শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

আমার জীবনের কথা


■ অলোকের ঝর্নাধারায়
◆ (আমার টুকরো জীবন) পর্ব-১১

● মূর্তি সাহেবের কোনও পুত্র ছিলনা। আমার বাবা ও উনি দুজনে দুজনকেই স্নেহ ও শ্রদ্ধায় এতটাই কাছাকাছি করে নিলেন যে কলকাতা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে আমার বাবার নাম রেকমেন্ড করে তিনি আনালেন, এখনও ওই নিয়ম এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে আছে, কারণ এটা সংবিধানে আছে। যতদিন মূর্তি সাহেব অবসর নেননি, আমার বাবা পিতার মতো তাঁকে মনে করতেন। এমনকি অফিসের বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত কাজ পর্যন্ত করে দিতেন। ব্যাঙ্কের কাজ রেলের টিকিট কাটা এগুলো করতে পারলে আমার বাবাও আনন্দ পেতেন। ল্যাবরেটরিতে কাজ করতে গিয়ে ছেলেখেলা করলে কি ধরনের ভয়ঙ্কর বিপদ হয়
তা অন্যদিন বলবো। যাইহোক চাকরি একটা হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের বেতন কিন্তু ভালো ছিল না তখন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় অফিসগুলোতে বামপন্থী ছাড়া কংগ্রেসের আই.এন.টি.ইউ.সি পাত্তা পেত না। অনেকেই নেহরু নীতির সুখ্যাতি করলেও নেহরু ইন্দিরার ব্যাপারে কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা প্রবল ক্ষিপ্ত ছিলেন। খবর কাগজগুলো কখনও তাদের সেই বেদনা তুলে ধরেনি। যাইহোক একদম যাদের খাওয়াপরা জুটতো না তাদের একটা সুরাহা হলো ব‌ইকি। আমাদের অল্প স্বচ্ছলতা এলো। সকালে বাসি রুটির বদলে এলো পাঁউরুটি। সন্ধ্যায় এলো মায়ের তৈরি সাদা ময়দার পাতলা পাতলা পরটা আর আলুর দম। এটাই আমাদের সংসারের পেটেন্ট জলখাবার হলো। আমার মায়ের রান্না তখন তেলে ঝালে গরগরে। তিনবেলা ভালোভাবে খাওয়া জুটতো না যাদের তাদের কাছে এছিল চরম পাওয়া। প্রথমেই বলেছি আমরা জমিদার ছিলাম। প্রজাদের আনা বিলে তখন বছরে পাওয়া যেত তিনটাকা, তাও অনেকেই খাজনা দিতেন না। সেইসব জড় করে ৫ ভাগ আর কটাকা। অন্যরা প্রজাদের জমি বিক্রি করতে পারলেও আমাদের যারা প্রজা ছিল তাদের স্বত্ব না থাকলেও সরকারি কর্মচারি ও অফিসাররা কয়েকলক্ষ টাকা ঘুষ চাওয়ায় আমাদের ওইজমি পড়ে আছে প্রজাদের কাছে। আমাদের নয়, সরকারের নয় ভোগদখলকারীদের‌ও নয়। যা আইন তাতে আমরা কিছু না পেলেও ভবিষ্যতে কারা ওই জমি পাবে সরকার জানেনা। আমরা আশা করিও না। যাইহোক বাবার চাকরির ফলে কিন্তু আমাদের তখন আনন্দের দিন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মূর্তি সাহেবের গল্প শোনা আমাদের সংসারের একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এক অনাত্মীয় যে, এইভাবে একটা সংসারের কাছে দেবতা হয়ে উঠতে পারেন তা শুধুমাত্র আমরাই জানতাম। কাছের রক্তমাংসের মানুষের থেকেও যে দূরের একজন প্রকৃত আপনজন হয়ে উঠতে পারেন তার প্রমাণ আমরা পেয়ে গেলাম। জন্মদাতা পিতার উপেক্ষিত সন্তান মধ্য বয়সে এসে তার বাবা খুঁজে পেয়েছিলেন। একজন অপরিচিত দক্ষিণ ভারতীয় আমাদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন মহাদেবতা। তবে উনি কখনও আমাদের বাড়ি আসেননি। আমার মা, লক্ষ্মী-ঘিয়ের পরটা ও আলুরদম পাঠাতেন ড.মূর্তির জন্য। নিরামিষ ভালো রান্না হলে আমার বাবার এই পিতার জন্যে তাও প্রায়ই যেত। তার সঙ্গে অন্যান্যদের জন্যে সেই যে পরটা আলুরদম লুচি পাঠানো শুরু হয়েছিল তা বাবার চাকরি জীবনে কখনও ছেদ পড়েনি। যতদিন না আমার বাবা অবসর নিয়েছেন ততদিন আমার মায়ের হাতের সাদা ময়দার পরটা আর আলুরদম, ধোঁকার ডানলা, ঘুঘনি জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনেকেই খেয়েছেন। স্বনামধন্য শৈলেন মান্না অন্য ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন এবং হাওড়ায় আমাদের বাড়ির কাছে তাঁর বাড়ি হ‌ওয়ায় আমার বাবাকে শৈলেন মান্না চিনতেন। মাঠে ঢোকার জন্য তখন বড় বড় খেলোয়াড়রা সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে মাঠে ঢোকার পাশ করে দিতে পারতেন। কত বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর চলতো দুনিয়া। শৈলেন মান্নার কাছ থেকে সেই পাশ নিতে বাবা বাড়িতে এবং অফিসের টেবিলে প্রায় যেতেন। একদিন ইয়ার্কি করে তিনি বললেন, ''কি রে কুন্ডু, খালি মাঠে ঢোকার স্লিপ দাও মান্নাদা, আর পরটা খাবে অন্যরা সবাই।" এরপর এক দুদিন শৈলেন মান্নার জন্যেও ওই খাবার গিয়েছিল। পরে শৈলেন মান্না বারণ করেছিলেন। মোহনবাগানের আর এক ফুটবলার কম্পটন দত্তরাও ওই অফিসে কাজ করতেন। বয়সে অনেক জুনিয়র, কম্পটন দত্তর জন্য তো প্রায় রোজ টিফিন যেত। শেষে মা আর অত পারতো না। রাগারাগি হয়ে যেত। তারপর ঠিক হলো সপ্তাহে এক‌আধ দিন ৩০/৪০ টা করে পরটা যাবে সঙ্গে ১৫ জনের আলুর দম। তবে আপনারা যারা নেহরু ও ইন্দিরাগান্ধীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে পাগল হয়ে যান। ওই দুজনকে আমার বাবা কিন্তু রীতিমতো ঘেন্না করতেন। ১৯৮৩ সালে আমার বাবা অবসর নিয়েছিলেন তখন‌ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিদের বেতন খুব একটা ভালো ছিলনা। যারা টি.এ পেতেন বা ট্যুর করতেন তবু তারা ভালোভাবে সংসার চালাতে পারতেন। বাবা মাইনের সমস্ত টাকাটাই মার হাতে তুলে দিতেন। নরসিমা রাও ও মনমোহন সিং না এলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিরা দীনদরিদ্র হয়ে চিরকাল থাকতেন। তবে পরে আমার বাবা ও মা ভালো পেনশন ও পারিবারিক পেনশন পেতেন। ( ক্রমশ:) অলোক কুন্ডু । ২৯/৯/২০।।

বুধবার, ২৫ মে, ২০২২

ঝড়ঝঞ্ঝায় কার লাভ

ইয়াসের লন্ডভন্ডের চেয়ে সুপারি কিলার সংবাদের যশ বিতরণ / অলোক কুন্ডু 

এমন তো নয় যে ঘূর্ণিঝড় এই প্রথম হলো গো। কিন্তু মিডিয়ার নাটক বাজি যেন একটু বেশি মনে হলো না। দীঘার কাজুবাদামের দোকানের ভেতরে মোটরবাইক ভাসছে, কেমন যেন মজা লাগলো। আরে গোসাবা, হিঞ্জলগঞ্জ, নামখানা, মালঞ্চ, পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কোথায় গেল। হাওড়ার শ্যামপুর কই? বাড়িঘর ছেড়ে ঘর-গেরস্থালি ছেড়ে কে কবে সহজে চলে যেতে চায়? পারে না সহজে। গৃহপালিত পশুগুলো আজ কোথায় যাবে ? হাজার ঝড় জলের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েও মানুষ সরে যায় নি কখনও। শেষ পর্যন্ত রেসকিউ করতে হয় তাদের। গবাদি পশুর জন্য অবশ্যই সেল্টার বাড়াতে হবে। ৭৫ বছর শুধু কেন বৃটিশদের সাহায্যও সব জলের মধ্যে ঢুকে গেছে সেই কবে। কিছুই হয়নি। এই রাজ্যের ৩৪ বছরের বন্যার হিসেবের কোটি কোটি টাকার হিসেব আজ পাওয়া যাবেনা। ত্রাণ দিয়ে ভোটার ক্রয় করা ছাড়া এখানকার রাজনৈতিক দলের আর কোনও গুণাবলী দেখতে পাওয়া যাবেনা। যায়নি। আজ পর্যন্ত যত ঝড়ঝঞ্ঝা হয়েছে তত লাভবান হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। অবশ্যই গ্রামে গ্রামে যে বামেদের কোথাও কোথাও দোতলা অফিস হয়েছে তার পয়সার সবটাই তো বন্যা আর ঘূর্ণিঝড় থেকে। সে যাকগে। কিন্তু কোনও নেতা এই আমদানি থেকে আজ পর্যন্ত বাদ যায়নি বোধহয়। স্বাধীনতার পর একটু একটু করে করলেও এতদিনে তো দু হাজার কিলোমিটার জুড়ে পাকা ঘরবাড়ি ও পাকা বাঁধ করে দেওয়া হয়ে যেত। পাকা বাড়ি না করলেও চলতো। যদি উপকূল তীরবর্তী অঞ্চলকে একটা মাষ্টার প্ল্যান করে নিয়ে, ভাগ ভাগ করে জায়গায় জায়গায় চৌবাচ্চা সিস্টেমে গ্রামকে গ্রাম ঘিরে রাখা যেত। সেল্টারও কি দু একটাও করা যেত না? কিন্তু কোনও কিছুই হয়ে ওঠেনি। এখন তো সাংবাদিকরা এমন করছে যেন কোথা থেকে গোপনে তারাও টাকা পয়সা পেয়েছে, অথবা কোনও দিক থেকে সুপারি পেয়েছে। হাবুডুবু খাচ্ছে আধা কোমর জলে সেকি রেসকিউয়ের ধুম। জলের তোড় এলে ইন্টারভিউ দিতে দিতে রেসকিউ বেরিয়ে যাবে তখন। একেবারে নাচনকোদন করে টিভি ফুটেজ। যেন ল্যান্ডফলটা দীঘাজুড়েই হয়েছে, হয়তো পশ্চিমবঙ্গেই। কলকাতা টিভির মহিলা সাংবাদিক এবং তাদের ড্রাইভার তো এমন কাঁদছে যেন পুত্রসন্তান মরে গেছে। ল্যান্ডফল যেন দীঘাতেই হয়েছে। এত তোড়ে জল এলে তো ভেসে তো গেছেই অনেক কিছু। সমুদ্রের একহাত দূরে পর্যন্ত ১০ বছর আগেও কোনও দোকানঘর ছিলনা, সবগুলো প্রায় এক মানুষ জলে। কিন্তু এইভাবে দলে দলে দীঘাতেই বা কেন এত সাংবাদিক গেলেন। কি টিআরপির গুণরে বাবা। উপকূল বরাবর হয়েছে বিপদ, জলচ্ছাস হবেই তো। সমুদ্রকে যেখানে যেখানে ঘিরে ফেলা হয়েছে সেখানে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে, মন্দারমণি তো উদাহরণ আছে। নদী সাগর উত্তাল তো হয়েছে। সাংবাদিকরাও কেন্দ্রীয় টাকার ভাগ পাবে বলে অনেকে ফেসবুকে বলছেন, মহা হাসির খোরাক। কেউ আবার পুরনো ফুটেজ দেখাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় এই প্রথম নয় এবং এবারে সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি এমনও নয় রে বাপ। ৭৫ বছরের ঘোটলা রে এইসব। ঘাটাল ঘাটাল করে সকলেই মরে গেলেন, ঘাটালের মানুষের দুর্দশার কথা কেউ ভাবে না, সেদিকে একবার ক্যামেরা গেলে তো পারতো। উত্তরও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর এমনকি পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়াতেও প্রতিবার লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়ে যান। নদী বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি হলে কি যে দুর্দশা হয় তা দামোদরের দুই পারের মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা কিছু কম নয়। ঘূর্ণিঝড় আর বন্যা যাই হোক না কেন মশা, সাপ আর পেটের অসুখেও লোক মরে যায় প্রচুর। বিপর্যস্ত মানুষগুলোর আর কিছু করার থাকেনা তখন, তারা পায় খালি চিঁড়েগুড়, পলিথিন সিট আর হাতে কিছু আর্থিক সাহায্য। বাম আমল থেকে এই আমল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অর্থ লুট, এইকারণে একটা বেশ মওকা হয়ে গেছে। হরিলুটের টাকার যেমন হিসেব হয়না তেমনি প্ল্যানও হয়না। দীঘার সি-বীচে দোকান বসে গেল অনর্গল। আমরা গিয়ে মজা লুটি। পরে সেইসব দোকান ভেসে গেলে আহা-উহু করবো, সাংবাদিকরা দীঘার সি-বীচে জল জমা দেখিয়ে দিচ্ছে। কম কি ? ঘরে বসে এইসব দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সমুদ্রের ধারে টালি দিয়েও সৌন্দর্য করা উচিত কিনা ভাবা উচিত আমাদের। নাকি গার্ডওয়াল আরও বাড়ানো উচিত। সমূদ্র উপকূলের পাবলিক এরিয়াকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, যদি ডমিনেট করা না হয়, তবে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে। এত বছরে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জন্যই তো তেমন কোনও প্ল্যান করা হলোনা। যদি এমন হতো জায়গা ঘিরে রেখে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে বড় বড় যদি চৌবাচ্চা গড়ে তোলা যেত দশহাজার একর জায়গা জুড়ে। তাহলে কেমন হতো। একটা মাষ্টার প্ল্যান নিয়ে যদি এইরকম চৌবাচ্চা করা হতো বিঘের পর বিঘেতে, হল্যান্ডের অনুকরণে, অন্তত তাদের ১০% যদি করা হতো এখানে। হল্যান্ড তো পুরোটাই বাটির মতো। সমূদ্র থেকে এক কিলোমিটার দূরে যদি এইরকম গ্রামপরিধি সরকার গড়ে তুলতো এবং লোককে যদি বলতো ওই গ্রামেই সকল নিম্ন আয়ের ও গরিবদের বাড়ি করতে হবে। তার জন্য জল প্রকল্প থেকে নিকাশি প্রকল্প ও বাড়ি ঘরের প্ল্যান সরকারের মতেই করতে হবে। যদি নদী বাঁধগুলি আরও চওড়া করে তৈরি করা হতো এবং পাঁচ ফুট অন্তর ব্যাপক বনসৃজন করা হতো। তাহলে অন্যরকম একটু হতো। বাঁধের কাজ কিছুটা হওয়ার পর যদি বাঁধের দুফুট ভেতরে পলিথিনের সিট দিয়ে একপ্রস্থ বাঁধরক্ষার প্ল্যান করা হতো তবে ওপরের দু-ফুট মাটি ধুয়ে গেলেও ভেতরের পলিথিন কিন্তু সহজে জলের তোড়ের কাছে মাথা নত করতো না। পারলে পলিথিনের ব্যাগ তৈরি করে তার ভেতর মাটি দিয়েও বাঁধের উপরি ভাগের দেওয়াল রক্ষা করা যায়। যাই করা হোক না কেন, একটা যেন মাষ্টার প্ল্যান করা হয় কিন্তু এই ৭৫ বছরে মনে হয় তা কিছুই হয়নি। বসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলিকে যদি পৃথকভাবেই প্রথম থেকে তৈরি করা যেত। পঞ্চায়েত যদি এই ৪৪ বছরে কঠোর হতো। তাহলেও হতো। উপকূল অঞ্চলে তো পঞ্চায়েতের একমাত্র কাজ হতে পারতো উপকূল বাঁচাতে চাওয়া। প্রতিবারে কয়েক হাজার কোটি এইভাবে জলাঞ্জলি দিতে কখনও হতোনা। জনজীবন বাঁচাবো কি না ? এই প্ল্যান করেই তো ১৯৭৭ সাল থেকে বামেরা মাঠে নামতে পারতো। আজ নিউটাউন গড়ে বামেরা যত কৃষককে বাস্তুচ্যুত করেছে তার থেকে বেশি নাম করতে তারা পারতো উপকূলীয় মানুষের রুজিরোজগার ও জীবন বাঁচানোর জন্য এক মাষ্টার প্ল্যান করে। কাঁচা বাঁধের ভেতরের জমিগুলোকেও জায়গায় জায়গায় ক্রংক্রিটের পাঁচিল দিয়ে ভাগ করে দেওয়া যদি হতো তাহলে বাঁধ ভাঙলেও গ্রামগুলোর মাঝ বরাবর ব্যাপক জল খালের মধ্য দিয়ে বহুদূরে পাঠিয়ে দেওয়া যেত এবং তার তেজও কমে যেত। এদিকে গ্রামের ভেতরের রাস্তা ও ঘরবাড়ি থাকতো ঘেরা চৌবাচ্চার মধ্যে। প্লাবনের জলকে বসতির কাছে না আসতে দেওয়ার একটি মাষ্টার প্ল্যান তৈরি করা উচিত ছিল। আর ওই এরিয়ার বাইরে যারা বাড়িঘর করবেন তাদের উপযুক্ত ভিত দিয়েই তবে বাড়িঘর করতে হবে নিজেদের মতো করে হলেও প্ল্যান ও দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা উত্তরণের ভাবনা থাখতে হবে এবং আগে হলেও হতে পারতো। এইরকম মাষ্টার প্ল্যান করার কোনও ব্যবস্থা হয়নি। এখনও সময় আছে উপকূল এরিয়া ও বন্যা কবলিত এলাকায় মাষ্টার প্ল্যান করা হোক। সমূদ্র উপকূলকে সৌন্দর্য করতে হলে সমুদ্রের প্রাকৃতিক স্থানটি ছেড়ে করা উচিত। কতটা উঁচুতে ওইসব দোকান ঘর, বাড়িঘর করা উচিত এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিয়মশৃঙ্খলা মেনে করা উচিত। তাছাড়া সুন্দরবনের বসতীপূর্ণ অঞ্চলকে চিহ্নিত করে চৌবাচ্চায় রূপান্তরিত করতে হবে। সি বিচের গা ঘেঁষে ব্যবসা ও বসতি গড়ে তোলার বিষয়ে একটি কঠোর আইন করা দরকার। সঙ্গে সঙ্গে উপকূলের বিদ্যালয় গুলিতে আরও পরিকাঠামো উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সেখানে জলের রিজার্ভার থেকে জনতা পায়খানা ও দোতালায় থাকার ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে। সমুদ্র উপকূলেও সেল্টার বাড়াতে হবে। বড় নদী ও সমুদ্রের ধারে জনবসতি কমাতে হবে। পর্যাপ্ত মশারী, পাউচের পানীয় জলের ব্যবস্থা, পাম্প সেট, গোডাউন এবং গ্রামে গ্রামে সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবকদের টিম গড়ে তুলতে হবে। এইসব না থাকলেই সাংবাদিক ও তার ক্যামেরা ম্যান হাঁটু জলে স্থানীয়দের বলবে সাঁতার কাটুন সাঁতার কাটুন, আমরা ছবি তুলে বলবো জলচ্ছাসে রেসকিউ টিম কেমন সাঁতার কাটছে, আর ল্যান্ডফল হয়েছে আসলে এই প্রথম ২০২১-এ। ইতিপূর্বে যে সব ১২৩/১৩০ কিমি ঝড় হয়েছে তার জন্য কিছুই দুরবস্থা কখনও হয়নি কোথাও। ©® অলোক কুন্ডু

বানিহাল থেকে শ্রীনগর ডি.এম.ইউ

বানিহাল থেকে গত ১১.৪.২০২২ এসেছিলাম ডিএমইউhttps://m.facebook.com/story.php?story_fbid=956144081760444&id=124001074974753
ট্রেনে চেপে। তার আগে অবশ্য ৩০০ টাকা দিয়ে শেয়ারে প্রাইভেট গাড়ি চেপে শ্রীনগরের নওগা থেকে
পৌঁছে গেলাম বানিহালে। ১১ কিমি বানিহাল জওহর ট্যানেল পেরিয়ে। ফিরলাম ট্রেনে করে ২.৪৫ -এ ট্রেন।
১.২৩ -এ বানিহালে পৌঁছে টিকিট কাটলাম। ৪৫ টাকার টিকিট কাটতে ৫০ টাকা দিতে কাউন্টারের ভেতর থেকে
ওধারে বসা ভদ্রলোক বললেন ৫ টাকা তো ফেরত দিতে
পারবো না। আমি পরের ভদ্রলোককে ওনার ৫+৫=১০
দিয়ে দিচ্ছি। আমি বললাম আপত্তি নেই। ওই ব্যক্তি বললেন, দাদা আপ দশ রুপিয়া লিজিয়ে। এ তো খুব মুস্কিল। তাই আমি বললাম আপ লে লিজিয়ে। এতে বুঝলাম যে কাশ্মীরীরা কত সৎ।

মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

অতঃপর মহামান্য আদালতের রায়ে ডিএ কি পাওয়া যাবে

রাজ্য সরকার কর্মচারীদের ডি.এ নিয়ে কি সুপ্রিম কোর্টে যাবে ? এই প্রশ্ন লাখ টাকার হলেও যেতে পারে এবং এতে আরও ৭/৮ মাস সময় নষ্ট হবে। তা হোক। কর্মচারীদের মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্য তো সরকারের থাকতেই পারে। তবে সরকার এর মধ্যেই পুজোর সময় ৭% ডিএ দিয়ে দিতে পারে এই জন্য, যে হাইকোর্টের রায়ের অবমাননাও তাতে হবে না। খানিকটা নিষ্কৃতি পাওয়া যেতে পারে। সরকার বলতে পারে আমার কাছে ডিএ দেওয়ার মতো কোনও অর্থ সংস্থান নেই। যতটুকু ছিল, তা কুড়িয়ে বাড়িয়ে দিয়েছি। বরং আদালতের কাছে এই বলে প্রশ্ন রাখতে পারে যে রাজ্য সরকারের এখন প্রচুর দায়। রাজ্যের মানুষের স্বাস্থ্যের কথা তাদের ভাবতে হয়েছে বলেই না তারা স্বাস্থ্যসাথীর মতো একটি জনহিতকর প্রচেষ্টা চালাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। গরীব মেয়েদের দুর্দশায় বঞ্চিত মেয়েদের জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডার কি তারা ডিএ-র জন্য তুলে দিতে পারে ? রাজ্য সরকার যদি আদালতে যায় তবে রিটে লক্ষ্মীর ভান্ডারের কথা তারা যুক্ত করে দিতে পারে। রিটে টাকা না থাকার কথা বলতে গিয়ে এইসব জনপ্রিয় আর্থিক ব্যয়ের কথা সরকার তুলে ধরতে পারে। কারণ সরকারের কাছে এইসব প্রচেষ্টা ঢাল স্বরূপ। এতে করে রাজ্য সরকার আদালতের কাছে মার্জনা চাইতে পারে, সময় চাইতে পারে। তাই কিছুটা ভাগ ডিএ, সরকার কর্মচারীদের দিয়ে দিতে পারে বর্তমান রায়ের ভিত্তিতে। তবে আদালতের সম্পূর্ণ রায় মানতে তারা আদালতের কাছেই আবেদন করতে পারে। তাতে লাঠিও ভাঙলো না সাপও মরলো না। আগামী বছর আরও ৩% কি ৪% ডিএ দিয়ে দেবে এবং বলতে পারে সরকার আদালত ও রাজ্যবাসী দুটোকেই মান্যতা দিলাম। কারণ একেবারে ডিএ না দিলে কোর্টের অবমাননা হবে। তাতে মুখ্যসচিবের হয়তো জেল জরিমানার অর্ডার আদালত দিতে পারে। তবে ডিএ একদম না দিলে উচ্চ আদালতের কি ভূমিকা হবে। নিশ্চিতরূপে আদালত রাজ্য সরকারের সমালোচনা করতে পারে মুখ্যসচিবকে, সাত দিনের জেল দিতে পারে এর বেশি মনে হয় আদালত কিছু করবে না। সরকারকে ফেলে দেওয়ার কথা বলতে আদালত বলতে মনে হয় পারতে নাও পারে। ডিএ না দিলে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে আদালত জোরাজুরি করতে পারে কি না এ প্রশ্ন লাখ টাকার। কর্মচারীদের যা অবস্থা তাতে তারা আন্দোলন করার ক্ষমতায় নেই। আইএএস / ডব্লিউবিসিএসরা ৩৩/৩৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পেতে শুরু করেছেন, অতএব ডিএ-র সঙ্গে তাদের আর কোনও স্বার্থ জড়িয়ে নেই। তাদের অ্যাসোসিয়েশন এই বিষয়ে মাথা ঘামাবেও না। তৃণমূল সরকারি কর্মচারীরাও এই বিষয়ে মাথা ঘামাবে না। পড়ে থাকবে মুষ্টিমেয় কর্মচারী। তারা আন্দোলন করলে নির্ঘাৎ জেল খেটে মরবেন। আদালতে বার বার মামলা হবে নতুন ভাবে। মোদ্দা কথা ডিএ নিয়ে যে মামলা চূড়ান্ত বিষয়ে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এই কথা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কেউ বলতে পারবে না এখন। সকলেই জানে হয়তো সরকারের সঙ্গে আরও আইনি লড়াই হবে। তবু আশা করা যায় রাজ্য সরকারের অফিসাররাও বুঝছে ডিএ একেবারে না দিলে যে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে তা থেকে তাদেরও মুক্তি নেই। তারা ফাইলে কি লিখবেন তবে। সরকার মানে তো শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী নন, শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক দলের সরকার নয়। সরকার মানে সকলের সরকার। সরকার পরিচালনা করেন আইএএস বা সচিবরা। তারা সংবিধানের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন দেখার রাজ্য সরকারের অফিসারদের নিচু তলা থেকে অর্থসচিব মুখ্যসচিব ডিএ দেওয়ার বিষয়ে কি বলেন বা ফাইলে কি লেখেন। তারা সরকারকে যে পরামর্শ দেন, মুখ্যমন্ত্রী তাতে স্বাক্ষর করেন একেবারে শেষে। কিন্তু তার আগে অন্ততপক্ষে চার/ পাঁচজন অফিসারকে একটা মতামত দিতে হবে। 
সরকারের মনোভাব বুঝে মতামত দিলেও সেই মতামতকে হতে হবে সাংবিধানিক এবং আইনের বাধ্যতামূলক নীতির উপর। তবে অনেকের ধারণা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সরকার সময় নিতে চাইবে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে যে কোনও ভোটে জিতে আসার জন্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কাউকে প্রয়োজনে আর লাগেনা। অবশ্যই এখানে বলে রাখা ভালো এই মূহুর্তে সরকার বুদ্ধি করে এখনই রাজ্য সরকার ও শিক্ষকদের মধ্যে ডিএ নিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করে দিতে পারে এবং তাতে আরও অনেকগুলো মামলার সম্মুখীন সরকারকে হতে হবে বটে কিন্তু এখন বছর দুই সরকার শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের ডিএ মিটিয়ে দিলেই চলবে। এই মূহুর্তে ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের যে সংকট উপস্থিত হয়েছে তাতে এই মূহুর্তে দুঁদে রাজনীতিক প্রণব মুখার্জির মতো একজন পরামর্শ দাতার দরকার ছিল। এই মূহুর্তে শিক্ষকদের মধ্যেও একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এখনই শিক্ষকরা আদালতের রায়ে যে ডিএ পাওনা হয় তা শিক্ষকরা হয়তো পাবেন না। তাদেরও আরও লড়াই করে তবে সরকারি কর্মচারীদের মতো দাবি আদায় করতে হবে। এখন এই মূহুর্তে সকলকে ডিএ না দিলে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকরা স্যোশাল মিডিয়ায় যে মিনিটে মিনিটে আন্দোলন ও সরকার বিরোধী ভাব প্রকাশ করে চলছে তা আরও শতগুণ বৃদ্ধি পাবে। তবুও এই বিরূপ প্রচারে তৃণমূল সরকারের ভোট একটাও কমবে না। কারণ ভোটের বিষয়টা এই রাজ্যে যে যখন রাজত্বে থাকে তখনই তাদের হারানো মুস্কিল হয়ে ওঠে।
কংগ্রেস ৩০ বছর বামফ্রন্ট ৩৪ বছর তৃণমূল কংগ্রেসও মোটামুটি ৩০ বছর রাজত্বে থেকে যাবে হেসেখেলে। তাই বর্তমান সরকার এই ডিএ এখন অল্প অল্প করে দিতে পারে সবটা দিয়ে দেওয়ার তার পরিকল্পনা কিছুতেই থাকবে না। তাদের হাতে আরও আর্থিক সহায়তা রাখতে হবে কারণ তারা এখনও এখানে রাজত্বে থাকবে।
©® অলোক কুন্ডু

বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২

মোহন-ইস্টের খেলা ছেড়ে সৌমেন ঠাকুরের বক্তৃতায় ভিড় : অলোক কুন্ডু

🎯 গুণি নেতা ও বক্তব্য গুণের হলে মানুষ মনে রাখবেন।

🎯 দেখতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের থেকে আরও সুন্দর ছিলেন। সত্যজিৎ রায় যখন তাঁকে দেখেছেন তখন তিনি রাজনীতি করেন। দারুন আবৃত্তিকার। গান গাইতে পারেন। কবিতা লিখতেন পারেন। ছবি আঁকতে পারেন।কিন্তু আদ্যোপান্ত একজন কম্যুনিস্ট। কম্যুনিস্ট পার্টি ও লেনিন সম্পর্কে দুটি বই লিখেছিলেন। কলকাতায় সৌমেন ঠাকুর বক্তব্য রাখলে হৈ হৈ পড়ে যেত। তাঁর বক্তব্য এতটাই টানটান, এতটাই তুখোড় এবং কাব্যিক ব্যঞ্জনাময় যে স্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতো যে আজকের দিনে তা ভাবতে পারা যাবেনা। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে ভাব ও ভাষা বোঝাতে তাঁকে কোনোদিন হোতো না। কখনো শালীনতা ছাড়িয়ে যেতেন না কিন্তু বিরোধীদের চরিত্রগুলিকে ছাল ছাড়িয়ে দিতেন। বিরোধীদের ন্যায় নীতিকে পর্যদুস্ত করে দিতেন। বক্তব্যের মাঝে তাকে এমন কোনও প্রসঙ্গ আনতে কখনও হয়নি যার ফলে তিনি ধিক্কার পান। অথচ তীব্র শ্লেষাত্মক বক্তব্য রাখতে তাঁর জুড়ি ছিলনা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্ররা ছুটছেন ডায়রি নিয়ে কী বলেন সৌমেন ঠাকুর, কেমনভাবে বলেন। রবীন্দ্রনাথ, সৌমেন ঠাকুরের অনুরোধে গান লিখেছেন পর্যন্ত। রবীন্দ্রনাথ খুব পছন্দ করতেন ঠাকুরবাড়ির এই সন্তানকে। হাওড়ার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা মৃগেন মুখোপাধ্যায় একদিন বলছিলেন, তখন ফার্স্ট ইয়ারে তিনি পড়েন। তিনি বলছিলেন, শুনলাম সৌমেন ঠাকুর একদিন উত্তর কলকাতায় এক জায়গায় বক্তব্য রাখবেন। তার আগের দিন বাবা একটা ফুল প্যান্ট কিনে দিয়েছেন। সেই সময় ধুতি ছেড়ে ছেলেরা সবে প্যান্ট পরছে। প্যান্টটা লুজ হয়েছে। আবার বাড়ি গিয়ে প্যান্ট পাল্টে ধুতি পরতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। তাই কলেজের দরোয়ানের ঘর থেকে নারকেল দড়ি দিয়ে কোমর টাইট করে ছুটলাম বক্তব্য শুনতে। সৌমেন ঠাকুরের বক্তব্য শোনার জন্য সিপিআই, আর. সি.পি.আই, কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক, এস ইউ সি আই সব দলের লোকেরা জড় হতো। আর আজ নেতাদের মুখ থেকে জঘন্য বক্তব্য শুনলে আমরা বিস্তর হাততালি দিচ্ছি। সত্যি আমাদের কত পরিবর্তন হয়েছে। সংস্কৃতির পরিবর্তও বলা যায়। আগে শুনেছি সাহিত্যক অধ্যাপকদের পড়ানো শুনতে অন্য ক্লাসের ছাত্রেরাও জড় হতেন তাঁদের ক্লাসে। কবি তরুণ সান্যালের ইকনমিক্স পড়ানো শুনতে স্কটিশে চলে আসতেন বাইরের ছেলেরা। আমি একবার কংগ্রেস নেতা দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের একটি সেমিনার শুনতে গিয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যার সঠিক উদাহরণ দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তিনি ছিলেন অধ্যাপক এবং ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যি মন্ত্রী ছিলেন। দেখতে এতটাই সৌম্য দর্শন ছিলেন যে সিনেমার নায়ক হতে পারতেন। আমার হাওড়ার দীনবন্ধু কলেজে যখন সুমন্ত চৌধুরী " লাস্ট রাইড টুগেদার" পড়াতেন আমরা সবাই ভাবতাম স্যার যেন খালি চিরকাল ধরে ওটাই পড়িয়ে যান। ক্লাস ফাঁকির অফুরন্ত সুযোগ সুবিধা ও প্রলোভলনেও তাই ক্লাস ছাড়তাম না। একবার কৃষ্ণনগরে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের খেলা। বাজার গরম। আর খেলা ঠিক হওয়ার বহু আগেই ঠিক হয়ে আছে সৌমেন ঠাকুর মশাইদের পার্টির মিটিং। সৌমেন ঠাকুর মুখ্য বক্তা নন। তখন তিনি পরিচিতি ততটা পাননি। আর তখন ইস্টবেঙ্গলে খেলেন বিখ্যাত পঞ্চপাণ্ডব। সকলে ধরেই নিয়েছেন একই সময়ে খেলা ও মিটিং পড়ে যাওয়ায় সভায় আর কেউ থাকবেন না। সভায় তখনও বড় বক্তারা আসেননি। সভার লোকেরাও অনেকেই সভা কিছুটা শুনে মাঠে যাবেন ঠিক করেছেন। তখনকার মাঠ বলতে চট দিয়ে ঘেরা। টিকিট কেটে খেলা। সৌমেন ঠাকুর বিকাল চারটের সময় সভা শুরুর টাইমের আধ ঘন্টা আগেই বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন। তার বক্তব্য শেষ হলো দেড় ঘণ্টা পর। ততক্ষণে খেলা শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেছে। এদিকে এই সভার ভিড় তো কমেই নি উত্তরোত্তর বাড়তে শুরু করে।

🎯 ©® অলোক কুন্ডু

বানিহাল থেকে শ্রীনগর ডি.এম.ইউ

বানিহাল থেকে গত ১১.৪.২০২২ এসেছিলাম ডিএমইউhttps://m.facebook.com/story.php?story_fbid=956144081760444&id=124001074974753
ট্রেনে চেপে। তার আগে অবশ্য ৩০০ টাকা দিয়ে শেয়ারে প্রাইভেট গাড়ি চেপে শ্রীনগরের নওগা থেকে
পৌঁছে গেলাম বানিহালে। ১১ কিমি বানিহাল জওহর ট্যানেল পেরিয়ে। ফিরলাম ট্রেনে করে ২.৪৫ -এ ট্রেন।
১.২৩ -এ বানিহালে পৌঁছে টিকিট কাটলাম। ৪৫ টাকার টিকিট কাটতে ৫০ টাকা দিতে কাউন্টারের ভেতর থেকে
ওধারে বসা ভদ্রলোক বললেন ৫ টাকা তো ফেরত দিতে
পারবো না। আমি পরের ভদ্রলোককে ওনার ৫+৫=১০
দিয়ে দিচ্ছি। আমি বললাম আপত্তি নেই। ওই ব্যক্তি বললেন, দাদা আপ দশ রুপিয়া লিজিয়ে। এ তো খুব মুস্কিল। তাই আমি বললাম আপ লে লিজিয়ে। এতে বুঝলাম যে কাশ্মীরীরা কত সৎ।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২

Tulip Garden #IndiraGandhiMemorialTlipGarden on 04.4.2022

দেখা এক খোয়াব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে 
দূরতক নিগাওঁ মে হ্যায় গুল খিলে হুয়ে...

আমার কাশ্মীর 


ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন , পূর্বে ছিল মডেল ফ্লোরিকালচার সেন্টার ছিল। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে অবস্থিত এটি টিউলিপ বাগান নামে বিখ্যাত। এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ বাগান যা প্রায় ৩০ হেক্টর (৭৪একর) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। জাব্রোয়ান রেঞ্জের পাদদেশে অবস্থিত । ২০০৭ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় ফুলের চাষ এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাগানটি খোলা হয়েছিল। পূর্বে এটি সিরাজ বাগ নামে পরিচিত ছিল। আমস্টারডাম থেকে একাধিক রঙের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন টিউলিপ বাল্ব এখানকার টিউলিপ বাগানে আনা হয়েছিল তখন। প্রতি বছর কিছু কিছু আনাও হয়ে থাকে। এছাড়া ওখান থেকে আনা ড্যাফোডিল, হায়াসিন্থ এবং রানুনকুলাস সহ ৪৬ রকমের ফুল। এই টিউলিপ গার্ডেনে প্রায় ৬৫ ​​রকমের টিউলিপ রয়েছে। এবছর ঘোষণা হয় ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল ২০২২, এই টিউলিপ উৎসব। আসলে টিউলিপ পরিপূর্ণভাবে ফুটেতে শুরু করেছিল এবারে ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। সাধারণভাবে তিনটি স্তরে এই ফুল হয়। তাই ৩ ও ৪ এপ্রিল যেগুলো ফুটে ছিল তারা এবং ১ এপ্রিল ফোটা ফুলগুলি মোটামুটি ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। পরে আবার ১১ তারিখে যাই। ৯ , ১০ ও ১১ এপ্রিল প্রায় সিংহভাগ ঝরে যায়। ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত টিউলিপের কয়েকটি প্রজাতি হয়তো বা বাগানে থাকলেও টিউলিপের অন্য প্রজাতির ফুল বাগানে হয়তো থাকবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে কাপ টিউলিপের থাকার সম্ভাবনা হয়তো আর নেই। 

সিলসিলা রিলিজ করে ১৯৮১ সালে। তাই কখনই সিলসিলার বিখ্যাত গানটি কাশ্মীরে স্যুট হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা রয়েছে। তা হয়েছিল, হল্যান্ডে। 

টিউলিপের বাগান করার প্রচেষ্টা দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনেও হয়েছিল এবং লোদী গার্ডেনে ২০১২ সালে এই মহার্ঘ ফুল তৈরি করার প্রচেষ্টা নিলেও তার সেই সৌন্দর্য আসেনি। রাষ্ট্রপতি ভবনের বাগান জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হলেও ছবি তোলায় নিষিদ্ধ লেখা ছিল। তবে খরচ ও রক্ষা করার প্রশ্নে টিউলিপের চাষ করা খুব একটা সুখের নয়।

বাস্তবটি হল টিউলিপ একসময়ে পশ্চিম ইউরোপকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।  ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডে-এর খ্যাতি বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। শিল্পীদের পেইন্টিং, বিশেষ করে ডাচ পেইন্টিংয়ে এবং মোজাইক থেকে সূচের কাছে টিউলিপকে শিল্পীরা মোটিফ হিসেবে বেছে নেয়। এইসব দেশের শিল্পীদের ভালো লেগে যায় এই বিদেশী ফুলটিকে। শিল্পীদের দ্বারাই যে টিউলিপের কদর পৌঁছে যায় বড় লোকেদের ঘরে ঘরে একথা অনস্বীকার্য। শেষে জাপান পর্যন্ত অরিগ্যামি সৃষ্টি করে ফেলে টিউলিপের ( অরিগ্যামি শিক্ষার জন্য এটি আমার করায়ত্ত হয়েছে)

কিন্তু ইতিপূর্বে কখনও টিউলিপের ইতিহাস জানতে ইচ্ছে করেনি। শ্রীনগরে টিউলিপ দেখে ( ৩.৪.২২ -১২.৪.২২) যখন বাড়ি ফিরে এসেছি, তখন আমার থেকে বয়সে ছোট কিন্তু অনেক বিষয়ে খবর রাখেন এবং হাওড়ার বাগনান হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সুপ্রিয় ঘোড়ুইকে ফোন করলাম। সুপ্রিয় মোটামুটি ফোনেই টিউলিপের একটা ইতিহাস শুনিয়ে দিল আমায়। ওইসব শোনার পর টিউলিপ নিয়ে জানার ইচ্ছা আরও বেড়ে গেল আমার। পড়াশোনা শুরু করলাম। নানা জায়গা থেকে পড়তে শুরু করলাম। শেষে অর্থনীতির সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্ক জেনে, বঙ্গবাসী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দেবদাস মুখোপাধ্যায় দা-র সরনাপন্ন হলাম। উনি অর্থনীতির অধ্যাপক।

(Prof D D M : Tulip mania was observed in Netherland during the period 1634 to 1637 when people did involve in betting on tulip prices.ultimately the price crashed in no timedue to various reasons and thus they suffered much. It is, therefore, almost akin to a bubble that got busted and consequently people who   did make high investment on tulip in the hope of high returns, eventually became the worst losers.

In fact, any type of investment which is speculative in nature and which does not have the backing of any solid ground reality, is bound to be crashed after sometime  because bubble will bust in due course. This is often observed in share market;)

ওনার কাছ থেকে একটা ধারণাও পেলাম। কৃতজ্ঞ দুজনের কাছেই। এহেন সুন্দর একটি ফুল যা মানুষকে পাগল করে তোলে, তাকে নিয়ে যে অর্থনীতির একটা টার্ম তৈরি হয়েছে এটা জেনে খুবই আশ্চর্য হলাম। টিউলিপের সঙ্গে যে একটা আর্থ সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এটাও জানতে পারলাম। তা থেকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের একটা রিলেশন জড়িয়ে গেলেও তা কিন্তু এখন অন্যভাবে নেদারল্যান্ডসের সমৃদ্ধির সূচকও বটে।

ডাচ স্বর্ণযুগের একটি সময় ছিল যখন সম্প্রতি চালু হওয়া এবং ফ্যাশনেবল কিছু টিউলিপ চাষের চুক্তির মূল্য অসাধারণভাবে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এতে একটা ধারণার জন্ম হয় যেন টিউলিপ হল সোনাদানার মতো একটি সম্পদ। ১৬৩৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই ধারণা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল নানাকারণে। তার একটি কারণ, চাহিদার তুলনায় দাম বেশি ও অতিরিক্ত ফলন। 

এই ঘটনাটিকে সাধারণত ইতিহাসে প্রথম অনুমানমূলক সম্পদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা বলে নথিভুক্ত করা হয়। অনুমান 
তো খানিকটা বুদবুদের মতো। তাই ডাচেদের টিউলিপ ম্যানিয়াকে অনুমানমূলক বুদবুদের সমকক্ষ হিসেবে দেখা হয়েছিল। তখন একটি কাল্পনিক অনুমানের সৃষ্টি করা হয়েছিল টিউলিপকে সম্পদের পর্যায়ে ফেলে দিয়ে। 

আসলে টিউলিপের সৌন্দর্য কিন্তু কখনও দীর্ঘস্থায়ী ছিলনা, সুগন্ধিও কোনও ছিলনা, তবু এক একটা টিউলিপের দাম বেড়ে হয়েছিল সেই সময়ের একজন ডাচ দক্ষ কারিগরের আয়ের দশগুণ। কোনও কোনও প্রজাতির এক গোছ টিউলিপের দাম উঠেছিল একটি প্রাসাদের দামের সমান। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সেখানে টিউলিপকে কেন্দ্র করে একটি ম্যানিয়ার জন্ম হয়েছিল এবং টিউলিপের দামকে অবাস্তবভাবে শীর্ষে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা হয়েছিল ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৭ এর মধ্যে। আসলে ম্যানিয়া হল খানিকটা বুদবুদের মতো। সেই সময়ের এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংকট যার নাম "টিউলিপ ম্যানিয়া।" এই টিউলিপ ম্যানিয়া শব্দটি এখন প্রায়ই রূপকভাবে ব্যবহৃত হয় যে কোনো বড় অর্থনৈতিক বুদ্বুদের ভঙ্গুরতা বা বিপর্যয় বোঝাতে। যখন সম্পদের দাম অন্তর্নিহিত মূল্য থেকে বিচ্যুত হয়। তখন তাকে টিউলিপ ম্যানিয়া বলা হয়।

এই ঘটনা যখন নেদারল্যান্ডসে ঘটেছিল, একজন দক্ষ কারিগরের বার্ষিক আয়ের ১০ গুণ দরে কোনও কোনও টিউলিপ বিক্রি হলেও শেষ পর্যন্ত বাজার বসে পড়ে। টিউলিপ চাষে হাজার হাজার টাকা যারা ইনভেস্ট করেছিল, যারা বিনিয়োগ করেছিল তারা পথে বসে যায়। ডিলাররা পথে বসে যায়। চুক্তিপত্র, ফুল, ডিভিডেন্ড সব একসঙ্গে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যায়।

ইউরোপজুড়ে টিউলিপের বাগান করার প্রবণতা বাড়তে থাকলেও ১৬৩০ থেকে ডাচেরা টিউলিপ চাষে ইউরোপের সমস্ত দেশকে ছাপিয়ে যায় এবং ১৬৩৪ সালে টিউলিপকে অর্থনৈতিক ভাবে ভোগবাদী সমাজের দৃষ্টিতে সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ার করে প্রচার শুরু করে। টিউলিপের উপর টাকা ঢেলে অনেক বিনিয়োগকারী ওইসময় ধ্বংস হয়ে যায়। ডাচ বাণিজ্য পর্যন্ত ধাক্কা খায়।

দেখতে যত সুন্দর ততটাই সুগন্ধিহীন এই টিউলিপ। এমন এই ফুলেকে নিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক ইনভেস্টমেন্ট এমন একটা উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল যা অস্বাভাবিক আকারের একটি প্রভাব সৃষ্টি করেছিল যে সে তো জানাই হল। আসলে এইরকম হাই ইনভেস্টমেন্ট যদি অস্থির ও অস্থায়ী ক্ষেত্রে হয় তাকে অর্থনীতিতে বুদবুদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। অর্থনীতীতে বুদবুদের ওপর পয়সা ঢেলে কম সময়ে বড়লোক হওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। আমাদের এখানে সঞ্চয়িতা, সারদায় ইনভেস্টমেন্ট ছিল তাই একরকম টিউলিপ ম্যানিয়া। 

মোটামুটি ১৫৫৩ সালে হল্যান্ডে টিউলিপ চাষ প্রবর্তিত হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে ১৬৩৪ থেকে ব্যবসা বৃদ্ধি হতে শুরু করে এবং ম্যানিয়ার শুরু এবং ১৬৩৭ বুদবুদটি ভেঙে পড়ে। ডাচ টিউলিপ বাল্ব মার্কেটের বাবলের ইতিহাস বলে গোটা কয়েক বিশ্ব বিখ্যাত বই লেখা হয়ে গেছে। 

ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপজুড়ে বিত্তশালীদের বাগানজুড়ে টিউলিপের আগমন ঘটতে থাকে। মনে করা হয় মশলা ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এই ফুল ইউরোপে প্রবেশ করে বহিরাগতদের সঙ্গে। যেহেতু ইউরোপীয় ফুলের জলশায় প্রথম থেকেই টিউলিপ একটা জায়গা করে নেয় তাই উপহার দেওয়া, ড্রইংরুম সাজাতে ও উৎসবে ক্ষণকালের জন্য হলেও ইউরোপীয় বিত্তবানেরা এই ফুলকে আপন করে ফেলে এবং বিলাসবহুল আইটেম হিসেবে আস্কারা ও আদর পেয়ে যায় টিউলিপ। ডাচেরাই এই ধুয়ো তুলেছিল এবং তারাই এই ফুলের মর্যাদা বাড়িয়ে ফেলে। যাদের বাগানে এই ফুল হতো তারা ওইসময় নিজেদের ভাগ্যবান বলে ভাবতেও শুরু করে দেন। মধ্যবিত্তরাও বিত্তশালীদের অনুসরণ করতে শুরু করে দেন। বাড়ির সদর বাগানে টিউলিপের আগ্রহ এতোটাই বেড়ে যায় যে এর বীজের দামও মহার্ঘ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাথমিকভাবে, এটি একটি স্ট্যাটাস আইটেম হয়েও দাঁড়িয়ে যায়। যেটি ব্যয়বহুল হতেই একসময় এই ফুল, ব্যবসায়ীদের কাছে তা সম্পদের আকার নেয়।  

কিন্তু এই সময়ে চাষের ক্ষেত্রে, ডাচেদের কাছে অন্যরা মুন্সিয়ানায় হেরে যায়। সাধারণভাবে এখনও টিউলিপ চাষ একটি দীর্ঘ আবিষ্কারের ফসল। কিন্তু টিউলিপের চাষ বহু আগে কুখ্যাত ছিল। কারণ অল্পেই পাপড়ি ভেঙে পড়তো ও ভঙ্গুর ফুল বলে পরিচিতও ছিল এবং সাবধানে চাষ না করতে পারলে টিউলিপ রাখা যেত না।
বিশষ করে টিউলিপের চারাতে বরফ পড়া যে জরুরি এবং প্রয়োজনীয়, সেটা বোঝাও সহজ ছিল না। এছাড়া সহজেই মারা যেত। কিন্তু ডাচেদের হাতে এর বাড়বাড়ন্ত হতে থাকলে টিউলিপের চাষে ও বাগানগুলোতে ইনভেস্টমেন্ট বাড়তে থাকে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা টিউলিপের দাম আকাশছোঁয়া করে ফেলে। রটে যায় সঠিক টিউলিপ চাষে টাকা ঢাললে বিশগুণ হয়ে ফিরে আসবে। এটাই হচ্ছে বুদবুদ। টিউলিপের পেশাদার চাষীরা স্থানীয়ভাবে ফলন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনে নানা কৌশল নেয়। ফুলের বীজ সংরক্ষণ, রঙ, প্রজনন ও পরিমার্জনে তারা মাষ্টারি শুরু করে দেয়, একটি সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক খ্যাতি প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। আজও কিন্তু এই খ্যাতি অব্যাহত আছে। নেদারল্যান্ডসে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত যে টিউলিপ উৎসব হয় তা দেখতে, কিনতে, হাতে ধরতে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হন সেখানে। মোটামুটি নেদারল্যান্ডসে এখন এত রকম রঙের এত রকম প্রজাতির ফুল হয় যে তা ১৫৬ প্রকারকেও ছাড়িয়ে গেছে। 

অন্যদিকে টিউলিপের একটি সমৃদ্ধশালী ও একটি বাইজেন্টাইন গল্প আছে। ইংল্যান্ডে প্রথমে এই ফুল
দেখতে পাওয়া যায় বলে ইউরোপের মধ্যে একটি রটনা আছে। একজন ইংরেজ মালীর হাত ধরে হয়েছিল। এটি ইস্তাম্বুল থেকে সমরখন্দ এবং তিয়েনশান পর্যন্ত বিস্তৃত ঝোপঝাড়ের বুনো ফুল হিসেবে দেখা যেত ১২ শতকের আগেই। ফুলটি অবশেষে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানের দৌলতে জাতে উঠতে পারে।

টিউলিপ কিন্তু বসন্তের ফুল। এখন পর্যন্ত ইস্তাম্বুলে,
আমেরিকার কয়েকটি জায়গায়, ইউরোপ ও কানাডায় চিন, জাপান ও কোরিয়ায় টিউলিপের চাষ ভালো হচ্ছে। তবে হল্যান্ডেই এর কদর সবচেয়ে বেশি। সাধারণতঃ মার্চের পনেরো তারিখ থেকে এপ্রিল ও মে পর্যন্ত টিউলিপের মরশুম। একমাত্র নেদারল্যান্ডসেই এই ফুল ১৫ মে পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। জানুয়ারির দ্বিতীয় শনিবার গাছের অগ্রগতি বুঝে একটি উৎসবের মধ্য দিয়ে টিউলিপ উৎসবের সরকারি দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয় সেখানে। মোটামুটি তিনটি স্তরের টিউলিপই সেখানে হয়ে থাকে। প্রাথমিক মধ্য ও চূড়ান্ত। তিনটি স্তরের টিউলিপের জন্য তাই নেদারল্যান্ডসে মার্চের ১৫ তারিখ থেকে টিউলিপের ফুল ফুটতে শুরু করে থাকে মে-র দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। অবশ্য নেদারল্যান্ডস ড্যাফোডিল ও টিউলিপের ব্যবসায় এখন রীতিমতো শক্তিশালী দেশ।

তুর্কি লোকগাথায় লাল রঙের  টিউলিপ ফুল হলো প্রেমের প্রতীক। পারসীতেও এইরকম লোকগাথা প্রচলিত আছে টিউলিপকে নিয়ে। সেই অনুযায়ী ফারহাদ নামে পারস্যে একজন ভাস্কর ছিল। সে  শিরিন নামে এক রাজকন্যার প্রেমে পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দুজনের মিলন হয় না। একসময় ফারহাদ নিজেকে শেষ করে দেয়। শিরিন এই সংবাদ পেয়ে হতাশগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু বরণ  করে। যেখানে যেখানে শিরিনের রক্ত পড়েছিল সেখানে সেখানে লাল টিউলিপ ফুটে ওটে । এই লোকগাথা অনুযায়ী  লাল টিউলিপকে প্রেমের প্রতীক মনে করা হয়। প্রথমে তুরস্কে টিউলিপ জনপ্রিয় হতে থাকে।  রাজধানীর বাইরে টিউলিপ কেনা বা বিক্রি করা ছিল অপরাধ (নির্বাসিত শাস্তিযোগ্য)। সম্ভবত ক্যারোলাস ক্লুসিয়াস, যিনি ভিয়েনার একজন জীববিজ্ঞানী ছিলেন। ১৫৯০-এর দশকে, ক্লুসিয়াস ইউরোপে এর প্রসার বৃদ্ধি শুরু করেন।

বিশ্বের কোথাও নেদারল্যান্ডসের লিসে-শহরের মতো ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায় না। কয়েক দশক ধরে, কেউকেনহফ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় টিউলিপ প্যারাডাইস বলে মর্যাদা পেয়েছে( Keukenhof)। মোটামুটি ১৯-২০ মার্চ থেকে ৯-১০ মে পর্যন্ত টিউলিপ পাওয়া যায় এই সব শহরে। হল্যান্ডে মোটামুটি ০৭ মিলিয়ন ফুলের বাল্ব হয় (ড্যাফোডিল এবং হাইসিন্থ সহ) সেখানে বার্ষিক এক মিলিয়নেরও বেশি দর্শককে আকর্ষণ করে এই ফুল। তবে আপনি যদি ইউরোপের বাগানে যেতে না পারেন  তবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলেও আশ্চর্যজনক দুর্দান্ত টিউলিপের চাষ দেখে নিতে পারেন। টিউলিপ ম্যানিয়ায় মেতে পড়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানগুলির মধ্যে একটি হল তায়ান। ওয়ার্ল্ড টিউলিপ সামিট সোসাইটি বিশ্বের সেরা পাঁচটি টিউলিপ উৎসবের মধ্যে তায়ান টিউলিপ ফেস্টিভ্যালের মুকুট পেয়েছে। সিউল থেকে ব্যক্তিগত পরিবহনে প্রায় ৩ ঘন্টা ম্যাগেওম্পো সমুদ্র সৈকতের কাছে অবস্থিত, সাইটটিতে ৩০০ প্রজাতির প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় ১.২ মিলিয়ন টিউলিপের চাষ হয়।
জাপান ও চিনেও টিউলিপের চাষ হয়ে থাকে। 

আমরা যে কাপ টিউলিপ বা ডিম আকৃতির টিউলিপ দেখতে পাই তা হল্যান্ডের চাষিদের দ্বারা আবিস্কার হয়েছে। তবে ইস্তাম্বুল ও ইরানে যে পার্শিয়ান পার্ল নামের
টিউলিপ দেখতে পাওয়া যায় তার সঙ্গে ডিম্বাকৃতির অনেকটা মিল আছে। মূলত রোমান অথবা ডাচ ব্যবসায়ী অথবা কূটনীতিক প্রতিনিধি যখন তুর্কি সুলেমানের রাজত্বে এসে মালিদের মাথায় থাকা পাগড়ি
দেখে তার নাম জিজ্ঞাসা করেন এবং ডুলব্যান্ড অথবা
তুলবেল্ট শোনেন ( ফার্সি শব্দ) সেখান থেকেই ভুল শোনার জন্য টিউলিপ নামের উদ্ধভ হয়। আসলে এটি
শেষ পর্যন্ত ইংরেজি শব্দের মায়াজালে আবদ্ধ হয়। কিন্তু ফুলটির আসলে নাম ছিল লেলে ( Lah-Leh)। যা আমরা পিন্টারেস্ট বা অন্য অ্যাপে গিয়ে টিউলিপ বলতে একধরনের কাপ বা ডিমফুলকে বুঝে নি। সব ফুল কিন্তু তেমনটা নয়। কাশ্মীরের টিউলিপ বাগানে গিয়ে ( ৪.৪.২২ ও ১১.৪.২২) যা অভিজ্ঞতা হল, তা হল টিউলিপের দেখনভঙ্গি কিন্তু সবটাই কাপের বা ডিমের আকার নয়। যেমন অ্যাপ্রিকট বিউটি যে টিউলিপ তার গায়ের রঙ অ্যাপ্রিকটের রঙে খানিকটা গেরুয়া ও কাপ ভঙ্গিমার। পার্শিয়ান পার্ল খানিকটা ভারতীয় পদ্মের মতো। মুখটা আরও শার্প ও লম্বাটে। টিউবারজেনের হল সোনালী রঙের ও কাপ ভঙ্গিমা। লার্জ লাফ বা চওড়া হাসি একদম ডিম আকৃতির। আবার অ্যাঞ্জেল উইস খানিকটা বড় গোলাপের মতো। আমেরিকাতে টিউলিপের চাষ হয় প্রথমে এটি ব্যক্তিগত বাগানে সীমাবদ্ধ ছিল। আমেরিকায় টিউলিপের সময় হল ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ। যে ডোরাকাটা টিউলিপের চারা হল্যান্ডে গিয়েছিল তার সঙ্গে অনেক গাছের ফলের সাধারণত পিচ ফলের ভাইরাস সঞ্চার হয় তখন ডাচ মালি ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা নানাভাবে টিউলিপকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করেন। হল্যান্ডে এখন ১৫৬ রকম রঙের ৩০০০ -এর বেশি প্রজাতির ফুল হয়ে থাকে। আমস্টারডামে উৎসব শুরু হলেও এদের লিসে ও কোকেনহফ ( Kekenhof) - এই দুটি শহরে সর্বাধিক বাগান আছে। মূলত আমাদের কাশ্মীরের বীজ এসেছে Keukenhof থেকে। রান্না করা শুখা টিউলিপের স্বাদ খানিকটা পেঁয়াজের মতো। তবে এর কাঁচা অবস্থায় ও রস পশুপাখি খায়না বিষক্রিয়ায় জন্য। পাখি তাই এর ধারেকাছে আসেনা। রাশিয়ায়ও টিউলিপের বাগান আছে। বিশেষ করে তারা লাল টকটকে ডিম বা কাপ টিউলিপ আমদানি করে, এই ফুল রাশিয়ায় প্রেমের প্রতীকী হিসেবে উপহারের চল আসছে। এই ফুল হাঙ্গেরি, কিরগিজস্তান, তুরস্ক ও হল্যান্ডের জাতীয় ফুল। ইস্তাম্বুলেও টিউলিপের উৎসব হয়। টিউলিপের উচ্চারণ- আসলে TOO-Lih-puh। আমেরিকাতে আকারে ছোট
বেগুনি রঙের টিউলিপের আধিক্য দেখা যায়। মোটামুটি অক্টোবর নভেম্বরে রোপন করার সময় এই ফুল। ভারতে
কয়েকদিনের জন্য দিল্লির লোদি গার্ডেন, বেঙ্গালুরুর লালবাগে, চন্ডীগড়ে এই ফুলের দেখা মেলে। আমরা সাধারণত মেন্টন টিউলিপ যা ডিম্বাকৃতি ও কাপের মতো দেখতে, তাকেই পছন্দ করি। তবে এইগুলো একেবারেই হল্যান্ডে বেড়ে ওঠা তাই এর স্থায়ীত্ব অন্য কোথাও বেশি দিনের নয়। তবে দর্শকদের জন্য অন্য প্রজাতির টিউলিপের চাষ হল্যান্ডেই শুরু হয়েছিল এবং ওইসব প্রজাতির ফুল ১৫ থেকে ২৫ এপ্রিল কাশ্মীরেও দেখতে পাওয়া যাবে। টিউলিপ সাধারণত সিঙ্গল ফ্লাওয়ার হয়। সবচেয়ে বড় ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটটি নেদারল্যান্ডসে।

টিউলিপ  ফুলের আদি বাসস্থান পামীর মালভুমি ,
হিন্দুকুশ পর্বতের পাদদেশে হলেও তা খ্যাতির  শিখর পৌঁছয় পারস্যে এসে।  তুর্কিতে টিউলিপের চাষ  প্রবর্তন  করেন অটোমান সুলতানরা, প্রায় চৌদ্দ রকম নতুন প্রজাতির টিউলিপের জন্মস্থান হলো তুর্কিতে। অটোমান সুলতান তৃতীয় আহমেদ টিউলিপের বাগান করেছিলেন। এখন প্রায় দেড়শো প্রজাতি ও প্রায় হাজার তিনেক রঙের  টিউলিপের খোঁজ  সারা পৃথিবীতে পাওয়া গেছে। 

অটোমান সম্রাট সুলেমানের সময়ে এক রোমান বণিক ইস্তাম্বুলে এসে টিউলিপ ফুলের সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত হন। সেই বিস্ময় থেকে আজ সারা বিশ্বে টিউলিপের বিস্ফোরণ। সত্যিই আবার টিউলিপ ম্যানিয়া নতুনভাবে সঞ্চারিত হয়েছে। টিউলিপ ক'দিনেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এত কথার পরও মনে করা হয় প্রথম টিউলিপের বীজ ভিয়েনাতে যায়।  ভিয়েনা থেকে টিউলিপ জার্মানি, বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড হাঙ্গেরি ও হল্যান্ডে দ্রুত ছাড়িয়ে পরে।

©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...