🌏 এখন কি তবে করোনা চলে গেছে? এই প্রশ্ন সরাসরি করলে থাপ্পড় খেতে পারি। খেতে পারি কেন খাওয়াই উচিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস করোনা শুধুমাত্র আমিই বহন করেছি অর্থাৎ আমিই সব সময় আলোচনা করেছি। কিন্তু ক্ষতিকর কতগুলো বিষয় পড়ে আছে সেদিকে আলোকপাত করা তবু কর্তব্য। সতর্ক থাকাও জরুরি।
🙋 আমি রোজ দেখতে পাচ্ছি এক ভদ্রলোক মাস্ক পরে বাজার যান, রাস্তায় ঘোরেন। বিশাল ব্যবসা আছে শুনেছি। পয়সার অভাব নেই। মাস্কের দাম ১০ টাকা। তাও বেশিরভাগ সময় মুখের নীচে শোভা পায়। অর্থাৎ মাস্ক পরলেও তা না পরার সামিল। প্রকৃত মাস্ক পরার পয়সা থাকলেও তা কিনবেন না।
🙋 ধরুন আমার বা আমার পরিবারের "ফুল করোনা", "হাফ-করোনা" হয়ে গেছে তাই আমার আর রাখঢাক করার দরকার নেই। জনে জনে বলছি 👫👬👭 ও এমন কিছুই নয়। জ্বর এর থেকেও কাবু করে দিত গো। ভয় ! ধ্যাত্ ভয় আবার পায় কেউ ? দুহাতে করোনাকে ধুয়ে আছড়ে ধেসে দিয়েছি। ধুর মশাই আপনি যেমন। এত ভয়ের কি আছে ? এই দেখুন গো আমাকে ! ইতিমধ্যেই ভয়কে তো জয় করে ফেলেছি। ফেলেছি কিনা? একদম ঘাবড়াবেন না। দ্বিতীয় ভদ্রলোক যেই লেকচার শুনলেন, মনে মনে অমনি এমন দুরন্ত সাহস পেলেন যে গলায় ঝোলানো ৯০ বার কাচা ৫ টাকার আকাশি সার্জিক্যাল মাস্কটার চোদ্দো পুরুষ উদ্ধার করে দিলেন। নর্দমায় আশ্রয় হলো তার। পরে যে ছিলেন এটাই তো মাস্কটার ভাগ্য ভালো।
🙋 এখন সাহসী লোকের সংখ্যা বাঙালি তথা ভারতীয়দের মধ্যে খুবই বেড়ে গেছে। এতো খুব আনন্দের কথা। আমেরিকানরা বাঙালিদের থেকেও বিশাল সাহসী ছিল কিন্তু রোগও প্রচুর ছিল। আসলে খাদ্যাভ্যাসের জন্য আমরা যে সাহসী হয়েছি এটা আজ জানাজানি হয়ে গেছে। তবু খাদ্যাভ্যাসের জন্যই আমরা সাহসী কিনা সঠিক জানা না থাকলেও যথেচ্ছভাবে জীবন অতিবাহিত করা ব্রাজিল, আমেরিকায় করোনা বেশি মাথা চাড়া দিয়েছে।
🙋 তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করেও আমার কাছাকাছি ৫/৭ জন যে মারা গেলেন তারা ভেবেই নিয়েছিলেন তাদের কিছুতেই হবে না।
🙋 যারা মারা গেলেন নিশ্চিত তাদের অন্য অসুখ বিসুখ ছিল। কত ডাক্তারও তো মারা গেলেন। তাদের অসুখ কি তাঁরা তবে জানতেন না তবে ? তাদের মধ্যে তবে কি একটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার প্রবণতা ছিল। প্রচুর ছোটবড় রাজনৈতিক নেতাও মারা গেলেন। পুলিশও।
🙋 এখন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে বোঝা গেল যে সেফ হোম বাড়িতেই সব থেকে ভালো তাই সরকারের সেফ হোম উঠে গেছে ভালো হয়েছে। এই "জনতা সেফ হোম"-এর জন্যও সংক্রমণ ছড়াচ্ছিল। কারণ ওখানে সাহায্যকারীরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য মনোভাবের ছিলেন। বন্ধ হয়ে ভাল হয়েছে।
🙋 দোকানদাররা সব সময় শীত গ্রীষ্ম ( আমাদের দেশের) ১২ মাস ধুলোধোঁয়া খেয়ে খেয়ে তাদের ভয়াবহ করোনা আর কব্জা করতে পারেনি এটা প্রমাণিত। এরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য দলের কিন্তু এরা প্রমাণ করেছেন যে এদের সঙ্গে মাস্ক পরার হাত ধোয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে শুধুমাত্র দোকানদার নয়
প্রথমে যে বলেছিলাম ৫ ও ১০ টাকার মাস্ক পরিহিতদের কথা ওরাও তুচ্ছতাচ্ছিল্য দলের লোক কিন্তু দৈহিকভাবে শক্তিশালী।
🙋 তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ টিভি কাগজে মিডিয়াতে রৈখিক সমীকরণের গাণিতিক যোগের মোট পরিমাণ কমে যাওয়া। কমে যাওয়া নানা কারণে হতে পারে সতর্কতা ও শক্তিশালী ব্যক্তিদের রোগ ধরা, দুর্বল লোকেদের চিহ্নিতকরণ।
এই তিনটি বিষয়ে সরকার, ডাক্তারবাবু ও গোষ্ঠীর কোনও কাজ নেই। যদি কিছু হয় তা অলক্ষ্যেই হচ্ছে। এইটা দেখার কোনও পরিমাপ না থাকলেও এই সত্য অস্বীকার করে লাভ নেই।
🙋 আবার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন না এটাও চোখে দেখছি। কেউ কেউ গাড়ি নিজে চালালেও প্রতিদিন স্যানিটাইজ করছেন। জুতো রোদে দিচ্ছেন। সতর্কতা কারও দেখা যায় কারও দেখা যায় না। তবু তুচ্ছতাচ্ছিল্য-এর কাছে সতর্কতা প্রথম দিন থেকে হেরে যাচ্ছে।
🙋সতর্কতা একটা শৃঙ্খলাবোধের বিষয়। এটা তার মধ্যে ছোট থেকেই আছে। সতর্কতা জীবনের একটা শিক্ষা। এই শিক্ষা মোটেই করোনার দান নয়। তবু সমস্ত সতর্কতাও ফেল করে যায় যখন জীবনে দুর্ঘটনা আসে। করোনা একটা বড় দুর্ঘটনা। সতর্কতা নিলেও করোনা হবেনা এই গ্যারান্টি নেই কারণ দীর্ঘ দিন সতর্কতা নিতে নিতে তা একঘেঁয়ে হয়ে যায়।
🙋 ৯ মাসে পড়ে গেল দুরূহ পরিস্থিতি। আমাদের এই সতর্কীকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে পথচলা ২০২১-এর জানুয়ারি পর্যন্ত গড়িয়ে যাবেই। এখনই সবচেয়ে দুরূহ সময় দেখা দিতে পারে। কারণ আমরা ভেবেছিলাম ইদ দুর্গাপুজো দেওয়ালী ও এটির পর ব্যাপক হারে করোনা ছড়াবে। কিন্তু আদপে তা হয়নি।
তাই আমাদের মনের সতর্কতা মার খেতে বাধ্য এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্যের অগ্রগতি হতেও বাধ্য আমাদের মধ্যে।
এটাই পিক সময়। একঘেঁয়েমি ও ইঞ্জেকশনের আশায় আমরা আমাদের ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু স্পোর্টসে এমনকি ফুটবলেও ফিনিশিং পয়েন্ট ও বক্সেই মাথা ঠান্ডা রেখে অ্যাথলেটিক্স ও ফুটবলে এমনকি কম ওভারের ক্রিকেটেও শেষ ওভার, ফিনিশিং পয়েন্ট ও গোলপোস্টের অশেষ ক্ষমতা।
🙋 ফেব্রুয়ারিতে ইঞ্জেকশন আসছে ধরে নিয়ে এক সপ্তাহের লকডাউন ফিরিয়ে আনলে মনে হয় সবচেয়ে ভাল হোতো। নতুন ভাবে নতুন বছর শুরুর প্রক্রিয়া আনন্দের সঙ্গে শুরু হোক। ডিসেম্বর সবথেকে সতর্কতার সময়। ©® অলোক কুন্ডু