শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

লক্ষ্মীর ভান্ডার আসলে মেয়েদের হাত খরচ। স্বামী হাত খরচ না দিলে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। অলোক কুন্ডু











যেখানে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হবে, সেখানে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করালে তারা একটি নম্বর ফরমের ওপর লিখে দিচ্ছেন এবং একটি সরকারি ছাপ দিচ্ছেন। সরকারি রাবার স্ট্যাম্পের ছাপটি যদি দিতে ভুলেও যান তবে আপনারা তা ওইখানে দিতে অনুরোধ করবেন। তার পাশেই ক্যাম্পের লোকেরা একটি স্বাক্ষর করে দেবেন। আপনিও বাড়ি ফিরে ওই নম্বরটি একটি আলাদা কাগজে যত্ন করে লিখে রাখবেন। "লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প"-এর নির্দিষ্ট একটি টেবিল বা ক্যাম্প থাকবে, ওইখানে গিয়ে Form-টি চাইতে হবে। এরকম শোনা যাচ্ছে, তা হলো ভিড়ের ঝুঁকি এড়াতে, বহু জায়গায় আগেই থেকে কূপন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারিখ অনুযায়ী এসে বা কারও মাধ্যমে তারা পরে ফরম্ তুলে নেবেন। পরে নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে জমা দেবেন। আজ পর্যন্ত এইরকম দীর্ঘ কোনও লাইন কোনও কালেই দেখা যায়নি।

ধরে নেওয়া যেতে পারে গ্রামেগঞ্জে বিডিও অফিসে ও শহরে মিউনিসিপ্যাল বরো অফিস অথবা মিউনিসিপ্যাল অফিসে হবে এই ক্যাম্প। স্থানীয় প্রশাসন মনে করলে এই ক্যাম্প তারা যে কোনও বড় স্কুলেও বসাতে পারে। হচ্ছেও তাই।

শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

লক্ষ্মীর ভান্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় / অলোক কুন্ডু অলোক কুন্ডু

লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে, একটি প্রবলেম হতে পারে তা হলো যাদের বয়সের কোনও শংসাপত্রই নেই। কেবলমাত্র ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের জন্মতারিখ দিয়ে এতদিন চলে যাচ্ছিল। এখনও বহু মানুষ আধার কার্ডে জন্মতারিখ নথিভুক্ত করেননি, এই ধরনের জটিলতার জন্য। এ ছাড়া আর এক ধরনের জন্মতারিখ নিয়ে জটিলতা আছে যা গেঁতোমির জন্য সংশোধন করা হয়নি। কারণ আধার কার্ডের জন্ম তারিখের সঙ্গে তার ভোটার কার্ড ও অন্যান্য জন্মতারিখের কোনও মিল নেই। এই কারণে একবছর বা ছয়মাসের তফাৎ থেকে গেছে তাদের নিজের বয়সের। আমি বলবো সবসময় আধার কার্ডের জন্মতারিখ মেনে নিলে সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। কারও জন্মতারিখ নেই তার ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিড নিয়ে সমস্যা মেটানো যেতে পারে। টাকার লোভে কেউ যদি দু তিন জায়গায় দু তিন রকম জন্মতারিখ রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার সমূহ ক্ষতি করতে পারে। অ্যাফিডিভিট সব জায়গায় মানতে না চাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, তাই কার্পেট জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ভালো। 

পশ্চিমবঙ্গ লক্ষ্মী ভাণ্ডার, প্রকল্পের আওতায় আবেদন করার পদ্ধতি কি? লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি নিয়ে বাড়িতে আনার পর, সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি অর্থাৎ নিজের কাছে থাকা কাগজপত্রগুলি সংগ্রহ করতে হবে এবং এরপর লক্ষ্মীর ভাান্ডারের আবেদন পত্রের অধীনে থাকা সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করা শুরু করুন। দুয়ারে সরকার থেকে দেওয়া নিবন্ধন নম্বর টি পূরণ করুন-- সবার আগে। আবেদন পত্র সংগ্রহ করার দিনে এই নম্বর ফরমে লিখে দিতে পারে, আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হয়ে তবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্যাম্পে যেতে পারবেন,  এই ব্যবস্থা সকলেই জানেন (রেজিস্ট্রেশন করুন)।

স্বাস্থসাথী কার্ডের নম্বরটি ফরমে লাগবে। আগে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে, এই আওতার অধীনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রয়োজন হবে। তাই এই কার্ড না থাকলেও আবেদন করা যাবে। ফরম্ জমা দিয়ে আধিকারিককে জানাবেন আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হয়নি। তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে এবং ততক্ষণ আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি অস্থায়ী ভাবে জমা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলেও লক্ষ্মীর ভান্ডারে আবেদন জমা করা যাবে অথবা স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবেন। এই বিষয়ে নিয়ম সরকার প্রতিনিয়ত আপডেট করে সংশোধন করছে।

আবেদনকারীকে তার দেওয়া সমস্তরকম জেরক্স কপিতে নিজেকেই স্বাক্ষর করতে হবে। ফরমেও স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর না করতে পারলে টিপসই দিতে হবে। জেরক্স কাগজের নীচের সাদা অংশে স্বাক্ষর করবেন। 

ফরমে লাগবেঃ পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নম্বর। যাদের নেই ফাঁকা থাকবে। আধার নং। আবেদনকারীর। মোবাইল নম্বর। ই-মেইল আইডি না থাকলে, দেওয়ার দরকার নেই। জন্ম তারিখ। বাবার নাম। মায়ের নাম। স্বামীর নাম ( স্পাউস)। ঠিকানা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণী। এই সমস্ত বিবরণ পূরণ করার পর এখন আপনাকে স্বয়ং ঘোষণা ফর্মমটি ( তৃতীয় ও শেষ পাতা) পূরণ করতে হবে। যাতে বলা আছে সবকিছু তথ্য আপনি সঠিক ও সত্য দিচ্ছেন। সঙ্গে একটি ক্যান্সেল লেখা চেকের ফাঁকা পাতা দিলে ভাল হয়, যেখানে স্বাক্ষরের জায়গাটি ক্রস করে দেবেন, চেকের কোথাও সই-স্বাক্ষর করবেন না। একটি ছবি ফরমে মেরে দেবেন আর একটি ছবি ফরমের বামদিকে স্টেপল্ করে দিন। এইসব হলে আসল ফরম্যাটটি সাবধানে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিয়ে দিন।

এইবার আপনাদের কয়েকটি কথা পরিষ্কার করে বলছি। ফরম্ পূরণের সময় ধৈর্য ধরে লিখুন, ধীরে ধীরে লিখুন অথবা কাউকে লিখে দিতে বলুন। ফরম্ যেদিন জমা হবে সেইদিন আপনার ফোনে এস.এম.এস আসবে। তাই
ফোনের মেসেজ বাক্স বা ইনবক্স পরিষ্কার করুন।
(১). তাই মেসেজ ভর্তি থাকলে, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে নোটিফিকেশন পাবেন না। (২). যেদিন ফরম্ জমা দেবেন, সেই দিনই কিন্তু এস.এম.এস নাও পেতে পারেন, কিন্তু ফরম্ জমা হলে এস.এম.এস পাওয়ার কথা। কিন্তু হাজার হাজার ফরম্ নিয়ে মিলিয়ে দেখে নিয়ে কম্পিউটারে তুলতে বহু সময় লাগার কথা, এই কারণে দেরি হতে পারে। (৩).ফরমের প্রথমেই যদি দুয়ারে সরকারের দেওয়া নম্বরটি আপনি ভুল লেখেন অথবা ক্যাম্প থেকে ভুল লিখে দেয় তবে সমস্যা হবে। (৪). ফরমের সঙ্গে দুটি ছবি দেওয়ার কথা, একটি ছবি আঠা দিয়ে ডানদিকের উপরের বক্সে চিটিয়ে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় ছবিটি ফরমের সঙ্গে ভালো করে স্টেপল করে বাম দিকের উপরে না দিয়ে থাকলে হারিয়ে যেতে পারে, সে কারণে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। (৫). ফরমের সঙ্গে যে সকল জেরক্স কপি দিয়েছেন, তা বারংবার আসল কপির সঙ্গে মিলিয়ে না নিলে এবং ভুল করে বাড়ির অন্য কারও অথবা নিজের আগের ভুল হওয়া কোনও দ্বিতীয় আধার কার্ড বা অন্য কাগজ জমা দেওয়া হলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৬). জেরক্স করা কাগজগুলোর মধ্যে ভুল করে কোথাও সই/ স্বাক্ষর করে না দিলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৭). সব থেকে বড় ভুল হতে পারে যাদের স্কুল-কলেজের শংসাপত্র নেই বা বার্থ সার্টিফিকেট নেই এবং যার ফলে জন্ম তারিখের গন্ডগোল থাকলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। তাই যাদের এরকম আছে তারা ভুলেও দুরকম জন্ম তারিখ লেখা কাগজপত্র জমা দেবেন না। এইক্ষেত্রে যদি ভুলও থাকে তবে আধার কার্ডের জন্মতারিখ জমা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আধার কার্ডে জন্মতারিখ না থাকলে ভোটার কার্ড দিন কিন্তু এই প্রসঙ্গে উল্টোপাল্টা কিছু জমা দিয়ে ফেললে এস.এম.এস আসবে না। (৮). ব্যাঙ্কের যে অ্যাকাউন্টটা চালু আছে সেইরকম কোনও অ্যাকাউন্ট দিয়েছিলেন কিন্তু আই.এফ.এস নম্বরটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মেলেনি তাতেও এস.এম.এস আসবে না। তাই সঙ্গে একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে হবে যেটিতে সই/ স্বাক্ষর কখনই করবেন না। ক্যানসেল বলে বড় বড় অক্ষরে চেকের উপর লিখে দেবেন। নতুন অ্যাকাউন্ট হলে, এখনই চেক বই পাবেন না, তাই
পাশ বইটি ভালো করে জেরক্স করুন এবং ওইখানে আই.এফ.এস কোড না লেখা থাকলে আপনি ব্যাঙ্ক থেকে জেনে লিখুন। আই.এফ.এস কোডটি সঠিক ছাড়া আপনার ফরম্ কম্পিউটারে ঢুকবে না, তাই এস এম এসও আসবে না। (৯).সাদাকালো ছবি দিলে এস এম এস নাও আসতে পারে। (১০) অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর না করলে এস.এম.এস না আসতেও পারে।
(১১). স্পাউস মানে স্বামী এই কলমটি ভুল লিখলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (১২). ফরমে তারকা চিহ্নিত ঘর পূরণ না করে ফাঁকা রেখে দিলে এস.এম.এস নাও আসতেও পারে। ফরমের উপরে দুয়ারে সরকারের দেওয়া কোনও নম্বর না থাকলে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। স্পষ্ট করে ফরম্ পূরণ না করলে ( ক্যাপিটাল) এস.এম.এস না আসতেও পারে। 

সমস্ত কিছু বলার পরও একটু রাজনৈতিক আলোচনা সামান্য করা দরকার। যখন লক্ষ্মীর ভান্ডার ঘোষণা হ'ল তখন কিন্তু আদেশের মধ্যে ছিল প্রতিটি পরিবারের একজন পাবেন। ১২.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয়বার সাংবাদিক সম্মেলনেও সেই কথা বললেনও। তারপরই বিজেপির পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হ'ল এবং শুভেন্দু অধিকারী বললেন সন্ধ্যায়। তিনি বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে লিখিত আছে সকল মহিলাদের দেওয়ার কথা। ১৮.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী পুণরায় ঘোষণা করলেন সকলেই পাবেন। এখন এই সকলের মধ্যে কারা পাবেন আর কারা পাবেন না নতুন করে যদি কিছু আইনি ব্যাখ্যা সরকার দেয় তবে বিরোধীপক্ষ নিশ্চিত মামলাও করতে পারে। তাই ধরে নিতে হবে, এখন সকলেই পাবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মোট খরচের বাজেট বরাদ্দ এখন তাই বাড়াতে হবে। অলোক কুন্ডু ©®। 




সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

লেনিন ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মধ্যে অমিল : অলোক কুন্ডু

🎯 একই ঘটনার জন্য লেনিন ধিকৃত হয়ে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন-- অলোক কুন্ডু

🎯 গত ৩০.৫.২০০৭-এ প্রকাশ কারাত বলেছিলেন, প্রাত্যহিক ব্যবসায় সব্জি প্রক্রিয়াকরণে, রিলায়েন্সকে আটকে রাখা যাবেনা। ফরোয়ার্ড ব্লকের হাতে ছিল কৃষি বিপনন দপ্তর। ফরোয়ার্ড ব্লক নিজেদের স্বার্থেই চেয়েছিল নিত্য প্রয়োজনীয়, কৃষি ও সবজি ব্যবসায় যেন রিলায়েন্স না ঢোকে। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সদিচ্ছার কাছে ১০০ একর জমির দরখাস্ত করেছিলেন মুকেশ আম্বানি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য। বুদ্ধবাবুর তখন ২৩০/৩৫- এর সময়, কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। তারপর নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর এসে পশ্চিমবঙ্গের সব ওলটপালট করে দিয়ে গেছে। মিডিয়া ও খবর কাগজের সেই চুলচেরা বিশ্লেষকদের কথা কেউ মনে রাখবেন না কিন্তু
যে সব শিল্পী-সাহিত্যিকরা বুদ্ধিজীবী সেজে মহা বিপ্লবী হয়ে উঠেছিলেন তারা অধিকাংশ আজ উইঢিপিতে পরিণত। বামেরাও আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গলদ থাকায়। বামেদের আজ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা নেই। তারা সেই রিলায়েন্স, সেই মুকেশ আম্বানির এখন উঠতে বসতে শ্রাদ্ধ করে থাকেন। বামপন্থীরা বলে থাকেন তাদের পার্টিলাইনের কথা। অবশ্য তারা যখন কম্পিউটার আটকে ছিলেন সেই কম্পিউটার আর আজকের কম্পিউটারের কাজের আকাশ পাতাল তফাৎ। আসলে তারা অটোমেশন আটকে ছিলেন। অটোমেশন যদি ব্যবহার হোতো তাহলে ১৯৪৭ থেকে ডেক্সটপ কম্পিউটার আসা পর্যন্ত কয়েক কোটি ভুয়ো সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, শ্রমিকের বেতন
সরকার ও সেই সংস্থাগুলিকে গুণতে হোতো না।

•যখন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত রাশিয়ায় খাবার নেই অনটনে ও শিল্পহীন রাশিয়া একপ্রকার ধুঁকছে। তখন লেনিনের কাছে আমেরিকান এক ব্যবসায়ী শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন শুধুমাত্র রাশিয়াকে গড়ে তুলতে, পুঁজির যোগান থেকে কয়েকবছর না লাভালাভের সেই প্রস্তাব লেনিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র পুঁজিবাদ আটকাতে। কিন্তু লেনিন সেই খাদ্য ও শিল্পের অনটনের সময় এবং মহা দৈন্যতায় আমেরিকান পুঁজিবাদকে ঢুকতে না দিয়ে আসলে ধিকৃত হয়েছিলেন। লেনিনের সেই মতবাদকে বড় করে দেখার জন্য তৎকালীন বৃহত্তর রাশিয়ানরা প্রচুর দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছিলেন। লেনিন আদর্শ বিচ্যুত হননি ঠিকই কিন্তু লেনিনের ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করতে সেই ঘটনা নিয়েই একাধিক বেস্টসেলার বই বেরিয়েছে। কিন্তু এই ধারণার বাইরে বেরিয়ে বুদ্ধবাবু ২০০৬-এ রিলায়েন্স, টাটা, মুকেশ আম্বানির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই সময় বামফ্রন্টের অনেক শরিক এইসব কাজে বাধা দিয়েছিলেন যাদের আজ একখানা এম.এল.এ জিতিয়ে আনার শক্তি নেই। পতাকায় যত আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক দেখা যায় বাস্তবে তাদের ১৪ দলের সাইনবোর্ড ছাড়া অনেকের আজ কিছু নেই যদিও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সিপিআই, সিপিএম ও ফরোয়ার্ড ব্লকের কিছু বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানেও পার্টি ধরা আছে কলকারখানার ইউনিয়ন ও খেটেখাওয়া কৃষক পরিবারের ওপর নির্ভর করে যা প্রায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে উঠে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী বলতে- ছাত্র, অধ্যাপক, শিক্ষক শ্রেণির কাছে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম-গঞ্জ থেকে কারখানায় পর্যন্ত, শক্তিশালীতায় এখন সেইসব দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। যে কোটিপতি কৃষকদের বিরুদ্ধে এককালে বামেদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন ছিল এখন সেইসব ট্রাক্টরওলা ঋণ পরিশোধ না করা, ঋণখেলাপি কৃষকদের সমর্থনে খেটে খাওয়া কৃষকদের সামিল করে দিয়েছেন তারা ও কৃষিবিল প্রত্যাহারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকলে একরকম নীতি আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে আর একরকম নীতি সঠিক কিনা ভবিষ্যত বিচার করতে করতে দেশ গোল্লায় যাবে কিনা সেটাই এখন দেখার। তবে নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর যে শিল্প না নিয়ে যে শতাব্দীর সেরা ভুল করেছিল তা সকলেই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন। যা কখনও ক্ষমার যোগ্য হবেনা। রাশিয়ার দুঃসময়ে লেনিন যা করেছিলেন সেই বিপরীত আদর্শে বুদ্ধবাবু নিরুপম সেনরা গিয়েও ফিরে আসতে পারেননি। রাশিয়া টুকরো টুকরো হয়ে গেছে আজ। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর বুদ্ধবাবুকে পুরস্কার দেবেনা হয়তো। একই ঘটনার জন্য লেনিন ধিকৃত হয়ে আছেন হয়তো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ©® অলোক কুন্ডু 🎯🎯 ( ছবিটি একটি প্রতীক) 

রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

একুশের নির্বাচন বামেদের কাছে পরীক্ষাগার: অলোক কুন্ডু


🎯 একুশের নির্বাচন বামেদের কাছে পরীক্ষাগার

🎯 অলোক কুন্ডু
•০৮.০২.২০২১১

🎯 হলদিয়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস ও তাদের সরকারের বিরুদ্ধে যে বলবেন এটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু যে নন্দীগ্রামের জন্য বামেরা উৎখাত হয়েছিল তার নিকটতম জায়গা হলদিয়া থেকে কেন প্রধানমন্ত্রী বামেদের বিরুদ্ধে নতুন একটি অস্ত্রকে ধারালো করে শান দিলেন। কারণ কি ? অথচ এখানে বিজেপির উত্থান কিন্তু তৃণমূলকে প্রবল আক্রমণের মধ্য দিয়েই হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট বাড়াতে হলে ইতিপূর্বে সত্তর বছরের ইতিহাস বলছে সরকারকে আক্রমণ
না করলে রাজনৈতিক মঞ্চ দখল রাখা মুস্কিল। তাই প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলকে প্রধান শত্রু করেও বামেদের বিরুদ্ধেও অস্ত্র শানাতে ভুললেন না। নিশ্চিত এর বিস্তৃত কারণ আছে। একমাত্র তৃণমূলকে প্রবলরূপে আক্রমণ করার জন্য বিজেপির এই উত্থান আজ হয়েছে। হঠাৎ তার সঙ্গে বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবার কারণ কি ? হয়তো দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোপন কিছু রিপোর্ট থাকতে পারে। যে কারণে বঙ্গের রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী আর একটি দরজা আজ জনসম্মুখে খুলে দিলেন। নিশ্চিত তাঁর কাছে আই.বি রিপোর্ট আছে যে বামেরা যাত্রাভঙ্গ করতে পারে, তলে তলে তাদের গোপন কম্মটি হয়তো প্রধানমন্ত্রী আগেভাগে জেনে গেছেন। গুটিকয়েক মোক্ষম শব্দের বিশেষণ দিয়ে তা পরিষ্কার করে দিলেন তিনি আজ। আসলে বামেদের এতে স্বার্থ কি ? লক্ষ্যণীয় যে বামেদের বক্তব্য থেকে খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না যে তারা ক্ষমতায় আসতে চান। বরং তাদের আন্দোলন সবটাই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যেমন--এল.আই.সি যেন সম্পূর্ণ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব থাকে। কৃষি আইন যেন সরকার তুলে নেয়, রান্নার গ্যাস যেন ফ্রিতে সরবরাহ করা হয়, পেট্রোল ডিজেলের যেন দাম বেঁধে দেওয়া হয়, ব্যাঙ্কের সুদ বাড়ানো হয়। আর তার সঙ্গে গুজরাটের পুরনো দাঙ্গা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তুলে ধরছে তারা। তৃণমূলকে আক্রমণ করে যে একদিন বনধ্ ডেকে দেওয়া অথবা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজত্বকালে তারা প্রেস কনফারেন্সে করে, যে সব দাবিদাওয়া তুলছে ও দুর্নীতিসমূহ বলতে চাইছে। যখন তারা জনতার দরবারে যাচ্ছে সেইসব তারা তেমন জোরালোভাবে বলছে না। এর কারণ কি ? মনে হয় এইসবগুলিও বাম ও সিপিএমের দেখা দরকার। কারণ বিজেপির অভিযোগ অনুসারে তাদের কাজে করে না দেখাতে পারলে, ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়বে। বামেদের ঘাড়ে এই যে অভিযোগ চাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন, তা কি রাজ্যের বিজেপিকেও নাড়িয়ে দিয়ে গেলেন ? যে তোমরাও এই বিষয়ে নজর দাও। রাজ্যের বিজেপির যুদ্ধজয়ের মূল কান্ডারি, শুভেন্দু অধিকারী কিন্তু, জ্যোতিবাবু থেকে সিপিএমের সরকারের ভালো দিকগুলি তার বক্তব্যের মাঝে তুলে ধরছেন। এই রাজ্যের ভোটারকে কিন্তু শুভেন্দুর থেকে বেশি বোধহয় কেউই চেনেন না। মুকুল রায়ের পর তিনি তৃণমূলের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন, যিনি সারা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের হয়ে সংগঠন বাড়িয়েছেন, বক্তৃতা করেছেন ও দৌড়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপিতে টক ঝাল মিষ্টি দিয়ে,
বামপন্থীদেরকে তুলে ধরার চেষ্টা করা করছে বিজেপি। বিশেষ করে ৩৪ বছরে একটা বড় শিক্ষক শ্রেণি তাদের হাতে এখনও আছে। কিন্তু ১৯৮১-এর পর গ্রামেগঞ্জে তাদের কাছে যে পঞ্চায়েতি রাজের সুবিধা ভোগীরা এসেছিলেন অন্যদল ছেড়ে দিয়ে, তারা ধীরে ধীরে সরে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বামেরা কি করতে পারেন ? কতটুকু জয়, তারা তাদের বামপন্থী মেজাজ ও ঐক্য দিয়ে ধরে রাখতে পারবেন ? পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাও এইবার পরীক্ষা করে নেবে। গত ২০১৬ তে বা তার পরের ভোটেতে বামেদের প্রাপ্ত সাতভাগ ভোটের থেকে যাতে আরও ২/৩ % ভোট বিজেপির দিকে টানা যায়, এই সঙ্গে তার একটা প্রচেষ্টাও তৈরি করে রেখে গেলেন, প্রধানমন্ত্রী। যদি আব্বাস সিদ্দিকীদের সঙ্গে বাম+কংগ্রেসের জোট শেষ পর্যন্ত হয়ে যায়ও, তাহলে বামেদের ভোটে যে ব্যাপক ভাঙন ধরার কথা ছিল বরং কিছুটা উন্নতি হতে পারে। নতুন ভোটার বামেদের সঙ্গে নাও যদি যায়, তাহলেও ৫-৬ % ভোটার এখনও বামেদের সঙ্গেই থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তাই, ওখান থেকে আরও কিছু যদি কমিয়ে দেওয়া যায় এবং বামেদের আর বাড়তে না দেওয়া।

• বিজেপি বেকরত্বকেই খুব বেশি জোর দিয়েছে এই কারণে যে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প পরিস্থিতি ও বেকার সমস্যা এবং পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যায় ধুঁকছে। বিজেপির জনপ্রিয়তা এখন যা আছে তাকে কিছুতেই হারাতে আর রাজি নন তারা। বিজেপির বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এখনও শহরের পথে নামেনি। অনেকটা চাপা আগুনের মতো হয়ে আছে। ফোকাসড নয়। শহরের লোকের কাছে, বিজেপির প্রধান শত্রু তৃণমূল যতটা, ততটা বুঝি এখন থেকে বামেরাও হয়ে উঠলো। কারণ বাম বুদ্ধিজীবী থেকে বিজেপিকে বেশি বাধা পেতে হচ্ছে। বাম বুদ্ধিজীবীরা সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের বুদ্ধিজীবী লবির সঙ্গে বসে প্রকাশ্য জনসভায় হেয় করছেন বিজেপিকে। এইসব খবর আই. বি মারফৎ প্রধানমন্ত্রী হয়তো পেয়ে গেছেন। এছাড়াও পূর্ব-মেদিনীপুরে বামেদের ইউনিয়নে কিছু লোক আছে এখনও। শিল্পাঞ্চল বলে কথা। নন্দীগ্রাম, সুশান্ত ঘোষ, লক্ষ্মণ শেঠ অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে ওখানে। তা ছাড়া বাজপেয়ী সরকারের আমলে, তাদের প্রতিনিধি এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্দিনে, পশ্চিম মেদিনীপুরে। চমকাইতলা, খেজুরি, কেশপুর, নেতাই এইসব নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আছে। বিজেপি ও স্বরাষ্ট্রদপ্তরের কাছে সেইসব অজানা নয়। বিশেষ করে একসময় দুর্দিনে কেশপুরে তাদের বেশ ভালো সমর্থক ছিল। এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল তাই প্রধানমন্ত্রী ছাড়তে চাননি এখানে। তা ছাড়া সিপিএম ও বামেদের কাছে বারবার সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছে, আপনাদের প্রধান শত্রু কারা। সর্বাগ্রে বামেরা নির্দ্ধিধায় জানিয়েছে প্রধান শত্রু তাদের কাছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি। তারা যে সুকৌশলে তাও বলেছেন যে তারা সংখ্যালঘু ও মুসলিমদের সঙ্গে আছেন। একসময় গ্রামের আদিবাসী ভোট তাদের একচেটিয়া ছিল, সঙ্গে ছিল মুসলিম ভোট। কিন্তু বিজেপি সেখানে আদিবাসীদের মধ্যে বেশ ভালো রকম সংগঠন গড়ে ফেলেছে। দুই-মেদিনীপুরে আদিবাসী ও হিন্দুভোট ঘরে তুলতে পারলে এখন বিজেপিকে আর ঠেকায় কে। ইতিমধ্যে বেশকিছু বামপন্থী নীচুতলার কর্মী শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে নীচুতলায় আর কোনও দল ভয় দেখিয়ে দলবদল করতে পারবে না। তা ছাড়া বামপন্থী ও সিপিএমের যে সকল ছোট ছোট সভা হচ্ছে সেখানে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যত বলছেন তার থেকে বেশি বলছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। হয়তো সারা ভারতে
এটাই বামেদের পার্টিলাইন। ইতিমধ্যে তারা দেখেছে, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, পঞ্জাব ও বিহারে
এই লাইন তাদের কাজে এসেছে। এখন পশ্চিমবঙ্গে সেই লাইন থেকে তারা সরে আসতেও পারেন না।

•ওদিকে যেহেতু কংগ্রেসের ঘর ভেঙেই তৃণমূল কংগ্রেসের বাড়বাড়ন্ত তাই অধীর চৌধুরী আবার বলেছেন দুদিকেই। কিন্তু কেন্দ্রীয়স্তরে বিজেপির আবার প্রধান শত্রু কংগ্রেস। শুভেন্দুকে খুব বেশি
আক্রমণ বর্তমানে না করলেও তৃণমূলে থাকার সময় ২০০৬-এ অধীর শুভেন্দুর বাকযুদ্ধে তপ্ত ছিল মুর্শিদাবাদ। অধীর চৌধুরী শুভেন্দুকে কুকুর ও নিজেকে হাতির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু শুভেন্দুর বেরিয়ে আসার পর অধীর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান শুভেন্দুকে তেমন আক্রমণ করেননি বলে কে বা কারা মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীর নামে পোস্টার দিয়েছে। অধীরকে সেখানে ভোট দিতে বলছে হাতের মাঝে পদ্মফুল
এই যুগ্ম চিহ্নে। কংগ্রেসের ছেলেরা সেইসব অনামা পোস্টার ছিঁড়ে দিয়েছে।

•কিন্তু বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশে বেশ বুঝতে পারছে আর তাই তিনদিকে আক্রমণ শানালে তাদের আক্রমণ যে ভোঁতা হয়ে যেতে পারে, তাই এখানে তারা কংগ্রেসকে কোনও আক্রমণ করছে না। অবশ্যই দিলীপ ঘোষ একা হলেও জনতার কাছে কিছুটা নিন্দিত হলেও, বিজেপির লড়াকু নেতা হিসেবে তিনি সম্মানিত। বরং বিজেপির প্রাদেশিক নেতাদের মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ যে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিজেপিতে আছে তারা কিন্তু তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। দিলীপ ঘোষকে ব্যানারে সম্মানের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন জোনে তারা ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছেন। সভাগুলোতে এখন পর্যন্ত জনসমাগম দারুণ। উপচে পড়ছে। ইতিমধ্যে বিজেপির জনসমাগমে বাইরে থেকে না এনেও মাঠ উপচে যাচ্ছে। ২০/২৫ কিমির মধ্য থেকেই তাদের ফলোয়াররা সভায় যোগ দিচ্ছেন। তাদের কাছে সরকারের ঠেস নেই, পুলিশ নেই, পরিকাঠামো নেই তবুও তাদের সভাগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে এবং ম্যানেজমেন্টে পাশ করে চলেছে। ( যদিও মঞ্চের ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত খারাপ) যদিও জনমত বাড়াতে গিয়ে জনতাকে কন্ট্রোল করা শিখতে পারেনি ( ভিক্টোরিয়া কান্ড ও মঞ্চে জনগণ গাওয়া) তবুও ইতিমধ্যে হুগলী, মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ায় জেতার মতো মাটি যথেষ্ট তৈরি করে ফেলেছেন তারা। ১/২ ভাগ মুসলিম ভোটেও অল্প বিস্তর ভাগ বসাতেন পারেন এখন। পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, নদীয়ায় ইতিমধ্যে বিজেপি, অ্যাসিড টেস্টে পাশ হয়ে গেছে। হাওড়ার গ্রামে গ্রামে বিজেপির ঝান্ডা এখন বেশ দেখা যাচ্ছে।
এখন দেখা যাচ্ছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভালো বলতে পারেন এবং হাওড়ায় তার বাবা-কাকার প্রচুর গুণগ্রাহী আছেন এবং ভদ্রলোক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। কাউকে অসম্মাণ করে কথা বলেন না। হাওড়ার গ্রাম শহরে বিজেপির এত তাড়াতাড়ি যে উত্থান হবে
তা বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের জানা ছিল না। এখন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সব খবর রাখছেন এবং বামেদের পূর্ব প্রসঙ্গ তুলে অল্প কথায় তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন, হলদিয়াতে। বিশেষ করে বুথের মধ্যে বামেদের ভূমিকা পঞ্চায়েত নির্বাচনে অন্যরকম হয়েছিল। তাই স্পষ্ট বার্তা বামেদের কাছে। অবশ্য এতে করে বামেদের নীতি পাল্টানোর অবকাশ কোনও থাকেনা। এখন দেখার বাস্তবে বামেদের আচরণ কি হয় ? সত্যি কি তারা প্রধানমন্ত্রীর উসকে দেওয়া প্রসঙ্গকে হুবহু মিলিয়ে দেবেন না কি তারা তাদের নীতিতে অকাট্য থাকবেন এবং ২০২৬ এ আবার ফিরে আসার জন্য মাটি তৈরি করে নেবেন, এই একুশে। একুশের নির্বাচন তাই বামেদের কাছে পরীক্ষাগার ও আত্মসমীক্ষার জায়গা ? উল্লেখ্য যদিও বামেদের আমলেই এই রাজ্যের বেকারদের সবচেয়ে বেশি চাকরি হয়েছিল কিন্তু তাদের অন্যান্য নীতি তাদেরকে পিছিয়ে দিয়েছিল। এখন নতুন করে এখন বেকারত্ব কম করার জন্য তাদের হাতে কোনও অস্ত্র কাছে নেই। কারণ তাদের সরকার যে আসবেই এর কোনও গ্যারান্টিও নেই তাদের ঝুলিতে। কারণ লোকে বলছে তাদের প্রধান শত্রু তৃণমূল কংগ্রেস নয়। সকলে সত্যিই সেটাই দেখছেন কিনা তা অবশ্য প্রমাণিত নয়। এখনও আদাজল খেয়ে লড়াইয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ভোটের । ঢের দূরে নির্বাচন। তারা বরং নির্বাচনী প্রচারে যথেষ্ট পিছিয়ে আছেন। যদিও বামেদের মূল বক্তব্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারকে হঠাতে খুবই কার্যকরী। গ্যাসের দাম বাড়ছে কেন, রাষ্টায়াত্ব সংস্থাকে প্রাইভেট সেক্টরে দেওয়া যাবেনা, সম্প্রীতির ক্ষেত্রে ও ধর্মীয় মৌলবাদী ক্ষেত্রে বিজেপি দল হিসেবে বিপজ্জন। বিজেপির রাজত্বকালে জিনিসের দাম উর্দ্ধ্বমুখী ও কৃষি আইন বাতিল আবশ্যক। এখন দেখার নির্বাচনে জেতার জন্য তাদের প্রচার কতখানি
আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। 🎯 ©® অলোক কুন্ডু

শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

কৃষি আইনের সামাজিক নিষ্পত্তি হোক: অলোক কুন্ডু

🎯 আচ্ছা এখনও আমার মাথায় ঢোকেনি, সত্যিই কৃষকরা সৎ ভাবে না ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি জেদের বশে এই কৃষি আন্দোলন করে চলেছেন। একবছর আইন অনুসারে যদি কাজ ওনারা করতে দিতেন, তখন যদি ওনারা বলতে পারতন, দেখলেন তো আমরা গতকাল যা বলেছিলাম, তা আজ সঠিক হলো। তাহলে মনে হয় সারা দেশকে তারা পাশে পেতেন। এর সঙ্গে জিনিসের দাম ওঠাপড়া তো জড়িত, তাই না ? সাধারণ মানুষরা বুঝতেই পারছে না কেন এতদিন ধরে ধর্ণা চলছে। আইনটা যে ফালতু তা তো প্রমাণ করা দরকার। তা না করতে দেওয়াটাও ঠিক নয়। সারা দেশ তাহলে এখনও মানতে পারেনি কেন। এর পেছনে শুধুমাত্র যে রাজনীতি নেই, এটা কে বোঝাবেন ? এই শীতে কৃষকদের কষ্ট যে হচ্ছে তা সকলেই বুঝছেন। সবথেকে ভালো হোতো কৃষি আইনের প্রতিটি ক্লজ ধরে ধরে কৃষি আন্দোলনকারীরা তার উত্তর দিতেন, লিখতেন। তাতে যারা সমর্থন করছেন সকলে স্বাক্ষর করতেন। সেইসব প্রশ্ন-উত্তরগুলি যদি ছেপে বই করে সরকারের পয়সায় ছাপিয়ে প্রতি বাড়িতে বিতরণ করা হোতো, তবে সবাই পড়ে দেখতে পারতেন। আমরা দুটোই পড়ে দেখতাম। তন্নতন্ন করে লিখুন আপনারা। দায় যদি শুধু কৃষকদের হয়, তবে তারাই বই ছাপিয়ে বিতরণ করুন। প্রতিটি ক্লজ এবং সাবক্লজের প্রশ্ন এবং উত্তর তৈরি করে জনগণকে পড়তে দিন। পড়ার পর ওই বই অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপে ভোট নিন সকলের কাছে থেকে। যাদের হোয়াটসঅ্যাপ নেই তারা বুথে গিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভোট দিন। একটা পথে তো সকলকে যেতে হবে। ছয়মাস আন্দোলন ও আইন দুটোই বন্ধ থাকে। আমি একজন যুক্তিবাদী হিসেবে নিজেকে দেখি। তাই যুক্তিযুক্ত কারণ সামনে রাখুন। অবশ্যই কৃষকদের সমর্থন করবো যদি বুঝি সরকারের দোষ। এখন যা হচ্ছে তা সেই কারণে সমর্থন করার মন চাইলেও পারছি না। কোথাও একটা
চোর-পুলিশ খেলা চলছে। যা জনগণ ধরতে পারছে না। ©® অলোক কুন্ডু

কৃষি আইনের সামাজিক নিষ্পত্তি হোক: অলোক কুন্ডু

🎯 আচ্ছা এখনও আমার মাথায় ঢোকেনি, সত্যিই কৃষকরা সৎ ভাবে না ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি জেদের বশে এই কৃষি আন্দোলন করে চলেছেন। একবছর আইন অনুসারে যদি কাজ ওনারা করতে দিতেন, তখন যদি ওনারা বলতে পারতন, দেখলেন তো আমরা গতকাল যা বলেছিলাম, তা আজ সঠিক হলো। তাহলে মনে হয় সারা দেশকে তারা পাশে পেতেন। এর সঙ্গে জিনিসের দাম ওঠাপড়া তো জড়িত, তাই না ? সাধারণ মানুষরা বুঝতেই পারছে না কেন এতদিন ধরে ধর্ণা চলছে। আইনটা যে ফালতু তা তো প্রমাণ করা দরকার। তা না করতে দেওয়াটাও ঠিক নয়। সারা দেশ তাহলে এখনও মানতে পারেনি কেন। এর পেছনে শুধুমাত্র যে রাজনীতি নেই, এটা কে বোঝাবেন ? এই শীতে কৃষকদের কষ্ট যে হচ্ছে তা সকলেই বুঝছেন। সবথেকে ভালো হোতো কৃষি আইনের প্রতিটি ক্লজ ধরে ধরে কৃষি আন্দোলনকারীরা তার উত্তর দিতেন, লিখতেন। তাতে যারা সমর্থন করছেন সকলে স্বাক্ষর করতেন। সেইসব প্রশ্ন-উত্তরগুলি যদি ছেপে বই করে সরকারের পয়সায় ছাপিয়ে প্রতি বাড়িতে বিতরণ করা হোতো, তবে সবাই পড়ে দেখতে পারতেন। আমরা দুটোই পড়ে দেখতাম। তন্নতন্ন করে লিখুন আপনারা। দায় যদি শুধু কৃষকদের হয়, তবে তারাই বই ছাপিয়ে বিতরণ করুন। প্রতিটি ক্লজ এবং সাবক্লজের প্রশ্ন এবং উত্তর তৈরি করে জনগণকে পড়তে দিন। পড়ার পর ওই বই অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপে ভোট নিন সকলের কাছে থেকে। যাদের হোয়াটসঅ্যাপ নেই তারা বুথে গিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভোট দিন। একটা পথে তো সকলকে যেতে হবে। ছয়মাস আন্দোলন ও আইন দুটোই বন্ধ থাকে। আমি একজন যুক্তিবাদী হিসেবে নিজেকে দেখি। তাই যুক্তিযুক্ত কারণ সামনে রাখুন। অবশ্যই কৃষকদের সমর্থন করবো যদি বুঝি সরকারের দোষ। এখন যা হচ্ছে তা সেই কারণে সমর্থন করার মন চাইলেও পারছি না। কোথাও একটা
চোর-পুলিশ খেলা চলছে। যা জনগণ ধরতে পারছে না। ©® অলোক কুন্ডু

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

ভোটের পর জোট : অলোক কুন্ডু


⛔ এই মূহুর্তে বাম ও কংগ্রেস দল মুখে যতই বলুন না কেন, তারা ইতিমধ্যে বুঝতে পারছেন তাদের মাঠ ময়দানে লোক নিয়ে আসা খুব কষ্টদায়ক। প্রকৃতপক্ষে জনগণকে এই দুটি দল থেকে আর কিছু দেওয়ার নেই। কংগ্রেস ও বাম দল ভালো জানেন, না দিলে কেউ কাছে আসে না। একসময় স্কুল-কলেজের চাকরিতে এদের বহু ছেলেমেয়েরা ঢুকেছিল, তাই তারা মিছিল মিটিংয়ে আসতো ও পেছন থেকে দলকে সংগঠিত করতেও পথে নামতো। এখনও বামেদের কিছু সেখানে পড়ে থাকলেও কংগ্রেসের ময়দান এই মূহুর্তে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু তারা যৌথভাবে ব্রিগেড করলে মাঠ ভরিয়ে দেখাতে পারবেন যে তাদের ভোটাররা এখনও তাদের সঙ্গে আছে। এই বিগ্রেড ভরানোয় অবশ্যই বামেদের পুরনো সংগঠনের একটা মহিমায় ভিড় হলেও হতে পারে। তবে গ্রামে যখন ওই জনগণ ফিরে যাবে তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইটা লড়বে বিজেপিকে ভোট দিয়ে--এই বিষয়টা বামেরা কয়েক বছর ধরেই দেখতে পাচ্ছেন।
তৃণমূল এই বিষয়টাকে নিশ্চিত মাথায় রেখেছে, তাই তারাও চাইবে আগামী ২৮/২-এ ব্রিগেড ভরুক। তারাও তাই সাহায্য করবে, আর এখান থেকেই বাম+কংগ্রেস ও তৃণমূলের একটা যৌথ বুথ ম্যানেজমেন্ট তৈরি হতে শুরু হতে পারে।

⛔ সমস্ত করে-খাওয়া পার্টি, ব্যক্তি, বাম+কংগ্রেস ছেড়ে এখন তৃণমূল কংগ্রেসে যুক্ত হয়েছে। যার ফলে এই নতুন করে-খাওয়া জনগোষ্ঠী চাইবে তৃণমূল কংগ্রেসকে যেভাবেই হোক টিঁকিয়ে রাখতে। এই করে-খাওয়া জনগোষ্ঠী যত না তৃণমূল কংগ্রেসকে রাখতে চান, তার থেকে বেশি রাখতে চান নিজেদের অস্তিত্ব যেন টিঁকে থাকে। কবি থেকে আবৃত্তিকার, সঞ্চালক থেকে পাড়ার গাইয়ে, তোলাবাজ থেকে চাকরির আশায় পড়ে থাকা বেকার সকলেই আছেন এই দলে, তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শেষবার দুয়ে নিতে এদের থেকে ভালো আর কেউ জানেন না। এদের সিংহভাগ এসেছেন বাম ও কংগ্রেস থেকে। একদম আনকোরাও এসেছেন। বামেদের কাছে সুবিধা পাওয়া কবি, সাহিত্যিক থেকে কন্ট্রাক্টর পর্যন্ত একেবারে দলবল সহ তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।এরপর তো আছেন-- বুদ্ধিজীবীরা। সবাই মিলে তৃণমূল কংগ্রেসে, তারা জোটবদ্ধ হয়ে আছে। নতুন এই করে-খাওয়া, ধান্দাবাজ জনগোষ্ঠীরা আর কাউকে কোনও ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সংস্কৃতিতে ঢুকতে দেয়নি, কয়েক বছর। যা খেয়েছে, যা করেছে সব নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে। এতে করে তৃণমূলের ভালো থেকে খারাপ হয়েছে। বরং যে কোনও উপায়ে এইদল রটিয়েছে ওরা, তারা এবং এরা তৃণমূলের বিরোধী, চক্রান্ত করছে তৃণমূলের। একদিকে এরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গড়েছে নিজেদের মধ্যে এবং কীভাবে বিজেপিকে আটকানো যায় সেই কাজে নিযুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের পুরনো বাম ও কংগ্রেস বন্ধুদের সঙ্গেও রীতিমতো যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এদের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলেছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার। হঠাৎ এদের কথা লেখার কি এমন দরকার পড়লো ? কারণ এরাই দেশকে, সমাজকে এমনকি তৃণমূল কংগ্রেসকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে চলেছে। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে নিজেদের পছন্দ মতো লোককে তারা বন্ধু করেছে। চাকরি গুছিয়ে নিয়েছে, পাড়ার সংস্কৃতি দখল করে রেখেছে, কবিতা উৎসব থেকে লিটল ম্যাগাজিন উৎসবে এরা আর কাউকে ঢুকতে দেয়নি। এরপর আছে তৃণমূলের নেতাদের কানমানি। এরাই বাম আমলে সমস্ত কিছু দখল করে রেখেছিল। এদের জোটবদ্ধ কার্যক্রম ভেতর ভেতর তৃণমূলে আসার পর আরও বেড়ে উঠছে। কিন্তু বিরোধীরা যে সমস্ত তথ্য দিয়ে প্রতিদিন ময়দান জমাচ্ছে সেইগুলিও
এখানে আলোচনা আর করার দরকার নেই।

⛔ সকলের মনে হতে পারে, এরা তৃণমূলের কি এমন ক্ষতি করছে ? ক্ষতি তো অবশ্যই করেছে, কারণ এরা যেখানে সুবিধা পাচ্ছে সেখানেই ভিড়ে যাচ্ছে। পরন্তু এরা তৃণমূলের সভা-সমিতি থেকে
নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখেছে। পোস্টার মার্কিন। তৃণমূলের প্রত্যক্ষ সাহায্য না করেও এরা মৌচাক তৈরি করে ফেলছে। কিন্তু এদের আসল বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে এরা তৃণমূলে নিয়ে যেতে পারেননি। কারণ এদেরকে কখনও প্রকাশ্যে তৃণমূল কংগ্রেস করতে দেখা যায়নি। কারণ ভবিষ্যতে যাতে এরা যেকোনও দলে নাম লেখাতে পারে, সেই পথও সমানভাবে খুলে রেখেছেন। এমনকি এদের অনেকেই গোপনে বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, ফেসবুক গ্রুপেও নাম লিখিয়েও রেখেছেন। এরা তৃণমূলের তো বটেই অন্য দলের কাছেও রহস্যময় চরিত্র ও ক্ষতিকারক। এরা কিন্তু সবসময় গোপন সলাপরামর্শ করে থাকে, কেবলমাত্র নিজেদের অস্তিত্বরক্ষা করা ছাড়া এই সুবিধাবাদের আর দ্বিতীয় কোনও কাজ নেই। কিন্তু তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কের রমরমা জন্য তৃণমূল এই দিকটা একেবারেই খেয়াল করেনি। এদের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসেও বহু মানুষ যেতে পারেনি কিংবা এদের ঘৃণা করার জন্য ঘেন্নায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সব সময় তারা সরে থেকেছে। এইসব থার্ড গ্রেডের লোকেরাই বেশি আছে সরকারী দলে। তাই ভালো লোকজন আর যায়নি, গেলে তৃণমূলের নীচ তলায় এত বদনাম হোতো না। এরা না হোমে না যজ্ঞের।

⛔ ভালো লোক, শিক্ষিত মানুষ, সহজ-সরল মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বিজেপিতে চলে গেছে,
হিন্দুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও অনেকেই বিজেপিকে সঠিক পার্টি ভেবেছে। এইসব মানুষের কিন্তু এখন কোনও চাহিদা নেই। এই জনগোষ্ঠী কেবলমাত্র মনের স্বাধীনতা চেয়েছে। উচিত চেয়েছে। সম্মাননা চেয়েছে। সততা চেয়েছে। বাঁচতে চেয়েছে। বিজেপির উচিত হবে তাদের সম্মান জানানো। এই যে নীচুতলায় এইসব দীর্ঘদিন হয়ে চলেছে তা কখনোই কিন্তু কোনও দলের নেতারা জানতে পারেননা। কারণ যারাই বামে ছিল তারাই তৃণের লোকবল এবং এইসব রহস্যময় লোকের জন্য একদিকে ক্রমশ বিজেপির লোকবল বেড়েছে। তৃণমূলের আমলে কেউ হয়েছেন ক্লাবের সেক্রেটারি, কেউ মাতব্বর, কেউ কবিতার চর্চায়, কবি হয়ে গেছেন তো কেউ কেউ হয়েছেন গাইয়ে, ছোট সঞ্চালক থেকে বড় সঞ্চালক। কেউ পেয়েছেন সাতলাখ টাকা দিয়ে প্রাইমারির চাকরিও। বাম আমলের বহু অধ্যাপক, লেকচারার ও শিক্ষক কিন্তু গুছিয়ে নিলেও তারা মনেপ্রাণে বাম ছেড়ে চলে যাননি এখনও। আর যারা সম্মান, যত্ন, সততা, সভ্যতা চেয়েছেন তারা পড়েছিলেন একাকি হয়ে। এই ক'বছরে তারা কোনও দলে যাননি। তারা না বাম না তৃণমূলের। বাম ও নব্য তৃণমূলের লপরচপরে এই দল উপেক্ষিত হয়ে আছে অনেক কাল। একদিকে থেকে তাই বিজেপির নেতা-নেতৃত্ব
অন্যান্য দল থেকে এলেও নীচু তলার লোকেরা ৯/১০ বছর চুপচাপ বসে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে
এদের বিজেপিতে যেতে অসুবিধা হয়নি।

⛔ এই যে যারা তৃণমূলে সুবিধা পাচ্ছে কিংবা বামপন্থী দলেতে আছেন তারা সবাই মিলে চাননা কিছুতেই যেন বিজেপি আসতে না পারে। আর সব চেয়ে আশ্চর্যজনক এরাই ফেসবুকে ও হোয়াটসঅ্যাপে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসে আছেন। যার ফলে বামেদের ও তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস এইসব ঝামেলায় নেই। বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি পকেটে তারা শুধুমাত্র রাজনীতিটুকু করে থাকে।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কংগ্রেসি নেতাদের যত শত্রুতা থাকুক না কেন নীচু তলার বিজেপি ও অবশিষ্ট কংগ্রেস কর্মীদের কোনও ঝগড়া নেই। সম্ভবত শেষ মুহূর্তে এরা সবাই বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেবে।

⛔ বাম নেতারা যতই ভোটে নামুন আর জোট করুন, তারা জানেন তাদের পক্ষে ২০২১-এ জোট গড়লেও রাজ্যের ক্ষমতা অধিকার করা সম্ভব নয়। তাদের অত কষ্ট করে গড়া বাম দলের নেতা-মন্ত্রীরাও হাতে থাকেনি তাদের দলের আনুগত্যের মধ্যে। একটা সদস্য গড়ে তুলতে, পার্টি কর্মী থেকে লোকাল কমিটির মেম্বার হতে, কত কাঠখড় তারা পুড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু রাখতে পারেননি তাদের। নেতা করতে বাড়ির একগুষ্টি লোককে চাকরি, প্রফেসরি, পিএইচডি, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটির সদস্য কতকিছু করে দিয়েছেন। তবু তারা থাকেননি। তাই বামেদের এখন ভোটারের হিসাব বাড়ানো ছাড়া, দু একটা পঞ্চায়েত দখল রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। পার্টিতে বিমান বসু ছাড়াও এখনও বেশ কয়েকজন খাঁটি মানুষ আছেন যারা ১৯৬৯/৭০-এর মতন দলকে রক্ষা করে চলেছেন ও করে যাবেন। বামদল সবসময় অঙ্ক কষে দল চালনা করে। তারা বিলক্ষণ জানেন পার্টিচিঠি, পার্টিক্লাস, পার্টকর্মী কাকে বলে। এখনও তারা ভাল পার্টিকর্মী জোগাড় করতে পারছেন-- স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি থেকে। এখনও পর্যন্ত ওরাই যে আসল বামপন্থা টিঁকিয়ে রেখেছেন তা সকলেই জানেন। সংখ্যায় কম হলেও তারাই একমাত্র এখনও দলের সম্পদ। তৃণমূল কংগ্রেস আসার পর গ্রামেগঞ্জে তাদের দলের জনভিত্তি ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। তার একটি কারণ হলো গ্রামের শিক্ষিত গোষ্ঠী ভয়ে সিঁটিয়ে চুপ করে বসে গেছেন। এবিটিএ-র সদস্য থাকলেও তারা আর প্রকাশ্যে আসতে ভয় পান। তাদের গাড়ি বাড়ি সচ্ছলতা আসায় তারা সামাজিকভাবে লড়াইয়ের মাটি আঁকড়ে রাখতে পারেননি। এদিকে গ্রামীণ যে আদিবাসী গোষ্ঠী ছিল তাদের ভোট ব্যাঙ্ক সেখানে ফাটল ধরিয়েছে বিজেপি। দেখতে গেলে একমাত্র বিজেপির সঙ্গেই লড়াই চলছে তৃণমূলের। গ্রাম বা শহরে বামেরা তৃণমূলের সঙ্গে আর পাড়ায় পাড়ায় লড়াই করতে চায়নি, কারণ খুনখারাপি থেকে তারা পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বেশি নিয়েছেন। দলের কর্মীরা খুন হয়ে যাচ্ছিলেন, কিছুটা পিছিয়ে এসে তারা রক্ষা করতে পেরেছেন সদস্যদের বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন। প্রয়োজনে তারা লড়বেন ও আত্মরক্ষা করবেন। তাই তাদের প্রধান ও মুখ্য উদ্দেশ্য নীরবতা। সেই লক্ষ্য থেকে তারা নীরবতা বজায় রেখেছিল। সেই পুরস্কার স্বরূপ তৃণমূল কংগ্রেস এখন শহরে-গ্রামে সিপিএম বা বাম নেতাদের ডেকে এনে তাদের পার্টি অফিস খুলিয়েছে ২০২০-তে। কিন্তু শর্ত একটাই ভোট তাদের দিতে হবে। বামপন্থীরা খুনজখমের কেস থেকে, বেআইনি অস্ত্র রাখার কেস থেকে, গাঁজা কেস থেকে এখন অনেকটা মুক্তি পেয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে কয়েকজন এগিয়ে এসেছেন ও সফলতা পেয়েছেন। সফলতা বলতে
পার্টি অফিস খোলা, বাইক রাশি করা অথবা ছোটখাটো সভা করতে পারা। এখন সেইসূত্রে
পার্টি থেকে, গ্রামে-গঞ্জে একটু আধটু মিটিং মিছিল করতে পারছে। গ্রামের কয়েকজন মুসলমান পরিবার এখনও তাদের সঙ্গে রয়েছেন। বামপন্থীরা শ্রমিক, কৃষক ও মুসলমান আদিবাসীদের বন্ধু বলে আজও সমান প্রচার করে থাকেন। এখনও ৭% ভোটার তাদের সঙ্গে রয়েছে বলে মনে করেন। কলেজ ইউনিয়ন, ইউনিভার্সিটি এখনও তারা অনেকটা হাতে রেখেছেন। সঙ্গে কংগ্রেসদলকে তারা পাশে পেয়েছেন।

⛔ যদিও মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া ছাড়া কংগ্রেসের কোথাও তেমন আর সংগঠন নেই। অফিসগুলো অনেক সময় খোলা হয়না। অধিকাংশ তৃণমূলের দখলে চলে গেছে। তবুও সর্বভারতীয় ধর্ম-নিরপেক্ষ দল হিসেবে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা এখনও আছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে এখন সিপিএমের সংগঠনের সাহায্য নিয়েই কংগ্রেসের এখন টিঁকে থাকার মতো অবস্থা। বাম ও কংগ্রেসের জন্য সুখবর যে তারা আব্বাস সিদ্দিকীদের সঙ্গে হয়তো জোট করছেন। যদি তা করেন তবে বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে চিহ্নিত করতে তাদের আরও সুবিধা হবে এবং ভোটও বাড়াতে পারবেন। বিশেষ করে বিজেপির যেমন একটাই শত্রু তা হলো তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু বাম ও কংগ্রেসের দু-দুটো করে শত্রু। বাম-কংগ্রেসের প্রধান শত্রু কিন্তু বিজেপি। এখন বিজেপিকে আটকিয়ে তৃণমূলকে জেতানো ছাড়া বাম ও কংগ্রেসের হাতে নতুন কোনও ফর্মূলা নেই। এই গন্ডগোলের পথের জন্য, এই ধোঁয়াশা জিইয়ে রাখার জন্য আজ গ্রামে ও শহরে বিজেপির লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাম+কংগ্রেসের
অবস্থা দিন কে দিন খারাপ হয়ে চলেছে। তারা যতদিন না তাদের শত্রুপক্ষ চিহ্নিত করতে না পারবেন ততদিন তারা আর মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন না। যেহেতু তাদের এটাই নীতি তাই কোনোভাবেই তারা বিজেপিকে ছেড়ে বন্দুকের নল তৃণমূলের দিকে ঘোরাতে পারবে না।

⛔ বহুবার বলেছি শুভেন্দু অধিকারী এখন একাই একশো। ওদিকে সেই ক্ষমতা রাখেন আব্বাস সিদ্দিকীও। স্পষ্টতই ভোটের বাজার এখন দিনকে দিন গরম হয়ে উঠছে এই দুই নেতার আক্রমণাত্মক বক্তব্যের গুণে। এখন পর্যন্ত বিজেপির কোনও সভা ফ্লপ হয়নি। বিশাল লোক সমাগম হচ্ছে তাদের প্রতিটি সভায়। নির্বাচন কমিশন সঠিক ভাবে ভোট করাতে পারলে বিজেপির পাল্লা অনেকটা ভারি এখন পর্যন্ত। কারণ সরকার বিজেপির অগ্রগতি বুঝতে পেরে প্রায় প্রতিটি দিন, একের পর এক দানছত্র ঘোষণা করছে।

⛔ এখন প্রশ্ন বিজেপি কি ঠিক মতো ভোট করাতে পারবে ? যতটা তারা ভাবছেন। কারণ সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন প্যাঁচপয়জার জানা আছে ভোটের ক্ষেত্রে, তাদের কন্ট্রোল করবে কিন্তু তৃণমূল। বামেরা দীর্ঘদিন সরকারী কর্মচারীদের আদর যত্নে এই কারণে লালনপালন করেছিল। যাতে ভোটের দিন বিপক্ষে রিপোর্ট কিছু না দেন। ভোটের বুথ যদি বাম কংগ্রেস ও তৃণমূল দখল করে রাখে এবং ভোটাররা ভোট স্বাধীনভাবে ২০১১ সালের মতো যদি না দিতে পারে তবে বিজেপির জেতা ছন্নছাড়া হয়ে যাবে। কোথাও জিতবে কোথাও ডাহা হারবে। কারণ বিজেপির বুথে এজেন্ট কিন্তু টার্গেট হবেন পাড়ার পাড়ায়। সংস্কৃতি কর্মী থেকে সরকারী কর্মচারী ও শিক্ষকদের কাছ থেকেই বিজেপির বেশি বাধা আসবে। বুথ এজেন্টকে যদি ভোটের দিন বুথ থেকে বার করে দিতে পারে, নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে অথবা টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারে, তাহলে কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে রোখা মুস্কিল হবে। কারণ তাদের হাতে ভোটের প্রশাসনিক সমস্ত অস্ত্র আছে। আর বিজেপি ভোট করতে যাচ্ছে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে। দুটোর মধ্যে কোনও বোঝাপড়া নেই। বুথে বুথে সিপিএম কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ থেকে যাচ্ছে। সিপিএম যদি বিজেপিকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলেই তাদের কেল্লাফতে। কংগ্রেস ও তাদের মূল লক্ষ্য বিজেপিকে হারাতে হবে, তৃণমূলকে নয়। কারণ তাদের আক্রমণ বিজেপির দিকে। এর ফলে যা হতে পারে তা হলো আগামী দিনে কংগ্রেস ও বামপন্থীরা আরও দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাবে এবং বিজেপির উত্থান ক্রমবর্ধমান হবে। বিজেপিকে জিততে হলে বুথ ম্যানেজমেন্ট করতে হবে নিশ্ছিদ্র। শেষ পর্যন্ত
তৃণমূলকে জেতানোর দায়িত্ব তুলে নিতে পারে বাম ও কংগ্রেস। কারণ এরপর আর তাদের লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। তবে বিজেপির দিকে এখন সাচ্চা জনগণ জড়ো হয়েছে তাই দেখার শেষ পর্যন্ত কি হয় ? নির্বাচনের পর তৃণমূল কংগ্রেস বাম ও কংগ্রেস কি তবে এক হয়ে নিজেদের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট করতে পারে! সেক্ষেত্রে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সকলের লক্ষ্য বিজেপিকে হারাও। ©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...