করা উচিত ছিল। ১০১ টা ডিপার্টমেন্ট আছে সরকারের। বিস্তর পিএইচডি আছে। সরকারের আইএস,বিডিও এসডিও জ্ঞানী মহাজ্ঞানীর কোনও অভাব ছিলনা। তবু কি কেন্দ্র, কি রাজ্য কেউ ভাবেনি শিশু কিশোরদের কি হবে। এর থেকে বড় লজ্জা ঘেন্না আর কিছু হয়না। সরকারের এবং প্রশাসনের এই অনীহা ক্ষমা করা যায় না। আসলে এখানে বিকাশ ভবনের কর্তাব্যক্তিরা যে এক একটা উজবুক ছাড়া আর কিছুই নয় তা আর একবার বোঝা গেল। আমাকে বললে সরকার এতদিন পরেও যা ভাবছে, তার থেকে আরও ভালো প্ল্যান করে দিতাম। সরকারের আইডিয়ায় আসবে না সেইসব। এখন শিক্ষার অ্যাপ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষিত ও উন্নত এবং পয়সাওলাদের শিক্ষা নিয়ে কাউকে না ভাবলেও চলবে। এইসব অ্যাপের যে কত প্রয়োজন ছিল তা বুঝতে আর খানিক সময় দরকার সকলের। অনলাইন শিক্ষা মধ্য মেধা বা নিম্ন মেধাদের বা গরিবগুর্বোদের কিছু হয়তো সুরাহা করতে না পারলেও একটা বড় শ্রেণির নিশ্চিত উপকার করবে, এই বৃহত্তর শ্রেণির মধ্যে অবশ্যই নিম্নবিত্তও বাদ যাবেনা। এখানে সরকারী পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা তৃণমূল স্তরে ঠিকমতো এখনও পৌঁছতে পারেনি দুর্বল প্রশাসনের জন্য। যদিও রাজ্য সরকারগুলির আগেই কেন্দ্র সরকারের পাঠশালা প্রোগ্রাম শুরু করেছে। মোবাইল নেই, ট্যাব ছিলনা অথবা থাকলেও ব্যবহারের অভ্যাস অভিজ্ঞতা ছিলনা এবং অভিভাবকদের তদারকি শূন্য ছিল গড়িমসি ছিল এই সব বিস্তর অভিযোগ অনলাইন শিক্ষা পুষ্টি সঞ্চয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে আর এই বাধাদানের সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে শিক্ষিতশ্রেণি। এইসব অ্যাপ বা অনলাইন শিক্ষা আগামী দিনে একটা বড় ভূমিকা নেবে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে এই ভূমিকা পালনে ভ্রান্তি ও অযোগ্যতায় পরিচালিত হচ্ছে। যে আকাশছোঁয়া বেতন শিক্ষায় নির্দিষ্ট হয়েছে সেই যোগ্য ভূমিকা সরকারের অফিসার ও শিক্ষকদের কাছ থেকে ফিরে পাওয়া যায়নি। যদিও একমাত্র কলকাতার প্রাথমিক বিভাগের জেলা পরিদর্শক, আমিনুল আহসান সাহেবের নিজস্ব কিছু কৃতিত্ব আছে শিক্ষা প্রসারে। তবে আমি একেবারেই এইসব অ্যাপের বিরুদ্ধে নই। যারা অনলাইন শিক্ষার বিরোধী তারা ১০০ ভাগ ভুল করছেন। শিক্ষা কখনও বদ্ধ জলাশয় নয়। শিক্ষার প্রসার যেভাবেই হবে তাতেই শিক্ষার্থীদের লাভ। এটা বুঝতে হবে যে শিক্ষার মূল বিষয় বর্তমান দিনে মেধার উন্নয়ন ও বিকাশ। কেবলমাত্র এবিসিডি শিখে, মানবিক কিছু শিক্ষা শিখে একজন সমাজের প্রভূত উন্নতি করবে এইসব হাস্যকৌতুক বড় বড় বুকনি অনেক হয়েছে। সমাজসেবক তৈরির বাসনায় খেঁজুরগুড়ে বালি ভর্তি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। মেধার উন্নয়ন আমাদের একমাত্র বাসনা হতে হবে এবং তার সঙ্গে যারা পারবে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শিখবে। কিন্তু সিলেবাস বলছে বা যশপাল কমিটি বলছে তারা এমন তেলেঝালে চুবিয়ে শিক্ষার খিচুড়ি তৈরি করেছে যাতে সকলের সামর্থ্য সমান। তাই তাদের বুকনিতে সাজানো সকলের সমান সামর্থ্যের শিক্ষা সকলে চেটেপুটে খেয়ে শিক্ষায় পরস্পরের মধ্যে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়ে চলেছে এবং এইসব হচ্ছে বিদ্যে-বুদ্ধিতে। এখন শিক্ষাকে পণ্যিকরণ থেকে বাঁচাতে যে হীন প্রক্রিয়া এখন আবার শুরু হয়েছে তার একটা ৩৪ বছর আমার জীবনের উপর দিয়ে চলে গেল এবং তার কৌতুককর স্লোগান দিতে দিতে আমার শিক্ষা বিভাগের কলিগরা এমনভাবে সিলিপয়েন্ট টপকে ছক্কা হাঁকালো যে ৩৪ বছর শিক্ষার পণ্যিকরণ নিয়ে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করে, অফিস না করে, গল্পগুজব করে পার্টিবাজি করে প্রতিবাদের নাটক করে, অফিস টাইমে বাড়িতে ঘুমিয়ে, স্কুল ইন্সপেক্টর গিরি করে বাজি মাত করে দিলো। কেউ কেউ অতিবাম সেজে নেপোর দই খেলো, বাড়ির কাছে চাকরি করলো সারাজীবন। বলতে গেলে শিক্ষার প্রসার করতে এসে বেশ কিছুজন শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে ছাড়লো। একজন তো আছেন দিব্যগোপাল ঘটক বলে তিনি শিক্ষার ট্রেনিং দিতে গিয়ে মুড়ি মিছরি ঝোল ঝাল অম্বল এক করে পঞ্চম শ্রেণির বাংলার ভাষা শিক্ষার ফর্মূলা দিয়ে সমস্ত শিক্ষা মাপজোক করেন। এই ধান্দাবাজি দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করছে শিক্ষার্থীরা। আমি কিন্তু শিক্ষকদের খুব একটা দোষ দেবো না। এইসব এখনও বিস্তর ফন্দিফিকির রয়ে গেছে মানুষের মনে। তাঁবেদারি করতে করতে আমরা এই দুবছরে কিছুই প্ল্যান নিলাম না। আমরা এঁঢ়ে গুরু দুইতে খালি বলতে থাকলাম স্কুল খোলো গো, স্কুল খোলো গো। ফলে যা হওয়ার তাই হলো, শিক্ষার অপচয় রোখা তো গেলই না পরন্তু শিশু-কিশোরদের চুপচাপ বাড়িতে বসিয়ে রেখে তাদের মাথার বারোটা বাজিয়ে দিলাম। স্কুল খোলা অত সস্তা হবেনা এই কথা পই পই করে বলে এসেছি সকলের বিরোধীতা করেছি আমি একাই। আমি মনে করি এই বিরোধীতার যৌক্তিকতা সমাজ মেনে নিয়েছে। তবে শিক্ষার অনলাইন ব্যবস্থা বা অ্যাপনির্ভর শিক্ষা নিয়ে এই যে হৈচৈ হচ্ছে এই যে বিপরীত করিয়া হচ্ছে এর কোনও সামান্য ভূমিকা ও তাৎপর্য নেই। অ্যাপ শিক্ষা অনিবার্য হয়ে পড়েছে, যা শিক্ষায় পণ্যিকরণ বলছেন সকলে। শিক্ষায় পণ্যিকরণের এই বাক্যটি উচ্চারণে আর কিছুদিন পরে পাপের প্রায়শ্চিত্তের দিক নির্দেশ করবে। দেখা গেছে শিক্ষায় বাণিজ্য ছিল বলেই শিক্ষার্থীদের চাকরিবাকরির চেষ্টা সহজ হয়েছে। প্রথাগত শিক্ষা ধরে রাখা উচিত এবং চতুর্দিকে ফাঁকিবাজি না থাকলে আজ শিক্ষায় পণ্যিকরণের সহজ সুযোগ হতো না। কিন্তু কি করা যাবে। একটি বিদ্যালয়েই তো সকল শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের কাছে যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন না। শিক্ষক নাট্যকার অজিতেশ ও উৎপল দত্ত একেবারেই ব্যতিক্রম। কবি তরুণ সান্যাল এবং অনেক অধ্যাপক সাহিত্যিকদের ক্লাস করার জন্য অন্য কলেজ থেকে ছাত্ররা ক্লাস করতে আসতেন। বিদ্যাসাগরের শিক্ষা ব্যবস্থাও ধরে রাখা এখন সম্ভব নয়। শিক্ষা নিজে তার পরিধি ছাপিয়ে উঠতে চায় এবং এটাই তার চরিত্র, একে রুখে দেবো এই হিম্মত না রাখাই ভালো। ব্যতিক্রমী শিক্ষক আজ সব সময় পাওয়াও মুস্কিল, দূরদূরান্ত থেকে কষ্টকর জার্নি করে কীভাবে একজন ভালো অফিসার হবে এবং শিক্ষক হবে বাম সরকার এটা একেবারেই ভাবেননি। পে-স্কেল ও ডিএ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের যত সুনাম অর্জন আছে কিন্তু শিক্ষাকে ঝুলিয়ে দেওয়ায় ব্যাপারে তাদের জুড়ি নেই। এইসব মাঝে মাঝেই বলি কারণ ভেতর থেকে চলে আসে। কিন্তু আমার শক্তি এই বলা ছাড়া তো আর কিছু নয়। আসলে আমি অসহায়ের একটা সিম্বল মাত্র।
এখন করোনাকালে পাড়ায় পাড়ার শিক্ষালয় এই ভাবনার কথা প্রথম আমি ফেসবুকেই তুলেছিলাম। যদিও মুখ্যমন্ত্রী আমার ভাবনা নিয়ে নিয়েছেন একথা বলছি না। পাড়ায় শিক্ষালয় বলতে খানিকটা বোঝায় শিক্ষার্থী যেখানে অবস্থান করবে। এখানে শিক্ষকদের ভূমিকা তার স্কুলে উপস্থিতি দিয়ে স্নানীয় পাড়ায় যাবেন। সাময়িক শিক্ষার এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ কাজ করায় অনীহা। এই অনীহা সরকারের বেতন যারা নেন তাদের ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ জড়িয়ে গেছে। এই ভাবনায় যদি কোথাও জায়গা না হয় তবে স্থানীয় স্কুলেও ক্লাস হতে পারবে না এমন কোনও কথা নেই। কোনো প্রশ্ন করাই অবান্তর এখানে। সকলে আন্দাজ করছেন মার্চ মাস নাগাদ করোনার প্রকোপ কমে যাবে কিন্তু করোনা সহজে এখনই যাবেনা। ঘুরে ফিরে যাওয়া আসা করবে। এইসব করতে করতে প্রবল গ্রীষ্ম এসে যাবে। তাই জুলাই হচ্ছে স্কুল খুলে দেওয়ার আদর্শ সময়। যদি মার্চ নাগাদ সংক্রমণের হার ১০% এর কমে চলে যায় তবে বড় ক্লাসগুলো অলটারনেটিভ ব্যবস্থায় এপ্রিলে খুললেও খুলতে পারে। কারণ এই সময় স্থানীয় জ্বরজ্বালা কম থাকে। তবে বিধানসভায় এতবড় বিষয়টা নিয়ে কেন কোনও আলোচনা হচ্ছে না তা বোঝা মুস্কিল। এই সাময়িক ক্লাস হলেও সর্বত্র যে খুব হৈ হৈ করে পড়ুয়া এসে যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। পাড়ায় পড়ুয়া জমতে জমতে জানুয়ারি শেষ হয়ে তো গেল। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন ঘন্টা দুই জমায়েত করে ছেলেমেয়েরা ৩০ জনের মধ্যে গ্রুপ করলে ভালো হয়। প্রথাগত লেখাপড়ার আগে শরীর চর্চা হোক। খেলাধুলা হোক কিছুদিন। পড়ার সময় তো অনেক গেছে, নষ্ট হয়েছে। একে ক্লাস বলবো না। হুল্লোড় করুক ওরা। গল্প বলুক নিজেরা। যেমন খুশি পড়ুক। অক্ষর জ্ঞান, ভাষা ও গণিত আপাতত এই তিনটিতে নির্দিষ্ট থাকুক। একসঙ্গে এখন বহু কিছু করার দরকার নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও মতেই তার ওয়ার্ডের বাইরে না নিয়ে যাওয়া উচিত হবে। মনে রাখতে হবে ওয়ার্ডের মধ্যেই পাড়ার শিক্ষাকেও বহু জায়গায় বিভক্ত করতে হবে। আরও ছোট পরিসরে বসার আয়োজন করতে হবে পাড়ায় শিক্ষালয়কে। শিক্ষকরাও এক একজন এক একটি গ্রুপ তৈরি করে পড়ান না। খানিকটা টিউশনির ধাঁচে। ক্লাসগুলো ফরমেশন করার সময় স্থানীয় বড় ক্লাব, বিয়ে বাড়ি ভাড়া দেয় এমন বাড়ি, গ্রামীণ অফিস, পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস, বোরো অফিসগুলিকে তৎপর থাকতে হবে। পার্ক ও সংলগ্ন মাঠ সবখানেই ক্লাস করার পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের তৎপরতা থাকতে হবে। এমন কিছু শক্ত কাজ নয়, খুব সহজ এইসব প্রচেষ্টা। এই পাড়ায় শিক্ষালয়কে দয়া করে ভারযুক্ত করার প্রয়াস নেবেন না ভারমুক্ত করুন। শিক্ষকদের ভাবনার সঙ্গে আমার ভাবনার অনেকটা তফাৎ হবে, এর কারণ আমাকে সরকার বুঝিয়ে না দিলেও আমি ছোট ছোট বিষয়গুলি চলচ্চিত্র পরিচালকের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করার চেষ্টা করি সব সময় যদিও আমি কোনো পরিচালক নই। বরং বিদ্যালয় শিক্ষার সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘর আমার। এস.আই. অব স্কুলস ফাঁকিবাজ হলে পাড়ায় শিক্ষা রসাতলে যাবে। তাকেই বুদ্ধি করে প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের পাড়ায় স্কুল থাকলে সেখানেও ক্লাস হওয়া অবশ্যই যেতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ির দশ পা দূরত্বে যা থাকবে তাতেই ক্লাস করা উচিত। এখানে যেকোনও একটি স্কুলের ধারণা ভেঙে ফেলা দরকার। শিক্ষকরা এক একদিন ভাগ হয়ে এক একটা জায়গায় যাবেন। আমার ধারণা স্কুল হিসেবে ক্লাস হওয়ার উচিত নয়। স্কুলের দেওয়াল ভেঙে, সাইনবোর্ড হীন স্কুল হোক সাময়িক ভাবে। যার অর্থ কোনো স্কুলের নামে ক্লাস হবে না। এস.আই. অফ স্কুলস ফাঁকিবাজ হলে এই শিক্ষা পথেই পড়ে থাকবে। কিছুতেই কিছু হবে না। কারণ তার হাতেই রয়েছে নেতৃত্ব। ©® অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২

নানারূপে স্বামীজি : অলোক কুন্ডু

নানারূপে স্বামীজি / অলোক কুন্ডু

২৩ বছরে ঘর ছেড়েছিলেন ৩৯ বছরে তার
মৃত্যু হয় । বিশ্ব ধর্ম সভা থেকে রামেশ্বরমে
এসে নামার ১০ বছর পর তাঁর ইহোলোক
ছেড়ে যাওয়া । কতকিছু ভেবেছিলেন কিন্তু
অধিকাংশ কাজ , তার লেখা পড়া বাস্তবায়ন
করা যায় নি । শিকাগো এসে আস্তানার
ঠিকানা হারিয়ে ফেলে কনকনে ঠান্ডায় 
তাকে বাইরে অনাথ অবস্থায় কাটাতে হয়েছিল।

বিশ্ব ধর্মসভা থেকে ফিরে রামেশ্বরমে নেমে মাদুরাই থেকে যখন তিনি কখনো গাড়িতে 
কখনো ট্রেনে করে আসছিলেন ,তার আগে 
ও পরে স্বামীজি সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে 
পড়েছিলেন । আসলে স্বামীজি খুব তাড়াতাড়ি
করেছিলেন তার ঘর ছাড়ার বিষয়টিকে
মজবুত করতে । নিজের জন্য না ভারতবাসীর
জন্য তার কায়িক পরিশ্রম তখন থেকেই হচ্ছিল
কিন্তু নিজের শরীরের কথা তিনি ভাবেননি ।
পরিব্রাজক স্বামীজি যেখানে যেমন পেরেছেন থেকেছেন যা তাকে পাঁচজন এনে দিয়েছেন তাই তিনি
খেয়েছেন । এমনিতে আমেরিকা থেকে ফেরার সময়‌ই তিনি জাহাজ যাত্রায় কাহিল হয়ে পড়েন। পয়সার জন্য আমেরিকা ও ইউরোপের অন্যত্র খাওয়া থাকার জন্য 
তিনি প্রচুর বক্তৃতা দিয়ে উপার্জন করার জন্য কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। তবুও দক্ষিণভারতের মাদ্রাজ ও মাদুরাইতে জায়গায় জায়গায় তার জন্য অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়ে তোরণ করা হয়েছিল তাঁকে স্বাগত জানাতে । কথা ছিল অন্তত ৫/৬ জায়গায় বক্তব্য রাখবেন, কিন্তু পারেননি । তবু মাদ্রাজিরা তার রথের ঘোড়া খুলে 
দিয়ে যখন তার গাড়িকে মানুষ দিয়ে টানানো হয়েছিল তখন আপত্তি থাকলেও যুবকদের 
এই শক্তির কথাটা তিনি তার ১০ বছর বেঁচে থাকার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ভেবেছিলেন । ট্রেন থামিয়ে স্টেশনে মানুষের
আবদার রাখতে স্বামীজি অনেক জায়গায় ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে তৈরি মঞ্চে বক্তব্য রাখতে জায়গা ছেড়ে উঠতে পারেননি । একটু সুস্থ হতেই আবার বেরিয়ে
পড়েছিলেন পরহিতার্থে । 

কিন্তু বিবেকানন্দকে নিয়ে  নিন্দুকেরা তাঁকে কী না বলতে বাকি রেখেছিলেন । তাই স্বামীজি এক সময় দুঃখ করে বলেছেন--" তারা বলতো
বিবেকানন্দ জুয়াচোর , এক আধটি নয় এই
স্বামীর অনেকগুলি স্ত্রী ও একপাল ছেলেপুলে আছে "। স্বামীজি দুঃখ করে বলেছিলেন -
" মানুষের সাহায্য আমি অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান
করি , আমি আমার দেশকে ভালবাসি আর 
বড় একান্তভাবেই ভালবাসি "। স্বামীজির ৩৯
বছরের ঝঞ্ঝাময় জীবন ঘটনা ও বার্তাবহুল হয়ে
আজকেও বেঁচে আছে । 

পুরাণে আছে সন্ন্যাসীর জীবন অতি কঠিন । সে যা পাবে তাই খেয়ে ও পরে এলাকার পর এলাকা ঘুরে দেখবেন । সাধারণ মানুষের জীবনকে দেখাই তার জীবনের আদর্শ হবে । স্বামীজি একরকম অনাহারে তার সন্ন্যাস জীবন কাটিয়ে এই ভারতের আসমুদ্র হিমাচল তিনি ঘুরে ঘুরে অভাবি মানুষের সুখদুঃখকে নিজের জীবনের সঙ্গে নিয়ে তাকে উপলব্ধি করেছিলেন । তখনকার দিনে কোনো মানুষের সাহস ছিল না ৬৩ দিন ধরে বোম্বাই , চীন , ভ্যাঙ্কুভার হয়ে প্রায় সামান্য খরচ সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার কথা । পরে জামেসদজি টাটার সঙ্গে তখন‌ই আলাপ 
হয়েছিল । কিন্তু তাতে স্বামীজির কিছু তখন সুবিধা না হলেও বেলুড় মঠ ও দ্বিতীয়বার 
বিদেশে যেতে তা তাঁকে সাহায্য করেছিল । সিকাগো ধর্ম সভার দশ বছরেই তাঁর মৃত্যু হয় । কোনো সময় তিনি একেবারেই পাননি । যেমন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণকে থেকে আমরা পাই 
অন্য শ্রীরামকৃষ্ণকে । তেমনি বিবেকানন্দকে 
পুস্তকে সেইভাবে পাইনি । তবে হাতের গোড়ায় পেয়েছি সাহিত্যিক শংকরের কাছ থেকে  স্বামীজিকে অন্যভাবে জানার । দীর্ঘ দিন তিনি
হাওড়ার রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আশ্রমের সঙ্গে
যুক্ত ছিলেন। তখন থেকেই বিবেকানন্দ চরিত্র চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন তিনি । তাই শংকরের থেকে
স্বামীজির সম্পর্কে গভীর ভাবে আমরা কিছুটা 
অধ্যয়ন করতে পেরেছি । কিন্তু শ্রীম"র জন্য
তবু আমরা শ্রীরামকৃষ্ণকে বেশ কিছুটা জানতে
পারলেও স্বামীজি আমাদের সে সুযোগ নিজেই
দেননি । ভগিনী নিবেদিতা ও স্বামীজির গান
তার প্রবন্ধ তার পত্রাবলী তাঁকে কিছুটা জানা যায়। তবু যেন আমাদের মনে সংশয় থেকেই
যায় । মনে হয় বিবেকানন্দ এদেশে এখনও অবহেলিত রয়ে গেছেন । "আমি বিবেকানন্দ বলছি "-স্বামীজির জীবনের দুঃসময়ের ফসল ।

স্বামীজির রচনাবলীতে আছে-" বহুজন হিতায়
বহুজন সুখায় সন্ন্যাসীর জন্ম। পরের জন্য প্রাণ দিতে, জীবনের গগনভেদী ক্রন্দন নিবারণ করতে,
বিধবার অশ্রু মুছাতে,পুত্রবিয়োগ-বিধুরার প্রাণে
শান্তিদান করতে,অজ্ঞ ইতর সাধারণকে জীবন সংগ্রামের উপযোগী করতে, শাস্ত্রোপদেশ বিস্তারের দ্বারা সকলের ঐহিক ও পারমার্থিক
মঙ্গল করতে এবং জ্ঞানলোক দিয়ে সকলের
মধ্যে প্রসুপ্ত ব্রহ্ম-সিংহকে জাগরিত করতে
জগতে সন্ন্যাসীর জন্ম হয়েছে ।" তাই দেখতে পাই পিতার মৃত্যুর পর দিশেহারা ছিলেন তিনি, একদিকে আত্মীয় স্বজনদের স্বার্থপরতা অন্যদিকে মা-দু ভাইয়ের আহার জোগাড় করা , বাসস্থান রক্ষা করার ভাবনা আগে না কি ? শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারাপ্রচার করা ? কোনটা প্রধান তাঁর কাছে হবে ? সন্ন্যাসীর কঠোরতায় নির্মমভাবে স্বামীজি ভাবলেন যে,  ত্যাগ‌ই হলো
তার জীবনের প্রধান অধ্যায় , বেদনায় কাতর 
হয়ে না পড়ে ভয়ানক দুঃখ কষ্টকেই সহ্য করে
নিয়েছিলেন তিনি । তাই অনেক কষ্টে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল -" জীবনে যাকে নিজের পথ নিজেকেই করে নিতে হয় ,সে একটু রুক্ষ হবেই ।" কিন্তু বাস্তবে তো স্বামীজি ছিলেন দিলখোলা সাদাসিধে মানুষ । হাঁস,ছাগল কুকুরদের সঙ্গে তাদের ভাষায় আদান প্রদানের
কথাতো এখন‌ও বেশ রসালো ভাবেই শোনা
যায় । তাদের সঙ্গে কথা বলতেন তাদের মতো করেই । শুনলেই হাসি এসে যাবে এইরকম সব অদ্ভুত তাদের  নামকরণ করেছিলেন । 

স্বামীজি বলেছিলেন-" এই বিশ্বাস আমি দৃঢ়ভাবে পোষণ করে আসছি এবং এখনও করি যে, যদি আমি সংসার ত্যাগ না করতাম ,তবে আমার গুরু পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণদেব যে বিরাট সত্য প্রচার করতে জগতে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন ,তা প্রকাশিত হতে পারতো না ।" এখানে আমরা এক
প্রচন্ড শক্তিশালী দৃঢ়চেতা মানুষরূপে পাই ।

স্বামীজি বলেছিলেন এই ভারতে তাকে অনেকে চেনেনা বোঝে না তাতে কি ?!" আমি যুবদলকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে নেমেছি,যারা সর্বাপেক্ষা দীনহীন অবহেলিত পদদলিত...তাদের দ্বারে দ্বারে--সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, নীতি, শিক্ষা ধর্ম বহন করে নিয়ে যাবে --এটাই আমার আকাঙ্ক্ষা ও ব্রত । এটি আমি সাধন করব অথবা মৃত্যুকে বরণ করব । 

যেমনটি পুরাণে বলা আছে সেই কপর্দকহীন সন্ন্যাসীদের রূপের মধ্যে যে স্বামীজি বিজয়ী হবার স্বপ্ন দেখতেন তা তাঁর রচনায় মেলে ব‌ইকি ।
তিনি বলেছেন-" আমার ভয় নেই, মৃত্যু নেই,
ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই...বিশ্বপ্রকৃতির সাধ্য
নেই যে,আমাকে ধ্বংস করে । প্রকৃতি
আমার দাস । হে পরমাত্মন্, হে পরমেশ্বর
তোমার শক্তি বিস্তার কর ।" কী অভাবনীয়
প্রত্যয়ী তিনি , কে তার সেই পরমেশ্বর ? 
স্বামীজির ধর্ম তো হিন্দু নয় তবু একদিন কী
হলো দুর্গাপূজার রীতিনীতি নিয়ে লেখা ব‌ই
আনালেন । মূর্তি পুজোর বিরোধী স্বামীজি
অনুমতি দিলেন মঠে দুর্গাপুজো হবার । আসলে
একটু আনন্দ হবে ঢাক বাজবে অনেক
মানুষের আগমন হবে তার সঙ্গে তার বানানো
রেসিপি অনুসারে খিচুড়ি ভোগ । তিনি হিন্দুত্বের
পুজো করেননি তাদের আনন্দের পুজো
করেছিলেন । 

শ্রীরামকৃষ্ণকে তিনি দেখেছিলেন কাপড়চোপড়
ছাড়া পঞ্চবটিতে বসে ধ্যানমগ্ন, রাতবিরেতে
উলঙ্গ শ্রীরামকৃষ্ণ ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর বেশবাস,
মা মা বলে মন্দিরে ঢুকে গেছেন । পুজো 
করতে করতে মা কালীকে নয় নিজের মাথায় 
ফুল দিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ । কালীমূর্তি 
কি তবে তথাকথিত কোনো ভগবানরূপী দেবতা 
ছিলেননা শ্রীরামকৃষ্ণের কাছেও ? সবার
কাছে দক্ষিণেশ্বরের তিনি কালী মূর্তি হলেও
স্বামী বিবেকানন্দ কিন্তু পরবর্তীতে কালীর 
বদলে শ্রীরামকৃষ্ণকেই দেবতার আদলে বসিয়ে
তিনি পুজো করেছেন , যা বেলুড় গিয়ে আমরা
আজকে দেখতে পাই ।  মূর্তির থেকে রক্তমাংসের
মানুষ যাকে তিনি দেখেছেন তাকে পুজোর মধ্যে দিয়ে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় রীতিনীতিতে কষাঘাত
করেছিলেন । হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে ১১০ বছর
আগে এসে শ্রীরামকৃষ্ণকে পুজো করতে গিয়ে
লিখলেন -" শ্রীরামকৃষ্ণায়‌ তে নয়: ।"

স্বামীজি জরথ্রুষ্টের মতবাদ ভালো করে জেনে ছিলেন । তাই ভারতীয় ঋষির সনাতন ধ্যানচিন্তা কে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আহুরা মাজদা সম্প্রদায়ের মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে খুঁজতে তাদের ধ্যানমগ্নতায় আরও বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । কখন‌ই ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনাকে তিনি খারাপ বলেননি অথচ
সেখানে তিনি নিজেকে বিকিয়েও দেননি । 

ভারতবাসীকে ভাইয়ের মতো ভেবে সম্বোধনে বলেছিলেন -"ওঠো জাগো...। " তিনি তাই আমাদের কাছে স্বামী বিবেকানন্দের মতো
এক পরম দয়াময় দৃঢ়চেতা ভাবগম্ভীর মানবপূজারী হতে পেরেছেন । তিনি তো নিজে
দেখেছেন তার গুরুদেব,( লোকেরা তাকে পাগলঠাকুর‌ও ভালোবেসে বলেছেন) তাকে
বার বার বলেছেন--" যা না যা... মায়ের কাছে
যানা একবারটি...এ বার‌ও পারলি নে...যা যা ।"

সত্যি তো শ্রীরামকৃষ্ণ তো মন্ত্রপড়া ঘন্টা বাজানো
চামরদোলানো কোনো সাধারণ পুরুত ছিলেন না ।
কেশবচন্দ্র সেন, বিদ্যাসাগর কেউ তো তাঁর
সঙ্গে দেখা করতে চাননি এমন তো নয় । 
স্বামীজি যখন ভ্যাঙ্কুভারে তখন জামসেদজি টাটার সঙ্গে তাঁর দেখা হয় । ওই একই জাহাজে
স্বামীজি যখন প্রথম আমেরিকা যাচ্ছিলেন । 

পারস্য উপসাগরীয় আহুরা-মাজদার উপাশকদের আগুনের সামনে উপাসনার মধ্যে দিয়ে যে জীবনের শুদ্ধতা খুঁজে পাওয়া যায় সেই ধর্মের উৎসাহ থেকে তিনি যে বেলুড় মঠের ধ্যানমগ্নতা খুঁজে পেয়েছিলেন সে কথা ভাবলে ক্ষতি কি ? বেলুড়ের অলঙ্কার নক্সায় মোটিফে পার্সি,খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু,বৌদ্ধরীতি অবলম্বন
করা হয়েছে । শ্রীরামকৃষ্ণের যত মত তত পথকে
নতুন ভাবে আবিষ্কার করেদিয়েছিলেন । বলেছিলেন - শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী আমাকে 
প্রচার করতেই হবে ।

যৌবনে ব্রাহ্মসমাজের আদর্শে প্রভাবিত
নরেন্দ্রনাথ মূর্তি পুজোকে পৌত্তলিক জ্ঞান
করতেন শ্রীরামকৃষ্ণের উদার এবং সমন্বয়ী
চিন্তার সঙ্গে "কালীঘরে যাওয়া " শক্তিকে
প্রাধান্য দেওয়া নরেন্দ্রর চোখে বিসদৃশ্য 
লাগতো । তরুণ,সশয়ী, নরেন্দ্রনাথের এই
ভাব বেশি দিন টিকে ছিল না । 

১৮৮৮ সালে নিজ শিষ্য সদানন্দকে বলেছিলেন
  - " আমার জীবনে একটা মস্ত বড় ব্রত আছে।
 এ ব্রত পরিপূর্ণ করার আদেশ আমি গুরুর
কাছে পেয়েছি ---আর সেটা হচ্ছে মাতৃভূমিকে
পুনরুজ্জীবিত করা । " শ্রীশ্রী মা একদিন গল্পছলে
এক শিষ্যকে বলেছিলেন -" যা সব শুনছি, সাহেব পুলিশরা এসে একদিন না একদিন নরেনকে গারদে পুরে দেয় । " এ থেকে প্রমাণিত হয় স্বামীজির কাছে বিপ্লবীরা আসতেন পরামর্শের
জন্য ।

বিবেকানন্দের আয়ুষ্কাল রবীন্দ্রনাথের অর্ধেক
মাত্র । বিবেকানন্দ নবীন ভারতবর্ষের কোনো
বিষয় ও সংঘাত দেখে যেতে পারেননি তাই
রবীন্দ্রনাথ যতটা পেরেছেন স্বামীজি ততটা করে
যেতেও পারেননি । তাছাড়া স্বামীজির বিপ্লববাদ
ছিল শুধুই মানুষের চরিত্র গঠনের । ধর্ম, শিক্ষা, ও ক্ষুধা সম্পর্কে নিশ্চিত দিগদর্শনের নির্দেশ ।

জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক নিটশের -" দাজ স্পেক জরাথ্রুষ্ট " ব‌ইয়ে এক সন্তপ্রতিম 
মানুষের বর্ণনা আছে । বিজন পর্বতে তিনি 
দশবছর স্ব-নির্বাসিনে ছিলেন গভীর ধ্যানে । 
তারপর তিনি জনপদে এসেছিলেন মানুষকে 
তার কথা বলতে । সেই জরথ্রুষ্টের ধর্মীয় মতবাদের প্রথমে আছে মহিলাদের অগ্রাধিকার । " যত্র নার্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতা ।" যেখানে নারী সম্মান পান, সেখানে দেবতার অবস্থান ।" কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ দেখলেন 
তাঁর সময়ে নারীরা সমাজে অবহেলিত , 
বঞ্চিত ও অত্যাচারিত । গভীর দুঃখে ও 
যন্ত্রণায় বিবেকানন্দ ,তিনি বললেন, ভগবানের 
প্রতিমা স্বরূপা নারী এখন শুধুমাত্র সন্তান
ধারণের যন্ত্রে পরিণত । নারীকে তার শিক্ষা
ও স্বাধীনতার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে ।
যতক্ষণ তা সম্ভব হবে না , ততক্ষণ জাতি
হিসেবে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারবোনা ।"
বিবেকানন্দ বললেন-" নারীকে শিক্ষিত করে
গড়ে তুলতে হবে ।" স্বামীজি শিক্ষার সঙ্গে
চরিত্র গঠনের কথা বলতেন । সার্বিক  
ব্যক্তিত্বের বিকাশ চেয়েছিলেন স্বামীজি । 
এইখানে রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের
কাছে সমগ্র নারীজাতি ও বাঙালিরা চিরঋণী । পরবর্তীকালে নারী সমাজের যে অগ্রগতি 
হয়েছে , সেদিন এই দুই মহারথী পাশে এসে 
না দাঁড়ালে তা কোনোভাবেই সম্ভব ছিলনা । 
এই প্রসঙ্গে শ্রীমার সঙ্গে বিবেকানন্দের 
একটি সম্পর্কের কথা বলি ।বিবেকানন্দ 
তাঁর অনুকরণীয় ভাষায় বলেছেন--
শ্রীরামকৃষ্ণ থাকুন বা যান ক্ষতি নেই, 
কিন্তু মা ঠাকরণ না থাকলে সর্বনাশ, তিনি 
শক্তির আধার । মাঝেমধ্যে‌ই তিনি গুরুভাইদের 
বলছেন, "তোরা মাকে চিনতে পারিসনি । 
মাকে চিনতে চেষ্টা কর । "সুভাষচন্দ্রের 
সম্পর্কেও এক‌ই কথা খাটে , সুভাষচন্দ্র তার জীবনে নারীর গুরুত্বপূর্ণ হ‌ওয়ার কথা বলতে গিয়ে,মা প্রভাবতীদেবী ও দেশবন্ধু-পত্নী বাসন্তী দেবী,মেজ-ব‌উদিদি বিভাবতীদেবী ও পত্নী 
এমিলিয়রের কিছু ত্যাগ ও গুণের কথা বলেছিলেন । স্বামীজি আবার একথাও ভেবেছিলেন যদি নারীরা সংসার ত্যাগ করে
সন্ন্যাসীনী হতে চান সে অধিকার তাদের
দিতে হবে । সেই দিশা খুঁজে দিয়েছিলেন 
স্বামীজি নিজেই । 

এত অল্প সময়ের মধ্যে স্বামীজির দৃষ্টি ছিল সবদিকে। তিনি বলেছেন-" আমরা নির্বোধের মতো,জড় সভ্যতার বিরুদ্ধে চিৎকার করিতেছি...
বাহ্য সভ্যতা আবশ্যক , যাহাতে গরীব লোকের
জন্য নূতন নূতন কাজের সৃষ্টি হয় । অন্ন ! অন্ন!
যে ভগবান আমাকে অন্ন দিতে পারেন না,
তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখিবেন--ইহা
আমি বিশ্বাস করিনা ।" 

এমনকি রাজনীতিকেও তিনি ছেড়ে দেননি-
" এই ঘোর দুর্ভিক্ষ , বন্যা রোগ-মহামারীর দিনে কংগ্রেসওয়ালারা কে কোথায় বলো ? খালি আমাদের হাতে শাসনের ভার দাও, বললে কি চলে ? মানুষ কাজ যদি করে তাকে কি মুখ ফুটে বলতে হয় ? " যা আজ হবে যা হতে যাচ্ছে 
দেখা যাবে অল্প সময়ের মধ্যেই স্বামীজি সব বলে গেছেন । ( কেউ যেন এই প্রসঙ্গে ভারতীয় রাজনীতি না জুড়ে দেন, কংগ্রেসর তৎকালীন অবস্থার প্রেক্ষিতে স্বামীজি ওইসব বলেছিলেন) । তিনি বলেছেন শিক্ষা অর্জনের অধিকার সকলের‌ই থাকা উচিত । আর শিক্ষিত
না হ‌ওয়ার জন্য তিনি আত্মজিজ্ঞাসা করেছেন , এই জন্য কে দায়ী ? উত্তর দিয়েছেন নিজেই, বলেছেন -" ইংরাজরা দায়ী নয় , আমরাই 
দায়ী।" স্বামীজী সবথেকে জোর দিয়েছেন
শিক্ষার অধিকারের উপর যা আমরা ২০০৯ -এ
এসে বুঝতে পেরেছি । স্বামীজিই বলেছেন
  - "দরিদ্র বালক যদি শিক্ষালয়ে আসিতে না পারে তবে শিক্ষাকেই তার কাছে পৌঁছাতে হবে ।"

স্বামীজির কথা কখনো কখনো ঝাঁঝালো হয়েছে
যা এখনকার দিনে তার মূল্যায়ণ অমর হয়ে
আছে বলা যেতে পারে -" দিবারাত্রি ভন্ডামি,
মিথ্যাচার ও প্রতারণার জীবন যাপন কর--
তোমার ক্ষতগুলি যতদূর পারো ঢাকিয়া 
রাখো । তালির উপর তালি দাও , শেষে
প্রকৃত জিনিসটিই যেন নষ্ট হ‌ইয়া যায় , আর 
তুমি কেবল একটি জোড়াতালির সমষ্টিতে
পরিণত হ‌ও । "
আলমোড়া থেকে ১৯ নভেম্বর ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দে স্বামীজি চিঠি লিখলেন প্রমদাদাস মিত্রকে। সেখানেই প্রথম তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে -" ভগববন শ্রীরামকৃষ্ণ" বললেন। ১৮৯৪ খৃষ্টাব্দে স্বামী শিবানন্দকে চিঠিতে লিখেছেন " শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর কাছে ভগবানের বাবা।" ১৮৯৫ এর ফেব্রুয়ারিতে বৈকুণ্ঠ সান্যালকে স্বামীজি লিখলেন, "পরমহংস দেব আমার গুরু ছিলেন।" স্বামী অখণ্ডানন্দকে ১৩ নভেম্বর ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে এক চিঠিতে লিখলেন, " শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস অবতার ইত্যাদি ইত্যাদি সাধারণে প্রচার করিবেন না।" গুরুভাইদের বার বার বলেছেন, " শ্রীরামকৃষ্ণের নাম প্রচার করবার জন্য জেদ করিও না আগে তার ভাব প্রচার করা।" আবার শ্রীরামকৃষ্ণের সম্পর্কে কারও সংসয় প্রকাশ পেলে তার উত্তরও স্বামীজি দিয়েছেন, " দাদা, না হয় রামকৃষ্ণ পরমহংস একটা মিছে বস্তুই ছিল, না হয় তাঁর আশ্রিত হওয়া একটা ভুল কর্মই হয়েছে, কিন্তু এখন উপায় কি ? এ দুনিয়া ঘুরে দেখেছি যে, তাঁর ঘর ছাড়া আর সকল ঘরেই ভাবের ঘরে চুরি...এ জন্ম, এ শরীর, সেই মূর্খ বামুন কিনে নিয়েছে।" স্বামীজি বলেছেন, শ্রীরামকৃষ্ণের প্রচার করতে গিয়ে তোমার গোঁড়ামি দ্বারা লোককে বিরক্ত কোরোনা। 
মঠের গাছতলায় বসে নিবেদিতা একদিন স্বামীজিকে শক্তি, ভয়হীনতা, সাহস দেখে প্রমিথিউসের সঙ্গে কল্পনা করতে পেরেছিলেন। সেদিনই স্বামীজি বললেন, " খুব বেশিদিন বাঁচবো না, চল্লিশও ফেলবে না।" এই কথা বলে স্বামীজি নিবেদিতার এঁটো হাত মুছিয়ে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, যীশু তার শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন।" 
©® অলোক কুন্ডু

শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

লক্ষ্মীর ভান্ডার আসলে মেয়েদের হাত খরচ। স্বামী হাত খরচ না দিলে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। অলোক কুন্ডু











যেখানে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হবে, সেখানে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করালে তারা একটি নম্বর ফরমের ওপর লিখে দিচ্ছেন এবং একটি সরকারি ছাপ দিচ্ছেন। সরকারি রাবার স্ট্যাম্পের ছাপটি যদি দিতে ভুলেও যান তবে আপনারা তা ওইখানে দিতে অনুরোধ করবেন। তার পাশেই ক্যাম্পের লোকেরা একটি স্বাক্ষর করে দেবেন। আপনিও বাড়ি ফিরে ওই নম্বরটি একটি আলাদা কাগজে যত্ন করে লিখে রাখবেন। "লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প"-এর নির্দিষ্ট একটি টেবিল বা ক্যাম্প থাকবে, ওইখানে গিয়ে Form-টি চাইতে হবে। এরকম শোনা যাচ্ছে, তা হলো ভিড়ের ঝুঁকি এড়াতে, বহু জায়গায় আগেই থেকে কূপন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারিখ অনুযায়ী এসে বা কারও মাধ্যমে তারা পরে ফরম্ তুলে নেবেন। পরে নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে জমা দেবেন। আজ পর্যন্ত এইরকম দীর্ঘ কোনও লাইন কোনও কালেই দেখা যায়নি।

ধরে নেওয়া যেতে পারে গ্রামেগঞ্জে বিডিও অফিসে ও শহরে মিউনিসিপ্যাল বরো অফিস অথবা মিউনিসিপ্যাল অফিসে হবে এই ক্যাম্প। স্থানীয় প্রশাসন মনে করলে এই ক্যাম্প তারা যে কোনও বড় স্কুলেও বসাতে পারে। হচ্ছেও তাই।

শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

লক্ষ্মীর ভান্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় / অলোক কুন্ডু অলোক কুন্ডু

লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে, একটি প্রবলেম হতে পারে তা হলো যাদের বয়সের কোনও শংসাপত্রই নেই। কেবলমাত্র ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের জন্মতারিখ দিয়ে এতদিন চলে যাচ্ছিল। এখনও বহু মানুষ আধার কার্ডে জন্মতারিখ নথিভুক্ত করেননি, এই ধরনের জটিলতার জন্য। এ ছাড়া আর এক ধরনের জন্মতারিখ নিয়ে জটিলতা আছে যা গেঁতোমির জন্য সংশোধন করা হয়নি। কারণ আধার কার্ডের জন্ম তারিখের সঙ্গে তার ভোটার কার্ড ও অন্যান্য জন্মতারিখের কোনও মিল নেই। এই কারণে একবছর বা ছয়মাসের তফাৎ থেকে গেছে তাদের নিজের বয়সের। আমি বলবো সবসময় আধার কার্ডের জন্মতারিখ মেনে নিলে সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। কারও জন্মতারিখ নেই তার ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিড নিয়ে সমস্যা মেটানো যেতে পারে। টাকার লোভে কেউ যদি দু তিন জায়গায় দু তিন রকম জন্মতারিখ রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার সমূহ ক্ষতি করতে পারে। অ্যাফিডিভিট সব জায়গায় মানতে না চাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, তাই কার্পেট জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ভালো। 

পশ্চিমবঙ্গ লক্ষ্মী ভাণ্ডার, প্রকল্পের আওতায় আবেদন করার পদ্ধতি কি? লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি নিয়ে বাড়িতে আনার পর, সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি অর্থাৎ নিজের কাছে থাকা কাগজপত্রগুলি সংগ্রহ করতে হবে এবং এরপর লক্ষ্মীর ভাান্ডারের আবেদন পত্রের অধীনে থাকা সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করা শুরু করুন। দুয়ারে সরকার থেকে দেওয়া নিবন্ধন নম্বর টি পূরণ করুন-- সবার আগে। আবেদন পত্র সংগ্রহ করার দিনে এই নম্বর ফরমে লিখে দিতে পারে, আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হয়ে তবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্যাম্পে যেতে পারবেন,  এই ব্যবস্থা সকলেই জানেন (রেজিস্ট্রেশন করুন)।

স্বাস্থসাথী কার্ডের নম্বরটি ফরমে লাগবে। আগে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে, এই আওতার অধীনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রয়োজন হবে। তাই এই কার্ড না থাকলেও আবেদন করা যাবে। ফরম্ জমা দিয়ে আধিকারিককে জানাবেন আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হয়নি। তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে এবং ততক্ষণ আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি অস্থায়ী ভাবে জমা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলেও লক্ষ্মীর ভান্ডারে আবেদন জমা করা যাবে অথবা স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবেন। এই বিষয়ে নিয়ম সরকার প্রতিনিয়ত আপডেট করে সংশোধন করছে।

আবেদনকারীকে তার দেওয়া সমস্তরকম জেরক্স কপিতে নিজেকেই স্বাক্ষর করতে হবে। ফরমেও স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর না করতে পারলে টিপসই দিতে হবে। জেরক্স কাগজের নীচের সাদা অংশে স্বাক্ষর করবেন। 

ফরমে লাগবেঃ পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নম্বর। যাদের নেই ফাঁকা থাকবে। আধার নং। আবেদনকারীর। মোবাইল নম্বর। ই-মেইল আইডি না থাকলে, দেওয়ার দরকার নেই। জন্ম তারিখ। বাবার নাম। মায়ের নাম। স্বামীর নাম ( স্পাউস)। ঠিকানা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণী। এই সমস্ত বিবরণ পূরণ করার পর এখন আপনাকে স্বয়ং ঘোষণা ফর্মমটি ( তৃতীয় ও শেষ পাতা) পূরণ করতে হবে। যাতে বলা আছে সবকিছু তথ্য আপনি সঠিক ও সত্য দিচ্ছেন। সঙ্গে একটি ক্যান্সেল লেখা চেকের ফাঁকা পাতা দিলে ভাল হয়, যেখানে স্বাক্ষরের জায়গাটি ক্রস করে দেবেন, চেকের কোথাও সই-স্বাক্ষর করবেন না। একটি ছবি ফরমে মেরে দেবেন আর একটি ছবি ফরমের বামদিকে স্টেপল্ করে দিন। এইসব হলে আসল ফরম্যাটটি সাবধানে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিয়ে দিন।

এইবার আপনাদের কয়েকটি কথা পরিষ্কার করে বলছি। ফরম্ পূরণের সময় ধৈর্য ধরে লিখুন, ধীরে ধীরে লিখুন অথবা কাউকে লিখে দিতে বলুন। ফরম্ যেদিন জমা হবে সেইদিন আপনার ফোনে এস.এম.এস আসবে। তাই
ফোনের মেসেজ বাক্স বা ইনবক্স পরিষ্কার করুন।
(১). তাই মেসেজ ভর্তি থাকলে, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে নোটিফিকেশন পাবেন না। (২). যেদিন ফরম্ জমা দেবেন, সেই দিনই কিন্তু এস.এম.এস নাও পেতে পারেন, কিন্তু ফরম্ জমা হলে এস.এম.এস পাওয়ার কথা। কিন্তু হাজার হাজার ফরম্ নিয়ে মিলিয়ে দেখে নিয়ে কম্পিউটারে তুলতে বহু সময় লাগার কথা, এই কারণে দেরি হতে পারে। (৩).ফরমের প্রথমেই যদি দুয়ারে সরকারের দেওয়া নম্বরটি আপনি ভুল লেখেন অথবা ক্যাম্প থেকে ভুল লিখে দেয় তবে সমস্যা হবে। (৪). ফরমের সঙ্গে দুটি ছবি দেওয়ার কথা, একটি ছবি আঠা দিয়ে ডানদিকের উপরের বক্সে চিটিয়ে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় ছবিটি ফরমের সঙ্গে ভালো করে স্টেপল করে বাম দিকের উপরে না দিয়ে থাকলে হারিয়ে যেতে পারে, সে কারণে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। (৫). ফরমের সঙ্গে যে সকল জেরক্স কপি দিয়েছেন, তা বারংবার আসল কপির সঙ্গে মিলিয়ে না নিলে এবং ভুল করে বাড়ির অন্য কারও অথবা নিজের আগের ভুল হওয়া কোনও দ্বিতীয় আধার কার্ড বা অন্য কাগজ জমা দেওয়া হলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৬). জেরক্স করা কাগজগুলোর মধ্যে ভুল করে কোথাও সই/ স্বাক্ষর করে না দিলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৭). সব থেকে বড় ভুল হতে পারে যাদের স্কুল-কলেজের শংসাপত্র নেই বা বার্থ সার্টিফিকেট নেই এবং যার ফলে জন্ম তারিখের গন্ডগোল থাকলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। তাই যাদের এরকম আছে তারা ভুলেও দুরকম জন্ম তারিখ লেখা কাগজপত্র জমা দেবেন না। এইক্ষেত্রে যদি ভুলও থাকে তবে আধার কার্ডের জন্মতারিখ জমা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আধার কার্ডে জন্মতারিখ না থাকলে ভোটার কার্ড দিন কিন্তু এই প্রসঙ্গে উল্টোপাল্টা কিছু জমা দিয়ে ফেললে এস.এম.এস আসবে না। (৮). ব্যাঙ্কের যে অ্যাকাউন্টটা চালু আছে সেইরকম কোনও অ্যাকাউন্ট দিয়েছিলেন কিন্তু আই.এফ.এস নম্বরটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মেলেনি তাতেও এস.এম.এস আসবে না। তাই সঙ্গে একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে হবে যেটিতে সই/ স্বাক্ষর কখনই করবেন না। ক্যানসেল বলে বড় বড় অক্ষরে চেকের উপর লিখে দেবেন। নতুন অ্যাকাউন্ট হলে, এখনই চেক বই পাবেন না, তাই
পাশ বইটি ভালো করে জেরক্স করুন এবং ওইখানে আই.এফ.এস কোড না লেখা থাকলে আপনি ব্যাঙ্ক থেকে জেনে লিখুন। আই.এফ.এস কোডটি সঠিক ছাড়া আপনার ফরম্ কম্পিউটারে ঢুকবে না, তাই এস এম এসও আসবে না। (৯).সাদাকালো ছবি দিলে এস এম এস নাও আসতে পারে। (১০) অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর না করলে এস.এম.এস না আসতেও পারে।
(১১). স্পাউস মানে স্বামী এই কলমটি ভুল লিখলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (১২). ফরমে তারকা চিহ্নিত ঘর পূরণ না করে ফাঁকা রেখে দিলে এস.এম.এস নাও আসতেও পারে। ফরমের উপরে দুয়ারে সরকারের দেওয়া কোনও নম্বর না থাকলে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। স্পষ্ট করে ফরম্ পূরণ না করলে ( ক্যাপিটাল) এস.এম.এস না আসতেও পারে। 

সমস্ত কিছু বলার পরও একটু রাজনৈতিক আলোচনা সামান্য করা দরকার। যখন লক্ষ্মীর ভান্ডার ঘোষণা হ'ল তখন কিন্তু আদেশের মধ্যে ছিল প্রতিটি পরিবারের একজন পাবেন। ১২.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয়বার সাংবাদিক সম্মেলনেও সেই কথা বললেনও। তারপরই বিজেপির পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হ'ল এবং শুভেন্দু অধিকারী বললেন সন্ধ্যায়। তিনি বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে লিখিত আছে সকল মহিলাদের দেওয়ার কথা। ১৮.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী পুণরায় ঘোষণা করলেন সকলেই পাবেন। এখন এই সকলের মধ্যে কারা পাবেন আর কারা পাবেন না নতুন করে যদি কিছু আইনি ব্যাখ্যা সরকার দেয় তবে বিরোধীপক্ষ নিশ্চিত মামলাও করতে পারে। তাই ধরে নিতে হবে, এখন সকলেই পাবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মোট খরচের বাজেট বরাদ্দ এখন তাই বাড়াতে হবে। অলোক কুন্ডু ©®। 




সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

লেনিন ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মধ্যে অমিল : অলোক কুন্ডু

🎯 একই ঘটনার জন্য লেনিন ধিকৃত হয়ে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন-- অলোক কুন্ডু

🎯 গত ৩০.৫.২০০৭-এ প্রকাশ কারাত বলেছিলেন, প্রাত্যহিক ব্যবসায় সব্জি প্রক্রিয়াকরণে, রিলায়েন্সকে আটকে রাখা যাবেনা। ফরোয়ার্ড ব্লকের হাতে ছিল কৃষি বিপনন দপ্তর। ফরোয়ার্ড ব্লক নিজেদের স্বার্থেই চেয়েছিল নিত্য প্রয়োজনীয়, কৃষি ও সবজি ব্যবসায় যেন রিলায়েন্স না ঢোকে। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সদিচ্ছার কাছে ১০০ একর জমির দরখাস্ত করেছিলেন মুকেশ আম্বানি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য। বুদ্ধবাবুর তখন ২৩০/৩৫- এর সময়, কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। তারপর নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর এসে পশ্চিমবঙ্গের সব ওলটপালট করে দিয়ে গেছে। মিডিয়া ও খবর কাগজের সেই চুলচেরা বিশ্লেষকদের কথা কেউ মনে রাখবেন না কিন্তু
যে সব শিল্পী-সাহিত্যিকরা বুদ্ধিজীবী সেজে মহা বিপ্লবী হয়ে উঠেছিলেন তারা অধিকাংশ আজ উইঢিপিতে পরিণত। বামেরাও আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গলদ থাকায়। বামেদের আজ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা নেই। তারা সেই রিলায়েন্স, সেই মুকেশ আম্বানির এখন উঠতে বসতে শ্রাদ্ধ করে থাকেন। বামপন্থীরা বলে থাকেন তাদের পার্টিলাইনের কথা। অবশ্য তারা যখন কম্পিউটার আটকে ছিলেন সেই কম্পিউটার আর আজকের কম্পিউটারের কাজের আকাশ পাতাল তফাৎ। আসলে তারা অটোমেশন আটকে ছিলেন। অটোমেশন যদি ব্যবহার হোতো তাহলে ১৯৪৭ থেকে ডেক্সটপ কম্পিউটার আসা পর্যন্ত কয়েক কোটি ভুয়ো সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, শ্রমিকের বেতন
সরকার ও সেই সংস্থাগুলিকে গুণতে হোতো না।

•যখন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত রাশিয়ায় খাবার নেই অনটনে ও শিল্পহীন রাশিয়া একপ্রকার ধুঁকছে। তখন লেনিনের কাছে আমেরিকান এক ব্যবসায়ী শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন শুধুমাত্র রাশিয়াকে গড়ে তুলতে, পুঁজির যোগান থেকে কয়েকবছর না লাভালাভের সেই প্রস্তাব লেনিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র পুঁজিবাদ আটকাতে। কিন্তু লেনিন সেই খাদ্য ও শিল্পের অনটনের সময় এবং মহা দৈন্যতায় আমেরিকান পুঁজিবাদকে ঢুকতে না দিয়ে আসলে ধিকৃত হয়েছিলেন। লেনিনের সেই মতবাদকে বড় করে দেখার জন্য তৎকালীন বৃহত্তর রাশিয়ানরা প্রচুর দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছিলেন। লেনিন আদর্শ বিচ্যুত হননি ঠিকই কিন্তু লেনিনের ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করতে সেই ঘটনা নিয়েই একাধিক বেস্টসেলার বই বেরিয়েছে। কিন্তু এই ধারণার বাইরে বেরিয়ে বুদ্ধবাবু ২০০৬-এ রিলায়েন্স, টাটা, মুকেশ আম্বানির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই সময় বামফ্রন্টের অনেক শরিক এইসব কাজে বাধা দিয়েছিলেন যাদের আজ একখানা এম.এল.এ জিতিয়ে আনার শক্তি নেই। পতাকায় যত আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক দেখা যায় বাস্তবে তাদের ১৪ দলের সাইনবোর্ড ছাড়া অনেকের আজ কিছু নেই যদিও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সিপিআই, সিপিএম ও ফরোয়ার্ড ব্লকের কিছু বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানেও পার্টি ধরা আছে কলকারখানার ইউনিয়ন ও খেটেখাওয়া কৃষক পরিবারের ওপর নির্ভর করে যা প্রায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে উঠে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী বলতে- ছাত্র, অধ্যাপক, শিক্ষক শ্রেণির কাছে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম-গঞ্জ থেকে কারখানায় পর্যন্ত, শক্তিশালীতায় এখন সেইসব দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। যে কোটিপতি কৃষকদের বিরুদ্ধে এককালে বামেদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন ছিল এখন সেইসব ট্রাক্টরওলা ঋণ পরিশোধ না করা, ঋণখেলাপি কৃষকদের সমর্থনে খেটে খাওয়া কৃষকদের সামিল করে দিয়েছেন তারা ও কৃষিবিল প্রত্যাহারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকলে একরকম নীতি আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে আর একরকম নীতি সঠিক কিনা ভবিষ্যত বিচার করতে করতে দেশ গোল্লায় যাবে কিনা সেটাই এখন দেখার। তবে নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর যে শিল্প না নিয়ে যে শতাব্দীর সেরা ভুল করেছিল তা সকলেই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন। যা কখনও ক্ষমার যোগ্য হবেনা। রাশিয়ার দুঃসময়ে লেনিন যা করেছিলেন সেই বিপরীত আদর্শে বুদ্ধবাবু নিরুপম সেনরা গিয়েও ফিরে আসতে পারেননি। রাশিয়া টুকরো টুকরো হয়ে গেছে আজ। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর বুদ্ধবাবুকে পুরস্কার দেবেনা হয়তো। একই ঘটনার জন্য লেনিন ধিকৃত হয়ে আছেন হয়তো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ©® অলোক কুন্ডু 🎯🎯 ( ছবিটি একটি প্রতীক) 

রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

একুশের নির্বাচন বামেদের কাছে পরীক্ষাগার: অলোক কুন্ডু


🎯 একুশের নির্বাচন বামেদের কাছে পরীক্ষাগার

🎯 অলোক কুন্ডু
•০৮.০২.২০২১১

🎯 হলদিয়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস ও তাদের সরকারের বিরুদ্ধে যে বলবেন এটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু যে নন্দীগ্রামের জন্য বামেরা উৎখাত হয়েছিল তার নিকটতম জায়গা হলদিয়া থেকে কেন প্রধানমন্ত্রী বামেদের বিরুদ্ধে নতুন একটি অস্ত্রকে ধারালো করে শান দিলেন। কারণ কি ? অথচ এখানে বিজেপির উত্থান কিন্তু তৃণমূলকে প্রবল আক্রমণের মধ্য দিয়েই হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট বাড়াতে হলে ইতিপূর্বে সত্তর বছরের ইতিহাস বলছে সরকারকে আক্রমণ
না করলে রাজনৈতিক মঞ্চ দখল রাখা মুস্কিল। তাই প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলকে প্রধান শত্রু করেও বামেদের বিরুদ্ধেও অস্ত্র শানাতে ভুললেন না। নিশ্চিত এর বিস্তৃত কারণ আছে। একমাত্র তৃণমূলকে প্রবলরূপে আক্রমণ করার জন্য বিজেপির এই উত্থান আজ হয়েছে। হঠাৎ তার সঙ্গে বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবার কারণ কি ? হয়তো দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোপন কিছু রিপোর্ট থাকতে পারে। যে কারণে বঙ্গের রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী আর একটি দরজা আজ জনসম্মুখে খুলে দিলেন। নিশ্চিত তাঁর কাছে আই.বি রিপোর্ট আছে যে বামেরা যাত্রাভঙ্গ করতে পারে, তলে তলে তাদের গোপন কম্মটি হয়তো প্রধানমন্ত্রী আগেভাগে জেনে গেছেন। গুটিকয়েক মোক্ষম শব্দের বিশেষণ দিয়ে তা পরিষ্কার করে দিলেন তিনি আজ। আসলে বামেদের এতে স্বার্থ কি ? লক্ষ্যণীয় যে বামেদের বক্তব্য থেকে খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না যে তারা ক্ষমতায় আসতে চান। বরং তাদের আন্দোলন সবটাই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যেমন--এল.আই.সি যেন সম্পূর্ণ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব থাকে। কৃষি আইন যেন সরকার তুলে নেয়, রান্নার গ্যাস যেন ফ্রিতে সরবরাহ করা হয়, পেট্রোল ডিজেলের যেন দাম বেঁধে দেওয়া হয়, ব্যাঙ্কের সুদ বাড়ানো হয়। আর তার সঙ্গে গুজরাটের পুরনো দাঙ্গা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তুলে ধরছে তারা। তৃণমূলকে আক্রমণ করে যে একদিন বনধ্ ডেকে দেওয়া অথবা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজত্বকালে তারা প্রেস কনফারেন্সে করে, যে সব দাবিদাওয়া তুলছে ও দুর্নীতিসমূহ বলতে চাইছে। যখন তারা জনতার দরবারে যাচ্ছে সেইসব তারা তেমন জোরালোভাবে বলছে না। এর কারণ কি ? মনে হয় এইসবগুলিও বাম ও সিপিএমের দেখা দরকার। কারণ বিজেপির অভিযোগ অনুসারে তাদের কাজে করে না দেখাতে পারলে, ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়বে। বামেদের ঘাড়ে এই যে অভিযোগ চাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন, তা কি রাজ্যের বিজেপিকেও নাড়িয়ে দিয়ে গেলেন ? যে তোমরাও এই বিষয়ে নজর দাও। রাজ্যের বিজেপির যুদ্ধজয়ের মূল কান্ডারি, শুভেন্দু অধিকারী কিন্তু, জ্যোতিবাবু থেকে সিপিএমের সরকারের ভালো দিকগুলি তার বক্তব্যের মাঝে তুলে ধরছেন। এই রাজ্যের ভোটারকে কিন্তু শুভেন্দুর থেকে বেশি বোধহয় কেউই চেনেন না। মুকুল রায়ের পর তিনি তৃণমূলের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন, যিনি সারা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের হয়ে সংগঠন বাড়িয়েছেন, বক্তৃতা করেছেন ও দৌড়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপিতে টক ঝাল মিষ্টি দিয়ে,
বামপন্থীদেরকে তুলে ধরার চেষ্টা করা করছে বিজেপি। বিশেষ করে ৩৪ বছরে একটা বড় শিক্ষক শ্রেণি তাদের হাতে এখনও আছে। কিন্তু ১৯৮১-এর পর গ্রামেগঞ্জে তাদের কাছে যে পঞ্চায়েতি রাজের সুবিধা ভোগীরা এসেছিলেন অন্যদল ছেড়ে দিয়ে, তারা ধীরে ধীরে সরে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বামেরা কি করতে পারেন ? কতটুকু জয়, তারা তাদের বামপন্থী মেজাজ ও ঐক্য দিয়ে ধরে রাখতে পারবেন ? পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাও এইবার পরীক্ষা করে নেবে। গত ২০১৬ তে বা তার পরের ভোটেতে বামেদের প্রাপ্ত সাতভাগ ভোটের থেকে যাতে আরও ২/৩ % ভোট বিজেপির দিকে টানা যায়, এই সঙ্গে তার একটা প্রচেষ্টাও তৈরি করে রেখে গেলেন, প্রধানমন্ত্রী। যদি আব্বাস সিদ্দিকীদের সঙ্গে বাম+কংগ্রেসের জোট শেষ পর্যন্ত হয়ে যায়ও, তাহলে বামেদের ভোটে যে ব্যাপক ভাঙন ধরার কথা ছিল বরং কিছুটা উন্নতি হতে পারে। নতুন ভোটার বামেদের সঙ্গে নাও যদি যায়, তাহলেও ৫-৬ % ভোটার এখনও বামেদের সঙ্গেই থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তাই, ওখান থেকে আরও কিছু যদি কমিয়ে দেওয়া যায় এবং বামেদের আর বাড়তে না দেওয়া।

• বিজেপি বেকরত্বকেই খুব বেশি জোর দিয়েছে এই কারণে যে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প পরিস্থিতি ও বেকার সমস্যা এবং পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যায় ধুঁকছে। বিজেপির জনপ্রিয়তা এখন যা আছে তাকে কিছুতেই হারাতে আর রাজি নন তারা। বিজেপির বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এখনও শহরের পথে নামেনি। অনেকটা চাপা আগুনের মতো হয়ে আছে। ফোকাসড নয়। শহরের লোকের কাছে, বিজেপির প্রধান শত্রু তৃণমূল যতটা, ততটা বুঝি এখন থেকে বামেরাও হয়ে উঠলো। কারণ বাম বুদ্ধিজীবী থেকে বিজেপিকে বেশি বাধা পেতে হচ্ছে। বাম বুদ্ধিজীবীরা সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের বুদ্ধিজীবী লবির সঙ্গে বসে প্রকাশ্য জনসভায় হেয় করছেন বিজেপিকে। এইসব খবর আই. বি মারফৎ প্রধানমন্ত্রী হয়তো পেয়ে গেছেন। এছাড়াও পূর্ব-মেদিনীপুরে বামেদের ইউনিয়নে কিছু লোক আছে এখনও। শিল্পাঞ্চল বলে কথা। নন্দীগ্রাম, সুশান্ত ঘোষ, লক্ষ্মণ শেঠ অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে ওখানে। তা ছাড়া বাজপেয়ী সরকারের আমলে, তাদের প্রতিনিধি এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্দিনে, পশ্চিম মেদিনীপুরে। চমকাইতলা, খেজুরি, কেশপুর, নেতাই এইসব নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আছে। বিজেপি ও স্বরাষ্ট্রদপ্তরের কাছে সেইসব অজানা নয়। বিশেষ করে একসময় দুর্দিনে কেশপুরে তাদের বেশ ভালো সমর্থক ছিল। এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল তাই প্রধানমন্ত্রী ছাড়তে চাননি এখানে। তা ছাড়া সিপিএম ও বামেদের কাছে বারবার সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছে, আপনাদের প্রধান শত্রু কারা। সর্বাগ্রে বামেরা নির্দ্ধিধায় জানিয়েছে প্রধান শত্রু তাদের কাছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি। তারা যে সুকৌশলে তাও বলেছেন যে তারা সংখ্যালঘু ও মুসলিমদের সঙ্গে আছেন। একসময় গ্রামের আদিবাসী ভোট তাদের একচেটিয়া ছিল, সঙ্গে ছিল মুসলিম ভোট। কিন্তু বিজেপি সেখানে আদিবাসীদের মধ্যে বেশ ভালো রকম সংগঠন গড়ে ফেলেছে। দুই-মেদিনীপুরে আদিবাসী ও হিন্দুভোট ঘরে তুলতে পারলে এখন বিজেপিকে আর ঠেকায় কে। ইতিমধ্যে বেশকিছু বামপন্থী নীচুতলার কর্মী শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে নীচুতলায় আর কোনও দল ভয় দেখিয়ে দলবদল করতে পারবে না। তা ছাড়া বামপন্থী ও সিপিএমের যে সকল ছোট ছোট সভা হচ্ছে সেখানে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যত বলছেন তার থেকে বেশি বলছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। হয়তো সারা ভারতে
এটাই বামেদের পার্টিলাইন। ইতিমধ্যে তারা দেখেছে, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, পঞ্জাব ও বিহারে
এই লাইন তাদের কাজে এসেছে। এখন পশ্চিমবঙ্গে সেই লাইন থেকে তারা সরে আসতেও পারেন না।

•ওদিকে যেহেতু কংগ্রেসের ঘর ভেঙেই তৃণমূল কংগ্রেসের বাড়বাড়ন্ত তাই অধীর চৌধুরী আবার বলেছেন দুদিকেই। কিন্তু কেন্দ্রীয়স্তরে বিজেপির আবার প্রধান শত্রু কংগ্রেস। শুভেন্দুকে খুব বেশি
আক্রমণ বর্তমানে না করলেও তৃণমূলে থাকার সময় ২০০৬-এ অধীর শুভেন্দুর বাকযুদ্ধে তপ্ত ছিল মুর্শিদাবাদ। অধীর চৌধুরী শুভেন্দুকে কুকুর ও নিজেকে হাতির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু শুভেন্দুর বেরিয়ে আসার পর অধীর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান শুভেন্দুকে তেমন আক্রমণ করেননি বলে কে বা কারা মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীর নামে পোস্টার দিয়েছে। অধীরকে সেখানে ভোট দিতে বলছে হাতের মাঝে পদ্মফুল
এই যুগ্ম চিহ্নে। কংগ্রেসের ছেলেরা সেইসব অনামা পোস্টার ছিঁড়ে দিয়েছে।

•কিন্তু বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশে বেশ বুঝতে পারছে আর তাই তিনদিকে আক্রমণ শানালে তাদের আক্রমণ যে ভোঁতা হয়ে যেতে পারে, তাই এখানে তারা কংগ্রেসকে কোনও আক্রমণ করছে না। অবশ্যই দিলীপ ঘোষ একা হলেও জনতার কাছে কিছুটা নিন্দিত হলেও, বিজেপির লড়াকু নেতা হিসেবে তিনি সম্মানিত। বরং বিজেপির প্রাদেশিক নেতাদের মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ যে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিজেপিতে আছে তারা কিন্তু তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। দিলীপ ঘোষকে ব্যানারে সম্মানের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন জোনে তারা ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছেন। সভাগুলোতে এখন পর্যন্ত জনসমাগম দারুণ। উপচে পড়ছে। ইতিমধ্যে বিজেপির জনসমাগমে বাইরে থেকে না এনেও মাঠ উপচে যাচ্ছে। ২০/২৫ কিমির মধ্য থেকেই তাদের ফলোয়াররা সভায় যোগ দিচ্ছেন। তাদের কাছে সরকারের ঠেস নেই, পুলিশ নেই, পরিকাঠামো নেই তবুও তাদের সভাগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে এবং ম্যানেজমেন্টে পাশ করে চলেছে। ( যদিও মঞ্চের ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত খারাপ) যদিও জনমত বাড়াতে গিয়ে জনতাকে কন্ট্রোল করা শিখতে পারেনি ( ভিক্টোরিয়া কান্ড ও মঞ্চে জনগণ গাওয়া) তবুও ইতিমধ্যে হুগলী, মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ায় জেতার মতো মাটি যথেষ্ট তৈরি করে ফেলেছেন তারা। ১/২ ভাগ মুসলিম ভোটেও অল্প বিস্তর ভাগ বসাতেন পারেন এখন। পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, নদীয়ায় ইতিমধ্যে বিজেপি, অ্যাসিড টেস্টে পাশ হয়ে গেছে। হাওড়ার গ্রামে গ্রামে বিজেপির ঝান্ডা এখন বেশ দেখা যাচ্ছে।
এখন দেখা যাচ্ছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভালো বলতে পারেন এবং হাওড়ায় তার বাবা-কাকার প্রচুর গুণগ্রাহী আছেন এবং ভদ্রলোক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। কাউকে অসম্মাণ করে কথা বলেন না। হাওড়ার গ্রাম শহরে বিজেপির এত তাড়াতাড়ি যে উত্থান হবে
তা বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের জানা ছিল না। এখন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সব খবর রাখছেন এবং বামেদের পূর্ব প্রসঙ্গ তুলে অল্প কথায় তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন, হলদিয়াতে। বিশেষ করে বুথের মধ্যে বামেদের ভূমিকা পঞ্চায়েত নির্বাচনে অন্যরকম হয়েছিল। তাই স্পষ্ট বার্তা বামেদের কাছে। অবশ্য এতে করে বামেদের নীতি পাল্টানোর অবকাশ কোনও থাকেনা। এখন দেখার বাস্তবে বামেদের আচরণ কি হয় ? সত্যি কি তারা প্রধানমন্ত্রীর উসকে দেওয়া প্রসঙ্গকে হুবহু মিলিয়ে দেবেন না কি তারা তাদের নীতিতে অকাট্য থাকবেন এবং ২০২৬ এ আবার ফিরে আসার জন্য মাটি তৈরি করে নেবেন, এই একুশে। একুশের নির্বাচন তাই বামেদের কাছে পরীক্ষাগার ও আত্মসমীক্ষার জায়গা ? উল্লেখ্য যদিও বামেদের আমলেই এই রাজ্যের বেকারদের সবচেয়ে বেশি চাকরি হয়েছিল কিন্তু তাদের অন্যান্য নীতি তাদেরকে পিছিয়ে দিয়েছিল। এখন নতুন করে এখন বেকারত্ব কম করার জন্য তাদের হাতে কোনও অস্ত্র কাছে নেই। কারণ তাদের সরকার যে আসবেই এর কোনও গ্যারান্টিও নেই তাদের ঝুলিতে। কারণ লোকে বলছে তাদের প্রধান শত্রু তৃণমূল কংগ্রেস নয়। সকলে সত্যিই সেটাই দেখছেন কিনা তা অবশ্য প্রমাণিত নয়। এখনও আদাজল খেয়ে লড়াইয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ভোটের । ঢের দূরে নির্বাচন। তারা বরং নির্বাচনী প্রচারে যথেষ্ট পিছিয়ে আছেন। যদিও বামেদের মূল বক্তব্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারকে হঠাতে খুবই কার্যকরী। গ্যাসের দাম বাড়ছে কেন, রাষ্টায়াত্ব সংস্থাকে প্রাইভেট সেক্টরে দেওয়া যাবেনা, সম্প্রীতির ক্ষেত্রে ও ধর্মীয় মৌলবাদী ক্ষেত্রে বিজেপি দল হিসেবে বিপজ্জন। বিজেপির রাজত্বকালে জিনিসের দাম উর্দ্ধ্বমুখী ও কৃষি আইন বাতিল আবশ্যক। এখন দেখার নির্বাচনে জেতার জন্য তাদের প্রচার কতখানি
আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। 🎯 ©® অলোক কুন্ডু

শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

কৃষি আইনের সামাজিক নিষ্পত্তি হোক: অলোক কুন্ডু

🎯 আচ্ছা এখনও আমার মাথায় ঢোকেনি, সত্যিই কৃষকরা সৎ ভাবে না ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি জেদের বশে এই কৃষি আন্দোলন করে চলেছেন। একবছর আইন অনুসারে যদি কাজ ওনারা করতে দিতেন, তখন যদি ওনারা বলতে পারতন, দেখলেন তো আমরা গতকাল যা বলেছিলাম, তা আজ সঠিক হলো। তাহলে মনে হয় সারা দেশকে তারা পাশে পেতেন। এর সঙ্গে জিনিসের দাম ওঠাপড়া তো জড়িত, তাই না ? সাধারণ মানুষরা বুঝতেই পারছে না কেন এতদিন ধরে ধর্ণা চলছে। আইনটা যে ফালতু তা তো প্রমাণ করা দরকার। তা না করতে দেওয়াটাও ঠিক নয়। সারা দেশ তাহলে এখনও মানতে পারেনি কেন। এর পেছনে শুধুমাত্র যে রাজনীতি নেই, এটা কে বোঝাবেন ? এই শীতে কৃষকদের কষ্ট যে হচ্ছে তা সকলেই বুঝছেন। সবথেকে ভালো হোতো কৃষি আইনের প্রতিটি ক্লজ ধরে ধরে কৃষি আন্দোলনকারীরা তার উত্তর দিতেন, লিখতেন। তাতে যারা সমর্থন করছেন সকলে স্বাক্ষর করতেন। সেইসব প্রশ্ন-উত্তরগুলি যদি ছেপে বই করে সরকারের পয়সায় ছাপিয়ে প্রতি বাড়িতে বিতরণ করা হোতো, তবে সবাই পড়ে দেখতে পারতেন। আমরা দুটোই পড়ে দেখতাম। তন্নতন্ন করে লিখুন আপনারা। দায় যদি শুধু কৃষকদের হয়, তবে তারাই বই ছাপিয়ে বিতরণ করুন। প্রতিটি ক্লজ এবং সাবক্লজের প্রশ্ন এবং উত্তর তৈরি করে জনগণকে পড়তে দিন। পড়ার পর ওই বই অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপে ভোট নিন সকলের কাছে থেকে। যাদের হোয়াটসঅ্যাপ নেই তারা বুথে গিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভোট দিন। একটা পথে তো সকলকে যেতে হবে। ছয়মাস আন্দোলন ও আইন দুটোই বন্ধ থাকে। আমি একজন যুক্তিবাদী হিসেবে নিজেকে দেখি। তাই যুক্তিযুক্ত কারণ সামনে রাখুন। অবশ্যই কৃষকদের সমর্থন করবো যদি বুঝি সরকারের দোষ। এখন যা হচ্ছে তা সেই কারণে সমর্থন করার মন চাইলেও পারছি না। কোথাও একটা
চোর-পুলিশ খেলা চলছে। যা জনগণ ধরতে পারছে না। ©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...