মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : মোড় ও লোকটা

মনেহয় লোকটার মোড়ের খুব দরকার ছিল
ঘন্টার পর ঘন্টা মোড়ে এসে একা বসে থাকে
একা একা দাঁড়িয়ে অথবা পায়চারির মেজাজে
তবু লোকটা কোনোদিন মোড় ছাড়া হয়না ।
বঙ্কুবাবুর ঠিক তেমনটা না হলেও
তবু যেন তারও ঠিক একটা মোড়ের দরকার ছিল
তিনি পুরো একটা ফ্ল্যাটই কিনে নিলেন
বারান্দায় বসে বসেই তিনিও মোড়ের মর্ম বোঝেন
কিন্তু সব সময় কেউ না কেউ এসে দাঁড়িয়ে যায়
হয় তার মেয়ে নয়তো বৌমা কিংবা নাতিটি
অফিস থেকে ফিরে ছেলে কখনো গিন্নি
শখ করে মোড়ের মাথায় একটা ফ্ল্যাট কিনেছেন বটে তবু কেমন যেন মনের মতো মোড় পাননি
মোড়ে কোনো প্রাইভেসি নেই
খুল্লামখুল্লা একবারে হৈচৈ সারাক্ষণ ।
মোড়ের আলো সারারাত চোখে পড়ে বঙ্কুবাবুর
মাঝরাতে উঠে পড়েন বারান্দাজুড়ে ছেলের ঘর
ছেলে-বউমার ঘুম ভাঙা পর্যন্ত
অপেক্ষা করতে হয় ।
কিন্তু ওই মোড়ের এক কোনে বসে থাকা লোকটার সঙ্গে
বঙ্কুবাবুর মোড় দেখার আকাশ পাতাল তফাত
মোড়ে বসা লোকটাকে রাত নটার পর
আর দেখা যায়না
কিন্তু ভোর পাঁচটা হলেই আবার ঠিক চলে আসে
মোড়ে ট্যাক্সি দাঁড়ায় রিক্সা স্ট্যান্ড থেকে ফুচকাঅলা ঝালমুড়ি
চাউ কচুড়ির গন্ধে ম ম করে
অনবরত চলে যেতে থাকে বাস টোটো মোটরবাইক
দুর্গাপুজো মহরম রথ মিছিলের জমায়েত
পয়সা অলাদের বাড়িগুলিও
মোড়ের এদিকে ওদিকে
কোনো কিছু তবু মোড় ছাড়া করাতে পারেনি লোকটাকে এই মোড়ে আসা সকলেই তাকে চেনে
কেউ পথ জানতে কিছু খবর জানতে
লোকটাকে জিজ্ঞেস করে সাহায্য নেয়
গ্যাসের লোক থেকে ক্যুরিয়ার ডেলিভারি বয়
সকলেই একবার যেতে আসতে হাসি ছুঁড়ে দেয়
এসব কিছুই বঙ্কুবাবুও বসে বসে উপভোগ করেন
লোকটা হাসেনা নির্বিকার বসে থাকে
পায়চারি করে চায়ের দোকানে চা খায়
রিকশার দরকার হলে ওধার থেকে এধারে পাঠায়
জ্যামজটের খবর ওর কাছে পাওয়া যায় কখনো
তবু লোকটা একা একাই থাকে
সন্ধ্যায় যখন এপাশ ওপাশে আড্ডা জমে ওঠে
মদ্যপ লোক হেলতে থাকে কাছাকাছি
খিস্তির ফোয়ারা ওঠে কোথাও
তখনও লোকটা নির্বিকার একা চেয়ে থাকে
মিটিং মিছিলে কখনো থাকেনা
মোড় বুঝি ওদের দুজনের বোঝাবুঝি জানে
এই মোড়টাকে যেন ওই লোকটা মায়ায় বেঁধেছে একা ।

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : দ্যাট উড বি গ্রেট

অলোকের লেখালিখি ও কবিতা
****************************
দ্যাট উড বি গ্রেট / অলোক কুন্ডু

ইনবক্সে স্মাইলির ছড়াছড়ি
অ্যাক্সেসারিস খুলছে এক এক করে
অনুভূতিগুলো ঘ্যাম লাগলো বেশ
মুখপাতটাই চিনতে চাইলো--অর্ক ।

এক্সপেনডেড চাউনি যেন ছুরি
ব্যাকলেস গার্ল ধকধক যত চিত্তে
বন ফায়ারে জং লুটে নেয় নিকেল
টানাপোড়েনের অঙ্ক ভোলে তাঁতি ।

নীতা বললো- কী দেখছো কি ?
এটা সীতা হার
অর্ক বললো- দ্যাট উড বি গ্রেট ।

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : ওই মেয়ে তুই

ওই মেয়ে তুই আয়না দেখিস কত ?
তোর মুখটাই কাঁচ
তোর মুখটা ঠিক আয়নার মতো ।
দস্যি বয়স সাঁঝের বয়স ছুঁতে
চোখ ছাপিয়ে জল ফেলেছিস ঢের
আশগুলোকে লাশ করেছিস পুঁতে ।
আরশি ভাঙিস আঘাত যন্ত্রণাতে
দুঃখ-শ্রমে লাবণ্য তোর ঠুনকো
অতুলনীয় থাকিস ফ্যানে-ভাতে ।
ঘরে-বাইরে লড়াই তোর সমান
সহিষ্ণুতায় ভাঙা কাঁচও জুড়িস
তবুও ঝাঁপায় হরেক অসম্মান ।
স্বপ্ন গড়িস স্বপ্ন ভাঙিস জীবনপুরে যত
শোক-দুঃখের ব্যথা ভুলিস একাই
তবুও তুই আয়না দেখিস কত ।
ধান রোয়াতে চিকন থাকিস রোজ
চা-বাগানে পাতা তুলিস ত্রস্ত
কম মজুরির বিড়ি শ্রমিক তুই
তাই মালিকও নেয় খোঁজ ।
দিনের আলোয় খিস্তি-খেউড় স্বামী
সেইতো তোর আসল মালিক জানি
আঁধার হলেই সুন্দরী তুই
আঁধার অনেক দামি ।

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : যখনই ভেবেছি তোমাকে

যখনই ভেবেছি তোমাকে শনাক্ত করবো
ঠিক তখনই তোমার নিরাশ প্রভুত্বগুলো
ছড়িয়ে গেছে গিল্টিকরা মানুষগুলোর মধ্যে ।
কারও বুকের পাটা তেমন নেই
যে তোমার খ্যাতনামায় জল ঢেলে দেবে !
শক্তিশালীতায় তুমি অথই
নিমেষেই আগুন কিংবা বন্যা
অথবা আরও বেশি কিছু ভয়াবহ
ছড়িয়ে দিতে পারো সাবলীল
মন্দ কলঙ্কগুলি সহজেই মুছে নিতে পারো ।
নিরুপম বিলাসীতার মোহে অভ্যস্ত
তোমার জীবনের উৎসমুখে
চাটুকারীদের বিভোর জনজোয়ার ।
তোমাকে শনাক্তকরণ অত সোজ নয়
খড়ির গন্ডির যাদুতে
তোমার প্রভুত্বের স্পর্শ খুঁজে নেয়
শুধুমাত্র জো-হুজুরের ডাক ।

বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : তিলোত্তমাকে চিঠি

কোথায় যেন আলাপ তোমার সাথে ?
আজ আর সবটা মনে নেই
সত্যি কথা বলছি তোমায়
তিলোত্তমা তোমায় ভুলিনি ।
মোবাইল নম্বর হারিয়ে ফেলেছি কবেই
তবুও তোমায় চোখ বুজলে দেখি
কোথায় যেন বাড়ি ছিল তোমার ?
আজ আর সবটা মনে নেই ।
সত্যি বলছি তিলোত্তমা
কাল একটা চিঠি লিখেছি তোমায়
তিলোত্তমা হেসেই লুটোপুটি
-" এখন তো মেসেজ করতে হয় ! "

চিঠিটাকে নৌকো করি যদি
ভাসিয়ে দিই এই বৃষ্টির জলে
ভাসতে ভাসতে একদিন কি
পৌঁছবে না কাছে ?

( Translated by :
Miss Lopamudra Dey , GRF
Durgapur/Howrah)

Letter To Tilottama
*******************
Where did we meet first ?
I cannot recollect the details today
I am making a confession to you
Tilottama , I haven't forgotten you
Long since I had lost your mobile number
Yet, I can visualise your mystic image
Wherefore was your house ?
I cannot recollect the details today
Truly speaking Tilottama,
Yesterday , I wrote a letter to you
Tilottama, you burst into laughter :
" Now a days we send message ."

If the letter is made into a paper boat
and floated into the stream of rain water ,
Will it not reach you one day
Drifting down this flowing water ?

অলোক কুন্ডুর কবিতা : কিছু কথা বাকি থেকে গেল

কিছু কথা বাকি থেকে গেল
কিছু কথা বলা হয়নি
তার কথা শুনেছি যেদিন
চোখ ভিজে উথালপাতাল ।
সে কি তবে কিছু রেখে গেল
বকুলের গন্ধ ব্যথায়
যতখানি বুঝি দেখা যায়
সেই সব এখনো কুড়োই ।
সেই সব আলপনা যেন
ভিজে যায় রাতভর জলে
ফেলে দিতে যত চাই ফুল
কবিতা হয়েছে নিজেই ।

অলোক কুন্ডু-র কবিতা : তিলোত্তমা ঠিক দেখেছে

আমায় আমি যতই লুকোই
ময়লা ঢাকবো বলে
তিলোত্তমা ঠিক দেখেছে
অবিরত বাইরে ভেতর
বর্জ্যগুলি তাকালো নিমেষে
আঙুল তুললো আমায় ।
লুকোতে যাব যেই ভবেছি
অজস্র বার , অজ্ঞতা আমার ।
অন্ধকারের রাত খুঁজেছি
পথ খুঁজেছে চোখের জলা
বদ্ধজলায় মুখ ধুতে যাই
নিজের ময়লা চমকে দেখি
তিলোত্তমা ঠিক দেখেছে
অবিরত বাইরে ভেতর ।

বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : নারী

সবার উঁচু আমার মাকে দেখেছি যেদিন থেকে
সেদিন থেকেই নারীর অর্থ আকাশ ছুঁতে চায় ।
আর এক নারী ঘরের মধ্যে সামান্য হয়ে থাকে
সেও আমার অনেক দোষ ঢেকেঢুকে রাখে ।
এই জীবনে অনেক নারীর অনেক অবাক সঙ্গ
সবটুকু তার চার দেওয়ালে ছবির মতো যেন ।
সবার কাছে ঋণ নিয়েছি দু হাত পেতে অঢেল
বাড়তে বাড়তে সে ঝণ আমার আকাশ ছুঁয়ে দিল ।

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : রিমঝিমিয়ে

এখনও তো বৃষ্টি ভাসায়
জমি জিরেত বুকের মাঝ
এখনও যেন জলের গল্পে
হাপুস নয়ন মেঘের সাজ
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে
কথা লেখে মেঘলা কে ?
সাধনা আর মনোজকুমার
সাদাকালোয় রিমঝিমিয়ে

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : উল্টোসোজা

উল্টো সোজা পশম উলের
বেবাক কাঁটায় দোদুল ফুলের
শীত এলে তার বাড়তো কদর
ঠিক যেন সেই ভিজে বকুল ।
বকুলতলায় ঝরলো পাতা
উড়লো ধুলো শুকনো পাতায়
সিল্যুট জিনসে কার বিনুনি
স্মার্ট ফোনেতে উল বুনে দেয় ।
দেদার এখন মুখের বিউটি
এডিট-ক্রপের সাহেব-বিবির
ডিস্কোথেকে মিলবে দেখা
পালোজা আর হল্টারেতে ।
বাহারি সব মুখোস পরে
ঘুড়ির মতোই ওড়াচ্ছে রাত
কেউ জানেনা কারো ভেতর
উলের কাঁটা জানবে টা কী ?

অলোক কুন্ডুর কবিতার বদলে গদ্য

আমার জাতীয় শিক্ষক
********************
এ রকম জাতীয় শিক্ষককেও আমি জানি
যারা তাদের জীবনের আচরণ কোনো দিন পাল্টাতে পারেননি তবুও তারা জাতীয় শিক্ষক ।
১. নিজের অনেক জমি থাকলেও স্কুলের জন্যে এক টুকরো জমি দেননি ২. সিগারেট খাওয়া ছাড়েন নি ৩. রাজনীতি করা ছাড়েননি ৩.
কোনো স্কুল প্রতিষ্ঠার সংগে তার নাম একবারও  শোনা যায়নি ৪. বাড়ি বাড়ি গিয়ে কখনো কোনো একটি ছাত্রেরও খোঁজ নেননি ৫. পরিবেশে রক্ষায় কোনো উদ্যোগ কিংবা গাছ লাগিয়ে তার নেতৃত্ব দিয়ে গোটা পরিবেশ পাল্টে দিতে পারেন নি । ৬  একটি ছেলেকেও বিনা পয়সার টিউশন দেননি ।  ৭. এমন কিছুই কৃচ্ছ সাধন করেননি যে জাতীয় শিক্ষক হতে পারেন ৮. স্কুলের সময়ের বাইরেও আগে স্কুলে এসেছেন এবং পরে
থেকে গিয়েছেন এটাও করেননি ৯. বিনা পয়সার কোচিন দিয়ে ছাত্রদের সাহায্যে এগিয়ে যাননি
১০. নিজের পরিবার আর রাজনীতির বাইরে
কোনো কিছুই করেননি ১১. ছাত্রদের গায়ে হাত তুলেছেন ১২. ছাত্ররা সেই শিক্ষককে ভয় পেয়েছেন অতিরিক্ত শৃঙ্খলার জন্যে ১৩. কখনও অন্যান্য কলিগদের সাহায্যে এগিয়ে যাননি ১৪. সমাজের বন্ধু হতে পারেননি ১৫. খেলাধুলোয় ছাত্রদের অনন্য করেও গড়ে তুলতে তার সহায়তা নেই ১৬. নিজের জন্যে না ভেবে পরের হিতেই নিজের জীবন কে বিলিয়ে দেননি ১৭. কোনো কৃচ্ছসাধন নেই কিন্তু তারা কেউ গান জানেন কেউ আবৃত্তি করতে পারেন কেউ বই লিখেছেন কেউ ডক্টরেট করেছেন কেউ রক্তদান শিবিরে বক্তৃতা করেছেন । কেউ কেউ ভালো জীবন যাপন করেন কেউ কেউ পাথরের বাড়িতে থাকেন কেউ কেউ জাতীয় শিক্ষকের টাকা ফিক্সড করে দিয়েছেন কেউ কেউ জাতীয় শিক্ষক
হয়ে আর ওদিকে পা মাড়াননি । কেউ কেউ শিক্ষক সংগঠনের মাথা হিসেবে মিটিং এ নিজের লোককে দিয়ে জাতীয় শিক্ষকের মনোনয়ন করিয়ে নিয়েছেন । তাবলে কি কোনো গুণী মানুষ ত্যাগী শিক্ষকরা জাতীয় শিক্ষক হননি । নিশ্চিত হয়েছেন । অনেক জাতীয় শিক্ষকের মধ্যে তাঁরাই হলেন আসল জাতীয় শিক্ষক যার জন্যে তাদের ছাত্রদের চোখে জল এসে যায় । আমার জাতীয় শিক্ষক হাওড়ার শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক সামান্য গ্র্যাজুয়েট ইন্দুভূষণ চট্টোপাধ্যায় যিনি কোনো দিন সরকারি ভাবে জাতীয় শিক্ষকের
সম্মান পাননি ।

শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলোক কুন্ডুর কবিতা : আমার শিক্ষক


মধুসূদনবাবু আপনার একটা গানের স্কুল ছিল না
রবীন্দ্র সংগীত আপনার গলা থেকে ধীরে ধীরে
ক্যাসেটে ও সিডিতে আপনাকে বন্দিত করতো
স্কুলের প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত
আমার সব মনে থাকলেও
কিন্ত আপনাকে ঠিক আর মনে করতে পারিনা
আজ কাগজে আপনার ছবি দেখেও
ঠিক চিনতে পারিনি
মনে পড়লো ভূগোলের ক্লাসে
একদিন বেধড়ক মেরেছিলেন বলে ।
সত্যি বলছি গত বছর
অঙ্কের বঙ্কিমবাবুকে খবর কাগজে দেখেও
চিনতে পেরেছিলাম না
মনে পড়ে গেল স্কুলে পড়ার সময়
স্যারের আধপোড়া চারমিনার কুড়িয়ে নেশাটা ছাড়তে পারিনি আজও
পার্টির মিটিং-এ আগুনের মতো বক্তৃতায়
মন কেড়ে নিতেন ইতিহাসের চন্ডীবাবু
সত্যি বলছি এই সব মাষ্টার মশাইদের
কাউকেই আজ আর মনে পড়েনা

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...