রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০

নির্ভয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার দিন আগত : অলোক কুন্ডু

🌏 নির্ভয়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে সেই দিন আগত। কিন্তু দয়া করে কেউ বলবেন ভ্যাকসিনের বদলে আমাকে ভোট দিন, প্লিজ বিরত থাকুন

➡️ দেখা যাচ্ছে নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন বের করতে আগে দশকের পর দশক চলে গেছে। সেইসব আবিষ্কারের পেছনে কখনও সমস্ত দেশ একযোগে, কখনও যৌথভাবে, কখনও একক উদ্যোগে উঠেপড়ে সবাই এগিয়ে আসেনি, করোনার জন্য যেভাবে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আবিষ্কারের উদ্যোগ এইভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কখনও শুরু হয়নি। একযোগে আমেরিকা রাশিয়া বৃটেন ভারত চায়না ইজরাইল আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেছে। এটা ব্যবহার থেকে তাগিদ বেশি। বরং রাষ্ট্র নায়কদের বেশি উদ্দোগ যুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন রসায়নাগারে বিজ্ঞানীরা ছয়মাস লাগাতার কাজ করছে। প্রকৃত গবেষণায় নিযুক্ত ছাত্ররাও সঙ্গী হয়েছে ব্যাপকভাবে। স্বেচ্ছাসেবক পাওয়া গেছে আবেদনের বেশি। রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ট্রাম্প থেকে সমস্ত রাষ্ট্রনায়করা প্রতিনিয়ত চোখ কান খোলা রেখেছেন। তাদের স্বার্থ সবচেয়ে বেশি। 

➡️ কারণ এতদিন দেখা গেছে শিশু ও বয়স্ক মিলিয়ে একমাত্র নিউমোনিয়াতেই লাখো লাখো মানুষের প্রাণ চলে যেত। তবু সেই নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন ভালোভাবে বাজারে আসতে বহু পরীক্ষা পর্ব চলেছে। 
ফাইজার নিউমোনিয়া ওষুধের বাজার জাত করার বরাত পেয়েছে। তাদের পয়সায় তাদের তত্বাবধানে তৈরি হলেও তা খানিকটা সাইজে আনতে ২০১৯-এর জানুয়ারি পর্যন্ত চলে গেছে। অথচ এর আবিষ্কার হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু রোগী চিহ্নিতকরণ একটি বড় বিষয়। তবে নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও বছর বছর তার উন্নয়ন করা ও রিসার্চ ওয়ার্ক চালিয়ে যাওয়ার ফলে ওই  ACIP থেকে ২০১০-এ যেভাবে ও যে বয়সীদের নিতে বলেছিল তার ২০১৪ থেকে ২০১৮ ACIP থেকে যা বলেছিল ২০১৯ -এর জানুয়ারি আরও নির্দিষ্ট করলো। এখন ২০২০ এর মার্চে ACIP থেকে আবার বলছে কেবলমাত্র ৬৫ বছরের পর PPSV23 নিতে আরও একবছর পর PCV13 নেওয়া হয়ে যাওয়ার পর। ছোটদের জন্য আগে ছিল PCV7 বছরে একবার এখন হয়েছে তিনবার। নিউমোনিয়া বহু রকম আছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটিকে বেছে নিয়ে ভ্যাকসিন। তারমানে এই নয়
যে অন্যগুলো হবে না। অবশ্যই সম্ভাবনা কম থাকবে। 
যারা সিগারেট খায় ৬৫ বছর ও বিশেষ কয়েকটি অসুখ আছে তাদের নিতেই হবে। আবশ্যিক নেওয়া হয়ে যাচ্ছে যত দিন যাচ্ছে। যত রিসার্চ হচ্ছে। ২০২০ মার্চ পর্যন্ত ACIP থেকে আপডেট দেওয়া হয়েছে। 
ফিজি সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে রিসার্চ করে দেখেছে নিউমোনিয়া PCV13 নেওয়া থাকলে কোবিদ১৯ এ ভয়াবহ কিছু হওয়া সম্ভব নয়। হলেও
এই যাত্রা রোগী বেঁচে যেতে পারে। তবে পুণরায় যেকোন ভ্যাকসিন তিনি নিতে পারেন একমাস পরে। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সার্স ও ফ্লু কয়েকবার নিলে শরীরের নিজস্ব ইমিউনিটি ক্ষমতা কমে যেতে পারে। 
তাই মহামারী না দেখা দিলে ফ্লু-এর জন্য আর কোনও ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত নয়। তবে যারা নিউমোনিয়া নিতে পারছেন না তারা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নিতে পারেন। যেকোনো একটি নেওয়া থাকলে করোনা থেকে সামান্য হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। দুটো ভ্যাকসিন নেওয়ার দরকার নেই বরং দুটো নিলে আপনার শরীরে বেশি টক্সিন ঢুকবে। 

➡️ কোনও ভ্যাকসিন একবার নিলে কোনোটার আয়ু সারাজীবন। কোনও ভ্যাকসিন বছর বছর দিতে হয়। কোনোটা আবার পিরিওডিক্যাল। কিন্তু এইসব বিচার, জিনগত পার্থক্যের বিচার, নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সামাল দিয়ে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি শূন্যতে নামিয়ে এনে ভ্যাকসিন বের করা একপ্রকার দূরূহ কাজ। ব্যয় সাপেক্ষ তো বটেই। বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলি এইজন্য সারা বিশ্বে গবেষক খুঁজে বেড়ান। কখনও গবেষণা হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে। কখনও অধ্যাপক ও ছাত্রদের সহায়তায়। আর এইসব প্রাণদায়ী ওষুধ প্রচন্ড ঠান্ডার দেশ ছাড়া আবিষ্কারের একটা মুস্কিল পর্ব তো আছেই। কখনও কোনও গবেষণাগার গড়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকায়। এই বিশ্বে জীবনদায়ী ওষুধের অবিরত আবিষ্কার হয়ে চলেছে। এইরকম গবেষণা থেমে নেই। নোবেল কমিটি থেকে বড় বড় এইরকম কমিটির অবদান এইসব আবিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি মানবতাবাদী ভূমিকা সব সময় পালন করে চলেছে। তাই কোবিদ ভ্যাকসিন আর ট্যাবলেট বিক্রি দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। সুগারের ওষুধ না খেয়েও লোক বেঁচে আছে থাইরয়েডের ওষুধ না খেয়ে বেঁচে আছে তাই কোবিদ ভ্যাকসিনকে সেই মতো তুলনা করা ভুল হবে। অনিবার্যতা আবশ্যিক ও নিতেই হবে কোবিদ ভ্যাকসিন। এখানে ব্যবসার কি হবে না হবে তা ভেবে জনগণের কোনও লাভ নেই। 

➡️ ওষুধ শিল্পে ব্রিটেন ও আমেরিকা অগ্রগণ্য। সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে অবশ্যই বাণিজ্যিক একটি পরিকল্পনা থাকে। সরকার প্রচুর ট্যাক্স পায়। শেয়ার কেনাবেচা থাকে, ওষুধের বিক্রি বাবদ সরকারের লাভ, ডাক্তারের লাভ, রিপ্রেজেন্টেটিভদের লাভ, ওষুধের দোকানের লাভ ছাড়া ওষুধের প্রচলন প্রায় হয়না। বিক্রি বাটোয়ারর কোনও মানে হয়না যদি না তা বাজারজাত হয় যদি না ভালোভাবে বিক্রি হয় তবেই না রিপ্রেজেন্টেটিভদের চাকরি হবে কোম্পানি থেকে ব্যবসায়ী, এজেন্ট থেকে সকলে ফুলেফেঁপে উঠবেন। ওষুধের ব্যবসা মানুষকে বাঁচায় যেমন তেমনি সমাজকে, বেকারি থেকে বাঁচায়। এখন তো ডাক্তারদের মনোরঞ্জনের সমস্ত দান প্রতিদানে কোম্পানিগুলির প্রতিযোগিতা দেখার মতো। 

➡️ তা হোক। কিন্তু প্রাথমিক উদ্দেশ্য থাকে মানুষ বাঁচানোর। মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করা সভ্যতার 
মূল কাজ। আর করোনার মূল উদ্দেশ্য মানুষের ক্ষয়ক্ষতি। এত বড় আকারে মৃত্যু ও আক্রান্ত ইতিপূর্বে হয়নি। যদিও রোগের আক্রমণ থেকে প্রাথমিক ভাবে বাঁচতে মানুষ কতকগুলি আবিষ্কার আগেই করে রেখেছিল। মাস্ক, হাতধোয়া ও দূরত্ব বজায় রাখা। 
এর ফলও যথেষ্ট পাওয়া গেছে বৈকি। কিন্তু মৃত্যু পথযাত্রীকে বাঁচানোর দায়িত্ব আরও বড় এবং ভাবনার বিষয়। মারণ করোনা থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে তাই ভ্যাকসিনের দিকে চেয়ে আছেন সকলে। 
হ্যাঁ আবার আবিষ্কার হয়ে গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব সংকটও হতে পারে কারণ অনেকেই চান এই রোগে আরও মানুষ মরলে তাদের দলের সুবিধা হবে তাতে।

➡️ তাহলে কবে ভ্যাকসিন আসছে। যেহেতু ভ্যাকসিন আবিস্কারের পরেও ব্যাপক রিসার্চ চলবে। মনে রাখতে হবে পোলিও টিকা প্রথমে যেটা বাজারে এসেছিল তার মধ্যে বিস্তর গন্ডগোল ছিল। মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল। 
তাই ক্ষয়ক্ষতি শূন্য যাতে হয় সেই কারণেই পরীক্ষার পর্যায়গুলো আরও তন্ন তন্ন করে ভাবতে সময় লাগছে। আমাদের দেশে একসঙ্গে অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের কথা শোনা যাচ্ছে। চায়নার আবিষ্কার একেবারে শেষ পর্যায়ে। আমেরিকাও আগে খাতা খুলতে পারে। সকলের টিকা প্রস্তুতি পর্ব একেবারে শেষের দিকে। ফেব্রুয়ারি থেকে মনে হয় ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। যদি আমেরিকান ভ্যাকসিন আগে বের হয় অথবা ব্রিটিশ তবে এরা অনেক নির্ভরযোগ্য হবেন। তা না হলে ফ্রিতে ভারতের ভ্যাকসিন ওই সময়েই শুরু হয়ে যাবে। নববর্ষের দিনে কিছু বার্তা শোনা যাবেই। প্রথমে করোনার বিরুদ্ধে সামনের সারিতে লড়ছেন যারা তারা জানুয়ারির শেষ থেকে নিতে শুরু করতে পারেন। তা না হলে প্রত্যেকই
তার প্রোডাক্ট বিক্রি করতে চাইবেন। কার সব থেকে কার্যকরী তা বুঝতে দুবছর লেগে যাবে। যাদের বেশি কার্যকরী তারা ভালো ব্যবসা করুক এবং করবে। জনগণের ওইদিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। তাদের বাঁচতে হবে। কারণ ভ্যাকসিনের কার্যকরী ভূমিকা বুঝতে দুবছর থেকে দশবছর সময় লেগে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে কোনও মারণ রোগকে জব্দ করতে শুধু ওষুধ আবিষ্কার করলেই হবেনা। কতখানি কাকে কাকে দিতে হবে এটাও একটা ব্যাপার। সকলকে ঈশ্বর সমান ছাঁচে তৈরি করেনি যখন তখন ওষুধের প্রয়োগেও তফাত হবে কিছুটা। কিন্তু এখন যা দেবে তাই নিতে হবে। জ্বর, সর্দি, চুলকানি, পায়খানা এগুলো যেকোনো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এটা মনে রাখতে হবে। 
( ছবিটি প্রতিক অর্থে ব্যবহৃত) 

©® অলোক কুন্ডু 

 


শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০

ভিটামিন-ই এর উপকারিতা: অলোক কুন্ডু

দামে সস্তা ভিটামিন "ই" দুভাবে ব্যবহার করা চলে । নারকেল তেলের সঙ্গে একটা করে ভিটামিন ই হাতে নিয়ে চুলে মাখলে চুলের উজ্জ্বলতা অনেকটা বেড়ে যাবে এবং পড়াও কমে যাবে। Evion-200 ml. দাম খুব পড়ে না অন্তত চুলের সমস্যা যাদের আছে সপ্তাহে একদিন এটা করে দেখাও যায়। পাউচ ট্যাবকে সেফটিপিন দিয়ে ফুটো করে মাথায়দামে সস্তা ভিটামিন "ই" দুভাবে ব্যবহার করা চলে । নারকেল তেলের সঙ্গে একটা করে ভিটামিন ই হাতে নিয়ে চুলে মাখলে চুলের উজ্জ্বলতা অনেকটা বেড়ে যাবে এবং পড়াও কমে যাবে। Evion-200 ml. দাম খুব পড়ে না অন্তত চুলের সমস্যা যাদের আছে সপ্তাহে একদিন এটা করে দেখাও যায়। পাউচ ট্যাবকে সেফটিপিন দিয়ে ফুটো করে মাথায় তেলের সঙ্গে ঘষে ঘষে মাখলে উপকার অবশ্যই । যাদের শরীরে ভিটামিন ইয়ের ঘাটতি হয় তাদের এটা প্রয়োজন । যাদের লিভার বড় বা ফ্যাট জমেছে বয়স্ক হলে পেটের ডানদিকে লাগলে অথবা গ্যাস অম্বলের সমস্যায় পেটের কষ্টে দুশো মিলিগ্রামের একটি করে ট্যাবলেট-পাউচ দুবেলা খাওয়ার পর একটি করে দুবেলা ৭/৮ দিন গ্যাপ দিয়ে মাস খানেক খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যারা গরমকালে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন তারা খেয়ে ও মুখে মেখে দেখতে পারেন । স্কিনের সমস্যায় ভিটামিন ই প্রয়োজন , মুখ তাদের উজ্জ্বল হতে পারে । যাদের রক্তাল্পতা তারাও মাঝেমধ্যে খেয়ে দেখতে পারেন । মনে রাখবেন রক্তাল্পতা থাকলে লিভার তার বড় হবেই হবে। জনডিসেও এই ওষুধের উপকারিতা আছে ।এমনকি বড় বড় চিকিৎসকরা হার্টের রোগীকে চটজলদি ভিটামিন ই দিয়ে থাকেন । সুগারের জন্য এটি প্রযোজ্য এমনকি সুগার থাকলেও একমাস খেয়ে দেখতে পারেন এবং রক্ত পরীক্ষায় যদি দেখেন উপকার হয়েছে তাহলে ব্যবহার মাঝেমধ্যে করে দেখতে পারেন। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । চোখ ঠিক রাখতে এটি একটি অপরিহার্য ওষুধ । ওজন বাড়তে দেয়না । বয়স্কদের সুস্থ রাখার একটি অপরিহার্য ওষুধ এবং তাই বহুরকম সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন ই বেশ ভালো পরিমাণ মিশ্রিত থাকে। তবে বেশি খেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে । অ্যালার্জি বের হতে পারে গা বমি করতে পারে মাথাও ধরতে পারে চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন। অনেক খাবারের মধ্যে ভিটামিন ই পাওয়া গেলেও তা কতটা পরিমাণ মানুষ খান তার ওপর সবকিছু নির্ভর করে । ১৫/২০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন লাগে প্রতিদিন সুস্থতার জন্য । কিন্তু আমরা কতটা খাই সে হিসাব কখনও করা যায় না । ভিটামিন ই একদিন বেশি হয়ে গেলে তার বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়াগুলি দীর্ঘদিনের নয় । তবু ভিটামিন ই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই খাওয়া উচিত । যদি চিকিৎসকগণ নিয়মিত পরীক্ষা করে প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভিটামিন ই কতটা প্রয়োজন তা প্রতি মাসে দেখে জানাতে পারতেন তাহলে ক্যানসার রোগী দেশে কুড়িভাগ কমে যেত বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ।
তেলের সঙ্গে ঘষে ঘষে মাখলে উপকার অবশ্যই । যাদের শরীরে ভিটামিন ইয়ের ঘাটতি হয় তাদের এটা প্রয়োজন । যাদের লিভার বড় বা ফ্যাট জমেছে বয়স্ক হলে পেটের ডানদিকে লাগলে অথবা গ্যাস অম্বলের সমস্যায় পেটের কষ্টে দুশো মিলিগ্রামের একটি করে ট্যাবলেট-পাউচ দুবেলা খাওয়ার পর একটি করে দুবেলা ৭/৮ দিন গ্যাপ দিয়ে মাস খানেক খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যারা গরমকালে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন তারা খেয়ে ও মুখে মেখে দেখতে পারেন । স্কিনের সমস্যায় ভিটামিন ই প্রয়োজন , মুখ তাদের
উজ্জ্বল হতে পারে । যাদের রক্তাল্পতা তারাও
মাঝেমধ্যে খেয়ে দেখতে পারেন । মনে রাখবেন রক্তাল্পতা থাকলে লিভার তার বড়
হবেই হবে। জনডিসেও এই ওষুধের উপকারিতা আছে ।এমনকি বড় বড় চিকিৎসকরা হার্টের রোগীকে চটজলদি ভিটামিন ই দিয়ে
থাকেন । সুগারের জন্য এটি প্রযোজ্য এমনকি সুগার থাকলেও একমাস খেয়ে দেখতে পারেন এবং রক্ত পরীক্ষায় যদি দেখেন উপকার হয়েছে তাহলে ব্যবহার মাঝেমধ্যে করে দেখতে পারেন। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । চোখ ঠিক রাখতে এটি একটি অপরিহার্য ওষুধ ।
ওজন বাড়তে দেয়না । বয়স্কদের সুস্থ
রাখার একটি অপরিহার্য ওষুধ এবং তাই বহুরকম সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন ই বেশ ভালো পরিমাণ মিশ্রিত থাকে। তবে বেশি খেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে । অ্যালার্জি বের হতে পারে গা বমি করতে পারে মাথাও ধরতে পারে চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন। অনেক খাবারের মধ্যে ভিটামিন ই পাওয়া গেলেও তা কতটা পরিমাণ মানুষ খান তার ওপর সবকিছু নির্ভর করে । ১৫/২০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন লাগে প্রতিদিন সুস্থতার জন্য । কিন্তু আমরা কতটা খাই সে হিসাব কখনও করা যায় না । ভিটামিন ই একদিন বেশি হয়ে গেলে তার বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়াগুলি দীর্ঘদিনের
নয় । তবু ভিটামিন ই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই খাওয়া উচিত । যদি চিকিৎসকগণ নিয়মিত পরীক্ষা করে প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভিটামিন ই কতটা প্রয়োজন তা প্রতি মাসে দেখে জানাতে পারতেন তাহলে ক্যানসার রোগী দেশে কুড়িভাগ কমে যেত বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

অলোক কুন্ডুর কবিতা

⛔ ফেস্টুন বিক্রি হচ্ছে কত আদরে।  / অলোক কুন্ডু

কোনও মুখ কাদায় মাখামাখি হলেও
তোষামোদকারী বুঝতে পারে না আর
সে-দেখে--ফেস্টুন বিকোচ্ছে কতরকম আদরে
যার যেমন ক্ষমতা তার তেমন ঢাল-তরোয়াল গো
কাড়ানাকড়ার শব্দ মঞ্জুর হয় ফেল কড়িতে।

তুমি বলবে তোমার দিব্যি দেওয়া ঠাকুর গো পাপ দেয়
ঘটে-আমপাতায়-গাঁদা-জবার মালায়
নৈবেদ্যর চাল কলা সন্দেশের পাহাড় জমিয়ে ভোগ
কাঁসর-ঘন্টার জৌলুস সেই তেপান্তর পৌঁছয় গো
চাল কলার দর দৌড়য় আলু পিঁয়াজ পর্যন্ত। 

তোমার পুজোয় আমি তবু নরক দেখি আপাদমস্তক 
এ নরক বড় গুলজার, বুলডোজার চেনানো মাথা ভেঙে                   দেয়
শব্দ কিংবা বাক্যের অলংকারগুলো ধামাধরা 
ধামাচাপা দিতে দিতে চলে বিবরমুখী বলয়গ্রাসে নষ্ট
কেউ জানেনা কোথায় চলেছে--জাহান্নামে কিনা? 

তবু এইতো বলার সময় ছিল কতভাবে
সব কথা গিলে নিলে ভাত পাবেনা গো 
তাই একমাত্র নির্বাক মুঠো পিন্ডি তোমার সঙ্গে থেকে যাবে
ওই ভাত সঙ্গে যাবে দেখে নিও
স্যাকরা থেকে হাতুড়ে পর্যন্ত তোমাকে নিয়ম ঢেলে দেবে। 

ওই দেশে রাজাদের যুদ্ধ চলছে যেখানে
যে যেখানে আছো আজানু হয়ে কান পেতে বোসো
কেউ কেউ জলাঞ্জলি দিয়েছো আপাদমস্তক 
"ভর" বোঝো কাকে বলে তাই হবে শুরু দুরুদুরু
শব্দেরাও বড় ভুল তোমার মাথাব্যথা নেই তোষামোদে । 

লিখে রাখো দাগিয়ে রাখো জিভের ভেতর 
উগরানো বাণী যেখানে যাদুখেলা কল্পনার 
মঞ্চের কাছে গিয়ে দেখো মশগুল কত আস্কারা 
মঞ্চে মন্ডপে পোড়াবে যত ফুলঝুরি
তত বেঁচে যাবে দেখে নিও। 

কিন্তু বেবাক ব্যান্ডেজ আর কতকাল চোখে কানে মুখে  
একরকম মতামত জমাতে জমাতে বোধ চলে গেলে
উগরে দেওয়ার ক্ষয়ক্ষতি তোমাকেই বুঝে নেবে
ভেবে দেখো প্রশ্ন করা ভুলে গেছো বহুকাল
কারণ তুমি দেখছো--ফেস্টুন বিক্রি হচ্ছে কত আদরে। 

©® অলোক কুন্ডু

ক্ষুধিত পাষাণ ও চারুলতা

⛔ তফাৎ যাও... সব ঝুট হ্যায়। হ্যাঁ "ক্ষুধিত পাষাণ"- এর থেকেও তখন এই উচ্চারণে বাজার মাতোয়ারা। যারা দেখে ফেলেছেন অথচ মেহের আলী পড়েননি তারাও ততদিনে ক্ষুধিত পাষাণ জেনে গেছেন। তাই জনগণের কাছে সৌমিত্রর পরিচিতি হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষাণ এর সরকারি কর্মচারী দিয়েই। কারণ অপুর সংসার তখনও সকলের দেখা হয়ে ওঠেনি।

•সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, " আমি মাণিকদার আবিষ্কার। আসলে সৌমিত্র যখন জানতে পারলেন যে সত্যজিৎ রায় 'অপরাজিত' করছেন, তখনই তার প্রথম সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছা জাগে এবং এক বন্ধুর বন্ধুকে ধরে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি গিয়ে দেখাও করেন। কিন্তু সৌমিত্র তখন সেই অপুর থেকে একটু লম্বা হয়ে যাওয়াতে ও বয়স বেশি হওয়ায় সৌমিত্রকে সেটাও জানিয়ে দেন, সত্যজিৎ রায়। তাই সেই সময় তার চান্স হয়নি। কিন্তু অপুর সংসার করার আগেই সত্যজিৎ রায় ডেকে পাঠান সৌমিত্রকে। অপুর সংসারের সাফল্যের পর সৌমিত্র ভেবেই ছিলেন সিনেমাকেই পেশা করবেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তো ডাক আসেনি, তাছাড়া এতদিন তো নাটক ও শিশির ভাদুড়ীর কাছে যাতায়াত করেছেন সৌমিত্র এবং নানা জায়গায় নাটকের মঞ্চে চান্স কীভাবে পাওয়া যায় সেই দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার সময় তার চলে যাচ্ছে, বিস্তর টানাপোড়েন তখন।

•চারুলতাকে নিয়ে সত্যজিৎ রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দুজনকেই সাংবাদিকরা বহুবার, বহু রকম প্রশ্ন করেছেন। সৌমিত্র বলেছেন চারুলতা বিশ্বের একটা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, এমনকি মাণিকদার কাছেও চারুলতা, তাঁর প্রিয় ছবি। সৌমিত্রর দ্বিতীয় ছবি ক্ষুদিত পাষাণ তপন সিংহর সঙ্গে। সত্যজিৎ রায় তপন সিংহ দুজনকেই সৌমিত্র ভীষণ সম্মান করতেন সেটা সকলেই জানেন। ক্ষুধিত পাষাণ, যেহেতু চেনা ও বিখ্যাত গল্প, রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেই নেওয়া তাই সৌমিত্রর তো পড়াই ছিল। তপন সিংহ ডাকতেও সঙ্গে সঙ্গে তবুও কথা দেননি। যদিও সৌমিত্র জানতেন, তপন সিংহ বাংলা ছায়াছবির তখন একজন বড় বাণিজ্যিক সফল পরিচালক এবং হাবিজাবি ছবি করেন না, তাছাড়া বহু নবাগতকে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে সৌমিত্র তো সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করে বুঝে ফেলেছেন কি ধরনের কাজের সিস্টেম, অভিনয় শেখানো কোন স্তরের, মোদ্দা কথা সৌমিত্রও আশা করছেন যে চান্স পেলে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে আবার একবার যদি চান্স পাওয়া যায়, তবেই তার ফেম হবে। ঠিক এই সময়টাতেই সিনেমাকে পেশা হিসেবে গ্রহণের দিগদর্শনও খুলে যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। মনের মধ্যে আলোড়ন হতে থাকে, কি করবেন তিনি। মানিকদাকে কীভাবে জানাবেন। সত্যি কি ক্ষুধিত পাষাণে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন ? এই দুশ্চিন্তা নিয়ে তখন সত্যজিৎ রায়ের কাছ যান। সৌমিত্র জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তার পক্ষে ওই রোল করা উচিত হবে কিনা ? অর্থাৎ তিনি ক্ষুধিত পাষাণে সাচ্ছন্দ্য হতে পারবেন কিনা। তপন সিংহ ডাকার পর রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলেন," মাণিকদা, আমার কি ছবিটা করা উচিত হবে? সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, " অবশ্যই উচিত হবে, একশো বার উচিত হবে। "

•সৌমিত্র বলেছেন, মাণিকদা বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব, অত্যন্ত বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির মূল্যায়ণ করেছিলেন। " সত্যজিৎ রায়ের উৎসাহেই সৌমিত্র তপন সিংহর কাছে কাজ করতে শাহস পেয়েছিলেন। যদিও সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে গিয়ে, প্রথম প্রথম সৌমিত্রর, বাধো বাধো লাগতো সেটে। সৌমিত্র আবারও বলেছেন, তপন সিংহের সঙ্গে কাজ করে কিন্তু অনেক কিছু শিখেছি। পরে বুঝতে পারি মাণিকদা কেন জোর দিয়ে বলেছিলেন। পরে ঝিন্দের বন্দীতে, বিশেষ করে কীভাবে হাঁটাচলা করতে হবে তার বেশ কিছু ট্রেনিং নিতে হয়েছিল। ঘোড়ায় চড়া ও অসি শিক্ষাও নিতে হয়েছিল পরে। তপন সিংহ অভিনয় শিল্পটা ভালই জানতেন। নাট্যকার মন্মথ রায়ের নাটকটি হুবহু ফলো করেছিলেন তপন সিংহ। তপন দা সবসময় খুব সচেতন ভাবে সাধারণ দর্শকদের জন্য সিনেমা করতেন। কিন্তু ক্ষুধিত পাষাণ মুক্তির পর কাগজে বহুভাবে বিরূপ সমালোচনা, অনেক কটুবাক্য ও ব্যঙ্গোক্তি শোনা গেলেও সাধারণ পাবলিক ক্ষুধিত পাষাণ দেখতে ছাড়েননি। রবীন্দ্রনাথের কাহিনী নিয়ে ছবি বুদ্ধিজীবী মহলে সমাদৃত হয়নি। কিন্তু ছবির সংগীত সৃষ্টিতে ছিলেন দিকপাল মানুষরা। উস্তাদ আলি আকবর খান। সহযোগিতায় ছিলেন, উস্তাদ আমির খান, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিখিল ব্যানার্জী, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। তখনই 'যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে' রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে জনগণের গান হয়ে গেল। এই সময়ে রবীন্দ্র সংগীতের ফাংশনও বেড়ে যায়। নৈহাটির একটা জলসায় গিয়ে পৌঁছেছেন দেবব্রত বিশ্বাস ও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। সংগঠকদের জলসায় নিয়ম ছিল, যিনি আগে পৌঁছবেন তিনি আগে গাইবেন। দ্বিজেন দা আগে গেলেও, জর্জ দা বললেন, আগে আমি গামু, বলে জোর করে স্টেজে গিয়ে বসে পড়লেন। উনি সিনিয়র। দ্বিজেন দা খানিকটা থম মেরে গেছেন। দেবব্রত বিশ্বাস হারমোনিয়াম ধরে যা করেন না তাই করলেন সে-দিন। জনতাকে জিজ্ঞেস করলেন কোন গান তিনি গাইবেন? প্রায় একসঙ্গে সবাই চেঁচিয়ে, ' যে রাতে মোর। ' জর্জ দা তখন দুবার হারমোনিয়ামে যে রাতের সুর বাজিয়ে থামলেন। বললেন, " শুনেন, এইখানে উদ্যোক্তারা ঠিক করেছিল একডা জিনিস। যে আগে আইবেন, সে-ই আগে গাইবো। দ্বিজেনবাবু এইহ্যানে আগে আইছেন, ওঁরই আগে গাওনের কথা, কিন্তু আমি অঁরে এখানে বসতে দিই নাই। ক্যান দিই নাই হেইডা আপনাগো কই---আপনারা সক্কলে 'ক্ষুধিত পাষাণ' সিনেমাডা দ্যাখছেন, সেই সিনেমাডাটায় দ্বিজেনবাবু এত অসাধারণ গাইছেন যে সেই গান আমার আগে শোনালে আর আপনারা আমার গান শোনবেন না। " জর্জ দার অনুকরণীয় গলায় ওই কথার পর হাততালিতে ভরে গিয়েছিল জলসাস্থল। একই সঙ্গে জর্জ বিশ্বাসের মতো মানুষ, দ্বিজেনদাকে ও ছবিটাকে সম্মান জানিয়েছিলেন যা ভাবাই যায়না।

•তপন দার সঙ্গে ভূপাল ও রাজস্থানে আউটডোরে গিয়ে ইউনিটের সকলের মধ্যে যে বন্ধুত্ব হয়েছিল তা বহুকাল ভাঙেনি। এমনকি ক্যাম্পফায়ার পর্যন্ত হয়েছিল। ভূপালের যে বাড়িটা বাইরে থেকে সিনেমায় দেখান হয়েছিল তা আসলে একটা পুরনো বিখ্যাত মসজিদ। এই কারণে তখন ওখানকার ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তপন দা বহু আলোচনা করে সমস্যাটি মিটিয়ে ছিলেন। ভারতবর্ষের সম্প্রীতি এটাই বোধহয়। যারা গল্পটি পড়েছেন ও সিনেমাটি দেখেছেন তারা অন্তত বলবেন, সেই প্রাচীন স্থাপত্যের কতখানি প্রয়োজন ছিল ওই সিনেমায় ও রবীন্দ্রনাথের বর্ণনায়। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনের কয়েকদিন আগে ক্ষুধিত পাষাণের মুক্তি হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে মাণিকদার তিন কন্যাও, যেখানে রবীন্দ্রনাথের অপূর্ব, অমূল্য হয়েছিল। কেননা মাণিকদার ছিল নতুন ভাবে বিন্যাস করার প্রবণতা।কাদামাখামাখির দৃশ্যটা করতে গ্রামের লোকেরা জল ঢেলে ঢেলে "মালদা"তে কাদা করেছিল রাস্তা, টাকা খরচ করে জল ঢালাতে সমস্যা হয়েছিল কারণ বৃষ্টির অপেক্ষায় সময় চলে যাচ্ছিল। সিনেমার ভেতর কত যে গল্প থাকে যার শেষ নেই।

•১৯৬১-রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষ। ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়। সমাপ্তির মতো অত মিষ্টি প্রেমের সিনেমা বাংলাতে নেই বললেই চলে। তবে তিন কন্যার পোস্টমাস্টার ( ১৮৯১/১৯৬১) স্বর্ণখচিত একখন্ড হীরে। চারুলতা অর্থাৎ নষ্টনীড় তো কলেজে পড়া ছিল (১৯৬৪) কিন্তু মানিকদা কখনও হুবহু গল্প প্রোজেক্ট করে দেননি। পৃথিবীর বহু সিনেমা স্কুলে অবশ্যই পাঠ্য চারুলতা ও পথের পাঁচালী। যার কোনও কিছু বাদ দেওয়া যায় না। যদিও নষ্টনীড় রবীন্দ্রনাথের আত্মজীবনীমূলক লেখা। সিনেমার চারুলত হলো, আলোছায়ার মায়া।

( সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন সাক্ষাতকার ও লেখাকে সংগ্রহ করে এডিট করা। - অলোক কুন্ডু)
©® অলোক কুন্ডু। ২৭.১১.২০২০






বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০

অলোকের ঝর্নাধারায়

⛔ পুজোতে আমার কোনও জামাকাপড় খুব একটা হয়না। ছোটবেলায় যদি বা একটা প্যান্ট একটা জামা হতো তার যে কত দাম ছিল তা বুঝি এখন। বেশ মনে আছে এক এক বছর বাবা জামাকাপড় দিতে পারতেন না। অভাব ছিল আমাদের। তবে এখন বুঝতে পারি প্রতিদিন আমাদের সংসারে, এত জলখাবার, পরটা-আলুর দম, রবিবার রবিবার মাংস, প্রতিদিন চার পাঁচ রকম তরকারি দেওয়া ভাত এতসব খাওয়া দাওয়া করতে গিয়ে আমার বাবা-মা সংসার ঠিক প্ল্যান করে চালাতে পারতো না। কিন্তু মাসের মশলাপাতি আসতো পেল্লাই ঝাঁকামুটে করে, যেন বিয়ে বাড়ির ফর্দ। আমাদের মশলাপাতি কখনও মাসে দুবার আসতো না, ফুরিয়ে যেতনা। এখন ভাবি এত রকমের খাওয়া দাওয়া আজ পয়সা থেকেও আমাদের কিন্তু আর হয়না। কারণ এত রকম রান্না করতে যে কেউ আজ বিরক্তবোধ করবে। তখনকার দিনে উনুনে আর কেরোসিন স্টোভ মিলিয়ে মা একা কত রান্নায় সময় দিত। তারমধ্যে বাটনা বাটা কাপড় কাচা ঘর মোছা বিছানা ঝাড়া খেতে দেওয়া কত কি। সারাদিন উনুন জ্বলে দুপুর বাদ দিয়ে। তবে শনিবার শনিবার আমরা বাবা মা ভাই বোন সবাই মিলে হয় উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা নয় তো স্টারে, মিনার্ভায়, রঙমহলে, কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে নাটক দেখতে যেতাম। 
শীতে চিড়িয়াখানা, তারকেশ্বরের মন্দির, দক্ষিণশ্বর মন্দির দেখতে। শুধুমাত্র বাংলা সিনেমা নয়, হিন্দি সিনেমাও বিস্তর দেখতাম। শনিবার আমাদের লেখাপড়া একেবারে বন্ধ। আগেকার দিনে সিনেমার হলে গানের বই পাওয়া যেত সেগুলো আমার দিদির কাছে বহুকাল ছিল। কোথায় হারিয়ে ফেললো কে জানে ? এইসব করে পুজোতে আর আমাদের জামাকাপড় খুব একটা হতো না। 

•কিন্তু যেই কলেজে উঠে টিউশনি শুরু করলাম, জামাকাপড় পরা শুরু হলো আমার। ওই শখ একমাত্র করোনায় মাঠা মারা গেছে। তা না হলে জামাকাপড় রাখার আর আমার বাড়িতে জায়গা নেই। দক্ষিণ ভারত থেকে আনা দুটো পাঞ্জাবি এখন আলমারিতে পচছে। রায়নার গৌতম,সুশান্তরা দেখেছে আমি এক জামা প্যান্ট দ্বিতীয় দিন আর পরতাম না। গতবছর দুখানা প্যান্ট করালাম। যার অনেকগুলো করে পকেট। বিশেষ করে বাইরে গিয়ে ক্যামেরার অ্যাক্সেসারিজ ও মোবাইল,টাকাপয়সা,চাবি টিকিট, রুমাল,ওষুধ পত্র রাখার সুবিধার জন্য। এইসব ব্যাগে নিয়ে ঘোরাঘুরির বিপদ ও অসুবিধা দুই আছে। একবার সিমলা থেকে আসার সময় ব্যাগে টাকা, টিকিট ক্যামেরা রেস্টুরেন্টে ফেলে অনেক দূর ফেলে চলে এসেছিলাম, এখনও ভাবলে বুক উড়ে যায়। গত ১/১১/১৯ তারিখে করিয়েছিলাম। পরলাম ৬/১১/১৯ তারিখে। ওই প্যান্টটা ভাঙলাম যেদিন, বর্ধমানের গুইরে সন্দীপপ্রসন্ন চক্রবর্তী বাবুর বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজোর নিমন্ত্রণ ছিল। ওইদিন রায়নার শ্যামসুন্দরেও গিয়েছিলাম একবার কারণ ওখানে আমার একটা ব্যাঙ্কের পুরনো অ্যাকাউন্ট ছিল।
প্যান্টটা ওইদিন পরার পর অপছন্দ হওয়ায় আবার খুলিয়ে সেলাই করালাম। দুবারে (৮০০+৫০০) ১৩০০/-টাকা মজুরি পড়ে গেল। বড়বাজারে যে দোকানে প্যান্টটা বানালাম এই মাসে গতবছর, তাদের ওস্তাগর মাস্টার খুব নামকরা। তাছাড়া বিদেশি মেশিনে সেলাই হয়। স্টিচ ও ফিনসিং দারুণ। প্যান্টের মজুরিও বেশ চড়া। অন্য যে কোনও জায়গার চেয়ে বেশি। আমাকে একটা অচেনা দোকানদার সন্ধান দিয়েছিল। সামনে দুটো ইনার পকেট সহ মোট পকেট সাতখানা হবে । তো আমার এই আব্দার নিয়ে গেলাম বড়বাজারে ২০৩/৪ ,মহাত্মা গান্ধী রোডস্থ দোকানে। একজন ননবেঙ্গলি ভদ্রলোককে পরতে দেখেছিলাম রাস্তায় ওইরকম প্যান্ট। বলেছিলেন দিল্লি থেকে তিনি কিনেছেন‌। অপরিচিত বেশি কথা রাস্তায় আর জিজ্ঞেস করা হ‌য়ে ওঠেনি । যাইহোক এ‌ঁকে ছক করে দেখিয়ে দিয়েছিলাম বড়বাজারে যে দোকানে করতে দিয়েছিলাম। ৮০০/-টাকা মজুরি কারণ সামনে দুটো এক্সট্রা ও দুটো ইনার পকেট। পরলে স্মার্ট লাগতেও পারে সেটা মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হলো
ট্রেনে-প্লেনে এইরকম পকেট রাখা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত
ব্যাপার, সেফটি পারপাস । প্যান্টটা পরার আগে
এত‌টাই নিশ্চিত ছিলাম যে পরে আর দেখিনি এনে তুলেই রেখে দিয়েছিলাম । পরবার পর দেখলাম ঠিক মতো হয়নি । মনটা একটু খটমট করছিল । বর্ধমানে রায়নার শিক্ষক বাসুবাবুর বাড়িতে ( মিরছোবা) রাতে ছিলাম  গতবছর, সন্দীপপ্রসন্নবাবুর বাড়ি (গুইর) থেকে ফিরে এসে । বাসুবাবুর ২২/২৩ বছরের ছেলে রাজের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার প্যান্টটা নিয়ে। ও কিছু সংশোধন করলো। প্রথম পরেছিলাম সেইদিন আর দ্বিতীয়বার ১৭.৩.২০২০ সারান্ডায় ব্যস তারপর অভিশাপে পড়লাম। কোথাও আর যাওয়া হয়নি। প্যান্টের কাপড় একেবারে ১০০% কটন। একটা ১৬০ কাপড়ের (১৩০ লাগে ) দাম ১২০০/- মজুরি ৮০০/-নিয়ে প্রায়  ২০০০/- পড়লো,পরে আবার ৫০০/-। সঙ্গে ঊনিশ-বিশ রঙের আর একটা পিস‌ও কিনেছিলাম তখনই। বলেছিলাম একটা তৈরি করে যদি ভালো লাগে তো আর একটা তোমাকেই করতে দেব --হুবহু ডুপ্লিকেট আর একটাও হয়েছে। 

•বহুবছর আগে যখন কলেজে উঠে পুজোর সময় নিউ মার্কেটে সব বন্ধু মিলে প্যান্ট করাতে দিতে যেতাম এই নতুন প্যান্টটা করতে দিতে যাওয়ার সময় সেইসব পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। আর একটা ঘটনা এই প্রসঙ্গে না বললেই নয়। আমাদের মধ্য হাওড়ার শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ে বরাবরই একটা কড়াকড়ির মধ্যেই আমরা স্কুলে বড় হয়েছিল। আমি ওই স্কুলের ছাত্র। ক্লাস নাইনে প্রথম চুস প্যান্ট পরে স্কুলে গেছি। ওই প্যান্ট পরার জন্য মুকুলবাবু স্যার ( উনি দু বছর আগে হঠাৎ প্রয়াত হয়েছেন ) আমাকে বেঞ্চে উঠিয়ে মাপ
নিয়েছিলেন। আমার সেই প্যান্টের মুহুরির মাপ কত?
স্যারের নির্দেশে, তখন বোর্ডে আমার এক বন্ধু প্যান্ট এঁকে, লিখছে কোমর এত লম্বা এত মুহুরি এত। সারা ক্লাসের কাছে আমার তখন শ্রাদ্ধ হচ্ছে। এটাই শাসন পরে বুঝেছিলাম। সে লজ্জা অবশ্য এখন কবেই কেটে গেছে। তবে জামাকাপড়ে যে আমার একটু বেশি লোভ আর মায়া সে কথা স্বীকার না করে পারছি না। আমাদের পাড়ার ইস্ত্রি যে করে সে তো দেখা হলেই এখন বলে, "কি গো এইভাবে পেটে মারবে দাদা।" একবার রায়নার শ্যামসুন্দরে হাটতলায় ( ২০১২) একটা জামাকাপড়ের রেডিমেড দোকান হলো সবে। রায়না-১ এর শিক্ষাবন্ধু গৌতম সাহা বললো স্যার (দোকানের শো-কেসে সাজানো) জামাটা আপনাকে মানাবে। আমি বললাম গায়ে হলে কিনে নেব, তবে এখন পয়সা নেই, দিতে পারবো না । একটু পরেই দেখি কীরকম দেখার জন্য গৌতম হৈহৈ করতে করতে ওই জামাটা নিয়ে চলেই এসেছে। দোকানটা অফিসের জানলা থেকে দেখা যায়। গ্রামে দু-তিনটি ইন্সটলমেন্টে আকচার বিক্রি হয় জামাকাপড়। তাবলে আমিও ধারে কিনবো ?! কারণ রাস্তার দুধারে নমস্কার আর স্যার শুনতে শুনতে নিজেকে আরও সম্মান করতে শিখেছি বোধহয়। গৌতমের আনা জামাটা পরেই ফেললাম কারণ সেদিন শুক্রবার ছিল। মোটামুটি ওইদিন বাড়িতে যাই। সঙ্গে সঙ্গে পরেই ফেললাম দেখবার জন্য ফিট হলো কিনা এবং আমার মনে আছে জামাটা খুব ফিটিং হয়েছিল ( দোলের রঙ লেগে যাওয়ায় ওটা বাড়ির ঝাড়পোছে লেগে গেছে ) এবং সত্যি সত্যি তিনবারেই জামাটার দাম শোধ করেছিলাম। যদিও আমি রেডিমেডের একেবারেই খদ্দের ন‌ই । বেশ কয়েকবছর আমার পাড়ার টেলরের থেকেও বেশ কটি জামা প্যান্ট পাঞ্জাবি করিয়েছি। খুব খারাপ না করলেও আমার যেন খু‍ঁতখুঁত করতো। কোথায় টেলর পাই খুঁজতাম। কারণ আমি ফিটিং পছন্দ করি। তবে গতবারে চারটে পাঞ্জাবি ও দুটো প্যান্ট করতে দিয়ে দেখেছি কলকাতার টেলরের সত্যি কাজ ভালো। স্টিচ দেখলে হ্যাঁ মনে হবে প্রফেশনাল। ফিটিং দারুন। ছেলেদের টেলরদের প্রথম দোষ হচ্ছে, জামা বা পাঞ্জাবির হাতের ঝুল ৪/৫ ইঞ্চি বড় রাখবে। জামার কাটিং একটু ভি হ‌ওয়া দরকার অধিকাংশরা ড্রাম কাটিং করে অর্থাৎ জামার ঘের উপর নীচ সমান মাপ । ছাতি ও জামার নীচের ঘের সমান। অবশ্য অনেকে বলবেন ছেলেদের ভুঁড়ির জন্য ওটা করে। কিন্তু কলকাতায় জামা সেলাই করিয়ে এই প্রথম দেখলাম জামা একটু ভি কাটিং করেছে। তারপর অধিকাংশ টেলর জামার হাতের ঘেরের মাপ একটা অ্যাভারেজ মাপে করে ,অর্থাৎ লুজ 
করে । আমি জিজ্ঞেস করে দেখেছি, দরজিরা বলে থাকে, বাসে ছেলেদের রড ধরে দাঁড়াতে হয় তখন হাতে টান পড়ে । হয়তো বা পড়ে। তা বলে সব ছেলেরা হাত উপরে তুলে রাখবে বলে এত ঢিলা সহ‍্য করা যায়না। রেডিমেড কেনা জামা মাপে ছোটবড় হলেও বড় বড় কোম্পানি এইসব বডি ডেকোরাম মেনে ছেলেদের জামা তৈরি করে থাকে । সে কারণেই বড় দোকানের রেডিমেডের একটা প্রলোভন আছে পুরুষের কাছে। আমি আর কিছু করি না করি এবেলার জামা প্যান্ট ওবেলা কখনও পরিনা, করোনা এসে মনে হয় সকলকে এটা শিখিয়েছে। না সকলে এটা করোনা তেও করেনা। আবার কখনও শতচ্ছিন্ন জামাপ্যান্ট পরে মেট্রোগলিতে ক্যামেরার ব্যাটারি কিনতে চলেও গেছি । এইরকম বহুবার দূরে চলে গেছি বলে তো আমার ব‌উ --এই বকে তো সেই বকে। আমি এখন বলেই ফেলেছি এই তো পাড়ায় গিয়েছিলাম ( মেট্রোগলি)। একসময় তো আমাদের এক বন্ধু হাফপ্যান্ট পরে গ্লোবে অ্যাডাল্ট সিনেমা দেখতে গিয়েছিল আমাদের সঙ্গে। তখন প্রবল আপত্তি করেছিল সেকথা তো ভুলিনি। কিছুতেই ঢুকতে দেবেনা। তবে আজেবাজে জামাকাপড় পরে আর‌ও যে দু-চারবার মেট্রোগলিতে যাবো না এই গ্যারান্টি নেই, এসপ্ল্যানেডে ঘুরবো না এই দিব্যি কেউ দিলেও ধোপে টিঁকবে না। যা বলছিলাম। আমার ওই একটাই শখ জামাকাপড় দেখলে জিভ দিয়ে জল গড়ায় সব সময়। গত বছর বড়বাজারের মহাত্মা গান্ধী রোডের দোকানের মাস্টার (ওস্তাগর) আজকের দিনে আগের প্যান্ট ও নতুন আর একটা পিস সহ দুটোই ডেলিভারি দিয়েছিল । ৬/১১/১৯ -এর পরাটাও ঠিক করে দিয়েছিল। প্যান্ট দুটোর বিশেষত্ব হলো সামনে দুটো এক্সট্রা পেস্ট পকেট। ভেতরে সেম সাইজের সমান দুটি গুপ্ত পকেট ও একটা ব্যাক পকেট ও নরম্যাল দুটো সাইড পকেট । সেম কাপড়ের মজবুত মোট সাতটা পকেট। বেড়াতে গেলে এই দুটো প্যান্ট ট্রেনে-প্লেনে সঙ্গী করবো ভেবেছিলাম মনে হয় তা আর হবেনা। দুটো কাপড়ের রঙ সামান্য
হেরফের ।

মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০

হাওড়ায় সৌমিত্র ও অভিযান : অলোক কুন্ডু

⛔ হাওড়ায় সৌমিত্র ও অভিযান- এর যোগ : অলোক কুন্ডু

⛔ সৌমিত্র চ্যাটার্জী হাওড়াকে নিয়ে তিনটি ঘটনা বা বিষয়কে উল্লেখ করে গেছেন, তাঁর বিভিন্ন লেখায়। তাঁর কালীবাবুবাজারে বাজার করার কথা আগেই বলেছি। ক্ষণজন্মা অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীকে নিয়ে বিশেষভাবে একটি নিবন্ধ লিখেছেন কিছুটা জীবনীও। অভিযান করতে গিয়ে ড্রাইভারের অঙ্গভঙ্গি কিরকম হবে তা তার আগে থাকতেই কিছুটা রপ্ত হয়েছিল। কারণ এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল হাওড়ায়। তা হলো হাওড়া জেলা স্কুলে যখন তিনি উচ্চ ক্লাসে পড়তেন। এখানে ধরে নিতে হবে স্কুল ফাইনাল দেওয়ার সময়ের কিছু আগের বা পরের ঘটনা। অথবা পরীক্ষার পরে যে অবসর পাওয়া যায় সেই সময়কার ঘটনা হলেও হতে পারে। একজন ড্রাইভারের সঙ্গে তাঁর ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল। সেই সময় জেলা স্কুলের দু একজন বন্ধু ও তার সঙ্গে হাওড়ার কোনও একটি রুটের বাস ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপ হয়। আলাপ গভীর বন্ধুত্বে পৌঁছয়। 
বেশ কয়েকদিন তাঁরা, সেই ড্রাইভারের পাশে বসে  ইল্লিদিল্লি করতেন। তাঁরা বাসে করে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরেছেন কদিন এবং বাস কীভাবে চলে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। তখন ড্রাইভারের কেবিন ছিল লরীর মতো। যাত্রীদের থেকে আলাদা। এখানে উল্লেখ্য তখনকার দিনে হাওড়ার রুটের বাস কিন্তু কলকাতায় যেত না। বাসের কাঠামোও এইরকম ছিল না। বনেট অনেকটা সামনের দিকে বের করা হতো। ইঞ্জিনের ঢাকনা বাঁয়ে ডানে দুদিকে খুলতো। বাসের টাইপও লম্বায় ছোট হোতো। 

•অভিযান করতে গিয়ে কিছু ডায়লগ সৌমিত্র চ্যাটার্জী, উচ্চারণ নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছিলেন হিন্দি বাংলা মিশিয়ে। দুবরাজপুরে যখন স্যুটিং শুরু হলো, তখন সিনেমার ওই নতুন কেনা গাড়িটাও সৌমিত্রই চালাতেন সব সময়, সিনেমার বাইরেও চালাতে হতো তাঁকে। আলাদা কোনও ড্রাইভার না থাকায় স্যুটিংয়ের কাজে চালাতে হতো। তিনিই  লিখেছেন গাড়িটাকে নিয়ে যা ইচ্ছা করতাম যেমনভাবে চালাতে চাইতাম, সেই ভাবে গাড়িটা চলতো। সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করবেন না, করবেন না, করতে করতে শেষ পর্যন্ত পরিচালনা করেছিলেন, অভিযান। তাই সৌমিত্র আগে থাকতেই নিজের জীবনের হাওড়ার অভিজ্ঞতা থেকেই উচ্চারণ তৈরি করে ফেলেন। কিন্তু যখন জানলেন সত্যজিৎ রায়ই পরিচালনা করবেন তখন তিনি বার বার তা মানিকদাকে জানালেন। তার উচ্চারণ তৈরি করে ফেলার কথা। কি সেই উচ্চারণ তা মানিকদা দু তিনবার শুনতেও চাইলেন। তিনবার করে রিয়ার্সাল হতো, তখন প্রতিবারই সৌমিত্র তাঁর মানিক দাকে জিজ্ঞেস করতেন, "ডায়লগ কি নিজের মতো বলবো? নাকি আপনার মতো করে বলবো।" সৌমিত্র বলেছেন মানিকদা ততবারই কোনও উচ্চবাচ্য করতেন না। কিন্তু যেদিন প্রথম স্যুটিং ফাইনাল টেক হলো মানিকদা আমাকে আমার মতো বলতে অনুমতি দিলেন। " 

• প্রসঙ্গক্রমে বলি, যারা হাওড়ায় থাকেন তাদের মনে হতে পারে হাওড়া জেলা স্কুলের সামনে বোধহয় তখন থেকেই বাস দাঁড়াতো এখনকার মতো। তখন বঙ্গবাসীর এই উড়ালপুল একেবারেই ছিলনা। বাসও হাওড়া ময়দানে কোথাও দাঁড়াতো না। জেলা স্কুলের গা দিয়ে ট্রাম লাইন ছিল, ট্রাম যেত। কিন্তু একটা পেট্রোল পাম্প ওখানে ছিল, সেখানেই হয়তো ড্রাইভারের সঙ্গে তাদের আলাপ হয়ে থাকতে পারে। 
©® অলোক কুন্ডু

তুলসী চক্রবর্তী প্রসঙ্গ-১: অলোক কুন্ডু

⛔ অলোকের ঝর্নাধারায় 

⛔ আমার মা দিদি ইতিমধ্যে মারা গেছেন, তাঁরা বেঁচে থাকলে আরও কিছু বলতে পারতেন। আমার বাবাকে তুলসী চক্রবর্তী নামেই চিনতেন, আসলে তুলসী চক্রবর্তী এই অঞ্চলের প্রতিটি মানুষকেই বোধহয় চিনতেন। পরে এখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মূল্যায়ণ যুক্ত করবো। তাহলেই মানুষটাকে বোঝা যাবে। আমার বাবা রামকৃষ্ণপুর অঞ্চলে, রবীন্দ্রলাল সিংহের অধীনে এ. আর. পি-র চিপ ভলান্টিয়ার ছিলেন। পরে রবীন্দ্রলাল সিংহ কংগ্রেসের শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। তখনকার দিনে বেতন বাড়ানোর দাবিতে একবার, সারা রাজ্যের বামপন্থী শিক্ষকরা হাওড়ার সিদ্ধেশ্বরীতলা লেন দিয়ে এসে রাজবল্লভ সাহা লেন ও সন্ধ্যাবাজার দিয়ে ঢুকে রবীন্দ্রলাল সিংহের বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন (এইসব পুরনো কথা আমার বাবা ও আমাদের বন্ধুবান্ধবদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ছোটবেলায় শোনা। খানিকটা সাংবাদিক জয়ন্ত সিংহ বন্ধু অশোককৃষ্ণ দাস ঝালিয়ে দিয়েছেন)। 

•আমার বাবা, তুলসী দা তুলসী দা বলতে তো অজ্ঞান ছিলেন। বিশেষ করে বাবার কোলে আমার ছোটবোন, সঙ্গে আমার মা এবং দিদির হাত ধরে ছোটবেলায় আমি, আমার বাবার তুলসী-দার বই (সিনেমা) শনিবার নাইট শোতে দেখতে যেতাম, হাওড়ার পার্বতী, নবরূপম, শ্যামাশ্রীতে। তুলসী চক্রবর্তীর বাড়িটা এখনও আছে। তবে তা কার দখলে তা আর খেয়াল রাখিনা। হেঁটে বড় জোর তিন থেকে চার মিনিটের দূরত্ব। এমনকি তুলসী চক্রবর্তীর কাছে স্টারের পাশ এনেছেন আমার বাবা, থিয়েটার দেখার জন্য। সেইসব বিস্তৃত মনে করতে পারছি না আর। সম্প্রতি কয়েকবছর আগে আমাদের ষষ্ঠীতলার মাঠটি তুলসী চক্রবর্তীর নামে উৎসর্গ ও সাজানো হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। 

• কিন্তু আমি তখন খুব ছোট। হয়তো স্কুলে পড়িও না। অথবা দীর্ঘদিন একই দৃশ্য দেখতে দেখতে বড় হয়েছি বলে সময়টা ভাগ করে বলতে পারছি না। এখানে সেটা বিবেচ্য নয়। আমাদের বাড়ির লাগোয়া তখন আমাদের পাঁচিলঘেরা বিশাল পুকুরটা ছিল, খুরুট রোডের উপরে। যার অর্ধেকটা এখন পেট্রোল পাম্প হয়েছে। জ্ঞান হওয়া থেকে দেখছি আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ৫২ ও ৫৮ নম্বর বাস চলছে। আসলে এইসব গৌরচন্দ্রিকা উপলক্ষ মাত্র। আসল হচ্ছে তুলসী চক্রবর্তী। আমাদের বাড়ির সামনে নিধিরাম মাঝি লেন। তুলসী চক্রবর্তী যতদিন বেঁচে ছিলেন ঠিক বেলা দেড়টা নাগাদ ধুতি ফতুয়া একটা বড় ঘোরানো ডাঁটিওয়ালা ছাতা হাতে একটা থলি গোছের ব্যাগ নিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতেন বাসে উঠবেন বলে। আমাদের বাড়ির উল্টোদিক থেকে তিনি এসে প্রথমে উড়িয়া পানের দোকান থেকে পান নিতেন এবং ওইখানে দাঁড়াতেন আমাদের দিকে মুখ করে। আমার দিদি দুপুরের দিকে স্কুলে গেলে মা আর আমি ধাক্কাধাক্কি করে মুখ বাড়াতাম। আমাদের মস্তবড় গাড়ি বারান্দা ছিল আগেকার দিনের। কিন্তু শীতকাল ছাড়া রোদে দাঁড়ানো যেতনা। দিদি থাকলে ঠিক সময়টা ডেকে নিত। যেদিন উনি আসতেন না সেদিন আমরা হতাশ হতাম। আসলে আমার তখনও এত কৌতূহল হওয়ার কথা নয় কিন্তু যে লোকটাকে সিনেমায় দেখেছি বাড়িতে আকচার রাতদিন শুনছি তিনি তো তখন আমার কাছে এক আশ্চর্য মানুষ। তখন বাস হাওড়া পর্যন্ত যেত। ওখানে গিয়ে তুলসী চক্রবর্তী ছ-নম্বর দোতলা বাসে উঠে টালিগঞ্জ যেতেন এবং ওইভাবে ফিরে আসতেন। কখনও মাঝপথে পাল্টে ১৬ নম্বর বাসে করে এসে হাওড়ার মল্লিক ফটকে নামতেন। হেঁটে এবং পথে কথা বলতে বলতে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির ছুঁয়ে বাড়ি ফিরতেন। এই ছিল নিত্য রুটিন কিছু দেখা কিছুটা বাবার কাছে ও বন্ধুদের কাছে বয়ঃজেষ্ঠদের কাছে শোনা বহু আগে। ( তাই তুলসী চক্রবর্তী ট্রামে করে যাতায়াত করতেন ফেসবুকের উড়ো খবর মানতে পারবো না, কখনও নিশ্চিত এক আধদিন শিবপুর হাওড়ার দুমুখো ট্রামে উঠেছিলেন, এটা হতেও পারে।

• হাওড়ার নাট্যকার জগমোহন মজুমদাররা যখন হাওড়ায় কংগ্রেসি ক্লাব উদার সংঘে প্রথম নাটক মহলা দিচ্ছিলেন তখন রবীন মন্ডলের সঙ্গে তাদের নাটক দেখতে এসেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, এই বিষয়টা আমি আমার অন্য লেখায় উল্লেখ করেছি। 
তখন কংগ্রেসের জোড়াবলদ প্রতীক। অতুল্য ঘোষকে  কেউ কেউ রিপোর্ট করলেন সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় কোনও একটি জায়গায় বলদের বিষয়টা আছে। অতুল্যবাবু তখন কংগ্রেসের থিঙ্কারম্যান বিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে (যিনি এক ঝটকায় হাওড়ার অজয় ঘোষের নাম ছাত্র পরিষদের সভাপতির প্যানেল থেকে কেটে দিয়ে রায়গঞ্জ থেকে কলকাতায়, বাংলায় এম.এ পড়তে আসা বেলঘড়িয়ায় সিঁড়ির তলায় বসবাস করা ময়লা অখ্যাত প্রিয়রঞ্জনকে বেছে নিয়েছিলেন।) বিষয়টা দেখতে বললেন। বিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় আবার দুজনকে ডাকলেন। তুলসী চক্রবর্তী ও জগমোহন মজুমদার, সেখানে বন্ধু জগমোহন ডেকে নিলেন শিল্পী রবীন মণ্ডলকে। তিনজনে নাইট শোতে সিনেমা দেখলেন পার্বতীতে। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলনা। এখানে বলে রাখা ভালো রবীন মন্ডল কখনও কোনও রাজনীতি করেননি মতও দেননি। কিন্তু তার দুই বন্ধু পার্বতী দা ও জগমোহন দা কংগ্রেস করতেন। অবশ্য প্রথম জীবনে পার্বতী দা পি এস পির অর্ধেন্দুশেখর বোসের সমর্থক ছিলেন। ( ক্রমশঃ চলবে...) ©® অলোক কুন্ডু ( ১৭.১১.২০২০)

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...