বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০

কোভিদ-১৯ ভ্যাকসিন নতুন বছরের সুখ-সমৃদ্ধি : অলোক কুন্ডু



🌏 ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য তৈরি তো ? ভয়ভীতি ত্যাগ করে ভ্যাকসিন নিন। --অলোক কুন্ডু


⛔ আমেরিকা ও জার্মানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ফাইজারের ভ্যাকসিন ৯৫% ক্ষমতা রোগ নির্মূলের। ( Pfizer and BioNT Covid19 Vaccine has been released on 2/16.12.20) কিন্তু তার সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজার এখনও ভারতে বসেনি এবং বিদেশ থেকে আসেনি। সংরক্ষণ ব্যবস্থার হ্যাপা আছে। বিশেষ করে যে ঠান্ডায় ভ্যাকসিন রাখার কথা তার ফ্রিজিং ব্যবস্থাপনা ভারতে নেই। প্রচুর ছোট-বড় ফ্রিজীয় ব্যবস্থাপনা করতে তার প্রচুর খরচও। কিন্তু তার থেকেও খারাপ দিক হলো এই অশিক্ষিত আশা বা সমূহ স্বাস্থ্য-কর্মীদের হাতে পড়লে তার ১২টা বাজবে কিনা কেউ জানেনা। একদিকে খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ, পরিকাঠামো খরচ খুব বেশি তার ওপর চূড়ান্ত অদক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে জনজীবন। এইসব তৈরি করা, পরিকল্পনার স্তরে থাকলেও এই অদক্ষ অসচেতন ব্যবস্থাপনার ঝামেলা জনিত কারণে এবং আমাদের দেশের স্বাস্থ্য কর্মীদের অদক্ষতায় ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা ১০০ ভাগ। হয়তো দেখা যাবে নষ্ট ভ্যাকসিন আপনাকে ও আমাকে ফুঁটিয়ে দেবে। কিন্তু দামের দিক থেকে খুব বেশি নয় হয়তো ৮০০ টাকার মধ্যে। ধরা যাক তা নানা পথে ১৫০০/- খুব জোর দাম হতে পারে। বুস্টার নিলে ৩০০০/-এর মধ্যে হওয়ার কথা। যাইহোক ফাইজার সবচেয়ে যোগ্য হলেও আমাদের দেশে হয়তো আসছে না। আমাদের দেশে ব্যবস্থাপনার ঢিলেমির জন্য এই ভ্যাকসিন আসতে দেরি হবে। তবু অনুরোধ, প্রধানমন্ত্রী এই ব্যবস্থাও গড়ে তুলুন সকলের জন্য।

⛔ এখন আমাদের হাতে আছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ( Oxford-Astra Zeneca Covid19 Vaccine has been released on 30.12.20 in our country) যা আমাদের এখানে পুণেতে তৈরি হচ্ছে। ৯০% শক্তিশালীও। আমাদের দেশের বাজারে ও সরকারের ব্যবস্থাপনায় দেওয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এই ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে দেওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া গেছে এখনই। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি থেকেই বাজারে কিনতে পাওয়ার কথা। এই ভ্যাকসিন কীভাবে তা তৈরি হচ্ছে এবং পুণের সেরামের পরিকাঠামো দেখতে ভারতে অবস্থিত সমস্ত দেশের রাষ্ট্রদূতরা সম্প্রতি তা অনুসন্ধান করে দেখেছেন এবং তৃপ্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও হায়দ্রাবাদের কো-ভ্যাকসিন ( Bharat-Biotech ) যেখানে তৈরি হচ্ছে তা ঘুরে দেখেছেন। আমাদের হাতে এখন দুটো ভ্যাকসিন। (১).পুণের-Oxford-Astra Zeneca Covid19 Vaccine (২). হায়দ্রাবাদের- Bharat-Biotech -এর  Co-vaccine । 

⛔ এখন সমস্ত ভ্যাকসিন দুটো করে ডোজ নিতে হবে। প্রথমটা নেওয়ার অন্ততপক্ষে ৭ দিন পর ভ্যাকসিন কার্যকর হবে। ফাইজার ও অক্সফোর্ড দেখেছে যতই উপসর্গ থাকুক না কেন প্রথম ডোজে কিছু না হওয়ার চান্স বেশি। বুস্টার ডোজে হলেও তা খুব সামান্য জনের হতে পারে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় কো-ভ্যাকসিন সকলকে দিতে মার্চ- এপ্রিল ২০২১ হওয়ার কথা কিন্তু যেহেতু কো-ভ্যাকসিন তৃতীয় দফার ট্রায়াল চলছে এখানে, যা দেশীয় পরিকাঠামো ও পরিকল্পনায় তৈরি এবং যার কার্যকরী ক্ষমতা ৬০%। আমাদের এই ভ্যাকসিনটাও যদি আশু, বিনা পয়সায় দেওয়া যায় তাহলে একলপ্তে সংক্রমণ নেমে যাবে। এটাও দুটি ডোজ ২১ দিনের মাথায়। যা কলকাতার মেয়র দুটোই ট্রায়াল নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। 

⛔ রাশিয়া ও চীন এই দুটি দেশের ভ্যাকসিন হু-দ্বারা পরীক্ষা করা হয়নি। এই দুটি দেশ তাদের ট্রায়াল মাত্র একটা স্তর পাশ করলেও তারা আর ট্রায়াল করেনি সর্বস্তরে তা দিতে আরম্ভ করে দিয়েছে সরাসরি। হু-এর নিষেধাজ্ঞা দুটো দেশ কানে নেয়নি। রাশিয়া বরং, আমেরিকা ও ব্রিটেনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে তাদের স্পুটনিক-কে বুস্টার ডোজ ( দ্বিতীয় ডোজ) হিসেবে কাজে লাগালে তা খুবই কার্যকর হবে। চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশ, আরবের বিভিন্ন দেশে ও আফ্রিকায় দেওয়া হতে পারে। চীনের ভ্যাকসিন খুব বিশ্বাসযোগ্য হলেও তা ভারতে পাওয়া যাবেনা। রাশিয়ার ভ্যাকসিন যেহেতু হু সাপোর্ট দিচ্ছে না, তাই এখানে পাওয়া যাবেনা বলেই ধরেই নিতে হবে। 

⛔ কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও কোনও ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেয়নি। সকলেই আশা করছেন ফাইজারের কাজটি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ১০ বছরের আবিষ্কারের কাজটি তারা যৌথ ভাবে জার্মানদের সহায়তায় ১০ মাসে সম্পন্ন করেছে এবং যা যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে এখনই চিহ্নিত হমেছে। আগামী ভবিষ্যতে করোনার গলা টিপে ধরতে ১০০ ভাগ সফল হবে। 

⛔ এখনও পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং মারা গেছেন তা নেই। কেউ মারা যাননি। সামান্য অসুস্থ হয়েছিলেন একজন ফাইজারের স্বেচ্ছাসেবক। তিনি ভ্যাকসিন-বিরোধী প্রচার করাতে, তার বিরুদ্ধে ফাইজার ১০০ কোটি টাকার মামলা করেছে। ভ্যাকসিন নিয়ে বিরোধীতা, ইতিমধ্যে ফেসবুক জানতে পারলে যেকোনও বিরোধিতা মুছে দেবে। ফেসবুকে ও হোয়াটসঅ্যাপেও বিরোধী প্রচার যারা করবেন তারা সতর্ক হোন। কারণ তারা কিন্তু বেআইনি কাজের মধ্যে পড়ে যাবেন। এইরকম ভিডিও পেলে ফেসবুকে জানান। কারণ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজে তিন চারটি উপসর্গের একটি সামান্য হলেও হতে পারে। সেই কারণে বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ভ্যাকসিন নিন আনন্দের সঙ্গে। কারণ আপনাকে ধরে নিতে হবে করোনার নানা ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা আমাদের মধ্যে আরও ঘোরাফেরা করবে। ইতিমধ্যে চরিত্র পাল্টে করোনা বিলাতি আখ্যা পেয়েছে। 

⛔ ©® অলোক কুন্ডু


মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০

সৌরভ মুখ্যমন্ত্রী হলে বিচক্ষণতার অভাব হবেনা : অলোক কুন্ডু

২০০৫-এ যখন ভারতীয় সিস্টেম ও বিদেশি কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের চক্রান্তের শিকার হয়ে সৌরভ গাঙ্গুলী ক্রিকেট থেকে বাদ পড়েছিলেন তখন আনন্দবাজার তাদের এডিটোরিয়াল পেজে বাঙালিদের পরামর্শ দিয়েছিল বাঙালি যেন প্রাদেশিকতার শিকার হয়ে না পড়েন। শরদ পাওয়ার ও দিল্লি-মুম্বাই গোষ্ঠী ভেতর ভেতর নক্কারজনকভাবে গ্রেগ চ্যাপেলের অনৈতিক কাজে যে মদত দিয়েছিলেন এবং সেদিন সৌরভকে মাঠ থেকে বার করে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে যে প্রাদেশিকতা একেবারেই ছিল না এটা আজও কেউ জোর করে বলতে পারেন না। প্রাদেশিকতার গন্ধতো একটা ছিলই। ২০০৬ -এ সৌরভ সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে রোজ সকালে ইডেনে এসে দৌড় এবং জাম্প প্র্যাকটিস বাড়িয়ে দেন এবং খেলায় রীতিমতো ফিরে আসেন কিন্তু সৌরভ এত প্রফেশনাল যে ২০১৯-এর আগে সেই নিয়ে কখনও তিনি মুখ খোলেননি। নিজের দুঃখের বিলাসিতা একেবারেই করেননি। এই শিক্ষা থেকে আমরা কি কিছু শিক্ষা পাইনি ? সৌরভ গাঙ্গুলী আর গ্রেগ চ্যাপেলের মানসিক দ্বন্দ্বের জেরে যখন সৌরভকে অধিনায়ক ও টিম থেকে ছেঁটে ফেলা হলো তখন এখানকার ক্রিকেট জগৎ খানিকটা চুপচাপ ছিল। আজকাল পত্রিকা জেগে উঠলেও সমস্ত বাঙালি জাতি আনন্দবাজারের প্রাদেশিক না হওয়ার বাণী স্মরণ করে খুব একটা নড়েচড়ে বসেনি। কলকাতা প্রেস ক্লাবে বাঙালির হয়ে প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন রূপা গাঙ্গুলী, বিপ্লব চ্যাটার্জী ও মাত্র তিন চার জন। মুখ্যমন্ত্রী, বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, এমনটা হওয়া উচিত নয় তবু তিনি সৌরভের জন্য শরদ পাওয়ারকে অনুরোধ কিছু করেননি, সৌরভের পক্ষে ছিলেন বটে কিন্তু কিছু করতে পারেননি। বাঙালি খেলোয়াড়রা কোনও প্রতিবাদ মঞ্চ গড়েননি সেদিন। কোনও রাজনৈতিক দল সেদিন ২০০৫-০৬ এ একটাও বাংলাবনধ্ ডাকেননি, এমনকি প্রতিবাদ সভাও কোথাও করেননি। অতি উৎসাহী বাঙালি যুবকরা ইডেন ও নানা জায়গায় পোস্টার মেরেছিলেন। গো ব্যাক গ্রেগ চ্যাপেল ধ্বনিও উঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু এর বেশি কিছু হয়নি। আনন্দবাজার এডিটৌরিয়ালে লিখেছিল খেলায় প্রাদেশিকতাকে মদত দিলে সমগ্র ক্রীড়ার ক্ষতি, জাতির ক্ষতি, তাই সৌরভের জন্য বাঙলায় কোনও অরাজকতা সৃষ্টি যেন ছেলের দল না করে বসেন। মূলত শরদ পাওয়ার ও মুম্বাইবাসীদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেন নি। গ্রেগ চ্যাপেলের উদ্দেশ্যে সফল হয়নি। ভারতও খুব একটা কিছু খেলায় করে দেখাতে পারেনি। গ্রেগের কোচিং খুব একটা ভারতকে উচ্চতায় তুলতে পারেনি। গ্রেগ চ্যাপেল গো ব্যাক ধ্বনির মাহাত্ম্য বাড়তে থাকায় গ্রেগ পালাতে বাধ্য হন। ফিরে গিয়ে বলেছিলেন ভারতীয়দের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি। অথচ সমস্ত বাঙালি যদি সেদিন এক হতো তাহলে একজন বিদেশীর কাছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে চরম হেনস্থা ও অপমানিত হতে হোতো না। ভাবলে গা শিউরে ওঠে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড থেকে বিসিসিআইয়ের কেউ সেদিন পাশে দাঁড়াননি। বাঙালিরা পিছিয়ে এসেছিল প্রাদেশিকতা যাতে না প্রশ্রয় পেয়ে যায়। মাঝখান দিয়ে গ্রেগ সপাটে বাউন্ডারি মেরেছিলেন। সৌরভ ১২ বছর পরে মুখ খুলেছিলেন। পরে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হয়ে তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ধাপ ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। প্রশাসনিক ক্ষমতা যে তারও আছে রাজনীতিবিদরা তা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন অবশেষে। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে একদল অবুঝ একবগ্গা বাঙালিকে নিয়ে। অন্য প্রদেশ নয় ২০২০-র শেষে এসে সৌরভের পেছনে লেগে পড়েছেন বাঙালির একাংশ। কারণটা কি? কারণটা আর কিছু নয়। কারণটা হলো সৌরভের সঙ্গে বিজেপির কিছুদিন যাবদ একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠায়। আড়ালে আবডালে এখন আকস্মিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীরূপে তার নাম শোনা যেতেই বিভিন্ন দলীয় মানুষের মধ্যে একটা ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গেছে। আসলে সৌরভ নয়। বিজেপিকে আটকানোই তো এখানে মূল উদ্দেশ্যে। যেভাবেই হোক তারা সেই জন্য সৌরভের বিরোধী প্রচার সফল করে তুলতে লেগে পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তিনি হবেন কি হবেন না--এই বিষয়ে সৌরভের কিছুমাত্র না জানা থাকলেও, বাঙালি বুঝি বা আগেই বুঝে যায় যে সৌরভ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক এখন সত্যিই ঈর্ষান্বিত করে অন্য দলগুলিকে। তারসঙ্গে সৌরভের যোগ থাকলে তো সবাই কুপোকাত হয়ে যেতে পারেন। এখন যে যেখানে এক একটা ছোট-বড় পদ নিয়ে আছেন, যদি তা চলে যায় ! এই অমূলক ভয় এখন তাদের পেয়ে বসেছে। তাই খুব সামান্য সংখ্যক বাঙালি এখন কথায় কথায় সৌরভের বিরোধিতায় পথে নেমে পড়েছেন। কোনও যুক্তি নেই তাদের মধ্যে। হাতে আছে মিথ্যে প্রোপাগান্ডার মতো এক ঝুড়ি আবোলতাবোল কথা যার কোনও ভিত্তি নেই। আপত্তির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন হয়তো কেউ কেউ না বুঝেই। তবু তার মধ্যে রাজনীতিতে তাদের প্রিয় দাদাকে দেখতে কেউ কেউ পছন্দ করেন না সেটা তাদের ব্যক্তিগত কারণ। কিন্তু এমনটা আমরা কিছুতেই ভাবছি না কেন? সেটাই বড় আশ্চর্যজনক। যদি সৌরভকে একটা চান্স দেওয়া যেতে তাহলে দ্বিতীয় বিধানচন্দ্র রায়ের মতো একজন প্রফেশনালকে আমরা পেতাম। সিদ্ধার্থ রায়ও প্রফেশনালদের মধ্যে একজন। আসলে মধ্যবিত্ত বাঙালি অভ্যস্ত নয় দেখতে এমন একজন প্রফেশনাল মুখ্যমন্ত্রী। বামপন্থীরা এতদিন বলতো সৌরভ তো তাদের ছিল। এখন বামপন্থীরাও বলছেন সৌরভের রেস্টুরেন্টে নানা দুর্নীতি আছে। কি অবস্থা! এইসব সামান্য ভুঁইফোঁড় ব্যক্তিদের সমালোচনা সৌরভ কি কখনও গায়ে মাখবে ? সৌরভ একজন চূড়ান্ত প্রফেশনাল। এখানে প্রফেশনাল ছিলেন সত্যজিৎ রায়, সৌমিত্র চ্যাটার্জীরা। প্রফেশনাল কথার অর্থ যারা তার প্রফেশনকে সম্মান করে সেখান থেকে সৎপথে আয় করেন। রাজনৈতিক মত তাদের থাকলেও কখনও রাজনৈতিক রঙ ধরে তারা মেতে ওঠেন না। তা বলে তাদের যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে বাধা আছে এমনটা কোথাও দেখা যায়নি। বিদেশে প্রফেশনালরাই বারবার দেশ চালিয়েছেন। তাদের মাথা অনেক স্বচ্ছ হয়। কম সময়ে তারা সমগ্র চিন্তা ভাবনা করতে পারেন। আর সৌরভ তো সেইক্ষেত্রে একজন সেরা মানুষ। যিনি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মাঠের মধ্যে সমগ্র দেশের সম্মানের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন বারবার। ২০০৩ শুধুমাত্র নয়, সৌরভের কাপ্টেন্সি ঈর্ষার বিষয় বিশ্ব ক্রিকেটে। ফুটবলারকেও সিদ্ধান্ত নিতে হয় ভগ্নাংশ সময়ে কিন্তু একজন ক্রিকেটারকে অনেক সময় একজন ফুটবলারের থেকেও বিচক্ষণতা দেখাতে হয়। দেশকে সম্মানিত করতে চাওয়া সৌরভ তাই নিজেকে সম্মানিত করতে চাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের থেকে যে যথেষ্ট দূরদর্শী ও দক্ষ ও বিবেচক হবেন এটা ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রফেশনালদের আয়কে এদেশের লোক বড় অসম্মানের চোখে দেখে। মানুষের মধ্যে এইসব কুরুচিপূর্ণ সঞ্চয় হলো বাঙালির ব্যক্তিগত মধ্যবিত্ত একটা পরম্পরা। যে কারণে সৌমিত্রর বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক করেছে এই জাতি। এত হিংসুটে জাতি ভারতে বুঝি আর কোথাও নেই। দাদাগিরিও তো সৌরভের প্রফেশনাল এনগেজমেন্ট তাই না। তাছাড়া সৌরভের মুখ থেকে আবোল তাবোল কথা মনে হয় জীবনেও শোনা যাবেনা কখনও। শুধুমাত্র বিজেপির জন্য এত জনপ্রিয়, এত দক্ষ এত বিবেচক ও কর্মে আগ্রহী একজন সৎ নিয়মনিষ্ঠ সৎ দেশ সেবককে গালি খেতে হচ্ছে, ভাবলে মর্মাহত হতে হয়। রাজনৈতিক নেতার মধ্যে এত গুণ চাওয়া পরিহাস শুধুমাত্র নয় তা অবাস্তবও। সত্যি কি দাদা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী হবেন ? অথবা এইসব প্যাঁচ ঠেলে নেতৃত্ব দিতে। যেন আগুনখোর মিথ্যা ভাষণ একমাত্র রাজনীতিতে আসার মাপকাঠি। অর্থাৎ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। প্রথমত তার যোগ্যতা আছে কিনা। গ্রেগ চ্যাপেলের ভয় ছিল ভারতীয়রা তাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু সৌরভ কখনও কিন্তু মুখ খোলেননি গ্রেগকে মার খাওয়াতে। এতটাই তিনি ভদ্র। একজন মুখ্যমন্ত্রীর ভদ্রতাগুণ হচ্ছে জাতির ঐতিহ্য, সেই গুণ সৌরভের পরিপূর্ণ আছে যথেষ্ট মাত্রায় আছে। এই যে ফেসবুক জুড়ে বিভিন্ন দলীয় মানুষের ত্রাহি রব উঠেছে সৌরভকে নিয়ে তা ভাবলে খুব অবাক লাগে। কারণ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগেই সৌরভ হঠাও অভিযান আমাদের হীনমন্যতাকেই প্রশ্রয় দেয়। কিন্তু বিজেপির হারাজেতা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। যদি আব্বাস সিদ্দিকীদের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হয় তবে বিজেপির এইবার রাজ্যে জয়যুক্ত হওয়া নিশ্চিত আটকে যাবে। যদি তা হয়ও তবে ২০২৬-এ শুভেন্দুর মুখ্যমন্ত্রীত্ব ও বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ দখল তখন আরও সহজ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু তা আরও ছয় বছর পরের কথা। রাজনীতিতে একদিনের ব্যবধানেও বহু ওলটপালট হয়েছে। ভবিষ্যতে যাইহোক না কেন, এখন একটা ধারণা হয়েছে তা হলো বিজেপির হাত ধরে সৌরভ এবারে এখানে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। এটা ধারণা মাত্র, এটা আন্দাজ মাত্র। সৌরভ কোথাও বলেননি আমি রাজনীতিতে আসতে চাই। এমনকি এও বলেননি যে অমুক পার্টি খারাপ তমুক পার্টি খারাপ। যদি পরিস্থিতি বিচার করা যায়, দেখা যাচ্ছে সৌরভকে এইভাবে কেউ সামাজিক সম্মান দেয়নি যা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এই সময়ে দিচ্ছে। সৌরভ এতই প্রফেশনাল যে তার নেওয়া জমিজমা ফেরত দিয়ে দিলেন। কোনও বাঙালি ভুল করেও এই আত্মহত্যা করবেন না। জমিজমা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ ফেরত দেয়নি। অবাক কান্ড এইসব বোকামি কেউ করে। বাঙালির এইসব দেখা অভ্যাস নেই। আমরা গ্রামেগঞ্জে দেখেছি ছ-ইঞ্চি জমির জন্য ভাইকে এখানে ভাই মেরে দিয়েছে। একজন সাধারণ প্রতিবেশীকে আমরা সহ্য করতে পারিনা। ধারণা এমন একটা একবগ্গা জিনিস যে কেউ নিজের ধারণাতেই শ্রেষ্ঠ থাকেন। আর ধারণাকে ভাবেন তা অকাট্য যুক্তি। আসলে কোনোকিছু অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলে বলতে পারেন যে আপনার ধারণা যুক্তিতে পরিণত হলো। কিন্তু যুক্তি এমন নয় যে সব সময় আমাকেই সে মেনে চলবে। প্রমাণিত হলে তবে তা যুক্তি হয়। তাই যুক্তির সঙ্গে ধারণার তফাৎ হয়। আর মুস্কিল হচ্ছে ধারণাকে সবাই যুক্তি বলে ভেবে নেন। আর লাখো মানুষের লাখো ধারণা তৈরি হতে বিশেষ সময় লাগেনা। কিন্তু যুক্তি এমন হতে হয় যা লাখো মানুষের একরকম। যুক্তি হলো মৌলিক এর হেরফের নেই। কিন্তু আমরা সকলেই ধারণাধারীরা নিজের আবোলতাবোল মতামতকে যুক্তি বলে মেনে নি। ধারণাকারীরা তাই সৌরভের মতো যুক্তিবাদীকে চিনতে ভুল করছেন। প্রফেশন কোনও দোষের নয়। বিদেশে প্রফেশনালরাই দেশ চালায়। আসলে প্রফেশনালরাই সঠিক মানুষ হন এটাতে আমরা অভ্যস্ত নই। মনে হতে পারে মিঠুন আর এক বাঙালি এবং মিঠুনও প্রফেশনাল। কিন্তু প্রফেশন থেকে মিঠুন সরাসরি নিজের কর্তৃত্ব নিয়ে কখনও এই রাজ্যের হাল ধরতে আসেননি, বড় জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেননি। বরং নিজেকে খেলো করতে রাজনৈতিক প্রচারে সংযুক্ত থেকেছেন। রাজনৈতিক দলের কর্তৃত্ব মেনে নিজেকে ছোট করেছিলেন। তাই সৌরভ আর মিঠুনের দিগদর্শন সমান নন। মিঠুন রাজনৈতিক প্রচারে নেমেছেন। রাজনীতিও করেছেন সব দলে। সৌরভের এই দোষ নেই। সৌরভ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। এখনও টাকা উপার্জনের জন্য পথেঘাটে ক্লাবে যাননি। এখনও যথেষ্ট ইমেজ আছে। মিঠুন সিনেমায় সফল হলেও টাকা উপার্জনের জন্য মিঠুন অনেকক্ষেত্রে দুর্বল হয়েছেন। সৌরভের ব্যক্তিত্ব আর মিঠুনের ব্যক্তিত্বের ফারাক আছে। সৌরভের ইমেজ আরও উঁচু দরের। সৌরভের মধ্যে মজা যেটা আছে তা শিক্ষায় দীক্ষায় অলঙ্ঘনীয় কিন্তু সৌরভ কখনও নিজেকে মজার বস্তুতে রূপান্তরিত করেননি। যারা সৌরভের চরিত্র নিয়ে বলবেন তিনি আগে ভাবুন যুক্তি দিয়ে তা কতটা প্রমাণ করতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রী হোন বা না হোন। সৌরভকে সম্মান দেওয়া আমাদের কর্তব্য। তবে একজন আন্তর্জাতিক, একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে এই মূহুর্তে সৌরভ ছাড়া আর কার কথাই বা ভাবতে পারি, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে ? যদিও মুসলিম ভোট ছাড়া সৌরভের জেতা কিংবা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া কোনোভাবেই এখানে তা হওয়া সম্ভবপর নয়। তবে ভাবতে দোষ কি ? কল্পনা যদি এমন হোতো তবে আমাদের স্বপ্ন অন্যরকম হোতো। না হয় এই লেখা কল্পনা হয়েই থাক সৌরভ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নবান্নে হয়তো কখনও যাবেন না তবে আমাদের ভাবতে দোষ কি? অলোক কুন্ডু ( ৩০.১২.২০)

When Sourav Ganguly was dropped from cricket in 2005 after falling victim to a conspiracy by the Indian system and foreign coach Greg Chappell, Anandabazar advised Bengalis on their editorial page not to fall prey to provincialism.  The power that Sharad Pawar and the Delhi-Mumbai faction inflicted on Greg Chappell's immoral activities and that day kicked Saurabh off the field.  No one can say for sure that there was no provincialism in it at all.  There was only the smell of provincialism.  To overcome that frustration in 2007, Sourav came to Eden every morning to increase his running and jumping practice and return to the game, but Sourav is so professional that he never opened his mouth about it before 2019.  He did not have the luxury of his own sorrow at all.  Didn't we learn something from this teaching?  The cricketing world was a bit quiet when Sourav was dropped from the captaincy and the team due to a mental conflict between Sourav Ganguly and Greg Chappell.  Nowadays, even though the newspaper woke up, the whole Bengali nation did not move much remembering the message that Anandabazar was not provincial.  Rupa Ganguly, Biplob Chatterjee and only three or four people attended the protest rally on behalf of the Bengalis at the Calcutta Press Club.  The Chief Minister, Buddhababu, said that this should not have happened, but he did not request Sharad Pawar for Saurabh, he was in favor of Saurabh but could not do anything.  The Bengali players did not stage any protest that day.  No political party called a Banglabandh on that day in 2005-06, not even a protest meeting was held anywhere.  Very enthusiastic Bengali youths put up posters in Eden and other places.  Go back Greg Chappell also picked up the sound.  But nothing more.  Anandabazar wrote in the editorial that supporting provincialism in sports is a loss to the entire sport, a loss to the nation, so for Saurabh, there should be no anarchy in Bengal without a boy's team.  No one has spoken out against Sharad Pawar and Mumbaikars.  Greg Chappell's intentions did not succeed.  India also failed to show much in a game.  Greg's coaching did not lift India very high.  Greg Chappell was forced to flee as the sound of the Go Back sound continued to grow.  He went back and said that he had escaped from the hands of the Indians.  But if all Bengalis were united on that day, Saurabh Gangopadhyay would not have been subjected to extreme harassment and humiliation by a foreigner.  No one from the Board of Control for Cricket in India (BCCI) stood by him that day.  The Bengalis lagged behind so that provincialism could not be tolerated.  Greg hit a flat boundary in the middle.  Sourav opened his mouth 12 years later.  Later, the second phase of his career as BCCI president has become brighter.  Politicians have finally realized that he also has administrative power.  But the problem is with a group of ignorant Ekbagga Bengalis.  Not another province, at the end of 2020, a section of Bengalis have fallen behind Saurabh.  What is the reason?  The reason is nothing else.  The reason is that the BJP has been building a harmonious and friendly relationship with Sourav for some time.  As soon as Abdal's name is suddenly heard as the Chief Minister, there is an uproar among the people of different parties.  Not actually fragrance.  The main purpose here is to stop the BJP.  Either way, they are working to make the anti-Saurabh campaign a success.  Whether he will be the Chief Minister or not - although Saurabh does not know anything about it, Bengalis understand or understand in advance that Saurabh will be the Chief Minister.  The BJP's vote bank is now really jealous of other parties.  With the addition of Saurabh, everyone can be knocked out.  Now that's where one of the big and small positions is, if it goes away!  This unfounded fear is now getting to them.  So a very small number of Bengalis are now verbally opposing Saurabh.  There is no argument between them.  There is a basket of nonsense like false propaganda in hand which has no basis.  Some people are flooding the book with objections without realizing it.  Yet some do not like to see their beloved grandfather in politics because of their personal reasons.  But why don't we think about it?  That is the big surprise.  If Sourav had been given a chance, we would have got a professional like the second Bidhanchandra Roy.  Siddhartha Roy is also one of the professionals.  In fact, middle class Bengalis are not accustomed to seeing a professional chief minister.  The leftists used to say that Saurabh was theirs.  Now even the leftists are saying that there is corruption in Sourav's restaurant.  What a situation!  Will Saurabh ever criticize these little bhuiphonda people?  Sourav is an ultimate professional.  Satyajit Ray and Soumitra Chatterjee were professionals here.  The word professional means those who respect his profession and earn from it.  Even if they have a political opinion, they never become political.  That said, there is no sign that they are barred from becoming the chief minister of the state.  Professionals abroad have repeatedly run the country.  Their heads are much clearer.  In less time they can think the whole thing.  And Saurabh is the best man in that case.  Who in a matter of seconds was able to make a decision repeatedly looking at the honor of the whole country on the field.  Not only 2003, Sourav's captaincy is the envy of world cricket.  Footballers also have to make decisions in fractional time but a cricketer often has to be wiser than a footballer.  It is safe to assume that Saurabh, who wants to honor the country, will be far-sighted, efficient and considerate from the political leaders who want to honor themselves.  But the people of this country look at the income of professionals in our country with great disrespect.  These ugly savings among the people are a tradition of the private middle class of Bengalis.  That is why this nation has debated about Soumitra's advertisement.  There is no other country in India that understands such a jealous nation.  Dadagiri is also Sourav's professional engagement.  Moreover, it seems that nonsense from Sourav's mouth will never be heard in his life.  It is shocking to think that an honest country servant who is so popular, so skilled, so considerate and interested in action is being abused only for the BJP.  It is not only ridiculous to ask for so many qualities in a political leader, it is also unrealistic.  Will Dada really be our Chief Minister?  Or to lead by pushing these punches.  As if the fiery speech is the only measure of coming into politics.  That is, can Sourav Ganguly be the Chief Minister of Bengal?  The first is whether he has qualifications.  Greg Chappell feared the Indians would kill him.  But Saurabh never opened his mouth to beat Greg.  He is so polite.  The politeness of a Chief Minister is the heritage of the nation, that quality is full of fragrance and has enough.  It is very surprising to think that people from different parties have started shouting about Sourav on Facebook.  Because even before Saurabh became the Chief Minister, the campaign indulged in our inferiority complex.  But the BJP's loser is now a question of lakhs of rupees.  If there is a grassroots alliance with Abbas Siddiqui, the BJP's victory in the state this time will be certain.  Even if that happens, Shuvendu's chief ministership in 2028 and the BJP's takeover of West Bengal may be easier then, but that is six years later.  There have been many upheavals in politics in a single day.  Whatever the future may be, there is an idea now that Saurabh can be the chief minister here this time with the help of the BJP.  It's just an idea, it's just a guess.  Nowhere did Sourav say I want to come into politics.  He did not even say that such and such a party is bad.  If the situation can be judged, it is seen that no one has given Saurabh the social respect that the present central government is giving at this time.  Sourav was so professional that he returned the land he had taken.  No Bengali will commit suicide by mistake.  To date no one has returned the land.  No one does these stupid things.  Bengalis do not have these habits.  We have seen in Gramegonj that a brother has killed his brother here for six-inch land.  We cannot tolerate a common neighbor.  Ideas are one of the best things anyone can do.  And the idea is an irrefutable argument.  In fact, if something is irrefutably proven, you can say that your idea has become logical.  But the argument is not that he will always obey me.  If proven, however, it is an argument.  So there is a difference of opinion with logic.  And the difficulty is that everyone thinks of the idea as an argument.  And it doesn't take long for millions of people to come up with ideas.  But the argument has to be something that millions of people somehow.  The argument is that there is no difference in the basics.  But not all of us thinkers have accepted our own nonsense as an argument.  Conceptors are therefore mistaken in recognizing a rationalist like Sourav.  Profession is not a fault.  Professionals run the country abroad.  In fact, we are not accustomed to the fact that professionals are the right people.  It may seem that Mithun is another Bengali and Mithun is also a professional.  But Mithun never came directly from the profession to take the helm of this state with his own authority, nor did he establish it in a big place.  Rather, he has been involved in political propaganda to play himself.  He made himself small by accepting the authority of the political party.  So the direction of Saurabh and Mithun is not the same.  Mithun has started political campaign.  He has also done politics in all parties.  Sourav is not to blame.  Sourav is an international personality.  Still did not go to the club on the way to earn money.  There are still enough images.  Although Mithun was successful in movies, he has become weak in many ways to earn money.  There is a difference between the personality of Sourav and the personality of Mithun.  Sourav's image is at a higher price.  What is fun in Saurabh is inviolable in education initiation but Saurabh never transformed himself into a funny object.  Those who talk about Saurabh's character will be able to prove it by reasoning.  Be the Chief Minister or not.  It is our duty to respect Saurabh.  But as an international, a non-communal person, who else can I think of at this moment except Saurabh, in the chair of the Chief Minister?  However, it is not possible for Sourav to win or become the Chief Minister without the Muslim vote.  But what's wrong with thinking?  If imagination was like that, our dream would be different.  Or maybe this writing is just a fantasy. Sourav may never go to Navanne as the Chief Minister, but what is wrong with us thinking?  Alok Kundu (30.12.20)

রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০

বোলপুরে অমিত শাহের উপচে পড়া বারান্দার ভিড় না শুভেন্দুর নন্দীগ্রামের সংখ্যালঘু ভোটারের সহায়তা কোনটা বেশি জরুরি: অলোক কুন্ডু

শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ, মান- অভিমান এবং অপমানিত হওয়া সমস্ত কিছু বোঝা যায়। পার্টি অফিস দখল, ফ্লেক্স জ্বালানো এইসবের কারণ বোঝা যায়। কিন্তু এইজন্য কদিন ধরে সব থেকে বেশি চটেছেন বামপন্থীরা বিশেষ করে সিপিএম দল। তারাই এইসবের আলোচনা নরক গুলজার করে রেখেছেন। এই মূহুর্তে পার্টি বাঁচাতে দু একটি কর্মসূচি ও কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে যাওয়া ছাড়া এমনকিছু নিজেদের প্রোগ্রাম নেই। নিজেদের প্রচার নেই বললেই চলে। তাদের ৩৪ বছরেই যে সরকারের বিস্তারিত সরকারি অর্ডার বেরিয়েছিল সেই খবর সংগ্রহ করে তা তারা জানাতে পারতো। তারা জানাতে পারতো পার্টির বাইরে কত পরিবারের তারা উন্নয়ন করেছিলেন। কিন্তু তাদের এখন বুঝি নেগেটিভ রাজনীতি করার সময় এসেছে। গণশক্তিতে কদিন ধরেই তারা শুভেন্দুর বিষয়ে লিখে চলেছেন। কিন্তু শুধুমাত্র শুভেন্দু তো দলবদল করেনি। লক্ষ্মণ শেঠ বাহাত্তরটা দলের কাছে গিয়েছিল। দল বদলুতে তারাই বা কম কিসের। বহু সিপিএম, সিপিআইও যোগ দিয়েছে বিজেপিতে এবং তৃণমূলে। কিন্তু বামপন্থীরা একটানা গালাগাল, ছবি-শেয়ার, লেখা লিখছে শুধুমাত্র শুভেন্দুকে নিয়ে। গণশক্তিতে প্রথম পৃষ্ঠার দুটো স্থানে লেখা হয়েছে গতকাল-- দলবল নিয়ে। অথচ তাদের এম.এল.এ, থেকে পঞ্চায়েত প্রধান ২০১২ থেকে ৯ বছর ধরে রোজ চলে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসে। দলবদল নিয়ে সিপিএম বিগ্রেড ডাকেনি, মাইলব্যাপী বড় বড় মিছিল করেনি বাংলা-বনধ্ করেনি। তাদের দলের লোকেরা মিছিল করে যখন চলে গেছেন তখন সেই খবর ছেপেছে খুব বেশি নয়। কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তারাই। তাদের হারিয়েই তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। তাদের ক্যাডার মার খেয়েছেন। মরে পর্যন্ত গেছেন। জেল খেটেছেন তারাই। দিন দিন তাদের অবস্থা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ইদানিং তাদের পার্টি অফিস যে অবাধে খুলতে দেওয়া হচ্ছে তার কারণ সাধারণ মানুষের অজানা নয়। আবার বেশি বাড়াবাড়ি করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সিপিএমের বক্তব্য, তাদের ব্যবহার, তাদের উঠাবসা সবটুকু আজ বিজেপি কেন্দ্রিক। এইজন্য তাদের হিন্দু ভোট দিন কে দিন কমে যাচ্ছে। এতে তাদের বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। জ্যোতি বাবু পলিটব্যুরোর মিটিং থেকে বেরিয়ে বলেছিলেন ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে ওরা শাস্তি দেবে, মেরে ফেলবে। ওরা কারা। ওরা সিপিএম দল। সকলেই জানেন প্রকাশ কারাত ও সীতারাম ইয়েচুরির জন্য জ্যোতি বাবু প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। অমন ভাল রাজনৈতিক নেতাকে অবধি চোখের জলে নাকের জলে হতে হয়েছিল,স্পিকার পদ থেকে পদত্যাগের চাপ দিয়ে পার্টি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সিপিএম ভাল করে জানে তাদের ক্যাডাররাই বিজেপিতে গেছে। ক্ষমতায় যে থাকে সেখানে প্রচুর মধু থাকে। গরীব মানুষ কিছু পেতে ওই দলে যায়। ক্যাডার কারও তাই কেনা নয় গোলাম নয়। বামপন্থীদের সেইসব ভাল, সৎ চরিত্রবান সৃষ্টিশীল, নিষ্ঠাবান নেতারা আর নেই, সেই যুগও নেই তাদের। কম্যুনিজম দিয়ে এইদেশে আর কিছু হবেনা। লেনিন, স্টালিন মাও জেদং এর অমন রাশিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো চীন এখন কর্পোরেট। এখানে সিপিএম কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে এসে যে ভুল করেছে সেই মাসুল তারা গুণে চলেছে। এখন কৃষক আন্দোলনে এগিয়ে থেকে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছে তারা। প্রকৃতপক্ষে ২০১১ সালে দিল্লির কংগ্রেস সরকার, যে সমস্ত অফিসারকে এখানে নির্বাচনে ডেপুটশনে পাঠিয়েছিল। তাদের পই পই করে বলে দিয়েছিল যেভাবেই হোক গ্রামেগঞ্জে সিপিএমের ভোট মেশিনকে বসিয়ে দিতে হবে। সেইসব ডেপুটেশনে আসা অফিসাররা, কোনও বুথে সিপিএমেকে নড়তে দেয়নি। ধারে কাছে এলে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ছিল। ২০১১ এর ফল সিপিএম জানে। এমনকি নির্বাচনের আগের দিন সারারাত ওইসব অফিসার ঘুমোননি, সিপিএমকে রীতিমতো তাড়া করে রেখেছিল। এবারের নির্বাচনে ভোট জোগাড় করা তাদের পক্ষে আরও কঠিন। কিন্তু তাদের লড়াই কিরকম হবে, সেই অনিল বিশ্বাস এখন নেই। এখন ভাটবকে যে, নির্বাচনে ভোট উদ্ধার করা যাবেনা এই কথা বামপন্থী দল সিপিএমের না বোঝার কথা নয়। এমনিতে দুর্গা পুজোয় তারা বাংলার সস্কৃতি থেকে চিরকাল নিজেদের গুটিয়ে রাখতে রাখতে সমাজে হীনমন্য হয়ে গেছে। সপ্তাহে সপ্তাহে পার্টি ক্লাসের থেকে যে ক্লাব অনেক বড় কালচার সেই কথা তারাও বুঝেছেন তৃণমূলের আমলে। তারা ৩৪ বছরে বহু ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের সেইসব কাজ কেউ মনে রাখেনি তাদের ধর্মীয় রীতিনীতির জন্য। কারণ সমাজে তারা বন্ধু হয়ে ঢুকতে পারেনি। উটপাখির রাজনীতি তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে। লক্ষ্মণ শেঠ, তপন, শুকুর এই তিনটি লোক তাদের গোটা পার্টির সর্বনাশ করে দিয়েছে। লক্ষ্মণ শেঠ ফিরে আসায় তাদের তাই ভালোর থেকে খারাপ হবে। নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গর আয়োজনের এই রাজনীতি, তাদের আরও পিছিয়ে দেবে। কিন্তু বাম রাজনীতির পথ এরকম নয়। তাদের নিবিড়ভাবে কাজ করে যাওয়া থেকে তাদের ৩৪ বছর কাজের গুণগান প্রচার করতে কখনও তারা এগিয়ে আসেনি। বরং পিছনে গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কাটি করাই মুখ্য ভাবনাতে তারা এখন এসে দাঁড়িয়েছে। গত নির্বাচিনে ৭% ভোট ছিল। এই হিসাব বাড়ার থেকে এইবার তাদের ভোট আরও কমে যাওয়ার চান্স খুব বেশি। খুব জোর উত্তরবঙ্গ থেকে তারা একটি বা দুটি এম. এল.এ সিট বার করতে পারেন। তাও সন্দেহ আছে। পূর্ব মেদিনীপুরে যদিও বা কিছু ভোট ছিল তাও সেইসব এখন দ্বিধাবিভক্ত। তাদের হাতের অক্ষয় সংখ্যালঘু ও মুসলিম ভোট এবারে তাদের হাতে না থাকার চান্স সবচেয়ে বেশি। কংগ্রেসের অবস্থাও শোচনীয় হলেও অধীররঞ্জন চৌধুরী বুঝেছেন সবসময় হিন্দু ভোট হিন্দু ভোট করে বিজেপিকে ব্যঙ্গ করলে হিন্দু ভোটও কংগ্রেসের হাত ছাড়া হয়ে যাবে। মুর্শিদাবাদ বাদে কংগ্রেসের হালও খারাপ। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের জোট থাকলেও দুটো দলের শুভেন্দুকে নিয়ে মতামত দুরকম। পশ্চিমবঙ্গে ইতিপূর্বে কখনও হিন্দু-মুসলমান জাতের বিভাজনে ভোট হয়নি। আজ এই পরিস্থিতি হলো কেন। কে দায়ী তার জন্য দায়ী বরং বামপন্থীরা তা খুঁজে বার করলে তাদের উপকার হতো। কিন্তু খুব দুর্ভাগ্য এবারেই পশ্চিমবঙ্গে তা প্রথম হতে চলেছে। এইরকম সাম্প্রদায়িক ভোটের সুফল ও কুফল দুই আছে। এবারে সর্ব প্রথম এইরকম সম্ভাবনা হতে যাচ্ছে। যদি সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য এই ধরনের ভোট পরিকল্পনা এগোয় তাহলে তা সমর্থন যোগ্য তা নাহলে দুটি সম্প্রদায়ের পক্ষে সামাজিক বিভাজন বাড়তে পারে, যা শুভ নয়। মুখে মুসলিম ভোট না বলে সংখ্যালঘু ভোট বললেও কথার মানে সেই একই দাঁড়ায়। এমনকি অন্য দলের বড় বড় সংখ্যালঘু নেতাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, জল কোনদিকে গড়াচ্ছে। অধীর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান বুঝেছেন এই মূহুর্তে হিন্দুভোট কতটা জরুরি। কংগ্রেস সর্ব ভারতীয় দল হলেও মুসলিম বিশ্বাসী দল হলেও ফুরফুরা শরীফের আশীর্বাদ নিতে অধীররঞ্জন চৌধুরী তাই ভুল করেননি। এমনকি ঠিক একই কারণে তাই ভুলেও এখানে তারা হিন্দু ভোটের বিরুদ্ধে মুখ খেলেননি। অধীররঞ্জন চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান বা মুর্শিদাবাদ-মালদার কোনও সিট জিততে হলে "ফুরফুরা সরীফের" আব্বাস সিদ্দিকীদের সমর্থন ছাড়া এবারে জেতা মুস্কিল হতে পারে। এই সময়টা একটা রাজনৈতিক ডামাডোলের সময়। ৪০ দিন আগেই বলে দিয়েছি এইবারে পশ্চিমবঙ্গে লিখিত অলিখিতভাবে যুক্তফ্রন্ট হতে পারে। তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস সিপিএমের ফ্রন্ট হতে পারে। অলিখিত জোট হতে পারে। এইসব হোক বা না হোক আব্বাস সিদ্দিকীকে বাদ দিয়ে কিছু হবে না। আবার অনেকেই বেশ বুঝেছেন তা হলো, নন্দীগ্রামের বৃহত্তর মুসলিম জনগণের সঙ্গে বিনা আলোচনা না করে শুভেন্দু, তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়েননি। শুভেন্দুকে ছোট বড় চ্যানেল ও বামপন্থীরা, কদিন ধরেই সমানে এত কামান দেগে চলেছে যে তৃণমূলের সৌগত রায়, সুব্রত কল্যাণ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়েছেন। কিন্তু শুভেন্দু ৩২ টা কমিটি ও তিনটি মন্ত্রীপদ ছেড়ে দিয়েছেন ও মাঝেমাঝেই চুপ করে বসে আছেন। সত্যি কথা কি, শুভেন্দু চুপ আছেন না জবাব তৈরি করছেন এটা জানতে সকলেই আগ্রহী। আগামী দিন বলবে কী হবে, বা কী হতে যাচ্ছে। যদি নন্দীগ্রামের ১০% সংখ্যালঘুদের তিনি বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন তাহলে বামপন্থীরা কিন্তু আগামী দিনে আরও পিছিয়ে পড়বে। সেই সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল। এখন দেখার নন্দীগ্রাম কি করে ? দ্বিতীয় সম্ভাবনা: বোলপুরে অমিত শাহের উপচে পড়া ভিড়। সঙ্গে বাড়ির ছাদ থেকে ব্যালকনিতে পর্যন্ত গিজগিজ করছে জনগণ।এই ভিড় কি তবে বিশেষ বার্তা দিয়ে গেল- ২০০ আসনে এগিয়ে থাকার। তবে খুনোখুনি না বন্ধ হলে এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আগামী দিনে বামপন্থীরা উঠতে চাইলে তাদের পজিটিভ রাজ ©® অলোক কুন্ডু

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০

শুভেন্দু কি ঠিক পথে এগোচ্ছেন, একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ: অলোক কুন্ডু


রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

⛔ শুভেন্দু অধিকারী প্রায় একমাস সময় নিলেন। ঠিক এই সময়ে ঝড় তুলে বক্তব্য রাখার মতো মাঠ জমানো ময়দান কাঁপানো নেতা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আর নেই। শুভেন্দু অধিকারীর ছেলেমেয়ে বউ-বাচ্চাও নেই। কিন্তু সব থেকে বেশি ফেসবুকের গ্রুপ-ফলোয়ার শুভেন্দুর আছে। ৫০ টার ওপর গ্রুপ লাখ লাখ ফলোয়ার। আমি ২০০৮ এবং ২০১৬ তে দীঘা গিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি দীর্ঘ রাস্তার অলিগলিতে বাজারে বড় রাস্তায় শুভেন্দুর ছবির ঢাউস ফ্লেক্সের ছড়াছড়ি ছিল। হ্যাঁ শুভেন্দুর ভাই সহ বাবা শিশির অধিকারীরও কিছু ছবি দেখেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা যে তিনি তা প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন অত ফ্লেক্সের মাধ্যমে। আর কারও ছবি লাগাতেই দেননি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছেন। তৃণমূলের উত্থান কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর থেকে, এই কথা ভুলে গেলে চলবেনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক ধ্যানধারণার অধিকারী শুভেন্দু। সঙ্গে আছেন তার পোড়খাওয়া, দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ শিশির অধিকারী, পিতা। তিনি এই লড়াইয়ের বিচক্ষণ নেতা ও লক্ষবস্তুতে আঘাত করার মূল কান্ডারি। কম কথা বলেন। রাজনৈতিক কলাকৌশল সাজাতে অখিল গিরিকে সাইড করে রাখতে তাঁর রাজনৈতিক মেধার জুড়ি মেলা ভার। তারা এখনও দল ছাড়েননি। এটাও একটা রাজনৈতিক অ্যান্টি গিমিক। সবকিছুকে অপ্রকাশিত করার কৌশল। সবচেয়ে বড় কথা সমবায় ব্যাংকে যখন চুরিচামারি পশ্চিমবঙ্গজজুড়ে লেগেই আছে, তখন অধিকারীবংশ কন্টাই সমবায় ব্যাংকের উন্নয়ন ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর হয়েছে। বিশ্বাস অর্জন করেছে। ১৯৯৬-৯৭ থেকে তৃণমূলের ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন, জবরদস্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুভেন্দু এমন নেতা যে তৃণমূল পর্যন্ত তাকে ৩০/৩৫ টা পদের দায়িত্ব দিয়েছিল। মন্ত্রিত্ব ছাড়া এত বড় বড় ক্ষমতা শুভেন্দু পরিত্যাগ করলো তাতে ওর ত্যাগের মহিমা এখন প্রচার পাবে। এত বছর বাদে যতই চোর সুদীপ্ত সেন শুভেন্দুকে টাকা দিয়েছে প্রচার করুক না কেন তা ধোপে টিঁকবে না। শুভেন্দু নিজেকে পান্তাভাত খাওয়া গ্রামের ছেলে বলে প্রচারের আলোয় বার বার আনছেন। এই যে এইভাবে নিজেকে ভাবলেন এবং তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তার সুরেলা মজার বক্তব্য বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি নিজেকে নিয়ে এইভাবে যে এলেন তাও একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। খানিকটা হেঁয়ালি। যদিও তার একটি প্রক্রিয়াপর্ব ভেতরে ভেতরে বহুকাল ধরে চলে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। একমাত্র আব্বাস সিদ্দিকী ছাড়া আর কোনও বক্তা তার ধারে কাছে নেই

⛔ শুভেন্দুকে ৪২ টা সিট দিলে শুভেন্দু মর্যাদা নিয়ে পুরাতন দলে থেকে যেতেন হয়তো। কিন্তু তা হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী ভবিষ্যতে কি করবে বিজেপির অতশত দেখার ও জানার দরকার নেই। তাদের টার্গেট
অস্থায়ী নয়। ২০১৫ এর আগে থেকেই বিজেপি অত্যন্ত খারাপ দল বলে, বামপন্থী ও কংগ্রেসের প্রচার চলে এলেও এখনও বিজেপিকে শেষ করে দেওয়া যায়নি। সাম্প্রদায়িক দল বলে মিডিয়া পর্যন্ত বিজেপির ব্যান্ড বাজালেও এই বাংলায় বিজেপির যথেষ্ট উত্থান হয়েছে। 
তবু বিজেপির দল এখানে সুঠাম নয়। তাদের নিজস্ব নেতা একমাত্র দিলীপ ঘোষ। মেঠো রাজনীতিই যার একমাত্র সম্বল। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি যে এখন সভ্যতার ধরাবাঁধা গন্ডিতে আটকানো নেই সে কথা সকলেই জানেন। তাই দিলীপ ঘোষ ছাড়া কি এখানে মানাতো ? 

⛔ শুভেন্দু বিজেপিতে যাচ্ছে মানে মুখ্যমন্ত্রী অথবা উপ-মুখ্যমন্ত্রীত্ব পাবেন। তবে প্রকাশ্যে এই নিয়ে দর কষাকষি একেবারেই নেই। ৪২ টা সিট না পেলেও ৩০ টা সিট পাবেনই তার পছন্দ মতো। শুভেন্দুর সঙ্গে অনেক সংখ্যালঘু মানুষ আছেন। তাঁরা অধিকারী পরিবার ও শুভেন্দুকে বিশ্বাস করেন। এদের পরামর্শ ছাড়া শুভেন্দু বিজেপিতে যাচ্ছেন না। ধরে নিতে হবে সংখ্যালঘু ভোট শুভেন্দু ভাগ করতে দেবেন না, অন্ততঃ তার নিজের পূর্ব মেদিনীপুরে। কিন্তু তবুও যদি কিছু না পান তাতে তার দুঃখ নেই। ইতিমধ্যেই বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক একটা ভালো জায়গায় যে পৌঁচেছে এটা শুভেন্দু জেনেই তো দল বদল করছেন। যিনি তৃণমূলের ৩২ টা পদ একা সামলেছেন তিনি কিছুই বোঝেননি এটা ভাবা আমাদের বোকামি হবে। একমাত্র আমি ছাড়া সকলেই জানতেন যে, শুভেন্দু দল বদল করে বিজেপিতে যাবেন। যাইহোক না কেন একমাসের মধ্যে শুভেন্দু একই সঙ্গে তার মূল শত্রুকে চিহ্নিত করে দিয়েছেন এবং নিজেকে প্রচারের আলোয় এক নম্বরে তুলে এনেছেন। মিডিয়া খুললেই শুভেন্দুময়। 

⛔ শুভেন্দু দল ছেড়ে দেওয়ার ফলে তার বাড়তি একটা সুবিধা যেটা হলো তা হচ্ছে পুরনো দিনের তৃণমূল কংগ্রেসের আদি দলটাকে তিনি কাছে পাবেন, কারণ বর্তমানে তৃণমূলের অধিকাংশই দলের সঙ্গে ছিলনা। প্রত্যেকটি মানুষ রয়েছেন তার নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। কখনো তাদের দেখাও যায়নি ১৯৯৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত। এই যে বসে যাওয়া শ্রেণি এটা নেহাত কম নয়। এরা অন্ততঃ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে, এরাই তৃণমূলকে আনার জন্য ছিলেন। 

⛔ শুভেন্দু অধিকারীকে দল ছাড়ার ব্যাপারে পেছন থেকে সমানে বুদ্ধি দিয়েছেন বিজেপির বর্তমান চাণক্য মুকুল রায়। এই নির্বাচন সব থেকে বেশি চ্যালেঞ্জ মুকুল রায়ের কাছে। তৃণমূল দলের সংগঠন গড়ার পেছনেও প্রধান কান্ডারি ছিলেন মুকুল রায়। বাজি ধরার ক্ষেত্রে ক্ষুরধার বুদ্ধি ধরেন। ২০১০-২০১১ এই প্রতিবেদক দীর্ঘ দিন তৃণমূল ভবনে যেত। তখন আমি দেখেছি তৃণমূল বলতে মুকুল রায় ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হলেও বিজেপি কাউকে প্রজেক্ট করবে না। 

⛔ শুভেন্দু বাইরে থাকলে যদি বিজেপির ৫০% লাভ হতো এখন তা ১০০% লাভে চলে গেল। যদি ভালোভাবে দেখি তো দিলীপ ঘোষ কিন্তু মাঠ ময়দান চাঙ্গা করার জন্য বিজেপির জবরদস্ত এক নেতা। দিলীপ ঘোষ একাই দলটাকে টেনে তুলে এনেছেন। যতই তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ বা কার্টুন হোক না কেন লোকটার যত গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে তত লোকটার নাম হয়েছে। বিজেপির ডাকাবুকো নেতা। সেই দিক দিয়ে দেখলে সাহসিকতার পরিচয়ে উঠে আসা নেতা আর কোনও দলে তেমন নেই। যদিও বেফাঁস মন্তব্য করা তার একটি স্বাভাবিক অভ্যাস। তাতে বিস্তর সমালোচনা হলেও যে মাঠ ময়দানের ভিড় কোথাও কমেনি বিজেপির নেতৃত্ব সেটা বিলক্ষণ জানেন। ভদ্রলোকের মধ্যে নানারকম প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা থাকে, বিজেপির নেতৃত্বের তাও জানা আছে নিশ্চিত। তাদের চাই মেঠো জনতা। মেঠো জনতা পিছিয়ে পড়া মানুষ তাদের এখন একান্ত আপন। তাই মঞ্চের ছবিতেও দিলীপ ঘোষের বড় মুখ। কিন্তু উনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে গালাগালি দিচ্ছেন এটা কিন্তু অনেকেই বরদাস্ত করবেন না। এক একজন এরকম থাকেন মুখটা খুব পাতলা হয় কিন্তু কুচক্রী হন না। 

⛔ এখন শুভেন্দু এলে বিজেপির মাঠ ময়দানের জোর অনেকটাই বেড়ে যাবে। রাজনীতিতে কেউ যে ভালো কথা বলবে না, তা মানুষের জানা হয়ে গেছে। তাহলে হলোটা কি ? যারা ফেসবুক করে তাদের বড় অংশ বামপন্থী। এখন ফেসবুক দেখে কিন্তু শুভেন্দুর যাওয়া আসা থাকা বোঝা যাবে না। বিজেপির মূল উদ্দেশ্য এতদিনে কাজ করতে শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে রাহুল সিনহা ছিলেন একজন শুধুমাত্র বক্তা। তার পক্ষে সংগঠন করা হয়নি। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব চাইছেন ক্ষমতা পেতে। সেই লক্ষ্যে তাদের অগ্রসর নেহাত ভ্রান্তি দিয়ে ভরা নয়। তুল্যমূল্য লড়াইয়ে শুভেন্দুর আগমনে তাদের প্রথম রাউন্ডে জয় হয়ে গেছে। শত্রুকে দুর্বল করা রণনীতির একটা বড় কৌশল। এই কৌশলের মূল কান্ডারি সম্ভবত মুকুল রায়। এখনও পর্যন্ত বিজেপিকে যত গালাগালিই দিই না কেন বিজেপি করতে গিয়ে অনেক তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। এই খুনোখুনির রাজনীতি বিজেপিকেই টানতে হচ্ছে। 
তাই তারা এখন বলতে পারবে বাংলায় বামপন্থীদের মতো রাজনীতি করতে এসে তারাও ক্ষতি স্বীকার করেছে অনেক। রাজনীতিতে খুন-জখমের বিষয়টা জনসাধারণ ঠিক বুঝতে পারে। খুনি দল সব সময় দূরে সরে গেছে। এটা জনগণের একটা ভালো চিন্তা। 

⛔ ১৯৭২-৭৭ কংগ্রেসকে যতই বাজে বলে প্রচার হোক না কেন অথবা এখন নিঃস্ব বলা হোক না কেন কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে একটা সময় রীতিমতো লড়াই করেছে। আসলে রাজনৈতিক লড়াই সব সময় করে থাকেন ক্যাডাররা। নেতারা এদল-ওদল করে যায়, নেতাদের দায়বদ্ধতা থাকার প্রয়োজন হয়না। বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসি ক্যাডাররা লড়াই করে  উঠতে পারেনি, হয় মরেছে, তা না হলে অত্যাচারিত হয়ে বসে গেছে। সুযোগ পেলে তৃণমূলে গেছে। অনেকে সরে গেছে। এইরকম যারা আছে তারা সিপিএমের সঙ্গে ফ্রন্ট করা কখনও মেনে নেবে না। আমতায় যাদের হাতকাটা গিয়েছিল তারা এই ফ্রন্ট জীবনে মেনে নিতে পারবেনা। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার ও ইন্দিরার ইমারজেন্সির কারণে কংগ্রেসের বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা হয়নি। কিন্তু কংগ্রেসের নেতাদের তাতে দুঃখ নেই তারা তৃণমূল কংগ্রেসে গিয়ে পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু কংগ্রেসের মূল অংশ কখনও তৃণমূলে যায়নি। ২% হলেও তারা আর কখনও তৃণমূলের সঙ্গে যাবেনা। 

⛔ বামপন্থীদের মধ্যে কিছু দল প্রায় উঠে গেছে আর তাদের দেখা যাবেনা। তবে বামপন্থা উঠে যেতে পারেনা। 
বড় বড় দল একেবারে উঠে যাবে এ কল্পনাও করা ছেলেমানুষি। তবে আমি ক্যাডারদের কথা বলছি। 
যারা এখনও আছেন তারা যে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠিয়ে ফিরে আসতে পারবেন এ নিশ্চয়তা আগামী ১০ বছরে আর নেই এখানে। বামপন্থীদের সেইসব ক্যাডাররা অনেকে এখন শুভেন্দুর সঙ্গে যেতে পারেন শুভেন্দুর বিপ্লবী চরিত্রের কারণে। সেটাও শুভেন্দুর বড় অস্ত্র। তাদেরও তিনি কাছে পাবেন। আসলে একদল লোক যারা সবসময় বিরোধী আসনে থেকে যায়। 

⛔ সবথেকে বিশ্বাসযোগ্যতা শুভেন্দু অর্জন করেছে একগাদা ক্ষমতাকে পরিত্যাগ করে দিয়েছে। বামপন্থী নেচারের এই মেজাজ বহু নিরপেক্ষ মানুষ পছন্দ করেন। ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা ছাড়তে কেউই চাননা। এই দিক দিয়ে বিজেপি দলটাই তৈরি হলো তৃণমূলের ক্ষমতা থেকে সরে এসে, একদম ক্ষমতায় না থাকা নেতাদের নিয়ে গড়া একটা দল। শুভেন্দু যদি নির্বাচিনের পরে আসতেন এই সম্মান তার থাকতো না। এই বাজারে এত আত্মত্যাগ করার ক্ষমতা কিন্তু সকলের থাকেনা। বিজেপি তার এই যাওয়া তাই সসম্মানের। 

⛔ শুভেন্দু কিন্তু খুব কৌশলী। তার লাভালাভ ছাড়া এত আত্মত্যাগ তিনি করবেন না। দেখতে গেলে এক্ষেত্রে শুভেন্দু ও বিজেপির যৌথ লাভ হলো। দুপক্ষের শক্তিই বেড়ে গেল। তাদের উদ্দেশ্য লক্ষ্য এক বিন্দুতে এসে মিশেছে। 

(সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন খুনোখুনি বাদ দিয়ে রাজনীতি করুন দয়া করে। এই প্রতিবেদক আবেদন করছে নিবেদন করছে। বিজেপির কেউ মারা 
যাচ্ছে না। মারা যাচ্ছে তরতাজা যুবক। যারা নীচুতলায় পার্টি করেন তারা কখনও টাকা পয়সার জন্য কিছু করেন না। তাদের এইভাবে মেরে ফেলা উচিত নয়। এই খুনোখুনি আর কবে শেষ হবে?)

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

নিরপেক্ষ মতামতে শুভেন্দু ও রাজনীতি বিচার : অলোক কুন্ডু


⛔ শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ায় কারও আনন্দ, কারও ভয়, কারও হিংসা, কারও মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এটা হবে জানাই ছিল। অধীর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নানের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কিন্তু শুভেন্দুকে সমর্থন ও তৃণমূল কংগ্রেসের স্পষ্ট বিরোধীতা প্রচারিত হয়েছে। এখন এই সুযোগে কংগ্রেস সিপিএমের সিদ্ধান্ত দূরকম হয়েছে। বামপন্থীরা এই প্রসঙ্গে প্রচারের আলোয় পিছিয়ে পড়েছেন। কারণ তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় বিজেপিকেই মূল দোষী ভাবা হয়েছে। কংগ্রেস কিন্তু দোষী হিসেবে তৃণমূল দলকে টার্গেট করেছে। এখানে এই দুটি দল আগামী দিনে ফ্রন্ট করে লড়তে মনস্থির করলেও তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কিন্তু শুভেন্দুকে নিয়ে দুরকম। সত্যিকথা বলতে কি বামপন্থীরা এখানে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা থেকে এখানে তাদের শুরু করাটা তাই কৃষক আন্দোলনের ওপর অপেক্ষা করতে হবে। এমনও হতে পারে দশটা দলে জায়গা না পেয়ে লক্ষ্মণ শেঠ যেমন আবার দলে ফেরত এসেছে যদি সেইভাবে তারা আরও কিছু ফিরে পায়। তবে দলবদলের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন অনেকটা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখানে একমাত্র শুভেন্দু অধিকারীর দল বদল ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে। দল-বদল হলেও শুভেন্দুর স্টাইল অভিনব তাই তার দলবদল তার পক্ষে প্রচার পেয়েছে সঙ্গে সরকার বিরোধীতা মূল লক্ষ্য হয়েে উঠে এসেছে। 

⛔ আসলে কেন্দ্রীয়ভাবে দিল্লিতে কংগ্রেসের মূল শত্রু বিজেপি হলেও পশ্চিমবঙ্গে, কংগ্রেসের মূল শত্রু কিন্তু এখন তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ ২০১১ থেকে যে ঝড়ঝাপটা যে ঘর ভাঙানি কংগ্রেসকে সামলাতে হয়েছে যে অশান্তি তাদের সহ্য করতে এখানে হয়েছে তা সিপিএম বিজেপি কাউকেই করতে হয়নি। আসলে কিন্তু দল বদলের কারণে কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের মানুষ অবিশ্বাস করতে শিখেছে এই দোষ কিন্তু কংগ্রেসের ঘাড়ে এসে পড়ে গেছে। কংগ্রেসের ভোটে জিতে দল ছেড়ে চলে যাওয়া মোটেই সাধারণ মানুষ বরদাস্ত করতে কখনও পারেনি। তাই পরবর্তীতে কংগ্রেসের ভোট কমে গেছে অথবা তারা ভোট করতেই পারেনি। বাম আমলে কংগ্রেসিরা ভোট দিতে পারতো না বর্তমানেও কংগ্রেসের একই দশা। ১৯৭৭ সাল থেকে কংগ্রেসের ক্যাডাররা মার খেতে খেতে ২০০৬-এ তার অবশিষ্ট অংশ প্রকাশ্যে ও ভোট বাক্সে বিজেপির দিকে চলে গেছে। প্রকৃতপক্ষে কিছু মুসলিম ভোট কংগ্রেসের পক্ষে না থাকলে তাদের আরও দুর্দশা হতো। সেইদিক থেকে এই মূহুর্তটি কংগ্রেস যদি সঠিক অনুধাবন করতে পারে তবে তাদের কিছু লাভ হলেও হতে পারে। তাই বুদ্ধি করেই আব্দুল মান্নান ও অধীর চৌধুরী প্রকাশ্যে তৃণমূলের যত বিরোধীতা করেছে তত বিরোধীতা বিজেপির করেনি এবং শুভেন্দুকে বরং উৎসাহিত করেছে। এই সময় কংগ্রেসের চাল সঠিক না হলে তাদের সমূহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ একদিকে সমস্ত প্রচার শুভেন্দু অধিকারী কেড়ে নিয়েছেন অন্যদিকে এবারে মুসলিম ভোটের ভালো অংশ সংগঠিতভাবে স্থায়ী দলকে বিপর্যস্ত করে দিয়ে নিজেরাই আলাদা আলাদা ভাবে উঠে আসতে পারে ( যদিও এর ভালো খারাপ এখনই কিছু বলা যাবেনা )। তাই সিপিএমে ও কংগ্রেসের একটা ভোট ব্যাঙ্কের ভালো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন হাতছাড়া হিন্দু ভোট পুনুরুদ্ধার করা এই দুটি দলের মহাকর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

⛔ একটা সময় কংগ্রেসের ক্যাডাররা জানতো দুটো দল ( কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস) বোধহয় এক। ২০১১ তে খানিকটা না না করেও প্রণব মুখার্জীর দূরদর্শিতায় কংগ্রেস নিজের সবকিছু ক্ষতি করে জোট করেছিল। সেদিন কংগ্রেস শুভেন্দু অধিকারীর মতো ধুরন্ধরতা দেখাতে পারেনি। সরল সহজ রাজনৈতিক ম্যাপ মেনে নিয়েছিল ও নিজেদের একপ্রকার পথে বসিয়ে দিয়েছিল। অথচ ২০১১ সালে তাদের হাতে কেন্দ্রীয় সরকার ছিল। কংগ্রেসও যে প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মার খেয়েছিল এ কথার তুল্যমূল্য বিচারে কংগ্রেস একপ্রকার আত্মহত্যার রাজনীতি করেছিল সেই সময়। তারপর মানস ভূঁইয়া ও অন্যান্যরা দলে দলে কংগ্রেস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার ফিরে এলেও আর তেমন সুবিধা করতে পারেননি। 

⛔ বাম আমলে বিরোধীদের যত উত্থান হয়েছে তার অনেকটা হয়েছিল চিটফান্ড কান্ডের জন্য। বলতে গেলে মিডিয়া ও খবর কাগজের জন্য। মূল ধারার খবর কাগজ-- আনন্দবাজার, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন, দৈনিক স্টেটসম্যান, একদিন ছাড়াও তখন চিটফান্ড-এর  অনেকগুলো কাগজ প্রতিদিন সরকারের বিরোধীতা করে খবর ছাপতো। যেমন- আবার যুগান্তর, এখন খবর, ভোরের বার্তা, নিউজ বাংলা, স্ব-ভূমি, সকালবেলা, সান সময়। এছাড়াও আরও দুটি কাগজ বের হতো। উত্তরবঙ্গ সংবাদ ও বর্ধমানের সংবাদ। এছাড়াও মিডিয়া তো ছিলই। একযোগে প্রায় ১৪ টি সংবাদ পত্র ৩ টি সংবাদ চ্যানেল বামেদের বিরোধীতা করেছিল। শুধুমাত্র কোনও দলের ক্রেডিট নয়। সঙ্গে সংবাদপত্র থাকাটা কত জরুরি এই আন্দাজ করা যেতে পারে। বুদ্ধিজীবীদের খবর তারাই পরিবেশন করেছিল। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সরবরাহ করেছিল। কিন্তু এই সমগ্র সুবিধা পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের জন্য। পরবর্তীতে বুদ্ধিজীবীরা মধুভান্ড ভক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। 

⛔ আরও একটি বৃহত্তর সুবিধা বিরোধীরা সেই সময় রেল থেকে পেয়েছিল। মমতা ব্যানার্জীর রেল দপ্তর দিয়েছিল--বিজেপি ও কংগ্রেস এই দুটি সরকারের কাছ থেকে। ওই দুটি আমলের সবকটি কাগজের বিজ্ঞাপনে বাংলার রেলওয়ের উন্নয়ন ছিল একমাত্র হাতিয়ার। প্রতিদিন কাগজে কাগজে বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ হয়ে যেত। ফুলপেজ বিজ্ঞাপন। কয়েক বছর ধরে এই প্রচার রেল থেকে কাগজে দেওয়ার ফলে এবং সেই কারণে কাগজগুলিতে উন্নয়নের জোয়ারের প্রতিষ্ঠিত হয় বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে রেখেছিল, এটা ছিল পরোক্ষভাবে তৃণমূল দলের প্রচার। এই সমগ্র সুবিধার বৃহত্তম অংশ ছিল বিরোধীদের দিকে। যার ফলে বাম আমলে আর্থিক নয় ছয় যত কম হোকনা কেন, যতই বেশি ছেলেমেয়ে চাকরি পাকনা কেন যত উন্নয়ন করুক না কেন বামফ্রন্ট একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। তাদের খুনোখুনি এত বেশি হয়ে গিয়েছিল যা তাদের ভূমিসংস্কারকেও পর্যদুস্ত করে দিয়েছিল। শিক্ষা ও শিক্ষাজীবনের উন্নয়ন বামেরা যা করেছিল শুধুমাত্র প্রাথমিকে ইংরেজি ও পাশফেল এই দুটি কারণে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অথচ ইংরেজি ও পাশফেল প্রথা এসেও লেখাপড়ার উন্নয়ন যে কত হয়েছে তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের লক্ষ্মণ শেঠ ও তপন-শুকুর মিলে বামফ্রন্টের দফারফা করে দিয়েছিল। তারমধ্যে বীরভূমে গণহত্যা অন্ওযতম। সিঙ্গুরের টাটাকে বিদায় জানাতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রচারে বাঙালি মেতে উঠেছিল। যা এখন হাত কামড়ালে কারও 
কিছু করার নেই। 

⛔ সূচপুর, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, কেশপুর,ও আরও অন্যান্য ঘটনায় এগিয়ে আসা বুদ্ধিজীবীরা এম.পি, মন্ত্রী, উচ্চপদ, পেনশন, স্যালারি, গাড়ি, টাকা পয়সায় ফুলেফেঁপে উঠেছেন। গরীব মানুষ, খেটেখাওয়া মানুষ সহ্য করতে পারেনি তারা ক্রমশ সরকার বিরোধীতায় চলে গেছে। অথচ ইংরেজি আনয়ন, পাশফেল প্রথা রাখা, ইলেকট্রিসিটি বিল এইসবের বিরোধীতা ও আনয়নে একমাত্র দল এস ইউ আই সি ও স্টেটসম্যান-এর সদর্থক ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এই দল অবশ্য বর্তমান সরকারের কাছ থেকে সরে গেছে। বাম আন্দোলনে এদের চিরস্থায়ী একটা বিশাল ভূমিকা থাকলেও এই দল তেমন করে ক্ষমতা দখলে এগিয়ে যায়নি। আন্দোলনমূখীতায় তাই এই দল সব সময় সকলের থেকে পৃথক ভূমিকায় নিজেদের একটা গন্ডির মধ্যে রাখতে পেরেছেন। তবে এই আমলে ছোট বামপন্থী দলগুলো একেবারে উঠে গেছে। 

⛔ এখন এইসব নিয়ে জোর বাজার গরম হয়ে উঠেছে। হয়তো তৃণমূলের বিদ্রোহ অংশ এখনও তৃণমূলে থেকেই বিরোধীতা করে যাবে এত তাড়াতাড়ি তারা অনেকেই বিজেপির দিকে যাবে না। গেলেও জোটবদ্ধ হয়ে থাকবে। 


⛔ ©® অলোক কুন্ডু 

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০

আমাদের জাতীয় সংগীত 🌏 অলোক কুন্ডু


⛔ শান্তিদেব ঘোষ তাঁর বিস্তৃত লেখালিখিতে বলে গেছেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত অনেকগুলি। 

⛔অলোক কুন্ডু

• • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • • •
• সম্প্রতি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে কোনও বক্তার মন্তব্যের পর আনপড় লোকেদের চর্চায় গেল গেল রব উঠেছে। সেই প্রসঙ্গে শান্তিদেব ঘোষ সকলের পড়ে নেওয়া উচিত।
(এই লেখা শেয়ার করুন ক্ষতি নাই কিন্তু আমি লেখার আগে এ প্রসঙ্গে আর কেউ লেখেননি। তাই টোকাটুকি করবেন না) আমাদের মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা ও স্বদেশী আন্দোলনে দেশ মাতানো জাতীয় সঙ্গীতগুলি কিন্তু জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি পায়নি। 

• শান্তিদেব ঘোষ তাঁর বিস্তৃত লেখালিখিতে বলে গেছেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত অনেকগুলি। 
মূলত ঠাকুর বাড়ির উদ্যোগে হিন্দুমেলার চল হয়েছিল। 

• ১৮৭৬ সালে, হিন্দুমেলার উদ্যোগে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের সমগ্র গান প্রকাশিত হয়েছিল, " জাতীয় সঙ্গীত " বইটি। 

•সেই পুস্তিকের জাতীয় সঙ্গীতগুলি লিখেছিলেন, দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, গুণেন্দ্রনাথ, গোবিন্দচন্দ্র রায় প্রভৃতি। ভারতমাতা সুরেন্দ্রবিনোদিনী, সরোজিনি-নাটক, নীলদর্পণ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত হয় মোট ২৯ টি জাতীয় সঙ্গীত।

•শান্তিদেব ঘোষ বলেছেন, এইসব গানে অন্য দেশের সঙ্গে স্বদেশের তুলনা ও নিজের দেশের প্রাচীন হিন্দু গৌরবের কাহিনী বর্ণনা ক'রে ক্রমাগত দেশবাসীকে উদ্বোধিত করার চেষ্টা হয়েছিল। হেমচন্দ্র চন্দ্রের, "বাজ্ রে শিঙা এই রবে।" গোবিন্দচন্দ্রের, " কতকাল পরে ভারত রে। " সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের, " মিলে সবে ভারতসন্তান। " এই গানটি সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রশস্তি ছিল। বঙ্গদর্শনে তিনি বলেছিলেন, " গানটি ভারতের সব জায়গায় ধ্বনিত হোক--"বিংশতি কোটি ভারতবাসী", ভারতবাসীর হৃদয়-যন্ত্র ইহার সঙ্গে বাজিতে থাকুক। শান্তিদেব ঘোষ আরও বলেছেন, সঞ্জীবনী সভা উপলক্ষে গুরুদেব যে গানটি রচনা করেছিলেন সেই, " একসূত্রে বাঁধা আছি। " গানটি স্বদেশী চিত্তের উন্মাদনা, সঙ্ঘবদ্ধতার শক্তি ও জীবন-পণের দৃঢ়তা সেই গানে সুন্দর প্রকাশভিবে পেয়েছে। স্বদেশ পর্যায়ের গানের মধ্যে, " একসূত্রে বাঁধা আছি। " গানটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। তবে গুরুদেব তাঁর রচনার অনেক গুলো গান বাদ দিয়েছিলেন। বাংলা ১২৯১ সনের মাঘোৎসব উপলক্ষে গাওয়া গান, " শোন শোন আমাদের ব্যথা। " পরে জাতীয় সঙ্গীত বইতে স্থান পেয়েছে। 

•১২৯৩ (বাংলা) কংগ্রেস অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত, " আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।" রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম্-কে সুপ্রচলিত করেন। রবীন্দ্রনাথ, 

•১২৯২ (বাংলা)-এ। বঙ্কিমচন্দ্রের উপস্থিতিথে রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম সুর রচনা করে শুনিয়েছিলেন এবং পরে বাংলা ১৩০৩-এ রবীন্দ্রনাথ, কংগ্রেসের সভায় নিজে গান। এর পর থেকে বন্দেমাতরম্-এর ব্যাপক প্রচার হয়। 
আশ্চর্যজনক বিষয় বঙ্কিমচন্দ্রের সুরারোপিত বন্দেমাতরম এখন আর কোথাও শোনা যায় না। আবার বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের দেওয়া সুরের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। ১৩১০-এ রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত পর্যায়ের গান ( স্বদেশ)  অয়ি ভূবন-মনমোহিনী, কে এসে যায় ফিরে ফিরে, আজি এ ভারত লজ্জিত হে, জননীর দ্বারে আজি ঐ, নব বৎসরে করিলাম পণ, হে ভারত আজি নবীন বর্ষে। শান্তিদেব ঘোষ বলেছেন, এই কটি গুরুদেবের জাতীয় সঙ্গীত। ১৩১২ তে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে, " এবার তোর মরা গাঙে বাণ এসেছে। " গানটি সম্পর্কে রামেন্দ্রসুন্দর বলেছিলেন, এ গান শুনে গঙ্গা বক্ষে ঝাঁপাইয়া পড়িবার উন্মাদনা সৃষ্টি হইয়াছিল। 

•১৩১৮ সালে রচিত রবীন্দ্রনাথের নৈবেদ্য কাব্যে ভগবানের কাছে নৈবেদ্য উত্থিত করে এই গানের রচনা। পরবর্তীতে সেই গান, " জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে... " আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। 

⛔ ©® অলোক কুন্ডু। 

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০

শ্রী ল প্রভুপাদ ও ইসকন : অলোক কুন্ডু


🌏 গান্ধীবাদী স্বদেশী থেকে সন্ন্যাসী গৌরাঙ্গে 
সমর্পিত প্রাণ কর্পোরেট জীবন থেকে এক 
আশ্চর্য ভিক্ষুক শ্রীল প্রভুপাদ - অলোক কুন্ডু ©

⛔ আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি ও কেউ কেউ পড়েছি মিশেল ফুকোর আত্মার যত্ন। যদিও এই ফরাসি দার্শনিক যৌনতার ইতিহাসও লিখেছেন সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। দক্ষিণী ও আদিগুরু যমুনাচার্য যিনি ছিলেন রামানুজমের (আয়েঙ্গার গোষ্ঠীর) গুরুদেব। তিনি ছিলেন বৈষ্ণব বৈদিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী অদ্বৈতবাদী দশনামী সম্প্রদায়। স্বামীজির -- নিরাকার অদ্বৈতবাদ। তোতাপুরী, বড়পলঙ্গ, তেঙ্গলঈ-ধারা, সীতরাম দাস ওঙ্কারনাথ থেকে শঙ্করের মায়াবাদ প্রায় সব মিলিয়ে ৯০০ বছরের একটি ফল্গুধারার মতো হিন্দুদের ধর্মের নানাবিধ চর্চা ও আত্ম উপলব্ধির বিষয় কিন্তু এইসব এত জটিল যে সাধারণ মানুষের দ্বারা বিচার করা সম্ভব হয়নি, সে তাই সব সময় একজন গুরু খুঁজেছেন। কখনো হিন্দুরা তাদের ধর্মের তুল্যমূল্য বিচারে যায়নি। বরং স্বাধীনভাবে যে যার মতো মূর্তি পুজোয় বিশ্বাসী থেকেছে। একে অপরের দেখে দেখে নিজেরাই ধর্মের আচরণে হয়ে উঠেছেন নিজেরাই পুরোহিত। একদল অর্ধ শিক্ষিত পুরোহিতের
শেখানো বুলিও কেউ কেউ শিখে ফেলেছেন। অশিক্ষিতের হাতে পড়ে পুরোহিতরাই এখন জানে না যা করতে বলছে তা তারা জানেনা এবং জানতেও চায়না। ইতিহাস ও সাহিত্যের হাত ধরে ধর্মীয় মতবাদ যেমন এগিয়ে এসেছে, হিন্দুদের কাছে আজ সেটাই ধর্ম। 

⛔ধর্মীয় আচরণ তাই হিন্দুদের কাছে খানিকটা দুর্গা পুজোর হৈ-হল্লার মতো। যার ফলে গুরু গজাতে ভারতের নানা প্রান্তে কোনো অসুবিধা হয়নি। প্রকাশ্যে স্বামীজিই প্রথম, ধর্মীয় যুক্তির কথা বললেন। তারও আগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সারা ভারতে হিন্দুদের ধর্মের এই শাখা যা দক্ষিণে চালু ছিল তাতেই চৈতন্য এনেদিলেন। বিপুল জন সমর্থনে (রথ ও যাত্রাপালায় বাংলাদেশ এক নতুন সংস্কৃতি আবিষ্কার করলো উড়িষ্যা থেকে এল রথ) দেশকে ভক্তিরসে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্য। মানুষের দুঃখ কষ্টে শ্রীকৃষ্ণ হলেন আশ্রয়। শুধু কৃষ্ণ নাম নিয়েই বহু মানুষ তখন থেকেই বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নামে, হিন্দুদের মধ্যেই একটি নতুন সম্প্রদায়ের শ্রীবৃদ্ধি ঘটালো এবং এই সুযোগে সারা বাংলাদেশের মধ্যে কিছু ধান্দাবাজ গুরুর গুরত্বও বেড়ে গেল। একদিকে সমস্ত ধর্মমত থেকে এই মানবধর্মের যত প্রসার হতে লাগলো তত হিন্দু ব্রাহ্মণরাও নিজেরা জটাজুট হয়ে গুরু বনতে লাগলো। 

⛔ একদিকে স্বাধীনতার মতো উত্তাল আন্দোলনে মানুষের দিশেহারা অবস্থা। বিদ্যাসাগর বঙ্কিমচন্দ্র রামমোহন দ্বারকানাথ ঠাকুর ধর্মের বিচার বিবেচনার সাথে মানুষের অধিকার সুরক্ষার কথা ভাবছেন। বিদ্যাসাগরের কাছে পন্ডিতের ধর্মীয় ভাবাবেগের থেকে বাস্তব আচরণ বড় হয়ে দাঁড়ালো। রামমোহন আবার ধর্মকে প্রার্থনা সভায় নিয়ে গেলেন। দেবদেবীর মাহাত্ম্য মধ্যযুগে বাড়বাড়ন্ত হলেও বিদ্যাসাগর ও রামমোহনের হাতে পড়ে তার নবজন্ম হলেও সেই ধারা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে পড়লো পরিচর্যার অভাবে। মানুষের কী করা উচিত তা তার বোধগম্য হচ্ছে না এরকমই পরিবেষ্টিত দেশে এলেন এক তিনি স্বামীজি। স্বামী বিবেকানন্দ ধর্মের চর্চা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেছেন কমপ্রোমাইজের কথা। আসলে আমার মনে হয় জীবনের সমস্তস্তরে সহাবস্থানের কথাই স্বামীজি বলতে চেয়েছিলেন।  কারণ তাঁর নিজের ধর্ম ছিল অদ্বৈতবাদ আর তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন মূর্তির পূজারী। 

⛔ শ্রীরামকৃষ্ণ ধর্মের এই বুনোনকে দুহাতে তলতলে মাটির মতো নিয়ে যেকোনো মূর্তির মাঝে ভগবানের লীলা দেখাত পারতেন। যত মত তত পথের সন্ধান আসলে উদারতার জন্ম হলো শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য এইদেশে।সহজ ও সরল কথায় অন্যদের টেনে নিয়ে আসতে পারতেন নিজের কাছে। শুধুমাত্র শুনে শুনে তিনি পুরাণ মহাভারতের ব্যাখ্যা প্রাঞ্জলভাবে করতে পারতেন তাই সে যুগে ইংরেজি জানা রীতিমতো মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠতে যাওয়ার পথে এগিয়ে থাকা স্বামীজিকেও শ্রীরামকৃষ্ণ চুম্বকের মতো টেনে রেখেছিলেন। এ বড় আশ্চর্য ব্যাপার। পৃথিবীর বিরলতম ঘটনা। তাই এক সামান্য পূজারীর বাক্য ঝেড়ে ফেলে দিতে পারেননি স্বামীজি। যদিও স্বামীজির ধর্মবোধ শ্রীরামকৃষ্ণের থেকে আকাশ পাতাল তফাৎ ছিল। শ্রীরামকৃষ্ণের কালীভক্তির কারণে যুক্তিবাদী বিদ্যাসাগর আর কখনো দ্বিতীয়বার শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেননি । কিন্তু স্বামীজিও ছিলেন যুক্তিবাদী এবং পুতুল পূজার বিরোধী। তিনি কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যেই ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছিলেন । অদ্বৈতবাদী স্বামীজি যখন হিন্দুদের দেবী দুর্গার পুজো করার মনস্থ করেন (Compromise) তখন কোনো শিষ্যই তার কাজে বাধা দেননি পরন্তু যে রাজা ও ব্যবসায়ীদের সাহায্যে স্বামীজি আমেরিকায় যেতে পেরেছিলেন সেইসমস্ত শিষ্যরা, রাজারা আনন্দিত হয়েছিলেন, এই ভেবে যে, যত মত তত পথকে স্বামীজি বাস্তবে করে দেখাতে পেরেছিলেন। শুধুমাত্র শ্রীশ্রী মায়ের কথামতো পাঁঠাবলি না করার বিষয়টি তিনি মেনে নিয়েছিলেন। 

⛔ স্বামীজি নিজেই ধর্মের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন যার তাৎপর্য বোঝা আজ অত্যন্ত কঠিন। নিজে সারা ভারত ঘুরে বেড়িয়েছেন দান চাইতে। পরিব্রাজক স্বামীজি যেখানে যেমন পেরেছেন মানিয়ে নিয়েছেন। পুরাণে সন্ন্যাসীকে ঘুরে ঘুরে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে দেখতে বলেছে, যাতে একজন সন্ন্যাসী দেশের মানুষের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও খিদের কথা জানতে ও তাদের পরামর্শ দিতে পারেন এবং সকলের সাথে মানিয়ে নিতে পারেন স্বামীজি যতটা সম্ভব তাই করেছেন। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে ১৯৩৮ সালে বেলুড় মঠ স্থাপিত হয়েছে। তার এত পয়সার অভাব ছিল যে শ্রীমাকে ঘুষুড়িতে টাকা পাঠাতে পারেননি সব সময়। তখন সারা ভারত ঘুরে মঠের জন্যে তাঁকে একটা একটা করে টাকা ভিক্ষা করতে হয়েছে। স্বামীজি জরুথ্রুস্টের ভক্ত ছিলেন। অনেক বক্তৃতায় তাকে বিদেশীরা অনেক সময় জরথ্রুস্টবাদী মনে করে ভুল করেছেন। নারীর অধিকার জরথ্রুস্টের মতের প্রথম অঙ্গীকারকে স্বামীজি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিলেন। শ্রীচৈতন্যের গণধর্মমতও তাঁকে বিস্মিত করেছিল তিনি জেনেছিলেন শ্রীমদ্ভাগবতের নানা বিশ্লেষণ এবং তাঁর মস্তিষ্কের মধ্যে বারবার ধর্মের নানা পন্থার দীর্ঘ কাটাছেঁড়া চলেছে। তাই বিশ্ব ধর্মসভা যেখানে বসেছিল আজও সেই রাস্তার নাম স্বামী বিবেকানন্দের নামে হয়ে আছে। স্বামীজি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো তাঁর অদ্বৈতবাদের রাস্তা অন্য এক মহত্বে বাঁক নিত যা আজ কারো পক্ষেই জানা আর সম্ভব নয়। নানা মতের সমন্বয় সাধন করতে তাঁকে যত্নবান হতে হয়েছিল। মূর্তির পূজারী হলেও শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে ছিলেন সর্বজনগ্রাহ্য একজন মানবরূপী মহামানব। তাই বেলুড় মঠের নকশায় হিন্দু খ্রিস্টান মুসলিম পারসিক ধর্মের সমস্ত মোটিফকে একত্রীকরণ করা হয়েছে। পরে শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন শিক্ষা -স্বাস্থ্য-রোজগার-মানব উত্থানকে মাথায় রেখে বিশ্ব মানব ধর্মের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। 

⛔ এই দেশে নতুন করে হিন্দু ধর্মের আর কোনো এমন বলিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দ্বারা পথের সন্ধান কারও চোখে আসেনি বা নতুন দিশা নিয়ে সমস্ত জগতের কল্যাণের পথ তেমন প্রশস্ত করার কথা কোথাও শোনা যায়নি। আদপে বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীরা মানুষ শ্রীরামকৃষ্ণকে দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে বিন্দু ধর্মের পূজা ব্যবস্থা প্রবেশ করিয়ে দিলেও তা কোনও অবাস্তব কিছু হয়নি। আমাদের অজানার নীচের অংশ আমরা যেন দেখতেই পাইনি। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের পর খুব কম সময়ের মধ্যে একক প্রচেষ্টায় এক বৃহদাকার কর্মযজ্ঞের সূচনা করে গেছেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী , সন্ন্যাসী শ্রী ল প্রভুপাদ মহারাজ । 

⛔ তিনি যা করলেন তা আরও বিস্ময়কর। স্বামীজি ছিলেন অদ্বৈতবাদী যে কারণে আমেরিকা ঘুরে আসার পর ম্লেচ্ছদের সঙ্গে মেশা নিয়ে স্বামীজিকে দক্ষিণেশ্বরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ইন্দিরা গান্ধীকে জগন্নাথদেব দর্শন করা তো দূরে থাক মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। মুজতবা আলী শান্তিনিকেতন ও রবীন্দ্রনাথের মতো উদার মহামানবের সংস্পর্শে এসে পুরীর মন্দিরে প্রবেশের এক মহা রসিকতা শুনিয়ে গেছেন আমাদের। আজও অনেক আজব ধর্মীয় আচরণে বন্দী আমরা, এই দেশে। আর এই দেশেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে পান্ডারা নুলিয়াদের দিয়ে হত্যা করিয়েছিল, পা টেনে ধরে সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছিল। অন্যমতে গর্ভগৃহে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ সেই সময় সমস্ত ধর্মের মানুষ শ্রীচৈতন্যের সাম্যবাদী ধর্মের কাছে এসে ফল্গুধারার মতো মিশে যাচ্ছিল। যেখানে কাউকেই অচ্যুত ভাবা হয়না। ৫০০ বছর আগে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভূত হওয়ার সময়ে যা নির্দিষ্ট হয়েছিল মায়াপুরের কাছে। তাঁর জন্মস্থানের পাশেই। দলে দলে এক নতুন ধর্মীয় ভাবনায় এসে মিশ্রিত হচ্ছিলেন এই সৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণকে করেছিলেন তিনি জনগণের দেবতা ---" মায়ামুগ্ধ জীবের নাহি স্বঃত কৃষ্ণ জ্ঞান "(চৈতন্য চরিতামৃত)। 

⛔ স্কটিসচার্চে সুভাষচন্দ্রের এক ক্লাস নীচুতে পড়া ও সুভাষ অনুগামী অভয়চরণ দে স্বদেশী আন্দোলনে নেমে পড়লেন এবং ইংরেজদের দেওয়া কলেজের শংসাপত্র প্রত্যাখ্যান করে তা নিলেন না। পরে বসু গবেষণাগারের প্রধান হয়েছিলেন। ৫৪  বছর বয়সে সন্ন্যাসী হন এবং ৭০ বছর বয়স যখন তখন মাত্র ১৫ ডলার হাতে নিয়ে অনির্দিষ্ট যাত্রায় আমেরিকা পৌঁছন সঙ্গে সঙ্গী - "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।" 
এই মন্ত্র আর ১০৮ টি গুটিকা যুক্ত যপমালা। তিনি তখন শ্রীল প্রভুপাদ। তাঁর কাছে আছেন শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য। তিনি বললেন শ্রীকৃষ্ণ হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান কোনো কিছুই নয় তিনি শুধুমাত্র ভগবানকে জানেন। কে এই ভগবান ? শ্রীচৈতন্য ৫০০ বছর আগে যে সাম্যবাদী ধর্মীয় আচরণ ও সংকির্তন গণভোট গণজমায়েত "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।" এই মন্ত্র আর ১০৮ টি গুটিকা যুক্ত যপমালা। এই ভাবাবেগের পৃথিবীব্যাপী একটি প্রধান কার্যালয় মায়াপুরের ইসকন মন্দির। 
⛔©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...