শনিবার, ৪ জুন, ২০২২

কে কে অক্সিজেন নিলে বেঁচে যেতেন/ অলোক কুন্ডু

২৯/৭/২০১৯-এ লিখেছিলাম। সমতলেও সকলের এই লেখা পড়া উচিত। শিল্পীদের মঞ্চে ওঠার আগে অক্সিজেন নেওয়া উচিত।

গাছপালাহীন উচ্চতম স্থানে অক্সিজেনের প্রভাব
©® অলোক কুন্ডু 

উচ্চতা ১৭,০০০ কিংবা ১৮,০০০ উঠে শ্বাস নিতে
কষ্ট না হলে ভালো কিন্তু লাদাখের লে-তে ১১,০০০ -এ উঠে সব থেকে সমস্যায় পড়েন
সাধারণ মানুষ । হোমিওপ্যাথি কোকা-৬ থেকে
পর্যাপ্ত অক্সিজেন যে পাওয়া যায় এবং সেই অক্সিজেন যে শরীরে সাতদিন স্টে করানো যায়
এরকম অকাট্য প্রমাণ নেই (একমাস আগে থাকতে খেলেও যে এর উপকার পাওয়া যাবে তার কোনও ঠিক ঠিকানা নেই ) ,তবু যারা হিমালয়ে যান তারা বিশ্বাস করেন এবং প্রতিদিন দু-তিনবার কোকা-৬ খান । এই পর্যন্ত সব
ঠিক আছে । কিন্তু লাদাখের (লে ) সরকারি হাসপাতালের ট্যুরিস্ট ওয়ার্ডে ঘন্টায় ঘন্টায় অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়ে যে সমস্ত যুবক থেকে বুড়ো ভর্তি যারা হয়ে থাকেন তারাও নিয়মিত কোকা-৬ খেয়ে আসছিলেন বেশ কয়েকদিন , কিন্তু কোকা-সিক্স নয় অক্সিজেন থেরাপিই যে একমাত্র ওষুধ এটা প্রমাণিত হয়ে যায় হাসপাতালের ওই ১ থেকে ৯ নম্বর বেডে যারা
এসে সুস্থ হয়ে ফিরে যান । আমাকে সমতলে 
যে কখন‌ও কোনও ডাক্তার অক্সিজেন
মাপিয়েছে এরকম অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই ।
আসলে এখানকার বড় বড় ডাক্তাররাও তা জানেন না যে প্রতিটি রোগীর অক্সিজেন লেভেল মাঝেমধ্যে মাপা দরকার এমনকি সমতলেও । 
এই দরকারি বিদ্যা সমতলের ডাক্তারদের এত অজানা কেন তার কোনও কারণ দেখিনা । 
এটা এখন জেনেছি বলে আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগছে এই জেনে যে এখানকার কোনও ডাক্তারের কাছে মানব শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপার সামান্য যন্ত্রটি থাকেনা , অথচ আপনি লাদাখের ওপিডিতে গেলে আগে আপনার অক্সিজেন লেভেল সবার আগে 
মাপবেই মাপবে । তারপর তার অন্য চিকিৎসা । আপনি এই অবধি পড়ে স্বাভাবিকভাবেই 
বলবেন এখানে দরকার পড়েনা তাই । তাহলে আমার উত্তর হলো এটাই আমাদের কাছে একটা মারাত্মক ফল্ট অথবা অজ্ঞতা । সমতলেও এই লেভেল মাপা অত্যন্ত আবশ্যিক। রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কম হলে প্রথমত
মানুষের ঘুম আসেনা , রাতের পর রাত জেগে কাটাতে হয় । তাই সমতলেও লাদাখের মতো
অক্সিজেন থেরাপির ব্যবস্থা একান্ত আবশ্যিক ।
প্রথমত রক্তের কোনও ঘাটতি থাকলে অক্সিজেন
বহন শরীরে কম হয় কিন্তু মাসে একবার দুবার
চার/পাঁচ ঘন্টা অক্সিজেন থেরাপি নিলে একটা
মানুষের কী কী উপকার হয় সেটা জানা দরকার
(১) মানুষটার হার্টের অসুখ হ‌ওয়ার চান্স অনেকটা কমে যায় (২) ভালো ঘুম হয় (৩) অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য যাদের সর্দিকাশি লেগেই থাকে সেই থেকে সে নিস্কৃতি পায় , বয়স্কদের নিউমোনিয়া হ‌ওয়াটা থেকে অনেকটা বাঁচানো যায় । (৪) শরীরে একটা তাজা ভাব আসে। এখন আপনি বলতেই পারেন সকালে মর্নিং ওয়াক করলে শরীরে অক্সিজেন যায় ।
কিন্তু নেড়া জায়গায় ভোরে উঠে যতই দৌড়াদৌড়ি করেন না কেন কিছুতেই অক্সিজেন আপনি আয়ত্ত করতে পারবেন না বড় জোর আপনার ফিটনেস বাড়বে কিন্তু হাজার দৌড়ঝাঁপ করা মানুষের শরীর যদি অক্সিজেন ঠিকমতো বহন করতে অপারগ হয় তখন তার ফিটনেস কোনও কাজে আসবে না । যেমন ধরা যাক রক্তে শর্করা বা সুগার থাকলে অক্সিজেনের পরিমাণ বহন শরীর ঠিকমতো করতে পারবে না । এইসঙ্গে যদি
লিভার-প্যানক্রিয়াস কমজোরি হয় তবে ফ্যাট
ও প্রোটিন সেই ব্যক্তি উপযুক্ত পরিমাণে নিতে
পারবে না এবং তাই শরীরে অক্সিজেন প্রবাহিত
কম হবে । মোদ্দাকথা রক্ত কমজোরি হলে অক্সিজেন শরীরে কম যাবে । ৭৫ % অক্সিজেন
শরীরে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যক্তির জীবনে নানা
অসুখ এসে পড়তে পারে । ৮০ থাকাটা অত্যন্ত
প্রয়োজনীও । এই অক্সিজেন লেভেল বলে দেয় মানুষের সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া, হার্টের প্রবলেম ও ঘুমের ব্যাঘাত হয় কি না ? এখন স্থানীয় কোনও ডাক্তারকে ঘুম হয়না বললে তিনি এক সপ্তাহের একটা অ্যালজোলাম কোর্স করাবেন কিন্তু জীবনে বলবে না অক্সিজেন মাপার কথা । যাদের অক্সিজেনের দুর্বলতা আছে তাদের খাওয়াদাওয়াতে নজর দিতে হবে । সপ্তাহে তিন
দিন কলা ডিম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে ।
কিন্তু যদি এর মধ্যে কার‌ও সুগার থাকে তবে তিনিও এই পুষ্টিকর খাবার খাবেন এবং সপ্তাহে
একবার সুগার টেষ্ট করে দেখে নেবেন । 
লাদাখে যারা প্রথম দিন যান তাদের হোটেলের
ঘরে চুপচাপ বসে আরাম করতে বলা হয় এই
কারণে যে , চারপাশের আবহাওয়ার সঙ্গে তার
শরীরকে মানিয়ে নিতে হয় তবুও বহু মানুষের কোনও কিছুই উপলব্ধি হয়না । মনে রাখতে হবে ১১,০০০ ফুট উচ্চতা লাদাখের , যেখানে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে তেমন বনসৃজন হয়নি । একে শীতল মরুভূমি তার ওপর উচ্চতা এবং পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় অক্সিজেনের সমূহ অভাবের মুখে গিয়ে পড়তে হয় সমতলের মানুষকে এবং কলকাতার চিকিৎসকদের সে বিষয়ে কোনও সচেতন করার প্রবণতা নেই 
এবং  বাংলার চিকিৎসকমহল খানিকটা অচেতন বলাই যায় । চিকিৎসকরা শুধু জানেন সুগার লেভেল কমাবাড়ার উপর অক্সিজেনের প্রভাব পড়তে পারে । বড় জোর এক সপ্তাহের ডায়োমক্সের
একটি কোর্স করতে বলেন । এখানে বলে রাখা
দরকার অক্সিমিটার মেশিনে অক্সিজেন সহজে
মাপা যায় । হ্যান্ডি মিনি অক্সিমিটার দিয়েও মাপা যায় আবার সামান্য বড় মিটার দিয়েও মাপা যায় । তবে ABG পদ্ধতিতে মাপতে গেলে রিস্টের কাছে ধমনী থেকে রক্ত নিয়ে মাপতে হয় । তবে
লে-তে এক কেজি ওজনের অক্সিমিটারেই শরীরের অক্সিজেন মাপতে দেখেছি । পকেটে
রাখা যায় অক্সিমিটার‌ও পাওয়া যায় । পরীক্ষার
সময় লাদাখে ৬০% বা তার কম অক্সিজেন শরীরে থাকলে অক্সিজেন থেরাপিতে মিনিমাম ১২ ঘন্টা
মানুষটিকে রাখতেই হবে । শরীরে সুগারের সমস্যা
না থাকলে একটা ডেক্সোরেঞ্জ ইঞ্জেকশন করে
ছেড়ে দেওয়া যায় যদি অক্সিজেন লেভেল থাকে
লাদাখে ৭০% কম । তবে ডায়ামক্স খেলে ( প্রতিদিন
২টি খাবার পর তিন দিনের কোর্স ) শরীরের নানা
স্থানে চুলকানি বের হতে পারে কোনও কোনও
ক্ষেত্রে । ৮০% অক্সিজেন লেভেল লাদাখে ( Good) 
থাকলেও কিছু অসুবিধা প্রথমদিন লাদাখে
দেখা দিতে পারে । যেমন ঘুম হবেনা , লুজ মোশান হবে , ঘাড় ব্যাথা করবে । এটা হল কমন
ম্যাটার । এছাড়াও যদি বমি হয় , বুকে সর্দি 
বসে যায় , জ্বর হয় ও হাত মুখ পা ফুলে যায়
তাহলে বুঝতে হবে রক্ত অক্সিজেন প্রবাহিত করতে পারছে না । সোজা হাসপাতালে যেতে
হবে । না শুয়ে না ঘুমিয়ে বসে বসে মুখে মাস্ক
লাগিয়ে সরাসরি ন্যাচরাল ভাবে অক্সিজেন
থেরাপির সাহায্য নিতে হবে । বেডে ২০০/-টাকা বেড ভাড়া দিয়ে ভালো একটা ব্যবস্থাপনার 
মধ্যে অবজারভেশনে কাটাতে হবে । এখানে
চারঘন্টা অন্তর অক্সিজেন রিমুভ করে আধঘন্টার
বিশ্রাম দিয়ে মাপা হবে দিনে দুবার চিকিৎসকের
পরামর্শ পাওয়া যাবে । বুকে সর্দি বসে না গেলে ১২-১৮ ঘন্টার অক্সিজেন কোর্স করলেই
অক্সিজেন লেভেল ৮৫-৮৮ লাদাখে, দাঁড়িয়ে যায় । সঙ্গে
ডায়মক্স ওষুধ দিনে দুবার ও দিনে চার /পাঁচ লিটার জল পান করতে হবে এবং ডিম কলা 
রুটি প্রোটিনেক্স ,হরলিক্স এক‌ই সঙ্গে খেয়ে 
যেতে হবে । মোদ্দাকথা লাদাখ যাওয়ার আগে 
কোকা-৬ নয় আপনাকে হিমগ্লোবিন পরীক্ষা করাতে হবে । এক সপ্তাহ আগে থেকে একটা
ডেক্সোরেঞ্জ ক্যাপসুলের কোর্স দিনে দুবার খাওয়ার পর খেয়ে যেতে হবে যতদিন না লাদাখ
ছেড়ে চলে আসছেন । অক্সিজেন বৃদ্ধির সঙ্গে
ডেক্সোরেঞ্জের একমাত্র সম্পর্ক । রক্তাল্পতা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে ডেক্সোরেঞ্জ ইঞ্জেকশন নিয়ে লাদাখ যান আর‌ও সমস্যা হলে হ্যান্ডি অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে নিতে হবে , লেতে
ওষুধের দোকানে পাওয়া যায় । পথে খারদুঙলা
(১৮,৩৮০) পাশে যদি অক্সিজেনের ঘাটতি হয় তবে কোনও চিন্তা নেই ওখানে মিলিটারিরা পারলে সারারাত সেবা দিতে তৈরি থাকেন । গাড়িতে বসে না থেকে মিলিটারিদের সাহায্য
নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ । তবে অক্সিজেন ঘাটতির ভয়ে ট্যুর ক্যানসেল করে দেওয়ার কোনও মানে হয়না । চারশো টাকায় পর্যন্ত
হ্যান্ডি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে পাওয়া যায়
তাও সঙ্গে নেওয়া যায় । মাঝারি অক্সিজেন সিলিন্ডার বহন কোনও ভয়ের ব্যাপার নয় ।
তাই ঘন্টা ১০/১২ অক্সিজেন নিয়েই বিভিন্ন 
ট্যুর পার্টি তাদের সদস্যদের হাসপাতাল
থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সঙ্গে সিলিন্ডার ভাড়া 
করে নিয়ে বেশ ঘুরে আসেন । লাদাখে অক্সিজেনের ঘাটতি কোনও সমস্যা নয় । 
বরং যদি সিসটেমগুলো জানা থাকে
তবে দ্রুত হাসপাতালে অ্যাডমিশন করানো 
বুদ্ধিমানের কাজ । ট্যুরিস্টকে ভয় দেখালে তাকে
অক্সিজেন আর‌ও পেয়ে বসে তাই অনেক মানুষ
ভীতির শিকার হয়ে যান । আমি বলবো লাদাখ
যাওয়ার আগে ১৫ দিন আগে থেকে ডিম সিদ্ধ,
কলা ও প্রোটিনেক্স খান । সপ্তাহে দুদিন
চিকেন-স্ট্রু দুপুরে একটু ফল , লেবু ,খেঁজুর,
বাদাম ছোলা ভিজিয়ে খান পরিমাণ মতো 
যতটা আপনি নিতে পারেন । সঙ্গে ডেক্সোরেঞ্জ
বা এইসব খাবারের প্রকোপ যাতে লিভারে না
পড়ে তার জন্য সরবিলিন সিরাপ দুবার খেলে
আপনার লাদাখে আপনি তরতাজা থাকতে পারবেন ( লাদাকে যাওয়ার পর সরবিলিন ছাড়তে হবে কারণ ওখানে গেলে পেট লুজ এমনিতেই থাকবে তাই সরবিলিন আর‌ও লুজ করাতে পারে তাই এটাও নিজের শরীরের মতো করে ব্যবহার করা উচিত)কিন্তু সমতলে এসে অক্সিজেন থেরাপি
সম্পর্কে সরকারের ভাবনা কী এটা আরটিআই
করে জেনে নিলে ভালো হয় --অলোক কুন্ডু ।

পুনশ্চঃ কতকগুলি অক্সিজেন ঘাটতির সিমটম 
কমন সিমটম (১) মাথা ও ঘাড় ব্যথা (২) ঘুম
না আসতে চাওয়া (৩) হঠাৎ পায়খানার প্রকোপ (৪) কান ভো ভো করা (৫) নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ 
এছাড়া অন্যান্য সিমটম : (১) চোখের নীচ ফুলে যাবে (২) হাতের আঙুল পায়ের পাতা
ও মুখ ফুলে যাওয়া (৩) হঠাৎ জ্বর, সর্দি (৪)
শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে । (৪) কানে আগে
থেকে কোনও ইনফেকশন থাকলে রস গড়াবে ।
পরীক্ষা : অক্সি মিটার দিয়ে পরীক্ষার সময়
জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হয় । বসে পিঠ সোজা করে পরীক্ষা করা উচিত । তর্জনীতে অক্সিমিটার ক্লীপের মতো এঁটে দেওয়া হয়।কিন্তু আঙ্গুল পরিষ্কার করে নেলপলিশ তুলে পরীক্ষা করার নিয়ম ।

কে কে-র অটোপসি রিপোর্ট কি সঠিক/ অলোক কুন্ডু

কে.কে-র অটোপসি রিপোর্টের বিপক্ষে আমার প্রশ্নপত্র
১. কারও ৭০% ফ্যাট জমে থাকলে সে অত লম্ফঝম্ফ করে গান করতে পারতেন কি। 
২. গান কি মুখ দিয়ে গাওয়া হয় চিকিৎসককূলের কাছে আমার সবিনয় প্রশ্ন। 
৩.চিকিৎসকদল যদি বলেন কৃতজ্ঞ থাকি, একঘন্টা যিনি শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গজুড়ে একটার পর একটা গান গেয়েছিলেন তার কি সহজে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে ?
৪.যদি অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছিল। হৃদযন্ত্রের অসুখ থাকলে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে এই দোষ শিল্পীর হৃদযন্ত্রের না কি যারা অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি করেছিল ?
৫. কলেজের ছেলেরা হোটেলে গিয়ে একঘন্টা ধরে কেন সেল্ফি তুলতে গেল ?
৬. কে কে যখন ব্যাক স্টেজে প্র্যাকটিস করছিল এবং এক দৌড়ে দশ ফুট উঁচু মঞ্চে গিয়ে উঠলো এবং গান শুরু করে অভিবাদন নিল তখন তো একেবারে তরতাজা
এইরকম কেউ কি ইতিপূর্বে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতে পারেন।
৭.যে ব্যক্তি তিনঘন্টা পরে মারা যাবেন তিনি বাপের জন্মে কখনও ওইরকম পারফরম্যান্স করতে পারেন। তা যদি হতো তো সঙ্গে সঙ্গে হোতো এবং মঞ্চের মধ্যেই তো হওয়ার কথা। সাডেন হতে পারে ?
৮. হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ কি বলছেন ? তার হৃদরোগ হয়তো ছিলই কিন্তু যে ব্যক্তি অত লম্ফঝম্ফ করতে পারেন তার কীভাবে ৭০% ফ্যাট হয়। তিনি তো চলাফেরা করতেই পারবেন না। ৭০% ফ্যাট কি তবে সবটাই চিকিৎসকদের বানানো। ভাববার বিষয় কিন্তু।
৯. অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য শরীরে খিঁচুনি ধরতে পারে ও শরীরে শীত পেতে পারে কারণ সাডেন নিউমোনিয়া অ্যাট্যাক করতে পারে অক্সিজেন কমে গেলে। ( লাদাখে গিয়ে যাদের অক্সিজেন কমে যায় তাদের সঙ্গে সঙ্গে বিনা ঠান্ডাতেই নিউমোনিয়া ধরে নেয়।  এটা ওখানকার চিকিৎসকদের কাছ থেকে জেনে ছিলাম)
১০. এখন শিল্পী নিজের দোষে মারা গেলেন নাকি অক্সিজেন শ‍রীর নিতে না পারার জন্য মারা গেলেন।
১১. একজন ৭০% হার্ট ব্লকেজ রোগী কখনও বাপের জন্মে দৌড়তে পারবেন না। এই বিষয়টা চিকিৎসা শাস্ত্রে কি বলছে যদি ডাক্তারবাবুরা খোলশা করে বলেন।
১২. ফ্যাটি হার্ট নিয়ে বহুজন মারা গেছেন ইতিমধ্যে কিন্তু যিনি লাফালাফি করছেন এবং উদারা মুদারা তারার সাহায্য নিয়ে শরীরের অভ্যন্তর থেকে এক একটা নিখুঁত সুর স্বর তুলে আনছেন তাঁর কীভাবে ৭০% ফ্যাট জমে। 
১৩. গানের শুরুতে যিনি তরতাজা ছিলেন, যত সময় গড়িয়েছে তত কে.কে নিস্তেজ হতে শুরু করলেন। হার্টের সমস্যা হলে উনি তো গাইতেই পারতেন না। বলতেন আজ একটু আস্তে গাইবো আপনারা সহযোগিতা করুন। 
১৪. চিকিৎসকরা আপনারা যদি সন্দেহজনক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন তাহলে আমরা যাই কোথায়। মেনে নেওয়া ছাড়া তো করার কিছু থাকেনা। 
©® অলোক কুন্ডু

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

কে কে বাংলা তোমাকে নিশ্চিত মনে রাখবে

কপিলের শোয়ে এসে কপিলের মস্করার জবাবে কে.কে জানিয়েছিলেন তার নামকে ক্ষুদ্রতম দুটি অক্ষরে সীমাবদ্ধতায় কেন তিনি বেঁধে ছিলেন। কপিলের শোয়ে অনেক হাসিমস্করা হয়। ভীষণ একটা ভালো প্রোগ্রাম
এই টিভি শোটিতে হয়ে থাকে। কিন্তু কপিল কখনও কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে হাত রেখে ইয়ার্কি খুব একটা করেনা। ব্যতিক্রম কে কে। এত সরলতা মাখা মুখ যেন কোনও নাক উঁচু ভাব তার মধ্যে থাকতে একদমই নেই।
তার মধ্যে যেন আড়ালের মগডাল নেই। সেলিব্রেটির ছুঁতমার্গ নেই কোনও। তাই হয়তো গান গাইতে গাইতে যখন তিনি অস্বস্তি বোধ করছেন, তার শরীর বিপন্ন মনে হয়েছে তখন তিনি জল খেয়ে ঘাম মুছে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন নিজেকে, ম্যানেজ করেছেন নিজেকে নিজেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ভক্ত থেকে উদ্যোক্তা কাউকেই তিনি ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে চাননি।  আসলে এই গুণাবলী সকলের থাকেনা। তার ওপর তার ছিল মার্জিত ব্যবহার। হয়তো এইরকম বড় পেমেন্টের প্রোগ্রামে এসে তাদের কিছু ফিরিয়ে দিতেও তিনি চেয়েছিলেন। নব্বইয়ের ছেলেমেয়েরাই তো তার বিশেষ গুণগ্রাহী, তাদের আব্দার অনুরোধের বন্যায় কতবার তো ভেসে বেড়িয়েছেন তিনি। আসলে মানুষটার মধ্যে কর্তব্যবোধ, একটা যেন ঋণী হয়ে থাকার কুন্ঠাবোধ বড় বিষয় ছিল। ভক্তদের কাছে তাদের মনোরঞ্জনের দাবী যে থাকে তাকে তিনি অপূর্ণ রেখে কখনোই চলে যেতে চাননি। পয়সা উসুল নয়, তাদের মনোবাঞ্ঝা পূরণ করতে তাকে হবেই, এই নাছোড়বান্দা মনোভাব তাকে উজ্জীবিত করেছে সন্দেহ নাই। তার এই কনর্সাটের পাওয়ারফুল শো-কে তাই তিনি তুঙ্গে নিয়ে গেছেন। জানতেন না এত লোক হবে। আবার হলে ঢোকার মুখে তিনি এত সংখ্যায় বিপুল ছাত্রদের উপচেপড়া ভিড় দেখে গাড়ি থেকে নামতেও চাননি। তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কি তবে বুঝতে পেরেছিল আজ এখানে ভয় আছে। বড় শিল্পীরা সঙ্গে লোকলস্কর নিয়ে পথে ঘোরেন। সঙ্গে থাকে তাবড় তাবড় শরীরের লোকজন। এইসব কেকে-র সঙ্গে ছিলনা একদম। দমদম বিমানবন্দরে নামার সময় কোনও ভিড়ের সামনাসামনি তাকে হতে হয়নি। ভক্তদের উন্মাদনায় তাকে পড়তে হয়নি। হোটেলে এসে নিজের গানের চর্চা করেছেন, সময়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন নজরুল মঞ্চে। ভেবেছিলেন রাজ্য সরকারের হল, সেখানে সমস্ত ব্যবস্থাপনা দারুণ থাকবে। কোনও কিছুই গাঁয়ের মতো নয়-- এই নজরুল মঞ্চ। এক সময়ে কলকাতা ও মফস্বলের বিশাল বিশাল মাঠে মহম্মদ রফি থেকে কিশোর লতাকে সামলে দিয়েছে উদ্যোক্তারা। বহুকালের সংস্কৃতির জায়গা। কিন্তু যে আশাবাদী হয়ে এসেছিলেন তা তাসের ঘরের মতো এমন যে ভেঙে পড়তে পারে, তা কখনও তিনি ভাবেননি হয়তো। অত প্রবল ভিড়কে তাই প্রাথমিক ভাবে ম্যানেজ করতে চেয়েছিলেন গানের প্লাবন দিয়ে। উপচে পড়া ভিড়কে সামাল দিতে এবং তাদের মন জয় করার বাসনা তখন তাকে তন্ময় করে রেখেছিল শুধুমাত্র এমনটা নয়। গানের তালিকা ও অনুরোধগুলি তাকে শেষ করতেও তো হবে। শিল্পী যে একজন মানুষ তার যে ভেতর ভেতর টেনশন হয় তা আর কবে কে জানতে চেয়েছে। টেনশন মুক্ত হতে তাই নিজেকে যতদূর পেরেছেন উদ্দাম করেছেন। চূড়ান্ত স্থানে এমন করে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন যাতে চিরকাল তাকে মনে রাখে, কলকাতা।
সারা পৃথিবীজুড়ে এর থেকে বড় বড় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন। সব সামলে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু বুঝতে পারেননি কলকাতাতেই হবে তার শেষ কনসার্ট। চোখের জলে সাজানো গানগুলো যে তার মৃত্যুর পরেও সারা কলকাতার নিস্প্রদীপ ঘরে ঘরে একদা বেজে উঠবে, স্বপ্নেও কখনও ভাবেননি। তিনি ফাঁকি দিতে চাননি। কোনও ফাঁকি দেওয়া তার পক্ষে সম্ভবও ছিলনা সেদিন। তিনি ভাবেননি কলকাতার কনর্সাটে তার জন্য আর এক ডবল " কে অক্ষর" এমন ভাবে লুকিয়ে আছে যা তার নামের মধ্যেই বিদ্যমান। মঙ্গলবার গভীর রাতে কলকাতার নজরুল মঞ্চের কলঙ্কিত কনসার্টের পরই যে তিনি হঠাৎ করে মারা যাবেন একথা সেদিন কেউই ভাবেননি। কিন্তু ভেবেছিলেন বুঝি অন্তর্জামী। কি অব্যবস্থাপনার মধ্যে তাকে গাইতে হয়েছিল তার পরবর্তীতে প্রকাশিত ভিডিওগুলি দেখে সকলে আঁতকে উঠছেন। একটা অতিরিক্ত বিশৃঙ্খলা বললেও ভুল হবে।
গড়িয়াহাটের মৌচাক থেকে থিক থিক করছে ভিড়। হলের সামনে চলছে ধস্তাধস্তি, ইঁট-পাটকেল ছোঁড়া। হলের ভেতর ফায়ারএস্টেটুইঙ্গারের ধোঁয়া, প্রায় ৭ হাজার ফোন থেকে ভিডিও হওয়ার সময় যে তাপ বিকিরণ হয় তার একটা প্রবল অস্বাস্থ্যকর শক্তি। এ.সি নিভিয়ে দেওয়া, হাজার হাজার ওয়ার্ডের দৈত্যাকার লাইটের ঝনঝনানি যা শিল্পীর শারীরিক অস্বস্তি বাড়িয়ে ছিল শতগুণ। স্টেজের চারিদিক ও হলের সমস্ত মেঝে ভর্তি করে যুবক যুবতীদের বসে থাকা, উইং ঘিরে শতশত ছেলেমেয়েদের দাঁড়িয়ে থাকা। এইসব তো ছিল। তার সঙ্গে ছিল ছেলেমেয়েরা এপাশ ওপাশ দিয়ে ঢুকে পড়তে চাইছে, চরম অব্যবস্থাপনা। এইসব থেকে কখন বেরিয়ে যাবেন তাই শিল্পীর উদ্বেগের শেষ ছিল না। তার মনের অন্দলমহল মাপতে যাওয়ার কারও তখন ইচ্ছা নেই। এইসব কেউ জানতে চায়নি। একটা চক্রব্যুহে তিনি আটকে পড়েছেন, সম্পূর্ণ তিনি একা। একেবারে একা। ওদিকে সকলে তারা চাইছে আরও চাইছে। বাঙালি আজ লজ্জায় মর্মাহত লজ্জিত। বাঙালিদের মধ্যে যারা সুস্থ তারা সকলেই আজ ভীষণ ক্ষোভে, মর্মবেদনায় চোখের জল ফেলছেন। কে.কের বাড়িতে হয়তো আজ সকাল সকাল আলো নিভে গেছে। দিল দে চুকে সনম সেই কবেই তো দেখে ফেলেছিল বাঙালির এই প্রজন্ম। তবু আজ বন্ধুরা পাঠিয়ে দিচ্ছে পুরনো সেই গানটাও। কেকের গানে গানে হোয়াটসঅ্যাপ ভর্তি হয়ে গেলেও আজ কারও উপর কারও অভিযোগ নেই। নব্বইয়ে বড় হওয়া প্রজন্মের কাছে কেকের এই হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার আফসোসগুলি যেন বুকফাটা কান্নার মতো। কোনও কৈফিয়ত নেই। কৃষ্ণকুমার কুন্নাথকে তার মালয়ালী পিতামাতা যে নামকরণ করেছিলেন, আজ তাকে সংক্ষিপ্ত আকারে কে.কে করেছিল তার গানের জগতের স্টুডিওর প্রোডাকশন হাউস ও কতিপয় উৎসাহী ভক্ত। সত্যি সত্যি যে তার জীবনটাও অতি ক্ষণস্থায়ী হয়ে হঠাৎ কেকে-র মতো ছোট হয়ে যাবে, একটা অনিশ্চয়তা এসে শেষ করে দিয়ে যাবে তারাও তা কেউই জানতো না। 
১৯৬৮ -তে যে দিল্লিতে তার জন্মগ্রহণ ও গায়ক হয়ে ওঠা সেখানে তিনি আর কখনও ফিরতে পারবেন না। কালের বিচার কেন যে এত বেদনাদায়ক হয় কেউ তার উত্তর দেবে না আজ। দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুলে পড়াশোনা করার সময়ও কেউ জানতেন না যে এই ছেলেটাই একদিন বিরাট গায়ক হয়ে উঠবে। কিশোর কুমার এবং সঙ্গীত পরিচালক আর ডি বর্মনের মতো গায়কদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে তাদের মতোই পঞ্চাশের কোঠায় চলে গেলেন এক নিরুদ্দেশের যাত্রী হয়ে। কখনও কোনো সঙ্গীত প্রশিক্ষণ নেননি যে মানুষটি ভবিতব্য তাকে যে একদিন গানের জগতে নিয়ে গিয়ে ফেলবে এবং সেখান থেকেই যে  তিনি একদিন অদৃশ্য হয়ে যাবেন এই কথা কখনও কেউ ভাবেননি। একটার পর একটা প্রবাহের মধ্য দিয়ে তার যাত্রাপথের
উত্তরণ ঘটেছে। যুবক যুবতীরাই হয়ে উঠেছিলেন তার প্রধান ভক্তকূল। কিরোরি মাল কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক করার সময় , তিনি 'হরাইজন' ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ছিলেন। একদা টাইপরাইটার বিক্রি করতে করতে চাকরি ছেড়ে একদিন গানকেই বেছে ছিলেন বাস্তবে বেঁচে থাকতে। আশ্রয় নিয়ে ছিলেন হোটেলে গান গেয়ে বেঁচেবর্তে থাকবেন। সেই গানই কি তবে তার জীবনের কাল হল। জিঙ্গেল গেয়ে সামান্য নাম করেছিলেন একসময়ে, সেখান থেকে প্লেব্যাক করতে করতেই তিনি
তারকা হয়ে উঠেছিলেন। কলকাতা মঙ্গলবার দেখলো সেই তারকার একক শোয়ে নজরুল মঞ্চের এধার থেকে ওধারে ছুটে বেড়াতে বেড়াতে হাততালির আদরগুলো
তিনি সারা শরীরে মেখে নিচ্ছেন। আর তা তিনি যত কুড়োতে লাগলেন তত তার কর্তব্যবোধ তাকে বের হতে দিল না সেই চক্রব্যুহ থেকে। শিল্পীর শারীরিক বিপর্যয়ের কথা কেউ সামান্য ভেবেও দেখলো না। যেন আগের জন্মে তিনি নজরুল মঞ্চের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন। সমস্ত ঘাম রক্তের ঋণ স্বীকার করে গেলেন। কাউকে এতটুকু বলতে পারলেন না, অথবা বললেন না যে তিনিও মানুষ, তার শরীরটা আজ ভালো নেই। যদি বলতে পারতেন তবে এই জঙ্গি জনতার রায়ে, অচিরেই ফুৎকারে কে.কে হয়ে যেতেন একজন ভিলেন। আর ফাটকা খেলোয়াড় রূপঙ্কর দুনিয়ার সমস্ত আলো কেড়ে নিতেন। যেভাবে একা একা কে.কে বিমানবন্দরে নেমে ছিলেন তেমনি নিঃশব্দে তাকে কলকাতা ছাড়তে হতো। কেকে একজন ভালো মানুষ। সরল নিষ্পাপ তাই তাকে এই নিষ্ঠুর পরিণতির শিকার হতে হল। ©® অলোক কুন্ডু

শ্রদ্ধাঞ্জলি কে.কে

শ্রদ্ধাঞ্জলি কেকে / অলোক কুন্ডু

মন্দ্র সপ্তক মধ্য সপ্তক তার সপ্তকের মাধুর্যতায়
হাততালিতে ভরে যাচ্ছে হল ভর্তি ইচ্ছেগুলো
উদারা মুদারা তারা থেকে উঠে আসছে চিত্রকল্পগুলি
কোনও অজ্ঞাতনামা সুরের সৌন্দর্য সম্ভার
হলভর্তি হাততালি তার প্রাপ্তি কুড়োতে ব্যস্ত
ওদিকে হাঁসফাঁস করছে শিল্পীর হৃদস্পন্দন
কথাগুলো গুলজারের কখনও কওসর মুনিরের
প্রিতম থেকে জিৎকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন শিল্পী
হাততালির মায়াকে শিল্পী কিছুতেই ছেড়ে যাবেন না
জীবন বাজি রেখে গাইছেন একের পর এক গান।
উত্তেজনার পারদ উপচে পড়ছে উন্মাদনায় মত্ততায়
দমবন্ধ করা নজরুল মঞ্চের ভেতর মানবস্রোত
তিল ধারণের জায়গা নেই শুধু আরও চাই আরও চাই
উদারা মুদারা তারার সঙ্গে লাবডাব করছে স্পন্দন
আরও চাই আরও চাই শিল্পী তখন বড় একা
বড় করুণ দেখাচ্ছে তার মুখমন্ডলের নক্ষত্রবলয়
বারংবার তার শরীরের অস্বস্তিগুলি প্রকট হচ্ছে
সপ্তকগুলি তবুও শিল্পীকে ছেড়ে যেতে চায়নি
ধীরে ধীরে মঞ্চে তাকে ঘিরে ধরলো অতি উৎসাহীরা
উইং ক্লোজ করে দাঁড়িয়ে পড়া শত শত মোবাইল
আলোর উত্তাপগুলি তার হৃৎপিন্ডকে চেপে ধরতে চায়
তার চারপাশে অক্সিজেন কমে আসছে ধীরে ধীরে
তখন কারও মনে পড়লো না অভিমন্যু বধের কথা
কেকে-র গলা শুকিয়ে আসছে আর বুঝি পারছেন না

শ্রোতারা যদি জানতো গান মুখ দিয়ে গাওয়া হয়না
তাহলে তোমাকে এমন করে বেঘোরে মরতে হত না।
©® অলোক কুন্ডু

কেকে-কে আমার শ্রদ্ধা/ অলোক কুন্ডু


শ্রদ্ধাঞ্জলি কেকে / অলোক কুন্ডু

মন্দ্র সপ্তক মধ্য সপ্তক তার সপ্তকের মাধুর্যতায়
হাততালিতে ভরে যাচ্ছে হল ভর্তি ইচ্ছেগুলো
উদারা মুদারা তারা থেকে উঠে আসছে চিত্রকল্পগুলি
কোনও অজ্ঞাতনামা সুরের সৌন্দর্য সম্ভার
হলভর্তি হাততালি তার প্রাপ্তি কুড়োতে ব্যস্ত
ওদিকে হাঁসফাঁস করছে শিল্পীর হৃদস্পন্দন।
কথাগুলো গুলজারের কখনও কওসর মুনিরের
প্রিতম থেকে জিৎকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন শিল্পী
হাততালির মায়াকে শিল্পী কিছুতেই ছেড়ে যাবেন না
জীবন বাজি রেখে গাইছেন একের পর এক গান।
উত্তেজনার পারদ উপচে পড়ছে উন্মাদনায় মত্ততায়
দমবন্ধ করা নজরুল মঞ্চের ভেতর মানবস্রোত
তিল ধারণের জায়গা নেই শুধু আরও চাই আরও চাই
উদারা মুদারা তারার সঙ্গে লাবডাব করছে স্পন্দন
আরও চাই আরও চাই শিল্পী তখন বড় একা
বড় করুণ দেখাচ্ছে তার মুখমন্ডলের নক্ষত্রবলয়
বারংবার তার শরীরের অস্বস্তিগুলি প্রকট হচ্ছে
সপ্তকগুলি তবুও শিল্পীকে ছেড়ে যেতে চায়নি
শ্রোতারা যদি জানতো গান মুখ দিয়ে গাওয়া হয়না
তাহলে তোমাকে এমন করে বেঘোরে মরতে হত না।
©® অলোক কুন্ডু

বুধবার, ১ জুন, ২০২২

সৌরভ কি রাজনীতি থেকে ফয়দা তুলবেন/ অলোক কুন্ডু


যদি সৌরভ রাজ্যসভায় যায় তাহলে মন্ত্রী হবেন ডাইরেক্ট। এটা আমার ধারণা। এছাড়া সৌরভ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে যাবেন। সৌরভ গেলে তার প্রজেক্ট প্রধানমন্ত্রী মেনে নেবেন। আমার ধারণা তিনি যদি বিজেপি যানই তবে তিনি নির্ঘাত হবেন দেশের ক্রীড়া মন্ত্রী। এই কারণে সৌরভ রাজ্যের খেলনগরী ডুমুরজলাকে পরিত্যাগ করে দিয়েছে আগেই। হাওড়ায় খেলনগরী হলে যে উন্নয়ন হতো সামান্য কজন পরিবেশবাদীদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন কেন?
তা পরিবেশ দপ্তরের অনুমতি নিয়েই আজ সবকিছু করতে হয়। হাওড়ার উন্নয়ন না হলে আমার কষ্ট হয় তাই আমি এখানে পরিবেশ উদ্ধারের নামে ওই আন্দোলন আমি কখনও সমর্থন করিনি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সৌরভের ভক্ত। রাজনীতিও করিনা। তাই এই বক্তব্য আমার স্পষ্টভাষণ। কারণ আমি ছাড়া আর সকলের ধান্দা আছে, এটা আমার কাছে পরিষ্কার। সৌরভ বিজেপিতে যাবে কি না জানিনা। তবে সৌরভ কোনও প্রজেক্ট দিয়েছে কিনা তাও জানা নেই আমার। তবে কেন্দ্রের কাছে প্রজেক্ট দিয়েছে বলেই আমার ধারণা। প্রজেক্টটা পেলে তবেই সৌরভ কোথাও যাবেন। বিসিসিআই থেকে এখনও ইস্তফা দেননি। দেবেন না কি দেবেন না এইসব রটনা মাত্র। তবে আমি জানতাম ডোনা শিল্পীদের কোটায় রাজ্যসভায় যাবে। সৌরভ ডাইরেক্ট পলিটিক্স করবে বলে আমিই দোটানায় আছি। কারণ সৌরভ দুমদাম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাবলিক মোটেও নন‌। তবে সৌরভ যদি বিজেপিতে যান তবে এখানে এখন বিজেপির যে খুব লাভ হবে তা মনে করি না। কারণ এখানে ভোট কিন্তু অন্যভাবে হয়। সৌরভকে দেখে ভোট দিতে চাইলেও বিজেপি বাংলায় সেই ভোট জোগাড় করতে কখনোই পারবে না। কারণ বিজেপিতে পুরনো যেসব সদস্য আছেন তারা এত অহংকারী যে তারা কীভাবে সংগঠন তৈরি করতে হয়, সেটাই জানেন না। তারা সব সময় নতুন পুরনো এই আলোচনায় ব্যস্ত থেকেছেন গত পুরো নির্বাচনজুড়ে এবং ফেসবুকে রাজনীতি করেছেন। আদতে তৃণমূল থেকে যারা গিয়েছিল তারাই রাজনীতি বুঝতো যেমন তেমনি আবার তাদের বিশ্বাস যোগ্যতা একেবারেই ছিলনা। তবে সৌরভ একটা প্রজেক্ট নিয়েছেন এই বিষয়ে আমি একমত। হয়তো তা আগামী দিনের যুবক সম্প্রদায়ের কাছে আনন্দের হবে। সৌরভ মন্ত্রী এবং এমপি হবেন না এটা আমার বিশ্বাস। তবে বামেরা হচ্ছে সৌরভের আসল শত্রু, তারা কিছু করতেও পারবে না কিন্তু সমালোচনায় দেশ উদ্ধার করে দেবে। আমার ধারণা সৌরভ ভারতবর্ষে খেলাধুলোর বিষয়ে একটা আন্তর্জাতিক এমন কিছু করতে চলেছেন যা অনন্য বিষয় এবং তা হবে অন্য স্টেটে অথবা দিল্লিতে হবে এবং স্কুল শিক্ষায় খেলাধুলোও ডাইরেক্ট ঢুকতে পারে। খেলাধুলোর প্রভূত উন্নয়নের জন্যে সৌরভের এই প্রজেক্ট হতে যাচ্ছে। যা ইতিপূর্বে কখনও হয়নি। দেশের খেলাধুলোর খোলনলচে বদলে দিতে চান সৌরভ, এটা তার উদ্যোগ থেকে বোঝা যায়। আর এই জন্যে তার একটা পদ সৃষ্টি হতে পারে নয়াদিল্লি বা অন্য কোনও রাজ্যে। উত্তর প্রদেশেও হতে পারে তার সদর দপ্তর। সেই জন্য মধ্য কলকাতায় সৌরভের নতুন ফ্ল্যাট যাতে যখন তখন তিনি উড়ে যাবেন তিনি দিল্লিতে। মন্ত্রী নয় খেলরত্ন তুলে আনার জন্য তার প্রজেক্ট হবে হয়তো যা সরকারি এবং যা তার বর্তমান পদ থেকেও আরও বড়। সৌরভের প্রজেক্টে শিলমোহর পড়েছে বলেই সৌরভ হাওড়ার ডুমুরজলাটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন আগেই। যা হতে পারতো হাওড়ার উন্নয়নের এক দিগদর্শন, পশ্চিমবঙ্গেরও হলে আনন্দ পেতাম। সৌরভ কোনও ফালতু একটা চরিত্রের নাম নয়। আমার বিশ্বাস বিজেপি সরকার তার কোনও বৃহত্তম প্রজেক্ট অনুমোদন করেছেন যা আন্তর্জাতিক মানের। হয়তো বা স্কুল কলেজ থেকেই তৈরি হবে খেলোয়াড় যা ৭৬ বছরে ভারতে অবহেলিত। অথবা এমন কিছু যা যুবকদের উন্নয়নে কাজে লাগবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত ভারতের কোনও বৃহত্তম অর্থনৈতিক কর্মসূচি। সৌরভ থাকবেন রাজ্যপাল পদমর্যাদার একজন নাগরিক হয়ে। খেলা বা যুবকদের উন্নয়ন করা ছাড়া বিজেপিরও কিন্তু গতি নেই। এইসব হতে যাচ্ছে বলেই দিলীপ ঘোষকে সেনসর করা হয়েছে। কারণ এই রাজ্যে যতটুকু বিজেপি উঠেছে তা দিলীপ ঘোষের জন্য। পড়েছেও দিলীপ ঘোষের জন্য। এইরকম একটা সৎ ও বোকা লোক ভারতে দ্বিতীয়টি নেই।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখেছে এখানে বিজেপির নিচুতলার সদস্যদের দিয়ে কখনও একখানা ভোট জোগাড় করা সম্ভব নয়। নেতাদের মধ্যে একমাত্র টিঁকে গেছেন একজন মাত্র, তিনি তৃণমূলে ফিরছেন না শুভেন্দু। বিজেপির সদস্যদের এটিকেটের জ্ঞানে দিশেহারা হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, ভিক্টোরিয়ায়। তাতেই বঙ্গের বিজেপি ভোট অর্ধেক সরে গিয়েছিল। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাই ভালো করেই জানেন এখানকার বড় বড় বুকনির বিজেপি সদস্যদের হিম্মত। তাই তাদের এই সংগঠন নিয়েই কোনও বড় কাজ করে দেখাতে হবে। তাদেরও আগামী লোকসভায় সিট দরকার জিতে আসার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের জন্যে নয়, ভারতের জন্য দরকার সৌরভকে। সত্যিই তো যদি যোগ্য একটা সম্মান সৌরভ পান তবে তিনি তা ছাড়বেন কেন।
সৌরভ বিজেপির সদস্য পদ নিচ্ছেন না কিন্তু সরকারের কোনও প্রজেক্টের সফলতায় যুক্ত হলে তাকে বিজেপির লোক বলে শুনতে হতে পারে। এই জ্ঞানটুকু মনে হয় সৌরভের আছে। আমি বলবো সৌরভ বড় কিছু করতে চলেছে। যদি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে হয় তবে বিজেপির সামান্য টিঁকে থাকা হবে এখানে। তবে ১৮ টা সিট আর ফিরে পাওয়া হবে না কখনও। কারণ বিজেপির লোকেরা ওই ১৮ টা সিট ধরে রাখার মতো ভোটের রাজনীতি করতে পারবে না। যারা মার খেয়েছে তাদের জন্য বিজেপি বাংলায় উঠেছিল, তারাই তো এখন তাদের এলাকায় ভালো করে থাকতে পারেন না। তাই সৌরভের প্রজেক্টের সঙ্গে বঙ্গের বিজেপির কোনও সম্পর্ক না থাকলেও সরকারের সঙ্গে অবশ্যই একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ©® অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২

হাওড়ার শঙ্কর ও অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

#অলোক_কুন্ডুর_কলম

আজ আনন্দবাজারে শঙ্করের অসিতকুমার
-------------------------------------------------------------
■ ব‌ইমেলায় গত তিনবছর আগে,শঙ্কর অর্থাৎ মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার মনে আছে চৌধুরী বাগানের কথা ? আমার বাড়ি কোথায় উনি জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলাম আমার বাড়ির ঠিকানা। আসলে পাশের লেন বিহারী চক্রবর্তী লেনে ছিল ওনার বাসা। খুব জোর ১০/১২ টা বাড়ি দূরে হবে শঙ্করের পুরনো ভাড়াবাড়ি। হেসে বলেছিলেন তুমি তো তাহলে আমার পাড়ার ছেলে ন‌ও। হাওড়া জেলা স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিলেন অসিতবাবু । শঙ্কর হাওড়ার বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউশনের ছাত্র ছিলেন। দুজনেই প্রায় আমাদের পাড়ায়, মধ্য হাওড়ার চৌধুরীবাগান ও যোগমায়াদেবী লেনে থাকতেন আর শঙ্কর ওখানে বসেই লিখেছিলেন, "কত অজানারে", "চৌরঙ্গী"র মতো উপন্যাস। কত অজানারে-তে হাওড়ার ঘুঘনীওলা থেকে বিভিন্ন রাস্তার নাম উল্লেখ করতে ভোলেননি। স্বাধীনতার দিন যোগমায়া সিনেমায় দুবার পর পর ফ্রিতে সিনেমা দেখার লোভে সেদিন বিভিন্ন ক্লাব থেকে খাওয়া দাওয়ার যে আয়োজন করেছিল বিভিন্নজন, ইচ্ছে থাকলেও সেইসব জায়গায় খেতে যেতে পারেননি, শঙ্কর। যখনই সুযোগ পান হাওড়ার কথা লিখতে ভোলেন না। শিবপুরে মায়াপুরী সিনেমার পাশে জায়গা কিনে বাড়ি করেছিলেন। আমি একবার সেই বাড়িতে ওনার কাছে গিয়েছিলাম। একটা গাউন পরতে পরতে সদর ঘরে ঢুকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, " কোথা থেকে আসছো" আমি উঠে দা‍ঁড়িয়ে বলেছিলাম চৌধুরী বাগানের পাশে কালী কুন্ডু লেন থেকে আসছি। বলেছিলেন, "বসো বসো, হ্যাঁ তোমাদের অনুষ্ঠানে যেতে পারছিনা ভাই, আমি নিমাইদাকে বলে দিয়েছি ( নিমাইসাধন বসু)।" আমার বন্ধু সুধীরকুমার দে-র পত্রিকা নৈবেদ্য-র একটি সভায় নিমাইসাধন বসু এলেও শঙ্কর আসতে পারেননি তখন। এখন আর হাওড়ায় থাকেন না মণিশঙ্কর। আজ শঙ্কর, রবিবাসরীয়তে, আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের স্বনামধন্য প্রয়াত অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ( যিনি এক‌ই পাড়ায় শঙ্করের ভাড়া বাড়ি থেকে তিনটে বাড়ি দূরে থাকতেন, হাওড়ার যোগমায়াদেবী লেনে।) আর শঙ্করের সিনিয়র ছিলেন অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শঙ্করকে জবরদস্তি পরে গ্র্যাজুয়েট‌ও করেছিলেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় পরে হাওড়ার সাঁত্রাগাছিতে আমৃত্যু থেকে গেছেন, হাওড়া করপোরেশনের উদ্যোগে মূলত বর্তমান সরকারের চেষ্টায় হাওড়ার ক্যানেল ইস্ট রোডের একাংশের নাম হয়েছে তার নামে, সেই হিসেবে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন শতবর্ষ হয়ে গেল। শঙ্কর কতরকম ভাবে তার বাল্যকাল ও যৌবনের হাওড়া শহরকে সাহিত্যে তুলে ধরেছেন আজ লিখলেন হাওড়ার বরেণ্য মানুষ অসিতবাবুকে নিয়ে। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল, যাকে শঙ্কর বলেছেন "বিদ্যের জাহাজ"।আজ আবার অসিতবাবুর জন্য আমাদের সকলের কাছে শঙ্কর তুলে ধরলেন হাওড়াকে। ধন্যবাদ আপনাকে, শঙ্কর।
©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...