শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০

করোনা থেকে বাঁচুন: অলোক কুন্ডু

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা #indianwriterscommunity #kolkatadiaries #kolkata #writer #lekhak #howrah #facebookpost
◆ অনেকে বলছেন পুজোতে বাড়বে, তার আগে থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। আমার‌ই জানাশোনা কলকাতার একটা পুজো কমিটির তত্বাবধান করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে হসপিটালে। সর্দি কমাতে গিয়ে এখন স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে বন্ড নিয়ে। পুজো করতে গিয়ে কয়েক লক্ষ খরচের ধাক্কায় পড়লেন। নিউমার্কেটে যেভাবে ভিড় হচ্ছে ওখান থেকে ১% ছড়ালেই যথেষ্ট। সর্দিকাশি নিয়ে রাস্তায় বার হলে অবধারিত ধরে নেবে। সর্দি নিয়ে ৮ দিন ঘোরার জন্য আমাদের পাড়ায় একজন নিউমোনিয়া হয়ে মারা গেল। সিগারেট যারা খান এরকম কাউকে ধরলে আর ছাড়ানো মুসকিল, এরকম‌ও মারা যাওয়ার উদাহরণ আছে আমার কাছে। হিমোগ্লোবিন কম থাকা মানুষকে ধরলেও তাই। এরপর কিডনি, সুগার, হার্টের প্রবলেম থাকলে আর তো কথাই নেই । ইয়ংদের সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরছে। প্রতিটি জিনিসপত্রের সঙ্গে অনবরত ভাইরাস বাড়ছে। সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। তারা পজিটিভ হলেও হয়তো বেঁচে যাবেন
কিন্তু বাড়িতে কেউ থাকলে তার জন্য আমাদের ভাবা দরকার। ভাইরাস ভিড়বাসে, ভিড়ট্রেনে, যেকোন‌ও ভিড় থেকে ছড়াচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে। আমাদের হাওড়ার কদমতলার দেবলীনা তার পরিবারের যে বিভীষিকাময় বিপদের কথা জানিয়েছেন এবং ফিরে এসেছেন তা এক কথায়, মহা বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া। আমাদের শরীরের তেজে তা বোঝা যাবে না। কিন্তু জামাকাপড়, পা একটা ভাইরাস বহনের উপযুক্ত মাধ্যম। বাড়িতে ঢোকার মুখে যদি এক গামলা ব্লিচিং ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জলে পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকা যেত খুব ভালো হোতো। ফ্ল্যাটে হ‌ওয়া সম্ভব নয়। তাই মেঝে ওই জলে মুছে ফেলতে হবে। ভুল করেও গ্লাভস পরা উচিত নয়। চুল ভাইরাস ধরার প্রধান মাধ্যম। তাই সাবধান। এটিএম কার্ড, গ্যাসের ব‌ই, মানিব্যাগ, ঘড়ি, ছাতা,দরজা, বাথরুমের দরজা,কল, হ্যান্ড সাওয়ার, বেল্ট, পেন, মোবাইল, টাকা,পয়সা, দরজার হাতল, সিঁড়ির রেলিং, কলিং বেল, চাবি, রুমাল, স্যানিটাইজারের বোতলের গা, চশমা এগুলো সম্পর্কে সব সময় সতর্ক এবং সতর্ক। সন্দেহ বজায় রাখুন ডবল চেক করুন। প্রচুর ফেনাযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন ( ডেটল নীল উপযুক্ত), বাথরুমে একটা বড় প্ল্যাস্টিক স্প্রেতে স্যানিটাইজার রাখুন। আমাদের কম লোকজন তাতেই এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লিটার স্যানিটাইজার
৭ কেজি ডিটারজেন্টে, ব্লিচিং ১ কেজি, সোডা ২ কেজি, পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট লেগেছে ৫০০ গ্রাম। হ্যান্ড‌ওয়াস ২ লিটার।
ডেটল নীল সাবান ৬ টি। যাইহোক, বাথরুমের যেখানে যেখানে হাত দিয়েছেন স্যানিটাইজ করুন। পায়ের হাঁটু পর্যন্ত জল ঢালুন। যতবার বাইরে যাবেন ততবার জামাকাপড় ছাড়ুন। সোডা বা ডিটারজেন্টে খার বেশি থাকে অ্যালার্জি না হলে ভাইরাস মারতে এইসবও হ্যান্ড‌ওয়াসে মিশিয়ে নিন, এতে খরচ কমে যাবে। জামাকাপড় হচ্ছে একটা মারাত্মক মাধ্যম, একে সাবধানে খুলে রাখুন এবং আবার সাবানে নিজের হাত ধুয়ে নিনি। স্যানিটাইজারকে রাস্তায় ও বাড়িতে ফেরার পর তিন তিনবার ব্যবহার করুন। যতটা নিশ্চিত হবেন ততটা ভালো যত সন্দেহ তত ভালো। হ্যাঁ একদম এপ্রিলের গোড়ায় আমাকে বাতিকগ্রস্ত বলেছিলেন অনেকে। বিশ্বাস করুন অফিসে বহুরকমের জার্ম থাকা ফাইলকাগজ ঘেঁটেছি তখন ওই হাতেই মুড়ি খেয়েছি। কারণ কাজে ফাঁকি দেবো! উঠে সাবান খুঁজবো ? প্রকৃতপক্ষে
হাত ধুতে যাওয়ার সময় পাইনি। দেখেছি প্রায় সর্দিকাশি লেগেই থাকতো। ফাইলের মধ্যেও প্রচুর এইসব দাগ থাকতো তো। প্যানক্রিয়াসের অসুখ বহুদিনের ইদানিং প্রচুর কিছু ধীরে ধীরে ধরা পড়েছে, হয়তো 
হাওড়ায় শিক্ষকদের  পেনশনের করতে গিয়ে হয়েছে। বহুবার ভাইরাল ফিবারে ভুগেছি। এখন বুঝতে পারছি পাড়ার খাটা পায়খানার ডাবা থেকে বল কুড়িয়ে কখনও সাবান দিয়ে হাত ধুইনি। অফিসেও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো সুযোগ পাইনি, আর অফিসে আমার নামে সাবান কিনে মেরে দিতো সেই টাকা। বাথরুমের ভেতর থেকে বাইরেতেও ভিজিটরের উত্তর দিয়েছে। আমার জন্য বহু মানুষ মজায় অফিস করেছে। আমার জন্য একটা পুরো অফিস ঘুমোতে পেরেছে শুধুমাত্র আমি ঘুমোই নি। ছেলেমেয়েদের সুখে মানুষ করেছেন। কিছু‌ই করিনি জীবনে। প্রচুর ওষুধ খেতে হয়েছে, এখন বুঝতে পারছি সব। কিন্তু প্রচুর ভুল কাজ করেছি। নিজেকে দেখিনি। করোনা এসে আমাকে অনেকটা সতর্ক করেছে। হাত ধুয়ে পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকা এমনিতে অভ্যাস ছিল তাই একবার হাত ধুয়ে কিছু খাওয়া এটা মামার বাড়ি থেকে পর্যাপ্ত শেখা। পা ধুয়ে বাড়িতে ঢোকায় অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু কাজের পরিস্থিতির জন্য নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অনেক ক্ষেত্রে মানিনি। যতজন মানুষ এসেছেন বন্ধু হয়ে এসেছেন তারা আমাকে ব্যবহার করেছেন। একমাত্র করোনাই শেখালো, নিজের কাজ করাটাও যে জরুরি এবং সঠিক সময়ে করা।  করোনা মনে করিয়ে দিল মামার বাড়িতে আমার বড়মাসিমার শেখানো জিনিসটাই তো ফেরত এসেছে। মাসিমা নেই। জলে পড়ে থাকতেন না। বিধবা ছিলেন ১৪ বছর থেকে কিন্তু প্রতিটি দিন কাপড় পরতেন টিনোপলে ধোয়া। নখ কাটা চুল কাটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হ‌ওয়া তো সেই ছোটবেলার পাঠ। রায়নার সুশান্ত এখনও আমার জামাকাপড় পরা নিয়ে বলে। এই করোনায় দেখেছি। বাজার করে এসে ইনারগুলো না কেচে রোদে দিতে তাদের কিন্তু করোনা ঢুকেছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সারাজীবনের। ©® অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

অলোকের ঝর্নাধারায়-১৯

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা #indianwriterscommunity #kolkatadiaries #kolkata #writer #lekhak #facebookpost #darjeelingtourism

অলোকের ঝর্নাধারায়
( আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-১৯
■ মে মাসে দার্জিলিং ঘুরে এসেই আবার হৈ হৈ করে আমরা হাওড়া স্টেশন থেকে নভেম্বরে, পুজোর একটু পরে মন্দিরতলার গোরাদার সেলাইস্কুলের সঙ্গে আবার দার্জিলিংয়ের পথে র‌ওনা দিলাম, লক্ষ্মীপুজোর পর। ইতিমধ্যে সেই বছর ৭ দিন ছুটি নিয়েছি। ৮ দিনের জন্য যাচ্ছি এবার। যাতায়াতের দুদিকে রবিবার পড়ছে। পুরুষ বলতে আমি আর গোরা দা। মহিলা ৪৫ জন। আর দুজন কুক। হাওড়ায়, আমাদের জন্য একটা গোটা বগি। ফুল কম্পারটমেন্ট। ছোটবেলায় শুনতাম কুন্ডু স্পেশাল ওইভাবে নিয়ে যায়। ৪৫ জনের মধ্যে গোরাদার স্ত্রী ছেলেকেই শুধুমাত্র চিনি। অধিকাংশ মেয়েরা গোরাদার গ্রামের ওইদিককার। গোটা দশেক মেয়ে শিবপুর ও চ্যাটার্জী হাটের। বয়সে দু তিনজন তার মধ্যে ৩০-৩২ হলেও অধিকাংশের বয়স ১৮-২২। হাওড়া থেকেই বাইরে যাত্রীদের চিলচিৎকার দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। ওঠার সময় বাবা বাছা করে অনেককে নামানো হয়েছে। কিন্তু মাঝে কোনও স্টেশনে থামলে যাত্রীদের হুটোপুটি। দরজা বন্ধ আছে। ভেতরে লুকিয়ে লুকিয়ে স্টোভে আমাদের রান্না হচ্ছে। এখনকার মতো জলের জ্যারিকেন ছিলনা। দু জন রান্নার লোক নামিয়ে একটা দুটো জায়গায় জল নেওয়া হয়েছে। বড় জলের ড্রাম দু একটা হাঁড়ি কড়া কুকদের। বাইরে দু দিকে দুটো ফেস্টুন ঝুলছে, তবু লোক উঠতে চায়। দু একজন জবরদস্তি উঠেও পড়েছিল। ঝগড়ার পর তারা নেমেছে। দরজায়, এই কামরা বুক আছে আঠা দিয়ে লাগানো হয়েছে। কেউ ছিঁড়ে দিয়েছে অর্ধেক। আমার তখন বয়স কতো? ২৫ হবে। আমি ডায়রি নিয়ে সকলের নাম ঠিকানা টুকে নিয়েছি। একটা লিস্ট করা হয়েছিল, কিন্তু ফেলে এসেছে গোরা দা। কেবলমাত্র টিকিট আর রেলের ছাপমারা একটা টাইপকরা লিস্ট গোরাদার কাছে। ওটা টিটিকে দেখানোর জন্য যত্ন করে রাখা আছে। মেয়েরা কলর কলর করতে করতে চলছে। হা হা হি হিতে কানের পোকা বেরিয়ে পড়ছে এমন সে আওয়াজ। সালকিয়ার 'জয়া'র সঙ্গে পরিচয় হলো ওদের কারখানা আছে, বেশ পয়সাওয়ালা। ওদের কারখানার এক কর্মচারির বোন গোরাদার সেলাই স্কুলের ছাত্রী। সেইসূত্রে এসেছে। জয়া বলে মেয়েটি একমাত্র সম্ভ্রান্ত। গায়ের রঙ থিন অ্যারারুট বিস্কিটের মতো, গালে হাল্কা টোল পড়ে। শর্মিলা ঠাকুরের মতো অত সার্প নয় তবে তখন তো সুন্দরী বলা যায়। লম্বা নয় বড় জোর ৪ ফুট ১১ হবে। একমাত্র ওর‌ই পোশাক দামি। অধিকাংশ মেয়েদের চেহারায় সচ্ছলতার ভাব নেই। গোরাদা বললো এরা ৭০ ভাগ সেলাইফোঁড়াই করে সামান্য ইনকাম করে। গরিব ঘরের সব মেয়ে। এরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সার্টিফিকেটটা পেলে যদি কিছু চাকরি জোটে। হাইস্কুলে পার্টটাইম সেলাইয়ের টিচার হলেও একটা সামান্য ইনকাম হয়।। বাম সরকার অবশ্য এদের মধ্যে গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ওয়ার্ক এডুকেশন গ্রুপে নিয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছিল‍ পরে। সেই দিক থেকে দেখলে অনেক হাই স্কুলে এরা একটা সম্মানের চাকরি পেয়েছিল। জ্যোতিবাবুর দূরদর্শিতা এইখানেই নতুন মাত্রা এনে দেওয়ার মতো ব্যক্তিত্বপূর্ণ বলবো। এইসব সামান্য লেখাপড়া জানা মেয়েদের কর্মক্ষম করার কথা তখন ভাবাই হোতো না। তবে এইসব মেয়েদের মধ্যে গ্র্যাজুয়েট ৪/৫ জন হয়তো ছিল। জয়ার মতো পড়ুয়া মেয়ে ২০ জন এসেছে যারা ওই সেলাইস্কুলের নয়। তারা বাইরের, কলেজে পড়ে। সকলেই প্রায় হাওড়া গার্লস কলেজে পড়ে। তার মধ্যে একমাত্র জয়া সাইকোলজি অনার্স ফাইনাল ইয়ার। আমি-গোরাদা দুজনে লোয়ারবাঙ্কে শুয়ে পড়লাম। কুক দুজন মেঝেতে। আলো নিভিয়ে সব ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভোরে উঠে পড়লাম। ইতিমধ্যে নামবো নামবো করছি জয়া আমার হাতে গোলকরে পাকানো একগাদা একশো টাকার নোট দিয়ে রাখতে বললো, বাথরুম যাবে। আমি পাজামা পাঞ্জাবি পরেছিলাম আমার চাদর গুছোচ্ছি। ব্যাগ ঠিক করছি। পাঞ্জাবির পকেটে রেখে দিলাম অতগুলো টাকা। আমারও ঠেকে শেখা অনেক বাকি তখন। এখনকার ভ্যালুতে ৩০/৪০ হাজার তো হবেই। আমাদের সঙ্গে সেলাইস্কুলের তিনজন দিদিমণি আছেন। তাদের বয়স একটু বেশি। তবে ৪০-এর বেশি নয়। একটা জলখাবার ও চা ট্রেনে উঠেই দেওয়া হয়েছিল যাওয়ার সময়। রাতে ডিমের ঝোল ভাত। তার মধ্যে ডিম আলু সিদ্ধ করে এনেছিল গোরা দা। সামনের পাতে লঙ্কা দিয়ে আলুভর্তা মেখে দেওয়া হয়েছিল, এক হাতা করে ডাল। তাও কুকারে ডাল সিদ্ধ করে আনা। তখনকার দিনে কলাপাতা ছাড়া হয়না। জলের মাটির গ্লাস ছিল কিছু, কিন্তু সকলকে দেওয়া যাবেনা। ওয়াটার বোতল সকলের সঙ্গে ছিল। এন.জি.পি-তে নেমে রিক্সায় করে অনেকটা দূরে একটা জায়গায় দাঁড়ালাম। আমরা উঠে পড়লাম ছোট ট্রেনে। এইসময় বিশাল হৈচৈ। আমাদের মেয়েগুলো দাঁড়িয়েছে আমাকে ঘিরে। দুটো কম্পার্টমেন্টে ভাগ করে আমরা উঠেছি। কতগুলো ছেলেগুলো দৌড়ে নেমে গেছে অন্য কোনও যাত্রীর পকেট মেরেছে। তাই হৈ চৈ। ওই কথা শুনে আমার তখন মনে পড়েছে জয়ার টাকাটার কথা। তখনও জয়ার খেয়াল নেই, ওর টাকার ব্যাপারে। একটি মেয়ে বলছে, আপনার পকেটে হাত দিচ্ছিল কিন্তু আমি হাঁটু দিয়ে মেরেছি। দেখুন তো। আমার তখন মাথা খারাপ। কোন পকেটে ছিল দু পকেট হাঁতড়াচ্ছি। পেয়ে কোনোরকমে মেঝেতে বসে পড়েছি। হার্ট অ্যাটাক হ‌ওয়ার জোগাড়।
একজন বলছে কি হয়েছে, দেখুন নিয়েছে কি ? সকলে আমার ব্যাপারটা বুঝতে চাইছে। এতক্ষণ পরে জয়া হাসছে, বলছে কি হলো? আমার তখন ওদের সকলের ওপর রাগ ধরছে। দুটো মেয়ে যারা দেখেছিল তাদের ওপর আর‌ও। একগাদা ইয়ং ছেলে ওইভাবে রোজ ওঠে। রোজ পকেট মেরে শুকনার কাছে নেমে যায়। তবে অন্য একটি লোকের গেছে। জয়াকে টাকা ফেরত দিলাম, বললাম, তুমি তো চেয়ে নেবে এতক্ষণ ? হাসছে, বললো যায়নি তো! ৪৫০০/- টাকা ছিল। তখন ৪৫০০/- টাকার বিশাল দাম। ( ক্রমশ ) অলোক কুন্ডু। ৬.১০.২০

অলোকের ঝর্নাধারায়-১৬

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা
#indianwriterscommunity #lekhak #writer #kolkata #kolkatadiaries #facebookpost

অলোকের ঝর্নাধারায়
( আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-১৬

রায়নায় থাকাকালীন আমার জীবনে সত্যি ভয় ধরে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত আমার হয়তো বাঁচার অধিকার নেই এই পৃথিবীতে! এই পৃথিবীতে আমার জন্য আর নয়। এত বছর ধরে এত অত্যাচার আর সহ্য করতে সত্যি আর পারা যাচ্ছে না। যে সে লাথি মারছে। একবার পূর্ণিমার রাত ৯ টায় বর্ধমানের সদরঘাট ব্রিজে দাঁড়িয়ে দামোদরের দিকে চেয়ে থেকেছি। চোখ দিয়ে জল পড়েছে টপ টপ করে। আমি যদি মৃত্যুকে ডেকে নি
তাহলে আমার ব‌উ মেয়ের কি হবে ? আমার মা তখনও বেঁচে। হাঁটতে হাঁটতে বাসুবাবুর বাড়িতে ফিরে এসেছি। দোকান থেকে ক্যাডবেরি হাতে করে এনে পাশের ঘরে একটা ছোট্ট মেয়ে থাকতো তাকে ক্যাডবেরি দিয়ে মনটা ভালো করতে চেয়েছি। হয়তো ওদের ঘরে বসে কখনও চাও খেয়েছি। হাওড়ায় থাকতে ১১ বছর ধরে কি ভয়াবহ জীবনযন্ত্রণায় যে আমি কাটিয়েছি সেই ভুক্তভোগী শুধুমাত্র আমিই জানি। সেখানেও বারবার বদলি চেয়েছি। রায়নায় গিয়ে মাত্র ৬-মাস শান্তিতে ছিলাম। যেই বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রশান্ত ব্যানার্জী ও এস আই অমিত চক্রবর্তীর সঙ্গে সামান্য পরিচয় হলো, ব্যস আমার জীবনে আর‌ও চরম অশান্তি শুরু হয়ে গেল। রায়নায় গেলাম প্রমোশন পেয়ে। ভেবেছিলাম ১১ বছর ধরে রাত দুটো তিনটে অবধি বাড়িতে, অফিসে সারাদিন এত কাজ করলাম কোনও দাম তো পাইনি। এত উপকার করলাম একজন কেউ ফিরেও পর্যন্ত তাকালো না। মানুষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পর্যন্ত এত নির্মম হয় বুঝি! এত পাগলের মতো কাজ তো আর কেউ কখনও করেনা কখনও করবেও না। তবু ভেবেছিলাম দূর হলেও শান্তি তো পাবো। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় পরিদর্শক সমিতি যে এত রকমের হীন নীচ ভয়ঙ্কর কতকগুলো অনার্স, এম.এ জড় করে শিক্ষার অঙ্গনকে এমন বিষাক্ত করে রেখেছে জানলে ভিক্ষে করে চালাতুম তবু চাকরি করতে কখনও আসতাম না। রায়নার হাই স্কুলগুলো কিন্তু অত্যন্ত ভালো ছিল কিন্তু বর্ধমানের শিক্ষা বিভাগের কয়েকজন বিদ্যালয় পরিদর্শকের উদ্যোগে আর‌ও ডবল অপমান করা শুরু হয়ে গেল। রায়নার এস.আই. অমিত চক্রবর্তী ভেতর ভেতর একজন প্রাথমিক শিক্ষককে পর্যন্ত আমার পেছনে লেলিয়ে দিলেন। তিনিও ফোন করে আমাকে উত্যক্ত করতে লাগলেন। তিনি ভুলে গেলেন আমি তার অনেক উঁচুতে চাকরি করি। বলতে লাগলেন,আপনার নামে অমুকে এই বলেছে তমুকে এই বলেছে। একদিন তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেই দিতে হলো তার ওই অভদ্র আচরণের জন্য। অথচ আমি কখনও কার‌ও পেছনে লেগেছি বলে কেউ বলতে পারবে না। খুব কষ্ট হতে থাকলো যে কোথায় যাবো আমি। একটাও কি জায়গা নেই যেখানে গিয়ে একটু দাঁড়াই। শিক্ষা বিভাগে কি একজন‌ও কেউ শিক্ষিত নেই। এত হীন মানুষের সমাবেশ এক জায়গায় হতে পারে! কোথায় গিয়ে বাঁচবো তবে ? রায়নার একজন মাধ্যমিক শিক্ষক যে বীরভূমের অমিত চক্রবর্তীর সহপাঠী ছিলেন তিনি পর্যন্ত আমাকে রোজ নাস্তানাবুদ করে তুললেন। বিকাশভবনের ডেপুটি ডিরেক্টরের প্ররোচনায়। অথচ এমনটা হ‌ওয়ার নয়। বহু হাইস্কুলে যাই কেউ বলেন না আপনি মশাই একটা ছোটলোক। কিন্তু এই শিক্ষক অফিসে এসে সকলের সামনে বিনাকারণে অপমান করেন। অথচ সকলেই জানেন ওনার সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাত হ‌ওয়ার নয়। আমি ওই স্কুলের প্রশাসক, শিক্ষক মাত্র দুজন। আর‌ও দুটো স্কুলের প্রশাসক সেগুলিতে ২০/২২ জন করে শিক্ষক তাদের সঙ্গে হার্দিক সম্পর্ক। অথচ দুজন স্কুলের একটি শিক্ষক অফিসে এসে দিনের পর দিন অপমান করে। আর কাউকে নয় শুধুমাত্র আমি তার টার্গেট। জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিডিওকে বলি, ডিআইকে বলি সকলে বলে লিখিত অভিযোগ করুন। শেষ পর্যন্ত তিনি মিড ডে মিলের একবস্তা চাল সরিয়ে দিয়ে এস এস সির চাকরি ছেড়ে সরকারি চাকরিতে চলে গেলেন। গিয়ে সেখানে যোগদান করতে পারলেন না। অমিত চক্রবর্তীর প্রিয় বন্ধু। প্রশান্ত ব্যানার্জী যাকে বর্ধমান ডি আই অফিসে বসিয়ে আমার পেছনে লাগার প্ল্যান রচনা করেছিলেন। চাকরি চলে গেল তার। শিক্ষককে আমি চাকরি ফেরালাম। ফড়িং অফিসার অমিত চক্রবর্তীর বন্ধুকে বাঁচালাম। আমাকে মেরে ফেলতে যাকে বোড়ে করেছিল চাল চুরি করিয়েছিল সে আমার শেষে চাকরি বাঁচাতে লিখে দিলেন "আমাকে ক্ষমা করুন।" জীবনে কখনও অন্যায় কাজ করিনি ক্ষতি করিনি। আমি জানি রায়নায় আর কে কে তাকে সঙ্গ দিয়েছিল। তবু তাদের কার‌ও ক্ষতি চাইবো না। সকলে ভালো থাকুন। ( ক্রমশ ) অলোক কুন্ডু। ৫.১০.২০২০

সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০

অলোকের ঝর্নাধারায়-১৭

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা
#indianwriterscommunity
#kolkatadiaries #kolkata #writer #lekhak #facebookpost

■অলোকের ঝর্নাধারায়
(আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-১৭

সবে গ্র্যাজুয়েট হয়েই তিন বছরের মাথায় সরকারি চাকরি। চাকরির দু-মাসের মাথায় অফিসের এক বন্ধু, স্মরণ বললো, এই ক্লার্কের চাকরিতে তো বেশি মাইনে নয়রে,বরং চল বি.এড.পড়ি দুজনে। বি. এড.পড়লে বাইরে থেকে পরীক্ষা দিয়ে স্কুল ইন্সপেক্টর হ‌ওয়া যায়। তাই দুজনে নাইটে ভর্তি হয়ে গেলাম যাদবপুর বিদ্যাপীঠে। অফিস করে ১৮ মাস ধরে যাদবপুরে বি.এড পড়তে গেছি। কিন্তু আমার ওই বন্ধু তিনমাস পরে ছেড়ে দিল। সেই সময় আমি গোলপার্কের ফার্ন রোডের মামার বাড়িতে থাকতাম। কিন্তু যখনকার কথা বলছি তখন আমার বি.এড পড়া শেষ হয়ে গেছে। বি.এড শেষ করেই, তালতলার ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে, নাইটে ফাইন আর্টসে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। সেও এক ঘটনা, মধ্য হাওড়া শিক্ষালয়ের আর্ট টিচার পৃথ্বীশ দা আগে আমাদের পাড়ায় থাকতেন। উত্তরপাড়ায় উঠে গেলেন, একদিন ওনার নতুন বাসায় উত্তরপাড়ায় গেছি, পৃথ্বীশ দা আর্ট কলেজের ফর্ম হাতে ধরিয়ে দিলেন। বললেন তোমার দরকার আছে। ব্যস পরীক্ষা দিলাম। চাকরিতে এত সময় দিতে গিয়ে ছবিআঁকা অবশ্য সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। হাওড়া অথবা শিয়ালদহ স্টেশনে নাইট কলেজের পর স্কেচ করে বাড়ি ফিরতে রাত ১২ টা হয়ে যেত তখন। আবার রবিবার বন্ধুদের সঙ্গে আউটডোর বেরিয়ে যাই। ব্যাস নতুন জীবন, বাড়িতে কে আসছে কে যাচ্ছে কিছুই খবর রাখি না। একপ্রকার বাউন্ডুলে জীবন। আমার বন্ধু ছিল বর্তমানের শিল্প নির্দেশক, অলয় ঘোষাল। তখনই অলয় দারুণ ছবি আঁকতো। অলয়‌ও আমাদের সঙ্গে স্কেচ করতো। একসঙ্গে যারা বাইরে আমরা স্কেচ করতাম, নিজেদের মধ্যে একটা দল হয়ে গেছে বেশ ভালো। ওই দলে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ছেলেরাও কয়েকজন আছে। হৈ হৈ করতে করতে অফিসে ছুটি নিয়ে প্রথম ৭/৮ দিনের ট্যুরে ছবি আঁকতে দার্জিলিং চলে গেলাম। তবে অলয় যায়নি। কলেজের গ্রীষ্মের ছুটি তখন। সকলে আমাকে করলো ম্যানেজার। একদিন আঁকতে বেরিয়ে ঠিক করা হলো, সেদিন সিঙ্গল সিঙ্গল কাছে দূরে আমরা বসবো। ছবির দৃশ্যমান স্থান যেন কমন না হয় সকলের। অ্যাঙ্গল‌ও এক না হয়। খেয়েদেয়ে তাই এক একজন এক একদিকে চলে গেলাম। প্রত্যেকর সঙ্গে একটা জায়গায় দেখা হ‌ওয়ার টাইম ঠিক করা হলো। ছবি আঁকতে গিয়ে এখানে একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো। সেই কথাটাই বলবো। শুনলে মনে হবে এরকম ঘটনা সত্যি হয়! একবারে সত্যি ঘটনা। পরে আর‌ও তিনবার দার্জিলিং গেছি কিন্তু ঠিক ওই জায়গাটা আমি আর আবিষ্কার করতে পারিনি। বড় ইচ্ছে ছিল ওই পরিবারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার পরিচয় করার। তবে স্টেশনের একটু সামান্য নীচে হবে জায়গাটা। সকলেই জানেন দার্জিলিংয়ে মাঝেমধ্যে মেঘ এসে কুয়াশায় ঘিরে ধরে চারপাশ। আমরা দার্জিলিং যাচ্ছি শুনে আর‌ও দু চারজন জুটে গেল। আমাদের দলে ১০ জনের মতো ছেলে তখন। কিন্তু সেদিন সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, আঁকতে গিয়ে। আমি যেখানে বসে আঁকছিলাম সেখানে আমার ডানদিকে একেবারে দূরে দেখা যাচ্ছে রোপ‌ওয়েটাকে। মাথার পেছন দিকে স্টেশন। তবে দুটো বাড়ির ফাঁক দিয়ে খানিকটা দেখা গেলেও স্টেশন বলে কিছু বোঝা যায় না যেখানে বসেছি। সামনে নীচের দিকে কখনও রোদ আবার কখনও কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। বামদিকে কয়েকটা বাড়ি। দুদিকেই রাস্তা নেমে উঠে গেছে। তবে আমি বসেছি একটা তেমাথার মাঝে।  পেছনেও স্টেশনের দিকে রাস্তা। তবে হাঁটা পথ। আমার তিন ফুট সামনে দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে বটে তবে খুব কম। তবে দুদিক থেকেই আমাকে দেখতে পাবে। কেউ সরাসরি আমার গায়ে, গাড়ি উঠিয়ে দেবেনা। আমি যে দৃশ্যপট সামনে এনেছি, তা হলো ডানদিকে বাড়িগুলো ঘেঁষাঘেঁষি করতে করতে ক্রমশ দূরে মিশে গেছে। আর‌ও দূরে দুতিন রঙের সবুজ পাহাড়। সিধে রোপ‌ওয়ের যাতায়াত দেখা গেলেও ঘনঘন নয়। চা বাগানগুলো এত দূরে যে অস্পষ্টতা ও আলোর ফোকাসে একটা মায়াময় আবছায়া রূপ দন্ডায়মান। বাঁ দিকেও বাড়ি। শুধুমাত্র যে রাস্তাটা চলে গিয়ে নীচে হারিয়ে গেছে না দাঁড়ালে সেটা বোঝা যায়না। পেন্সিলের স্কেচ যখন করেছি তখন‌ও লক্ষ্য করিনি যে আমাকে কেউ দেখছেন, বামদিকের একটা বাড়ি থেকে। বাড়ির সামনে একটা বেশ দাওয়া মতো সেটা টিন দিয়ে ঢাকা। চালার শেষ প্রান্তে একটা সদর ঘর দুদিকে কাঠের জানলা মাঝের দরজাটা বন্ধ। পাশে আর‌ও দুটো বাড়ি। প্রতিটি বাড়িতেই ফুলের বেশকিছু গাছ। ছবি আঁকতে গেলে সব জায়গাতেই পথচারী কিংবা পাশাপাশি বাড়ি থেকে কৌতূহল হয়ে দেখে থাকে, এটা নতুন কিছু নয়। মাঝে একবার ঝিরিঝিরি করে পাতলা জল পড়লো কুয়াশা থেকে। আমার এক্সট্রা পলিথিন সিট আঁকাতে ঢাকা দিয়ে ব্যাগ চাপিয়ে কাছের বাড়িটার ছাউনিতে একটু দাঁড়ালাম। থেমে যেতে গিয়ে বসেছি। জল রঙ। প্যালেটে রঙ গুলে রঙ চাপাতে ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ হলো ফার্স্ট টোন চাপাতে ব্যস্ত। যে বাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেই বাড়ির জানলায় দুটি মুখ। শরীরের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। মা ও মেয়ে মনে হলো। অন্য কোনও সম্পর্ক‌ও হতে পারে। সেকেন্ড টোন সবে শেষ হয়েছে একটু দাঁড়িয়ে দেখছি ছবিতে কি কি ভুল হয়েছে। পাটা ধরে গেছে। পাটা ছাড়িয়ে নিচ্ছি। দেড় ঘন্টার মতো হয়ে গেছে। ফাইনাল টাচ দিয়ে এবার উঠে পড়বো। তবে অন্যদিন একসঙ্গে দু তিনজন থাকি, কথা হয়, গল্প হয়, হাসি ঠাট্টা হরদম চলতেই থাকে, আঁকার‌ও সুবিধা হয়। কি ভুল হচ্ছে কেউ না কেউ ধরিয়ে দেয়। আজ একবারে মুখবুজে কাজ। কাউকে জিজ্ঞেস করার‌ও নেই। হঠাৎ আমার সামনে দাঁড়িয়ে ফ্রকপরা একটি মেয়ে। একদম নেপালি নয়। একটু লম্বাটে মুখ, বয়স ১৭/১৮ হবে। পায়ে মোটা হাওহাই। হাঁটুর নীচ পর্যন্ত সাদা জামা। একটা লাল বুকখোলা সোয়েটার। মেয়েটার হাতে একটা বড় পোর্সিলিনের সাদা বাটি। একবাটি তেলমাখা মুড়ি। তেলে ভাজা চিনেবাদামে ভর্তি। আমি নির্বাক। কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছু একটা বলছে, কিন্তু সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না। নিতে বলছে এইটুকু বুঝলাম। দূরে মেয়েটির মা দাঁড়িয়ে বাড়ির সদর দরজায়, আমাকে হিন্দিতে নিতে বললেন। আমি বাটিটা নিতেই মেয়েটি ফট ফট করতে করতে ভদ্রমহিলাকে কি সব বলতে বলতে হাসতে হাসতে চলে গেল। ভদ্রমহিলাও ঢুকে গেছেন। খুব দূরে নয়। মাত্র ১২/১৩ ফুট দূর হবে। ওরা অনেকক্ষণ থেকে দেখছিল। তবে পরে আর জানলায় কেউ নেই। আমি আগেকার দিনের ওয়াটার বোতল থেকে জল বার করে হাত ধুয়ে মুড়ি খেতে শুরু করলাম। ভেতর ভেতর লঙ্কা দেওয়া। গুঁড়ো মশলা দিয়ে মাখা বাদামগুলো তখনও গরম আছে। আমি আর ওই বাড়ির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি না। বেশ খিদে পেয়েছিল। ভাবছি এই কথা বললে ওরা আজ চাঁদা তুলে আমাকে পেটাবে। এরপর খাবার জল এলো। আগেকার দিনের মোটা ঘোলাটে বড় কাঁচের গ্লাসে ধোঁয়া ওঠা সঙ্গে চা। গ্লাসের মুখটায় একটা চাপা দেওয়া। মেয়েটা আমার পেছন দিক থেকে এসে জলটা আমার হাতে দিল। চা-টা একটা প্লেন জায়গায় রাখলো। জলটা গরম করে দেওয়া বেশ অনেকটাই খেলাম। মেয়েটা এতক্ষণ রাস্তায় হাঁটু রেখে বসেছে। হাত বাড়িয়ে জলের গ্লাসটা নিল। আমি ততক্ষণে চায়ের গ্লাস হাতে নিয়েছি। মনে হলো ভদ্রমহিলা বোধহয় জানতে চাইছে চা গরম আছে কিনা। তখন‌ও আমার ছবি আঁকা শেষ হয়নি। বললাম, হ্যায়। চা খাওয়ার ফাঁকে জানতে চাইলেন কেন আঁকছি কোথা থেকে এসেছি। আধঘণ্টা দেরি যে হয়ে গেল আমার তখন খেয়াল নেই। চা খেয়ে গ্লাস দিয়ে এলাম দাওয়াতে। এইভাবে ঋণী হয়ে যাবো কখনও ভাবতে পারিনি। তখনও আমার ঘোর কাটেনি। আমি ছবি আঁকার থেকে ওদের ব্যবহার ওদের আচরণ ওদের স্নেহবৎসল এই ব্যবহারে আমি আপ্লুত। আমি যে নেবোনা না নেবোনা করছিলাম সেটা যেন ঠিক হয়নি আমার বলা, ওই ভেবে কুঁকড়ে আছি বেশ।
পরে মনে হলো ছবিটা পরেরদিন গিয়ে দিয়ে আসা উচিত ছিল। কোনও কারণে দেওয়া হলোনা, সময় হলোনা। সকলকে বলতে, প্রথমে কেউ বিশ্বাস‌ই করতে চায়নি। কিন্তু এই ঘটনার জন্য যে ওদের সকলকে চা পকোড়া খাওয়াতে হলো সেটা এখনও মনে আছে। জীবনে অনেক দুঃখকষ্ট পেয়েছি। তবে এইরকম হীরেমাণিক ঘটনাগুলো ভাবলে এত আনন্দ হয় যে আমাকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে হয়। কিন্তু এখনও বুঝি তবুও যেন কত ঋণী আছি...( ক্রমশ) অলোক কুন্ডু। ৫.১০.২০

অলোকের ঝর্নাধারায়-১৫

অলোকের ঝর্নাধারায়
(আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-১৫

■হাওড়ার অফিসে শিক্ষকদের ১২০০০ হাজার কিংবা তার‌ও বেশি পেনশন ফাইল দেখেছি, করেছি এমনকি ফাইল খুলে পর্যন্ত সাজিয়ে দিয়েছি। সেলাই করে দিয়েছি যাতে না কাগজ হারিয়ে যায়।এটা আক্ষেপ নয়। মেন লোডটা আমি নিলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সাহায্য করেছেন। দিন দিন আর‌ও কাজ বেড়ে গেছে ক্রমশ। ডিপিপিজির ফাইলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করাও আমার ঘাড়ে চেপে গেলো। যদিও খুব কম ফাইল সল্টলেক থেকে ফেরত আসতো এবং এলেও এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে পুণরায় পাঠানো হোতো। এছাড়া সমস্ত চিঠিপত্র করার দায়িত্ব‌ও পড়ে গেল। বিশাল পেন্ডিংয়ের বিশাল ভিজিটর। প্রতিদিন ভিজিটর মিট ২০/৩০ জন। সরকারি অফিসে কাজ চাইতে গেলে তাকে খেদানো হচ্ছে একটা অবধারিত ব্যাপার। লোককে যাচ্ছেতাই করা দুর্ব্যবহার করা। কিন্তু হাওড়ায় এসে আমার রোজ চা খরচ হতে লাগলো ৭০/৮০ টাকা। শিক্ষকরা বুঝতে পারলো বহুবছর বাদে তারা একজন বন্ধু পেয়েছে। কেউ শুধু মুখে ফিরে যাননা। চা নয় এলে কাজ চলার খবর জানতে পারেন।
● বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব মাত্র ১৫ মিনিট হ‌ওয়া সত্ত্বেও বাড়ির কার‌ও সঙ্গে সামান্য কথা বলার সময় পাওয়া বড় কঠিন হয়ে দাঁড়ালো দিনকে দিন। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল আমার পারিবারিক জীবন। 
কলকাতায় কাজ করার সময় যে ছুটির পর এক আধদিন সন্ধ্যায় একাডেমিতে নাটক দেখেছি, আমার মেয়ে ব‌উ এমনকি শালি পর্যন্ত চলে গেছে। আমার সেইসব শেষ হয়ে গেল। বিদ্যালয় পরিদর্শকদের‌ই যে কাজ আমি করে দিচ্ছি সেটাই তারা ভুলে গেলেন। আমাকে সাহায্য করার বদলে তারা সবসময় চেষ্টা করলেন আর‌ও অন্যান্য কাজ চাপিয়ে দেবার। সব সময় তাদের চেষ্টা থাকলো আমাকে কীভাবে ব্যতিব্যস্ত রাখা যায়। তাদের ইউনিয়ন না করার জন্য তারা সকলে মিলে মাসিক সভায় আমাকে শত্রুর মতো করে আক্রমণ করতে থাকলো। 
●একদিন অফিসে মুখ নীচু করে কাজ করছি। আমার টেবিলের সামনে এসে হাজির হলেন এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক। রিটায়ারড শিক্ষক শিক্ষিকারা তো হামেশাই আসেন। ওনাকে দেখে আমি টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। আমার স্কুলের স্যার শুভেন্দুবাবু। উনি আমাকে ভুলে গেছেন। তখন ওনার বয়স ৭২/৭৩ কি আর‌ও বেশি হবে। সঙ্গে মনে হয় ওনার পুত্র হবে, ঠিক চিনিনা। স্যারের এক হাতে লাঠি ও অন্য হাতে একটা থলি। পেনশন ফাইল জমা করবেন। আমি তখনও পরিচয় দিইনি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কবে রিটায়ার করেছেন। উনি বললেন ৭ বছর আগে। কেন এত দেরি। উনি কাঁপছেন। আমার সামনের চেয়ারে বসতে বসলাম। বললেন ওনার অবসরের ব্যাপারে আইনি জটিলতা থাকায় দেরি হয়েছে। হাইকোর্টের জজ সাহেবের অর্ডার সঙ্গে দেওয়া আছে। আমি বললাম আমি আপনার ছাত্র। উনি দেখলেন আমাকে। সাল জিজ্ঞাসা করলেন। দেখলাম চিনলেন না। থলি থেকে ফাইল বার করলেন। সেই দোর্দণ্ড প্রতাপ আর নেই স্যারের। স্যার প্রচুর ছেলেকে মেরেছেন কিন্তু আমাকে মারটা মনে হয় একটু বেশি ছিল। তা নয় যাকে মেরেছেন সে অন্ততঃ স্যারকে ভোলেনি। জিজ্ঞাসা করলেন কতদিন বাদে পাবো টাকা পয়সা। বললাম একটু সময় লাগবে, কারণ সবটুকু আমি করিনা। আমার কাজের পর‌ও উপরে নন্দা দি মিলিয়ে দেখেন আবার। তারপর অডিট অফিসার দেখেন। তারপর সল্টলেকে যায়। ধরে নিন নরম্যালি দু তিনমাস লাগার কথা। 
●কিন্তু সল্টলেকে তখন সমস্ত জেলার পেন্ডিং জমে পাহাড়। বাম সরকার সত্যিই তখন শিক্ষকদের পেনশনের জন্যে একটু নড়েচড়ে বসেছে। মাঝে একটা হচপচ অবস্থা হয়েছিল। শিক্ষকদের পেনশন দেওয়ার ব্যাপারে প্রভূত চেষ্টা চলছে। কিন্তু জেলা অফিসগুলোতে বিদ্যালয় পরিদর্শকরা নড়বড়ে করে রেখেছে। তারমধ্যে কিছু কাজের লোক সব সময় থাকেন, তাদের কেউ কেউ এখনও আছেন তারা কাজটা করেছিলেন যথাসাধ্য। হয়তো আমার থেকেও বেশি করেছিলেন বলে সেইসব জেলা অনেক উপরে ছিল। হাওড়া নড়বড়ের অন্যতম। কলকাতায় প্রণব সরকার না থাকলে ওখানেও এই এক‌ই অবস্থা হোতো। 
●যদিও শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের সম্মানে তুলেছে বাম সরকার। এটা না মেনে উপায় নেই। শিক্ষকদের পেনশনের জন্য‌ সমস্ত আইনকানুন বামফ্রন্ট সরকারের করা। আসলে কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও বিদ্যালয় পরিদর্শক সমিতির জন্য সরকার কিছু করতে পারছিল না। কর্মচারীদের ইউনিয়ন‌ ছিল শিক্ষকদের অসম্মানিত করার একটা বড় বাধা। তারা পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলা অফিসকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। তখন হাওড়া জেলার প্রাইমারিতে খাতাকলমে সিদ্ধান্ত নেওয়াই ছিল মাসে সর্বোচ্চ ১৫ টি ফাইল সল্টলেকে যাবে। অথচ অবসর নেন তার থেকেও বেশি। প্রতিটি সার্কেলে অবসর মাসে তখন ২০/২২ জন। জেলায় মাসে অবসর নিচ্ছে ৩২০-এর বেশি। তার ওপর মাত্র দুবছরের বেশি পেনশন পেন্ডিংয়ের কোনও হিসেব জেলায় নেই। বাম আমলের‌ই ১৯৮১ থেকে পেন্ডিং পেনশনের কোনও হিসেব নেই জেলা অফিসে নেই। ফাইলগুলো কোথায় আছে কেউ জানেনা। ধুঁকতে ধুঁকতে ১০/১২ বছর পরে কোনও শিক্ষক এলে তবে বোঝা যায়। পুরনো যে হিসেব যায় তাতে মারাত্মক ভুল। দেখানো হয় পেন্ডিং ২০০টা তা আসলে ২৯ বছরের পেন্ডিং গুণে শেষ করা যায়না। কারেন্ট ফাইল নিষ্পত্তি হয় মাত্র ১৫ টি। তখন হাওড়া কাউন্সিল অফিসে চেয়ারম্যান হিসেবে এসেছেন সিপিএমের জেলা নেতা ও এবিটিএ-র নেতা শ্রদ্ধেয় উমাশঙ্কর গাঙ্গুলী মহাশয়। পরিচ্ছন্ন মানুষ, সৎ মানুষ, নিরপেক্ষ মানুষ। কাজের মানুষ‌ও বটে। যিনি প্রভূত ক্ষমতার শীর্ষে বসে কখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। এইরকম মানুষের দেখা পাওয়াও সৌভাগ্যের। এত জবরদস্ত নেতা কাজের খুঁটিনাটি বোঝেন, কখনও নিজের জন্যে সামান্যতম সুবিধা নেননি। ইনি হাওড়ার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমায় বললেন ১৫ টা নয় দ্বিগুণ করুন। সম্ভবত স্বপন বাগচিদা তখন কাউন্সিলর এ.আই অফ স্কুলস্, স্বপনদার অনেকগুলি কাজ। ওই মিটিংয়ের সময় সম্ভবত স্বপন দা ছিলেন। এরপর আমি বাড়িতে ৫/৬ টা ফাইল রাতে দেখার জন্যে নিয়ে যেতে থাকলাম। রাত তিনটে পর্যন্ত চলতো কাজ। যাই হোক ওনাকে আমি কথা দিলাম বাড়াবো। তবে আমি কিছু সাহায্য চেয়েছিলাম। পরে উনি এবিপিটিএর জেলা সম্পাদক রাধাবল্লভ সাহাকে বললেন কয়েকজন কাজ জানা ভালো শিক্ষক দেওয়ার জন্য যারা আমাকে সাহায্য করবেন। চারজন শিক্ষক ও হাওড়া কাউন্সিলের দুজন নিয়ে একটা সেল হলো জায়গার অভাবে দু জায়গায় বসে কাজ আরম্ভ হলো। 
●শুভেন্দুবাবুকে বললাম যত তাড়াতাড়ি পারবো আপনার ফাইল সেরে দেবো। তবু তিনমাস একটা সময় ধরে রাখুন স্যার। আমি বললাম চা খাবেন স্যার। উনি মাথা নাড়লেন, খাবেন না। ওনার ছেলেকে বললাম একমাস বাদে খোঁজ নিন। এমনিতে আমার হাতে কয়েক হাজার পেন্ডিং। আমার নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। কেউ বাড়িতে এলে অশান্তি হয়ে যায়। আমি কোথাও যাইনা। কবিতা লেখা তো স্বপ্ন। এত কাজের মধ্যে বিদ্যালয় পরিদর্শকদের ইউনিয়ন ডি.আই. সাহেবকে দিয়ে আর‌ও একটা সার্কেল অফিসের চার্জ জবরদস্তি গছিয়ে দিয়েছে। ব্যতিব্যস্ত করা ওই শুরু হলো। আমি মুখগুঁজে কাজ করছি আর আমার অন্য বিদ্যালয় পরিদর্শকরা অফিসের একটা ঘরে তখন আড্ডা দিচ্ছে। হৈ হল্লা করছে।
আড্ডার হাটে বসেছেন আমার পেছনে লাগা মায়া দাস, রঞ্জিত ব্যানার্জীরা। হো হো হি হি চলছে। আমার ঘাড়ে কিন্তু দুটো অফিস। দুপুর বেলা বাস ঠেঙিয়ে আন্দুল যেতে হবে ওখান সন্ধ্যা ৭ টা।
●আসলে শুভেন্দুবাবু একসঙ্গে দু জায়গায় কাজ করতেন। হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটিতে উনি ছিলেন ক্লার্ক সকাল ১১.০০ টা থেকে আর আমাদের স্কুলে পড়াতেন সকাল ৬.২০ থেকে ১০.২০ পর্যন্ত। দুটো অফিস থেকেই উনি সরকারি বেতন ও ডিএ নিতেন। এই ঘটনা কংগ্রেস আমলের। কীভাবে নিতেন? মনে হয় উনি কংগ্রেস করতেন এবং কোনও বড় নেতার ছত্রছায়ায় ছিলেন। কিন্তু কেউ কি ওনার নামে অভিযোগ পর্যন্ত করেনি। এইসব ওনাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। তখন শিক্ষকরা ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করতেন। কিন্তু শিক্ষকের পেনশনটাই উনি আবেদন করতে বাম আমলে আটকে যায়। দু জায়গায় চাকরি দু জায়গায় বেতন নেওয়ার জন্য। এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। তাই দীর্ঘদিন ধরে কেস চলেছে হাইকোর্টে। তখন ডি এ খুব কম ছিল। যাইহোক হাইকোর্ট শেষ পর্যন্ত পেনশন আটকায়নি। একটি অফিসের কর্মজীবনের ডি.এ যত টাকা উনি নিয়েছিলেন তা ওনাকে জমা করতে বলে হাইকোর্ট। তখনকার দিনে ওইটাকার পরিমাণ খুব বেশি নয়। আমাকে বহু লোক এসে বলে শুভেন্দুমাষ্টার খুব বদমাইশলোক, দুটো চাকরি করেছে। আপনি ঘোরান ওনাকে। আসলে শুভেন্দুবাবু কাউকে চাঁদাটাদা দিতে চাননি। ৭/৮ বছর কেস লড়েছেন। হারজিত করতে করতে ডিভিশন বেঞ্চের রায় এনেছেন। প্রচুর টাকা কোর্টঘর করতে খরচ  হয়েছে। আমি তাদের বললাম একদম আমার কাজে নাক গলাবেন না। আসলে অফিসের কেউ কেউ টাকাপয়সা চায়। আর এটাই হচ্ছে সরকারি অফিসের মূল রোগ। শুভেন্দুবাবু তাড়াতাড়ি পেনশন পেয়েছিলেন। আর একটা দিন বড় জোর আসতে পেরেছিলেন। আর কখনও দেখা হয়নি। ( ক্রমশ:) -অলোক কুন্ডু । ৩.১০.২০২০

অলোকের ঝর্নাধারায়১৮

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা
#indianwriterscommunity #kolkatadiaries #kolkata #writer #lekhak #facebookpost

অলোকের ঝর্নাধারায় 
( আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-১৮

◆ শিবপুর দীনবন্ধু ইনস্টিটিউশন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। কলেজে গিয়ে একগাদা নতুন বন্ধু হলো। সন্ধ্যায় কলেজ কিন্তু সকালে আমার নিত্য দিনের আড্ডা হলো শিবপুর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের উল্টোদিকে ঘড়িবাড়ির নীচে কংগ্রেস নেতা শঙ্কর দা-র কাছে। আসলে আড্ডাখানাটা হলো শিক্ষক কল্যাণ সঙ্ঘের ডাকসাইটে নেতা ও দক্ষিণ হাওড়ার কংগ্রেস নেতা শিবশঙ্কর গুপ্তর অফিস। অফিস বলতে ঠেক। আমি পড়ি নাইট কলেজে কিন্তু। আমার কলেজের ছাত্র-পরিষদের নেতা কুন্তল ভৌমিক, কুন্তল দার আড্ডা‌ও ওখানেই। কলেজে কিন্তু আমি ছাত্রপরিষদের ছেলেদের সঙ্গে খুব মিশিনা। আমার বন্ধু ওখানে আমাদের স্কুল থেকে যারা একসঙ্গে ভর্তি হয়েছি। যাইহোক সকালে কংগ্রেসের লোকেদের সঙ্গে মেশামিশি হলেও সন্ধ্যায় পাঁচমিশিলি বন্ধু। সকালে শঙ্কর দা-র ঠেকে আলাপ হলো গোরা দা-র সঙ্গে। গোরা দা-র দুটো বাড়ি। একটা হাওড়ার জুজারসায়। আর একটা হাওড়ার শিবপুরের মন্দির তলায়। একবার গোরাদার জুজারসায়‌ও গেছি। আসলে তখন ফার্স্ট ইয়ার একদম বেকার। পাড়ায় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সকলেই কংগ্রেসের ভক্ত। গোরাচাঁদ দাস আমার থেকে বড় কিন্তু কেন জানিনা ওর সঙ্গে আমার আলাদা বন্ধুত্ব। পড়াশোনা খুব জানেনা লোকটা।কিন্তু মানুষটা ভালো। তখন থেকেই পাড়া বেপাড়ায় আমার নাম আঁকাআঁকির জন্য। কখনও কোনও মেয়ের বি.এডের প্রজেক্ট করে দি। কেউ ১০/২০ টাকা দিলে ভালো অধিকাংশটা নামের জন্য করা। খুব আলাপ হয়ে গেল হাওড়ার সাঁকরাইল গার্লস স্কুলের বড় দির সঙ্গে। একদিন সরস্বতী পুজোর আগের দিন ধরে নিয়ে গেলেন তাঁর স্কুলে। সারা স্কুলবাড়ি আলপনা দেওয়ার জন্য। আমি পড়ি ফার্স্ট ইয়ারে আর সঙ্গে হাত লাগিয়েছে ২০ খানা ছোটবড় মেয়ে। আমাকে দেখা আর যাচ্ছেনা, ঢাকা পড়ে আছি। শেষে বড়দির ধমকে মেয়েরা অর্ধেক হয়ে গেল। সকলেই তার বাড়ি নিমন্ত্রণ করলো সরস্বতী পুজোয়। কিন্তু আমাদের ক্লাবে পুজো হয় তবে ছোট করে। যাইহোক গোরা দার সঙ্গে খুব আলাপ হয়ে গেল আঁকাআঁকির জন্য। গোরা দা তখন একটা এন. জি.ও. খুলেছে, ওর সংস্থার সাইনবোর্ড লিখে দিলাম। প্রথমে খুললো সেলাই স্কুল। মেয়েরা লেডি ব্রেবোর্ন পরীক্ষা দেবে ওর এনজিও-স্কুল থেকে। সেই সময় আমাদের যৌথ পরিবারের হাতির মতো ভাঙা ঝুরঝুরে বাড়িটা সবে পার্টিশন হয়েছে। ৫ টা ভাগ হয়েছে‌। আমার বাবার অফিস যত ভালো বাড়ি তত খারাপ। রোজ ঝগড়া জল নিয়ে কাপড় শুকোতে দেওয়া নিয়ে। ছাদে দৌড়লে অশান্তি। ক্লাস সিক্স-সেভেন পর্যন্ত ছাদে দৌড়াদৌড়ি করার জন্য বাড়িতে প্রচুর অশান্তি, বেদম মার খেয়েছি। মা কাঁদতে কাঁদতে একটা লাঠিই ভেঙে ফেললো একদিন আমার পিঠে। সেই থেকে আর বেশি ছাদে উঠতাম না। একটু সামান্যতম ঊনিশ-বিশ ঝগড়া। বালতি ছোঁড়াছুড়ি। একেবারে বস্তির মতো কেচ্ছাকান্ড। কে বলবে এই পরিবার জমিদার ছিল। সেইসব থেকে বাঁচতে পার্টিশন বিনা বাক্যবিনিময়ে আমার বাবা মেনে নিলেন। যে বাড়িতে জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে দিয়ে ভাগ্যগ্রমে ১২ কাঠা জুড়ে হাতির মতো বাড়ির ৫ ভাগের ১ ভাগ তখন তার প্রাপ্য। প্রাপ্য অংশটা আসলে একটা খন্ডহর। আমাদের অংশে সিঁড়ি নেই দোতলা আছে। ফুটো ছাদ দিয়ে জল পড়ে। কোনও পায়খানা বাথরুম নেই। চতুর্দিক বন্ধ হয়ে গেল। রাস্তার ধারের ছিঁটেফোঁটাও নয় বাজে অংশ দুদিকে হাওয়া বাতাস বন্ধ করা একটা বস্তাপচা অংশ পাওয়া গেল। মা দিদি বোন পাশের ময়রা পাড়ায় কার‌ও খাটা পায়খানায় ভোরে চলে যায়। আমি বাবা ভাই যাই পাশের মিত্তিরদের বাড়িতে একটা পাড়ার পায়খানা সকলের জন্য ছিল, সেখানে। সেটা নোংরা জঘন্যতম। এই অবস্থায় আমাদের অংশে কোনোভাবে ধারধোর করে একটা সরু সিঁড়ি আর একটা পায়খানা করতে হবে। হাওড়া মিউনিশিপ্যালিটিতে গিয়ে আমার এক সৎ পিসোমশাই অজিত সাধু ( প্রয়াত) অবজেকশন দিয়ে এসেছেন। অথচ দলিলে লেখা আছে আমরা এই কাজ করতে পারি। যাইহোক একজন ইন্সপেক্টর ও গোরা দা এসেছে রাজমিস্ত্রির কাজ বন্ধ করতে। আমার বাবাকে মিউনিশিপ্যালিটি থেকে নোটিশ ধরানো হয়েছে। আগে হেয়ারিং হবে তারপর কাজ। আমি তখন বাজারে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি গোরাদাকে আর একটা লোককে আমার বাবা কাকুতি মিনতি করছে। গোরা দা অবাক আমাকে দেখে। শেষে দুজনে বসে চা খেল আমাদের ঘরে। গোরাদার ইন্সপেক্টর বললেন বাবাকে, আপনি হাওড়া মিউনিশিপ্যালিটিতে গিয়ে একটা কাগজে স‌ই করে দেবেন। মিস্ত্রিরা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করুক। সেপটিক ট্যাঙ্কের ইঁট গাঁথায় আর বাধা র‌ইলো না। গোরা দা ওখানে গ্রুপ ডি হলেও কংগ্রেসের ইউনিয়ন করে ওর যথেষ্ট খাতির। অফিসার পর্যন্ত সমীহ করে। আমাদের সমস্যা মিটে গেল। কলেজ থেকে বেরিয়ে দু বছর বাদেই  আমি যখন হাওড়া ডি. আই. অফিসে চাকরি পেলাম। গোরা দা রোজ‌ই আমার কাছে একবার করে আসে। ওর লেডিব্রেবোর্ন স্কুলের অফিসিয়াল কাজটাও আমাদের অফিসে হয়। গোরা দা এসে বলে চা খেতে এলুম‌, নয়তো কিছু জমা দিতে। আসলে ওর ব‌উ জুজারসা গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকাও। সেই কারণে আর‌ও আসা বেড়ে গেছে। শিবপুরের ঘড়িবাড়িতে রোজ সকালে আর যেতে পারিনা। তবে কুন্তল ভৌমিকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। কারণ কুন্তল দা, আমার শিক্ষা বিভাগে চাকরির জন্য মেন তদ্বির করে দিয়েছে। কুন্তল ভৌমিক ক্যান্সারে মারা গেছেন। পরে সেইসব বলবো। সবে মে মাসে দার্জিলিং থেকে ঘুরে এসেছি। গোরা দা জুলাই মাসে এলো। তখন আমি খুব ব্যস্ত। অফিসের ছোট ক্লার্ক থেকে বড় কাজের ভার পাচ্ছি। একসঙ্গে আবার আর্ট কলেজে পড়ি। আমার হাতে সময় নেই। আমার এ.আই অফ স্কুলস তখন "তাহেব বক্স" সাহেব। কাঁথিতে বাড়ি। তাহেব বক্সসাহেব আমাকে রোজ শেখান কীভাবে ফাইলে নোট দিতে হয়। তখন ঘোর বাম আমল। আমার ভুল ইংরেজি ঠিক করে দেন। ইংরেজি কিছু ছাই তেমন জানিনা। বিভিন্ন লোক বলেন তোমাদের অফিসে মাল না দিলে বড় কাজ হয়না। ঘুষ কেউ কেউ নেন বুঝতে পারি। তবে বক্স সাহেব নেন না। থাকেন উলুবেড়িয়ার কোনও একটা মাদ্রাসায় ছাত্রদের সঙ্গে। পয়সা কড়ি কারা কারা নেয় বক্স সাহেব আমাকে চুপিচুপি বলেন। উনি অত্যন্ত সৎ মানুষ। শুক্রবার নামাজ পড়তে যান। এমনকি সোমবার বাড়ি থেকে এলে রুটি তরকারি একটা খেতে বলেন। ইচ্ছে হলে, কোনোদিন হাতে নিয়ে নি। নারকেলের নাড়ু খেতে দেন, এক‌ই কৌটোয় হাত ঢুকিয়ে মুড়ি নি ওনার থেকে। উনি আমার থেকে ৪/৫ টি পদ উপরে কাজ করেন। আমি লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক। উনি খেলা দেখতে ভালোবাসেন। আমার সঙ্গে খুব ভাব বলে, উনি না থাকলে স্কুলের লোকেরা আমার কাছে ওনার খবর জানতে চান। ওই সময় গোরা দা এসে বললো। পুজোয় ওর সেলাই স্কুলের মেয়েদের সঙ্গে আমাকে যেতে হবে দার্জিলিং। শুনেই আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছি। হ্যাঁ যাবো। কি করতে হবে। বললো ৪৫ টা মেয়ে যাবে। ওর ব‌উ ছেলে বাড়ির সকলে। এ সে নিয়ে অনেক মেয়ে। ছেলে বলতে রান্নার দুজন লোক। আর তুই। ওকে কোন‌ও রেলের অফিসার বলেছে পুরো একটা কোচ দেবে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে ৭২ টা টিকিট কাটতে হবে। ফেয়ারলি থেকে ব্যবস্থা হয় মেয়েদের স্কুলের জন্য। এটাতো একটা এন জি ও যাচ্ছে। তার ওপর নারী কল্যাণ ও শিক্ষা বিভাগের চিঠিচাপাটি দিয়ে ২৫% ছাড়। আমি আমার নাম, বয়স সব লিখে দিলাম। আমাকে ও ওর এনজিওর মেম্বার করে নিল কারণ রেলকে দেখাতে হবে যারা যাবে তাদের পরিচয়। বাইরের কেউ যেতে পারবে না। দুজন মাত্র কুক নেওয়া যাবে। ( ক্রমশ) অলোক কুন্ডু। ৬.১০.২০

রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০

বাজি পোড়ান জাঁকিয়ে: করোনা কো ভাগাইয়ে


বাজি পোড়ান জাঁকিয়ে/ করোনা কো ভাগাইয়ে।"
অলোক কুন্ডু

হিন্দু বাঙালির বৃহত্তম অংশের জন্য দুর্গা পুজো হতে চলেছে। বৃহত্তম এই জন্য বলছি কারণ সকলেই চুপ আছেন। ফেসবুক কিন্তু বৃহত্তম অংশ নয়। সমূহ বিপদের অপেক্ষায় আছি। জানি রুজিরোজগারের বৃহত্তর কারবার বাঙালির এই পুজো। সেইজন্যই পুজো বেড়েছে। বারোয়ারি নিয়ে বলছি। বাড়িতে পুজো করার দায় দায়িত্ব ব্যক্তিগত, তাই বলার ওখানে কিছুই নেই। অনেক পুজো আমার জীবনে গেছে নিরানন্দ, তাবলে সকলের আনন্দ কেন চাইবো না এটা হতে পারেনা। পুজো তো পুজো নেই আর , উৎসবের আকার নিয়েছে। তাই ভয়টা ওখানেই। এখন তাহলে তো বসে বসে দেখা ছাড়া কোনও উপায় নেই। একটা কথা সত্যি যে আমার মতো অসুস্থ লোকেরাই মারা যাচ্ছে তাই ভয়‌ও আমার থেকেই শুরু হবে। কিন্তু বৃহত্তর অংশের সত্যি সত্যি ভয় কেটে গেছে। যারা দিব্যি মাস্ক খুলে ঘুরেছেন ও স্যানিটাইজারকে উড়িয়ে দিয়েছেন তাদের কাছে করোনা নেহাতই শিশু। কিন্তু আমরা এখনও ভয় পাচ্ছি বাড়ির অন্যদের জন্য। তবে আমার কিন্তু মাথায় অন্য চিন্তা। সকলের সঙ্গে সহমত যে দুর্গাপুজোতে করোনা বাড়বে। একেবারে নিশ্চিত। যদি মৃত্যু না হয় একদম তাহলে আনন্দের সীমা থাকবেনা বটে তবে বোকার মতো জীবনে বলবো না মা দুর্গা করোনাকে জয় করেছে, এইসব আবোলতাবোল ভাবনার সঙ্গে সহমত হতে পারবো না সেটা আগেই বলেদিলাম। আমি বলছি 
অন্য কথা। বেশি করে যদি আমরা বিষ উৎপাদন করি তাহলে কি বিষে বিষক্ষয় হবে না‌। আপনি ঠিক ধরেছেন একদম টু দি পয়েন্টে ধরেছেন। আমি বলছি কালীপুজোয় দু দিন বেশি করে আনন্দ করতে। সরকার যেন এইবছর বেআইনি বাজি না ধরেন। পুলিশকেও বলছি এইবছর বাজি ফাটাতে দিন। ব্যাপক দূষণ হোক। কিন্তু মাস্ক পরে।
যাতে সেই বাজির বারুদের বিষ না আমাদের শরীরে ঢুকে যায়। তবে আমি খানিকটা নিশ্চিত যে ব্যাপক হারে বাজি পুড়লে করোনাকে কিছুটা জবাই করা যাবে। জব্দ করাও যাবে। দুর্গাপুজোয় করোনা যা ব্যাপক আকার ধারণ করবে তার শিরা উপশিরা বর্ধিতকরণ করবে সেই বাড়বাড়ন্ত কিন্তু একমাত্র বাইরের বিষ দিয়ে লঘু করা যেতে পারে।
যদি তা হয় তবে বলতে হয় জয় বাজির জয়। আমি কিন্তু আশাবাদী যে কালীপুজো এলে করোনা কমবে। বিষে বিষক্ষয়ের ফর্মূলা যেন আমার আশা দশগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। হাস্যরস, হাস্যকৌতুক কিংবা লঘুরস বলে আপনারা বলতেই পারেন। করোনা নিয়ে এত লিখেছি যে সত্যি বাড়িতে প্রচুর গঞ্জনা শুনতে হচ্ছে। ভাবছিলাম আর লিখবো না। আর কিছু নতুন ভাববো না। সোরা গন্ধক পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ক্যাডমিয়াম আর‌ও কতকিছু একত্রিত হয়ে ব্যাপক দূষণ নেমে আসুক দুদিন ধরে। নেড়া পোড়াও ১০০ গুণ বেড়ে যাক দোল হোলো কি না হোলো। পুড়িয়ে ছাই করার মধ্যে যদি কিছু হয়। এই আন্দাজে ঢিল মারার বিষয়ে এখনও কোনও জায়গায় আলোচনা হয়নি। লেখাও বের হয়নি। মিডিয়াও বলেনি। কিন্তু তাইবলে কপিরাইট নেই এই বক্তব্যের। টুকলে টুকুক। আমি সকলকে বেশি বেশি রঙ মশাল, ফুলঝুরি, চরকি, সাপবাজি পোড়াতে বলবো। হাউই আকাশে গিয়ে ফাটে বাতাসে মেসে। তাই বাজিওলাদের বলবো নতুন কিছু ভাবুন। যাতে ব্যাপক বাজি রাসায়নিক পোড়ে। বিশেষ করে গন্ধক পোড়ানোর দরকার আছে। কারণ গন্ধক ওষুধের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। যদিও পরিবেশবাদীরা আমাকে পেলে এইসব ভাবনার জন্য বেঁধে পেটাতে চাইবে। এইসবের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই কিন্তু গোমূত্র, মাদুলির থেকে অনেক বড় টোটকা। তবে আর চুপ থাকি কেন ? আমাদের স্লোগান হোক - "বাজি পোড়ান জাঁকিয়ে/ করোনা কো ভাগাইয়ে।" ©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...