শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

জাতীয় শিক্ষক

আমার জাতীয় শিক্ষক 
********************
এ রকম জাতীয় শিক্ষককেও আমি জানি যারা 
তাদের জীবনের আচরণ কোনো দিন পাল্টাতে 
পারেননি তবুও তারা জাতীয় শিক্ষক ।
১. নিজের অনেক জমি থাকলেও স্কুলের জন্যে এক টুকরো জমি দেননি ২. সিগারেট খাওয়া ছাড়েন নি 
৩. রাজনীতি করা ছাড়েননি ৩. কোনো স্কুল 
প্রতিষ্ঠার সংগে তার নাম একবারও  শোনা যায়নি 
৪. বাড়ি বাড়ি গিয়ে কখনো কোনো একটি ছাত্রেরও খোঁজ নেননি ৫. পরিবেশে রক্ষায় কোনো উদ্যোগ 
কিংবা গাছ লাগিয়ে তার নেতৃত্ব দিয়ে গোটা পরিবেশ পাল্টে দিতে পারেন নি । ৬  একটি ছেলেকেও বিনা পয়সার টিউশন দেননি ।  ৭. এমন কিছুই কৃচ্ছ সাধন করেননি যে জাতীয় শিক্ষক হতে পারেন ৮. স্কুলের সময়ের বাইরেও আগে স্কুলে এসেছেন এবং পরে
থেকে গিয়েছেন এটাও করেননি ৯. বিনা পয়সার কোচিন দিয়ে ছাত্রদের সাহায্যে এগিয়ে যাননি 
১০. নিজের পরিবার আর রাজনীতির বাইরে
কোনো কিছুই করেননি ১১. ছাত্রদের গায়ে হাত তুলেছেন ১২. ছাত্ররা সেই শিক্ষককে ভয় পেয়েছেন অতিরিক্ত শৃঙ্খলার জন্যে ১৩. কখনও অন্যান্য কলিগদের সাহায্যে এগিয়ে যাননি ১৪. সমাজের 
বন্ধু হতে পারেননি ১৫. খেলাধুলোয় ছাত্রদের অনন্য করেও গড়ে তুলতে তার সহায়তা নেই ১৬. নিজের 
জন্যে না ভেবে পরের হিতেই নিজের জীবন কে 
বিলিয়ে দেননি ১৭. কোনো কৃচ্ছসাধন নেই কিন্তু 
তারা কেউ গান জানেন কেউ আবৃত্তি করতে পারেন কেউ বই লিখেছেন কেউ ডক্টরেট করেছেন কেউ রক্তদান শিবিরে বক্তৃতা করেছেন । কেউ কেউ 
ভালো জীবন যাপন করেন কেউ কেউ পাথরের 
বাড়িতে থাকেন কেউ কেউ জাতীয় শিক্ষকের টাকা ফিক্সড করে দিয়েছেন কেউ কেউ জাতীয় শিক্ষক 
হয়ে আর ওদিকে পা মাড়াননি । কেউ কেউ শিক্ষক সংগঠনের মাথা হিসেবে মিটিং এ নিজের লোককে 
দিয়ে জাতীয় শিক্ষকের মনোনয়ন করিয়ে নিয়েছেন । তাবলে কি কোনো গুণী মানুষ ত্যাগী শিক্ষকরা 
জাতীয় শিক্ষক হননি । নিশ্চিত হয়েছেন । অনেক জাতীয় শিক্ষকের মধ্যে তাঁরাই হলেন আসল জাতীয় শিক্ষক যার জন্যে তাদের ছাত্রদের চোখে জল
এসে যায় । আমার জাতীয় শিক্ষক হাওড়ার 
শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক 
সামান্য গ্র্যাজুয়েট ইন্দুভূষণ চট্টোপাধ্যায় যিনি 
কোনো দিন সরকারি ভাবে জাতীয় শিক্ষকের 
সম্মান পাননি । হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন
ও শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে 
জড়িত ছিলেন ।

সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

অটলবিহারী বাজপেয়ী

রাজনীতি কত নোংরা আপনি দেখে গেছেন
সর্বশ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ! তবু তো ২০০৪ এ হেরে গেলেন আপনি । হায় রাম । হিন্দি সিনেমা -"পরমানু "
টা আর দেখা হলোনা আপনার । আপনার
গায়ে বাবরি মসজিদ ছিটে দাগের মতো হয়তো
লেগে রয়েছে , ওর আকার এত বড় যে আপনার
সর্বশিক্ষা অভিযানের রূপান্তর ,আপনার রাস্তাঘাট, আপনার পোখরান বিস্ময় ,আপনার যুক্তির পান্ডিত্যের রূপোলি উপমা , আপনার 
নদী সংযুক্তিকরণ , আপনার ইজরাইল চুক্তি,
আপনার কার্গিল জয় তার কাছে কিছু না 
আর তা ছাপিয়ে যখন সামনে আসে যে আপনি নাকি স্বাধীনতা সংগ্রামী নয় আসলে ফ্যাসিস্ট
তখন এই ভারতবাসীর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে
থাকলেও চলে । আপনাকে মুচলেকা দিয়ে
ছেড়েছে এই ভারত । আপনি আর দুঃখে কবিতাও লিখতে পারেননি শেষদিকে । 
শেষদিকে আর কারও সঙ্গে মিশতে 
চাইতেন না । না হাজার চেষ্টা করেও কেউ আপনার পালিতা কন্যার নামে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়া প্রমাণ করতে পারেনি ।
চেষ্টা করেছিল । মনে আছে আপনার ।
বলরাজ সাহানির মতো তুখোড় নাট্য ব্যক্তিত্বকে রাস্তায় রাস্তায় আপনার বিরুদ্ধে নাটক অভিনয়
করিয়ে জ‌ওহরলালজি এইসব ফন্দি এঁটে
ছিলেন । আপনার সুচারু যুক্তিযুক্ত বক্তব্য 
কোনো কাজে আসেনি পাঁচ বার আপনি হারের নায়ক । কাজ দেখে নয় রাজনৈতিক মানুষ 
চায় এই ভারত । রাজনীতিবিদ হয়েও 
রাজনৈতিক লড়াই কত নোংরা হয় তা আপনাকে
আমৃত্যু ছুঁয়ে গেছে বার বার । দিল্লী থেকে
জয়পুরের রাস্তায় মাইল মাইল জমি
নেই আপনার ট্রাস্টের নামে । দিলখোলা
আমুদে মানুষ ছিলেন বলে আপনি দক্ষ
সংগঠক‌ও ছিলেন না । আপনি সংগঠনকেও
মজবুত করতে জানতেন না । তবু আপনি
সহজ সরলভাবে জীবনের মূল্যবোধ অটল ছিলেন অটল হয়েই চলেগেলেন।
KISHAN CREDIT CARD । CROP INSURANCE । FOOD FOR ALL ।
কালাম সাহেব যে যোগ্য রাষ্ট্রপতি সে
ভাবনাও আপনার‌ই , তবু আপনি কতবার
নির্বাচনে হেরে গেলেন স্যার । সব কাজে আপনাকে প্রয়াণের দিনে আমাদের মনে পড়েছে , কিন্তু আমরা আপনাকে জেতাতে পারিনি । একদিক দিয়ে দেখলে আপনি একজন হেরো
মানুষ । কারণ জীবিত অবস্থায় সবাই চাইতো
আপনি যেন কিছুতেই পার্লামেন্টে ঢুকতে না 
পারেন । কারণ এই ভারতে আপনার যুক্তির
কাছে কেউ কোনদিন জিততে পারতো না ।
তাই সারাজীবন দেশের সেবা করে গেলেন ।
দেশ আপনাকে যে ভারতরত্ন দিয়েছে তার
থেকে আপনাকে জর্জরিত করেছে অনেক ।
শুধু মৃত্যুর পর‌ই জিতলেন কারণ আপনি
নির্বাচনে দাঁড়ালে হারানো যেতনা বলে আপনার
বিরোধী দলের কতরকমের ফন্দি আর যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে তার 
ঠিক নেই ।

®অলোক কুন্ডু

শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০

#Kargil

আজ স্বাধীনতা দিবস / অলোক কুন্ডু

আমি এখন কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়ালে প্রবেশ করেছি 
যেখানে মুসলমান শিখ হিন্দু ধর্মের ৫২৭ জন শহীদ জ‌ওয়ান চিরনিদ্রায় শুয়ে রয়েছেন
ইচ্ছে হলে আমার পেছনে আপনারাও আসতে পারেন
শত শহীদের রক্তমাখা এই ভূমিতে দাঁড়িয়ে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যাবে আপনার‌ও।
একজন জ‌ওয়ান এসে জানালেন কেউ যেন আমরা কথা না বলি 
ওদের ঘুম ভেঙে গেলে ওরা কার‌ও কথা শুনবে না
মাতৃভূমি বাঁচাতে ওরা যে বলিপ্রদত্ত।
২৬ শে জুলাই ওরা সকলেই জানতো আর হয়তো ফিরে আসবে না।
তাই ৫২৭ জন সকলের সঙ্গে গলায় গলা জড়িয়ে নিল 
বন্ধুদের কাছে শেষ ইচ্ছা জানিয়ে গেল।
কেউ একজন সুবেদার শোনাচ্ছেন সেই দিনের কথা
অকুতোভয় ৫২৭ জন সেনা জ‌ওয়ানের সেই লোমহর্ষক কাহিনী
কেউ কেউ অবাক হয়ে বফর্সকে দেখছে।
স্বেচ্ছায় শহীদ হ‌ওয়ার ব্রত নিয়েছিল যারা
তাদের ত্যাগ আর তীতিক্ষাকে গোলাপি পাথরে মুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এখানে
৫২৭ জনের নাম খোদাই করা শহীদস্তম্ভকে হাঁটু মুড়ে প্রণাম করছে অনেকে
প্রতিটি শহীদ স্তম্ভ প্রতিদিন মোছামুছি হয়
মন্দিরের থেকেও বড় তীর্থস্থান ভারতভূমি কার্গিলক্ষেত্র।
নাছোড়বান্দা সৈন্যদের তেজের গল্প 
মুখ থেকে সকলের হৃদয় হয়ে যেন সারা ভারতবর্ষজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে 
সে কাহিনী ব্যালাডের মতো
জলপাই রঙের পদাধিকারীকে ঘিরে ধরেছে শ্রোতারা 
শুনতে শুনতে টপটপ করে চোখের জল পড়ছে কজন মহিলার পুরুষদের‌ও
সেই গর্বিত কাহিনী বলে যাচ্ছেন যিনি তার চোখ‌ও চকচক করছে
চোখের জল কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না 
বাকরুদ্ধ সকলে পিন পড়লেও শোনা যাবে।
পাহাড়ের ওপর থেকে পাকিস্তানের জঙ্গি ও সেনারা ঘিরে নিয়েছে কার্গিল 
রকেটের সঙ্গে মূহুর্তেই ছুটে আসছে হাজার হাজার বুলেট
ঝাঁজরা হয়ে যাবে জেনেও পাহাড়ের ওপরে উঠে যাচ্ছে  
অকুতোভয় একদল ভারতসন্তান 
ওপরদিকে পাকিস্তানের সেনারা গুলিবন্দুক বোঝাই করে রেখেছে
কেউ কেউ মা গো বলে মুহূর্তেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে যাচ্ছে ধুপধাপ করে 
যারা উঠতে চেষ্টা করেছিল আর‌ও ওপরে
ওরা ছিন্নভিন্ন হয়ে শুয়ে পড়লো দেখতে দেখতে
আর‌ও একদল মরিয়া হয়ে উঠে যাচ্ছে
তারপর আর‌ও একদল তারপর আর‌ও
শেষে পাহাড়ের ওপর উঠে গিয়ে টুঁটি চেপে ধরেছে বাকিরা 
ততক্ষণে ৫২৭ জনের শরীর বুলেটে ঝাঁজরা হয়ে গেছে 
ছড়িয়ে ছিঠিয়ে পড়ে রয়েছে তরতাজা প্রাণ ভেসে যাচ্ছে রক্তে 
সতীর্থদের কাঁধে প্রাণহীন ৫২৭ জন ধীরে ধীরে নেমে এসেছিল সন্ধ্যায় 
কফিনে বন্দি হয়ে ফিরে গিয়েছিল বাড়ি
তাদের‌ই কথা শুনতে শুনতে বাকরুদ্ধ সকলে এখন
একজন বয়স্কা মহিলা এইমাত্র মাগো বলে ডুকরে কেঁদে উঠলেন
ধীর পায়ে ওয়ার মেমোরিয়াল থেকে বেরিয়ে আসছি 
লাউড স্পিকারে মৃদু স্বরে বাজছে হিন্দি সিনেমার গান- " এ মেরি জমিন মেহবুব মেরি"
একজন সেনা প্রত্যেকের হাতে একটি করে জাতীয় পতাকাযুক্ত স্মারক তুলে দিচ্ছেন
আজ স্বাধীনতা দিবস।
©® অলোক কুন্ডু

কার্গিল

■ ৭৪-তম স্বাধীনতা দিবস ও কার্গিল শ্রদ্ধা
■৩৭০ ও ৩৫/A প্রত্যাহারের মাত্র ১২ দিন আগে লাদাখ ও কাশ্মীরের একাংশ থেকে ঘুরে 
এসেছি , কলকাতার ডলফিন ট্রাভেলের সঙ্গে ‌। সবে ঘুরে আসার স্মৃতি টাটকা সবজির মতো
সবুজ হয়ে আছে । আমরা শ্রীনগর এয়ারপোর্টে
১৫.৭.১৯ -এ নেমে ওদের তিনটি ট্রাভেলরে চেপে র‌ওনা দিয়ে পুরনো কাশ্মীরকে আবার যে 
ফিরে দেখবো সে আশা কখনও না থাকলেও
স্বপ্ন একটা থেকেই গিয়েছিল । একটু ফ্রেস
হয়ে নিতে, ডলফিনের কাশ্মীর ডেরা অর্থাৎ
ডাললেকের গা-ঘেঁষে হোটেল প্যারাডাইসে গিয়ে নামলাম বেলা তখন ১ টা বেজেছে।
কতদিন পরে সেই স্বপ্নের ডাললেকের ধারে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সেদিনটা সোনমার্গে 
আমাদের স্টে করার কথা। আগামী কাল, পরের দিন জোজিলা হয়ে কার্গিল যাবো শুধু
তাই নয় কার্গিলে থাকবো এবং যাওয়ার পথে
কার্গিল যুদ্ধক্ষেত্রে ওয়ার মেমোরিয়ালের বীরভূমি ও বিজয় স্মারক দর্শন হবে, যা মন্দিরের থেকে কম কিছু নয়। মনে মনে এইসব ভেবে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো । আমরা সবাই মিলে ৩২/৩৩ জন আছি । সোনমার্গে স্টে করে পরের দিন কার্গিলের পথে যাত্রা শুরু হল নয়নাভিরাম দৃশ্যের পর দৃশ্য। নিসর্গের মনভোলানো রূপের পর রূপান্তরিত প্রকৃতি খুলে দিচ্ছে একের পর দিগন্তের ভূমিতল। 
এ শুধু চোখ ও মনকে সৌন্দর্য সঞ্চয়ের সময় বলে ধরে নিতে হবে । আমার বাড়ি কোথায় 
কে আমি এইসব স্বার্থপর ভাবনাগুলো যেন ডাললেকের জলে বিসর্জন দিয়ে এসেছি । পথের আর এক সৌভাগ্য অর্জন যা কোনোভাবেই দ্বিতীয়বার হ‌ওয়ার নয়।
শ্রীনগর থেকে সোনমার্গের আগে পর্যন্ত গ্রাম শহর মিলিয়ে নানা ছোটবড় জনপদ পড়ে । আধা শহর‌ও দেখা দেয় , কোথায় ধান, গম ও অন্যান্য চাষবাস হয়েছে। আমাদের তিনটে ট্রাভেলার হু হু করে ছুটে চলেছে জনপদ ধরে, ক্ষেতখামারের পাশ দিয়ে। কোনও বাড়ির বারান্দায় দু-তিনজন যুবতি এ-ওর গায়ে ঢলে পড়েছে। কখনও স্কুল কলেজ দেখতে দেখতে গেছি। সৌন্দর্য বিন্যাসের যেন বড় অভাব মাঝের জায়গায়। আপনার মন খারাপ করে দেবে। খুব অভাবি মনে হবে। ডাললেক , নাগিন লেকের সঙ্গে আশপাশের সমস্ত জনপদটাই সমতল। বড় দোতলা বাড়ি যেমন পড়ে তেমনি মলিন ছন্নছাড়া গ্রাম‌ও দেখতে পাওয়া যায়। ছিমছাম কোথাও নেই এই মাঝের ৫০ কিলোমিটার।প্রেতের মতো বাসস্ট্যান্ড। গাছহীন ভূমিও চোখে পড়বে। সবুজ, নবীন ক্ষেতের গা ঘেঁষে যেসব ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাড়ি গড়ে উঠেছে যেন তার কোথাও কোনও বিন্যাস নেই। কাশ্মীরের সেই সৌন্দর্য যা আমার বড় প্রিয়। ধুলোময় রাস্তা , জনহীন পথ, ফাঁকা দোকানপাট, খরিদ্দার নেই। এইসব জানলার গা ঘেঁষে চলে যাচ্ছিল হুটহাট করে। থামিয়ে নেমে দেখতে চাওয়ার বাসনা হলেও আমাদের গাড়ি ছুটছে গতবছর। এহেন কাশ্মীর দেখে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। এত পয়সা পেয়েছে কাশ্মীর! কোথায় সেইসব গেল? মনের মধ্যে এই প্রশ্ন আসতেই, ফারুক আবদুল্লার মুখটা ভেসে উঠে মিলিয়ে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিল এ বুঝি বা বাঙলার কোনও গ্রাম পার হচ্ছি । হেলেপড়া টিনের গ্র্যারেজ, গাছের গুঁড়িতে স্কুলের ছেলেমেয়েরা বসে আছে। লজঝড়ে, ঝড়ঝড়ে বাস দাঁড়িয়ে আছে। যেন যাওয়ার কোনও তাড়া নেই। দুটো কলা গাছ। ওদিকে শীতমহল্লার দু চারটে গাছ দাঁড়িয়েছিল। দূরে দূরে পর্বতশ্রেণির কাছাকাছি চিনার গাছের ছায়ার দুটো বালিকা কিছু খেলছিল। চৌকোনো দাগের ঘরে একপা দিয়ে ঘুঁটি সরাতে সরাতে এগোচ্ছে। দাগ‌ওলা ঘরের পাশে উবু হয়ে বসে চার-ছটি মেয়ে, হাতে চাটনির মতো কিছু। তবু যেন সেইসব নেহাত চাকচিক্যহীন গ্রামের মানুষের চোখেমুখে মানুষের ক্ষতি করার বাসনা দেখেছিলাম বলে, মনে পড়ছে না । একজন বুড়ি কাঁথা বিছিয়ে দাওয়ায় বসে ঠায় চেয়ে ছিল রাস্তায়। আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছিল কোথাও। বুড়িটার মুখের চামড়া কুঁচকে দাগ হয়েছে। কত বয়স হবে ১০০ ? ফর্সা টকটকে রঙ। কানে ইয়া বড় বড় ঝুমকো দুলছে। ওরা আমাদের মতো কৌতূহলী নয়। কানেকানে ফিসফিস করছেনা কেউ । মোড়ে মোড়ে সকলে দাঁড়িয়ে। কেউ পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যেতে পারবেনা। ধৈর্যের পরীক্ষায় ও পাশের আশায় যেন ঠায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওরা। কেউ স্কুটারে কেউ গাড়িতে, তো কেউ রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য যেন কেউ আগ্রহী নয়। এসবই আমার ভাবনা। কিন্তু বাস্তব বড় তেঁতো।
গা সয়ে গেছে যেন এইসব নাকাবন্দী জীবন যাপনে। আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে 
কাঁধ মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জানপ্রাণ 
ঢেলে দিচ্ছে স্থানীয় পুলিশ ও তাদের ইন্সপেক্টররা । উর্দি ভিজে ঘাম বুকেপিঠে জড়িয়ে রয়েছে আষ্টেপৃষ্ঠে। পাবলিকদের মধ্যে কোনও টানাপোড়েন নেই। ওরা সবাই আটকে পড়েছে, অমরনাথের যাত্রীদের যাওয়ার রুটের মাঝে পড়ে গেছে বলে। আমরাও সঙ্গী এখন অমরনাথ যাত্রীদের। গাড়িতে বসে আছি। যেতে যেতে থামছে। তো আবার চলতে শুরু করেছে । হাসছি রগঢ় করছি নিজেদের মধ্যে। বাসের ড্রাইভারের সঙ্গে রাজনীতির কথা হচ্ছে। ওর কোনও দিকে থাকার মন নেই । ব্রেক, গিয়ার আর পুলিশের আঙুলের দিকে মন দিয়ে রেখেছে স্পষ্ট, একাগ্রতা মানুষের আপাদমস্তকে কাজ করে। আধাসেনায় এখন মোড়া রয়েছে কাশ্মীরের শহর গ্রাম গঞ্জ। বাসের লটবহরের সঙ্গে সতর্ক প্রহরা । কাশ্মীরের মধ্যবয়সী পুলিশরাও ঘেমেনেয়ে চান । দেখে মনে হচ্ছে ওরাও ভীষণ কর্তব্যপরায়ণ , নিজের এলাকা দিয়ে অতিথিদের পাশ করানোর গুরুদায়িত্ব ওদের কাঁধে। রুমালে মুখ মুচছে টকটকে গাল খাঁকি পোষাক চামড়ার ব্লেট , বাজুতে বুকে ব্যাজ নিয়ে রাজপুত্তুরের থেকে কম নন এরা সৌন্দর্যের আলোচনা ওদের নিয়ে। হুহু করে বাসের ঝাঁক এগিয়ে চলেছে সোনমার্গের দিকে। যেন জলের মধ্যে মাছের সারি দুলছে। আমাদের তিনজন ড্রাইভার,তারা চশমেসাই পেরতে পেরতে আমাদের গাড়িগুলিকে ভিড়িয়ে দিয়েছিল একেবারে হাই অ্যালার্ট টপ সিকিউরিটিতে মোড়া অমরনাথের গোটা তিরিশ কি তার‌ও বেশি ভেইকেলের সঙ্গে। আমরা চলেছি বাসের লেজ ধরে ধরে। কিন্তু ওইসব বাসে দু তিনরকম স্টিকার মারা তবুও আমরাও চলন্ত অবস্থায় ওই এক‌ই সম্মান পাচ্ছি । বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা জ‌ওয়ানদের দৃষ্টি জানলার মুখগুলোকে তীক্ষ্ণভাবে দেখে নিচ্ছে । বারবার ক্যামেরা লুকোতে হচ্ছে । একটা ক্যামেরায় ভিডিও সমানে চলছে (পরে এইসব দেশের স্বার্থে মুছে দিয়েছি) পেরিয়ে যাচ্ছি ডাললেক, নাগিন লেক, ইউনিভার্সিটি পোস্ট অফিস। হজরতবাল রোড ধরে বরাবর চলেছি, যেতে হবে ৮০ কিমি। হজরতবালের সৈয়দ-এ-আলম মসজিদ , হেল্থ সেন্টার, গেস্ট হাউস পার্ক, তাজদার মসজিদ, নাসিম মোটরস, অসংখ্য পেট্রোল পাম্প পড়ছে সোনমার্গ পর্যন্ত ৮০ কিমি এই পথে। গমের সবুজ ক্ষেত কোথাও কোথাও আর‌ও সবুজ ধানক্ষেত, কিছু অন্য সবজি ক্ষেত বাজারের মধ্যে ফাঁকা দোকান। কোথাও ভিড় বাদুড়ঝোলা বাস দাঁড়িয়ে লোক নামাচ্ছে। পেরিয়ে গেলাম তাজদার কলোনির মোড়,
জাকুরা পুলিশ থানা। পথে পড়লো লালবাবাসাহিব গুরুদ্বার, জামিয়া মসজিদকে ডানদিকে রেখে বাসের দল ও সুরক্ষা বাহিনীর অধীনে চলেছি আমরা, এবড় পাওনা। এ যে এমন উপরি পাওনা চিরকালীন অভিজ্ঞতা।
অবাক হয়ে ফিসফিস কথাবার্তা হচ্ছে বাসের ভেতর। মাঝেমধ্যে আমার ব‌উয়ের কিছু রসালো কথায় সারাবাস যোগ দিয়ে পরক্ষনেই চুপ। থেমে গেছে গাড়ি। ক্যামেরার মুখের লুকোচুরি হচ্ছে। কখন যেন কঙ্গনে ঢুকে পড়েছি এখান থেকে শুরু হয়ে গেছে লে-শ্রীনগর হাইওয়ে। এইপথের ওপরে পড়বে কার্গিল। গন্ডরবাল জেলার মধ্যে সোনমার্গ তখনও সমতল। একটু একটু চড়াই উঠছে তবে বাঁকের পাহাড় নয়। কাশ্মীর যেন কাশ্মীর নয়
চারপাশে চাষের জমি। গ্যারেজের কাছে ক্যানাস্তারা পেটাবার শব্দ। পথের পাশে নির্বাক দাঁড়ানো কাশ্মীরী কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে
মেয়েরা। বোরখা হিজাব খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। প্রায় মেয়ে ও মহিলাদের মাথায় গলায় গায়ে ওড়নায় মোড়া , পথে ঠান্ডার কোনও টের নেই। পলিটেকনিক কলেজ, গুলাববাগের সরকারি বালিকা বিদ্যালয় দোকানপাট থেকে থেকে পার হচ্ছে হু হু করে।  ডানদিকে সিন্ধুর কোনও শাখা ধরে নিয়েছে গাড়ি। পথের শোভায় ঝিলমের উপনদীও কোথাও কোথাও যুক্ত হয়েছে। এদিকে পহেলগামের লিডারের শোভা নেই। মাঝখানে
রাজাধাবার কাছে ৩.৩০ এর সময় আমাদের
খাওয়ানো হবে বলে তিনটি ট্রাভেলার গাড়ি বাসের সিকিউরিটি লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে ডানদিক করে সামনে বহে চলা তীব্র খরস্রোতা নদীর গর্জনের কাছে থেমে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ধরলো আধা সামরিক বাহিনী শেষে স্থানীয়রা বোঝাতে এবং বাসে অমরনাথের সিকিউরিটি চেকিং স্টিকার না থাকায় ওরা নিষ্কৃতি দিল। আমাদের ফেলে পথে মিলিয়ে গেলে অমরনাথের লটবহর। ওরা গেল কিছু দূরে অবস্থিত বালতালের অমরনাথের ছাউনিতে । কিন্তু সারাপথে নিরাপত্তা রক্ষিরা একমাস ঠায় দাঁড়িয়ে ডিউটিরত ২৪ ঘন্টা। কী অসম্ভব তাদের সদাজাগ্রত ডিউটি ও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, অবিচল থামের মতো দেশের সুরক্ষা মাথায় নিয়ে সারাদিন সারারাত সমগ্র পথজুড়ে এরা পাহারায় । এইবারের মতো ৭৩ বছরে এরকম নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা কোনও দিন দেখেনি কাশ্মীরের জনগণ। তারাও বেশ অবাক হয়েছে, মিডিয়ায় হৈচৈ হচ্ছে। তবু তারা এই ঝঞ্ঝাট মেনে নিচ্ছে কারণ তাদের সারাবছরের রুজিরোজগার জড়িত। তাই অতিথিদের ফিরে যাওয়া ও আসার নির্বিঘ্ন পথ করে দিতে ঘন্টার পর ঘন্টা পথের কষ্ট তারা সয়ে নিচ্ছে। কাগজে টিভিতে নেতারা বিস্তর সমালোচনা করছে এই নিরাপত্তার। তবু কিছু বলার নেই আধা সামরিক বাহিনী ও কাশ্মীরী পুলিশ যৌথভাবে এই নিরাপত্তার কোনও ত্রুটি রাখেনি। এই দেখার প্রমাণ আমাদের ডলফিন ট্রাভেলের সবাই । সেনাবাহিনীকে তাদের অসীম ধৈর্য্যকে তারিফ করতে করতে চলেছি আমরা। তখনও কেউ জানেনা যে এই নিরাপত্তার আয়োজন আসলে ৩৭০ ধারা রদের। এই নিরাপত্তার কারণে আমাদের ড্রাইভাররা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দোষ দিচ্ছে, তারাও আন্দাজে বলছে। তবু আমাদের কাছে এ এক নতুন অভিযান। নতুন এক অভিজ্ঞতা। মিলিটারি, সামরিক সাজ-সরঞ্জামাদি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেছে। এতক্ষণ যাচ্ছিল লাম আগে পেছনে অন্তত ৩০ রকমের সামরিক গাড়ি,জ্যামার বম ডিসপোসাল, ভিডিও,টিভ, রেডক্রস,কাশ্মীরী পুলিশের গাড়ি। থামলেই তাদের অবিরাম গাড়ি থেকে ঝপাঝপ নেমেপড়া, হুইসেল হুইসেলে কান পাতা দায়। হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নানা সাইজের। রাস্তার মোড়ে মোড়ে অধীর জনতা গাড়ি আটকে। হেঁটেও যাওয়ার অনুমতি নেই।
নজিরবিহীন নজরদারি। পথে ১০০ হাত অন্তর দু-তিন জন করে জ‌ওয়ান আগলাচ্ছে স্হানীয় শৃঙ্খলা। আগামী কাল পথে পড়বে দ্রাস যেখানে শীতকালে মাইনাস ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা নেমে যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় ঠান্ডি জায়গা হিসেবে বিখ্যাত। এখান থেকে মানুষের শরীরে রক্তের শক্তিশালীতা বেশি করে থাকতে হবে । বাড়িতে যেদিন ফিরে এলাম সেইদিন কার্গিল দিবস পালিত হচ্ছে সারা দেশে। টিভি খুলে মনে হলো আমরা কার্গিলেই তো আছি। তখন‌ও আমরা
কেউ জানিনা যে কী হতে যাচ্ছে কাশ্মীর ও লাদাখজুড়ে । ছটা ডিভাইসে হাজার ছবি শতশত ভিডিও তুলে এনেছি। এমনকি মিনি ডিভির ক্যাসটগুলো সিডি করতে কবে দেব ভাবিনি। ১৯৪৭ ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হলো এবং ধর্মীয় পথে বিশেষ করে পাকিস্তানের উদয় হলো । সংখ্যালঘু হিন্দু নিয়ে বৃহত্তর কাশ্মীর রাজতন্ত্র নিয়ে থেকে গেল। তাতে লাদাখের মতো বৃহত্তম জনপদ‌ও কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। লে ও কার্গিল যে লাদাখ রিজিয়নের বৃহত্তম জনপদ আগে থাকতেই ছিল সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কার্গিলের দূরত্ব দ্রাস থেকে ৬০ কিমি। ২৩৪ কিমি দূরত্ব লে থেকে এবং ২০৪ কিমি দূরত্ব শ্রীনগর থেকে। তবে কার্গিল পুনরুদ্ধারের আগে এই কার্গিল জনপথের কাছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অনেকবার এল‌ওসি ক্রস করে চলে এসে গোলাগুলি চালিয়ে ছিল। পারভেজ মুশারফ কার‌ও কথাই শোনেন নি। সেনাবাহিনীর প্রধান তখন তিনি। আসলে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট অঞ্চলের মধ্যে স্কার্দু হয়ে কার্গিল থেকে প্রাচীন কালে যে সিল্ক রুট চালু ছিল কারকোরাম পর্বত শ্রেণির অঙ্গ হিসেবে ওটাই ছিল পাকিস্তানে প্রবেশের সহজ পথ এশিয়ার অন্যান্য জায়গা এবং চীন আফগানিস্তানে যাওয়ার আদি পথ । সেই পথ এখন পাকিস্তানের হাইওয়ে । কার্গিলের আশেপাশে পাকিস্তানের বর্ডার লাইন কখনও কখন‌ও খুব কাছে চলে এসেছে । পাকিস্তান হয়ে নদী ঢুকেছে এখানে। এখনও দু দেশে আত্মীয় স্বজনের লুকোছাপা যাতায়াত প্রবহমান এই কার্গিলে। ভারত, কার্গিলের রাস্তা ঘুরিয়ে জাস্করের দিকে ভারতে অবস্থিত সঙ্গমস্থল বরাবর এন এইচ-১ তৈরি করেছে নতুন করে এবং লের দিকে নতুন যোগাযোগ তৈরি করেছে যদিও একমাত্র বাসরুট
চালু আছে মানালি বাস টার্মিনাস থেকে লে 
পর্যন্ত। দু দিক দিয়ে লে যাওয়া যায়। মানালি থেকে রোটাংপাস হয়ে আর আমরা যাচ্ছি অন্য পথে। মানালি থেকে রোজ বাস ভোর ৪.৩০ ছাড়ে দুই দিক থেকে। কার্গিল ও লাদাখ বাঁচাতে ভারতের নতুন তৈরি পথ জোজিলা যুক্ত করে। আসলে কার্গিল যুদ্ধের স্থান থেকে কার্গিল ব্লক হেডকোয়ার্টারের দূরত্ব ৩০/৪০ কিমি হবে । পাকিস্তান চেয়েছিল এই লে-শ্রীনগর রোডকে কেটে দিয়ে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে এবং তারা প্রায় সফল‌ও হয়েছিলেন এবং প্রায় দখল নিয়েছিল এই সংযোগকারী ন্যাশনাল হাইওয়েকে। দু মাস তিন সপ্তাহ দু দিন তুমুল লড়াই চলেছিল।
৫২৭ জন বীর সেনা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন আহত হয়েছিলেন ঢের বেশি। হিসেব মতো ১৩৬৩ জন। যদিও ১৯৪৭-৪৮ ভারত পাকিস্তানের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল হিন্দু রাজা হরি সিংয়ের আমন্ত্রণে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। তখনই ১৯৪৯ সালে সিল্করুটকে তখনই ভারত সিল করে দেয়। ১৯৯৯ সালের ২ মে থেকে ২৬ জুলাই কার্গিলকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল পাকিস্তানের সেনারা। পাহাড়ের 
উপর থেকে চোখ রাখা যায় এই কার্গিল-লে হাইওয়েকে প্রায় সোজা ১০০ কিমি পথ। এখনও আমাদের পথের ধারে দু চারটি এদিকে ওদিকে কামান পাকিস্তানের দিকে তাক করা আছে কিন্তু কোনও চৌকি নেই পাহার‌ও নেই। আমরা যখন লাদাখে ৮ দিন ছিলাম তখন‌ই ভারতীয় সেনাবাহিনীর পজিশন শুরু হয়ে গেছে কিন্তু কেউ কিছু বোঝেনি। বিপুল সংখ্যায় সেনাবাহিনী লাদাখ ঘিরে রেখেছে । হ্যাঁ যা বলছিলাম কার্গিল যুদ্ধের সময় বফর্স কামান
এবং আকাশ পথে আক্রমণ করে কার্গিলকে ভারত কব্জায় নেয়। বুক পেতে দিয়ে সেনারা মার খেতে খেতে পাহাড়ে শেষ পর্যন্ত উঠে যায়।ভারতের এই কার্গিল পুনরোদ্ধারের নাম ছিল -"বিজয়" । ১৭৩ কিমি দূরে বাতালিক সেক্টরের স্কার্দু থেকে পাকিস্তান যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকে আর বহুমুখী আক্রমণে। পারভেজ মুশারফ আসলে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সর্বময় কর্তা হতে যে চেয়েছিল কার্গিল দখল করে তিনি সেটা পাকিস্তানবাসীকে একটা বার্তা দিতে চয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় জ‌ওয়ানদের জেদের কাছে সামরিক বাহিনী তাদের জ‌ওয়ানের মৃত্যুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দুরন্ত সাহসের কাছে পাকিস্তান শেষে হার মানে। অবশেষে কার্গিল ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। হাই অলটিচ্যিউট যুদ্ধ হিসেবে কার্গিলের যুদ্ধ পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে আছে । বেইমান পাকিস্তানী সেনারা নিয়ম ভেঙে অযাচিতভাবে পাহাড়ের ওপর থেকে কার্গিলের রোড বরাবর গোলাবারুদ ছোঁড়া এবং পাহাড়ের ওপর থেকে ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচের সুবিধার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করেছিল ২০ বছর আগে। শেষে ভারতীয় জ‌ওয়ানরা মরবে জেনেও বুক পেতে দিয়ে পাহাড়ের মাথায় উঠে যায় এবং 
নিজেদের ভূমির দখল নেয় । তখন থেকেই
পাহাড়ের উঁচু স্থানগুলোতে নতুনভাবে চৌকি
তৈরি হয়েছে । মুশারফ জমানায় কার্গিল কলঙ্ক
পাকিস্তানের এক দুর্বল রণনীতির দৃষ্টান্ত
হয়ে আছে। যদিও পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ন‌ওয়াজ সরিফ কার্গিল যুদ্ধের দায় নেননি । পরে ইউএনও সাহায্যে শান্তি চুক্তিতে পাকিস্তান 
স্বাক্ষর করে। আমি কার্গিল যখন যাই তখন ওখানে সামরিক বাহিনীর মহড়া চলছে (১৬.৭.১৯)। গান বাজনা ঝালানো চলছে। কোথায় নাচ হবে তার দাগ দেওয়া চলছে। দ্রাসের কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল রঙ হচ্ছে, সমাধিস্থলে তখন দেশাত্মবোধক গানের মহড়ায় আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। চোখ ভিজে যাচ্ছে শুনতে শুনতে, রেকর্ড পড়তে পড়তে। নাচের দলের জন্য জায়গার মাপজোখ চলছে মহিলাদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর। শিবিরের চতুর্দিকে সাজো সাজো 
রব। মিলিটারি ব্যান্ডে বন্দে মাতরম বেজে চলেছে, নিজের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনাকে প্রশমিত করে ওয়ার মেমোরিয়াল ঘুরে 
দেখলাম। জীবন যেন ধন্য হয়ে গেল। শত শহীদের রক্তমাখা ওইভূমি ছেড়ে যেতে
মন চাইছে না মাত্র ৫ হাত দূর থেকে বফর্সকে
সকলে অবাক হয়ে মিলিয়ে নিচ্ছে। আমরা যাবো কার্গিল শহরের দিকে, হিন্দু মুসলমান শিখ সব ধর্মের যে ৫২৭ জন শহীদ জ‌ওয়ান মৃত্যু বরণ করেছিল। শোনা গেল তারা স্বেচ্ছায় এই ব্রত মেনে নিয়েছিল। তারা সকলেই জানতো আর ফিরে আসবে না। তাদের ত্যাগ আর তীতিক্ষাকে কিছুতেই মেলাতে পারছিনা আমাদের এই স্বার্থপর ধান্দাবাজ রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রের বাবুগিরিসুলভ আচরণসুলভে। নাছোড়বান্দা সৈন্যদের তেজের গল্প মুখ থেকে মুখে ছড়াচ্ছে। চোখের জল রোখা যাচ্ছে না কিছুতেই। মেজরদের ঘিরে ধরে বড় পদাধিকারীকে ঘিরে ধরে এক এক জায়গায় দর্শকরা আরও গর্বিত কাহিনী শুনতে চান। কথা শুনতে চায়নি জ‌ওয়ানরা এমনই তেজদীপ্ত তারা। ওপরে ওত পেতে লুকিয়ে আছে জেনেও স্বেচ্ছায় একটা রাইফেল নিয়ে কয়েকজন ধোঁকা দিতে উঠে গিয়েছিল যাতে তারা গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেলেও পেছনের বাহিনী পাহাড়ের মাথা দখল নিতে পারে। এই দুঃশাসহের মর্ম কাটমানি খাওয়া শখের নেতারা কিই বা বুঝবে। এইসব শুনতে শুনতে মাথা নীচু হয়ে গেছে। বাকরুদ্ধ সকলে। বাসে উঠে কিছুক্ষণ নিথর হয়ে গেল শরীর।
শ্রীনগর থেকে জোজিলা পাস হয়ে পড়বে 
দ্রাস। দ্রাসের ঠান্ডা পৃথিবী বিখ্যাত। তার পরেই পড়ে বিখ্যাত কার্গিল শহীদ মিউজিয়াম।  আমাদের সেদিন থাকার ছিল কার্গিল শহরে। একটু দূরে। কার্গিল শহরের আগে এই বীরভূমি
যেন মন্দিরের পুজো নিতে ব্যস্ত। যেখানে মৃত্যুকে জয় করে দুমাস বাদে পাহাড়ে উঠে যায় সেনাবাহিনী, উপর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি সহ্য করে কে আগে জান দেবে এই প্রতিযোগিতায় নামে তারা। শেষে সেনারা বিজয় ছিনিয়ে নেয় সঙ্গে বফর্স কামান ও উপরে বায়ুসেনার রকেট । জয় এসেছিল ২৬ শে জুলাই আমরা গিয়ে পড়েছি ১৬/৭/১৯।মিলিটারি ব্যান্ডের জবরদস্ত মহড়া চলছে তখন। এখানেই তারা শায়িত রয়েছেন সারসার,
অসীম সাহসী ৫২৭ জন ভারতীয় বাহিনীর জ‌ওয়ানের জীবন, যারা সবাইমিলে হিন্দু মুসলমান শিখ নেপালির ঊর্দ্ধ্বে চিরকাল থেকে
গেলেন । ©® অলোক কুন্ডু

Independence Day

■একটি কাল্পনিক পতাকা উত্তোলন
■ অলোক কুন্ডু

এমন ভাবখানা দেখালেন যেন আপনি ও             
আপনারাই স্বাধীনতা এনেছেন
এমন অংহকারি ভঙ্গিতে পতাকা তুললেন
যেন আপনারাই সিপাহি ছিলেন এদেশের ।

দড়িটা ঠিকমতো খুলছিল না বলে
প্রাইমারির মাষ্টারমশাই বেচারাকে
মনে করলেন আপনার বাড়ির চাকর 
আপনার তাকানোয় স্বাধীনতা গুমরে উঠলো ।

কাদায় আপনার নতুন জুতো জোড়ায়
দাগ লেগে গেল বলে বেজায় বিরক্তি এখন চোখেমুখে
ওদের দেওয়া চা মিষ্টি ছুঁয়েও দেখলেন না
ক্লাস ফোরের মেয়েটা ফিরিয়ে নিয়ে গেল ।

পতাকার মাঝে বাঁধা ফুলগুলো ছড়ায়নি কেন
এই কৈফিয়তে মাষ্টারের কান তখন লাল
মিহি গলায় তবু সম্মান দিতে কার্পণ্য ছিলনা এতটুকু
লা-ওপালার কাপ ডিস কিনে এনেছিলেন যত্নে ।

আপনার ধোপদুরস্ত পোশাক থেকে 
সুগন্ধিগুলো ঠিকমতো ছড়াচ্ছিল কি না 
আর সেই গন্ধে আশপাশ কেমন ম ম করছিল
তাও যাচাই করে নিচ্ছিলেন সুদক্ষ নিরিক্ষায় ।

জোড়হাত করে এতক্ষণ যে ছেলেমেয়েগুলো
দাঁড়িয়েছিল অবাক বিস্ময়ে গাইছিল গান
তাদের দিকে একবারও ফিরে তাকালেন না
আপনার বক্তৃতায় ১৯৪৭ থেকে ২০২০ চলছে ।

তটস্থ দাঁড়িয়ে তখনও প্রাইমারির ছেলেমেয়েগুলো
আপনার দুর্বোধ্য বক্তব্যের উচ্চারণ ততক্ষণে
পেরিয়ে যাচ্ছে মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত
মাইক দেখে ঢুকে পড়া আগুন্তক শ্রোতা‌।

একটা তেরঙ্গা কাটা ঘুড়ি সভার কাছে আসতেই 
ছেলেমেয়েগুলো লাইন ভেঙে দিল হুড়মুড় করে 
উপস্থিত সকলকে অবাক করে কাটা ঘুড়ি তখন
পতাকার সাথে জড়িয়ে উড়তে শুরু করেছে।

আপনি তবুও বলে চলেছেন স্বাধীনতার মানে 
বলে চলেছেন সংবিধান থেকে শিক্ষা
স্বাস্থ্য থেকে সিয়াচেন সম্প্রীতি থেকে সততা  
সভ্যতা না শৃঙ্খলা কোনটা বেশি দামি।

প্রসঙ্গের অবতারণায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে অভিভাবকদের মুখ থেকে মুখের জড়তা
গোবেচারা মানুষ গুলো কীভাবে জানবে এইসব
আপনিও ঘেমে নেয়ে ততক্ষণে ভেবেছেন কেমন দিলেন এদের।

৭৪ বছর ধরে শুনে যাওয়া সেইসব কথাগুলো 
ততক্ষণে পতাকা থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাওয়া কাটা ঘুড়ির মতো বাতাসে লাট খেতে লাগলো
ছেলের দল চিৎকার করে উঠলো--ভো কাট্টা ।
©® অলোক কুন্ডু
( সঙ্গের ছবি: লাদাখ থেকে তোলা গতবছর)

বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০

অলোক কুন্ডুর কবিতা/ মহা প্রসাদের অপেক্ষায়

■ মহাপ্রসাদের অপেক্ষায় / অলোক কুন্ডু

আত্মপক্ষ সমর্থন না করেই মনুষ্যত্বের স্বরূপগুলি ফুরিয়ে যেতে বসেছে
ফুরোতে ফুরোতে জেলখানার এক্সিট পয়েন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি আর
তবু বাসি ঘটনাগুলির ঝাড়পোঁছ করলে মণিমুক্ত উদ্ধার করতে পারা যায় দু-চারদিন 
মস্তিষ্ক চিন্তার বিস্ফোরণ বুঝতে পারে
তারপর আবার বদ্ধ জলাশয় সেই পানাপুকুর 
ছিপ ফেলে চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়া।

কিন্তু কিইবা করার থাকে শূন্যস্থান নিয়ে !
বুদবুদের সৌন্দর্য বালকের কাছে মুক্তোর মতো 
ফানুস উড়িয়ে দিলে একরকম অপ্রয়োজনীয় অহংকার জন্ম নেয়
বুদবুদ মিলিয়ে যায় ফানুসের‌ও শব্দ হয় না 
তারপর এদিকে সেদিকে পটকায় অনিবার্য আগুন
পাতাল থেকে উঠে আসে আনন্দ হুল্লোড়ের হৈচৈ
জয়ের ধ্বনি শুনতে চাওয়া সেও তো নেশার মতো 
বাহবাগুলো গুরুত্বপূর্ণ করে দেখাতে পারলে নেশা বাড়তে থাকে
আয়োজনের কৌতুকে ঢাক বাজতে শুরু করে
যা দুর্যোধন‌ও বোঝেনি
কানের ভেতর ওই ধ্বনি ধীরে ধীরে ধ্বংসস্তুপ গড়ে তোলে
বুক চাপড়াতে থাকা গরিবের হা-হুতাসগুলো শতচ্ছিন্নের মতো ধুলিস্মাৎ 
সিংহাসনের সিংহভাগ ছলচাতুরি খেলে যায়
দাবিসমূহকে ভেঙে চুরচুর করতে থাকে শক্তি
প্রতিবাদগুলো বোবা কালার মতো মুষড়ে যায়
সাজানো বাহবাগুলি ভেতর ভেতর তবু অস্ত্রের মতো ঝকঝকে।

বিপদ সংকেতের অর্থ বোঝা বিস্তর অবুঝ বিষয়
ক্ষমতার আস্ফালনগুলি তামাটে লজঝড়ে
ছেঁড়া কাগজের ওপর আঠা দিয়ে দিয়ে তৈরি
তারপর আরও ছেঁড়া কাগজ তারপর রাংতা
মুখোশধারী জানে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা চাই
এমন সৌন্দর্যকে মুখোশ‌ই তো বলে
বুদবুদ -মুখোশ-পতাকার ওড়াউড়ি
এইসব কিছু গরিবের কাছে ক্ষণস্থায়ী আনন্দ 
এই আনন্দের পরতে পরতে বিদ্রুপের ঝাঁজ
মৃতপ্রায় মগজের ঘিলু তখন জড় হয় মগডালে
যেখানে এক‌ইরকমের অনেক পতাকা পর পর সাজানো।

ফন্দিফিকিরের যত হাততালি জড়ো হয় 
জয়ধ্বনির তেজে 
নিঃস্ব পতাকায় আর বাতাস লাগতে চায়না
তবু একগুঁয়ে একরোখা আগ্রাসী মতামতের বাড়বাড়ন্ত
আচরণগুলি মহিমান্বিত হয় কাড়ানাকড়ার শব্দে
জানলা বারান্দা উপচে দেয় লাখো নকল হাতের নড়াচড়া
চতুর্দিকে ফটাফট ছবি উঠতে থাকে 
রঙের চতুর বাহারে তখন রমরম করতে থাকে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল 
কৌরবকূল দ্রোন শতশত হাজির ওইপথে
মন্দ ঢাকার প্রক্রিয়া এইভাবে হতে শুরু 
মুখোশের সৌন্দর্য উপভোগ উৎসব পালনে
বাসনায় যুক্ত হয় ঢাক ঢোল কাঁসি জগঝম্প
শব্দবাজিতে হুলস্থুল হয় চতুর্দিক
দম্ভসমূহ নকল বারুদ সঞ্চয় করে বুদবুদের মতো
মুখোশের কারুকাজে অলঙ্কার ঝলমল করে
সোনালি রূপোলি রঙের কত না সম্ভার 
ধেয়ে যেতে চাওয়া অনিবার্য ধ্বংসের দিকে 
প্রতিটি বিষপাত্র জানে অমৃত কতটা 
প্রজারা দলে দলে ওই মহাপ্রসাদের অপেক্ষায় এসে দাঁড়িয়েছে।
© অলোক কুন্ডু

বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০

Vitamin-C written by Alok Kundu

#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা

#CoronavirusLockdown #COVID19PH #COVID19 #CoronavirusPandemic #coronavirus 

#ভিটামিন_সি

■ বিজ্ঞানী ইন্দুভূষণ চট্টোপাধ্যায় ১৯৩০-এ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বরিশালে। রসায়ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বরিশালে কিন্তু ৪৬ -এর দাঙ্গায় অর্ধেক পড়ে সেন্টজেভিয়ার্স ছেড়ে কলকাতা চলে আসেন। কলকাতায় দুবছর পর ওই রসায়ন  নিয়ে স্কটিশে ভর্তি হন। এখানেই গবেষণা অ্যাসকরবেটিক অ্যাসিড নিয়ে। তাঁর থিসিসকে মান্যতা দেন ভিটামিন-সি এর আবিষ্কর্তা স্বয়ং চার্লস গ্লেন কিং। তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-রসায়নের গবেষক ও অধ্যাপক। ১৯৭৩ সালে সায়েন্স পত্রিকায় দেখিয়েছিলেন, যদি অক্সিজেনে শ্বাস নিয়ে বাঁচতে চান তবে খাবারে যথেষ্ট ভিটামিন-সি খান। তিনি এটাকে "স্লোগান" করে দিয়েছিলেন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিলেন এই কারণে। কিন্তু আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য যে, সেই কথা আমরা কখনও জীবন ধারণে মনে রাখিনি এবং পাত্তাও দিইনি। তাই আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এই স্লোগান আজও দেওয়ালে লেখা হয়ে ওঠেনি। আমরা এমনই আহাম্মক। রাজনীতি ছাড়া কিছুই আমরা খেয়াল রাখিনা। ৯০ বছর বয়সে গত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯-এই তিনি প্রয়াত হয়েছেন এই কলকাতায়। করোনা আসাতে টিভিতে রাতদিন ডাক্তারবাবুরা নিদান দিচ্ছেন এই মহা-টোটকার। এখন তাই শাকসবজিতে কতখানি ভিটামিন-সি পাওয়া যাবে এইসব বিচারের সময় আমাদের হাতে এখন আছে কি নেই সেকথা আলাদা, স্কুলের পড়া কবেই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। কাঁচা আমে ৬০% ভিটামিন-সি আছে। পাতি লেবু সহ সমস্ত লেবুতে‌ও অঢেল ভিটামিন-সি, অ্যাপোলোর আমলকি জুস অমিল ভিটামিন-সি'র দৌলতে। অক্সিজেন ঠিক রাখতে ভিটামিন-সি এখন ওষুধের দোকান থেকে আমরা কিনে এনে বাড়িতে রেখেছি। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন-সি খেলে পেটের অসুখ হতে পারে বলে বিজ্ঞানের খাতায় লেখা হয়েছে। তাই সাতদিন খেয়ে গ্যাপ দিয়ে আবার খেতে পারেন। ©® অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

#করোনায় অনলাইন শিক্ষা

#ধান_ভানতে_শিবের_গীত নয় 
#অলোক_কুন্ডু

লকডাউন বা বাফারজোন রেখে দিয়ে বা এইসব পুরোপুরি উঠতে হয়তো জুন পেরিয়ে যেতেও পারে। যদিও স্কুল আপাতত ১০ জুন পর্যন্ত বন্ধ আছে। তবুও বিশেষ করে এই বছর ছেলেমেয়েদের স্কুল পাঠাতে অভিভাবকদের একপ্রকার অনীহা আছে। তীব্র আপত্তি আছে। বহু ছেলেমেয়েদের বাবা মা এবছর কেরিয়ার চান না। তারা অনলাইনে শিক্ষায় প্রচণ্ড খুশি হয়েছেন। এখন "ভয়াবহতা" এই বিষয়টা যদি মাথায় রাখা যায় তবে ছাত্রছাত্রীদের ঘরে বসে পড়াশোনা করাটাই সম্ভবত সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া কোনোভাবে যদি একটি ছাত্রছাত্রী এই সংক্রমিত হয়ে পড়ে তবে একজন নয় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীরা সমূহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন লেখাপড়ার গুরুত্ব এখন অপরিসীম। কোনও অবস্থাতেই এই ব্যবস্থাপনার বিরোধিতা করার সময় এখন নয়। শিক্ষক সংগঠন থেকে অনলাইনে শিক্ষা পৌঁছনোর হিসেবটি অনেক কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। শিক্ষক সংগঠন গুলির সম্যক ধারণাই নেই গ্রাম সম্পর্কে। তারা জানেনা কতজন মানুষের হাতে স্মার্টফোন আছে। প্রকৃতপক্ষে এটি ৬০% ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন ১০০% সুযোগ পাচ্ছেন 
যেটা তারা মাত্র ১৫% বলছেন ছাত্রছাত্রীর হিসেবে। সরকার চাইলে এই শিক্ষা আর‌ও প্রসারিত করতে পারে। পাড়ায় পাড়ায় যাদের কম্পিউটার আছে তাদের ব্রডব্যান্ড কনেকশন দিয়ে বা অন্য কোনও ভাবে ক্লাবের মাধ্যমে অনলাইন পৌঁছে দিয়ে অনলাইন শিক্ষা গরীব ও পিছিয়ে পড়াদের কাছে পৌঁছে দিয়ে শিক্ষার আদানপ্রদান 
চালু রাখা যেতে পারে এটা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। লোকাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, যাদের কম্পিউটার আছে  তাদের সাহায্য নিলে এই অনলাইন ব্যবস্থায় যে ফাঁকফোকর আছে তা ভরাট হয়ে যাবে। তারাও এখন অনলাইন শিক্ষা দেওয়া থেকে সাহায্য করার ব্যাপারে উদ্যোগী। উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে সাময়িক তাদের কাজে লাগালে তারাও এক একজন গরীব ও পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের তৎকালভাবে সাহায্য করতে পারবেন। শুধুমাত্র সরকারকে সঠিক পরিকল্পনা ও আয়োজন করতে হবে।  
এই নিয়েও জোর তর্ক শুরু হয়েছে যে, অনলাইনে প্রকৃত শিক্ষা হয় কিনা? যদিবা হয় তবে তা কি ক্লাস টিচিং মেথডের মতো কতখানি শিক্ষাশ্রয়ী হতে পারবে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলি তবে কীভাবে হবে? যুক্তি পাল্টা যুক্তিতে ছাত্রছাত্রীদের গ্রহণযোগ্যতা চিরকাল‌ই চাপা দেওয়ার একটা চেষ্টা চলে থাকে। অনেকে এও বলছেন যে, গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে অনলাইন শিক্ষা পৌঁছতে পারছে না। কিংবা প্রথম প্রজন্মের কাছে, শ্রমজীবী পরিবারেও ঠিক মতো পৌঁছনোর পথ নেই। আসলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ‌তেই সম্ভবত অনলাইন টোটাল ব্যবস্থাপনা সমূহ পিছিয়ে আছে। 
মুম্বাই, তামিলনাড়ু, কেরল, হায়দ্রাবাদ,
বেঙ্গালুরু অনেকটাই এগিয়ে গেছে এখানে। স্মার্টফোনের অভাব কিন্তু গ্রামেও নেই। কিন্তু শিক্ষার কাজে সেই ফোন ব্যবহারের কার‌ও কোনও উদ্যোগ তো নেই। বরং কিছু অবাস্তব নমুনা তুলে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে কিছু মানুষ চরম উদ্যোগী। স্মার্টফোন নেই বলে অনলাইন শিক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না এই বার্তায় যথেষ্ট অবিবেচনা রয়েছে। এ বিষয়ে মান্ধাতা আমলের এক ভ্রান্তি রয়ে গেছে আমাদের মনে। এটাও নিশ্চিত যে যাকে হাতেকলমে বোঝানোর মতো কেউ নেই, এইরকম পরিবারে, শ্রমিক এবং আনপড় অভিভাবক যেখানে দর্শক, সেখানেও অনলাইন শিক্ষায় সমূহ পাঠক্রম পৌঁছনো সম্ভব নয়। তবুও এই আপতকালীন সময়ে ঘরে বসে শিক্ষা নেওয়ার কাছে আর দ্বিতীয় রাস্তা আর কিছু খোলা নেই। পারলে সেই ছাত্রছাত্রীদের সার্ভে করে তার নেটে কার্ড ভরে দিক সরকার। এখন যদি লকডাউন অগাস্টের আগে না খোলে তাহলে কি শিক্ষা যেভাবে চলছে তাতেই আমরা সন্তুষ্ট থাকবো ? নাকি অনলাইন নিয়ে তর্ক করে যাবো ? না, শিক্ষায় যেমন সন্তুষ্টির কোনও সীমা নেই তেমনি লকডাউন ভেঙে কবে সুস্থ জীবনে আমরা ফিরে আসবো, আগামী তিনমাসের আগে তার‌ কোনও আশা নেই। তাহলে প্রথমেই এখন আমাদের সিলেবাসকে কমপ্যাক্ট বা স্মার্ট করে নিয়ে বা ছোট করে নিয়ে আর একটি দ্বিতীয় পথ স্কুল শিক্ষায় আমরা অন্ততঃ খুলে ধরতে পারি। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রেখে শিক্ষকদের তার বাড়ির কাছের মাধ্যমিক শিক্ষার কাজে লাগানো যেতে পারে। কারণ কনটেইনমেন্ট জোন থেকে বাইরে বেরিয়ে শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আছে। তাহলে শিক্ষক অপ্রতুল হ‌ওয়ার আশংকা আছে। কীভাবে তা হবে তার ফর্মূলা জোগাড় করে নিতে সরকার উদ্যোগী হবে তার সরকারি ও বেসরকারি পরিকাঠামোর মধ্যে। সিলেবাসকে লকডাউনের উপযোগী করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে কিছু ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হলে তাও করতে হবে। এখানে তৃতীয় পক্ষ হচ্ছে ছাত্রছাত্রী এবং মূলত তাদের উপস্থিতি নিয়েই প্রধান সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন যদি স্কুল খোলে তবে তাদের ক্লাসকে বিন্যস্ত করতে হবে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং নবম থেকে দ্বাদশ দুটি ক্লাস্টারে মাধ্যমিক শিক্ষাকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভাগ করে বিদ্যালয়গুলিকে অক্টোবরের পুজোর ছুটির আগে ৩০/৪০ দিনের ক্লাস্টার ক্লাস করানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এক‌ই ক্লাসকে দুটি সিফ্টে ভাগ করা যেতে পারে। স্কুল সময়ের সামান্য পরিবর্তন করে দুটো সিফ্টেও স্কুল বসাতে পারা যায়। ক্লাসগুলিকে ২০/২৫ জনে ভাগ করে দিতে হবে। সকাল ৯.০০ টা থেকে ১১.৪০ পর্যন্ত ও ১২.২০ থেকে ৩.০০ পর্যন্ত। এখানেও রোজ ক্লাস করা যাবেনা সপ্তাহে দুই বা তিনদিন করে। তিনদিন স্কুল ছুটি থাকবে। সরকারি ভাবে ছেলেমেয়েদের টেস্ট করে একে একে স্কুলে ঢোকাতে হবে। স্কুলে কোনও টিফিন মিড ডে মিল হবে না। স্কুলে ও বাথরুম গুলিতে পর্যাপ্ত জল ও স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
সেখানে যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি করতে হবে। অভিভাবকদের লিখিত জানাতে হবে বাড়ি যাওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের পোশাক পরিবর্তন গা ও হাত ধোয়ার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার। স্কুলেও বেশ কিছু আপতকালীন মাস্ক রেডি রাখতে হবে। মাস্ক না পরলে স্কুলে আসা যাবে না। এই সামান্য সময়ে ছোট ছোট সাময়িক মূল্যায়ণ চালু রেখে পার্বিক মূল্যায়ণ বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মূলত শিক্ষা নিয়েই আলোচনা চলবে। ভূগোল বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলি আপাতত স্থগিত রাখতে হবে। কিন্তু গণিতের জন্য ভালো ছেলেমেয়েদের জন্য আরও অনলাইন ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে ফলপ্রসূ করতে হবে। পঠনপাঠন শেষ হলে অতিমারি কমে এলে সরকার ও বিদ্যালয়গুলির স্থগিত সিলেবাস ও পরীক্ষা এবং মূল্যায়ণ সূচি নতুন করে তৈরি করবে। যদি কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা কমতে থাকে তবে সেপ্টেম্বরে নভেম্বর ,ডিসেম্বর ও জানুয়ারি ২১ এই চারমাসে পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে শেষ ও চূড়ান্ত মূল্যায়ণ ও টেস্টগুলি শেষ করে মার্চের গোড়ায় ক্লাসগুলি পুণরায় ২০২১ এর শিক্ষাবর্ষে প্রবেশের সম্ভাবনা ও আশা নিয়ে সরকারের তরফে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা রচনা করতে হবে। এই প্রসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলগুলিও যেমন স্কুল খুলবে সেইমতো ব্যবস্থা করবে। হস্টেল কর্তৃপক্ষ নিজে থেকে না চাইলেও স্কুল কলেজ খোলার সঙ্গে অবধারিত ভাবে ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল‌ও খুলবে। হস্টেলে ঠিক মতো বাথরুম ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা না থাকলে যারা হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবে তাদের আলাদা কীভাবে স্থানীয় ধর্মশালায় বা হোটেলে রেখে পড়াশোনা করানো যায় তা নিয়েও সরকারকে চিন্তা করতে হবে। আর যদি এমন হয় কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে যায় তবে সাইবার কাফেগুলি খুলিয়ে অথবা সাময়িকভাবে সাইবার কাফে নতুনভাবে সৃষ্টি করিয়ে তাদের তিনমাসের জন্যে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে অনলাইনেই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখা অনেক সাবধানতা অবলম্বন বলে ধরে নিতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের অনলাইনে শিক্ষায় আপত্তি থাকলেও এই অতিমারীর আবহাওয়ায় অনলাইন শিক্ষাই একমাত্র, নির্দিষ্ট ও বলিষ্ট ব্যবস্থা যা সাময়িক মনে হলেও আগামী দিনে ফলপ্রসূ হবে বলেই মনে করা যেতে পারে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান শাখায় প্র্যাকটিসগুলি দেরি করে না হয় শেষ করা যাবে। হায়ার সেকেন্ডারির বাকি পরীক্ষা সেই স্কুলে অনলাইনে হলেও হতে পারে আর না হলে যেকটি পরীক্ষা হয়েছে তার উপরে রেজাল্ট বার করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে আমি সবশেষে বলবো এইবছর স্কুল খুলে ক্লাস করলেও ছাত্রছাত্রীদের পাওয়ার একটা বিশাল সমস্যা হবে। সম্ভাবনা নেই বললেই হয়। ছাত্ররা বিলকুল অনুপস্থিত থাকবে। তাই ধান ভানতে শিবের গীত না গাওয়াই ভালো। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ই-পাঠশালা খোলার ওপর জোর দিয়েছেন। তার পরিকাঠামোর জন্যে আর্থিকভাবে সরকার সঙ্গতি প্রদান করতে উদ্যোগ নিয়েছে যখন তখন সব রাজ্য‌ই এই শিক্ষা মাধ্যমে নিজেদের যুক্ত করবে বলে আশা রাখি। পরিশেষে ই-পাঠশালার জন্যে র‌ইলো হাততালি। ই শিক্ষায় ঘরোয়া টিউশনির মাষ্টার মশাই ও দিদিমণিদের‌ও নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে।
©® অলোক কুন্ডু
( এই লেখাটি একটি ম্যাগাজিনের জন্যে লেখা
তারা কবে ছেপে তা প্রকাশ করবে জানা নেই। তাই এই লেখার কোনও অংশ কেউ থিম ও কোনও ভাবে কোথাও লিখে দেবেন না। সংবাদ পত্রেতো নয় । লেখাটি মৌলিক রচনা। মনে রাখবেন )

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...