বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

#Coronaviruslockdown

#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা

#coronavirus #CoronavirusLockdown
#COVID19 #COVID #COVID19PH
#CoronavirusPandemic
#CoronavirusOutbreak

■ সবজি মাছ মাংস ধোয়া নিয়ে প্রতিদিন চ্যানেলগুলিতে, এত তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে যে বাস্তবতার বাইরে গিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাচ্ছে । যারা এইসব হাতেনাতে করছেন তাদের সঙ্গে ডাক্তারবাবুদের ধারণা ও বোধবুদ্ধির আকাশপাতাল তফাৎ হয়ে যাচ্ছে। এতে উদ্বেক আর‌ও বেড়ে যাচ্ছে।

■ (১).বাজারে কাপড়কাচার সোডা কিনতে পাওয়া যায়,তাই এক কেজি কিনে রাখুন।
■(২).মনে রাখবেন সোডায় জল না লাগে। শুখনো পাত্রে রাখুন। 
■(৩).প্রথমে একবালতি জলে ৪/৫ চামচ সোডা ফেলে জলটায় হাত দিয়ে গুলিয়ে দিন। সবজির পরিমাণ বেশি হলে আর‌ও ৩/৪-চামচ দিতে পারেন। সবকিছু আপনার
বোধগম্যর নির্ভর করছে।
সমস্ত সবজির জন্য ওই একবালতি যথেষ্ট। ■(৪).প্রথমে যতটা বড় বালতি/গামলা নিতে পারবে ততটা ভালো হবে ধোয়াধুয়ি করতে। এক একেবারে সবজিগুলি ভিজতে দিন। ২ থেকে ৪ মিনিট রাখুন ওই দ্রবণে। শাকজাতীয় হলে ২ মিনিট রাখুন। শাক ছাড়া অন্য সবজিকে ওই জলে রগড়ে ধুয়ে নিন।
■(৫).একটা অন্য বড় গামলা বা সাদা বালতিতে প্লেন ঠান্ডা জলে আর‌ও ২ মিনিট ভিজতে দিন। অথবা দ্বিতীয়বার ধুয়ে তৃতীয়বারের জন্য আলাদা করে রাখুন।
■(৬).তৃতীয় শেষবারে সমস্ত সবজি ১০ মিনিট আর একবার প্লেন জলে ভিজতে দিন। 
■(৭).১০ মিনিট পর ধুয়ে তুলে রোদে ১০/১৫ মিনিট দিয়ে জল ঝরিয়ে একটা ঠান্ডা জায়গায় সবজিগুলো চরিত্র অনুযায়ী আলাদা আলাদা রেখে সারাদিন ধরে শুকিয়ে নিন। 
■(৮).এই কাজগুলো যখন করছেন তখন প্রতিবার আপনার হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। সোডা নিজেই সাবান। স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে তাকেও স্যানিটাইজ করতে হতে পারে,
যদি আপনি একাই সবকিছু করেন।
■(৯).ঠান্ডা জায়গায় রাখা সবজিগুলোকে বিকালে প্রতিটি আলাদা জিনিসকে শুকনো ক্যারিব্যাগে ,পলিপ্যাকে ভরে ফ্রিজে তুলুন। ক্যারিব্যাগ গাডার দিয়ে এঁটে দিন। 
■(১০).এই পদক্ষেপ নিলে বিন্দুমাত্র করোনা আপনার ফ্রিজে ঢুকবে না‌। 
■(১১).ডিম হলে এক হাঁড়ি সোডার জলে ডুবিয়ে সঙ্গে সঙ্গে একটা সাদা জলের পাত্রে রাখুন আধঘণ্টা। পরে একটা ছোট কাপড়ে একটু স্যানিটাইজারে ভিজিয়ে নিন এবং প্রতিটি ডিমকে আলতো করে ওই কাপড়ে মুছে ঢাকনাওলা একটা পটে রেখে, বিকাল পর্যন্ত ফেলে রাখুন‌। বিকালে ফ্রিজে তুলুন।
■(১২).মাছ মাংস হলে খাবার সোডা ১-চামচ দিয়ে ৫ মিনিট ভিজিয়ে তারপর তুলে নিয়ে ১ মিনিট করে গরম জলে ও ঠান্ডা আলাদা জলে দু-তিনবার ধুয়ে, জল ঝরিয়ে নুন হলুদ মাখান, হলুদ ও নুন একটু বেশি দিন। ঢাকনা দেওয়া বাক্সে ভরে বাক্সটিকে ক্যারিব্যাগে মুড়ুন।  
 ■(১৩).শাকপাতা হলে রগড়াবেন না আবার বেশিক্ষণ তাকে সোডার জলে রাখবেন না। পটল, বেগুন, আলু,ঝিঁঙে, ঢেঁড়স, উচ্ছে, ক্যাপসিকাম, গোটা লাউ এবং আরও কিছু সবজির বাইরে শক্তপোক্ত দেওয়াল থাকায় দু পাঁচ মিনিটে বাইরে থেকে ভেতরে কিছু যাওয়ার চান্স নেই। 
■(১৪).কাটা লাউ-কুমড়ো হলে ও শাকপাতা সবার আগেই সোডা জলে ধুয়ে নিন কারণ ওইগুলি কিছুটা ভেতরে টানতে পারে। আপনি যেহেতু ১০/১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখছেন না তাই আপনার কোনও চিন্তা নেই। 
■(১৫).পিঁয়াজ আদা রসুনকে ১ মিনিটের মধ্যেই তুলে নিন সোডার জল থেকে। যদি আপনি জলে না ধুয়ে রোদে দেন তবে একদিনে এইসব শুকিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তবে রসুন পিঁয়াজ ধুলে ওপরের খোসা ছেড়ে যাবে। সবার শেষে আদা রসুন পিঁয়াজ ধোবেন। এখন এইসব শুনে নেগেটিভ মনের ব্যক্তিরা হৈ হৈ করে উঠতে পারেন। তোয়াক্কা না করে স্পষ্ট ধুয়ে নিন এবং যে পদক্ষেপ আগে সবজির ক্ষেত্রে নিতে বলেছি সেইভাবে করে নিন। দুদিন পাখার নীচে পিঁয়াজ রসুন আদা শুকিয়ে নিন। ফ্রিজে না রেখে মেঝেতে বা ঝুড়িতে রাখুন। 

■(১৬).১১৫ দিনের বেশি সময় ধরে আমি এই পদ্ধতিতে আমার বাড়িতে অনুসরণ করছি।আমি ধূচ্ছি,রাখছি, ব্যবহার করছি, খাচ্ছি। আমি কখনও টিভি দেখে এইসব করিনি। এই ধোয়াধুয়ি নিয়ে গত এপ্রিল থেকে অনেকবার লিখলাম। কিন্তু এখন যেহেতু বাস্তবে না থাকা ডাক্তারবাবুরা নতুন করে এইসব নিয়ে জনগণকে নানামুখী মতামতে দ্বিধায় ফেলে দিয়েছেন তাই বিষয়গুলির ওপর পুণরায় আলোকপাত করতে হলো। যাদের বাড়িতে প্রচুর জল আছে তাদের এইসব না মেনে ৩/৪ বার ধুয়ে নিন তাতেই হবে। তারপর শুকিয়ে পৃথক প্যাকেট করে ফ্রিজে রাখুন।  
 ■(১৭).ফ্রিজসুরক্ষিত থাকবে। 
■(১৮).পাঁউরুটি একসঙ্গে ৩/৪ পাউন্ড কিনে নিন। একদিন একটা বড় পলিপ্যাকে মুড়ে ফেলে রেখে দিন। দ্বিতীয় দিন হাতে স্যানিটাইজার লাগান এবং প্রতিটি পাঁউরুটির বাইরের প্যাকেটে স্যানিটাইজার স্প্রে করুণ অথবা পাঁউরুটি না ছুঁয়ে কাঁচিতে বাইরের প্যাকেট একদিকে কেটে ফেলে এবং সতর্ক হয়ে, না ছুঁয়ে বাড়ির কোনও একজনের সাহায্য নিয়ে, অন্য একটি বড় পলিপ্যাকে ঢেলে দিন। ঢালার সময় কেউ হাত দিয়েও একটা একটা করে পাঁউরুটি তুলে প্যাকেট বদল করতে পারেন। দুজনেই হাত ভালো করে ধুয়ে স্যানিটাইজ করুন। তারপর সেঁকে খান। পাঁউরুটির আসল প্যাকেটকে ডাস্টবিনে দিন, হাত ধুয়ে নিন। 
 ■(১৯).হাত ধোয়ায়, ডিটারজেন্ট বা লাইফবয় ব্যবহার করুন এইসব হ্যান্ড‌ওয়াসের থেকে অনেক শক্তিশালী ও সস্তা। ©® অলোক কুন্ডু

#CoronavirusPandemic

#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা

#coronavirus #CoronavirusPandemic
#COVID19 #CoronavirusLockdown 
#COVID2019 #COVID19PH 
#CoronavirusOutbreak

যাদের বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে ও রোগ সম্পর্কিত মানুষ আছেন তারা অবিলম্বে সাবধান হোন‌।

■ (১).বাড়ির যে মানুষ রাস্তায় যায়, ধরে নিতে হবে তিনি সংক্রমিত হয়ে আছেন‌। তিনি সংক্রমিত। তার বোধবুদ্ধি না থাকতে পারে কিন্তু তাকে বয়স্ক রোগী মানুষ ও বাচ্চাদের ধারে কাছে যাওয়া এবং ৬ ফুট নয় ১০ ফুট দূরত্ব থাকতে হবে‌।
■ (২).যারা পাশের বাড়ি থেকেও আসবেন, সুস্থ হলেও তিনি সংক্রমণ নিয়ে ঘুরছেন বলে ধরে নিতে হবে। তিনি নিজেকে করোনা মুক্ত মনে করলে খুব ভুল করবেন। 
■ (৩).যারা ছোট বড় চাকরি করেন তারা রাস্তায় বার হচ্ছেন। তারা মনে রাখবেন তারা রোগ বহন করছেন। অবশ্যই তারাই রোগ বহন করছেন। তারা সংক্রমণের বাহক। তারাই বাহক এটা তাকে বলুন।
■(৪).যারা তিনবার রাস্তায় বেরিয়ে তিনবার জামাকাপড়, মাস্ক, মোবাইল, জুতো,ঘড়ি, ব্যাগ,চশমা কাচছেন না তারা রোগ বহন করছেন এবং নির্ঘাত রোগ ছড়াচ্ছেন। তারাই বাহক। তাদের অনেকেই কাছাকাছি-পাশাপাশি কাকা,পিসি,মাসি,বন্ধুদের বাড়ি যাচ্ছেন অবিলম্বে এই যাতায়াত বন্ধ করুন। দয়া করে যাবেন না। এই যাতায়াত সর্বনাশা হচ্ছে। ভয়াবহ হতে পারে এবং এই থেকেই অজস্র মানুষ আজ হসপিটালে, চিকিৎসার অভাবে মারা পড়ছেন। এই সামাজিকতা করার সময় এখন নয়।
■ (৫).যারা ভাবছেন পাড়ায় বেরিয়েছিলেন তাদের মাস্ক লাগবে না, তাদের স্নান করতে হবেনা, জামাকাপড় ছাড়তে হবে না, চটি আলাদা রাখতে হবে না, মোবাইল স্যানিটাইজ করতে হবে না মুখ হাত ধুতে হবে না, ১০০% নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে না। তারা মস্ত ভুল করছেন, অন্যায় করছেন, দোষ করছেন। শাস্তিযোগ্য অপরাধ‌ই করছেন।
■(৬). অনেক ভাই-বোন আছেন যারা ভাই বোনদের বাড়ি যাতায়াত করছেন তারা এটা দয়া করে বন্ধ করুন। আপনারা রোগ ছড়াচ্ছেন, আপনারা সংক্রমণের চাষ করছেন, আপনার জন্য আপনার বাড়ির বাচ্চা ও বয়স্ক মানুষ যখন তখন সর্বনাশের দিকে চলে যেতে পারেন।
■(৭).আপনি বলছেন আপনি কোথাও হাত দেননি, কার‌ও খাবার খাননি, কার‌ও দরজা ধরেন নি, কার‌ও কলিংবেল ধরেননি, কার‌ও হাত ধরেননি, কার‌ও মোটরবাইক, গাড়িতে বসেননি, টাকাপয়সা ছোঁননি। আপনি এবং আপনারা হয় মিথ্যা বলছেন, কিংবা এই সমগ্র লকডাউন পিরিয়ডে সামান্য এইসব মেনেছেন বলে পুরো স্যানিটাইজেশান প্রক্রিয়াটিকে অথর্ব করে ছেড়ছেন যা ২০%
মেনেছেন কিন্তু আপনার মনে হয়েছে ১০০% করেছেন। এই ধরনের বেগড়বাঁই, অবুঝ এবং অমান্য করতে অভ্যস্ত আপনি কিন্তু রোগ ছড়াচ্ছেন এবং ছড়িয়ে অপরকে মারবেন।
■(৮).আপনি বাড়ি থেকে যতবার বের হবেন ততবার আপনাকে মাথা মুড়ে বের হতে হবে,মাস্ক নিতে হবে, হাতে ঘনঘন স্যানিটাইজ করতে হবে। কিন্তু আসলে আপনি এইসব একেবারেই ফাঁকি দিচ্ছেন। আপনি বলছেন আপনার কিছু হবেনা। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না আপনি কতখানি ক্ষতি করছেন। আপনি একজন মার্ডারার, আপনি খুনি। আপনি বাইরে থেকে রোগ এনে ছড়াচ্ছেন এবং লোক মারছেন। আপনি মারণ ভাইরাসের বন্ধু। কারণ আপনি অপরের টাকা পয়সা নিয়ে আপনার পকেটে ম্যানিব্যাগে রাখছেন। আপনি চটিজুতো ঘরে ঢোকাচ্ছেন। আপনি পাঁচমিনিট বাইরে বেরিয়ে বন্ধুর বাড়িতে যে গিয়েছিলেন সেখানে আপনার বন্ধুর চেয়ারে খাটে সোফায় বসেছিলেন তাতে করে যে সংক্রমণ আপনি আপনার বাড়িতে আনলেন না তার কিন্তু কোনও গ্যারান্টি নেই। আসলে আপনাদের সকলের ইমিউনিটি বেশি তাই আপনাদের কিছু হয়নি কিন্তু আপনারা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আপনারাই বাহক আপনারা আপনার এলাকায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। আপনারা মাস্ক পরছেন না। আপনি স্পিডি স্প্রেডার।
■ (৯). আপনারা বাজারে গিয়ে অন্যদের থেকে ৬ ফুট দূরত্বে দাঁড়াচ্ছেন না, আপনাদের ভিড়ের মধ্যে যেতে এখনও কোনও হেলদোল নেই। আপনাকে বাজারে একটু সরে যেতে বললে আপনি তর্ক করছেন। ব্যাঙ্ক, পোস্ট‌অফিস,
দোকানে, বাজারে আপনি একজন জঘন্যতম ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচিতি করে তুলেছেন। আপনি রোগ ছড়াচ্ছেন।
■ (১০).আপনারা পাড়া-প্রতিবেশীর থেকে বেশি ক্ষতি করছেন আপনার নিজের বাড়ির লোকের প্রতি। এখন পর্যন্ত যতজন মারা গেছেন তাদের বাড়ির লোকেজন কিংবা তারা হয়তো নিজেরাই রোগ এনেছিলেন। যারা পুলিশ, যারা ডাক্তার, যারা করোনার সৈনিক তাদের কোনও দোষ দেওয়া যায় না। কারণ তারা আপনার মতো উজবুক, আপনার মতো অহংকারী, আপনার মতো সবজান্তা, অবিবেচক, আপনার মতো ক্ষুদ্রবুদ্ধির নাগরিক, আপনার মতো হাঁদাবোকা একজনের অবিবেচনার স্বীকার হচ্ছেন। আপনি মারছেন ডাক্তার, আপনি মারছেন পুলিশ, আপনি মারছেন সমাজসেবীকে, আপনি মারবেন মেথর, আপনি মারবেন একজন সুগারের রোগীকে, আপনি মারবেন কিডনির রোগীকে, আপনি মারবেন হার্টের রোগীকে, আপনি মারবেন আপনার আত্মীয়-স্বজনকে,আপনি মারবেন আপনার বাড়ির মা,বাবা, পিসিমা, ঠাকুমা, সরকারি কর্মচারী থেকে কাকা,কাকিমাকে পর্যন্ত। আপনি খুনি। আপনি পাড়াবেড়ানো বন্ধ করুন অবিলম্বে। 
■(১১).যারা রাস্তায় বের হন, তারা কখনোই অপরের বাড়ির চেয়ার-টেবিল, সোফা, খাটে বসবেন না, চা খাবেন না, চা খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করবেন না,অপরের বাড়িতে ঢুকবেন না। নিজে সতর্ক থাকুন অপরকে বাঁচতে দিন। ©® অলোক কুন্ডু

রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০

#অমিতাভ_বচ্চন_ভালো_হয়ে_উঠুন

#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা

■ ভুল প্রশ্নের অবতারণা

■সেলিব্রেটি না কি হাই সেলিব্রেটি, নাকি পাড়ার লোককে সান্ত্বনা। আসলে আমাদের মনের দৈনতা বিতর্কের সৃষ্টি করছে। কেউ অসমান নন। এটা তো বাস্তব আমার থেকে অমিতাভ বচ্চনকে আর‌ও বেশি লোক ভালোবাসেন। এমনকি রঞ্জিত মল্লিকের থেকেও। আসলে এই চিরন্তন সত্য সব সময় সকলের মনে কাজ করবে। করোনা ছাড়াও অমিতাভ বচ্চন আর রঞ্জিত মল্লিক একসঙ্গে অসুস্থ হলে আগে পরে দশ বছর পরেও এক‌ই উত্তর। এই উত্তর খুঁজতে ভুল প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। যুক্তিযুক্ত কথা বলতে হবে আমাদের। দুম করে কথার বোমা ফাটালেও তা অগ্রাহ্য হবে, এই চিরায়ত সত্য বিসর্জন কেউই দিতে পারবেন না। এটাই আমাদের মানবিক গুণ, এটা দোষ বলে রটালে পাত্তা তেমন পাবেনা। করোনা ছাড়াও আমরা কখনও কেউ অসুস্থ হলে আগেও খোঁজ নিতাম না কিন্তু অমিতাভ বচ্চন হলে নিতাম, রূপোলি মানুষ সাধারণ মানুষের এই তফাতে আমাদের গোড়ায় গলদ আছে এটা থেকে মুক্ত হয়ে সাম্যবাদের কথা এখানে প্রয়োগ করলে তা মানবে না কেউ। ভালোবাসা আত্মীয়তা বন্ধুত্ব‌ও এই আপেক্ষিক নীতির উপর‌ই প্রতিষ্ঠিত। এটা ভবিতব্য তাই এই রকম আলোচনা বিস্তার করে এই পরিবেশ কলঙ্কিত করা আমাদের কার‌ও উচিত নয়। অপরের আগ্রহ অপরের আনন্দ ও দুঃখের যেন আমরা কাটাছেঁড়া না করি এই আদর্শের মধ্যে থাকাই কাম্য।

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০

#Amarnath 2017

হাই বাপ জঙ্গীভি হিন্দু আছে...

শুধুমাত্র অমরনাথ কেন ? ভোটধর্ম পালন করতে 
গিয়ে যে মানুষকে নিহত হতে হয় সে তবে কেন 
জঙ্গীর দ্বারা নিহত নয় কেন ? রাজনৈতিক দল 
যারা ভোটের সময় হিংসা ছড়ায় তারাতো আরও 
খারাপ । আসলে প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব একটা 
করে স্বার্থ থাকে । সে স্বার্থ অর্থনৈতিক প্রভুত্বের। 
এই অর্থনৈতিক প্রভুত্ব থেকে পয়সাওয়ালাদের 
ধর্মীয় ভাবাবেগ বেড়ে যায় । সাধু সন্তদের সঙ্গে 
তাই প্রচুর অর্থবানও অমরনাথ যায় । সেখান 
থেকে ধর্মীয়ভাবের সঙ্গে বেশকিছু প্রকৃতি 
প্রেমিও স্বচ্ছ ভারতবাসী হিসেবে অমরনাথে 
যায় । এসবই কথা জঙ্গী- কাশ্মীরিদের ( হাই
বাপ সক্কলে বলছে জঙ্গীটা মাইরি সত্যি হিন্দু )
জানা আছে । জঙ্গী-কাশ্মীরিরা বা জঙ্গী-হিন্দুটা
জানে সে বা তারা আসলে শুধুমাত্র কিছু গরীব 
তীর্থযাত্রী ও সাধুকে মারছেনা তারা ভারতের 
লোভী স্বার্থপর রাজনৈতিক মতলববাজদেরও 
একসঙ্গে মারছে ( যারা এই যাত্রায় নেই আবার আছেও ) তাই তারা জানে শুধুমাত্র ভারতবাসী 
নয়  । এখন এর ফলে ভারতে রাজনৈতিক 
অস্থিরতা তৈরির জন্যেও এটা তাদের করা 
একান্ত প্রয়োজন । ভারতবাসীরা সারা দেশে এর থেকেও বেশি মরে রাজনৈতিক দলগুলির 
খুনোখুনির ফলে । সব থেকে বেশি মরে খেতে 
না পেয়ে বা ঋণ ধার করে শুধতে না পেরে ।
তখন অন্য ভারতবাসীর মনে থাকেনা
ধর্মের চেয়ে ভোটাধিকার আরও বড় ধর্ম কিংবা
মানুষের অভুক্ত হয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যু আরো নির্মম
তার ওপর যদি এই সময় নরেন্দ্র মোদীকেও মানসিকভাবে কিছুটা মারা যায় । অথচ 
ফেসবুকে এই ব্যাপারে যে অযৌক্তিক পোস্ট
পিছিয়ে পড়েছে এমনটাও বলা যাবেনা ।
ভারতের এই বক্র ভাবাবেগও জঙ্গীরা
বিলক্ষণ জানেন । এরা কাশ্মীরি বা খাঁটি
হিন্দু না হয়ে পাক মদতপুষ্ট যেকোনো ব্যক্তিও 
হতে পারে । যে আদতে একজন জঙ্গী । আর
ঠিক সময়ে একেবারে একটা ওয়াল পাশ 
খেলার মতো ব্যাপার । হিন্দু জাতটাই শাল্ লা 
একবারে পথে বসেছে গা । আর বলবি হিন্দুদের 
মধ্যে একটাও জঙ্গী নেই !? পয়সায় নেতাও জঙ্গী 
হবে পয়সা এমন । হ্যাঁ বড় একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে ।
এই দেশের বাজার দখলের জন্যে চীন মুখিয়ে 
আছে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের এখন 
আরও জবরদস্ত উন্নতি চলছে । এদেশের 
রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি জমি খামার হাউসের উন্নতির খবরও তারা রাখে । এক দেশ 
এক প্রাণ এই ভারতবাসী কবেই নষ্ট করেছে । 
ধর্মীয় কাদায় ভারত এখন নরককুন্ড । এখনই 
উপযুক্ত সময় ভারতের ধর্মীয় ভাবাবেগকে গলা 
টিপে মারার উপযুক্ত সময় । নরেন্দ্র মোদির এখন ঘরেবাইরে শত্রুতা আমেরিকা-ইজরাইল কি করে 
এখন দেখার । চীন ও পাকিস্তান এশিয়ার দাদা 
হতে চাইছে । ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চীনে গিয়ে 
অর্থনৈতিক প্রভুত্বের স্বার্থে চীনাদের পা চাটছে 
যেনতেন প্রকারে পিশাচ ভারতবাসীর এখন 
অর্থের প্রয়োজন । অর্থের প্রয়োজন সকলের ।
অর্থের প্রয়োজনে কেউ নেতা কেউ জঙ্গী হয়তো 
বা আমার আলোচনাটাই একটা বড় ধাপ্পা অন্যের 
মূল্যায়ণই হয়তো সঠিক । তবু বলি প্রত্যেক দেশের নিজস্ব একটা স্বাধিকার বোধ থাকে । আমাদের 
কি সেসব আছে না কি সব বিষয়েই ধর্ম আর ধর্ম ।
তবে আমরা ভারতবাসী ধর্মীয় পাঁক ঘাঁটতে 
পরচর্চায় নিজেকে লালিত করি । দেখতেই
ভারতবাসী আসলে মনের মধ্যে আমরা একটা
পাড়ার নাগরিক । আমরা ফেসবুকে বুক 
চাপড়ানোর ওয়াল পাশ খেলি আসল বুক
চাপড়ানো ভারতবাসী কবেই ভুলে গেছে...

মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০

#Corona

বারবার এক‌ই কথা বলবো তার কারণ আমরা যা অশিক্ষিত জাতি তাতে করোনায় আমাদের দেশ উজাড় হয়ে যেত। কিন্তু হতে পারছে না কিছুটা ধর্মীয় প্রভাবে কিছুটা সম্পূর্ণ খাবার ও মশলাদার খাবারের জন্য।
(১).ধর্মীয় কারণে স্নান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও হাত পা ধোয়া 

(২).তুলসী, নিম রোজ খাওয়ার অভ্যাস
(৩).সরষের তেল মাখা,নাকে দেওয়া, নাভিতে দেওয়া, 
(৪).কাঁচা সরষের তেল মুড়িতে, তরকারিতে,
 আচারে ও আলুভাতে ও ভর্তাতে খাওয়া
(৫).আদা রসুন হলুদ লঙ্কা জিরে ধনে গোলমরিচ নিত্য কোনও না কোনও খাবারে খাওয়া
(৬).ভিটামিন সি যুক্ত ঘরোয়া আচার খায়
ভারতের ৭০% মানুষ ( নিরামিষভোজীরা রোজ খান)
(৭).আখের গুড় খাওয়া
(৮).কাঁচা আম, তেঁতুল, আমলকি খায় প্রচুর মানুষ
(৯).ছাতু ( হাই প্রোটিন )
(১০).খাবারে টক খাওয়ার প্রবণতা
(১১).গৃহপালিত গরু, হাঁস,মুরগি, ছাগলের দূধ ও ডিম খায়
(১২).প্রচুর শাকসবজি খায়
(১৩).মান কচু ওল জাতীয় সস্তার খাবার
(১৪).ডাল, পাঁপড়,বড়ি, বেসনে হাইপ্রোটিন
(১৫).
(১৬).আদা দিয়ে চা গ্রামেগঞ্জে খাওয়া একটা সাধারণ চল
(১৭).মাছ-মাংসভোজী তুলনায় কম 
(১৮).ঘরে তৈরি খাবার বেশি জনপ্রিয় বলে
(১৯).ভারতীয় বাসন মাজার প্রক্রিয়ার গুণগত মান বেশি ভালো
(২০).প্রক্রিয়াকরণ মশলার ব্যবহার অত্যন্ত কম বলে এবং বেসিক মশলার উপর নির্ভরশীল
(২১).কিছু ক্ষেত্রে গোটা মশলার ব্যবহার
(২২). গোটা সরষে 
(২৩).গেঁড়িগুগলি
(২৪).হিংচে,পুদিনা, থানকুনি, মেথি শাক
(২৫).খ‌ই চিঁড়ে মুড়ি মুড়কির মতো শুকনো খাবারের মাধ্যমে করোনার সঞ্চারণ কম হয় কারণ এগুলো অনেকটা পরিমাণ কিনে রাখা হয় সহজ সংরক্ষণের ক্ষমতা আছে।
পাঁউরুটি থেকে করোনা সহজে ছড়াতে পারে এবং মূলত শহরের জলখাবার পাঁউরুটি।
তাই আমাদের বিশেষজ্ঞরা টিভিতে বসে যা বলেছিলেন তা মেলেনি। একমাত্র বিশৃঙ্খলার জন্য কিছুটা মিলতে পারে।
কিছু খাবারে যতনা গুনাগুন আছে তার থেকে সেইগুলো গ্রামের মানুষ সহজে সংগ্রহ করেন যার ফলে হস্তান্তর কম হয়। করোনা হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে প্রসারিত হয়। জ্যাম,জেলি, পাঁউরুটি,মাছ,মাংস,পনীর ও প্রক্রিয়াজাত মশলা কিনে আনার সঙ্গে সঙ্গে
আমাদের অজান্তেই রোগের সংক্রমণ চলে আসতে পারে। তুলনায় ভারতের শহরের মুসলমানদের মধ্যেও তাদের খাদ্যাভ্যাসের
জন্য করোনা কম প্রসারিত হয়েছে। যে অব্যবস্থাপনার মধ্যে তারা শহর এলাকায় থাকেন তা থেকে অনেককিছু হতে পারতো।

সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০

#Rani ki vav #paton

রানী কি ভাও ( Rani Ki Vav) ও পাটোলা
শাড়ির জন্য গুজরাটের পাটন বিখ্যাত ©® অলোক কুন্ডু

স্বাধীনতার বহু আগে পোরবন্দরে গান্ধীজি জন্মগ্রহণ করেছিলেন । পরে রাজকোটে গান্ধীজির বাল্যকাল কাটে ৭ বছর বয়স থেকে তাই রাজকোটে গান্ধীজির বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে । কিন্তু গান্ধীজি সবরমতীর তীরে আশ্রম গড়ে যখন থাকতে লাগলেন তখন গান্ধীজি বলেছিলেন -"প্রথমত
আমি গুজরাটি দ্বিতীয়ত এই আশ্রম গড়তে
পয়সাঅলা কিছু মানুষের দরকার তা আমেদাবাদে আছে । আমেদাবাদে এখনও
অনেক কিছু করার আছে " সেই আমেদাবাদ বহু বছর গুজরাটের রাজধানী ছিল এবং এখন‌ও আমেদাবাদ আর গান্ধীনগর গায়ে গায়ে । কোনটা আমেদাবাদ আর কোনটা গান্ধী নগর বোঝা দায় । সে যাই  হোকনা কেন, আমেদাবাদের নির্মাতা আহমেদ শা, সোলাঙ্কিদের পরাস্ত করে তাদের বৃহত্তর গুজরাটের রাজধানী পাটনকে তুলে 
আনেন সবরমতীর তীরে নাম দেন আহমেদাবাদ । আসলে মহারাষ্ট্রের 
কিছু অংশ নিয়ে ,সৌরাষ্ট্র সহ গুজরাটের রাজধানী ছিল পাটন । সোলাঙ্কি রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা বনরাজ চাওডা (৭৪৫ AD) Anhilpur-Patan নামে গুজরাটের রাজধানীর পত্তন করেন । ইন্টারনেট 
হ‌ওয়ায় আমরা মাত্র কয়েক বছর হলো 
এই পাটনের নাম রপ্ত করতে পেরেছি । 
তার আগে কেবলমাত্র ইতিহাসের ছাত্র ছাত্রীরাই ও পর্যটকদের মধ্যে পাটনের পরিচিত সীমাবদ্ধ ছিল । কিন্তু সাধারণ বাঙালির মধ্যেও পাটন বলতে নেপালের পাটনের নাম‌ই মনে পড়ে । আমেদাবাদ ( আহমেদাবাদ বা আমদাবাদ ) থেকে পাটনের দূরত্ব আগে ছিল ১০৮ কিঃমিঃ ( গুগল ১৪৫ ) কিন্তু আমি গেছি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রুট ধরে মেহেসানা ও মোদেরার সূর্য মন্দিরের মতো হেরিটেজ ছুঁয়ে ১৩৫
কিঃমিঃ একদিকে । মদেরা ও মেহেসনা
পাটনের মধ্যে পড়তো এখন মেহেসনা ও
পাটন দুটি জেলা । কিন্তু সোলাঙ্কি রাজত্বের
অন্তর্ভুক্ত ছিল । ( আমেদাবাদ-পাটন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হাইওয়ে ধরে যেতে হয়) একেবারেই গ্রাম বলা যায় পাটন। বিশেষ করে আদি পাটন , সিটি থেকে একটু দূরে। আসল পাটন প্রায় গ্রামের মতোই আছে । হাঁটা পথে (১) পাটোলা হাউস মিউজিয়াম (২) পাটন হেরিটেজ মিউজিয়াম স্বাধীনতার ৭০ বছর পর তৈরি হয়েছে (৩) রানী কি 
ভাও ১০/১৫ মিঃ-এর মধ্যে হয়ে যাবে , দেখতে কিন্তু ২ ঘন্টার মতো সময় দিতে হবে , কারণ রানী কি ভাওয়ের পিছনেই আছে সোলাঙ্কি রাজাদের আর 
এক স্টেপ ওয়েল বা ভাও। বলা যায় প্রজাদের জন্য যা তৈরি হয়েছিল । জলের তালাও/তালাব/পুকুর /ভাও। বাঁধানো লম্বা
আয়তাকার ও একসময়ের ওই ভাওতেও মন্দির ছিল জলের মধ্যে । চতুর্দিকে চ্যানেল করা মাঝে উঁচু জমি । তাতে মনে হয় এটি ছিল জলের রিজার্ভার এবং কাছেই ছিল সরস্বতী নদী । পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা বাঁধানো ঘাট ছিল এখনও সেটা স্পষ্ট । সরস্বতী থেকে জল আসতো । এখন নদী এক কিলোমিটার দূরে । এখন তৈরি হয়েছে সেখানে একটি ফিল্টার পানীয় জলের প্রকল্প --এই দ্বিতীয় ভাওয়ের অনতিদূরে । যদিও দ্বিতীয় খোলা সাদামাটা বিস্তৃত কূপটি জলের ঘাট বলেই মনে হয় , খুব বেশি স্থাপত্য নেই । ছিল কিনা বোঝার উপায় 
নেই । তবে তথ্য বলছে ওখানেও 
ঘাটে জলের ওপর মন্দির ছিল , ভাঙা 
কিছু বাস্তু পড়ে আছে । বাঁধানো এবং 
কিছু স্থাপত্য এখনও শক্তপোক্ত হয়ে টিকে
আছে ।  মনে করা হয় এখানে মহিলা ও পুরুষদের আলাদা ঘাট ছিল জলের মধ্যে মন্দিরকে ঘিরে । আসলে গুজরাটকে সুলতান মাহমুদ থেকে মহম্মদ ঘোরি, তৈমুর লঙ,হুমায়ূন থেকে ঔরঙ্গজেব এমনকি আকবর আক্রমণ করে দখল করতে চান । আফগানিস্তান মধ্য এশিয়া , দিল্লির সুলতান থেকে বিভিন্ন প্রান্তিক রাজ্য বহুকাল ধরে গুজরাটকে আক্রমণের দিশা করেন ও গুজরাটের ওপর ধ্বংসলীলা চালিয়ে যান । পাটন সেই গুজরাটের রাজধানী হ‌ওয়ায় সেখানে চালুক্য/সোলাঙ্কি রাজারা তাদের ধর্মীয় স্থাপত্যের মন্দিরগুলি পাটন,মোদেরা ও মেহেসনাতে করেছিল ,সবটাই ২০/২৫ কিঃমিঃর ভেতরে। গুজরাট নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি সুলতান ও তাদের আমির ওমরাহ ও স্থানীয় শাসকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে ছিল সেই ইতিহাস সকলেই পড়েছেন । দীর্ঘ দিনের লড়াই চলে তার মধ্যে দু/তিন বার মুঘল সাম্রাজ্যে থেকে গুজরাট হাতছাড়া হয়ে যায় । কিছু বছর আগে এই পাটনে সরপঞ্চ নির্বাচন নিয়ে হিন্দু-মুশলিম রায়ট হয়েছিল , যদিও সেইসব ঘটনা যেন আর না হয় দেখতে হবে গুজরাট প্রশাসন ও সরকারকে । আমি ট্যুরিস্ট হিসেবে পাটনকে দেখতে চাই তার মলিনতা যেন আমার মন খারাপ করে না দেয় । পাটনের ২০১১-এর জনসংখ্যা ১,৩৩,৭৪৪ । হিউয়েন সাঙ গুজরাটের বহু স্থানের গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেছেন কিন্তু তখন পাটন ছিলনা । আইহোল লিপি থেকে জানতে পারি নর্মদা থেকে কাবেরী পর্যন্ত চালুক্য রাজত্বের সীমান্ত ছিল । ৭৪৫ AD তে চালুক্য / সোলাঙ্কি রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করেন বনরাজ চাওডা । উত্তর মহারাষ্ট্র ও বিদর্ভে বাকাটদের পতনের পর সোলাঙ্কি রাজত্ব দুর্ভেদ্য করতে তাঁরা ( ৯৪০ CE থেকে ১১২২ CE) তারা পাওয়াগড়ে দূর্গ নির্মান করেন । ১৫ সেঞ্চুরিতে মহম্মদ বেগাদা পাওয়াগড়‌ও দখল করে ধ্বংস করে দেন। বর্তমানে ভদোদরা থেকে ট্যুর নিয়ে রোপ‌ওয়ে করে পাওয়াগড়ের ধ্বংসাবশেষ দেখে নেওয়া 
যায় । পাটন হলো মাউন্ট আবু ও আমেদাবাদের মাঝে পড়ে । পাটনের পথে পড়ে হিন্দু মন্দির স্থানীয় মদেরা গ্রাম ( এটিও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত) । মদেরায় জানুয়ারি মাসে তিন দিনের ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্সের ফেস্টিভ্যাল 
হয় । মদেরার মন্দিরটি ভারতের দ্বিতীয় 
সূর্য মন্দিরের তকমা পেয়েছে ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান পেয়েছে মন্দির তৈরি করেন সোলাঙ্কি/ চালুক্য রাজা ভীম-১ । মোদেরার কাছেই আছে আর এক 
সূর্য মন্দির ও রাজপ্রাসাদ পুষ্পবতী নদীর তীরে মেহেসনাতে । মেহেসনার চামুণ্ডা মন্দির বিখ্যাত মূর্তি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত । তৈরি করেন Mehsaji । মোদেরার সূর্য মন্দিরের সঙ্গে আছে
সমবেত হল, সূর্য কুন্ড ও মন্দির এবং এইসব
ভগ্নাংশ নিয়ে একটি দুর্লভ মিউজিয়াম । সুন্দর বাগান আছে সবকটি হেরিটেজের সঙ্গে এগুলির সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালে । সোলাঙ্কিরা ৮০০ বছর আগে সৌরাষ্ট্র থেকে যে তাঁত শিল্পীকে এনেছিলেন রানীর শাড়ি তৈরির জন্য তারা পাটনে থেকে গেছেন। এঁদের শাড়ির নাম হলো পাটোলা । এঁদের পদবী থেকে শাড়ির নাম । ক্রমে ৭০০ বংশধর মিলে সারা 
বিশ্বের বাজারে পাটোলা শাড়ি পাঠানো 
ছিল এদের পারিবারিক ব্যবসা । চীন 
থেকে আফগানিস্তান হয়ে সিল্ক সুতো আসতো পাটনে । প্রথম দিকে এরা নিজের মেয়েকে এই শাড়ি তৈরির ব্যাকরণ শেখাতো না । পরে তা আটকানো যায়নি । এখন এঁদের পরিবারের ধন দৌলতের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ও অন্যান্য ব্যবসায় বাড়বাড়ন্তে এরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে । যার ফলে এখন একটা পরিবার এই বিদ্যা ধরে রেখেছে পাটনে । যে শাড়ির মিনিমাম দাম এক লাখ থেকে সাত/ আট লাখ । পাটনে ডুপ্লিকেট ছাপ মেরে পাটোলা বিক্রি হয় তার দাম‌ও ১০.০০০/- হাজার । কিন্তু সেগুলি পাটোলা নয় এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ভুক্ত নয় ।
পাটোলা শাড়ি বাজারে পাওয়া কোনোদিন যায় না । এঁদের কাছে অর্ডার দিতে হয় । রাজা ভীম -২( পিতাপুত্র মিলে ১০২২-১০৬৪) হঠাৎ মারা যেতে রানী 
উদয়মতী এই নান্দনিক আশ্চর্য এবং বিস্ময়কর স্টেপ ওয়েল বা ধাপ কুয়োটি তৈরি করেন কিন্তু তিনি সমস্তটা দেখে যেতে পারেননি । মূলারাজা ও খেমরাজা দুই বংশধর রেখে যান । Rani Ki Vav সরস্বতী নদীর তীরে ( ১১ সেঞ্চুরিতে তৈরি)
বর্তমান ১০০ টাকার ল্যাভেন্ডার কালার ব্যাঙ্ক নোটের উল্টোদিকে রানী কি ভাওয়ের মোটিফ মুদ্রিত হ‌ওয়ায় গুজরাটের ঐতিহাসিক মূল্যকে ভারত সরকারের এক বিরল স্বীকৃতি হিসেবে দেখছে গুজরাটিরা । ৬৬ মিটার চওড়া ও ১৪২ মিটার লম্বা এটি সাত তলা বিশিষ্ট সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেছে ( এখনকার মাপে ১০/১২
তলা নীচে নামতে হবে) তবে বিভিন্ন সময়ে পাটনে দেশী-বিদেশী সুলতানদের আক্রমণে রানী কি ভাওয়ের উপরের অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে । হিন্দু ধর্মের দেবতা ও অপ্সরা মূর্তি দিয়ে সুনিপুণ ভাবে বালি পাথরে খোদাই করা এই তালাও বা পুকুর । ২০১৪ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের ও ২০১৬ ভারতের শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছন্নতা পুরস্কার পায় এই সৌন্দর্য 
স্থাপত্য স্থল। দুর্গা কল্কি অবতার শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরামের মূর্তি গুলি কথা বলছে যেন । অনুপম খোদাইকৃত কিছু ঝাফরিও আছে দেওয়াল বরাবর । নষ্ট ও ধ্বংসাবশেষের পরেও ৫০০ র বেশি মূল বড় মৌলিক ভাস্কর্য প্যানেল ও ১০০০ এর বেশি মিনিয়েচার ভাস্কর্য প্যানেল ছাড়াও থাম , সিলিং, জাফরি দেওয়ালে ধর্মীয় মোটিফে ভারতীয় ধর্মীয় মাইথোলজির বিকাশ ঘটেছে । 
আছে যোগিনী, নাগকন্যা, সোলহা-সিঙ্গার বিশিষ্ট স্টাইল , বিষ্ণুর দশাবতার। মোট ১৬ রকমের স্টাইল ও ফেসিয়ালের দেখা মেলে এখানে ।  একেবারে শেষে সত্যিকারের একটি কুয়ো সংশ্লিষ্ট হয়েছে যার উপরের অংশের চার দিক ঘেরা সেখানে পোড়া ইঁট লক্ষনীয় । উপরের দিকে কিছুটা একদিকে  খোলা ট্যাঙ্কটি উপর থেকে ক্যামেরা দিয়ে দেখতে হয় ঝুঁকে দেখা যায় না এবং ওই পর্যন্ত সামনে দিয়ে যাওয়া বন্ধ আছে। সেখানে জল আছে । ৯. ৫ /১০ মিটার 
গোল আকৃতির ও ডিপ ২৩ থেকে ২৭মিটার। এন্সিয়েন্ট রাজস্থানী শিল্প রীতিতে এই আয়তাকার পুকুরের স্থাপত্য রূপ পেয়েছে । এই ধরনের ধাপ পুকুরের মধ্যে পৃথিবীর মধ্যে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ । একে ১১ সেঞ্চুরির ওয়ান্ডার্স বলা হয়েছে । ৫০/৬০ বছর আগেও এখানকার জলে জন্মানো জড়িবুটি থেকে ভাইরাল রোগ সেরে যাওয়ার বহু প্রমাণ আছে । কিন্তু রানী কি ভাউ এখন সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচ্ছন্ন স্থান হয়েছে তাই এর বাইরে হয়েছে সুন্দর মনোরম মনোমুগ্ধকর বাগান , উটিও হার মানবে । গাড়ি পার্কিং ঠান্ডা ফিল্টার করা পানীয় জলের ব্যবস্থা । রানী কি ভাও কে ঝকঝকে তকতকে করা হয়েছে । জায়গার মাপ ১১.৬ একর । 
বাফার জোন ৩১০.০ একর । এর সমস্তটায় আজ আর যেতে দেওয়া হয়না স্যুইসাইড করা ও স্থাপত্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভয়ে । ভেতরে একটি ট্যানেল ছিল যেটি এখন বুজিয়ে ফেলা হয়েছে পাথর ও কাদা দিয়ে নিরাপত্তার জন্য । ঐতিহাসিকরা মনে করেন আক্রমণ হলে রাজার সৈন্য সামন্ত নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা করা ছিল কেউ বলেন বর্ষায় জল আনার জন্য। তবে রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য‌ও একে ব্যবহার করার ততটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মত পাওয়া
যায় । এটি ৬৪ মিটার লম্বা ও ২০ মিটার প্রশস্ত ছিল । করিডোর হিসেবেই এটি ব্যবহার হতো মনে হয় । ট্যানেলটি পাটনের একটি গ্রাম সিদপুর পর্যন্ত গিয়ে মিশেছে । এই রানী কি ভাওতে সিঁড়ি ভেঙে
নামলে ঠান্ডা বাতাস অনুভব করবেন । কোনো রানী তার ভালোবাসার জন্য কোনো রাজার জন্য এমন করেছেন এ নিদর্শন নেই ( পাটনের রাজা ভীমের অকাল
মৃত্যুর পর এমন নিরিবিলি সৌধ নির্মাণ 
করেন । অনেকে বলেন বিধবা রানী এই নিরিবিলি পুকুরে এসে রাজা ভীমের জন্য দুঃখ ভাসাতেই এরকমটা করেছিলেন সেখানে ধর্মীয় মোটিফে তিনি বুকের কষ্ট দেবতার কাছে অর্পণ করতেন কিন্তু এই স্থাপত্য শেষ হ‌ওয়ার আগেই রাণি মারা 
যান । যেহেতু এটি ভূমিকম্পের প্রন এরিয়া তাই এর স্ট্রাকচার  মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করা হয় । ভুজের ভূমিকম্পের সময় খুব একটা এর ক্ষতি হয়নি যতটা হয়েছে বিভিন্ন আক্রমণে এখানকার ক্ষতি হয় । 
অনেকেই মনে করেন পাটনে এতবার আক্রমণ হ‌ওয়া সত্বেও রানী কি ভাওয়ের উপরের অংশ ছাড়া কিছু মাত্র ক্ষতি করতে পারেনি আক্রমণকারীরা । রাজা কর্ণ এই কাজটি শেষ করেন । copyright ©® Alok Kumar Kundu (আসল লেখাটি আমার ব্লগে আছে নেট সার্চ করুন)

#Saranda tour

■পুরনো সারাঙডা ২০২০-[ পর্ব●১ ]
◆অলোক কুন্ডু

●সাতশো পাহাড়ের জঙ্গল হিসেবে 
নজরকাড়া পশ্চিম সিংভূম জেলা বা এই অঞ্চলের অন্য নাম সারাঙডা। জঙ্গলের আনাচেকানাচে মাটিতে মিশে রয়েছে খয়েরি ও কালো রঙের লৌহ আকরিক । লালমাটি অর্থাৎ 'আয়রন-ওর' ( সমস্ত লালমাটি কিন্তু লৌহ আকরিক নয়, ল্যাটেরাইট মানে লালমাটি) আর আছে অফুরন্ত শাল সেগুনের ভয়ঙ্কর ঘন গা ছমছমে ভিরিডিয়ান জঙ্গল। কাছাকাছি আছে অনেকগুলো আয়রন‌-ওর মাইন্স। কিরিবুরু আর মেঘাহাতুবুরু হলো সারাঙডার দুটি পাহাড়ের চূড়ার নাম। এখন অবশ্য দুটো
চূড়ার অবস্থানের নাম হয়েছে হিলটপ। অবশ্য কিরুবুরু কিন্তু জঙ্গলের রেঞ্জ নামেও
অভিহিত করা হয়। এখানে আসতে হলে হাওড়া থেকে দিনের দিন বারবিল-এ অথবা বড়াজামদায় (রেলস্টেশন) নামতে হবে। এইসব স্টেশনে নামলে আপনি জঙ্গল আর আয়রন‌ওর এলাকায় নেমেছেন বলে অচিরেই বুঝতে পারবেন। বিহার-ঝাড়খণ্ডের গ্রামগঞ্জের সাদামাটা ধুলোয় মোড়া আর পাঁচটা রেলস্টেশনের মতো দেখতে হলেও এইসব স্টেশনের পরিবেশ একটু অন্যরকম। এখানকার সমস্ত ধুলো লাল, রেড-অক্সাইড দিয়ে এলাকাটা কেউ যেন সম্পূর্ণভাবে মুড়ে দিয়েছে। কোনও এক অজ্ঞাত প্রকৃতির অঙ্গুলিহেলনে লালের লেলিহান আস্তরণে গাছপালা পর্যন্ত ঢাকা। এইসব স্টেশনের বাইরে বহু বছর আগে দাঁড়িয়ে থাকতো টাঙ্গাগাড়ি আর টাট্টু ঘোড়া। এখন সেই 
ছবি বদলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আধুনিক 
সব গাড়ি আর বড় বড় লরি বা ট্রাক। সাতসকালে আমরা দুটো পরিবার হাওড়া স্টেশনের ২০-নং প্লাটফর্ম থেকে জনশতাব্দীতে (হাওড়া-বারবিল) উঠেছিলাম। নামলাম বারবিলের আগের স্টেশন,বড়াজামদায় প্রায় বেলা১.২০-তে। মোট ৭-ঘন্টার সুহানাসফর। আমাদের পারিবারিক এক স্বামী-স্ত্রী বন্ধু শিল্পী-সুপ্রিয়র 
রুট-প্ল্যান অনুসারে আমরা যাবো 
সারাঙডায়, কারণ ওরা সব চেনে। 
চিনারপার্ক থেকে (ইউবিআইয়ের ) 
সুজিত চ্যাটার্জী-দা ও কৃষ্ণা চ্যাটার্জী(স্ত্রী) আমাদের আরেক জোড়িবন্ধু,খুব 
ভোরবেলা আগেই এসে পৌঁছেছেন হাওড়া স্টেশনে। আমরা মধ্য হাওড়া থেকে একটা টোটোতে চেপে চলেছি, নামবো হাওড়ার ফোরসোর রোড হয়ে রেল-মিউজিয়ামে,
ওখান থেকে হেঁটে হাওড়া স্টেশন ঢুকতে 
লাগবে ২/৩ মিনিট। এমন সময় ফোন 
এলো কৃষ্ণার কাছ থেকে। জানা গেল সুজিত-দা দাঁড়িয়ে আছেন প্লাটফর্মের 
মুখে, আমাদের অপেক্ষায়। সকাল 
৬.২০-তে সঠিক সময়ে জনশতাব্দী 
ছেড়ে দিল। আছি এসি চেয়ারকারে। 
কিন্তু সাময়িক যাত্রায় এসিতে বাইরেটা
সেইরকমভাবে উপভোগ করা যায় না কিন্তু সঙ্গে মহিলারা আছেন,কিছুটা হলেও বাথরুম একটু সাফসুরত পাওয়া যাবে তাই এসিতে। চাইবাসা থেকে উঠবে সুপ্রিয়-শিল্পী ওদের চাইবাসায় একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। জনশতাব্দী চাইবাসায় ঢুকতে ওরা যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে (আমরা এখন 
তিনটি সমমনস্ক পরিবার একসঙ্গে 
হয়ে গেলাম)। বড়াজামদা স্টেশনে 
গাড়িও বন্দোবস্ত করে রেখেছিল সুপ্রিয়। 
বোলেরো ও তার ড্রাইভার সাহেব উপস্থিত রয়েছেন। বেলা ১.২০-তে আমরা নামলাম বড়াজামদায়। আসল সারাঙডা রয়েছে মেঘাহাতুবুরু ও কিরিবুরুর পাহাড়ে এবং থলকোবাদে। বাকি সারাঙডার অনাঘ্রাত সবুজ পড়ে আছে আর‌ও গহীন জঙ্গলে।আমরা গিয়ে উঠবো মেঘাহাতুবুরুতে,
সেলের যেখানে গেস্ট-হাউস রয়েছে,
ওটাই সারাঙডার ভিউপয়েন্ট। যেখানে থাকতে গেলে সেইলের কর্মচারী বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হতে হবে অথবা সেইলের অফিসার সঙ্গে থাকলে খুব 
ভালো হয়। কিন্তু তা নাহলে সেইলের গেস্টহাউসে স্থান পাওয়া খুব‌ই মুস্কিল। 
খুব জ্যাক না থাকলে, নিজেরা হঠাৎ গিয়ে সারাঙডার জঙ্গলে থাকার আসল মজা কিন্তু পাওয়া যাবেনা। এককথায় বলা যায় মেঘাহাতুবুরুতে সেইলের গেস্টহাউস সহজে বুক করতে পারা যাবেনা, যদিও কেউ বুক করে চলেও যান কিন্তু হঠাৎ কোনও ভিআইপি এলে তার ঘর বুকিং ক্যান্সেল হয়ে যাবে, এটাই সেইলের স্থায়ী নিয়ম। ভিআইপি এলে, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার স্টাফের‌ও বুকিং ক্যান্সেল হয়ে যেতে পারে। তাই মেঘাহাতুবুরুর ওই গেস্টহাউস হলো সারাঙডায় ভ্রমণার্থীদের থাকার জন্যে একটি মহার্ঘ থাকার জায়গা। পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে থাকতেই হয়। তাই সারাঙডায় গেলে প্রায় সকলেই গিয়ে ওঠেন বারবিলের মি: লতিফের রিসর্টে বা অন্য কোন‌ও হোটেলে। বারবিল স্টেশন থেকে ওইসব হোটেলের দূরত্ব ২০/২৫ কিলোমিটার এবং বারবিল থেকে কিরিবুরু রেঞ্জ খানিকটা দূরে। যাইহোক আমাদের তিনটি পরিবারের হোয়াটস‌অ্যাপে আলোচনা করে ঠিক হলো যে আমরা অন্য দুটি পরিবার‌ও ওদের সঙ্গে মেঘাহাতুবুরুতে গিয়ে থাকবো অর্থাৎ সেইলের গেস্টহাউসে আমরা ওদের দুজনের সঙ্গে আর‌ও চারজন থাকতে পারবো। মেঘাহাতুবুরুর গেস্টহাউসের নাম "মেঘালয়"। কেন মেঘালয়, সেটা ওখানে গিয়ে টের পেলাম। অধিকাংশ সময়ে জায়গাটা মেঘ ও কুয়াশায় ছেয়ে ফেলে। এই"মেঘালয়"-এর মতো গেস্টহাউস, গোটা সারাঙডায় আর একটাও নেই এবং যেহেতু মেঘাহাতুবুরুর গেস্ট হাউসে পুলিশ, 
প্রতিরক্ষা, সিআইএস‌এফ,খনি দপ্তর, 
ঝাড়খণ্ড সরকারের হোমরাচোমরাদের 
সারাঙডায় কাজের জন্যে গিয়ে হরদম  সাময়িক-স্টে করার একমাত্র জায়গা‌। 
তাই ওই গেস্টহাউস সব সময় ভর্তিই 
থাকে। এই গেস্টহাউস ফাঁকা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। পাশের কিরিবুরুতেও সেলের আর‌ও দুটি গেস্ট হাউস আছে। আর‌ও একটি আছে ভিজিটারদের জন্য যারা দূর থেকে এখানে কাজে আসেন 
তাদের থাকার জন্য এবং আর একটি গেস্টহাউস কিরিবুরুতে আছে সেটা সম্পূর্ণভাবে ব্যাচেলরদের জন্য। কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটের "সেইল"-এর অফিস থেকে বুক করলেও কিন্তু যখন তখন সেই বুকিংও ক্যানসেল হয়ে যেতে পারে, এই মহামন্ত্র জেনেবুঝে ওই বিষ ও অমৃতভান্ডের বরণডালা সাজিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম সেই সৌন্দর্য পথের সন্ধানে। 
এই আপ্তবাক্য মনে রেখে, যা ভাগ্যে আছে তাকে মেনে নিতে হবে। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী যখন তখন সারাঙডার এই "মেঘালয়" গেস্ট হাউসে এসেই ওঠেন। উড়িষ্যার লাগোয়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, অফিসার এমনকি পশ্চিমবঙ্গের 
মন্ত্রীরা পর্যন্ত এখানে আসেন। মেঘালয়ের গেটে ২৪ ঘন্টা সিআইএস‌এফের জ‌ওয়ানরা পাহারা দিচ্ছেন। ট্যুরিজমের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্বেও এতবছরেও সারাঙডা কিন্তু
জবরদস্ত ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে উঠতে পারেনি, একমাত্র কারণ হলো থাকার এই জায়গার অভাবের কারণ। সারাঙডার এই মধ্যমণি গেস্টহাউস অর্থাৎ মেঘালয়ের ঘরে ঘরে যখন তখন মেঘ ঢুকে আসে। এক আশ্চর্য রূপারোপ নিয়ে খাড়াই পাহাড় হয়ে বাঁকেবাঁকে উঠে গেছে আমাদের সারাঙডা। নির্লিপ্ত অথচ এখানকার যে পাহাড়িভঙ্গি ভ্রমণার্থীদের দীর্ঘ দিন আকর্ষণ করে রেখেছে তার প্রধান কারণ হলো এর অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মণিকাঞ্চনসমূহ। একদিকে গাছ, ঘন জঙ্গল, লৌহ খনির খাদানের অপূর্ব সৌন্দর্য শৈলী,জীবজন্তু
এবং ঝর্ণা। এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম শালের জঙ্গল যার ঘনত্ব হেক্টর প্রতি ভারতে আর কোথাও নেই। সঙ্গে অরণ্যসুন্দরীর বিনোদবেণির বাঁকে বাঁকে তীক্ষ্ণ হেয়ারপিন সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে আর তার রূপলাগি বাঙালি ভ্রমণপিপাসুরা বহুকাল ধরে সেই অনন্ত ঐশ্বর্যবিলাসী রূপ-রসের মোহে চিরকাল ধরে মজে আছেন। সেইসঙ্গে আছে বিশাল বিশাল আয়রন-ওর মাইন্স। ব্যাপক সেই আয়োজনে মানুষের রুপির ঝনঝনানির শব্দ যা ভারতবর্ষের জিডিপি বর্ধিত করার প্রলোভনে মাতোয়ারা থাকে সর্বক্ষণ। যত্রতত্র হাতির করিডোর। জমির ১০-মিটার ভেতর লাল কালো সলিড 
লোহার পাহাড় অর্থাৎ হেমাটাইট-লোহার ৫৮-৬০ ভাগের ঐশ্বর্যকে কোম্পানিগুলি চুটিয়ে খরিদদারি করে যাচ্ছে, এই ব্যবসা
অনেকটাই মনোপলি। এখানকার ভূমির মাটি ছুঁয়ে আকাশে উঠে গেছে বিশাল বিশাল শাল পিয়াল বট সেগুন মেহগনি গাছের অবিরাম বিস্তার। মাথা উঁচিয়ে আকাশে তাকাতে হয় মানুষকে এমন‌ই 
তার উচ্চ মিনার। ৫/৬ তোলা (৫০-৬০ ফুট) শাল সেগুন পিয়ালের ঘন জঙ্গল। এক 
এক জায়গায় জঙ্গলের গভীরতা এতটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে দিনের আলো সেখানে ঝিমিয়ে থাকে। শ্যাওলার আস্তরণ দেখে নিজেকে বুঝে নিতে হবে যে সেখানে 
বহুকাল মানুষ আসেনি। এখানকার জঙ্গল এমন‌ই রূপসী যে সেই অগম্যতাকে দেখার 
বিহ্বলতায় ভ্রমণার্থীর মনে সুখের এক প্রকার অনাবিল আনন্দের সঞ্চার হয়। কখনও আবার সবুজ বনানীর ঘন আকৃতিময়তা ও তার গভীরতায় প্রাণ
ধুকপুক করে ওঠে । অনাঘ্রাত প্রকৃতির 
সেই ভয়ধরা শিহরণ পৌঁছে যায় হাড়ে
হিম ধরা পর্যন্ত। হিন্দি ছবি রাজের থেকে সেই ভয় আর‌ও ব্যাপক। দুর্গম রূপের সেই রুক্ষ-গাঢ়-মরা সবুজাভ বনভূমির অবিচল নির্লিপ্ত চাউনি ভ্রমণপিপাসুদের আর‌ও ভেতরে নিয়ে নিয়ে যেতে চায় বুঝি। একসময় ভয়ঙ্কর জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে 
যখন জানতে পারা যায় যে সেখানেই ২০০৯-এর কোনও এক সকাল ৮.০০ টায় ১৭-জন জ‌ওয়ানের কনভয়সমেত গাড়িকে মাওবাদীরা ক্যানবম্ব আইডি বিস্ফোরণ করিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। সেইসব জেনে তখন আমাদের হৃদযন্ত্রের স্পন্দন এবং রোড-রোলালের শব্দের মধ্যে আর কোনও তফাত হয়তো ছিলোনা। সত্যিই ভয়ে বুক কেঁপে উঠেছিল। সেখানে আজও স্মৃতি হিসেবে রাখা আছে একটুকরো বুলেট প্রুফ কাঁচ। বুলেটপ্রুফ কাঁচ যে কতটা মোটা ও শক্তপোক্ত হয়, এখানে আসার আগে পর্যন্ত তা মোটেও জানা ছিলনা‌। প্রথম শ্রেণির একজন অফিসার সহ তাও ১১-জন জ‌ওয়ানকে বাঁচাতে পারা যায়নি সিআরপিএফ জ‌ওয়ানরা নিধন হলেও ৬-জন ঝাড়খণ্ড পুলিশ নিদারুণভাবে চোট পেয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন। সংবাদপত্র ১৭ জন লিখলেও জনগণ সেই হিসেবকেই মুখে মুখে ১৮ জন করে নিয়েছেন কি কারণে সে বিষয়ে রহস্য থাকলেও থাকতে পারে‌।এখনও আপনাকে সেখানে প্রাণ হাতে নিয়েই যেতে হবে ওইসব পথ দিয়ে। এই পথে অন্য দর্শনীয় স্থান দেখতে যাওয়ার আগে সিআরপিএফ চেকপোস্টের ডিউটিরত জ‌ওয়ান গাড়ির ড্রাইভারকে 
মাত্র আধঘন্টা সময় দিলেন, ফিরে আসার জন্য। ওই পথ ধরে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা শুধুই গভীরে যাওয়ার, জঙ্গল পথে চলে যাওয়ার। সে পথ বুঝি অনন্ত অথবা নেই তাই সেই পথেই ফিরে আসতে হবে। জঙ্গলঘাঁটি শুরু হয়েছে এখান থেকেই।
ঘাঁটি মানে উঁচিয়ে ওঠা আর ওঠা। এক 
একটা ঘাঁটি এখানে একের চার কিমি পথ টানা উঠে গেছে। পাথর মেশানো কাদামাটির সেই পথ। ড্রাইভার‌ও সেকথা ভালো ভাবে জানেন দুর্গম পথের হিসাব এবং কখন তাকে ফিরে আসতে হবে। তাই যতদূর পারা যায় গিয়ে তিনিও কথা রাখতে তাড়াতাড়ি ফিরতে চাইবেন। কারণ দূর পথে একটা ঝর্ণা আছে আর আছে হাতিদের নদীতে জলপানের একটা জায়গা যেখানে তখন একটা বাঁধ দিয়ে জন্তুজানোয়ারদের জলপানের জন্য একটা বদ্ধ জলাশয় তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আমরা যেদিন গেলাম সেইদিন সেখানে ওই ছোট্ট বাঁধের কাজকর্ম দেখতে আসা বন দপ্তরের লোকেরা ততক্ষণে ওখানে একটা ছোটখাটো পিকনিক শুরু করে দিয়েছে। তাদের গাড়িটি যেখানে রাখা আছে তার ঠিক পেছনে আমাদের ড্রাইভারসাহেব তার গাড়িটি থামিয়ে দিলেন। সেই গভীর জঙ্গলে হাতির নিজস্ব ভূমির পরিচয় দেওয়া একটি বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে বনকর্মীদের আনন্দের দেখাদেখি ততক্ষণে আমাদের‌ও ফটোসেশন শুরু হয়ে গেছে। এতক্ষণ যে ভয় শরীর ও মনে বাসা বেঁধেছিল তা অচিরেই পালিয়ে গেছে ততক্ষণে। গাড়ির মধ্যে যে জবুথবু হয়ে বসে থাকা, মনে মনে যে আতঙ্কের চিত্রকল্প সাজানো চলছিল, জঙ্গলের মধ্যে নামতে পেরে সেইসব তখন তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মতো উবে গেছে। স্বাধীন জঙ্গলের কাছে তখন আমাদের স্বাধীনতা ভাগ করে নেওয়ার পালা। সামনে বিশাল জঙ্গলের পটভূমি, একটা ছোট পাহাড়ি নদী এই পর্যন্ত আসার পর তাকে তিন সাড়ে তিনফুট একটা বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বর্ষাকালে জল যে বাঁধ ছাপিয়ে ভয়ঙ্কর হবে সেকথা না বললেও বুঝে নিতে হয়। জঙ্গলের যত্রতত্র উইঢিপিগুলো থেকে তাদের বিশাল বাহিনী নিয়ে বড় বড় নিষ্পাপ আকাশছোঁয়া গাছগুলোকে বধ করার পরিকল্পনায় অনেক দূর তারা এগিয়ে গেছে। আমরা এখন ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে এসেছি, শীত শেষের জঙ্গল দেখতে। জঙ্গলকে অপরূপ লাগা মানে একরকম নেশা ধরা। পাতা ঝরার সময় শুরু হয়েছে এখন। নব পত্রপল্লবের পতাকায় জঙ্গলের উৎসব শুরু হবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে, বসন্তের আগমনে। তারপর ওরা দিনের পর দিন গনগনে গ্রীষ্মের প্রখর তাপ সহ্য করবে। বৃষ্টিতে ভিজবে অরণ্যসমূহ। সেই সাধে বুঝি বৃক্ষশ্রেণি আকাশের উদ্দেশ্যে চিরকাল বড় হয়। স্বাধীন অরণ্যের স্বাদ নেওয়ার যে সাধ হয়েছিল আমাদের, এতক্ষণে তা বুঝি অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। আমরা গাড়ি থেকে নামতে পেরে নানা ভঙ্গিতে তখন সেল্ফি-গ্রুফিতে মগ্ন। কখন যেন আনন্দে সারাঙডাকে আপন করে নিয়েছি তা আর মনে নেই...( ক্রমশ: )

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...